Planespotting flight tracking resources map of southern England

প্লেনস্পটিং: বিশ্বজুড়ে উড়োজাহাজ ট্র্যাকিংয়ের হালনাগাদ গাইড

English

বিশ্বজুড়ে প্লেনস্পটিং ও ফ্লাইট ট্র্যাকিংয়ের নির্দেশিকাটি জিআইজেএন প্রথম প্রকাশ করে ২০১৯ সালে। কিন্তু ইউক্রেনে ২০২২ সালের আগ্রাসনের পর থেকে অনেক রুশ অলিগার্ক তাদের সম্পদ নিয়ে দেশ ছাড়তে শুরু করে এবং টুইটারে রিয়েল টাইমে প্লেন ট্র্যাকিং থেকে বটগুলোকে বিরত রাখতে ইলন মাস্ককেও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক এই পরিবর্তনগুলোকে তুলে ধরতে আমরা আমাদের রিপোর্টিং নির্দেশিকাটি হালনাগাদ করেছি। এটি হালনাগাদের কাজে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ডিক্টেটর অ্যালার্টের পরিচালক ইমানুয়েল ফ্রয়েডেনথালের বিশেষজ্ঞ অবদানের জন্য জিআইজেএন কৃতজ্ঞ।

বিমান ট্র্যাকিং একটি অমূল্য অনুসন্ধানী হাতিয়ার।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা দুর্নীতি উন্মোচন, যুদ্ধের গতিবিধি অনুসরণ, রাজনীতিবিদ ও আমলাদের ট্র্যাক করা এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের মাত্রা বোঝাতে বিমানের তথ্য ব্যবহার করেছেন।

সব বিমানের একটি স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ নম্বর থাকে। বিমানের গতিপথ অনুসরণ এবং সেগুলোর মালিকদের শনাক্ত করতে এই নম্বর ব্যবহার করা যায়। সবসময় না হলেও, কখনও কখনও তো বটেই।

বাণিজ্যিক ও অলাভজনক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ফ্লাইটের তথ্য পাওয়া যায়। সংস্থাগুলো অনেক ফ্লাইটের ডেটা জড়ো করে এবং তা সহজে পাওয়ার উপায় করে দেয়। ফলে নির্দিষ্ট বিমানের গতিবিধি অনুসরণ, নির্দিষ্ট স্থানে নজর রাখা, ধরন চিহ্নিত করা এবং আরো অনেক কিছুই সম্ভব হয়।

অনেক শৌখিন পর্যবেক্ষণকারী বিমান ট্র্যাকিংয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন… এই উৎসাহী কমিউনিটি সাংবাদিকদের জন্য সম্ভাব্য রিসোর্স।বিমানে থাকা অবস্থান শনাক্তকরণ ব্যবস্থার কারণে প্লেনস্পটিং সম্ভব হয়। এর একটি প্রাথমিক প্রযুক্তি এডিএস-বি, ইংরেজিতে যার অর্থ হলো অটোমেটিক ডিপেন্ডেন্ট সার্ভেইল্যান্স-ব্রডকাস্ট। এডিএস-বি সংকেত সবার জন্য উন্মুক্ত এবং শৌখিন পর্যবেক্ষকেরাও এই সস্তা এডিএস-বি ট্র্যাকিং স্টেশনগুলো (১০ থেকে ২০০ মার্কিন ডলার) ব্যবহার করতে পারেন।

অনেক ওয়েবসাইটে ফ্লাইটের গতিপথ পোস্ট করা হয়, ফলে প্রাথমিক পর্যায়ের ট্র্যাকিং বেশ সহজ হয়। তবে কম্পিউটারের সাহায্যে র’ (অপ্রক্রিয়াজাত) ডেটা বিশ্লেষণ করে আরও অনেক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তথ্য পাওয়া সম্ভব, যা চলাচলের প্রবণতা জানতে এবং অ্যালার্ট তৈরিতে সহায়তা করে।

অনেকগুলো জটিলতার কারণে প্লেন-ট্র্যাকিং বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বিমানচালক ট্র্যাকিং সংকেত বন্ধ রাখতে পারেন। জাতীয় আইনানুসারে, কোনো কোনো বিমানের জন্য কিছু এলাকায় ফ্লাইটের স্থানাঙ্ক জানানোর বাধ্যবাধকতা থাকে না। সামরিক বিমান ট্র্যাক করা বেশ কঠিন (তবে অসম্ভব নয়)। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিধি বিধানের কারণে ব্যক্তিগত জেটগুলোর জন্য বেনামী ফ্লাইট পরিচালনা সহজ হয়৷ আর এডিএস-বি এর বিস্তার সীমিত, কারণ বিশ্বের অনেক প্রান্তে রিসিভিং স্টেশনের স্বল্পতা আছে।

অনেক শৌখিন পর্যবেক্ষণকারী বিমান ট্র্যাকিংয়ের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন (যারা “প্লেনস্পটার” বা “এভিয়েশন গিক” নামে পরিচিত)। এই উৎসাহী কমিউনিটি সাংবাদিকদের জন্য সম্ভাব্য রিসোর্স। অনেক প্লেনস্পটার অস্বাভাবিক বিমানের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে বিমানবন্দরের কাছে অবস্থান করেন। এমনকি এয়ারপোর্ট স্পটিং নামে একটি ওয়েবসাইট আছে যেখানে বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দরে কোথায় দাঁড়াতে হবে, এমন তথ্যও থাকে।

অন্য স্পটাররা তাদের কম্পিউটারে আস্থা রাখেন। সেলিব্রিটি, ব্যবসায়িক নির্বাহী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে মানুষ পছন্দ করে। অনেক স্পটার যুদ্ধাঞ্চলে চলাচলরত ফ্লাইটের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখে।

বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ককে বিরক্ত করার কারণে একজন প্লেনস্পটারের কর্মকাণ্ড সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।

ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জ্যাক সুইনি এমন একটি টুইটার বট তৈরি করেছিলেন যা মাস্কের প্রধান জেটের (এন৬২৮টিএস) গতিবিধি পোস্ট করতে পারে। টুইটারের নতুন মালিক হিসেবে মাস্কের প্রথম পদক্ষেপগুলোর একটি ছিল সুইনি এবং রিয়েল-টাইম ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা সরবরাহে জড়িত অন্যান্য স্পটারদের ফিড বন্ধ করা। 

এরপর সুইনি একটি সাবরেডিট অ্যাকাউন্ট (r/ElonJetTracker) চালু করেন এবং টুইটারে (@elonjetnextday) নতুনরূপে ফিরে আসেন। রিয়েল-টাইম অবস্থানের তথ্য সম্বলিত পোস্টে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে টুইটারের নতুন নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে তাঁর টুইটার ফিডে তথ্য দিতে এখন ২৪-ঘন্টা দেরি হয়।

ফেব্রুয়ারির শুরুতে টুইটার তাদের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রাম ইন্টারফেস (এপিআই) ব্যবহারের জন্য চার্জ ধার্যের ঘোষণা দিয়ে আরেকটি বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। অনেক প্লেনস্পটার লাভের জন্য নয়, বরং বিনোদনের খোরাক হিসেবে তথ্য পোস্ট করেন। টুইটারের ঘোষণার পর ধারণা করা হচ্ছিল, খরচের কারণে তাদের কর্মকাণ্ড কমে যাবে বা থেমে যাবে।

ফ্লাইট তথ্যের প্রাথমিক উৎস
রিয়েল-টাইম ফ্লাইটের তথ্য হাতের নাগালেই পাওয়া যায়, যার বেশিরভাগই মেলে বিনা খরচে।

ট্র্যাকিং সাইটগুলোর বৈশিষ্ট্যে ভিন্নতা থাকে। যেমন, ঐতিহাসিক ডেটার জন্য অনেক সময় সাবস্ক্রিপশন এবং/অথবা ফিস দিতে হয়। তবে, প্রাথমিক তথ্যের জন্য খরচ অনেক কম (প্রতি মাসে ৫ থেকে ১০ মার্কিন ডলার) আর মূল্যবান তথ্যের জন্য খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে।

এই ওয়েবসাইটগুলো অনেকটাই বিশ্বজুড়ে অ্যান্টেনা বসানো শৌখিন পর্যবেক্ষকদের ওপর নির্ভর করে। নিজেদের অ্যান্টেনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য যারা ওয়েবসাইটগুলোকে “সরবরাহ” করে, তারা বেশ ব্যয়বহুল সাবস্ক্রিপশন বিনামূল্যে ব্যবহারের সুযোগ পান।

সকলের জ্ঞাতার্থে দ্রষ্টব্য: কিছু ট্র্যাকিং সাইট সাংবাদিকদের সুযোগ দেয় এবং বিনামূল্যে নির্দেশনা দিয়ে থাকে। দরকার হলে দ্বিধা ছাড়াই তাদের জিজ্ঞেস করুন। এছাড়াও সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য কিছু সাইট চ্যাট বোর্ড ও নির্দেশনামূলক ব্লগ জুড়ে দিয়েছে।

প্লেন ট্র্যাকিংয়ের প্রধান সাইটগুলো হলো:

এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ – এই সাইটটি অন্যান্য ফ্লাইট-ট্র্যাকিং সেবাগুলোর তুলনায় বেশি ফ্লাইট সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করে। এটিকে পছন্দের কারণ হলো, মার্কিন বিধিবিধানের আওতায় বেনামী ফ্লাইট পরিচালনার অনুরোধ জানানো মার্কিন বিমানের তথ্য এই সাইট ফিল্টার করে না৷ ( এ সম্পর্কিত আরও তথ্য নিচে দেওয়া হয়েছে) এখানে বিনামূল্যে যেকোনো বিমানের পুরনো ফ্লাইট-তথ্য খোঁজা যায়। ট্র্যাকিং ম্যাপে চোখ রাখুন, তারপর যে কোনো প্লেনে ক্লিক করুন বা সার্চ  করুন। বাম প্যানেলে, “হিস্ট্রি” দেখুন। অপ্রিক্রিয়াজাত ডেটার জন্য সাধারণত খরচ হয়। মানচিত্র সম্পর্কিত সহায়তা পেতে  এখানে দেখুন। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এডিএস-বি এক্সচেঞ্জকে জেটনেটের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। এতে কিছু ব্যবহারকারী উদ্বিগ্ন হলেও জেটনেট ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।

এই তিনটি সাইট সাংবাদিকদের কাজের জন্য বেশি উপযোগী।ইকারাস ফ্লাইটস – অলাভজনক সংস্থা সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিফরঅ্যাডস) তৈরি করা এই ফ্লাইট-ট্র্যাকিং টুল এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ ডেটা ব্যবহার করে। এর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। যেমন: ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে পারে, আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ বিমানের গতিবিধি ট্র্যাক করতে পারে এবং উড়োজাহাজের মালিকানা সম্পর্কিত ডেটা জানতে চাইতে পারে। ইকারাস ফ্লাইটস সবাই ব্যবহার করতে পারে, তবে বিনামূল্যে সেবা পেতে এটি ব্যবহারে আগ্রহী অনুসন্ধানকারীদের অবশ্যই সিফরঅ্যাডস-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

ওপেন স্কাই নেটওয়ার্ক হচ্ছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা। তারা দাবি করে, বিশ্বে বিমান চলাচলের সবচেয়ে বড় সার্ভেইল্যান্স ডেটার ভান্ডারটি তাদের দখলে। “আমরা প্রতিটি বিমান থেকে পাওয়া প্রতিটি বার্তাই সংরক্ষণ করি,” জিআইজেএনকে জানান তাদের একজন স্বেচ্ছাসেবী। তাদের এয়ারক্রাফট ডেটাবেজ-এ গিয়ে  উড়োজাহাজের লেজে থাকা নম্বরটি দিয়ে অনুসন্ধান করলে নিবন্ধন তথ্য, ফ্লাইট ইতিহাস এমনকি সেটি আকাশে নাকি মাটিতে, তা-ও জানিয়ে দিবে। এক্সপ্লোরার ফিচারে গেলে, যেসব উড়োজাহাজ আকাশে আছে শুধু সেগুলোই দেখাবে। যত উড়োজাহাজ ট্র্যাক করা হয়েছে তার সবগুলোর ৩০ দিনের ইতিহাসও দেয়া আছে। জরুরী সতর্কবার্তার তালিকা নিয়ে রয়েছে আরেকটি ফিচার।

ওপেনস্কাই মূলত একাডেমিক ও অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি। তবে সুনির্দিষ্ট অনুরোধ জানালে তারা সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা করে। ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং “পরিচিতি বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের লাভবান করে,” এমন বিষয়ে তারা গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করেছে।

জেটনেট এডিএস-বি এক্সচেঞ্জ কেনার পর থেকে দুটি নতুন সাইটের আবির্ভাব হয়েছে। অন্তত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিক পর্যন্ত দুটোই বেশ কম ফিডার ও কম কভারেজ এবং আনফিল্টার্ড বলে মনে হয়েছে।

সেগুলো হলো:

