কোভিড-১৯: সাংবাদিকদের জন্য যত রকম অর্থসহায়তা

English

কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে ভালো রিপোর্টিংকে উৎসাহিত করতে সাংবাদিকদের জন্য অনুদান নিয়ে এগিয়ে আসছে দাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

আপনি কি কোভিড-১৯ কভার করার জন্য আরও রিসোর্স খুঁজছেন? তাহলে জিআইজেএন এর রিসোর্স সেন্টার থেকে ঘুরে আসতে পারেন।এর পাশাপাশি এই মহামারির কারণে যেসব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আর্থিক চাপে পড়েছে, তাদের জন্যও সাহায্য দিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন।

এই ধরনের যত সুযোগ এখন পর্যন্ত এসেছে, তাদের একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে জিআইজেএন। নিচে পাওয়া যাবে তার বিবরণ।

এর বাইরেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও সরকার থেকে সহায়তা তহবিলের ঘোষণা এসেছে। এগুলো সরাসরি গণমাধ্যমের কথা না বললেও সাংবাদিকেরা তাকে নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন বেলআউট সম্পর্কে নিম্যান ল্যাবে প্রকাশিত এই নিবন্ধ এবং কানাডা সরকারের এই মিডিয়া ইনজেকশনটি দেখে নিতে পারেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রিল্যান্সাররাও এমন আর্থিক সুবিধার জন্য যোগ্য হতে পারে।

কিছু কিছু সুযোগের ক্ষেত্রে সময়সীমা সীমিত। আপনি যদি এমন কোনো সুযোগের কথা জানেন, আমাদের জানাতে পারেন, এই ইমেইলে hello@gijn.org।
কোভিড-১৯ রিপোর্টিং অনুদান
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি (গ্লোবাল)

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের জন্য একটি জরুরি তহবিল গঠন করেছে। যাঁরা নিজ নিজ এলাকা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব নিয়ে কাজ করতে চান, তাঁরা এই তহবিল পেতে পারেন।

প্রতিষ্ঠানটি অনুদানের আবেদন গ্রহণ করছে ধাপে ধাপে। একেক দফায় জমা পড়া আবেদন থেকে সেরা প্রস্তাব বাছাই করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তারপর আবার আবেদন সংগ্রহ করা হচ্ছে।

তারা প্রস্তাবের গুণাগুণ বিবেচনা করে ১,০০০ থেকে ৮,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুদান দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, “বিশ্বব্যাপী এই মহামারির প্রস্তুতি, প্রতিক্রিয়া এবং প্রভাবের ওপর প্রমাণনির্ভর সাংবাদিকতা” যাঁরা করতে চান, তাঁরাই অর্থসহায়তা পাবেন।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক তহবিল “বেশি জোর দিচ্ছে, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে সংবাদ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগে”। তারা আগ্রহী “আঞ্চলিক এবং এমনকি ক্ষুদ্র-অঞ্চলভিত্তিক (জেলা এমনকি তার চেয়েও ছোট পরিসরে কাজ করা গণমাধ্যম) বিতরণ মডেলে”। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, “কোভিড-১৯-এর কারণে যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে,” তারা সেই গল্পই দেখতে চায় বেশি করে। আরও তথ্যের জন্য তাদের ঘোষণা দেখুন।

লেখক, ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার, অডিও সাংবাদিক, কার্টোগ্রাফার, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং ডেটা ভিজুয়ালাইজেশন বিশেষজ্ঞরা এই তহবিলের জন্য আবেদন করতে পারেন।

পুলিৎজার সেন্টার (গ্লোবাল)

পুলিৎজার সেন্টার অন ক্রাইসিস রিপোর্টিং চালু করেছে করোনাভাইরাস নিউজ কোলাবরেশন চ্যালেঞ্জ। তাদের নতুন এই অনুদান, সাংবাদিক এবং নিউজরুমগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতাকে উৎসাহিত করছে। রাষ্ট্রীয় এবং জাতীয় সীমারেখার ভেতেরে ও বাইরে করোনাভাইরাস মহামারির খবর সংগ্রহকে বেগবান করতেই তাদের এই উদ্যোগ। এই সুযোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সব স্বাধীন সাংবাদিক এবং নিউজরুমের জন্য উন্মুক্ত।

এই অনুদান পেতে হলে প্রতিবেদন তৈরি এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে শক্তিশালী কোলাবরেশন বা সহযোগিতা কাঠামো থাকতে হবে। আবেদনের জন্য এর বাইরেও যা যা মাথায় রাখতে হবে:

করোনাভাইরাস সংকটের অন্তর্নিহিত সিস্টেমিক ইস্যুতে নজর দিন, যা নিয়ে খুব বেশি রিপোর্টিং হয়নি।
করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ডেটাভিত্তিক এবং/অথবা বিষয়-নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করুন।
ক্ষমতাকে জবাবদিহি করার বিষয়টি রাখুন।

করোনাভাইরাস নিউজ কোলাবরেশন চ্যালেঞ্জের জন্য পুলিৎজার সেন্টার আবেদন জমা নিচ্ছে পর্যায়ক্রমিক ভিত্তিতে।

ইন্টারনিউজ (গ্লোবাল)

ইন্টারনিউজ গঠন করেছে ইনফরমেশন সেইভস লাইভস র‌্যাপিড রেসপন্স ফান্ড। সেই সব গণমাধ্যম, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি এই তহবিল থেকে সহায়তা পেতে আবেদন করতে পারেন; যাঁরা স্থানীয় ভাষায় কোভিড/করোনাভাইরাস মহামারি এবং তার প্রভাব সম্পর্কে তথ্য বা খবর জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চান। অনুদানের অঙ্ক হতে পারে ৫০০ থেকে ৫,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত। এই টাকা খরচ করতে হবে “ এমন তথ্যের নির্মাণ, প্রযোজনা এবং প্রচারের জন্য, যা করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে এবং তাদের নিজের পরিবার ও সম্প্রদায়ের জন্য সুষ্ঠু সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে: বিষয় হতে পরে বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন, রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা, স্থানীয় স্বাস্থ্য নীতি ও পদ্ধতি এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিদিনের দরকারি খবর ও তথ্য ইত্যাদি।”

এর পাশাপাশি ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসি, আরবি, রাশিয়ানসহ বিভিন্ন ভাষায় করোনাভাইরাস কাভার করার জন্য বিনা পয়সায় পরামর্শ এবং বিশেষজ্ঞ সহায়তাসহ অ্যাডভাইজরি তৈরিতেও ইন্টারনিউজ অতিরিক্ত বিনিয়োগ করবে। বিস্তারিত এখানে।

ফান্ডটি চালু করার পর থেকে এত বেশি আবেদন এসেছে যে, ইন্টারনিউজকে আপাতত আবেদন সংগ্রহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। প্রথম দফায় যত আবেদন জমা পড়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে, সেরা প্রস্তাবগুলোকে তারা সহায়তা দেবে। পরবর্তীকালে কবে আবেদন করা যাবে, তাদের সাইটে জানিয়ে দেওয়া হবে।

ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন (গ্লোবাল)

আইডব্লিউএমএফের সাংবাদিকতা ত্রাণ তহবিল, এমন নারী সাংবাদিকদের জন্য যাঁরা চাকরি বা কাজ হারিয়ে গুরুতর আর্থিক সংকটে পড়েছেন, এবং অপূরণীয় ক্ষতি এড়ানোর জন্য যাদের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন। অনুরোধের ধরন অনুসারে এই তহবিল একেকজনকে সর্বোচ্চ ২০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত অনুদান প্রদান করবে। দ্রষ্টব্য: যাদের বেশি আর্থিক প্রয়োজন, তাদের কেস-টু-কেস ভিত্তিতে বিশেষ বিবেচনায় সহায়তা দেওয়া হবে।

উইমেন ফটোগ্রাফ (গ্লোবাল)

কোভিড-১৯ জরুরি তহবিল থেকে বিশ্বব্যাপী নন-বাইনারি এবং স্বাধীন নারী ফটোগ্রাফারদের জন্য একককালীন সহায়তা দিচ্ছে, উইমেন ফটোগ্রাফ। এই টাকা কোন কাজে খরচ করা যাবে, সে সম্পর্কে কোনো বিধিনিষেধ নেই। স্বাস্থ্যসেবা, শিশুযত্ন, বাসাভাড়া, পেশাদার ব্যয়—এমন যেকোনো কাজেই  ইত্যাদি। প্রথম দফা আবেদনের সময়সীমা ৩ এপ্রিল শেষ হয়েছে। দাতাদের কাছ থেকে তহবিল পেলে তারা আবার আবেদন সংগ্রহ শুরু করবে।

লেখকদের জন্য জরুরি সহায়তা তহবিল (গ্লোবাল)

অর্থসহায়তা কেবল তাঁদের জন্যই, যাঁরা বর্তমানে অসুস্থ বা কোনো অসুস্থ ব্যক্তির যত্ন নিতে হয় বলে কাজ করতে পারেন না। আমেরিকান সোসাইটি অব জার্নালিস্টস অ্যান্ড রাইটার্সের মতে, “আবেদনের জন্য লেখকদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে তাঁদের অবশ্যই ইংরেহি ভাষায় লেখা বই বা নিবন্ধ জমা দিতে হবে।”

ফটোগ্রাফার ফান্ড (গ্লোবাল)

ফটোগ্রাফার তহবিলটি গঠন করেছে ফরম্যাট। তাদের লক্ষ্য হলো, সেই সব স্বনিয়োজিত ফটোগ্রাফারের সহায়তা করা, যাঁরা কোভিড-১৯-এর কারণে আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন। ফরম্যাট হলো একটি অনলাইন পোর্টফোলিও প্ল্যাটফর্ম, যেখানে পোর্টফোলিও তৈরির মাধ্যমে নিজেদের কাজ প্রদর্শন ও বিক্রি করতে পারেন ফটোগ্রাফাররা। এই তহবিল থেকে একেকজনকে ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হয়।
সংবাদ প্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়তা
ফেসবুক (গ্লোবাল)

সংবাদশিল্পকে বাঁচাতে ফেসবুক এরই মধ্যে ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে থেকে আড়াই কোটি ডলার খরচ করা স্থানীয় ছোট ছোট গণমাধ্যমের জন্য জরুরি সহায়তা হিসেবে, ফেসবুক জার্নালিজম প্রজেক্টের মাধ্যমে। আর বাকি সাড়ে সাত কোটি ডলার তারা খরচ করবে বিপণন কার্যক্রমে, যেন বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে অর্থ পৌঁছাতে পারে।

কোভিড-১৯ কমিউনিটি নেটওয়ার্ক গ্র্যান্ট প্রোগ্রামের আওতায় তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৫০টি স্থানীয় গণমাধ্যমকে সহায়তা দিয়েছে, প্রথম দফায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এই দুই দেশের আরও ৪০০টি ক্ষুদ্র গণমাধ্যমকে সহায়তা দেওয়া হয়। তবে তৃতীয় রাউন্ড কবে আসবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এই তহবিলের আওতায় করোনাভাইরাসের খবর সংগ্রহ ও প্রকাশের জন্য ৫০০০ মার্কিন ডলার করে দেওয়া হয় গণমাধ্যমগুলোকে।

