তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের যত রকম কৌশল

English
তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করে তথ্য পাওয়া খুব সহজ – এমন না ভাবাই ভালো। আবেদন করে পাওয়া তথ্য যে সবসময় আপনার কাজে লাগবে তা-ও নয়। তবু লেগে থাকলে ভালো ফল পাওয়া যায়। একারণে বিশ্বের যেখানেই এই আইন আছে, সেখানেই সাংবাদিকরা একে কাজে লাগিয়ে তৈরি করছেন অসাধারণ সব রিপোর্ট। একের পর এক বাধা পেরিয়ে যারা শেষ পর্যন্ত কঠিন সব তথ্য হাতে পাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, চাইলে তাদের পথ ধরে হেঁটে যেতে পারেন আপনিও। তখন, বিষয়টি সম্পর্কে আপনার ভয়ও কমে আসবে অনেকটাই।

একেক দেশের তথ্য অধিকার আইন একেকরকম হতে পারে। এই বৈচিত্র্যের কারণে, সবার কাজে আসবে এমন গড়পড়তা পরামর্শ দেয়া কঠিন। তবুও, অভিজ্ঞ সাংবাদিক এবং তথ্য অধিকার বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শে উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া যায়।

ভারত, মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক-গবেষকদের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে জিআইজেএন তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের আটটি সাধারণ দিক খুঁজে পেয়েছে। এখানে রইল তাদের সেই পরামর্শ ও প্রাসঙ্গিক লিংক, যা আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে এই আইন ব্যবহারের কিছু কার্যকর কৌশলের সাথে।
জিআইজেএনের ৮ পরামর্শ

১. আগাম পরিকল্পনা: খুঁজে বের করুন আপনি কী চান। তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে বিশেষজ্ঞ কমবেশি সবাই জোর দিয়ে বলেছেন, নথিপত্র চাওয়ার আগে, পর্যাপ্ত গবেষণা করে নিন। নিশ্চিত হোন আপনি কী চান।

২.

ডাঙায় বসে সাগরে থাকা জাহাজ অনুসরণ করবেন যেভাবে

English

বিশ্বের জলপথে ৯০,০০০ এর বেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন সহজেই ট্র্যাক করা যায়, কোন জাহাজ কোথায় অবস্থান করছে। তা-ও বিনা মূল্যে।

সাগরে চলাচলকারী এই সব জাহাজ (বড় ইয়ট এবং মাছ ধরার নৌকাসহ) ট্র্যাক করার যত রিসোর্স আছে, তার একটি বিশদ তালিকা সংকলন করেছে জিআইজেএন।

এখন সহজেই জানা সম্ভব, কোন জাহাজ কোথা থেকে এসেছে এবং ঠিক ওই মুহূর্তে তারা কোথায় যাচ্ছে।  এ ছাড়া জাহাজের মালিক কে, আপনি তা-ও অনুসন্ধান করতে পারবেন। জানতে পারবেন জাহাজ সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য, দেখতে পারবেন সেই জাহাজের ছবিও। এমন টুলও আছে যা আপনাকে বলে দেবে, জাহাজটিতে থাকা পণ্য-ভর্তি কনটেইনারের গন্তব্য কোথায়।

এই বিষয়ে সার্বিক ধারণা পেতে চাইলে, “পণ্যের শিপমেন্ট ট্র্যাকিংয়ের জন্য কাস্টমসের যে ভাষা জানতে হবে” শিরোনামের প্রেজেন্টেশনটি দেখুন। ২০১৮ সালের এশিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে এটি উপস্থাপন করেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক জিয়ানিনা সেগিনিনি।  তিনি এখানে তুলে ধরেছেন কাস্টমস কোড ও বিল অব লেডিংয়ের ব্যবহার এবং কনটেইনার ও জাহাজ ট্র্যাকিংয়ের নানা উপায়। জাহাজ, চোরাচালান ও সরবরাহ চেইন অনুসরণ করবেন কীভাবে- এই লেখা থেকে আপনি জাহাজ অনুসরণ সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন।

এই মানচিত্র আপনাকে চমকে দেবে। এখানে দেখবেন মহাসাগরে ঠিক এই মুহূর্তে ঠিক কত জাহাজ চলাচল করছে।

অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (AIS) ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে জাহাজ ট্র্যাক করতে হয়, তার বিবরণ পড়তে এখানে ক্লিক করুন। প্রতিদিন প্রায় ১৮০,০০০ জাহাজ থেকে পাঠানো এআইএস সংকেত বিভিন্ন স্টেশন এবং উপগ্রহের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়।

এই বিষয়ে বেশির ভাগ তথ্য বিনা মূল্যে পাওয়া যায়। তবে স্পর্শকাতর, একেবারেই হালনাগাদ বা ঐতিহাসিক তথ্যের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে সাবস্ক্রাইব করতে হয়। কত টাকা লাগবে, তা নির্ভর করে আপনি কেমন তথ্য চাইছেন তার ওপর। তবে সাধারণত এই ধরনের সেবার সাবস্ক্রিপশন ফি মাসে কয়েক শ ডলার পর্যন্ত  হতে পারে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তারা আপনাকে ছবি এবং নানা রকম তথ্য জোগান দিতে পারে।
ট্র্যাকিংয়ের ডেটা যত কাজে লাগে

সমুদ্রে জাহাজের সংঘর্ষ নিয়ে প্রতিবেদন করতে হলে ট্র্যাকিংয়ের ডেটা একরকম অপরিহার্য, তা সেটি স্পট রিপোর্টিংই হোক বা অনুসন্ধানী। মার্কিন নৌবাহিনীর একটি রণতরী এবং সিঙ্গাপুরের একটি বাণিজ্যিক জাহাজের মধ্যে ২০১৭ সালে হওয়া সংঘর্ষের প্রতিবেদন যেভাবে তৈরি করেছিল নিউইয়র্ক টাইমস, তার একটি উদাহরণ পাবেন এখানে। এই রিপোর্টের জন্য তাদেরকে তথ্য জোগান দিয়েছিল মেরিন ট্রাফিক।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা আরও নানা উপায়ে শিপিং ডেটা ব্যবহার করেছেন। এখানে তার কিছু উদাহরণ:

উত্তর কোরীয় জাহাজের চলাচল ফাঁস: সিএনএনের সাংবাদিক জশুয়া বার্লিংগারের প্রতিবেদন, উত্তর কোরিয়ার রহস্য-তরী:  হাও ফ্যান ৬ এর অদ্ভুত গল্প। আরও দেখতে পারেন, রয়টার্সের পোলিনা নিকোলস্কায়ার তৈরি রিপোর্ট, নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে উত্তর কোরিয়ার জ্বালানিবাহী জাহাজ কীভাবে রাশিয়া যাতায়াত করছে।
ট্রান্সপন্ডার বন্ধ হওয়ার পর জাহাজের গতিবিধি জানা: টাইমস অব লন্ডনের জন্য ফিয়ানা হ্যামিলটন লিখেছেন, সন্ত্রাসী এলাকার কাছে হঠাৎ অন্ধকারে পণ্যবাহী জাহাজ, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা। ওশানা নামের একটি এনজিও তাদের একটি রিপোর্টে একই বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। তাদের রিপোর্টের নাম, যেভাবে শনাক্তকরণ এড়াতে চায় জাহাজ: সম্ভাব্য এআইএস ফাঁকির বৈশ্বিক কেস স্টাডি।
থাই সিফুড শিল্পে দাসপ্রথার সন্ধান: পিবিএস টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, এপির রিপোর্টার মার্থা মেন্ডোজা বর্ণনা করেছেন, তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা কীভাবে “মাছবাহী একটি জাহাজে মালামাল পরিবহনের ভিডিও এবং তার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন।” তিনি আরও বলেন: “সেই জাহাজে এটি একটি স্যাটেলাইট ট্র্যাকার ছিল এবং সেই ট্র্যাকার একটি লোকেটরে নিজের অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছিল। এর ফলে আমরা ইন্টারনেটেই দেখতে পাচ্ছিলাম জাহাজটি কোথায় যাচ্ছে। এভাবে একটানা দুই সপ্তাহ, আমরা জাহাজটিকে ট্র্যাক করি, একেবারে বন্দরে পৌঁছা পর্যন্ত। যখন এটি বন্দরে পৌঁছায়, তখন এপির দলও সেখানে যায়। আমরা দেখতে পাই, পিকআপ ট্রাকে তোলা হচ্ছে জাহাজের মাছ। আমরা সেই ট্রাকগুলোকে কারখানাতে যাওয়া পর্যন্ত অনুসরণ করি।”