দ্য এয়ারট্রাফিক ডট কম – জ্যাক সুইনি “এবং গ্রাউন্ড কন্ট্রোল ডিসকর্ড সার্ভারের সদস্যদের” চালু করা একটি সাইট, যেটি “সবসময় খোলা ও আনফিল্টার্ড থাকার” কথা।

এডিএসবি ডট ফাই – “একটি কমিউনিটি-পরিচালিত ফ্লাইট ট্র্যাকার, যেখানে বিশ্বজুড়ে ৫০০ টিরও বেশি সক্রিয় ফিডার” আছে। এই ট্র্যাকারে “বিশ্বব্যাপী এয়ার ট্রাফিক ডেটায় উন্মুক্ত ও আনফিল্টার্ড অ্যাক্সেস” নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।
অন্যান্য ট্র্যাকিং সোর্স
অল্প কয়েকটি ট্র্যাকিং সেবা রিয়েল-টাইম ট্র্যাকিং ম্যাপ এবং বিমানের সাম্প্রতিক ভ্রমণগুলো বিনামূল্যে দেখাসহ আরও বেশকিছু সুবিধা দেয়।

তবে, এই ফ্লাইট-ট্র্যাকিং সেবাগুলো মালিকের অনুরোধক্রমে যে কোনো বিমানের তথ্য সরিয়ে নেয়৷ তবুও, সেগুলোর কভারেজ বিশ্বের কিছু অঞ্চলে (যেমন আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা) এডিএস-বি এক্সচেঞ্জের চেয়ে অনেক ভালো।

বিমান ছাড়ার সময়ের নোটিফিকেশন ও ঐতিহাসিক ফ্লাইট সম্পর্কিত ডেটা ব্যবহারের সুবিধা সহ বেশ কিছু সুবিধা অর্থের বিনিময়ে দেওয়া হয়ে থাকে।

ফ্লাইট অ্যাওয়ার
ফ্লাইট রাডার টুয়েন্টি ফোর
প্লেন ফাইন্ডার
এয়ারন্যাভ রাডার বক্স

আরও কয়েকটি ট্র্যাকিং সেবাদাতা সাইট: এয়ার ফ্লিটস্,অ্যাভ ডেল্ফি, ফ্লাইট স্ট্যাটস্, ফ্লাইট বোর্ড, ফ্লাইট ভিউ, ফ্রিডার, প্লেন ম্যাপার, প্লেনপ্লটার, এবং স্কাইস্ক্যান ওয়ার্ল্ড।

বাণিজ্যিক বিমান ভ্রমণকারীদের জন্যেও কিছু সাইট রয়েছে।

এছাড়াও বিশেষায়িত কয়েকটি সাইট আছে। এগুলো হলো:

ডিক্টেটর অ্যালার্ট – এই প্রকল্প বিশ্বব্যাপী একনায়কতান্ত্রিক সরকারের বিমানগুলো সনাক্ত করে এবং বেশ কয়েকটি টুইটার বট চালায়, যেগুলো বাসেল-মুলহাউস-ফ্রেইবার্গের ইউরো এয়ারপোর্ট বা প্যারিস, লন্ডন, জেনেভায় বিমান অবতরণের সময় অবহিত করে।
বেলিংক্যাট – “কাজাখস্তানের সাম্প্রতিক ও পরিবর্তিত পরিস্থিতি আরও ভালভাবে বুঝতে দেশের বিমানবন্দরগুলোতে অবতরণ করা ও সেখান থেকে ছেড়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ফ্লাইটগুলোকে ট্র্যাক করার একটি ওপেন সোর্স ডেটাবেস।”
লস এঞ্জেলেস, বাল্টিমোর, পোর্টল্যান্ড, মিনিয়াপোলিস ও লন্ডন সহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের উপর দিয়ে যখন কোনো বিমান উড়ে যায়, তখন অ্যাডভাইজরি সার্কুলার বট সেটি পোস্ট করে।

সামাজিক মাধ্যমও প্লেনস্পটারদের খুঁজে পাওয়া তথ্যে ভেসে যায়। টুইটার হ্যাশট্যাগগুলো দেখুন: #এভিয়েশন, #অ্যাভগিক, #প্লেনস্পটিং, #ফ্লাইট এবং #মিলঅ্যাভগিক।

বেশি টুইটকারী অনেকের মধ্যে কয়েকজন হলো: এভারগ্রিন ইন্টেল @vcdgf555, Gerjon @Gerjon, Aircraft Spots @AircraftSpots, SkyScanWorld @scan_sky, এবং Avi Scharf @avischarf।

এছাড়াও জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিয়ে বেলিংক্যাটের ডিসকর্ড চ্যানেল দেখুন।
ট্র্যাকিংয়ের প্রাথমিক ধারণা
সব উড়োজাহাজের লেজের দিকে একটি শনাক্তকরণ চিহ্ন বা “টেইল নম্বর” থাকে (বা থাকা উচিত)।ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলো বিমান শনাক্তের জন্য উপযোগী তথ্য তুলে ধরে।

“হেক্স কোড” নামে একটি শনাক্তকারণ চিহ্ন আছে (তবে অনেক সময় এস-মোড বা আইকাও বলা হয়)। ছয় বা সাত অক্ষর ও সংখ্যার এই সিরিজটি সরকারের জন্য বরাদ্দকৃত আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা ((ICAO) এর ২৪-বিটের সাংকেতিক ঠিকানা থেকে নেওয়া হয়, যা থেকে কোডে থাকা বিমান নিবন্ধনের দেশ সম্পর্কে জানা যায়। বিমান বিক্রি না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত হেক্স নম্বর বদলায় না। নীতিগতভাবে, এটি বিমানের স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ চিহ্ন, আর ট্র্যাকিং অ্যান্টেনাগুলো এই তথ্যই সংগ্রহ করে।

দ্বিতীয়ত, সব উড়োজাহাজের লেজের দিকে একটি শনাক্তকরণ চিহ্ন বা “টেইল নম্বর” থাকে (বা থাকা উচিত)। দেখার সুবিধার্থে এটি কমপক্ষে ১২ ফুট উচ্চতায় স্পষ্ট করে লেখা হয়। এই সংখ্যাগুলো হলো সংক্ষিপ্ত আলফানিউমেরিক স্ট্রিং, যা বিমান নিবন্ধনের দেশ নির্দেশ করতে অক্ষর দিয়ে শুরু হয়, (যুক্তরাষ্ট্রের জন্য N, জার্মানির জন্য D, ইত্যাদি)। উইকিপিডিয়ায় বিমান নিবন্ধন উপসর্গের (প্রিফিক্স) একটি সমৃদ্ধ তালিকা রয়েছে। এরপর থাকে কয়েকটি সংখ্যা এবং/অথবা নির্দিষ্ট বিমানের জন্য নির্দিষ্ট অক্ষর। (সামরিক বিমানগুলো বিভিন্ন শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করে।)

এছাড়াও “কল সাইনের” ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। বিমান চালক সেই ফ্লাইটে ঢুকানোর যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, কমবেশি তাই হলো কল সাইন। বাণিজ্যিক ফ্লাইটে এর ফ্লাইট নম্বর হবে অনেকটা এমন – ডেল্টা এয়ারলাইন্সের হনলুলু থেকে মিনিয়াপোলিস পর্যন্ত  ফ্লাইট৩০৭ এর জন্য ফ্লাইট নম্বর হবে DAL307.

ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার মালিকদের কোথায় খুঁজবেন?

English

সরকারি রেকর্ডে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায়, তাকে নেহাত সামান্য বললেও কম হবে।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিকদের পরিচয় গোপন রাখা যায়। তথাকথিত শেল কোম্পানির মাধ্যমে প্রকৃত মালিক বা “বেনিফিশিয়াল ওনার”-দের আড়াল করা হয়।

ভাল খবর? ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মালিক কে, তারা কী করেন এবং আরো অনেক তথ্য খুঁজে বের করার বেশ কিছু জায়গা আছে। যেমন:

ফ্রি ডেটাবেস
সাবস্ক্রিপশন ডেটাবেস
অফিসিয়াল রেকর্ড
কর্পোরেট ওয়েবসাইট
আদালতের নথি
ইন্টারনেট অনুসন্ধান
সামাজিক মাধ্যম

জিআইজেএনের এই রিসোর্স পেজে থাকছে, কোম্পানি সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উৎসের বিবরণ।

জিআইজেএন এর ভিডিও সংগ্রহে, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ সম্পর্কে পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক ডেভিড কে জনস্টনের একটি আলোচনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

 
বিনামূল্যের আন্তর্জাতিক রিসোর্স
কোম্পানিগুলোকে সরকারের কাছে বাধ্যতামূলকভাবে যেসব প্রতিবেদন জমা দিতে হয়, তা সংগ্রহ করে বেশ কিছু নন-প্রফিট সংস্থা।

এখানে তাদের কয়েকটির বিবরণ:

OpenCorporates, বিশ্বের ১৫ কোটি কোম্পানির একটি উন্মুক্ত তথ্য ভান্ডার। এসব তথ্য আসে মূলত বিভিন্ন দেশের জাতীয় ব্যবসা নিবন্ধক (কোম্পানি রেজিস্ট্রি) থেকে। এই ডেটাবেস আপনাকে কোম্পানির নিবন্ধনের তারিখ, এর নিবন্ধিত ঠিকানা এবং পরিচালক-কর্মকর্তাদের নামের মতো তথ্য যোগান দিতে পারে। এটি এক কোম্পানীর সাথে আরেকটির সংযোগও দেখাতে পারে। কর্পোরেট ঘটনাবলীর এই ডেটাবেস প্রতিনিয়তই আরো বড় হচ্ছে। মিডিয়া কীভাবে ওপেনকর্পোরেটস ব্যবহার করে, তার আপডেট ও বিভিন্ন উদাহরনের জন্য এ সংক্রান্ত ব্লগের লেখা অনুসরণ করতে পারেন। সাংবাদিক, এনজিও, শিক্ষাবিদ এবং অন্যান্য সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের ইউজাররা, বিনামূল্যে পাবলিক-বেনিফিট API key পেতে আবেদন করতে পারেন।

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (OCCRP) তৈরি করেছে ইনভেস্টিগেটিভ ড্যাশবোর্ড। এখানে রয়েছে গোটা বিশ্বের নানান উৎস থেকে সংগ্রহ করা লাখ লাখ প্রাসঙ্গিক তথ্য; যার একটি বড় অংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত। নথির জন্য আপনার অনুসন্ধান শুরু করতে পারেন এখান থেকে (বিস্তৃত অনুসন্ধানের জন্য ”অ্যাডভান্সড সার্চ” ক্লিক করুন)। এখানে ৩৮ টি দেশের কোম্পানি রেজিস্ট্রির একটি গাইড রয়েছে। বলতে পারেন, এটি ২২ কোটি ৬০ লাখ পাবলিক রেকর্ড এবং পানামা পেপারস ও উইকিলিক্সের স্টেট ডিপার্টমেন্ট কেবলসহ ফাঁস হওয়া সব ডেটাবেসের একটি বৃহত্তর ক্যাটালগ।

অবশ্য সব ডেটাবেসই (ফাঁস হওয়া তথ্যের ডেটাবেসসহ) যে সবার জন্য উন্মুক্ত, তা নয়। কিছু ডেটাবেসে প্রবেশের জন্য রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করতে হয়। এর পাশাপাশি নির্দিষ্ট গবেষণার প্রয়োজনে বা ওসিসিআরপি সাবস্ক্রাইব করেছে এমন বাণিজ্যিক ডেটাবেস ব্যবহারের জন্য,  তাদের সাহায্য চাইতে পারেন সাংবাদিকরা। ওসিসিআরপির ডেটাবেস কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, এখানে তার একটি ভাল ভূমিকা আছে। ব্যবহার সম্পর্কে সাতটি পরামর্শ আছে জিআইজেএন-এর এই নিবন্ধেও। চাইলে পড়ে নিতে পারেন। যে ব্যক্তি বা কোম্পানী নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, তার সম্পর্কে নতুন কোন তথ্য যোগ হলে, কীভাবে আপনি সঙ্গে সঙ্গে একটি অ্যালার্ট মেসেজ পাবেন, তাও এখানে বলা আছে। এছাড়া আরো অনুসন্ধান টিপস পেতে এই ইউজার ম্যানুয়াল পড়ুন এবং আরো গভীরে যেতে চাইলে ইলাস্টিক-এ প্রকাশিত পোস্টটি দেখুন।

ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস্ (আইসিআইজে) এর অফশোর লিক্স ডেটাবেসে, প্রায় ৭৮৫,০০০ অফশোর কোম্পানি ও ট্রাস্ট সম্পর্কে ফাঁস হওয়া তথ্য রয়েছে। ব্যক্তি, কোম্পানি, সংশ্লিষ্ট ঠিকানা, কর্মএলাকা এবং দেশের নাম দিয়ে এই ডেটাবেস সার্চ করা যায়। আইসিআইজে’র পানামা পেপারসের উপর ভিত্তি করে যত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তার আর্কাইভও পড়ার জন্য বেশ ভালো। আরো দেখুন, বিয়ন্ড পানামা: আনলকিং দ্য ওয়ার্ল্ডস সিক্রেসি জুরিসডিকশনস-এ। এখানে এইসব ডেটাবেস ব্যবহারের তিনটি টিপস আছে।