আগ্রহীদেরকে এই লিংকে গিয়ে ফেসবুক জার্নালিজম প্রজেক্ট নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করতে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

এর বাইরে, স্মল বিজনেস গ্র্যান্ট প্রোগ্রামের আওতায় আরও ১০ কোটি ডলার অনুদান দিচ্ছে ফেসবুক। এখান থেকে ৩০টি দেশের ৩০ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসা তাদের কাছ থেকে ছোট অনুদান বা বিজ্ঞাপন ক্রেডিট পাবে।

গুগল (গ্লোবাল)

স্থানীয় কমিউনিটি নিয়ে কাজ করছে, এমন ছোট ও মাঝারি নিউজরুমগুলোকে জরুরি অর্থসহায়তা দেওয়ার জন্য জার্নালিজম ইমার্জেন্সি রিলিফ ফান্ড গঠন করেছে গুগল। কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে মানসম্পন্ন সাংবাদিকতা জারি রাখাই এই অনুদানের প্রধান উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে তারা। অন্তত এক বছর ধরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং দুই থেকে এক শ জন পূর্ণকালীন কর্মী আছেন, এমন নিউজরুমগুলো এই অনুদানের জন্য আবেদন করতে পারবে।

করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে ভুয়া তথ্য ও গুজব মোকাবিলায় ফ্যাক্টচেকার এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৬৫ লাখ ডলার দেবে গুগল। সম্প্রতি তারা এই ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে গুগল নিউজ ইনিশিয়েটিভ প্রথমে ফার্স্ট ড্রাফটকে সহায়তা করছে। তারা এরই মধ্যে কোভিড-১৯ নিয়ে সাংবাদিকদের জন্য একটি রিসোর্স হাব তৈরি করেছে, যেখানে প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে ক্রাইসিস সিমুলেশন পর্যন্ত অনেক ধরনের রিসোর্স আছে।

সুরক্ষা ও নিরাপত্তা

English
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের জন্য এই পরিসংখ্যানগুলো খুব হতাশাজনক। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের সূত্রমতে, ১৯৯২ সাল থেকে, হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩০০-র বেশি সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে ৭০০-র বেশি ক্ষেত্রে এই হত্যার কোনো বিচার হয়নি। হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। আর এখন বিশ্বজুড়ে ২৫০ জনের বেশি সাংবাদিক আছেন কারাবন্দি। সেটিও এমন কাজ করতে গিয়ে, যা বিশ্বের অনেক জায়গাতেই বিবেচনা করা হয় রুটিন রিপোর্টিং হিসেবে।

আর এই পরিস্থিতি মনে হচ্ছে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে হামলা ও হত্যা; রেকর্ড পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ম্যারি কোলভিন বা ড্যানিয়েল পার্লের মতো হাই প্রোফাইল পশ্চিমা সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত সাংবাদিকেরা স্থানীয় গণমাধ্যমে কাজ করছেন। আর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো হিমবাহের ওপরের অংশটুকু মাত্র। এর বাইরে মারধর, অপহরণ, কারাবন্দি এবং আরও অনেক ধরনের হুমকির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এগুলোও সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

হুমকিগুলো অনেক দিক থেকে আসে। মাদক ব্যবসার গোষ্ঠী বা বিদ্রোহী গ্রুপ; স্বৈরশাসক বা জাতিগত বিদ্বেষ; বুলেট অথবা সন্ত্রাসীদের বোমা; অনেক কিছুর মধ্যেই পড়তে হয় সাংবাদিকদের। একেক জায়গায় হুমকি-নিপীড়নের ধরন একেক রকম। ফলে “একক বা সহজ সমাধান” জাতীয় কিছু নেই।

এই সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করছে বেশ কিছু পেশাজীবী সংগঠন এবং বড় কিছু বহুমাত্রিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। যাদের মধ্যে আছে জাতিসংঘ এবং অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ।

গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের রিসোর্স পেজ সিরিজের অংশ হিসেবে, আমরা প্রকাশ করছি সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত এই গাইড। শুরুতেই থাকছে এ বিষয়ে এরই মধ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ গাইড আছে, সেগুলোর লিংক। এরপর থাকছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রধান কিছু আন্তর্জাতিক গ্রুপের লিংক, যারা কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা নিয়ে কাজ করে।
নিরাপদ থাকা এবং সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি কাভারের গাইড
কমিটি ফর দ্য প্রটেকশন অব জার্নালিস্টস সেফটি কিট: ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে সিপিজের চার পর্বের এই সুরক্ষা গাইড। এখানে শারীরিক, ডিজিটাল, মানসিক সুরক্ষার রিসোর্স ও টুলস সম্পর্কে মৌলিক কিছু তথ্য রয়েছে সাংবাদিক ও নিউজরুমগুলোর জন্য। এ ছাড়া সিপিজে প্রকাশ করেছে সুরক্ষাসংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন। যেমন ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ফিজিক্যাল সেফটি: সলো রিপোর্টিং এবং ফিজিক্যাল সেফটি: মিটিগেটিং সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। দেখতে পারেন সিপিজের ইউএস ইলেকশন ২০২০: জার্নালিস্ট সেফটি কিট।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্র্যাকটিক্যাল গাইড। ২০১৭ সালে এটি হালনাগাদ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও ইউনেসকো। পাওয়া যাচ্ছে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায়।

বিক্ষোভ কাভার করার জন্য নিরাপত্তা ম্যানুয়াল তৈরি করেছে আবরাজি (দ্য ব্রাজিলিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম।) পুরো ম্যানুয়ালটি এখানে পাবেন ইংরেজিতে।

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের সুরক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালা: ২০১৫ সালে এই গাইডলাইন তৈরি করেছিল বড় কিছু কোম্পানি ও সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট সংগঠনের জোট। এটি পরবর্তীকালে অনুবাদ করা হয়েছে সাতটি ভাষায়।

নারী সাংবাদিকদের সুরক্ষাসংক্রান্ত হ্যান্ডবুক। ২০১৭ সালে ৯৫ পৃষ্ঠার এই গাইড তৈরি করেছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওমেন ইন রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন। যুদ্ধ ও সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কাজ করা নারী সাংবাদিকদের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকি নির্ধারণ, অনলাইন নিপীড়ন ও ভ্রমনসংক্রান্ত সুরক্ষা বিষয়ে আলাদা অধ্যায় আছে এই গাইডে।

অনলাইনে সাংবাদিকদের হয়রানি: ট্রোল বাহিনীর আক্রমণ: সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক বিষয়গুলো চিহ্নিত করা এবং তাদের সাহায্য দিতে ১২টি কার্যালয়ের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া হয়, ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর জন্য। সরকার, আন্তর্জাতিক সংগঠন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সংবাদমাধ্যম ও বিজ্ঞাপনদাতারা কীভাবে এসব ক্ষতিকর অনলাইন প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, সে জন্য ২০১৮ সালে ২৫টি পরামর্শ হাজির করেছে আরএসএফ। দেখুন জিআইজেএন-এর সারসংক্ষেপ।

সংবাদমাধ্যমগুলোর নিরাপত্তাসংক্রান্ত স্ব-মূল্যায়ন। এটি এসিওএস অ্যালায়েন্সের একটি টুল। যা দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত চর্চা ও প্রটোকল যাচাই করতে পারে এবং সেটি আরও উন্নত করতে পারে। এসিওএস অ্যালায়েন্স বিভিন্ন সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট গ্রুপের একটি জোট। ২০১৯ সালের এই স্ব-মূল্যায়ন টুলটিতে আছে “কিছু প্রধান প্রশ্ন ও গাইডলাইন, যা সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে একটি গঠনমূলক আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং সেগুলো কার্যকর ও বাস্তবসম্মতভাবে কাজে লাগানোর বিষয়ে অনুপ্রাণিত করবে।” (স্ব-মূল্যায়নের টুলটি এখানে পাবেন ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায়।)

সেফ+সিকিউর ২০১৯ সালে প্রকাশ করেছে একটি হ্যান্ডবুক ও ইস্যুকেন্দ্রিক চেকলিস্ট। তথ্যচিত্র নির্মাতাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেরা কিছু রিসোর্সের খবর আছে এখানে। একই সঙ্গে আছে এ বিষয়ে আরও তথ্য বা প্রশিক্ষণ কোথায় পাওয়া যাবে, সেই খোঁজও।

হয়রানি-হেনস্তার শিকার হওয়া সাংবাদিকদের জন্য আইপিআইয়ের ৫ পরামর্শ। ২০২০ সালে এই প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট। অনলাইনে হয়রানির শিকার হওয়া সাংবাদিকদের কীভাবে সাহায্য-সমর্থন দেওয়া যায়, তা নিয়ে নিউজরুমগুলোর জন্য প্রটোকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এখানে। অনলাইনে হয়রানি বিষয়ে অন্যান্য রিসোর্সও তৈরি করেছে আইপিআই।

অনলাইন হয়রানির ফিল্ড ম্যানুয়াল। ২০১৭ সালে এটি তৈরি করেছে পেন আমেরিকা। “লেখক, সাংবাদিক, তাদের মিত্র এবং চাকরিদাতারা কীভাবে অনলাইনে বিদ্বেষ ও হয়রানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেন, তার কার্যকর কিছু কৌশল ও রিসোর্সের” হদিস রয়েছে এখানে।

গণমাধ্যমকর্মী এবং সশস্ত্র সংঘর্ষ। ২০১৭ সালে এই হ্যান্ডবুক তৈরি করেছে ব্রিটিশ রেড ক্রস এবং ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড কমপারেটিভ ল (বিআইআইসিএল)।

ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কোন জিনিসগুলো খেয়াল রাখা দরকার, তা জানিয়ে দুই পৃষ্ঠার চেকলিস্ট তৈরি করেছে দ্য এসিওএস অ্যালায়েন্স।

পরিবর্তনের জন্য রিপোর্টিং: সংকটপূর্ণ অঞ্চলের স্থানীয় সাংবাদিকদের হ্যান্ডবুক। ২০০৯ সালে এটি তৈরি করেছে ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিং। এখানে একটি অধ্যায় আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে। এটি পাওয়া যাচ্ছে ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, রাশিয়ান, কাজাখ, কিরগিজ ও তাজিক ভাষায়।

দ্য সেফটি নেট ম্যানুয়াল। উপশিরোনাম: অস্বাভাবিক ও জরুরি পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের জন্য গাইডলাইন। ২০১৭ সালে এটি তৈরি করেছে সাউথইস্ট ইউরোপ মিডিয়া অর্গানাইজেশন। এটি পাওয়া যাচ্ছে ইংরেজিসহ ১১টি আঞ্চলিক ভাষায়।

