স্যাটেলাইট ছবি কোথায় পাবেন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন?

English

উপগ্রহ চিত্র (স্যাটেলাইট ইমেজ) কোনও কিছু আবিষ্কার বা বিশ্লেষণের শক্তিশালী টুল। একই সাথে এটি প্রাণবন্ত ছবিরও যোগানদাতা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা চাইলে মহাকাশ থেকে তোলা এসব ছবি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এরইমধ্যে সংঘাত,জলবায়ু পরিবর্তন,শরণার্থী পরিস্থিতি,দাবানল,অবৈধ খনি খনন,সমুদ্র বা নদীতে তেল ছড়িয়ে পড়া,বন উজাড়,দাসপ্রথা এবং অন্যান্য অনেক বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরীতে, তারা এর সদ্ব্যবহার করেছেন।

উপগ্রহ ছবি, যেমনটা বলছিলেন একজন বিশেষজ্ঞ, “সরল রৈখিক চিন্তাধারা থেকে স্বতন্ত্র।”

ক্ষয়িষ্ণু তটরেখা, ক্রমবর্ধমান চর কিংবা বনজসম্পদের বিলুপ্তির মত ক্ষেত্রে, সময়ের সাথে হওয়া পরিবর্তন দারুণ ভাবে তুলে ধরতে পারে ছবিগুলো। একইসাথে সম্পূরক তথ্য-প্রমাণ যোগান দিয়ে, এটি আপনার অন্য গবেষণাকেও করতে পারে সমৃদ্ধ।  জিআইজেএনের এই রিসোর্স পেইজে, বিনা পয়সায় হাই-রেজ্যুলুশন ছবি ও সহযোগিতা পাওয়ার ১০টি জায়গার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

এই তালিকায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অলাভজনক, কিন্তু জিআইজেএন কিছু বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেরও খোঁজ পেয়েছে, যারা সাংবাদিকদের সহায়তা ও ছবি দিতে রাজি। (নীচে দেখুন)।

যেহেতু এর সাথে কারিগরী (টেকনিক্যাল) ইস্যুও জড়িত, তাই রিপোর্টারদের প্রতি পরামর্শ, তারা যেন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ সহায়তা নেন।

”সেন্টিনেল ২ এর ছবিতে কী আছে, যা ল্যান্ডস্যাট ৮-এর ছবিতে নেই – কম্পিউটারের সামনে বসে এসব নিয়ে চুল ছেড়ার চেয়ে, সাংবাদিকদরা প্রতিবেদন তৈরী বা অসাধারণ একটা লেখার পেছনে বেশি সময় ও শ্রম দিন, এটাই আমি চাই।” এই মন্তব্য করেছেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ, যিনি সাংবাদিকদের সাহায্য করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

তাঁর মতো, উপগ্রহ চিত্র নিয়ে যারা নিয়মিত কাজ করেন, তাদের বিশ্বাস, সাংবাদিকরা স্যাটেলাইট ছবি দিয়ে আরও অনেক কিছু করতে পারেন।

এই বিষয়ে প্রাথমিক জানাশোনার জন্য, অ্যান হেল মিগলারেসের লেখা প্রবন্ধটি দেখে নিতে পারেন। তিনি ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট আর্থের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা – যারা বৈশ্বিক উন্নয়ন ইস্যুতে উপগ্রহ চিত্রের ব্যবহার নিয়ে কাজ করে।

এ সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা ও টিপস পাওয়া যাবে, জিওস্পেশাল মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনস-এর নির্বাহী সম্পাদক অনুসূয়া দত্তের চমৎকার এই নিবন্ধে। তিনি আইজেএশিয়া১৮-তে ‘উপগ্রহ চিত্রের নতুন যুগ’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
যা দেখে আপনিও উৎসাহী হবেন

কাঁচামাল হিসেবে স্যাটেলাইটের মান যত উন্নত হচ্ছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় উপগ্রহ চিত্রের কদরও বাড়া উচিত ততটাই।