ভালো ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্যের জন্য ঘুরে আসতে পারেন বিশ্বব্যাংকের স্টার (চুরি হওয়া সম্পত্তির পুনরুদ্ধার) উদ্যোগ থেকে। এখানে, ২৩টি দেশের জন্য ব্যবসার প্রকৃত মালিক এবং তাদের সাথে সংশ্লিস্ট পক্ষগুলোকে খুঁজে বের করার উপায়সহ একটি বেনিফিসিয়াল ওনার নির্দেশিকা আছে।

Panjiva সাংবাদিকদের জন্য খুব কাজের এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি আমদানি / রপ্তানি ডেটাবেস। এটি ব্যবহার করতে পয়সা লাগে না। মনে রাখবেন: ব্র্যান্ডগুলো চাইলে পাবলিক ডিসক্লোজার থেকে তাদের নাম সরিয়ে নিতে পারে। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, দক্ষিণ আমেরিকাসহ কয়েকটি অঞ্চলের তথ্য রয়েছে।

দ্য ওপেন ওনারশিপ রেজিস্টার-এর মধ্যে আছে যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক ও স্লোভাকিয়ার জাতীয় পর্যায়ের মালিকানা ডেটা। এটি প্রতি মাসে হালনাগাদ করা হয়। রেজিস্টারটি পরিচালনা করে কর্পোরেট মালিকানার তথ্য আরও উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করা এনজিও, ওপেন ওনারশিপ। মালিকানার তথ্য প্রকাশে আরও স্বচ্ছতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে দেশগুলোর অঙ্গীকার ও পদক্ষেপ বাস্তবায়ন নজরে রাখার জন্য একটি ম্যাপ প্রকাশ করেছে গ্রুপটি। এখানে উল্লেখ করা দেশগুলোর ক্ষেত্রে কখনো কখনো জাতীয় ডেটাবেসের লিংকও অন্তর্ভূক্ত থাকে, যেমন নাইজেরিয়া এক্সট্রাকটিভ ইন্ডাস্ট্রিজ ট্রান্সপারেন্সি ইনিশিয়েটিভ-এর অডিট রিপোর্ট। ২০২৩ সালের মার্চে নাইজেরিয়া ও ফ্রান্সের আরও বাড়তি কিছু ডেটাও এখানে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তথ্যের বাণিজ্যিক উৎস
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত অনেক বেসরকারী ডেটাবেস রয়েছে। কিন্তু সেরা তথ্য পেতে চাইলে এদের বেশীরভাগই সাবস্ক্রাইব করতে হবে।

গণ এবং বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির মাধ্যমে বিনামূল্যে এসব ডেটাবেস ব্যবহারের অনুমতি মিলতে পারে।

বাণিজ্যিক ডেটাবেস ব্যবহারের যে খরচ, তার চেয়ে লাভ বেশী। আর কিছু কোম্পানি সাংবাদিকদের কাছ থেকে কম টাকা নেয়।

এমন একটি পুরোনো ও প্রতিষ্ঠিত ডেটাবেস হলো, D&B Hoovers। এর ফ্রি ওয়েবসাইটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিদেশে অবস্থিত হাজার হাজার কোম্পানির সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে। বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় সাবস্ক্রিপশন সেবা Nexis-এ।

অন্যান্য প্রধান সাবস্ক্রিপশন বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে: Arachnys, ORBIS, Bureau van Dijk, Bloomberg, PrivCo (বেসরকারি মার্কিন কোম্পানির জন্য), Thomson Reuters, LexisNexis এবং DueDil।

এই তালিকায় নতুন সংযোজন সায়ারি (Sayari), একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা। তারা ২0১৮ সালে, এই বহু-মুখী ডেটাবেস চালু করে, যা “বেশী সংখ্যক উদীয়মান, ফ্রন্টিয়ার এবং অফশোর বাজারকে কাভার করে।” সায়ারি একটি সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক সেবা, খরচ মাসে ১০০০ ডলারের মত, কিন্তু ৩০ দিনের ফ্রি ট্রায়ালও পাওয়া যায় এবং কোম্পানিটি সাংবাদিকদের সাথে কাজ করতে আগ্রহী।

তাদের ক্রেতা তালিকা দীর্ঘ। এখানে কী পাওয়া যায়, তা জানার একটি উপায় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুল লাইব্রেরির ওয়েবসাইট।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি বিজনেস স্কুলের সংগ্রহ রীতিমত বিশাল। তাদের সংগ্রহ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়। তবে তাদের অনলাইন ক্যাটালগ সম্ভাব্য টিপশিট হিসাবে কাজ করতে পারে।

সরকারি রেজিস্ট্রি

অনেক দেশের সরকারই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু শিথিল নীতিমালার কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক সময় সংক্ষিপ্ত এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য জমা দেয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি রেজিস্ট্রি কোথায় পাবেন, দেখুন এখানে:

Commercial-Register হলো সুইস গবেষকদের পরিচালনায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জাতীয় নিবন্ধনের একটি তালিকা।
আরেকটি তালিকা আছে যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কোম্পানি হাউসের।
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস ইনস্টিটিউটের Knowledge guide to international company registration , দেশভিত্তিক কর্পোরেট নিবন্ধনের মূল বিষয়গুলোকে ব্যখ্যা করে।
কনসালট্যান্ট এবং আরবিএ ইনফরমেশন সার্ভিসের কর্ণধার ক্যারেন ব্লাকম্যানের তৈরি একটি কার্যকরী তালিকা আছে। সেখানে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে হালনাগাদ বিবরণ পাওয়া যায়।
ওপেন কর্পোরেটসের তালিকায় প্রতিষ্ঠানের “উন্মুক্ততা স্কোর” পাওয়া যায়
ইনভেস্টিগেটিভ ড্যাশবোর্ডে ৩৮টি দেশের নিবন্ধন লিঙ্ক আছে।
বিশ্বের পূঁজিবাজার নিয়ন্ত্রকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা, দ্য ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনস্ (আইওএসসিও) এর তালিকায় বিভিন্ন দেশের সিকিউরিটিজ কমিশনের নাম আছে।

বৃহৎ অর্থনীতির জন্য রিসোর্স
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন তার EDGAR সিস্টেমে কর্পোরেট তথ্য ধারণ করে। পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানিগুলো তাদের ত্রৈমাসিক এবং বার্ষিক কর্পোরেট প্রতিবেদন ফাইলের জন্য অনলাইন সিস্টেমটি ব্যবহার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত – চীন, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য অঞ্চলের নন-মার্কিন কোম্পানিগুলোকে – এখানে তাদের বৈশ্বিক কর্মকান্ড বাধ্যতামূলকভাবে ফাইল এবং রিপোর্ট করতে হয়। একারণেই বিশ্বের সাংবাদিকদের কাছে EDGAR হয়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্যের প্রধান উৎস।

এখানে অনুসন্ধান শুরু করার জন্য সবচে ভালো জায়গা হল বার্ষিক প্রতিবেদন, ফর্ম 10- K, যেখানে কোম্পানির ইতিহাস, নিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি, নির্বাহীদের বেতন-ভাতা, পণ্য ও সেবার বিবরণ, সংস্থার বার্ষিক পর্যালোচনা, তার কার্যক্রম এবং বাজার সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ আছে। ফর্ম 10- Q হলো ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন, যা কোম্পানির গত তিন মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক বিবৃতি এবং কোম্পানির কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরে। 8- K রিপোর্টে দেউলিয়া অবস্থা, সম্পত্তি বিক্রি, নির্বাহীদের প্রস্থান এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য ঘটনার সম্পূরক তথ্য থাকে।

বিনিয়োগ কোম্পানীগুলোকেও EDGAR- এ ফাইলিং করতে হয়। এজন্য তারা  এসইসি ফর্ম 497 ব্যবহার করে। অতিরিক্ত তথ্য বিবৃতি (এসএআই) হলো মিউচুয়াল ফান্ডের প্রসপেক্টাসের একটি সম্পূরক নথি। এছাড়াও যেসব বিদেশী কোম্পানিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়মিত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়, এডগার সেইসব আন্তর্জাতিকভাবে নিবন্ধিত এবং রিপোর্টিং কোম্পানিগুলোর বছরভিত্তিক তালিকা রাখে। বিস্তারিত জানার জন্য, এডগার গাইডটি দেখুন।

অনেক ব্যবসা ডেলাওয়্যার রাজ্যে নিবিন্ধত। তাদের জন্য Delaware Division of Corporations দেখুন। এখানে বেনিফিসিয়াল ওনারদের কোনও তথ্য সংগ্রহ করা হয় না এবং “কোম্পানি খুলেছেন যে এজেন্ট” তারা মনোনীত পরিচালক হিসাবে কাজ করতে পারেন। (দেখুন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাখ্যা।)

National Association of Secretaries of State আপনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত রাজ্যের সাইটগুলোতে নিয়ে যাবে (একটি রাজ্য বেছে নেওয়ার পরে নীচে ছোট হরফে “অনলাইন ব্যবসা পরিষেবা” দেখুন)। উদাহরনস্বরুপ, সেখানে আপনি ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সার্চ এবং নিউইয়র্কের ব্যবসা ও কর্পোরেশন ডেটাবেসের মতো সব লিঙ্ক পাবেন। এই রাজ্য নিবন্ধকের লিংক থেকে কোম্পানির নিবন্ধন তারিখ, নিবন্ধিত ঠিকানা এবং পরিচালক ও কর্মকর্তাদের নাম পাওয়া যায়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্পোরেট তথ্য অনুসন্ধানের আরো যেসব জায়গা আছে, তার মধ্যে এলএলসি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোঅর্ডিনেটেড লিগ্যাল টেক এর ডেটাবেস উল্লেখযোগ্য।

Panjiva সাংবাদিকদের জন্য খুব কাজের এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য একটি আমদানি / রপ্তানি ডেটাবেস। এটি ব্যবহার করতে পয়সা লাগে না। মনে রাখবেন: ব্র্যান্ডগুলো চাইলে পাবলিক ডিসক্লোজার থেকে তাদের নাম সরিয়ে নিতে পারে।

যুক্তরাজ্য

কোম্পানি হাউস বিনামূল্যে কোম্পানি সম্পর্কিত তথ্য দেয়, যার মধ্যে রয়েছে:

নিবন্ধিত ঠিকানা এবং নিবন্ধনের তারিখ
বর্তমান এবং পদত্যাগী কর্মকর্তাদের নাম
ডকুমেন্ট ইমেজ
বন্ধকী চার্জ তথ্য
কোম্পানির সাবেক নাম
দেউলিয়া অবস্থা

কানাডা

SEDAR , কানাডীয় পাবলিক কোম্পানি ফাইলিং সাইট, যা ১৯৯৭ সালের জানুয়ারীতে চালু হয়।

ফ্রান্স

Infogreffe – ফ্রান্সের বাণিজ্য এবং কোম্পানি নিবন্ধন এবং বাণিজ্যিক আদালত রেজিস্ট্রি। এটি বিনামূল্যে সেখানে নিবন্ধিত কোম্পানির প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করে; তবে ফরাসি ভাষায়।

জার্মানি

কোম্পানি রেজিস্টার-এ বিভিন্ন ভাষায়, বিনামূল্যে সার্চ করা যায়। তবে কিছু কিছু নথির জন্য টাকা লাগে।

চীন

চীনের জাতীয় এন্টারপ্রাইজ ক্রেডিট ইনফরমেশন পাবলিসিটি সিস্টেমে প্রবেশ করতে পারেন এই লিংক থেকে। তবে ভাষা চীনা।

এখানে কী পাওয়া যায় তার বিবরণ আছে ’চায়না চেকআপ’-এ প্রকাশিত এই লেখায়।

উদাহরণস্বরুপ: উত্তর কোরিয়া কীভাবে তাদের সমরাস্ত্র উন্নয়ন করছে, তা নিয়ে একটি রিপোর্টে চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর এই রেকর্ড ব্যবহার করেছিল মার্কিন এনজিও C4ADS। এক পর্যায়ে, C4ADS উল্লেখ করেছে, “চীনা ব্যবসায় নিবন্ধন ফাইল থেকে পরিষ্কার বুঝা গিয়েছিল, দান্দং হংগ্রি দিয়ান্দং কোম্পানি লিমিটেড (অবরোধ উপেক্ষা করে উত্তর কোরিয়ার সাথে ব্যবসার জন্য অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান) প্রকৃত অর্থে আরো দুই চীনা কোম্পানি, ডিআইএইচআইডি এবং দান্দং কেহুয়া ইকোনোমিক ট্রেড কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে গঠিত প্রতিষ্ঠান।
অন্যান্য উৎস
অনলাইনে কর্পোরেট ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া সার্চ করে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

এজন্য পেশাদার গবেষকদের কয়েকটি পরামর্শ আবারো দেয়া হল:

কোম্পানির কর্মকর্তা এবং পরিচালকদের খোঁজ করুন। ২০১৭ সালের জিআইজেএন সম্মেলনে উপস্থাপন করা এই প্রেজেন্টেশন জানাবে, কোনো প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মচারীদের কীভাবে খুঁজবেন।
গবেষণার জন্য লিঙ্কডইন ব্যবহার করুন। অ্যাডভান্সড সার্চ অপশনে গিয়ে চেষ্টা করুন। যেমন, প্রতিষ্ঠানের সাবেক এবং বর্তমান স্টাফদের কীভাবে খুঁজতে হয়, তাদের এরকম একটি অপশন আছে তাদের মেন্যুতে। কোম্পানি এবং শিল্প গোষ্ঠীর পেইজ ভালোভাবে খেয়াল করুন।
মিডিয়া রিপোর্ট খোঁজার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক পত্রিকার দিকে মনোযোগ দিন। তাদের খুঁজে পেতে, Ulrich’s Periodicals Directory চেক করুন।
কোম্পানির ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সন্ধান করুন। আরো তথ্যের জন্য ম্যাপ এবং স্ট্রিট ভিউ ব্যবহার করুন।
পেছনের দরজা দিয়ে তথ্য পাওয়ার আরেকটি উপায় হল কর্পোরেটদের দাতব্য কর্মকান্ড। কোম্পানিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হলে সিটিজেন অডিট, প্রো-পাবলিকার ননপ্রফিট এক্সপ্লোরার এবং গাইডষ্টার দেখুন। যুক্তরাজ্যের জন্য দেখুন ওপেন চ্যারিটি, চ্যারিটিবেস এবং সরকারের চ্যারিটি রেজিস্টার।
দূষণ বা মানব পাচারের মত বিষয় নিয়ে যেসব এনজিও কাজ করে, তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। দেখুন, তাদের কী তথ্য আছে। ভায়োলেশন ট্র্যাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট অসদাচরনের উপর একটি সার্চ ইঞ্জিন।
কোম্পানির কার্যক্রমকে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে জানার জন্য ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে পারেন।

তথ্যের আরো আনুষ্ঠানিক জায়গা
সরকার এবং বাণিজ্যিকখাতের মধ্যে যোগাযোগের প্রতিটি জায়গা কোনো না কোনো সরকারি নথিতে লিপিবদ্ধ থাকে।

সরকারের সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক কোথায়-কীভাবে খুঁজবেন, সেজন্য কিছু পরামর্শ:

জমি মালিকানা – নাম এবং বিবরণ
ভূমি উন্নয়ন – বিল্ডিং, জোনিং এবং বিশেষ পারমিট
পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ – ডিসচার্জ পারমিট, নির্গমন রিপোর্ট এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
শ্রম প্রবিধান – পেশাগত নিবন্ধন এবং শ্রম বিরোধ
আদালতের রেকর্ড – পক্ষে-বিপক্ষে মামলা
আর্থিক নিয়ন্ত্রণ – ফাইলিং বা তাদের বিরুদ্ধে নেয়া ব্যবস্থা
বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ – পেটেন্ট এবং ট্রেডমার্ক নিবন্ধন
সরকারি চুক্তি – বিড এবং কাজ দেয়ার রেকর্ড
সরকারি ভর্তুকি – পেমেন্ট রেকর্ড
রাজনৈতিক অনুদান – কর্মকর্তাদের অনুদান
লবিং নিবন্ধন – প্রভাব সম্পর্কে যত ডিসক্লোজার

কোম্পানিটি কোন খাতে কাজ করে, সেই দৃষ্টিকোন থেকে চিন্তা করলে অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, তেল, গ্যাস এবং খনি কোম্পানিগুলোর গোটা বিশ্বের আর্থিক নিয়ন্ত্রকদের কাছে যে প্রতিবেদন জমা দেয়, তেমন ২০ লাখ নথি পেতে পারেন ওপেন অয়েল-এর ডেটাবেসে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের একটি টুল আছে, যা দিয়ে ২০ টি বৃহত্তম ইউরোপীয় ব্যাংকের আর্থিক তথ্য যাচাই করা যায়। আরো দেখতে পারেন, টিআই এর কর্পোরেট রাজনৈতিক যোগসূত্র সূচক ২০১৮।

আদালতের রেকর্ড অমূল্য সম্পদ হতে পারে। যেমন, PACER; এটি মার্কিন সুপ্রীম কোর্ট, আপীল ও জেলা আদালত এবং দেউলিয়া আদালত, তথা দেশটির ফেডারেল আদালত ব্যবস্থার সব ইলেকট্রনিক আর্কাইভ ধরে রাখে।

কোন আইন ও নীতিমালা ব্যবসাকে প্রভাবিত করে এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট কী কাগজপত্র আছে, তা ভেবে দেখুন। সংযোগগুলো এলাকা এবং ব্যবসার ধরণভেদে একেবারে আলাদা হতে পারে, কিন্তু চিন্তার খোরাক বা ‍সূত্র যোগায়।

সরকারী উদ্যোগ বা সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার কোনো অনুরোধ অনেক সময় সরকারী কাগজপত্রে প্রতিফলিত হতে পারে। ইউরোপের ক্ষেত্রে, ওপেন গেজেট নামের প্লাটফর্মে, ইউরোপীয় গেজেটগুলো পাওয়া যায়।
সাংবাদিকদের জন্য গাইড
কর্পোরেটদের নিয়ে গবেষণা এবং কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বুঝার জন্য অনলাইনে প্রচুর উপাদান আছে।

সাংবাদিকদের জন্য তার কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হল:

ডার্ট ডিগারস্ ডাইজেস্ট টু স্ট্র্যাটেজিক কর্পোরেট রিসার্চ, এটি লিখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্পোরেট রিসার্চ প্রজেক্টের পরিচালক ফিলিপ ম্যাটেরা।  এটি ২০১৪ সালে প্রকাশিত, কিন্তু এখনো যথেষ্ট উপযোগী।

কিভাবে অর্থ অনুসরণ করবেন: ক্রস-বর্ডার অনুসন্ধানের টিপস,  এটি জিআইজেএন-এর সাথে OCCRP’র সম্পাদক মিরান্ডা প্যাট্রুচিচের প্রশ্নোত্তর।

জিআইজেএন: কোনও সংস্থার আর্থিক রেকর্ড হাতে পেলে আপনি প্রথমে কী করেন?

সুরক্ষা ও নিরাপত্তা

English
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের জন্য এই পরিসংখ্যানগুলো খুব হতাশাজনক। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের সূত্রমতে, ১৯৯২ সাল থেকে, হত্যার শিকার হয়েছেন ১৩০০-র বেশি সাংবাদিক। তাঁদের মধ্যে ৭০০-র বেশি ক্ষেত্রে এই হত্যার কোনো বিচার হয়নি। হত্যাকারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। আর এখন বিশ্বজুড়ে ২৫০ জনের বেশি সাংবাদিক আছেন কারাবন্দি। সেটিও এমন কাজ করতে গিয়ে, যা বিশ্বের অনেক জায়গাতেই বিবেচনা করা হয় রুটিন রিপোর্টিং হিসেবে।

আর এই পরিস্থিতি মনে হচ্ছে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে হামলা ও হত্যা; রেকর্ড পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। ম্যারি কোলভিন বা ড্যানিয়েল পার্লের মতো হাই প্রোফাইল পশ্চিমা সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিকভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত সাংবাদিকেরা স্থানীয় গণমাধ্যমে কাজ করছেন। আর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো হিমবাহের ওপরের অংশটুকু মাত্র। এর বাইরে মারধর, অপহরণ, কারাবন্দি এবং আরও অনেক ধরনের হুমকির সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এগুলোও সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

হুমকিগুলো অনেক দিক থেকে আসে। মাদক ব্যবসার গোষ্ঠী বা বিদ্রোহী গ্রুপ; স্বৈরশাসক বা জাতিগত বিদ্বেষ; বুলেট অথবা সন্ত্রাসীদের বোমা; অনেক কিছুর মধ্যেই পড়তে হয় সাংবাদিকদের। একেক জায়গায় হুমকি-নিপীড়নের ধরন একেক রকম। ফলে “একক বা সহজ সমাধান” জাতীয় কিছু নেই।

এই সমস্যা মোকাবিলায় কাজ করছে বেশ কিছু পেশাজীবী সংগঠন এবং বড় কিছু বহুমাত্রিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। যাদের মধ্যে আছে জাতিসংঘ এবং অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপ।

গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের রিসোর্স পেজ সিরিজের অংশ হিসেবে, আমরা প্রকাশ করছি সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত এই গাইড। শুরুতেই থাকছে এ বিষয়ে এরই মধ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ গাইড আছে, সেগুলোর লিংক। এরপর থাকছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রধান কিছু আন্তর্জাতিক গ্রুপের লিংক, যারা কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর সহিংস হামলা নিয়ে কাজ করে।
নিরাপদ থাকা এবং সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি কাভারের গাইড
কমিটি ফর দ্য প্রটেকশন অব জার্নালিস্টস সেফটি কিট: ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছে সিপিজের চার পর্বের এই সুরক্ষা গাইড। এখানে শারীরিক, ডিজিটাল, মানসিক সুরক্ষার রিসোর্স ও টুলস সম্পর্কে মৌলিক কিছু তথ্য রয়েছে সাংবাদিক ও নিউজরুমগুলোর জন্য। এ ছাড়া সিপিজে প্রকাশ করেছে সুরক্ষাসংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদন। যেমন ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ফিজিক্যাল সেফটি: সলো রিপোর্টিং এবং ফিজিক্যাল সেফটি: মিটিগেটিং সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স। দেখতে পারেন সিপিজের ইউএস ইলেকশন ২০২০: জার্নালিস্ট সেফটি কিট।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্র্যাকটিক্যাল গাইড। ২০১৭ সালে এটি হালনাগাদ করেছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস ও ইউনেসকো। পাওয়া যাচ্ছে ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ ও পর্তুগিজ ভাষায়।

বিক্ষোভ কাভার করার জন্য নিরাপত্তা ম্যানুয়াল তৈরি করেছে আবরাজি (দ্য ব্রাজিলিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম।) পুরো ম্যানুয়ালটি এখানে পাবেন ইংরেজিতে।

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের সুরক্ষাসংক্রান্ত নীতিমালা: ২০১৫ সালে এই গাইডলাইন তৈরি করেছিল বড় কিছু কোম্পানি ও সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট সংগঠনের জোট। এটি পরবর্তীকালে অনুবাদ করা হয়েছে সাতটি ভাষায়।

নারী সাংবাদিকদের সুরক্ষাসংক্রান্ত হ্যান্ডবুক। ২০১৭ সালে ৯৫ পৃষ্ঠার এই গাইড তৈরি করেছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ওমেন ইন রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন। যুদ্ধ ও সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কাজ করা নারী সাংবাদিকদের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকি নির্ধারণ, অনলাইন নিপীড়ন ও ভ্রমনসংক্রান্ত সুরক্ষা বিষয়ে আলাদা অধ্যায় আছে এই গাইডে।

অনলাইনে সাংবাদিকদের হয়রানি: ট্রোল বাহিনীর আক্রমণ: সাংবাদিকদের জন্য বিপজ্জনক বিষয়গুলো চিহ্নিত করা এবং তাদের সাহায্য দিতে ১২টি কার্যালয়ের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া হয়, ভয় দেখিয়ে চুপ করানোর জন্য। সরকার, আন্তর্জাতিক সংগঠন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, সংবাদমাধ্যম ও বিজ্ঞাপনদাতারা কীভাবে এসব ক্ষতিকর অনলাইন প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে, সে জন্য ২০১৮ সালে ২৫টি পরামর্শ হাজির করেছে আরএসএফ। দেখুন জিআইজেএন-এর সারসংক্ষেপ।

সংবাদমাধ্যমগুলোর নিরাপত্তাসংক্রান্ত স্ব-মূল্যায়ন। এটি এসিওএস অ্যালায়েন্সের একটি টুল। যা দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তাসংক্রান্ত চর্চা ও প্রটোকল যাচাই করতে পারে এবং সেটি আরও উন্নত করতে পারে। এসিওএস অ্যালায়েন্স বিভিন্ন সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট গ্রুপের একটি জোট। ২০১৯ সালের এই স্ব-মূল্যায়ন টুলটিতে আছে “কিছু প্রধান প্রশ্ন ও গাইডলাইন, যা সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিষয়ে একটি গঠনমূলক আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করবে এবং সেগুলো কার্যকর ও বাস্তবসম্মতভাবে কাজে লাগানোর বিষয়ে অনুপ্রাণিত করবে।” (স্ব-মূল্যায়নের টুলটি এখানে পাবেন ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায়।)