দ্য জেমস ডব্লিউ. ফোলি জার্নালিস্ট সেফটি গাইড: এ কারিকুলাম প্ল্যান ফর কলেজ জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইনস্ট্রাক্টর। ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট সিরিয়াতে হত্যা করা হয়েছিল সাংবাদিক জেমস ফোলিকে। তাঁকে নিয়ে নির্মিত এইচবিওর একটি তথ্যচিত্রের সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে পাঁচ সেশনের এই কোর্স। এই শিক্ষা কার্যক্রমে আছে অনেক রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল। বিশেষত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবন্ধ। যেগুলোতে পরিবেশ-পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে এবং নানাবিধ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। “FoleySafety” এই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এখানে অংশ নিতে পারবেন।

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ওপেন সোর্স ইনভেস্টিগেশনের সময় কীভাবে শনাক্ত করবেন অন্যদের দ্বারা সংক্রামিত মানসিক চাপ এবং কীভাবে সেটি কাটিয়ে উঠবেন, ২০১৮ সালে প্রবন্ধটি লিখেছিলেন হান্না ইলিস। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্কম্যান ক্লাইন সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির গবেষণা সহযোগী।

ফ্রিল্যান্স ফাইলস: সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্যও সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। ২০১৭ সালে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টসের ওয়েবসাইটে এই প্রবন্ধ লিখেছিলেন ডেল উইলম্যান।

সাংবাদিকতা ও সংক্রমিত মানসিক চাপ: সাংবাদিক, সম্পাদক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি গাইড। অন্যদের কাছ থেকে যে মানসিক চাপ সংক্রমিত হয়, এবং তা মোকাবিলায় যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়, তা নিয়ে বাস্তব কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালের এই হ্যান্ডবুকে। এটি লিখেছেন স্যাম ডুবারলি ও মাইকেল গ্রান্ট।

নারী সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয় ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন। এখানে দেখুন তাদের রিসোর্সের তালিকা।

সাংবাদিকদের আত্ম-যত্ন, ২০১৯ সালের  নিকার সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছিল এই “বাস্তবসম্মত গাইড”।

সাংবাদিকদের টিকে থাকার গাইড। এখানে আছে অ্যানিমেশন দিয়ে বানানো নয়টি লেসন। কীভাবে টিয়ার গ্যাস সামলাতে হবে, এমন তথ্যও আছে এখানে। ২০১২ সালে এটি তৈরি করেছিল সামির কাসির ফাউন্ডেশনের এসকিইজ সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড কালচারাল ফ্রিডম।

নৃশংসতা নিয়ে রিপোর্টিং। সাক্ষাৎকার নেওয়া বিষয়ে এই লেখা ২০১৪ সালে লিখেছিলেন পিটার দু টোয়িত। এখানে একটি অধ্যায় আছে “নিজের যত্ন নেওয়া” প্রসঙ্গে।

জরুরি প্রটোকল কেস স্টাডি। এটি লিখেছেন রাশিয়ান সংবাদপত্র মেডুজার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইভান গোলুনভ। জিআইজেসি১৯-এ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে, তাঁকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন মেডুজা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল।

গ্রাউন্ডট্রুথ: প্রতিনিধিদের জন্য একটি ফিল্ড গাইড। মাঠে গিয়ে সাংবাদিকদের কোন জিনিসগুলো মেনে চলতে হবে ও চর্চা করতে হবে, তার একটি গাইডলাইন আছে এখানে। আরও আছে অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের প্রবন্ধ। ২০১৯ সালের এই প্রবন্ধটি দেখুন: হুমকি ও হয়রানি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পাঁচটি পরামর্শ

ট্র্যাজেডি ও সাংবাদিক। ১৯৯৫ সালে এটি তৈরি করেছে ডার্ট সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড ট্রমা।
সাংবাদিকতার সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত গ্রুপ
আ কালচার অব সোসাইটি (এসিওএস)। ২০১৫ সালের শেষে এই জোট তৈরি হয়েছিল বড় নিউজ কোম্পানি ও সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট সংগঠনদের নিয়ে। তাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে কাজ করা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের সুরক্ষা মানদণ্ড আরও উন্নত করা। নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান, প্রশিক্ষণ, বীমা ও যোগাযোগের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে এই জোট।

আর্টিকেল ১৯: এটি লন্ডনভিত্তিক সংগঠন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে আসলে তা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও দেনদরবার করে আর্টিকেল ১৯। এ ছাড়া তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, গবেষণা করে ও সেগুলো প্রকাশ করে। পেশাগত কারণে নিজেদের বা পরিবারের সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে আছে, এমন সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রচার চালায় আর্টিকেল ১৯।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে): নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন পরিচালিত হয় সাংবাদিকদের দ্বারা গঠিত পরিচালনা পর্ষদ দিয়ে। সিপিজে প্রতিটি দেশ ধরে ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক নানা মিশন পরিচালনা করে এবং সাংবাদিক নিপীড়ন ও হত্যার বিচার না হওয়ার তালিকা হালনাগাদ করে। সিপিজের জার্নালিস্ট অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম থেকে আইনি, চিকিৎসা বা অন্য কোথাও পুনর্বাসনের সহায়তা পান হুমকির মুখে থাকা সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে তারা সাহায্য-সহযোগিতা দেয় হত্যার শিকার হওয়া বা জেলে থাকা সাংবাদিকদের পরিবারকে।

ফাস্ট ড্রাফট ‍তৈরি করেছে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম। যেখান থেকে নিউজরুমগুলো অনলাইন হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুত হওয়াসংক্রান্ত সহায়তা পাবে। তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

গ্লোবাল জার্নালিস্ট সিকিউরিটি। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াশিংটনভিত্তিক এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন সংবাদকর্মী, নাগরিক সাংবাদিক, মানবাধিকার ও এনজিও কর্মীদের। তারা উন্নত ও উদীয়মান গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নিরাপত্তারক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেন যে কীভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মানদণ্ডগুলো মেনে চলা যায় এবং কীভাবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নিরাপদে লেনদেন করতে হবে।

ইন্টার আমেরিকান প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (আইএপিএ): মিয়ামি, ফ্লোরিডাভিত্তিক এই সংগঠন গড়ে উঠেছিল ১৯৪০-এর দশকের শেষ দিকে। এখন তাদের সদস্যসংখ্যা ১৪০০। এবং তারা ছড়িয়ে আছে চিলি থেকে কানাডা পর্যন্ত। সংগঠনটি পুরো আমেরিকা মহাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ও এর পক্ষে কাজ করে। কোনো সাংবাদিক হত্যার শিকার হলে তারা একটি র‌্যাপিড রেসপন্স ইউনিট নিয়োগ করে। প্রতিটি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য তারা প্রকাশ করেছে একটি “ঝুঁকি মানচিত্র”। সাংবাদিক নির্যাতন বা হত্যা বিচার না হওয়ার ব্যাপারটি তারা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষেণ করে। এ বিষয়ে এই অঞ্চলের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে তাদের “ইমপিউনিটি প্রজেক্ট”-এ।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে): ব্রাসেলসভিত্তিক এই সংগঠন আধুনিক রূপে যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৫২ সালে। আইএফজে নিজেদের বর্ণনা দেয় পুরো বিশ্বের সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে। তারা পর্যবেক্ষণ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে দেনদরবার করে। তারা প্রতিষ্ঠা করেছে ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সেফটি ইনস্টিটিউট।

ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অব ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ (আইএফইএক্স): টরন্টোভিত্তিক এই সংগঠনের সবচেয়ে দৃশ্যমান ভূমিকা হলো: তথ্যের সূত্র। তারা পরিচালনা করে, যাকে তারা বলে “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তারিত এবং উন্মুক্ত তথ্য সেবা”। তাদের আছে একটি সাপ্তাহিক নিউজলেটার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রবন্ধের নিয়মিত তালিকা প্রকাশ এবং বিশ্বজুড়ে তাদের সদস্যদের থেকে আসা “অ্যাকশন অ্যালার্ট”। ৫০টির বেশি দেশে ৯০টির বেশি সহযোগী সংগঠন আছে তাদের। ২০১১ সালে তারা ২৩ নভেম্বরকে ইন্টারন্যাশনাল ডে টু এন্ড ইনপিউনিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সেফটি ইনস্টিটিউট (আইএনএসআই): এটি ব্রাসেলসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ২০০৩ সালে এটি গড়ে উঠেছিল আইএফজে ও আইপিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে। এটি নিজেদের বর্ণনা দেয় এভাবে: “বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করা সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি কাজ করে সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকদের সহায়তা দেওয়ার গ্রুপ ও ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত জোটের মাধ্যমে।” তারা প্রশিক্ষণ আয়োজন করে, সুরক্ষাসংক্রান্ত কৌশল-পরামর্শ ও ম্যানুয়াল তৈরি করে। এবং সাংবাদিকদের ওপর আসা যেকোনো আঘাত পর্যবেক্ষণ করে। সেটি সহিংস আক্রমণই হোক বা কোনো দুর্ঘটনা।

ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই): ১৯৫০ সালে গঠিত হয়েছিল  ভিয়েনাভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান। আইপিআই নিজেদের বর্ণনা দেয় “সম্পাদক, সংবাদমাধ্যমের নির্বাহী ও অগ্রণী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক” হিসেবে। আইএনএসআই-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, তারা পর্যবেক্ষণ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসংক্রান্ত পরিস্থিতি এবং প্রকাশ করে বার্ষিক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম রিভিউ। ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোতে তারা নিয়মিত মিশন পরিচালনা করে এবং সাংবাদিকদের ওপর আসা হামলাগুলো চিহ্নিত করে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্যারিসভিত্তিক এই সংগঠন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনসংক্রান্ত তথ্য এক জায়গায় করে আরএসএফ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মিশনগুলোতে সহায়তা দেয়। সুরক্ষার লক্ষ্যে সংবাদমাধ্যম বা ব্যক্তি সাংবাদিকের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্থিক সহায়তা দেয়। সহায়তা দেয় জেলে থাকা সাংবাদিকদের পরিবারকেও। কাজ করে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে। বিশেষভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে। পেশাগত কাজে বিপজ্জনক জায়গায় যাচ্ছেন, এমন সাংবাদিকদের তারা বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও হেলমেট ভাড়া দেয় এবং বিমার ব্যবস্থা করে।

ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজপেপার এবং নিউজ পাবলিশার্স (ডব্লিউএএন-আইএফআরএ): ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্যারিসভিত্তিক এই সংগঠন। পাঁচটি মহাদেশ থেকে ১৮ হাজারের বেশি প্রকাশনার প্রতিনিধিত্ব করে ডব্লিউএএন। মৌলিক নানা বিষয়ে তথ্য ও সহায়তা প্রদান ছাড়াও ডব্লিউএএন বিশেষভাবে নজর দেয় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণের দিকে। এবং তারা “দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পেইন এবং বিশেষ ঘটনাগুলো নিয়ে প্রচারপ্রচারণা চালায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে।”

ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড: নেদারল্যান্ডসের এই গণমাধ্যম উন্নয়ন এনজিও গঠন করেছে রিপোর্টার্স রেসপন্ড। এটি একটি আন্তর্জাতিক জরুরি তহবিল। যেখান থেকে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে সরাসরি সহায়তা দেওয়া হয়। স্থানীয় নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়েও কীভাবে দ্রুততম সময়ে আবার কর্মকাণ্ড শুরু করা যায়, সে বিষয়ে সক্ষম করে তোলা তাদের লক্ষ্য। কোনো সহায়তার অনুরোধ এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দেওয়ার লক্ষ্য এই গ্রুপের।

ক্যালিটি ফাউন্ডেশন: সুইডেনভিত্তিক এই তহবিল থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয় বিশ্বের সেসব রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফারদের, যারা পেশাগত কারণে কারাগারে আছেন, শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছেন বা নির্বাসনে যাচ্ছেন।

লাইফলাইন ফান্ড: দ্য লাইফলাইন এমব্যাটলড সিএসও অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড থেকে জরুরি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় হুমকি বা হামলার মুখে থাকা বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি গ্রুপকে। যার মধ্যে সাংবাদিকদের সংগঠনও আছে। ১৭টি সরকার ও ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায়, লাইফলাইন দিয়ে থেকে স্বল্পমেয়াদি জরুরি অনুদান। এটি তারা দেয় চিকিৎসা সহায়তা, আইনি সহায়তা, আইনি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, অস্থায়ীভাবে অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তর, নিরাপত্তা ও সামগ্রী প্রতিস্থাপনের জন্য।

রোরি পেক ট্রাস্ট: লন্ডনভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং তাদের পরিবারকে বাস্তবিক সাহায্য-সহযোগিতা দেয়। তাদের কর্মদক্ষতা, সুরক্ষা, নির্ভয়ে কাজ করতে পারার অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। ফ্রিল্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম, ফ্রিল্যান্স রিসোর্স, রোরি পেক অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে।

 

আরআইএসসি: রিপোর্টার্স ইনস্ট্রাক্টেড ইন সেভিং কলিগস একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রুপ, যারা বিশ্বের দুর্গম ও সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কর্মরত সাংবাদিকদের বিনা মূল্যে সুরক্ষা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তাদের প্রশিক্ষণগুলোর প্রথম দুদিন কোনো সংকট মোকাবিলায় সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর চার দিন থাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ। তাদের কর্মকাণ্ডগুলোতে সুযোগ পান অভিজ্ঞ, কর্মরত, ফ্রিল্যান্স ও আঞ্চলিক সাংবাদিকেরা। এটি প্রশিক্ষণগুলো আয়োজন করা হয় বিভিন্ন জায়গায় এবং কারা আবেদন করছে, সেটি দেখেও নির্ধারিত হয়।

হুইসেলব্লোয়িং: যারা গোপনে জানিয়ে দেন অনিয়মের খবর

English

হুইসেলব্লোয়ার তারাই, যারা প্রতিষ্ঠান বা কর্মপ্রক্রিয়ার ভেতরে থেকে দুর্নীতি বা অনিয়মের খবর ফাঁস করে দেন। সাংবাদিকদের জন্য তারা তথ্যের খুব গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের ভেতরে থেকে মারাত্মক সব তথ্য তারা জানিয়ে দেন। ফলে প্রতারণা ও অপচয় থেকে শুরু করে অপরাধের চক্রান্ত এবং যুদ্ধাপরাধের মত খবরও প্রকাশ হয়ে যায়।

হুইসেলব্লোয়ারদের উদ্দেশ্য বুঝে তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা সাংবাদিকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইরকম গুরুত্বপুর্ণ হচ্ছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সৌভাগ্যক্রমে, হুইসেলব্লোয়িং নিয়ে বিশ্বব্যাপী অনেক এনজিও কাজ করে এবং প্রচুর তথ্যও পাওয়া যায়।

এই বিষয়ে সাংবাদিকদের সাহায্যের জন্য জিআইজেএন তৈরি করেছে এই রিসোর্স। এখানে হুইসেলব্লোয়িং ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক এবং ন্যাশনাল হুইসেলব্লোয়ার্স সেন্টার থেকে বিভিন্ন তথ্য নেয়া হয়েছে। আপনি সংশ্লিষ্ট কোনো গ্রুপের বিবরণ বা রিসোর্স যুক্ত করতে চাইলে hello@gijn.org এ লিখুন।
কোনো প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি, অবৈধ, প্রতারণামূলক বা ক্ষতিকর কাজের সাথে জড়িত থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মী যখন প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থের ওপরে জনস্বার্থকে স্থান দিয়ে সেই কার্যক্রমের গোপন তথ্য ফাঁস করে দেন – তাকেই হুইসেলব্লোয়িং বলে।
– রালফ নেডার, ভোক্তা আইনজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট

বিশেষজ্ঞদের দিকনির্দেশনা

যেসব হুইসেলব্লোয়ার আপনাকে তথ্য দিতে চায়, তাদের নিয়ে আপনাকেও ভাবতে হবে যত্নের সাথে।

তাদের সঙ্গে কাজ করার উপায় নিয়ে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা পরামর্শ ও নির্দেশনার একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করেছে জিআইজেএন। বিস্তারিত জানতে রিপোর্টগুলো পড়ে দেখতে পারেন। 

সাংবাদিকদের জন্য পেরুজিয়া নীতিমালা: “ডিজিটাল যুগে হুইসেলব্লোয়ারদের সঙ্গে কাজ” – ২০১৯ সালে প্রকাশিত হওয়া এই গাইড লিখেছেন জুলি পোসেত্তি, ড. সুলেট ড্রেইফাস, এবং নাওমি কোলভিন। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ইতালির পেরুজিয়া শহরে  আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ২০জন সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞ একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন। ব্লুপ্রিন্ট ফর ফ্রি স্পিচ আয়োজিত এই আলোচনা থেকেই গাইডটির খসড়া তৈরি করেন লেখকরা। এরপর তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, আইন ও একাডেমিক কমিউনিটির সঙ্গে। আর সবশেষে তুলে আনেন এই ১২টি নীতি: 
১.

জমির নথি থেকে যেভাবে দুর্নীতি উন্মোচন করলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা

English

জমির রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে অনেক বড় বড় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। যা দুর্নীতির নানান ঘটনা উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

নিচে তেমন কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো। পড়লেই ‍বুঝতে পারবেন, সম্পত্তির রেকর্ড অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কতটা বৈচিত্র্য আনতে পারে। এদের বেশিরভাগই করা হয়েছে ২০১৮ সালে।
কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রমাণে জমির নথি
“মিলিওনেয়ারস অ্যামোং দ্য নোমিনিস” নামের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সারায়েভোর সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (সিআইএন)। অনুসন্ধানটি পরিচালিত হয় বসনিয়ার ১২১ জন রাজনীতিবিদের সম্পত্তি নিয়ে, যার কেন্দ্রে ছিলেন শীর্ষ ১০ ধনী-রাজনীতিবিদ। সিআইএনের রিপোর্টাররা ভূমি রেকর্ড এবং ঘোষিত সম্পদের বিবরণ থেকে তাদের সম্পত্তির যাবতীয় তথ্য যোগাড় করেন। পরে সব তথ্য “রাজনীতিবিদদের সম্পদ” নামের একটি ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়।

মাঝে মাঝে সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্পোরেট নির্বাহীদের বিলাসবহুল বাড়ীর খবরও উন্মোচন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। আর আর্মেনিয়ার সাংবাদিকরা এই কাজ করেছেন বেশ কয়েকবার।

আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা কীভাবে আয় গোপন করে সেই টাকা দিয়ে চেক রিপাবলিকে সম্পদ গড়েছেন – তা খুঁজে বের করে হেটকিউ নামের একটি অনলাইন। রিপোর্টটি প্রকাশ করে দেশটির অ্যাসোসিয়েশন অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস। গভীর এই অনুসন্ধানী সিরিজের আরেকটি পর্বে দেখানো হয়, আর্মেনিয়া পুলিশের সাবেক প্রধান কীভাবে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের একটি বিলাসবহুল বাড়ী ২০ লাখ ডলারে কিনে নেন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে।”

ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় আদালতের বিচারক মারসেলো এবং সিমোন ব্রেটাসের মালিকানাধীন ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের বিশাল অট্টালিকা নিয়ে রিপোর্ট করে দি ইন্টারসেপ্ট। পরে পিয়াউই ম্যাগাজিনের রিপোর্টাররা জমি নিবন্ধনের রেকর্ড ঘেঁটে খুঁজে বের করেন – এই বিপুল সম্পদের মালিক আসলে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিচেল তেমের।

চীনের কর্পোরেট গ্রুপ এইচএনএ’র নির্বাহীরা বিলাসবহুল যত বাড়ী কিনেছেন, তার তালিকা প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। আর এই অনুসন্ধানে বড় ভূমিকা রেখেছে আবাসন রেকর্ড।

বিদেশে নাইরেজিয়ান রাজনীতিবিদরা কত সম্পদ গড়েছেন, এই নিয়ে একটি অনুসন্ধান করেছিল দ্য হেরাল্ড ইন নাইজেরিয়া। তারা রিপোর্টটি দাঁড় করিয়েছিল আবাসন বিষয়ক ওয়েবসাইট এবং গুগল থেকে নেয়া ছবি ব্যবহার করে।

রাশিয়ার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত এলাকায় লাখ লাখ ডলার দাম দিয়ে জমি কেনা হয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন বডিগার্ডের নামে – পড়ুন নোভায়া গেজেটার এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট (ওসিসিআরপি), তাদের একটি রিপোর্টে দেখিয়েছে, রাশিয়ার সাবেক শিল্পমন্ত্রী কীভাবে একটি গলফ কোর্সের কয়েক লাখ ডলার মূল্যের শেয়ার আত্মসাৎ করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়: “এই সম্পত্তির মালিক ছিলেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।  কিন্তু দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তা নজরে পড়ে যায়, সেই মন্ত্রীর।”

পেরুতে জাল-জালিয়াতি করে জমি বেচাকেনার একটি চক্রকে উন্মোচন করেছিল মোংগাবে।  এই রিপোর্টের কারণে, মিথ্যা নথিপত্র তৈরির অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তা আটক হন।
ফাঁস হওয়া তথ্যে সম্পত্তির বিবরণ
ওপরে যত রিপোর্টের কথা বলা হয়েছে, তাদের সবই উন্মুক্ত, তথা পাবলিক রেকর্ড-ভিত্তিক। কিন্তু নিচের প্রতিবেদনগুলো তৈরি করা হয়েছে ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

জমি বা সম্পত্তির রেকর্ড কীভাবে খুঁজবেন, জানতে হলে পড়ুন জিআইজেএনের প্রোপার্টি গাইড।সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে জুলাই মাসে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০৬ লাখ মার্কিন ডলার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস – আইসিআইজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর কারণ ছিল পানামা পেপার্স। সেখানে উঠে আসে, বিদেশে নওয়াজ পরিবারের সম্পত্তির বিষয়টি।