নিম্ন-কক্ষপথের অপেক্ষাকৃত ছোট ও সস্তা স্যাটেলাইটগুলো দিনে দিনে আরও বিশদ ছবি সরবরাহ করছে। তারা ছবি নিচ্ছে বেশি সময় ধরে এবং বেশি এলাকা জুড়ে। মার্কিন কোম্পানী প্ল্যানেট, ১৭৫টির বেশি উপগ্রহ দিয়ে, প্রতিদিনি গোটা পৃথিবীর প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ বর্গমাইল ভূ-খন্ডের হাই-রেজ্যুলুশন ছবি তৈরি করছে। এক বর্গমিটার প্রতি পিক্সেলের ছবিগুলো রাস্তা, ভবন, ফসল, এমনকি বনের গড়পড়তা রঙ পর্যন্ত দেখাতে সক্ষম। এখন রেজ্যুলুশন নেমে এসেছে ১০ সেন্টিমিটার মাপে, যা দিচ্ছে আরও পরিষ্কার দৃশ্য, বাড়াচ্ছে সম্ভাবনা।

অনুপ্রেরণার জন্য, এখানে স্যাটেলাইট ছবি বিষয়ক সাম্প্রতিক কিছু প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

আইজেএশিয়া১৮-তে রয়টার্সের গ্রাফিক্স সম্পাদক ক্রিস্টিন চ্যান ‘রিপোর্টিং টুল হিসেবে উপগ্রহ চিত্র’ বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন।

প্ল্যানেটের একটি সংবাদ বিভাগ রয়েছে। আর্থরাইজ মিডিয়ার রয়েছে একটি নিউজওয়্যার ও কিছু কেস স্টাডি। আর স্কাইট্রুথের প্রকল্পগুলোর খবর পড়া যাবে এখানে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বখ্যাত ক্রূগার ন্যাশনাল পার্ক ও মোজাম্বিক সীমান্তে অবস্থিত, মাসিংগির গ্রামের ভূমি বিরোধ নিয়ে একটি রিপোর্ট সম্প্রতি আমাদের নজর কেড়েছে। অক্সপেকার্স ইনভেস্টিগেটিভ এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিজমের সাংবাদিক এস্কেশিও ভ্যালোই-এর প্রতিবেদনে কীভাবে ড্রোন ও উপগ্রহ ছবি ব্যবহার হয়েছে, তার বিবরণ দেখুন।

বেলিংক্যাট থেকে পাচ্ছেন, অবকাঠামোগত পরিবর্তন সনাক্ত করতে টাইম-ল্যাপ্স উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার: মিয়ানমার, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ চীন সাগরের কেস-স্টাডি।

আফ্রিকায় ড্রোন পরিচালনার জন্য কীভাবে একটি বিমান ঘাঁটির সম্প্রসারণ করেছিলো সিআইএ, তা দেখাতে, প্ল্যানেট ল্যাবরেটরির ছবি ব্যবহার করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। তাদের এই নিবন্ধে দেখুন: উপগ্রহ চিত্র এবং ছায়া বিশ্লেষণ: কিভাবে টাইমস প্রত্যক্ষদর্শীদের পাঠানো ভিডিও যাচাই করে।

২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় জিআইজেএন-এর সম্মেলনে, বতসোয়ানার আইএনকে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এর জোয়েল কনোপো ব্যাখ্যা করেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ভবন কম্পাউন্ডে সামরিক অবকাঠামো নির্মাণের ঘটনা প্রমাণ করতে স্যাটেলাইট ছবি কতটা কাজে এসেছিল। তাঁর মতে, এমন ছবি টাকা দিয়ে কিনেও লোকসান হয় না। “উপগ্রহ ছবি ব্যবহার করে, কম্পাউন্ডের ভেতরে বেশ কয়েকটি যানবাহন এবং সামরিক কার্যক্রমের অস্তিত্ব খুঁজে পাই আমরা, যা সরকার অস্বীকার করে আসছিল ।” বলেন কনোপো।