কোভিড-১৯: যখন আতশি কাচের নিচে সরকারি কেনাকাটা

English

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার জন্য বিশ্বের দেশগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খুব দ্রুত খরচ করছে। কোন ধরনের সরকারি চুক্তির মাধ্যমে এসব অর্থ খরচ করা হচ্ছে, তা তলিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়ছে।

এই সংকট কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ হাজির করেছে। দেশে দেশে সরকারি কর্মকর্তারা এসব কেনাকাটা করছেন জরুরি ভিত্তিতে। জনসাধারণের কাছে সেসব তথ্য ‍উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে তৈরি করছেন প্রতিবন্ধকতা এবং তথ্য অধিকার আইনে করা আবেদনগুলোর জবাব দিচ্ছেন দেরিতে।

এমন নতুন ও পুরোনো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও রিপোর্টাররা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে যাচ্ছেন সরকারি কেনাকাটা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

কীভাবে এসব প্রতিবেদন তৈরি করা যায়, তার কিছু পরামর্শ থাকছে জিআইজেএন-এর এই রিসোর্স গাইডে। সঙ্গে থাকছে নানা উদাহরণ। এখান থেকে জানা যাবে: দুর্নীতির আভাস-ইঙ্গিত কীভাবে পাবেন এবং কেনাকাটা-সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য কোথায় মিলবে? জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায় তে বটেই, আমরা এখানে তুলে ধরেছি বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অর্থের হিসাব চিহ্নিত করার উপায়ও।

সরকারি চুক্তি ও কেনাকাটা নিয়ে কাজ করার মৌলিক পরামর্শগুলো সংক্ষেপে সংকলন করা হয়েছে এই এক পৃষ্ঠার টিপশিটে।
সূচিপত্র
তথ্য কোথায় খুঁজবেন

আগেই সতর্ক হবেন যেসব চিহ্ন দেখে

কাজ কে পেল ঘোষণা হলে কী খুঁজবেন

ঠিকাদার ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুসন্ধান

কাজের মান যাচাই

প্রকিউরমেন্ট ডেটা ব্যবহার

আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থসাহায্য অনুসন্ধান

আরও তথ্যসূত্র

পরামর্শ কোথায় পাবেন

এই গাইডের জন্য জিআইজেএন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে ওপেন কন্ট্রাক্টিং পার্টনারশিপের কর্মীদের কাছে। তাঁদের সাপ্তাহিক নিউজলেটারে এসব চুক্তি নিয়ে অনুসন্ধানের নানা উপকরণ থাকে।
মৌলিক, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ
প্রথমেই আপনাকে নিজ দেশের সরকারি ক্রয়কাঠামো বুঝে নিতে হবে এবং জানতে হবে দুর্নীতি, দরপত্র জালিয়াতি, গোপনীয়তা ও প্রতারণার বিষয়গুলো খুঁজে পেতে কোন জায়গাগুলোতে নজর দিতে হবে।

এখানে থাকছে একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

সাধারণত একটি ক্রয়‍চুক্তির প্রক্রিয়ায় পাঁচটি পর্যায় থাকে:

পরিকল্পনা – যখন কী কী জিনিস কিনতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আলোচনা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পরিকল্পনার পর্যায়টি খুব তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কখনো কখনো এসব সিদ্ধান্তের কথা জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করা হচ্ছে না এবং কোনো নথিপত্রও থাকছে না।
টেন্ডারিং – এই পর্যায়ে সরকার কোট, বিড বা প্রস্তাব আহ্বান করে। (কখনো কখনো এটিকে অন্য নামেও ডাকা হয়। যেমন রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল, অ্যাপ্রোচ টু মার্কেট ও সলিসিটেশন)
কাজ দেওয়া – এই পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, চুক্তিটি কার সঙ্গে করা হবে। এটা নির্ধারিত হয় হাই বিডার দেখে বা অন্য কোনো উপায়ে।
চুক্তি – এই পর্যায়ে চুক্তির নানা শর্ত বিস্তারিত লেখা হয়। এটি আইনি সমঝোতার বিষয়। কখনো কখনো, এসব চুক্তিপত্রের সংশোধন ও সংযোজনের জায়গাগুলোতে পাওয়া যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য।
বাস্তবায়ন – কাজটি কি শেষ হয়েছে?