“অবৈধ সম্পদ বিদেশে পাচার কীভাবে দুবাইয়ের সম্পত্তির বাজারকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলছে” সম্প্রতি তা বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানী প্রকল্প স্যান্ডকাসলস থেকে। অনুসন্ধানটি করেছে সি৪এডিএস নামের একটি আমেরিকান সংগঠন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবাসন বিশেষজ্ঞরা দুবাইয়ে বিলাসবহুল বাড়ী বেচাকেনার যে তথ্য সংকলন করেছিলেন, সেটিই ফাঁস করে দেয়া হয় সি৪এডিএসের কাছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংগঠন ফাইনান্স আনকভার্ড ফাঁস হওয়া সেই তথ্য ব্যবহার করে লিখেছে, “দুবাই লিকস: গোপন সম্পত্তি রেকর্ড বলছে, আমিরাত হচ্ছে পৃথিবীর “কোস্তা দেল ক্রাইম।” এই প্রতিবেদন দুবাইয়ের শত শত বিলাসবহুল সম্পত্তির মালিকদের পরিচয় উন্মোচন করে দেয়। সি৪এডিএস প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছিলো, তার আরো গভীরে যাওয়ার জন্য এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে ওসিসিআরপি’র সংকলন করা রেকর্ড।

২০১৫ সালে সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে খুব বিখ্যাত একটি অনুসন্ধান প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখানো হয়, নিউ ইয়র্ক শহরের সবচেয়ে দামী কয়েকটি আবাসিক ভবন, কীভাবে কেনা হচ্ছে কাগজ-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে। অনুসন্ধানটি শেষ করতে সময় লেগেছে দুই বছর। এই প্রতিবেদনে রিপোর্টাররা তাদের সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। ধনী ক্রেতাদের আগ্রহ কোথায় তা বুঝার জন্য তারা বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করেন। কাগজ-সর্বস্ব শেল কোম্পানিগুলোর তথ্য উদ্ঘাটন করতেও এই অনুসন্ধানটি কাজে এসেছে।
জমির তথ্যে লুকিয়ে থাকে সামাজিক সমস্যা
সামাজিক এবং নীতিমালার সমস্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদনেও ভূমি বিষয়ক তথ্য ব্যবহার করা যায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার সম্পত্তি কর নীতিমালার কারণে কীভাবে মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন এমন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস। এই প্রতিবেদনের জন্য তারা ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি কাউন্টি থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হস্তান্তর সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে।

ভূমিধ্বসের ঝুঁকিতে থাকা একটি এলাকায় নিয়ন্ত্রণহীন নির্মাণকাজের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে, ক্রাইম মলদোভা। “দ্য ‘স্লাইডিং’ বিজনেস অফ দা স্টাটি ফ্যামিলি” নামের সেই অনুসন্ধানে তারা সম্পত্তির মালিকানার রেকর্ড ব্যবহার করেছে।

একজন ইথিওপিয়ান কফিচাষীর পিতৃদত্ত জমি ফেরত পাওয়ার লড়াই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্লেইস-এ। জমির আনুষ্ঠানিক দলিল না থাকলে কী ধরণের সমস্যা হয়, তা-ই ছিল এই অনুসন্ধানের মূল উপজীব্য। প্লেইস হচ্ছে ভূমি অধিকার সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন তাদের পৃষ্ঠপোষক। পরিবেশ বিপর্যয় বা খাদ্যের অভাব থেকে শুরু করে সংঘাত এবং যুদ্ধের মত কারণে কেউ ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে – সমাজ, রাজনীতি বা অর্থনীতিতে তার যে প্রভাব পড়ে, তার সবকিছুই বিশ্লেষণ করে প্লেইস। তাদের আরেকটি প্রতিবেদন ছিল: “কৃষকদের জন্য ভূমি অধিকার কি ঘানার কোকোয়া খাতকে বাঁচাতে পারবে?” নেটওয়ার্ক অফ ইরাকি রিপোর্টারস ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ২০১৭ সালে “আইসিসের আবাসন সাম্রাজ্য: নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং সম্পত্তি জালিয়াতির প্রত্যাবর্তন,” শিরোনামে একটি অনুসন্ধান প্রকাশ করে। সেখানে তারা উন্মোচন করে, আইসিস কীভাবে জমির দলিল বিকৃত করে মানুষের বাড়িঘর দখল করে নিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্য প্রাণী চোরাচালান প্রতিরোধে ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের সীমানায় নিরাপদ অঞ্চল তৈরির প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান করে অক্সপেকার্স। তারা দেখতে পায় “দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সহায়তায় ভিনদেশী ধনীরা জায়গাটি দখল করে ফেলেছে।” এই অনুসন্ধানে তারা কী পদ্ধতি এবং টুল ব্যবহার করেছে, দেখে নিন এই প্রতিবেদনে।
সচিত্র উপস্থাপনা
যেখানে ডেটা আছে, সেখানেই গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তা উপস্থাপনেরও সুযোগ থাকে।

গ্যাস স্টেশন, অবকাঠামো সংস্কার এবং ক্যাফেসহ কয়েকশ অবৈধ নির্মাণ-কাজের এলাকাভিত্তিক চিত্র, গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে কিয়েভ পোস্টের এই প্রতিবেদনে।

নিউ ইয়র্ক শহরের আবাসন বিষয়ক গণমাধ্যম রিয়েল ডিল “প্রথমবারের মতো একটি অসাধারণ র‍্যাংকিং” প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল “নিউ ইয়র্কের মালিক কে?”

জমির মালিকানা: জানা জরুরি, কিন্তু পাওয়া কঠিন

English

জমির মালিকানা কার – এই তথ্য খুঁজে বের করা বেশ কঠিন কাজ। সব দেশেই সম্পত্তির নিবন্ধন পদ্ধতি চালু আছে, তবু তথ্যের মান এবং তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলে থাকেন, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশের নিজ মালিকানাধীন জমির আইনগত নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু তাদের এই পরিসংখ্যানও অনুমান-নির্ভর।

তারওপর সম্পত্তির অসম্পূর্ণ বা ভুল রেকর্ড তো আছেই।

২০১৮ সালের একটি ব্লগ পোস্টে বিশ্বব্যাংকের ভূমি বিশেষজ্ঞ ক্লস ডেইনিংগার বলেন, “বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দেশ, তাদের রাজধানীতে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির নিবন্ধন বা মানচিত্র তৈরি করতে পারেনি। রাজধানীর বাইরে তো দূরের কথা, অনেক সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নিবন্ধনই করা হয় না।” বিশ্বব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি রেকর্ডের নিরাপত্তায় ঘাটতির মানে, একই জমি একাধিক মালিকের নামে তালিকাভুক্ত হতে পারে যে কোনো সময়ই।

তারপরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও হংকংয়ের মতো অনেক উন্নত দেশে  ভূমি নিবন্ধনের তালিকা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখান থেকে মূল্যবান তথ্য বের করে আনা সম্ভব। রেকর্ডগুলো সাধারণত স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। কেন্দ্রীয় জাতীয় নিবন্ধন এবং অনলাইনে তা না-ও পাওয়া যেতে পারে। ডেইনিংগারের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও কম দেশ ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণ করে।

আরেকটি জটিলতা হচ্ছে. ব্যক্তি-গোপনীয়তা রক্ষার্থে অনেক দেশে সম্পত্তির মালিকের নাম প্রকাশ করা হয় না। উন্নয়নশীল এবং উন্নত – দুই ধরণের দেশেই এমনটা ঘটতে দেখা যায়।

খুঁজে পাওয়া সম্ভব এমন যে কোনো ভূমি রেকর্ড পেতে আপনাকে সাহায্য করবে জিআইজেএনের এই নির্দেশিকা। শুরুতেই থাকছে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় উৎসগুলোর লিংক এবং বর্ণনা।
জমির তথ্য কী কাজে আসে?

জমির মালিকানা: রিপোর্ট আপনার পায়ের নিচেই!

English

সম্পত্তি রেকর্ডের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে গণমাধ্যমে খুব একটা রিপোর্ট হয় না। কারণ বেশিরভাগ সাংবাদিকের এই বিষয় নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। ভূমি নীতি বিশেষজ্ঞরা সাংবাদিকদের এমন অনীহায় রীতিমত হতাশ।

কোনো কোনো সময় জাতীয় দৈনিকের শিরোনামে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও কর্পোরেট স্বার্থের মধ্যে ভূমি মালিকানা নিয়ে সুনির্দিষ্ট বিবাদের খবর চোখে পড়ে। কিন্তু ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, দুর্নীতি, দুর্বল ভূমি অধিকার আইন এবং অস্পষ্ট রেকর্ডের মত নেপথ্য কারণগুলো নিয়ে পর্যাপ্ত রিপোর্ট হয়না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে সঠিক রেকর্ডের অভাব। সম্পত্তি অধিকার নিয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার পেছনেও এটিই কাজ করে।

দলিলবিহীন জমির সমস্যাটি বেশ প্রকট। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ ভূমির দলিল নেই।

“বিশ্বে বড়জোর অর্ধেক দেশের রাজধানীতে (আফ্রিকাতে মাত্র ১৩ শতাংশ দেশে) ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নিবন্ধন বা মানচিত্র পাওয়া যাবে। বেশিরভাগ সময় সরকারি জমির নিবন্ধন থাকেই না” – ২০১৮ সালের একটি ব্লগ পোস্টে বলেছেন বিশ্বব্যাংকের ভূমি বিশেষজ্ঞ ক্লস ডেইনিংগার। এক-তৃতীয়াংশেরও কম দেশে ডিজিটাল রেকর্ড রাখা হয় বলে তিনি জানান।

এসব সমস্যার সামাজিক প্রভাব অনেক, বিশেষ করে, পরিবেশ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর। এসব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট হওয়া উচিৎ। দলিল না থাকলে আদিবাসী গোষ্ঠীর দখলে থাকা জমি চলে যেতে পারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের অধীনে। তার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে তারা পরিবেশেরও ক্ষতি করতে পারে। ভূমির অপর্যাপ্ত রেকর্ড দূর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হিসাবে কাজ করে। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে, ভূমি অধিকারের অভাব বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

সমস্যাটির গুরুত্ব এতই যে, জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যেও (লক্ষ্য ১.৪, সূচক ১.৪.২)  ভূমি ভোগদখলের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গ্লোবাল ল্যান্ড অ্যালায়েন্স এবং ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগ পিআর-ইনডেক্স ভূমি ভোগদখলের সুরাক্ষা নিয়ে দেশ-ভিত্তিক পরিস্থিতি পরিমাপ করবে। এটি ভবিষ্যতে লেখালেখির খোরাক যোগাতে পারে।
সংস্কারের সম্ভাব্য সুবিধা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্ভুল, গতিশীল এবং স্বচ্ছ ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থার অনেক সুবিধা। যেমন