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বেলিংক্যাট, তাদের অনুসন্ধানে নিয়মিতভাবে স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে। ২০১৮ সালে “পৈশাচিক অবহেলা: পূর্ব সিরিয়ার সংঘাত পরবর্তী তেল দূষণ” নামের অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরি হয় উপগ্রহ ছবির ভিত্তিতে। আরেকটি প্রতিবেদনে বেলিংক্যাট প্রমাণ করে, ইরান কীভাবে একটি কৌশলগত এয়ারপোর্টের রানওয়ে বড় করছে।

বেলিংক্যাট থেকে আরেকটি পাঠ: কিভাবে উপগ্রহ ছবি থেকে পুড়ে যাওয়া গ্রাম সনাক্ত করা যায় – ক্যালিফোর্নিয়া, নাইজেরিয়া এবং মায়ানমারের কেস-স্টাডি।

রয়টার্স ইনস্টিটিউটের মার্ক করকোরান, সংবাদ সংগ্রহে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির ব্যবহার বিষয়ক প্রবন্ধে, মিডিয়া কেস স্টাডি এবং সাংবাদিকদের উপগ্রহ ছবি সরবরাহ করে এমন দুটি প্রভাবশালী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বিশ্লেষণ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন স্যাটেলাইট সাংবাদিকতার প্রয়োগ এবং তার সীমাবদ্ধতা নিয়েও।
যেসব সংগঠন সাংবাদিকদের সাথে কাজ করে

আর্থরাইজ মিডিয়া: আর্থরাইজ মিডিয়া উপগ্রহ ছবি তৈরি, খোঁজাখুঁজি, লাইসেন্স প্রাপ্তি এবং তার বিশ্লেষণে সহায়তা করে সাংবাদিকদের। তাদের একটি নিউজওয়্যার রয়েছে, যা উপগ্রহ চিত্র থেকে নেয়া মৌলিক কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনার প্রতিবেদনকে উন্নত করতে পারে। চাহিদা অনুযায়ী স্যাটেলাইট ছবির বিশ্লেষণ ও ডিজাইন তৈরী, আর্থরাইজের আরেকটি সেবা।  সাধারণ মানুষ কিংবা বিশেষজ্ঞ নন এমন পাঠকের পক্ষে, প্রাথমিক বা র’ ফরম্যাটে থাকা ছবি বোঝা কঠিন। তাই ছবিকে বোধগম্য করতে প্রতিষ্ঠানটি, তাতে ’কাস্টম ফিল্টার’ প্রয়োগ করে। একইসাথে তারা ছবির মৌলিক বিশ্লেষণ দেয় এবং তাকে একটি নির্দিষ্ট মাপে নিয়ে আসে । যা দেখে বোঝা যায়, কোথায় কত পানি শুকিয়ে গেছে বা দক্ষিণ চীন সাগরের একটি দ্বীপে কত অবকাঠামো রয়েছে। সবশেষে ছবিগুলো সংবাদ মাধ্যমে ব্যবহারের জন্য যথাযথ লাইসেন্স নিশ্চিত করে আর্থরাইজ। তাদের সেবা পেতে এখানে অনুরোধ পাঠান।

স্কাইট্রুথ: যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ভার্জিনিয়া ভিত্তিক অনুসন্ধানী এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জন আমোস। তিনি বলেছেন, তারা বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী প্রকল্পে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী। তার সাথে যোগাযোগ করুন john@skytruth.org এই ই-মেইল ঠিকানায়।