সেফ+সিকিউর ২০১৯ সালে প্রকাশ করেছে একটি হ্যান্ডবুক ও ইস্যুকেন্দ্রিক চেকলিস্ট। তথ্যচিত্র নির্মাতাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেরা কিছু রিসোর্সের খবর আছে এখানে। একই সঙ্গে আছে এ বিষয়ে আরও তথ্য বা প্রশিক্ষণ কোথায় পাওয়া যাবে, সেই খোঁজও।

হয়রানি-হেনস্তার শিকার হওয়া সাংবাদিকদের জন্য আইপিআইয়ের ৫ পরামর্শ। ২০২০ সালে এই প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট। অনলাইনে হয়রানির শিকার হওয়া সাংবাদিকদের কীভাবে সাহায্য-সমর্থন দেওয়া যায়, তা নিয়ে নিউজরুমগুলোর জন্য প্রটোকল বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে এখানে। অনলাইনে হয়রানি বিষয়ে অন্যান্য রিসোর্সও তৈরি করেছে আইপিআই।

অনলাইন হয়রানির ফিল্ড ম্যানুয়াল। ২০১৭ সালে এটি তৈরি করেছে পেন আমেরিকা। “লেখক, সাংবাদিক, তাদের মিত্র এবং চাকরিদাতারা কীভাবে অনলাইনে বিদ্বেষ ও হয়রানির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে পারেন, তার কার্যকর কিছু কৌশল ও রিসোর্সের” হদিস রয়েছে এখানে।

গণমাধ্যমকর্মী এবং সশস্ত্র সংঘর্ষ। ২০১৭ সালে এই হ্যান্ডবুক তৈরি করেছে ব্রিটিশ রেড ক্রস এবং ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড কমপারেটিভ ল (বিআইআইসিএল)।

ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্টে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কোন জিনিসগুলো খেয়াল রাখা দরকার, তা জানিয়ে দুই পৃষ্ঠার চেকলিস্ট তৈরি করেছে দ্য এসিওএস অ্যালায়েন্স।

পরিবর্তনের জন্য রিপোর্টিং: সংকটপূর্ণ অঞ্চলের স্থানীয় সাংবাদিকদের হ্যান্ডবুক। ২০০৯ সালে এটি তৈরি করেছে ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিং। এখানে একটি অধ্যায় আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে। এটি পাওয়া যাচ্ছে ইংরেজি, আরবি, ফার্সি, রাশিয়ান, কাজাখ, কিরগিজ ও তাজিক ভাষায়।

দ্য সেফটি নেট ম্যানুয়াল। উপশিরোনাম: অস্বাভাবিক ও জরুরি পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের জন্য গাইডলাইন। ২০১৭ সালে এটি তৈরি করেছে সাউথইস্ট ইউরোপ মিডিয়া অর্গানাইজেশন। এটি পাওয়া যাচ্ছে ইংরেজিসহ ১১টি আঞ্চলিক ভাষায়।

দ্য জেমস ডব্লিউ. ফোলি জার্নালিস্ট সেফটি গাইড: এ কারিকুলাম প্ল্যান ফর কলেজ জার্নালিজম অ্যান্ড কমিউনিকেশনস ইনস্ট্রাক্টর। ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট সিরিয়াতে হত্যা করা হয়েছিল সাংবাদিক জেমস ফোলিকে। তাঁকে নিয়ে নির্মিত এইচবিওর একটি তথ্যচিত্রের সঙ্গে তৈরি করা হয়েছে পাঁচ সেশনের এই কোর্স। এই শিক্ষা কার্যক্রমে আছে অনেক রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল। বিশেষত বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবন্ধ। যেগুলোতে পরিবেশ-পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয়েছে এবং নানাবিধ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। “FoleySafety” এই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে এখানে অংশ নিতে পারবেন।

মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে ওপেন সোর্স ইনভেস্টিগেশনের সময় কীভাবে শনাক্ত করবেন অন্যদের দ্বারা সংক্রামিত মানসিক চাপ এবং কীভাবে সেটি কাটিয়ে উঠবেন, ২০১৮ সালে প্রবন্ধটি লিখেছিলেন হান্না ইলিস। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্কম্যান ক্লাইন সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির গবেষণা সহযোগী।

ফ্রিল্যান্স ফাইলস: সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্যও সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। ২০১৭ সালে সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টসের ওয়েবসাইটে এই প্রবন্ধ লিখেছিলেন ডেল উইলম্যান।

সাংবাদিকতা ও সংক্রমিত মানসিক চাপ: সাংবাদিক, সম্পাদক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য একটি গাইড। অন্যদের কাছ থেকে যে মানসিক চাপ সংক্রমিত হয়, এবং তা মোকাবিলায় যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়, তা নিয়ে বাস্তব কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ২০১৭ সালের এই হ্যান্ডবুকে। এটি লিখেছেন স্যাম ডুবারলি ও মাইকেল গ্রান্ট।

নারী সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয় ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন। এখানে দেখুন তাদের রিসোর্সের তালিকা।

সাংবাদিকদের আত্ম-যত্ন, ২০১৯ সালের  নিকার সম্মেলনে উপস্থাপন করা হয়েছিল এই “বাস্তবসম্মত গাইড”।

সাংবাদিকদের টিকে থাকার গাইড। এখানে আছে অ্যানিমেশন দিয়ে বানানো নয়টি লেসন। কীভাবে টিয়ার গ্যাস সামলাতে হবে, এমন তথ্যও আছে এখানে। ২০১২ সালে এটি তৈরি করেছিল সামির কাসির ফাউন্ডেশনের এসকিইজ সেন্টার ফর মিডিয়া অ্যান্ড কালচারাল ফ্রিডম।

নৃশংসতা নিয়ে রিপোর্টিং। সাক্ষাৎকার নেওয়া বিষয়ে এই লেখা ২০১৪ সালে লিখেছিলেন পিটার দু টোয়িত। এখানে একটি অধ্যায় আছে “নিজের যত্ন নেওয়া” প্রসঙ্গে।

জরুরি প্রটোকল কেস স্টাডি। এটি লিখেছেন রাশিয়ান সংবাদপত্র মেডুজার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইভান গোলুনভ। জিআইজেসি১৯-এ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন যে, তাঁকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তখন মেডুজা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল।

গ্রাউন্ডট্রুথ: প্রতিনিধিদের জন্য একটি ফিল্ড গাইড। মাঠে গিয়ে সাংবাদিকদের কোন জিনিসগুলো মেনে চলতে হবে ও চর্চা করতে হবে, তার একটি গাইডলাইন আছে এখানে। আরও আছে অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের প্রবন্ধ। ২০১৯ সালের এই প্রবন্ধটি দেখুন: হুমকি ও হয়রানি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পাঁচটি পরামর্শ

ট্র্যাজেডি ও সাংবাদিক। ১৯৯৫ সালে এটি তৈরি করেছে ডার্ট সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড ট্রমা।
সাংবাদিকতার সুরক্ষা ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত গ্রুপ
আ কালচার অব সোসাইটি (এসিওএস)। ২০১৫ সালের শেষে এই জোট তৈরি হয়েছিল বড় নিউজ কোম্পানি ও সাংবাদিকতা-সংশ্লিষ্ট সংগঠনদের নিয়ে। তাদের লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে কাজ করা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকদের সুরক্ষা মানদণ্ড আরও উন্নত করা। নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান, প্রশিক্ষণ, বীমা ও যোগাযোগের নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে এই জোট।

আর্টিকেল ১৯: এটি লন্ডনভিত্তিক সংগঠন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে আসলে তা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা ও দেনদরবার করে আর্টিকেল ১৯। এ ছাড়া তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, গবেষণা করে ও সেগুলো প্রকাশ করে। পেশাগত কারণে নিজেদের বা পরিবারের সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে আছে, এমন সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রচার চালায় আর্টিকেল ১৯।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে): নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন পরিচালিত হয় সাংবাদিকদের দ্বারা গঠিত পরিচালনা পর্ষদ দিয়ে। সিপিজে প্রতিটি দেশ ধরে ধরে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক নানা মিশন পরিচালনা করে এবং সাংবাদিক নিপীড়ন ও হত্যার বিচার না হওয়ার তালিকা হালনাগাদ করে। সিপিজের জার্নালিস্ট অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম থেকে আইনি, চিকিৎসা বা অন্য কোথাও পুনর্বাসনের সহায়তা পান হুমকির মুখে থাকা সাংবাদিকেরা। একই সঙ্গে তারা সাহায্য-সহযোগিতা দেয় হত্যার শিকার হওয়া বা জেলে থাকা সাংবাদিকদের পরিবারকে।

ফাস্ট ড্রাফট ‍তৈরি করেছে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম। যেখান থেকে নিউজরুমগুলো অনলাইন হুমকির বিরুদ্ধে প্রস্তুত হওয়াসংক্রান্ত সহায়তা পাবে। তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিচ্ছে এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।

গ্লোবাল জার্নালিস্ট সিকিউরিটি। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াশিংটনভিত্তিক এই পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেন সংবাদকর্মী, নাগরিক সাংবাদিক, মানবাধিকার ও এনজিও কর্মীদের। তারা উন্নত ও উদীয়মান গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নিরাপত্তারক্ষীদের প্রশিক্ষণ দেন যে কীভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মানদণ্ডগুলো মেনে চলা যায় এবং কীভাবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নিরাপদে লেনদেন করতে হবে।

ইন্টার আমেরিকান প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (আইএপিএ): মিয়ামি, ফ্লোরিডাভিত্তিক এই সংগঠন গড়ে উঠেছিল ১৯৪০-এর দশকের শেষ দিকে। এখন তাদের সদস্যসংখ্যা ১৪০০। এবং তারা ছড়িয়ে আছে চিলি থেকে কানাডা পর্যন্ত। সংগঠনটি পুরো আমেরিকা মহাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে ও এর পক্ষে কাজ করে। কোনো সাংবাদিক হত্যার শিকার হলে তারা একটি র‌্যাপিড রেসপন্স ইউনিট নিয়োগ করে। প্রতিটি দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোতে কাজ করা সাংবাদিকদের জন্য তারা প্রকাশ করেছে একটি “ঝুঁকি মানচিত্র”। সাংবাদিক নির্যাতন বা হত্যা বিচার না হওয়ার ব্যাপারটি তারা আলাদাভাবে পর্যবেক্ষেণ করে। এ বিষয়ে এই অঞ্চলের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে তাদের “ইমপিউনিটি প্রজেক্ট”-এ।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে): ব্রাসেলসভিত্তিক এই সংগঠন আধুনিক রূপে যাত্রা শুরু করেছিল ১৯৫২ সালে। আইএফজে নিজেদের বর্ণনা দেয় পুরো বিশ্বের সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে। তারা পর্যবেক্ষণ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পরিস্থিতি এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে দেনদরবার করে। তারা প্রতিষ্ঠা করেছে ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সেফটি ইনস্টিটিউট।

ইন্টারন্যাশনাল ফ্রিডম অব ইনফরমেশন এক্সচেঞ্জ (আইএফইএক্স): টরন্টোভিত্তিক এই সংগঠনের সবচেয়ে দৃশ্যমান ভূমিকা হলো: তথ্যের সূত্র। তারা পরিচালনা করে, যাকে তারা বলে “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তারিত এবং উন্মুক্ত তথ্য সেবা”। তাদের আছে একটি সাপ্তাহিক নিউজলেটার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রবন্ধের নিয়মিত তালিকা প্রকাশ এবং বিশ্বজুড়ে তাদের সদস্যদের থেকে আসা “অ্যাকশন অ্যালার্ট”। ৫০টির বেশি দেশে ৯০টির বেশি সহযোগী সংগঠন আছে তাদের। ২০১১ সালে তারা ২৩ নভেম্বরকে ইন্টারন্যাশনাল ডে টু এন্ড ইনপিউনিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সেফটি ইনস্টিটিউট (আইএনএসআই): এটি ব্রাসেলসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। ২০০৩ সালে এটি গড়ে উঠেছিল আইএফজে ও আইপিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে। এটি নিজেদের বর্ণনা দেয় এভাবে: “বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কাজ করা সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটি কাজ করে সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকদের সহায়তা দেওয়ার গ্রুপ ও ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত জোটের মাধ্যমে।” তারা প্রশিক্ষণ আয়োজন করে, সুরক্ষাসংক্রান্ত কৌশল-পরামর্শ ও ম্যানুয়াল তৈরি করে। এবং সাংবাদিকদের ওপর আসা যেকোনো আঘাত পর্যবেক্ষণ করে। সেটি সহিংস আক্রমণই হোক বা কোনো দুর্ঘটনা।

ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ইনস্টিটিউট (আইপিআই): ১৯৫০ সালে গঠিত হয়েছিল  ভিয়েনাভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান। আইপিআই নিজেদের বর্ণনা দেয় “সম্পাদক, সংবাদমাধ্যমের নির্বাহী ও অগ্রণী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক” হিসেবে। আইএনএসআই-এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে, তারা পর্যবেক্ষণ করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসংক্রান্ত পরিস্থিতি এবং প্রকাশ করে বার্ষিক ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম রিভিউ। ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোতে তারা নিয়মিত মিশন পরিচালনা করে এবং সাংবাদিকদের ওপর আসা হামলাগুলো চিহ্নিত করে।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্যারিসভিত্তিক এই সংগঠন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘনসংক্রান্ত তথ্য এক জায়গায় করে আরএসএফ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মিশনগুলোতে সহায়তা দেয়। সুরক্ষার লক্ষ্যে সংবাদমাধ্যম বা ব্যক্তি সাংবাদিকের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্থিক সহায়তা দেয়। সহায়তা দেয় জেলে থাকা সাংবাদিকদের পরিবারকেও। কাজ করে সাংবাদিকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে। বিশেষভাবে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে। পেশাগত কাজে বিপজ্জনক জায়গায় যাচ্ছেন, এমন সাংবাদিকদের তারা বুলেটপ্রুফ ভেস্ট ও হেলমেট ভাড়া দেয় এবং বিমার ব্যবস্থা করে।

ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজপেপার এবং নিউজ পাবলিশার্স (ডব্লিউএএন-আইএফআরএ): ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে প্যারিসভিত্তিক এই সংগঠন। পাঁচটি মহাদেশ থেকে ১৮ হাজারের বেশি প্রকাশনার প্রতিনিধিত্ব করে ডব্লিউএএন। মৌলিক নানা বিষয়ে তথ্য ও সহায়তা প্রদান ছাড়াও ডব্লিউএএন বিশেষভাবে নজর দেয় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণের দিকে। এবং তারা “দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পেইন এবং বিশেষ ঘটনাগুলো নিয়ে প্রচারপ্রচারণা চালায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে।”

ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড: নেদারল্যান্ডসের এই গণমাধ্যম উন্নয়ন এনজিও গঠন করেছে রিপোর্টার্স রেসপন্ড। এটি একটি আন্তর্জাতিক জরুরি তহবিল। যেখান থেকে সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে সরাসরি সহায়তা দেওয়া হয়। স্থানীয় নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়েও কীভাবে দ্রুততম সময়ে আবার কর্মকাণ্ড শুরু করা যায়, সে বিষয়ে সক্ষম করে তোলা তাদের লক্ষ্য। কোনো সহায়তার অনুরোধ এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দেওয়ার লক্ষ্য এই গ্রুপের।

ক্যালিটি ফাউন্ডেশন: সুইডেনভিত্তিক এই তহবিল থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া হয় বিশ্বের সেসব রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফারদের, যারা পেশাগত কারণে কারাগারে আছেন, শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছেন বা নির্বাসনে যাচ্ছেন।

লাইফলাইন ফান্ড: দ্য লাইফলাইন এমব্যাটলড সিএসও অ্যাসিস্ট্যান্স ফান্ড থেকে জরুরি আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় হুমকি বা হামলার মুখে থাকা বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি গ্রুপকে। যার মধ্যে সাংবাদিকদের সংগঠনও আছে। ১৭টি সরকার ও ফাউন্ডেশনের পৃষ্ঠপোষকতায়, লাইফলাইন দিয়ে থেকে স্বল্পমেয়াদি জরুরি অনুদান। এটি তারা দেয় চিকিৎসা সহায়তা, আইনি সহায়তা, আইনি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, অস্থায়ীভাবে অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তর, নিরাপত্তা ও সামগ্রী প্রতিস্থাপনের জন্য।

রোরি পেক ট্রাস্ট: লন্ডনভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং তাদের পরিবারকে বাস্তবিক সাহায্য-সহযোগিতা দেয়। তাদের কর্মদক্ষতা, সুরক্ষা, নির্ভয়ে কাজ করতে পারার অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। ফ্রিল্যান্স অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম, ফ্রিল্যান্স রিসোর্স, রোরি পেক অ্যাওয়ার্ড ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে।

 

আরআইএসসি: রিপোর্টার্স ইনস্ট্রাক্টেড ইন সেভিং কলিগস একটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্রুপ, যারা বিশ্বের দুর্গম ও সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কর্মরত সাংবাদিকদের বিনা মূল্যে সুরক্ষা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। তাদের প্রশিক্ষণগুলোর প্রথম দুদিন কোনো সংকট মোকাবিলায় সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর চার দিন থাকে প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ। তাদের কর্মকাণ্ডগুলোতে সুযোগ পান অভিজ্ঞ, কর্মরত, ফ্রিল্যান্স ও আঞ্চলিক সাংবাদিকেরা। এটি প্রশিক্ষণগুলো আয়োজন করা হয় বিভিন্ন জায়গায় এবং কারা আবেদন করছে, সেটি দেখেও নির্ধারিত হয়।

তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগের যত রকম কৌশল

English
তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ করে তথ্য পাওয়া খুব সহজ – এমন না ভাবাই ভালো। আবেদন করে পাওয়া তথ্য যে সবসময় আপনার কাজে লাগবে তা-ও নয়। তবু লেগে থাকলে ভালো ফল পাওয়া যায়। একারণে বিশ্বের যেখানেই এই আইন আছে, সেখানেই সাংবাদিকরা একে কাজে লাগিয়ে তৈরি করছেন অসাধারণ সব রিপোর্ট। একের পর এক বাধা পেরিয়ে যারা শেষ পর্যন্ত কঠিন সব তথ্য হাতে পাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, চাইলে তাদের পথ ধরে হেঁটে যেতে পারেন আপনিও। তখন, বিষয়টি সম্পর্কে আপনার ভয়ও কমে আসবে অনেকটাই।

একেক দেশের তথ্য অধিকার আইন একেকরকম হতে পারে। এই বৈচিত্র্যের কারণে, সবার কাজে আসবে এমন গড়পড়তা পরামর্শ দেয়া কঠিন। তবুও, অভিজ্ঞ সাংবাদিক এবং তথ্য অধিকার বিশেষজ্ঞদের দেওয়া পরামর্শে উল্লেখযোগ্য মিল পাওয়া যায়।

ভারত, মেক্সিকো, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক-গবেষকদের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে জিআইজেএন তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের আটটি সাধারণ দিক খুঁজে পেয়েছে। এখানে রইল তাদের সেই পরামর্শ ও প্রাসঙ্গিক লিংক, যা আপনাকে পরিচয় করিয়ে দেবে এই আইন ব্যবহারের কিছু কার্যকর কৌশলের সাথে।
জিআইজেএনের ৮ পরামর্শ

১. আগাম পরিকল্পনা: খুঁজে বের করুন আপনি কী চান। তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে বিশেষজ্ঞ কমবেশি সবাই জোর দিয়ে বলেছেন, নথিপত্র চাওয়ার আগে, পর্যাপ্ত গবেষণা করে নিন। নিশ্চিত হোন আপনি কী চান।

২.

স্যাটেলাইট ছবি কোথায় পাবেন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন?

English

উপগ্রহ চিত্র (স্যাটেলাইট ইমেজ) কোনও কিছু আবিষ্কার বা বিশ্লেষণের শক্তিশালী টুল। একই সাথে এটি প্রাণবন্ত ছবিরও যোগানদাতা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা চাইলে মহাকাশ থেকে তোলা এসব ছবি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এরইমধ্যে সংঘাত,জলবায়ু পরিবর্তন,শরণার্থী পরিস্থিতি,দাবানল,অবৈধ খনি খনন,সমুদ্র বা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়া,বন উজাড়,দাসপ্রথা এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরীতে, তারা এর সদ্ব্যবহার করেছেন।

উপগ্রহ ছবি, যেমনটা বলছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ, “সরল রৈখিক চিন্তাধারা থেকে স্বতন্ত্র।”

ক্ষয়িষ্ণু তটরেখা, ক্রমবর্ধমান চর কিংবা বনজসম্পদের বিলুপ্তির মত ক্ষেত্রে, সময়ের সাথে হওয়া পরিবর্তন দারুণ ভাবে তুলে ধরতে পারে ছবিগুলো। একইসাথে সম্পূরক তথ্য-প্রমাণ যোগান দিয়ে, এটি আপনার অন্য গবেষণাকেও করতে পারে সমৃদ্ধ।  জিআইজেএনের এই রিসোর্স পেইজে, বিনা পয়সায় হাই-রেজ্যুলুশন ছবি ও সহযোগিতা পাওয়ার ১০টি জায়গার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

এই তালিকায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অলাভজনক, কিন্তু জিআইজেএন কিছু বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও খোঁজ পেয়েছে, যারা সাংবাদিকদের সহায়তা ও ছবি দিতে রাজি। (নীচে দেখুন)।

যেহেতু এর সাথে কারিগরী (টেকনিক্যাল) ইস্যুও জড়িত, তাই রিপোর্টারদের প্রতি পরামর্শ, তারা যেন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ সহায়তা নেন।

”সেন্টিনেল ২ এর ছবিতে কী আছে, যা ল্যান্ডস্যাট ৮-এর ছবিতে নেই – কম্পিউটারের সামনে বসে এসব নিয়ে চুল ছেড়ার চেয়ে, সাংবাদিকদরা প্রতিবেদন তৈরী বা অসাধারণ একটা লেখার পেছনে বেশি সময় ও শ্রম দিন, এটাই আমি চাই।” এই মন্তব্য করেছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ, যিনি সাংবাদিকদের সাহায্য করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

তাঁর মতো, উপগ্রহ চিত্র নিয়ে যারা নিয়মিত কাজ করেন, তাদের বিশ্বাস, সাংবাদিকরা স্যাটেলাইট ছবি দিয়ে আরও অনেক কিছু করতে পারেন।

এই বিষয়ে প্রাথমিক জানাশোনার জন্য, অ্যান হেল মিগলারেসের লেখা প্রবন্ধটি দেখে নিতে পারেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট আর্থের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা – যারা বৈশ্বিক উন্নয়ন ইস্যুতে উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার নিয়ে কাজ করে।

এ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা ও টিপস পাওয়া যাবে, জিওস্পেশাল মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর নির্বাহী সম্পাদক অনুসূয়া দত্তের চমৎকার এই নিবন্ধে। তিনি আইজেএশিয়া১৮-তে ‘উপগ্রহ চিত্রের নতুন যুগ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
যা দেখে আপনিও উৎসাহী হবেন

কাঁচামাল হিসেবে স্যাটেলাইটের মান যত উন্নত হচ্ছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় উপগ্রহ চিত্রের কদরও বাড়া উচিত ততটাই।

নিম্ন-কক্ষপথের অপেক্ষাকৃত ছোট ও সস্তা স্যাটেলাইটগুলো দিনে দিনে আরও বিশদ ছবি সরবরাহ করছে। তারা ছবি নিচ্ছে বেশি সময় ধরে এবং বেশি এলাকা জুড়ে। মার্কিন কোম্পানী প্ল্যানেট, ১৭৫টির বেশি উপগ্রহ দিয়ে, প্রতিদিনি গোটা পৃথিবীর প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ বর্গমাইল ভূ-খন্ডের হাই-রেজ্যুলুশন ছবি তৈরি করছে। এক বর্গমিটার প্রতি পিক্সেলের ছবিগুলো রাস্তা, ভবন, ফসল, এমনকি বনের গড়পড়তা রঙ পর্যন্ত দেখাতে সক্ষম। এখন রেজ্যুলুশন নেমে এসেছে ১০ সেন্টিমিটার মাপে, যা দিচ্ছে আরও পরিষ্কার দৃশ্য, বাড়াচ্ছে সম্ভাবনা।

অনুপ্রেরণার জন্য, এখানে স্যাটেলাইট ছবি বিষয়ক সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

আইজেএশিয়া১৮-তে রয়টার্সের গ্রাফিক্স সম্পাদক ক্রিস্টিন চ্যান ‘রিপোর্টিং টুল হিসেবে উপগ্রহ চিত্র’ বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন।

প্ল্যানেটের একটি সংবাদ বিভাগ রয়েছে। আর্থরাইজ মিডিয়ার রয়েছে একটি নিউজওয়্যার ও কিছু কেস স্টাডি। আর স্কাইট্রুথের প্রকল্পগুলোর খবর পড়া যাবে এখানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বখ্যাত ক্রূগার ন্যাশনাল পার্ক ও মোজাম্বিক সীমান্তে অবস্থিত, মাসিংগির গ্রামের ভূমি বিরোধ নিয়ে একটি রিপোর্ট সম্প্রতি আমাদের নজর কেড়েছে। অক্সপেকার্স ইনভেস্টিগেটিভ এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিজমের সাংবাদিক এস্কেশিও ভ্যালোই-এর প্রতিবেদনে কীভাবে ড্রোন ও উপগ্রহ ছবি ব্যবহার হয়েছে, তার বিবরণ দেখুন।

বেলিংক্যাট থেকে পাচ্ছেন, অবকাঠামোগত পরিবর্তন সনাক্ত করতে টাইম-ল্যাপ্স উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার: মিয়ানমার, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ চীন সাগরের কেস-স্টাডি।