বিনিয়োগ বৃদ্ধি
দুর্নীতি হ্রাস
কর রাজস্ব বৃদ্ধি
অবকাঠামো উন্নয়নে প্রণোদনা
কৃষকের নিরাপত্তা
স্থির এবং স্বচ্ছ আবাসন বাজার তৈরি
দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দেয়ার সক্ষমতা
নগর পরিকল্পনার উন্নয়ন
উন্নততর স্বাস্থ্য সেবায় সহায়তা
পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রসার
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা

দুর্বল রেকর্ড-রক্ষণ এবং বিস্তৃতির অভাবের কারণে বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমি নিবন্ধন এবং ক্যাডেস্টারের আধুনিকীকরণ নিয়ে কাজ করছে (২০১৮ সালের সিস্টেমেটিক প্রোপার্টি রেজিস্ট্রেশন: রিস্কস অ্যান্ড রেমেডিস দেখুন)। এক্ষেত্রে সহায়তার সম্ভাব্য নতুন ক্ষেত্র হতে পারে এরিয়াল ছবি এবং ব্লকচেইন ব্যবস্থা। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তন এবং ধরে রাখার চড়া খরচ এবং আমলাদের প্রতিবন্ধকতার কারণে এর প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস ক্যাডেস্টার আধুনিকীকরণের জন্য একটি টুলকিট তৈরি করেছে।

ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই রেকর্ডের স্বচ্ছতা এবং ভূমি নীতিমালা হয়ে উঠেছে আলোচনার মূল বিষয়।
তথ্যের বড় উৎস বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংকের অসংখ্য রিপোর্ট আছে, যা আপনাকে সম্ভাব্য অনুসন্ধানের সূত্র যোগাবে।

জাতীয় পর্যায়েও এমন রিপোর্ট রয়েছে। যেমন, বিশ্বব্যাংক ২০১৪ সালে ভিয়েতনামের ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থা নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

জমি বা সম্পত্তির রেকর্ড কীভাবে খুঁজবেন, জানতে হলে পড়ুন জিআইজেএনের প্রোপার্টি গাইড।ভিয়েতনাম ল্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি স্টাডি নামের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী “স্বচ্ছতার সমস্যা প্রভাব ফেলেছে সেখানকার স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর আচরণ, সক্ষমতা আর নেতৃত্বে।”

বিশ্বব্যাংক অনেক ভূমি বিষয়ক প্রকল্পে যুক্ত। আরো জানতে “ল্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ক্যাডেস্টার” সার্চ করুন।

বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের এই রিপোর্ট নিয়ে ফলো-আপ করা উচিত সাংবাদিকদের। এখানে মানচিত্র ও ভূমি-কর ব্যবস্থার উন্নয়নের স্যাটেলাইট ছবির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

ল্যান্ড পোর্টাল ওয়েবসাইটে ডেটাসেটের দারুণ একটি সংকলন পাওয়া যায়।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পত্রিকা বিজনেস ডে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্নীতি দমন সংস্থা একটি ভূমি সংস্কার প্রকল্পে এমন “ব্যবস্থাপনাগত দূর্বলতা” খুঁজে পেয়েছে, যার মাধ্যমে ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার দামের জমি, প্রতারণার মাধ্যমে জবর দখল করা হয়েছিলো।
অন্যান্য রিপোর্ট
ইন্টারনেট ঘাঁটলেই ভূমি সংস্কার নিয়ে অনেক রিপোর্ট পাওয়া যায়। যেমন: ইনোভেশনস ইন ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ম্যানেজমেন্ট নামের ২০১৮ সালের এই অ্যাকাডেমিক পেপার। এখানে বলা হয়েছে, “জমি নিবন্ধন ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে ছোট-বড় দুই ধরণের দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে।” এই পেপারে ভূমি নিবন্ধন সংস্কারের কিছু কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে।

কম্বোডিয়া, ভারত এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে ভূমি বিষয়ক সেবা পেতে ঘুষের পরিমাণ অনেক সময় ৫০ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়। এমন তথ্য পাবেন ল্যান্ডপোর্টাল ওয়েবসাইটের ল্যান্ড অ্যান্ড করাপশন পোর্টফোলিওতে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে আফ্রিকায় মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ মানুষ ভূমি-দুর্নীতির শিকার। যুবসমাজকে ভূমি সংস্কারে আগ্রহী করে তোলার জন্য সম্প্রতি তারা একটি প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।

কার্বিং করপোরেশন ভূমি অধিকার এবং দুর্নীতির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে একটি দুর্দান্ত গাইড প্রকাশ করেছে। সেখানে “ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির বিভিন্ন রূপ” সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা হয়েছে।

টেরোরিজম, ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন সেন্টারের ২০১৮ সালের একটি রিপোর্টে জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শার স্কুল অফ পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট বলছে, “আবাসনখাতে অর্থ পাচার – উন্নত এবং উন্নয়নশীল দুই ধরণের দেশের জন্যেই সমস্যা।”

ভূমি সংস্কারে অগ্রগণ্য দেশগুলোর একটি নেদারল্যান্ডস। তারা ক্যাডেস্টার অ্যাব্রোড নামের একটি নিউজলেটার প্রকাশ করে।

ভূমি রেকর্ডে প্রবেশাধিকার বেশিরভাগ সময়েই সংরক্ষিত থাকে। দেশের মাত্র এক শতাংশ মানুষ উন্মুক্তভাবে তাদের ভূমি মালিকানার তথ্য প্রকাশ করে, অন্যদিকে, ওপেন ডেটা ব্যারোমিটার বলছে, ১০ শতাংশ দেশে বাজেটের তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত। ওপেন নলেজ ইন্টারন্যাশনালের তৈরি গ্লোবাল ওপেন ডেটা ইনডেক্স অনুযায়ী, সবার জন্য উন্মুক্ত ১৫ ধরণের তথ্যের মধ্যে ভূমি মালিকানার তথ্য সবচেয়ে নিচে।

গণমাধ্যমের অনীহা
ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক পত্রিকাগুলো বাড়ী বেচাকেনা, আবাসনখাতে নতুন ধ্যানধারণা এবং বাজার-প্রবণতা নিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট করে। কিন্তু প্রচলিত গণমাধ্যমের মত, তারাও ভূমি বিষয়ক সমস্যাগুলো এড়িয়ে যায়।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা রাজনৈতিক দুর্নীতি জাতীয় প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে হয়তো সম্পত্তির রেকর্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু তারা ভূমি ব্যবস্থাপনার ভেতরে খুব একটা ঢুকতে চান না বা ভূমি রেকর্ডের অস্বচ্ছতা নিয়ে অনুসন্ধান করেন না।

এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে থমসন রয়টার্সের প্লেইস। তারা ভূমি নিয়েই কাজ করে। তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টের মধ্যে আছে:

কেনিয়ার অধিবাসীরা জমি বিক্রি করছেন নামমাত্র মূল্যে
দরিদ্রদের বদলে কারখানাকে ভূমি দিতে আইন সংশোধন করলো ভারতের গুজরাট রাজ্য
কৃষকদের ভূমি অধিকার কি ঘানার কোকোয়া খাতকে বাচাঁতে পারবে? জমি দখলের প্রতিযোগিতায় ইথিওপিয়ার কফি চাষিরা বিপাকে

রেকর্ড ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাগুলোও অবশ্য বিতর্কের উর্ধ্বে নয়। রয়টার্সের একটি রিপোর্টে উঠে আসে, কারো সাথে পরামর্শ না করেই কেনিয়ায় ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরে তা বন্ধ করার দাবি ওঠে।

ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থা বেসরকারিখাতের হাতে ছেড়ে দেয়ার বেশ কিছু সুবিধা আছে। আবার এ নিয়ে বিতর্কও কম নয়। অস্ট্রেলিয়ার ফাইনান্সিয়াল রিভিউতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে বিতর্কের খবর ছাপা হয়েছে।
প্রণোদনার অভাব
ভূমি নিয়ে রিপোর্টিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা পান না সাংবাদিকরা।

বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকতাকে সহায়তা দেয় পুলিৎজার সেন্টার অন ক্রাইসিস রিপোর্টিং। তারা ভূমি এবং সম্পত্তির অধিকার বিষয়ক ডেটা জার্নালিজম প্রকল্পে পৃষ্ঠপোষকতা করে।

এন/কোর এবং ওমিডায়ার নেটওয়ার্ক পরিচালিত ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম গ্রান্ট, ভারতে ভূমি এবং সম্পত্তি বিষয়ক উদ্ভাবনী সাংবাদিকতার প্রসারে কাজ করছে।
এনজিওর তৈরি রিপোর্ট
বিভিন্ন এনজিও ভূমি নীতিমালা নিয়ে রিপোর্ট করে। তাদের রিপোর্টে  অনেক সময় অনুসন্ধানী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

জমির রেকর্ড থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা কীভাবে দুর্নীতি খুঁজে বের করেছেন, দেখুন জিআইজেএনের এই সংকলনে।মোঙ্গাবে, ২০১৮ সালের অগাস্টে প্রকাশিত এক রিপোর্টে তুলে ধরে, ইন্দোনেশিয়ার সরকার আদিবাসীদের জমি বাদ দিয়ে কীভাবে ভূমি-ব্যবহার ডেটাবেস ও মানচিত্র তৈরির পরিকল্পনা করছিল।

২০১৭ সালের এপ্রিলে “সাও পাওলো: ডাজ করাপশন লিভ নেক্সট ডোর?”

নিখোঁজের খোঁজে: গুম, অপহরণ ও হারানো মানুষ নিয়ে অনুসন্ধানের গাইড

English

এই বিশ্বে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়ে যান। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পিপল বলছে, এসব ঘটনার বেশির ভাগের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র; বিশেষ করে মাদক পাচারকারীরা।  এ ছাড়া বন্য প্রাণী চোরাচালান, মানব পাচার, প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি—এমন আরও অনেক অপরাধী চক্র মানুষের এভাবে হারিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।

এমন অপরাধ ঠেকাতে সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা আছে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাষ্ট্র ও আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। সেটি হতে পারে লেখালেখির মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করে, অথবা ঘটনার গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে।সবচেয়ে ডাকসাইটে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড, সাধারণত হয় বিশ্বজোড়া। তারা খুবই সুসংগঠিত, আর তাদের কারবারও বেশ নিয়মতান্ত্রিক। তাদের চোখে পড়বে আমাদের চারপাশে, নিত্যদিনের জীবনে; কখনো কখনো তারা ঢুকে পড়ে সিস্টেমের একেবারে গভীরে; তাদের দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ সব সামাজিক সংগঠনে।

যখন সব জায়গায় দুর্নীতি প্রবলভাবে জেঁকে বসে, তখন সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কারণে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এসব মানুষ নিয়ে কোনো অনুসন্ধান হয় না। জাতীয় বা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষকে তারা প্রায়ই চুপ করিয়ে রাখে অর্থের বিনিময়ে। আবার কখনো অপরাধী গোষ্ঠীর ক্ষমতা ও ব্যাপ্তি এতই বড় হয়ে ওঠে যে, কোথাও অপরাধের কোনো তথ্যই পাওয়া যায় না। যেসব গুমের সঙ্গে কোনোভাবে রাষ্ট্র জড়িত;  যেখানে একজন মানুষকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে, গোপনে আটকে রেখেছে অথবা মেরে ফেলেছে এবং লাশটাকে লুকিয়ে ফেলেছে—তাদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।