এসরি: এসরি (ইএসআরআই) আপনাকে দেবে তাদের স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহারের সুযোগ,  বিশ্লেষণ এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুলস। মানচিত্রের মাধ্যমে তথ্য-বহুল ও আকর্ষণীয় স্টোরিটেলিংয়ের জন্য, অন্য উৎস থেকে নেয়া ছবি, তাদের কন্টেন্টের সাথে সংযোজন করতে দেয় করতে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এসরির ‘ওয়ার্ল্ড ইমেজারি বেসম্যাপ’ প্রতিনিয়ত হালনাগাদ হচ্ছে। এর ক্লাউড-ফ্রি সংস্করণও রয়েছে, যার নাম ক্লারিটি। ল্যান্ডস্যাট উপগ্রহ থেকে পাওয়া তথ্যের একটি বিশাল ভান্ডার রয়েছে তাদের। সেখান থেকে সাম্প্রতিক ও ঐতিহাসিক তথ্য অনুসন্ধান এবং বিশ্লেষণের সুযোগ দেয় তারা। লিভিং অ্যাটলাস অব দ্যা ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমেও ছবি সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানিটি। আপনি এই স্টোরি ম্যাপের মাধ্যমে ছবি আপডেটের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে সবসময় অবহিত থাকতে পারেন। এসরি ছবি নিয়ে কাজ করার জন্য আর্কজিআইএস আর্থ (একটি বিনামূল্যের থ্রি-ডি ভিউয়ার, যা জিআইএসের সাথে কম পরিচিত লোকদের জন্য তৈরী) সহ আরও অনেক ধরনের টুলস সরবরাহ করে। স্টোরি ম্যাপস ওয়েবসাইট মাল্টিমিডিয়া ও ন্যারেটিভ টেক্সটের মাধ্যমে মানচিত্র উপস্থাপনের নানা পথও দেখিয়ে থাকে।

নেতৃস্থানীয় স্যাটেলাইট ছবি কোম্পানীগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব বজায় রেখেছে এসরি। তারা প্রায়ই আর্কজিআইএস অনলাইনে (ম্যাপিং ও বিশ্লেষণের প্লাটফর্ম) অলিম্পিক গেইমস কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ সাম্প্রতিক ঘটনার আপডেটেড ছবি প্রকাশ করে।

এসরির সাথে একটি চুক্তির কল্যাণে, জিআইজেএন সদস্যরা, ছবি নিয়ে কাজ ও মানচিত্র তৈরির জন্য বিনামূল্যে আর্কজিআইএস সফটওয়্যারের লাইসেন্স চেয়ে অনুরোধ করতে পারেন। আরও তথ্যের জন্য, এখানে জিআইজেএনের সাথে যোগাযোগ করুন।ম্যাক্সার নিউজ ব্যুরো: সরকারী ও বেসিরকারি পর্যায়ে উন্নত মহাকাশ প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস। তারা ২০১৭ সালের মার্চ থেকে একটি নিউজ ব্যুরো পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের হাই-রেজ্যুলুশন উপগ্রহ ছবি ও বিশ্লেষণ সক্ষমতা ব্যবহার করে, সামাজিক কল্যাণ ও বৈশ্বিক স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার কাজে। ম্যাক্সারের অন্যতম ইউনিট ডিজিটালগ্লোব তৈরি করে সর্বোচ্চ রেজ্যুলুশনের ছবি। আস্থাভাজন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রকল্পে অংশীদার হতে আগ্রহী নিউজ ব্যুরো, যেখানে তারা দক্ষতা ও ছবি দিয়ে সমর্থন যোগায় । আরও জানতে যোগাযোগ করুন turner.brinton@maxar.com এই ঠিকানায়।

ম্যাক্রোস্কোপমিডিয়া: উপগ্রহ ছবি সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন তৈরির জন্য সাংবাদিকদের বিনামূল্যে সহায়তা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। স্যাটেলাইট সংক্রান্ত মিডিয়া প্রকল্পে পরামর্শ দিয়ে থাকেন এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী জেফ স্টেইন। (কোন ওয়েবসাইট নেই।) জিআইজেসি’১৭ তে তাঁর উপস্থাপনা দেখুন। তাঁর সাথে যোগাযোগ করুন, Jeff.Stein@macroscope.com – এই ঠিকানায়।

প্ল্যানেট স্টোরিজ নামে প্ল্যানেটের একটি ডেটাবেস রয়েছে, যা ব্রাউজ, বিচার-বিশ্লেষণ ও শেয়ার করতে পারেন, যে কেউই। এর দুটি টুলস হলো – কম্পেয়ার ও টাইমল্যাপ্স। কম্পেয়ার দুটি ছবি বাছাই করে, স্লাইডারে রেখে, তাদের মধ্যে তুলনামূলক বিচারের সুযোগ দেয়। আর টাইমল্যাপ্সের মাধ্যমে একাধিক ছবি বাছাই করে, তার সময়ভিত্তিক পরিবর্তনের একটি অ্যানিমেটেড স্টোরি তৈরী করা যায়। পৃথিবীর সমস্ত ভূ-খন্ডের প্রতিদিনের ছবির একটি অসাধারণ সংগ্রহ আছে প্ল্যানেটের। অনুমোদিত সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে ছবি ও দক্ষতা ভাগাভাগি করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। যোগাযোগ করুন Press@planet.com – এই ঠিকানায়।