আফ্রিকায় ড্রোন পরিচালনার জন্য কীভাবে একটি বিমান ঘাঁটির সম্প্রসারণ করেছিলো সিআইএ, তা দেখাতে, প্ল্যানেট ল্যাবরেটরির ছবি ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাদের এই নিবন্ধে দেখুন: উপগ্রহ চিত্র এবং ছায়া বিশ্লেষণ: কিভাবে টাইমস প্রত্যক্ষদর্শীদের পাঠানো ভিডিও যাচাই করে।

২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জিআইজেএন-এর সম্মেলনে, বতসোয়ানার আইএনকে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এর জোয়েল কনোপো ব্যাখ্যা করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ভবন কম্পাউন্ডে সামরিক অবকাঠামো নির্মাণের ঘটনা প্রমাণ করতে স্যাটেলাইট ছবি কতটা কাজে এসেছিল। তাঁর মতে, এমন ছবি টাকা দিয়ে কিনেও লোকসান হয় না। “উপগ্রহ ছবি ব্যবহার করে, কম্পাউন্ডের ভেতরে বেশ কয়েকটি যানবাহন এবং সামরিক কার্যক্রমের অস্তিত্ব খুঁজে পাই আমরা, যা সরকার অস্বীকার করে আসছিল ।” বলেন কনোপো।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বেলিংক্যাট, তাদের অনুসন্ধানে নিয়মিতভাবে স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে। ২০১৮ সালে “পৈশাচিক অবহেলা: পূর্ব সিরিয়ার সংঘাত পরবর্তী তেল দূষণ” নামের অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরি হয় উপগ্রহ ছবির ভিত্তিতে। আরেকটি প্রতিবেদনে বেলিংক্যাট প্রমাণ করে, ইরান কীভাবে একটি কৌশলগত এয়ারপোর্টের রানওয়ে বড় করছে।

বেলিংক্যাট থেকে আরেকটি পাঠ: কিভাবে উপগ্রহ ছবি থেকে পুড়ে যাওয়া গ্রাম সনাক্ত করা যায় – ক্যালিফোর্নিয়া, নাইজেরিয়া এবং মায়ানমারের কেস-স্টাডি।

রয়টার্স ইনস্টিটিউটের মার্ক করকোরান, সংবাদ সংগ্রহে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক প্রবন্ধে, মিডিয়া কেস স্টাডি এবং সাংবাদিকদের উপগ্রহ ছবি সরবরাহ করে এমন দুটি প্রভাবশালী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বিশ্লেষণ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন স্যাটেলাইট সাংবাদিকতার প্রয়োগ এবং তার সীমাবদ্ধতা নিয়েও।
যেসব সংগঠন সাংবাদিকদের সাথে কাজ করে

আর্থরাইজ মিডিয়া: আর্থরাইজ মিডিয়া উপগ্রহ ছবি তৈরি, খোঁজাখুঁজি, লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং তার বিশ্লেষণে সহায়তা করে সাংবাদিকদের। তাদের একটি নিউজওয়্যার রয়েছে, যা উপগ্রহ চিত্র থেকে নেয়া মৌলিক কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনার প্রতিবেদনকে উন্নত করতে পারে। চাহিদা অনুযায়ী স্যাটেলাইট ছবির বিশ্লেষণ ও ডিজাইন তৈরী, আর্থরাইজের আরেকটি সেবা।  সাধারণ মানুষ কিংবা বিশেষজ্ঞ নন এমন পাঠকের পক্ষে, প্রাথমিক বা র’ ফরম্যাটে থাকা ছবি বোঝা কঠিন। তাই ছবিকে বোধগম্য করতে প্রতিষ্ঠানটি, তাতে ’কাস্টম ফিল্টার’ প্রয়োগ করে। একইসাথে তারা ছবির মৌলিক বিশ্লেষণ দেয় এবং তাকে একটি নির্দিষ্ট মাপে নিয়ে আসে । যা দেখে বোঝা যায়, কোথায় কত পানি শুকিয়ে গেছে বা দক্ষিণ চীন সাগরের একটি দ্বীপে কত অবকাঠামো রয়েছে। সবশেষে ছবিগুলো সংবাদ মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য যথাযথ লাইসেন্স নিশ্চিত করে আর্থরাইজ। তাদের সেবা পেতে এখানে অনুরোধ পাঠান।

স্কাইট্রুথ: যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়া ভিত্তিক অনুসন্ধানী এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জন আমোস। তিনি বলেছেন, তারা বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী। তার সাথে যোগাযোগ করুন john@skytruth.org এই ই-মেইল ঠিকানায়।

এসরি: এসরি (ইএসআরআই) আপনাকে দেবে তাদের স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহারের সুযোগ,  বিশ্লেষণ এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুলস। মানচিত্রের মাধ্যমে তথ্য-বহুল ও আকর্ষণীয় স্টোরিটেলিংয়ের জন্য, অন্য উৎস থেকে নেয়া ছবি, তাদের কন্টেন্টের সাথে সংযোজন করতে দেয় করতে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এসরির ‘ওয়ার্ল্ড ইমেজারি বেসম্যাপ’ প্রতিনিয়ত হালনাগাদ হচ্ছে। এর ক্লাউড-ফ্রি সংস্করণও রয়েছে, যার নাম ক্লারিটি। ল্যান্ডস্যাট উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্যের একটি বিশাল ভান্ডার রয়েছে তাদের। সেখান থেকে সাম্প্রতিক ও ঐতিহাসিক তথ্য অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণের সুযোগ দেয় তারা। লিভিং অ্যাটলাস অব দ্যা ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমেও ছবি সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানিটি। আপনি এই স্টোরি ম্যাপের মাধ্যমে ছবি আপডেটের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সবসময় অবহিত থাকতে পারেন। এসরি ছবি নিয়ে কাজ করার জন্য আর্কজিআইএস আর্থ (একটি বিনামূল্যের থ্রি-ডি ভিউয়ার, যা জিআইএসের সাথে কম পরিচিত লোকদের জন্য তৈরী) সহ আরও অনেক ধরনের টুলস সরবরাহ করে। স্টোরি ম্যাপস ওয়েবসাইট মাল্টিমিডিয়া ও ন্যারেটিভ টেক্সটের মাধ্যমে মানচিত্র উপস্থাপনের নানা পথও দেখিয়ে থাকে।

নেতৃস্থানীয় স্যাটেলাইট ছবি কোম্পানীগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে এসরি। তারা প্রায়ই আর্কজিআইএস অনলাইনে (ম্যাপিং ও বিশ্লেষণের প্লাটফর্ম) অলিম্পিক গেইমস কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক ঘটনার আপডেটেড ছবি প্রকাশ করে।

এসরির সাথে একটি চুক্তির কল্যাণে, জিআইজেএন সদস্যরা, ছবি নিয়ে কাজ ও মানচিত্র তৈরির জন্য বিনামূল্যে আর্কজিআইএস সফটওয়্যারের লাইসেন্স চেয়ে অনুরোধ করতে পারেন। আরও তথ্যের জন্য, এখানে জিআইজেএনের সাথে যোগাযোগ করুন।ম্যাক্সার নিউজ ব্যুরো: সরকারী ও বেসিরকারি পর্যায়ে উন্নত মহাকাশ প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস। তারা ২০১৭ সালের মার্চ থেকে একটি নিউজ ব্যুরো পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের হাই-রেজ্যুলুশন উপগ্রহ ছবি ও বিশ্লেষণ সক্ষমতা ব্যবহার করে, সামাজিক কল্যাণ ও বৈশ্বিক স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার কাজে। ম্যাক্সারের অন্যতম ইউনিট ডিজিটালগ্লোব তৈরি করে সর্বোচ্চ রেজ্যুলুশনের ছবি। আস্থাভাজন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রকল্পে অংশীদার হতে আগ্রহী নিউজ ব্যুরো, যেখানে তারা দক্ষতা ও ছবি দিয়ে সমর্থন যোগায় । আরও জানতে যোগাযোগ করুন turner.brinton@maxar.com এই ঠিকানায়।

ম্যাক্রোস্কোপমিডিয়া: উপগ্রহ ছবি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন তৈরির জন্য সাংবাদিকদের বিনামূল্যে সহায়তা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। স্যাটেলাইট সংক্রান্ত মিডিয়া প্রকল্পে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ স্টেইন। (কোন ওয়েবসাইট নেই।) জিআইজেসি’১৭ তে তাঁর উপস্থাপনা দেখুন। তাঁর সাথে যোগাযোগ করুন, Jeff.Stein@macroscope.com – এই ঠিকানায়।

প্ল্যানেট স্টোরিজ নামে প্ল্যানেটের একটি ডেটাবেস রয়েছে, যা ব্রাউজ, বিচার-বিশ্লেষণ ও শেয়ার করতে পারেন, যে কেউই। এর দুটি টুলস হলো – কম্পেয়ার ও টাইমল্যাপ্স। কম্পেয়ার দুটি ছবি বাছাই করে, স্লাইডারে রেখে, তাদের মধ্যে তুলনামূলক বিচারের সুযোগ দেয়। আর টাইমল্যাপ্সের মাধ্যমে একাধিক ছবি বাছাই করে, তার সময়ভিত্তিক পরিবর্তনের একটি অ্যানিমেটেড স্টোরি তৈরী করা যায়। পৃথিবীর সমস্ত ভূ-খন্ডের প্রতিদিনের ছবির একটি অসাধারণ সংগ্রহ আছে প্ল্যানেটের। অনুমোদিত সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে ছবি ও দক্ষতা ভাগাভাগি করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগ করুন Press@planet.com – এই ঠিকানায়।

ডেকার্টস ল্যাবস: এটি একটি বাণিজ্যিক সেবা। তারা জনসাধারণ এবং বাণিজ্যিক উৎস থেকে প্রতিদিন তথ্য সংগ্রহ করে এবং সাংবাদিকদেরও সাহায্য করে। শন প্যাট্রিক (প্রতিষ্ঠানটির সাথে যোগাযোগের ব্যক্তি) জানান, “আমরা প্রায়ই বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাছ থেকে ছবি তোলার অনুরোধ পাই এবং তাদের সাহায্য করতে পারলে খুবই আনন্দিত হই। এর জন্য কোন টাকা নেয়া হয় না, শুধুমাত্র ক্রেডিট দিতে বলা হয়।”

ইওএস: ইওএস ল্যান্ডভিউয়ার দশটি পর্যন্ত ছবি বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি ছবি বা বিশ্লেষণ পেতে চাইলে টাকা দিতে হয়। তবে সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে। যোগাযোগ: আর্টেম সেরেডিউক artem.seredyuk@eosda.com।  সামনে ইওএস মিডিয়া নামে একটি নতুন সেবা চালু করতে যাচ্ছে তারা, যা বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছবি ও বিশ্লেষণ সরবরাহ করবে বিনামূল্যে।

রেডিয়েন্ট আর্থ ফাউন্ডেশন: বিশ্বের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপগ্রহ, ড্রোন এবং আকাশ থেকে ধারণ করা ছবির ‘আর্কাইভ’ অনুসন্ধান ও তথ্য বিশ্লেষণে সহায়তা করে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই ননপ্রফিট। তারা ২০১৮ সালের পাঁচ সেপ্টেম্বর একটি “ওপেন আর্থ ইমেজারি প্ল্যাটফর্ম’ প্রকাশ করে। রেডিয়েন্ট আর্থ অন্যান্যদের মধ্যে কোড অফ আফ্রিকার সাথে কাজ করেছে। তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহায়তা লাভের জন্য আবেদন করুন।

রিসোর্স ওয়াচ: এটি একটি অলাভজনক প্ল্যাটফর্ম (এখনও বিটা ফর্মে)। তাদের শত শত ডেটা সেট আছে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট এবং অন্যান্য সংস্থা তাদের পৃষ্ঠপোষক। রিসোর্স ওয়াচের তথ্য বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং ব্যবহারকারীরা তা ডাউনলোডও করতে পারেন। যোগাযোগ করুন, লরেন জেলিনের (lzelin@wri.org) সাথে।
ফ্রি স্যাটেলাইট ছবি কোথায় পাবেন? উপগ্রহ ছবির অনেক উৎস রয়েছে। এখানে বিনামূল্যে এবং সহজে ব্যবহার উপযোগী কয়েকটি অপশন দেয়া হল। সাথে থাকছে একটি তালিকা, যেখানে আপনি অন্যান্য উৎেসের সন্ধান পাবেন।

আর্থ এক্সপ্লোরার: এটি মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভিসের অংশ। এখানে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছবি পাওয়া যায়। আর আছে, ল্যান্ডস্যাট উপগ্রহের তথ্য এবং নাসার ল্যান্ডডেটা প্রোডাক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেসে প্রবেশের সুযোগ। ইউএসজিএস গ্লোবাল ভিজুয়ালাইজেশন ভিউয়ারে (গ্লোভিস) পাবেন রিমোট সেন্সিং ডেটা। ইউএসজিএস আর্কাইভে রয়েছে নাসা ল্যান্ডস্যাট ডেটার একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুরক্ষিত সংগ্রহ।