এই অপরাধের ধরন অনেক রকম হতে পারে: একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, একসঙ্গে অনেক মানুষের গুম হয়ে যাওয়া, অথবা নির্দিষ্ট সময়ে পরস্পর সংযুক্ত একাধিক ঘটনা। অনেকে আবার নিখোঁজ হন নিজের ইচ্ছাতেও।

এমন অপরাধ ঠেকাতে সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা আছে; বিশেষ করে যেখানে রাষ্ট্র ও আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। সেটি হতে পারে লেখালেখির মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করে, অথবা ঘটনার গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে। কিন্তু নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে একজন সাংবাদিক নিজেও এ ধরনের অপরাধের শিকার হতে পারেন। তাঁরা কোনোভাবেই ঝুঁকির বাইরে নন।

এসব কারণে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান করার কাজটি হয়ে ওঠে জটিল ও সূক্ষ্ম। এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে একজন সাংবাদিককে সব সময় সতর্ক থাকতে হয় এবং চিন্তা করে এগোতে হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই হারিয়ে যাওয়া মানুষ নিয়ে বড় বড় অনুসন্ধান হয়েছে। আমরা এই গাইডে তুলে ধরেছি তেমন কিছু উদাহরণ, গবেষণাসূত্র, প্রাসঙ্গিক সংগঠনের পরিচিতি এবং মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিংয়ের পরামর্শ।

গাইডটি প্রকাশিত হয়েছে জিআইজেএন ও রেজিলিয়েন্স ফান্ড আয়োজিত “ডিগিং ইনটু ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স” ওয়েবিনার সিরিজের অংশ হিসেবে। এই সিরিজের বিষয় ছিল সংঘবদ্ধ অপরাধ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান। এটি দেখতে পাবেন ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায়। ফরাসি ভাষায় আয়োজিত ওয়েবিনারে উঠে এসেছে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার কথা। এবং বিভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হয়েছে: কীভাবে খুঁজবেন নিখোঁজদের।

সূচিপত্র

কেস স্টাডি
দরকারি গাইড ও সংগঠন
রিপোর্টিং টিপস

ঘটনাস্থল সম্পর্কে জানুন
নিরাপদ থাকা ও রাখা
তথ্য দেবে কারা
সূত্র খুঁজবেন কী করে
সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ
যখন কাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে
মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের নিয়ে কাজ
নিজের যত্ন

কেস স্টাডি
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষদের নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বাছাই করা হয়েছে এখানে।

সার্চিং উইথ দ্য মাদারস অব মেক্সিকো’স ডিজঅ্যাপিয়ার্ড (২০২০)। এই প্রতিবেদনে, মেক্সিকোতে গুম বা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য নিউ ইয়র্কা, যারা এখনো হারানো স্বজনকে খুঁজে পেতে মরিয়া।
মিসিং ইন ফ্রান্স: দ্য প্লাইট অব ভিয়েতনামিজ চিলড্রেন হু আর ট্রাফিকড ইনটু ইউরোপ (২০২০)। ভিয়েতনামের শিশুরা কীভাবে নিখোঁজ হচ্ছে, তা নিয়ে এই অনুসন্ধান করেছেন সাংবাদিকেরা। এতে দেখা গেছে, ফ্রান্সের একটি বিমানবন্দর থেকে তুলে নিয়ে এই শিশুদের ইউরোপের অন্য দেশে পাচার করা হয়েছে।
রুয়ান্ডায় গণহত্যা, ফ্রান্সে আত্মগোপন ও পিছে লেগে থাকা এক সাংবাদিক (২০২০)। এই লেখায় জিআইজেএন কথা বলেছে থিও এঙ্গেলবার্টের সঙ্গে। যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে খুঁজে বের করেছিলেন রুয়ান্ডার সাবেক সেনা কর্মকর্তা অ্যালোয়েস নিউইরাগাবোকে। যিনি দীর্ঘ সময় ধরে আত্মগোপন করে ছিলেন।
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে যেভাবে বেরিয়ে এলো ২০০০ গুপ্ত কবর (২০১৯)। তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ, ডেটা বিশ্লেষণ ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে মেক্সিকোতে নিখোঁজ হওয়া মানুষদের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন মার্সেলা তুরাতি ও তাঁর দল। এই লেখায় তিনি সেই অনুসন্ধান নিয়ে কথা বলেছেন জিআইজেএন-এর সঙ্গে।
মিসিং অ্যান্ড মার্ডারড: দ্য আনসলভড কেসেস অব ইনডিজিনাস ওমেন অ্যান্ড গার্লস (২০১৭-১৮)। সিবিসি নিউজের এই পুরস্কারজয়ী পডকাস্টে উন্মোচিত হয়েছে, কানাডার আদিবাসী নারীদের ব্যাপক হারে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলো কেন অমীমাংসিত থেকে গেছে।
জোনাস বার্গোস: ট্র্যাপড ইন আ ওয়েব অব লাইভস (২০১৩)। ফিলিপিনো বিদ্রোহী জোনাস বার্গোসকে নিয়ে এই অনুসন্ধান করেছেন র‌্যাপলারের গ্লোরিয়া গ্লেন্ডা।
দ্য সার্চ: মিসিং অ্যান্ড মার্ডারড ইনডিজিনাস ওমেন (২০১৯)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী নারীদের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নিয়ে এই তথ্যচিত্র তৈরি করেছে আল-জাজিরা।
দ্য এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স অব দ্য আয়োজিনাপা স্টুডেন্টস (২০১৭)। ডেটা মাইনিং ও থ্রিডি ইন্টারঅ্যাকটিভ মডেলিং ব্যবহার করে ২০১৪ সালে মেক্সিকোতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ফরেনসিক আর্কিটেকচার ।
হাউ দ্য ইউএস ট্রিগার্ড আ ম্যাসাকার ইন মেক্সিকো (২০১৭)। মেক্সিকোর আলেন্দে-তে মাদক সংশ্লিষ্ট গণহত্যা  এবং এর ফলে কয়েক শ মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে এই রিপোর্ট করেছিলেন জিনজার থম্পসন ও আলেক্সান্দ্রা জানিক ভন বারট্রাব।
হোয়াই আর ১০,০০০ মাইগ্রেন্ট চিলড্রেন মিসিং ইন ইউরোপ? (২০১৬)। এখানে শিশু পাচার ও হারিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের নিয়ে তৈরি ইউরোপোলের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেছে বিবিসি।
দ্য রুম অব বোনস (২০১৫)। এল সালভাদরে তিন দশকের সামাজিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে চার মা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁদের সন্তানদের মৃতদেহ। এমন এক পরিস্থিতি নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই তথ্যচিত্র।
লস্ট গার্লস অব ইন্দোনেশিয়া অ্যামং ৬১,০০০ ডেড অ্যান্ড মিসিং মাইগ্রেন্টস (২০১৮)। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার সেসব মেয়ের কথা, যাদের বিদেশে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ঘরছাড়া করা হয়েছে এবং আর কখনো দেখা যায়নি।

দরকারি গাইড ও সংগঠন
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পিপল (আইসিএমপি) বিশেষভাবে নজর দেয় নিখোঁজ ব্যক্তিদের মামলাগুলোর দিকে। এই বিষয় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনকানুন সম্পর্কে তাদের ভালো দখল আছে।

অফিস অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) কাজ করে অভিবাসী ও অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে। গুম বা অপহরণের শিকার হয়ে যাঁরা হারিয়ে গেছেন, তাঁদের জন্য একটি কমিটিও আছে এই প্রতিষ্ঠানের।
অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের কেউ মারা গেছে কি না কিংবা নিখোঁজ হয়েছে কি না, তার খবর রাখছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর দ্য মিসিং প্রজেক্ট।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের ঘটনা নিয়ে কাজ করে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জার্নালিস্টস গাইড টু অর্গানাইজড ক্রাইম। এই গাইড থেকে জানা যাবে, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র কীভাবে সাংবাদিকদের কাজ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) নিখোঁজ সাংবাদিকদের নিয়ে বেশ কিছু অনুসন্ধান ও রিপোর্ট করেছে।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) নিখোঁজ সাংবাদিকদের নিয়ে প্রকাশিত সব প্রতিবেদন এক জায়গায় সংরক্ষণ করে। এবং তাদের এই বিষয়ে তাদের একটি ডেটাবেসও আছে।
মেক্সিকোতে, ডেটা ব্যবহার করে গণকবর খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে হিউম্যান রাইটস ডেটা অ্যানালাইসিস গ্রুপ (এইচআরডিএজি)। তারা গুম বা অপহরণের কারণে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান করে এবং নির্দিষ্ট দেশ ধরে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আর্জেন্টাইন ফরেনসিক অ্যানথ্রোপোলজিস্টস টিম (ইএএএফ), নিখোঁজ ব্যক্তিদের শনাক্ত ও খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানভিত্তিক ফরেনসিক কৌশল ব্যবহার করে।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস (আইসিআরসি) বিশ্বজুড়ে গুম বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার দিকেও নিবিড় নজর রাখে।

রিপোর্টিং টিপস
এলাকাটি সম্পর্কে জানুন
কোনো নির্দিষ্ট কেস নিয়ে কাজ করার সময়, সেই এলাকা সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নেওয়া জরুরি। এতে করে আপনি কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। একই সঙ্গে বুঝতে পারবেন: সেখানে কী ধরনের সংগঠিত অপরাধী চক্র সক্রিয় আছে এবং কারা জড়িত থাকতে পারে। একই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটলে, সেই মামলাগুলো থেকে আপনার অনুসন্ধান শুরু করতে পারেন।  সেই এলাকায় আগে কাজ করেছে, এমন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খোঁজাখুঁজি করুন এবং সেখানকার অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড বোঝার চেষ্টা করুন।

বিশ্বস্ত কোনো সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যাবেন না। এবং প্রয়োজন হলে কীভাবে দ্রুত সেই এলাকা ছেড়ে যাবেন, তার একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরি রাখুন।

নিরাপদ থাকা ও রাখা
সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র নিয়ে অনুসন্ধান শুরুর সময়, আপনার নিজের ও সূত্রদের নিরাপত্তার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিকল্পনা। প্রথমত, আপনাকে ঠিক করতে হবে: আপনি কী ধরনের অনুসন্ধান করতে চান এবং আপনিই এই নির্দিষ্ট অনুসন্ধানটি করার জন্য সঠিক সাংবাদিক কি না।

এরপর, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আপনি কীভাবে নিরাপদে তথ্য সংরক্ষণ করবেন এবং আপনার দল ও সাক্ষাৎকারদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আপনার কম্পিউটার বা ফোনে সংবেদনশীল কোনো তথ্য নিয়ে চলাচল করবেন না। কোথাও যাওয়ার সময় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে: আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তা যেন আপনার দলের অন্য সদস্যরা জানেন। কোনো বিপদের মুখে পড়লে কীভাবে তাঁদের সতর্কসংকেত দেবেন, তা-ও আগে থেকে ঠিক করে রাখুন।