ডেকার্টস ল্যাবস: এটি একটি বাণিজ্যিক সেবা। তারা জনসাধারণ এবং বাণিজ্যিক উৎস থেকে প্রতিদিন তথ্য সংগ্রহ করে এবং সাংবাদিকদেরও সাহায্য করে। শন প্যাট্রিক (প্রতিষ্ঠানটির সাথে যোগাযোগের ব্যক্তি) জানান, “আমরা প্রায়ই বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাছ থেকে ছবি তোলার অনুরোধ পাই এবং তাদের সাহায্য করতে পারলে খুবই আনন্দিত হই। এর জন্য কোন টাকা নেয়া হয় না, শুধুমাত্র ক্রেডিট দিতে বলা হয়।”

ইওএস: ইওএস ল্যান্ডভিউয়ার দশটি পর্যন্ত ছবি বিনামূল্যে দিয়ে থাকে। এর চেয়ে বেশি ছবি বা বিশ্লেষণ পেতে চাইলে টাকা দিতে হয়। তবে সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ ছাড় রয়েছে। যোগাযোগ: আর্টেম সেরেডিউক artem.seredyuk@eosda.com।  সামনে ইওএস মিডিয়া নামে একটি নতুন সেবা চালু করতে যাচ্ছে তারা, যা বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের ছবি ও বিশ্লেষণ সরবরাহ করবে বিনামূল্যে।

রেডিয়েন্ট আর্থ ফাউন্ডেশন: বিশ্বের উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে উপগ্রহ, ড্রোন এবং আকাশ থেকে ধারণ করা ছবির ‘আর্কাইভ’ অনুসন্ধান ও তথ্য বিশ্লেষণে সহায়তা করে ওয়াশিংটন-ভিত্তিক এই ননপ্রফিট। তারা ২০১৮ সালের পাঁচ সেপ্টেম্বর একটি “ওপেন আর্থ ইমেজারি প্ল্যাটফর্ম’ প্রকাশ করে। রেডিয়েন্ট আর্থ অন্যান্যদের মধ্যে কোড অফ আফ্রিকার সাথে কাজ করেছে। তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহায়তা লাভের জন্য আবেদন করুন।

রিসোর্স ওয়াচ: এটি একটি অলাভজনক প্ল্যাটফর্ম (এখনও বিটা ফর্মে)। তাদের শত শত ডেটা সেট আছে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট এবং অন্যান্য সংস্থা তাদের পৃষ্ঠপোষক। রিসোর্স ওয়াচের তথ্য বিনামূল্যে পাওয়া যায় এবং ব্যবহারকারীরা তা ডাউনলোডও করতে পারেন। যোগাযোগ করুন, লরেন জেলিনের (lzelin@wri.org) সাথে।
ফ্রি স্যাটেলাইট ছবি কোথায় পাবেন? উপগ্রহ ছবির অনেক উৎস রয়েছে। এখানে বিনামূল্যে এবং সহজে ব্যবহার উপযোগী কয়েকটি অপশন দেয়া হল। সাথে থাকছে একটি তালিকা, যেখানে আপনি অন্যান্য উৎেসের সন্ধান পাবেন।

আর্থ এক্সপ্লোরার: এটি মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভিসের অংশ। এখানে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছবি পাওয়া যায়। আর আছে, ল্যান্ডস্যাট উপগ্রহের তথ্য এবং নাসার ল্যান্ডডেটা প্রোডাক্টস অ্যান্ড সার্ভিসেসে প্রবেশের সুযোগ। ইউএসজিএস গ্লোবাল ভিজুয়ালাইজেশন ভিউয়ারে (গ্লোভিস) পাবেন রিমোট সেন্সিং ডেটা। ইউএসজিএস আর্কাইভে রয়েছে নাসা ল্যান্ডস্যাট ডেটার একটি পূর্ণাঙ্গ ও সুরক্ষিত সংগ্রহ।