সেন্টিনেল হাব প্লেগ্রাউন্ড: সেন্টিনেল ২/ল্যান্ডস্যাটে তোলা ছবির ব্যবহার উপযোগী সংস্করণ পাবেন এই জায়গায়। বাণিজ্যিক এই সাইট বিনামূল্যে যেসব সার্ভিস দেয় তার মধ্যে রয়েছে, হালনাগাদ ছবি এবং নানান রংয়ের ব্যান্ড ব্যবহারের সুযোগ। ইও ব্রাউজার আপনাকে দেবে টাইমল্যাপ্স রিভিউ ব্যবহারের সুবিধা।

স্পেক্টেটর: “গত মাসে নিউ ইয়র্কের মেঘমুক্ত দিনের ছবি“ – এমন বিবরণ লিখে সহজে উপগ্রহ চিত্র অনুসন্ধান করতে পারবেন, এই ফ্রি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে। এমনকি পুরনো ছবিও পাওয়া যায় সাইটটিতে। আরও জানতে দেখুন এই ইউটিউব ভিডিও। আপনার আগ্রহের এলাকা এবং কোন উপগ্রহ ব্যবহার করতে চান তা ঠিক করে, নিজেই একটি চ্যানেল তৈরি করতে পারেন। তবে এজন্য একটি অ্যাকাউন্ট (বিনামূল্যে) খুলতে হবে।

কোপারনিকাস: এই সাইটে পাবেন ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং কোপারনিকাসের ছয়টি সেন্টিনেল উপগ্রহ থেকে তোলা সব ছবি। ল্যান্ডস্যাটের চেয়ে এর রেজ্যুলুশন ভালো। কিভাবে ফ্রি ছবি ডাউনলোড করবেন, জানতে দেখুন জিআইএসজিওগ্রাফির এই ব্যাখ্যা।

গুগল আর্থ ইঞ্জিন: ”প্ল্যানেটারি-স্কেলে বিশ্লেষণের ক্ষমতাসহ” স্যাটেলাইট ছবি এবং ভৌগলিক ডেটাসেটের একটি বড় ক্যাটালগ পাবেন এখানে। আর্থ ইঞ্জিন গবেষণা, শিক্ষা এবং অলাভজনক কাজে ব্যবহারের জন্য ফ্রি। কিন্তু অ্যাপ্লিকেশন লাগবে। ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট ছবির জন্য এটি ভালো। আর গুগল আর্থ, একটি ভার্চুয়াল গ্লোবের মধ্যদিয়ে ভ্রমণের উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেবে আপনাকে।

গুগল ম্যাপ: এটি বিস্তারিত মানচিত্র এবং ছবি যোগান দেয়। গুগল স্ট্রিট ভিউতে পাবেন গ্রাউন্ড লেভেল, অর্থাৎ ভূমির সমান্তরাল ইমেজ। কিছু জায়গার পুরনো ছবিও এখানে পাওয়া যায়।

বিং: এটি মাইক্রোসফটের ম্যাপ এবং স্ট্রিট ভিউ সেবা। বেলিংক্যাট (অনলাইন অনুসন্ধানে একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা) এর মতে, “গুগলের চেয়েও হালনাগাদ এবং উচ্চতর রেজ্যুলুশনের ছবি পাওয়া যায় বিংয়ে।” উদাহরণ: ইরাক।

উইকিম্যাপিয়া: একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন উদ্যোগ। তাদের সব কনটেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত।  এই কোলাবরেটিভ (সহযোগিতামূলক) ম্যাপিং প্রকল্প, বিশ্বের সমস্ত ভৌগোলিক বস্তুকে চিহ্নিত করে এবং তাদের সম্পর্কে একটি ব্যবহার উপযোগী বর্ণনা দেয়। এর সাথে উইকিপিডিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। ওয়েবসাইটটি গুগল ম্যাপ এপিআই ব্যবহার করে। তাদের ইন্টারঅ্যাকটিভ ম্যাপে গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ছবি ও অন্যান্য রিসোর্সের উপরে ইউজারদের দেয়া তথ্যের স্তর থাকে। এটি একাধিক ভাষায় পাওয়া যায়।

টেরাসার্ভার ডট কম: অনুসন্ধানযোগ্য ছবির বিশাল লাইব্রেরি, কিন্তু সবার জন্য উন্মুক্ত তথ্য খুব বেশি নয়। তবে, কিছু সাংবাদিক টাকা দিয়ে এই সেবা সাবস্ক্রাইব করেন। তাদের মতে, এটি ভালো বিনিয়োগ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ব্যবহারে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যাতে অনেকেই হতাশ হয়েছেন।

নাসা আর্থ ডেটা: নাসা থেকে প্রায় রিয়েল টাইম ছবি ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারে ওয়ার্ল্ড ভিউ। স্যাটেলাইট ও এরিয়াল ছবির বিশাল এই ভান্ডারে বিশদভাবে অনুসন্ধানের সুবিধা এবং নানা রকমের ম্যাপিং ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল আছে। যেমন অগ্নিকান্ড দৃশ্যায়নের টুল, ফার্মস (FIRMS)। ডজনের বেশি নাসা তথ্য কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট স্যাটেলাইট ডেটা প্রোডাক্টে প্রবেশের সুযোগ দেয় এই সাইট। আর নাসা আর্থ অবজারভেশন্স দেবে বায়ুমন্ডল, ভূমি, মহাসাগর, জ্বালানী, পরিবেশ এবং অন্যান্য বিষয়ে ৫০টিরও বেশি ডেটাসেট।

জিওভিজ্যুয়াল সার্চ: এই সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে, নির্দিষ্ট ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একই রকমের দৃশ্য অনুসন্ধান করতে পারেন ইউজাররা। ডেকার্টস ল্যাবসের এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে ল্যান্ডস্যাট, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল ইমেজারি প্রজেক্ট (এনএআইপি) এবং প্ল্যানেটস্কোপ থেকে স্যাটেলাইট ছবি নিয়ে। এটি কিভাবে ব্যবহার করবেন তার বর্ণনা দেখুন।

ইএসএ আর্থ অনলাইন: ইওলি (পৃথিবী পর্যবেক্ষণ লিঙ্ক) এমন সাইট, যেখানে তাপমাত্রা, কৃষি এবং হিমবাহের মতো বিষয়ে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির যাবতীয় আর্থ অবজারভেশন ডেটা একসাথে পাবেন।

ওপেন ইমেজারি নেটওয়ার্ক (ওআইএন) ওআইএনের কন্ট্রিবিউটররা ছবি এবং তার মেটাডেটা একটি সাধারণ লাইসেন্সের অধীনে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। ওপেন ইমেজারি নেটওয়ার্কের কাজ হল – স্যাটেলাইট এবং এরিয়াল ছবি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে – ত্রাণ কর্মসূচি, ক্লাউড হোস্টিং কোম্পানি, ড্রোন এবং বেলুন ম্যাপিংয়ে আগ্রহী, সরকার, এনজিও, ম্যাপিং কোম্পানি এবং এরিয়াল ছবি তৈরি, হোস্টিং ও ব্যবহার করে এমন যে কাউকে সংযুক্ত করা। আর ওপেন এরিয়াল ম্যাপ তাদের তৈরি এই ছবির ভান্ডারে অনুসন্ধান ও প্রবেশের সুযোগ করে দেয় সবাইকে।

আর্থ টাইম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির ক্রিয়েট ল্যাব (কমিউনিটি রোবোটিক্স, এডুকেশন এন্ড টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট ল্যাব) এটি তৈরি করেছে। “সময়ের ব্যাপ্তিতে পৃথিবী রুপান্তরের যে ভিজ্যুয়ালাইজেশন, তার সাথে ইউজারদের মিথষ্ক্রিয়া (ইন্টার‌্যাক্ট) করার সুযোগ দেয় আর্থ টাইম। তৈরি করা যায় অ্যানিমেশনও।”
ছবি ব্যবহার সংক্রান্ত রিসোর্স

দ্যা ইঞ্জিন রুম, একটি আন্তর্জাতিক এনজিও। মানবাধিকার বিষয়ক অনুসন্ধানে স্যাটেলাইট ছবির ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে অনেক কিছু জানাতে পারে তাদের সাইট। ছবি কোথায় খুঁজবেন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন তাও সেখানে পাবেন।

ট্যাকটিক্যাল টেকনোলজি কালেক্টিভের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী, লিসা গুটারমুট লিখেছেন স্টার্টিং স্যাটেলাইট ইনভেস্টিগেশন। এখানে ছবির বিভিন্ন সোর্স ও মূল্য তালিকা সংযুক্ত রয়েছে।

মেকিং সেন্স অব স্যাটেলাইট ডেটা, অ্যান ওপেন সোর্স আউটফ্লো: এটি ডেটা ব্যবহার সম্পর্কে, প্ল্যানেট ল্যাবসের রবার্ট সিমোনের লেখা চার খন্ডের একটি ধারাবাহিক।

দ্যা হাই-রেজ্যুলুশন স্যাটেলাইট ইমেজারি অর্ডারিং এন্ড অ্যানালিসিস হ্যান্ডবুক প্রকাশ করেছে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স । ‘যে কয়টি সহজ প্রশ্ন করে গবেষকেরা বুঝতে পারবেন, স্যাটেলাইট ছবি কতটা কার্যকর হবে’ – তা এখানে পাওয়া যাবে।

বেলিংক্যাট প্রকাশ করেছে হাউ টু স্ক্র্যাপ ইন্টারেক্টিভ জিওস্পেশাল ডেটা, যেখানে ভূতাত্ত্বিক তথ্য ডাউনলোডের ‍উপায় জানা যাবে, উদাহরণসহ।
তথ্যভান্ডার ও সংশ্লিষ্ট রিসোর্স
জিওহ্যাক সোর্সেস: উইকিপিডিয়ার তৈরি এই তালিকায় পাবেন একাধিক ভাষায় বিশ্বের উপগ্রহ ও মানচিত্রের নির্বাচিত উৎসের খবর।

ম্যাশেবল: ম্যাশেবলে প্রকাশিত এই লেখায় অ্যান্ড্রু ফ্রিডম্যান তুলে ধরেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য দরকারী স্থানগুলোর একটি সারসংক্ষেপ।

কাজে আসবে ইজরায়েলি ভূগোলবিদ হারেল ড্যানের এই স্প্রেডশিটও।

জিআইএস-জিওগ্রাফি:  এখানে পাওয়া যাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, জাপান, ভারত কিংবা অন্য সরকারি উৎসসহ “ফ্রি স্যাটেলাইট ছবির ১৫টি সোর্স”। সাথে পাবেন তাদের শক্তিশালী ও দুর্বল দিক সম্পর্কে মন্তব্য। (পরামর্শের নীচে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মন্তব্যও দেখুন)। জিআইএস-জিওগ্রাফি হচ্ছে প্রতিশ্রুতিশীল ভূগোলবিদদের একটি দল, যারা অবস্থান (লোকেশন) সম্পর্কিত যে কোনও বিষয়ে আগ্রহী। এখানে  “১৩টি ওপেন সোর্স রিমোট সেন্সিং সফ্টওয়্যার প্যাকেজ” এর মত তালিকাসহ বেশ কিছু নিবন্ধও পাওয়া যাবে।

ভেনচার রাডার: বাণিজ্যিকভাবে যারা স্যাটেলাইট ছবি সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে, তাদের তালিকা।

বেলিংকাট’স ডিজিটাল ফরেনসিক টুলস: ওপেন সোর্স এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় বেলিংক্যাট। তাদের এই টিপশিটে স্যাটেলাইটসহ অনেক বিষয়ের রিসোর্স রয়েছে।

নোয়িং হোয়্যার টু লুক: সোর্সেস অফ ইমেজারি ফর জিওলোকেশন: বেলিংকাটের ইলিয়ট হিগিন্স ব্যাখ্যা করেছেন, ছবি বা ভিডিও যাচাই করার সময় তিনি সহায়ক তথ্য-প্রমাণের জন্য কোথায় যান।

জার্নালিস্টস্ টুলবক্স: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ইউএস প্রফেশনাল জার্নালিস্টস্ সোসাইটির তৈরি ম্যাপিং রিসোর্সের একটি বিশাল তালিকা।

এই রিসোর্সে যোগ করার মত কিছু থাকলে এখানে জিআইজেএনের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি এই রিসোর্সের ইংরেজী সংস্করণটি পিডিএফ হিসেবে ডাউনলোড করতে পারেন।

 জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের পরিচালক টবি ম্যাকিনটোশ এই নির্দেশিকাটি সমন্বয় করেছেন। তিনি ওয়াশিংটনে ব্লমবার্গ বিএনএ’র সাথে কাজ করেছেন ৩৯ বছর। ফ্রিডমইনফো ডট ওআরজি (২০১০-২০১৭) এর সাবেক এই সম্পাদক, বিশ্বব্যাপী এফওআই নীতিমালা সম্পর্কে লিখেছেন এবং ফোয়ানেটের স্টিয়ারিং কমিটিতে কাজ করছেন।