অনুসন্ধান প্রকাশিত হওয়ার পর সোর্সদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা হয়তো আপনার এই কাজের জন্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাদেরকে হামলার লক্ষ্য বানানো হতে পারে। বিষয়-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর (যেমন: কোনো এনজিও) সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করলে আপনার সূত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহজ হতে পারে। তখন আপনিও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, কখন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলে ভালো হয়। সাধারণভাবে, আপনার প্রতিবেদনে সূত্রের এমন কোনো ব্যক্তিগত তথ্য রাখবেন না, যাতে করে তিনি বা তাঁর স্বজনেরা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। বিশেষভাবে, এমন ছবি ও ভিডিও-র ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যেখান থেকে বোঝা যেতে পারে: কারা আপনার সূত্র এবং তারা কোথায় আছে। সাক্ষাৎকারদাতা কেমন পোশাক পরে ছিলেন, সেখান থেকেও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে ধারণা মিলতে পারে। আরও তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে আপনার ছবির মেটাডেটায়।
তথ্য দেবে কারা
অন্য যেকোনো অনুসন্ধানের মতো, এখানেও আপনাকে শুরু করতে হবে সূত্র চিহ্নিত করা ও গড়ে তোলা দিয়ে। কী ঘটেছিল—এই প্রশ্ন সামনে রেখে যাবতীয় তথ্য সবার আগে এক জায়গায় করুন। তারপর আপনার কাজ শুরু করুন। বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে আপনি প্রাথমিক তথ্য পেতে পারেন:

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন
আদালতের নথিপত্র
তথ্য অধিকার আইনের আবেদন
প্রত্যক্ষদর্শী
এনজিও
আইনজীবী
পুলিশ
নিখোঁজ ব্যক্তির বন্ধুবান্ধব ও পরিবার

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছে স্থানীয় অপরাধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য থাকে। হয়তো দেখবেন, সেই এলাকায় অপরাধী চক্রগুলো কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কেও তাদের জানাশোনা আছে। আবার কখনো কখনো নিখোঁজ ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য তার প্রিয়জনেরা অনেক তথ্য বাদ দেয় বা গোপন করে। সব খুঁটিনাটিই সাংবাদিকদের বিবেচনা করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। গুম বা অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে কাজ করবে। তবে তাদের দেওয়া সেই তথ্যগুলো আপনাকে যাচাই করে নিতে হবে বিশ্লেষণী দৃষ্টি দিয়ে।

অন্যান্য স্থানীয় সূত্র

আপনার অনুসন্ধানের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে, এমন ব্যক্তিরা হয়তো আরও বেশি খোলামেলা কথা বলতে আগ্রহী হবে। কারণ, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। এমন সূত্র ও তথ্যদাতাদের একটি ম্যাপ তৈরি করে নিলে আপনার সুবিধা হতে পারে। কারাগারের বন্দিরাও আপনার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে। কারণ, অপরাধী চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাদের আছে। তবে তাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিটি তথ্য সব সময় ক্রসচেক করে নেওয়া উচিত।

সোশ্যাল মিডিয়া

ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত (নিখোঁজ বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি) মানুষদের কর্মকাণ্ড নজরে রাখার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রায়ই অনেক সহায়তা পেতে পারেন। এখান থেকে আপনি সেই অঞ্চলের অপরাধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতে পারেন। মাঠপর্যায়ের সূত্রদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য যাচাই করে নেওয়ারও একটি ভালো মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া।

সূত্র খুঁজবেন কোথায়
কিছু ক্ষেত্রে, নিখোঁজ ব্যক্তিরা তাঁদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বা সূত্র রেখে যান। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যে তাঁরা শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছেন, তা খুঁজে বের করার মাধ্যমে আপনি আপনার কাজ শুরু করতে পারেন, বিশেষভাবে আধুনিক দাসপ্রথা ও মানব পাচারের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে।

আপনি যদি নিখোঁজ ব্যক্তির সেলফোন বা অন্য কোনো মোবাইল ডিভাইস ট্র্যাক করতে পারেন, তাহলে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পাবেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য থেকেও বেরিয়ে আসতে পারে যে নিখোঁজ ব্যক্তিটি কোথায় আছেন বা তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে।

আরও তথ্য পাওয়ার জন্য এবং নতুন সূত্রদের আকৃষ্ট করার জন্য, আপনি প্রাথমিক কিছু তথ্য দিয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু এ-ও মাথায় রাখবেন: এমন প্রতিবেদন বাড়তি ঝুঁকিও তৈরি করবে।
সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ
কখনো কখনো আপনার অনুসন্ধান চলার সময়ই কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো গ্রুপ একটি মৃতদেহ খুঁজে পেতে পারে। আপনি যে নিখোঁজ ব্যক্তিকে নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, মৃতদেহটি তারই কি না, তা যাচাই করে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি লাশের গায়ে থাকা জামাকাপড় বা ট্যাটুর বর্ণনা মিলে যায়, বা তার সঙ্গে সঠিক শনাক্তকরণ কাগজপত্র পাওয়া যায়, তারপরও আপনার সেটি ভালোমতো যাচাই করা উচিত। কারণ, দুজন মানুষের মধ্যে একই রকম শারীরিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে বা তাদের জামাকাপড় ও শনাক্তকরণ কাগজপত্র বদলে দেওয়া হতে পারে। আদর্শ পদ্ধতি হলো: প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আপনি ফরেনসিক ভেরিফিকেশন করিয়ে নেবেন।

অনেক দেশেই, পুলিশ খুব বিশদভাবে তদন্ত করে না এবং তাদের বাজেট, সক্ষমতা বা ইচ্ছার ঘাটতি থাকে। তাদের কাছে প্রায়শই কোনো ডিএনএ ল্যাব বা জটিল মামলা নিয়ে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ থাকে না। এমন জায়গায় তদন্তের ফলাফল বাইরের কোনো বিশেষজ্ঞকে দিয়ে যাচাই করে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বা সরকারি তদন্তকারীদের কাছ থেকে যেসব ফরেনসিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ পাবেন, সেগুলোর ব্যাপারে সংশয়ী থাকুন। এখানে কোনো স্বার্থের সংঘাত বা দুর্নীতির সংযোগ থাকতে পারে, যা হয়তো ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ
কিছু ক্ষেত্রে, সাংবাদিকদের সতর্ক থাকতে হবে কর্তৃপক্ষের ব্যাপারেও। মাথায় রাখতে হবে যে, তাদেরও অপরাধীদের সঙ্গে সংযোগ থাকতে পারে। ঘটনা আসলেও এমন কি না, তা জানার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন এবং অন্য যেকোনো সূত্রের মতো তাদের কথাগুলোও যাচাই করে নিন। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও আপনি সহায়ক নথিপত্র পেতে পারেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সহায়ক ভূমিকাতেও দেখা যায়। সেসব ক্ষেত্রে এমন কোনো তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যার কারণে তাদের অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে।

মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের নিয়ে কাজ
এ ধরনের অনেক প্রতিবেদনের কেন্দ্রে থাকে স্বজন হারানোর কষ্ট। তাই আপনাকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলার সময় ভাষার ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকুন। যদি কোনো পরিবার বিশ্বাস করে, হারানো ব্যক্তিটি এখনো জীবিত, তাহলে তাদের সঙ্গে “অতীতকাল সূচক ভাষায়” তা কথা বলবেন না।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সততা ও স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। কথা বলার আগেই পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া উচিত, সাংবাদিক হিসেবে আপনি একই বিষয় নিয়ে অন্য কোনো সোর্স—যেমন অপরাধী চক্রের সদস্য বা এমন কারও সঙ্গে কথা বলেছেন কি না। এতে সেই পরিবারটি বুঝতে পারবে, ভবিষ্যতে কী হতে পারে। তবে যাচাই করা হয়নি, এমন কোনো তথ্য তাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন না। তাদের কোনো মিথ্যা আশা দেবেন না।

আগে সংঘবদ্ধ অপরাধের শিকার হয়েছেন, এমন কোনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সময় খুবই স্পষ্টভাবে বলুন: আপনি কে এবং কী করছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সেই ব্যক্তির নতুনভাবে ট্রমার শিকার হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে, তাঁরা হয়তো ভয় পেয়ে আবার লুকিয়ে যেতে পারেন। সোর্সরা যেন বিপদে না পড়েন, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।

সাংবাদিক হিসেবে আপনার সীমাবদ্ধতার কথা খেয়াল রাখুন। এবং রাখতে পারবেন না, এমন কোনো ওয়াদা করবেন না। কীভাবে কোনো ভিকটিমের সাক্ষাৎকার নেবেন, তা আগে থেকেই ভেবে নেওয়াটা জরুরি। কীভাবে এমন ভিকটিম ও সারভাইভারদের সঙ্গে কাজ করতে হয়, তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ পাবেন ডার্ট সেন্টারের এই টিপশিটে। আরও পড়ুন: ভুক্তভোগী ও বেঁচে ফেরাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার ক্ষেত্রে মেক্সিকান সাংবাদিক মার্সেলা তুরাতির পরামর্শ।
নিজের যত্ন
নিখোঁজ খোঁজ করার কাজটা হয়ে উঠতে পারে ক্লান্তিকর, হতাশাজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে, গণকবরে গিয়েও খোঁজাখুঁজি করতে হতে পারে সাংবাদিকদের, দেখতে হতে পারে বীভৎস সব দৃশ্য। অথবা এমন কোনো ভিকটিমের সঙ্গে কাজ করতে হতে পারে, যার ওপর চালানো হয়েছে ভয়াবহ শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন।

এই ঘটনাগুলো প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। আপনি যদি খুব শক্ত মনেরও হন, তবু ট্রমা কাটিয়ে উঠতে বাইরের কারও সহায়তা দরকার হতে পারে। সহকর্মী, বন্ধু ও ভালো থেরাপিস্টের সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে, আপনি এমন কাজের জন্য নিজেকে আগেভাগেই তৈরি রাখতে পারেন।

গাইডটি তৈরি করেছেন জিআইজেএন-এর সম্পাদনা সহযোগী হানা কুগানস। তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। হংকংয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন বন্য প্রাণী পাচারসংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে। কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর-এর বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্যও। বর্তমানে আছেন লন্ডনে।

এই গাইডে অবদান রাখার জন্য মার্সেলা তুরাতিকে বিশেষ ধন্যবাদ। তুরাতি একজন ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক, যিনি নিখোঁজ মানুষ, বলপূর্বক গুম, অভিবাসীদের গণহত্যা, গণকবর এবং সহিংসতার ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য বিখ্যাত।

গাইডটি প্রকাশিত হয়  ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এবং আরও কিছু রিসোর্স যোগ করে ডিসেম্বর ২০২০-এ  হালনাগাদ করা হয়।