সেন্টিনেল হাব প্লেগ্রাউন্ড: সেন্টিনেল ২/ল্যান্ডস্যাটে তোলা ছবির ব্যবহার উপযোগী সংস্করণ পাবেন এই জায়গায়। বাণিজ্যিক এই সাইট বিনামূল্যে যেসব সার্ভিস দেয় তার মধ্যে রয়েছে, হালনাগাদ ছবি এবং নানান রংয়ের ব্যান্ড ব্যবহারের সুযোগ। ইও ব্রাউজার আপনাকে দেবে টাইমল্যাপ্স রিভিউ ব্যবহারের সুবিধা।

স্পেক্টেটর: “গত মাসে নিউ ইয়র্কের মেঘমুক্ত দিনের ছবি“ – এমন বিবরণ লিখে সহজে উপগ্রহ চিত্র অনুসন্ধান করতে পারবেন, এই ফ্রি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে। এমনকি পুরনো ছবিও পাওয়া যায় সাইটটিতে। আরও জানতে দেখুন এই ইউটিউব ভিডিও। আপনার আগ্রহের এলাকা এবং কোন উপগ্রহ ব্যবহার করতে চান তা ঠিক করে, নিজেই একটি চ্যানেল তৈরি করতে পারেন। তবে এজন্য একটি অ্যাকাউন্ট (বিনামূল্যে) খুলতে হবে।

কোপারনিকাস: এই সাইটে পাবেন ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি এবং কোপারনিকাসের ছয়টি সেন্টিনেল উপগ্রহ থেকে তোলা সব ছবি। ল্যান্ডস্যাটের চেয়ে এর রেজ্যুলুশন ভালো। কিভাবে ফ্রি ছবি ডাউনলোড করবেন, জানতে দেখুন জিআইএসজিওগ্রাফির এই ব্যাখ্যা।

গুগল আর্থ ইঞ্জিন: ”প্ল্যানেটারি-স্কেলে বিশ্লেষণের ক্ষমতাসহ” স্যাটেলাইট ছবি এবং ভৌগলিক ডেটাসেটের একটি বড় ক্যাটালগ পাবেন এখানে। আর্থ ইঞ্জিন গবেষণা, শিক্ষা এবং অলাভজনক কাজে ব্যবহারের জন্য ফ্রি। কিন্তু অ্যাপ্লিকেশন লাগবে। ঐতিহাসিক স্যাটেলাইট ছবির জন্য এটি ভালো। আর গুগল আর্থ, একটি ভার্চুয়াল গ্লোবের মধ্যদিয়ে ভ্রমণের উপভোগ্য অভিজ্ঞতা দেবে আপনাকে।

গুগল ম্যাপ: এটি বিস্তারিত মানচিত্র এবং ছবি যোগান দেয়। গুগল স্ট্রিট ভিউতে পাবেন গ্রাউন্ড লেভেল, অর্থাৎ ভূমির সমান্তরাল ইমেজ। কিছু জায়গার পুরনো ছবিও এখানে পাওয়া যায়।

বিং: এটি মাইক্রোসফটের ম্যাপ এবং স্ট্রিট ভিউ সেবা। বেলিংক্যাট (অনলাইন অনুসন্ধানে একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থা) এর মতে, “গুগলের চেয়েও হালনাগাদ এবং উচ্চতর রেজ্যুলুশনের ছবি পাওয়া যায় বিংয়ে।” উদাহরণ: ইরাক।

উইকিম্যাপিয়া: একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন উদ্যোগ। তাদের সব কনটেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত।  এই কোলাবরেটিভ (সহযোগিতামূলক) ম্যাপিং প্রকল্প, বিশ্বের সমস্ত ভৌগোলিক বস্তুকে চিহ্নিত করে এবং তাদের সম্পর্কে একটি ব্যবহার উপযোগী বর্ণনা দেয়। এর সাথে উইকিপিডিয়ার কোনও সম্পর্ক নেই। ওয়েবসাইটটি গুগল ম্যাপ এপিআই ব্যবহার করে। তাদের ইন্টারঅ্যাকটিভ ম্যাপে গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইট ছবি ও অন্যান্য রিসোর্সের উপরে ইউজারদের দেয়া তথ্যের স্তর থাকে। এটি একাধিক ভাষায় পাওয়া যায়।

টেরাসার্ভার ডট কম: অনুসন্ধানযোগ্য ছবির বিশাল লাইব্রেরি, কিন্তু সবার জন্য উন্মুক্ত তথ্য খুব বেশি নয়। তবে, কিছু সাংবাদিক টাকা দিয়ে এই সেবা সাবস্ক্রাইব করেন। তাদের মতে, এটি ভালো বিনিয়োগ। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এটি ব্যবহারে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়, যাতে অনেকেই হতাশ হয়েছেন।

নাসা আর্থ ডেটা: নাসা থেকে প্রায় রিয়েল টাইম ছবি ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারে ওয়ার্ল্ড ভিউ। স্যাটেলাইট ও এরিয়াল ছবির বিশাল এই ভান্ডারে বিশদভাবে অনুসন্ধানের সুবিধা এবং নানা রকমের ম্যাপিং ও ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুল আছে। যেমন অগ্নিকান্ড দৃশ্যায়নের টুল, ফার্মস (FIRMS)। ডজনের বেশি নাসা তথ্য কেন্দ্র এবং সংশ্লিষ্ট স্যাটেলাইট ডেটা প্রোডাক্টে প্রবেশের সুযোগ দেয় এই সাইট। আর নাসা আর্থ অবজারভেশন্স দেবে বায়ুমন্ডল, ভূমি, মহাসাগর, জ্বালানী, পরিবেশ এবং অন্যান্য বিষয়ে ৫০টিরও বেশি ডেটাসেট।

জিওভিজ্যুয়াল সার্চ: এই সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে, নির্দিষ্ট ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে একই রকমের দৃশ্য অনুসন্ধান করতে পারেন ইউজাররা। ডেকার্টস ল্যাবসের এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে ল্যান্ডস্যাট, ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল ইমেজারি প্রজেক্ট (এনএআইপি) এবং প্ল্যানেটস্কোপ থেকে স্যাটেলাইট ছবি নিয়ে। এটি কিভাবে ব্যবহার করবেন তার বর্ণনা দেখুন।

ইএসএ আর্থ অনলাইন: ইওলি (পৃথিবী পর্যবেক্ষণ লিঙ্ক) এমন সাইট, যেখানে তাপমাত্রা, কৃষি এবং হিমবাহের মতো বিষয়ে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির যাবতীয় আর্থ অবজারভেশন ডেটা একসাথে পাবেন।

ওপেন ইমেজারি নেটওয়ার্ক (ওআইএন) ওআইএনের কন্ট্রিবিউটররা ছবি এবং তার মেটাডেটা একটি সাধারণ লাইসেন্সের অধীনে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। ওপেন ইমেজারি নেটওয়ার্কের কাজ হল – স্যাটেলাইট এবং এরিয়াল ছবি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে – ত্রাণ কর্মসূচি, ক্লাউড হোস্টিং কোম্পানি, ড্রোন এবং বেলুন ম্যাপিংয়ে আগ্রহী, সরকার, এনজিও, ম্যাপিং কোম্পানি এবং এরিয়াল ছবি তৈরি, হোস্টিং ও ব্যবহার করে এমন যে কাউকে সংযুক্ত করা। আর ওপেন এরিয়াল ম্যাপ তাদের তৈরি এই ছবির ভান্ডারে অনুসন্ধান ও প্রবেশের সুযোগ করে দেয় সবাইকে।

আর্থ টাইম: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগী মেলন ইউনিভার্সিটির ক্রিয়েট ল্যাব (কমিউনিটি রোবোটিক্স, এডুকেশন এন্ড টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট ল্যাব) এটি তৈরি করেছে। “সময়ের ব্যাপ্তিতে পৃথিবী রুপান্তরের যে ভিজ্যুয়ালাইজেশন, তার সাথে ইউজারদের মিথষ্ক্রিয়া (ইন্টার‌্যাক্ট) করার সুযোগ দেয় আর্থ টাইম। তৈরি করা যায় অ্যানিমেশনও।”
ছবি ব্যবহার সংক্রান্ত রিসোর্স

দ্যা ইঞ্জিন রুম, একটি আন্তর্জাতিক এনজিও। মানবাধিকার বিষয়ক অনুসন্ধানে স্যাটেলাইট ছবির ব্যবহার সম্পর্কে আপনাকে অনেক কিছু জানাতে পারে তাদের সাইট। ছবি কোথায় খুঁজবেন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন তাও সেখানে পাবেন।

ট্যাকটিক্যাল টেকনোলজি কালেক্টিভের প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী, লিসা গুটারমুট লিখেছেন স্টার্টিং স্যাটেলাইট ইনভেস্টিগেশন। এখানে ছবির বিভিন্ন সোর্স ও মূল্য তালিকা সংযুক্ত রয়েছে।

মেকিং সেন্স অব স্যাটেলাইট ডেটা, অ্যান ওপেন সোর্স আউটফ্লো: এটি ডেটা ব্যবহার সম্পর্কে, প্ল্যানেট ল্যাবসের রবার্ট সিমোনের লেখা চার খন্ডের একটি ধারাবাহিক।

দ্যা হাই-রেজ্যুলুশন স্যাটেলাইট ইমেজারি অর্ডারিং এন্ড অ্যানালিসিস হ্যান্ডবুক প্রকাশ করেছে আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স । ‘যে কয়টি সহজ প্রশ্ন করে গবেষকেরা বুঝতে পারবেন, স্যাটেলাইট ছবি কতটা কার্যকর হবে’ – তা এখানে পাওয়া যাবে।

বেলিংক্যাট প্রকাশ করেছে হাউ টু স্ক্র্যাপ ইন্টারেক্টিভ জিওস্পেশাল ডেটা, যেখানে ভূতাত্ত্বিক তথ্য ডাউনলোডের ‍উপায় জানা যাবে, উদাহরণসহ।
তথ্যভান্ডার ও সংশ্লিষ্ট রিসোর্স
জিওহ্যাক সোর্সেস: উইকিপিডিয়ার তৈরি এই তালিকায় পাবেন একাধিক ভাষায় বিশ্বের উপগ্রহ ও মানচিত্রের নির্বাচিত উৎসের খবর।

ম্যাশেবল: ম্যাশেবলে প্রকাশিত এই লেখায় অ্যান্ড্রু ফ্রিডম্যান তুলে ধরেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য দরকারী স্থানগুলোর একটি সারসংক্ষেপ।

কাজে আসবে ইজরায়েলি ভূগোলবিদ হারেল ড্যানের এই স্প্রেডশিটও।

জিআইএস-জিওগ্রাফি:  এখানে পাওয়া যাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, জাপান, ভারত কিংবা অন্য সরকারি উৎসসহ “ফ্রি স্যাটেলাইট ছবির ১৫টি সোর্স”। সাথে পাবেন তাদের শক্তিশালী ও দুর্বল দিক সম্পর্কে মন্তব্য। (পরামর্শের নীচে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মন্তব্যও দেখুন)। জিআইএস-জিওগ্রাফি হচ্ছে প্রতিশ্রুতিশীল ভূগোলবিদদের একটি দল, যারা অবস্থান (লোকেশন) সম্পর্কিত যে কোনও বিষয়ে আগ্রহী। এখানে  “১৩টি ওপেন সোর্স রিমোট সেন্সিং সফ্টওয়্যার প্যাকেজ” এর মত তালিকাসহ বেশ কিছু নিবন্ধও পাওয়া যাবে।

ভেনচার রাডার: বাণিজ্যিকভাবে যারা স্যাটেলাইট ছবি সংক্রান্ত সেবা দিচ্ছে, তাদের তালিকা।

বেলিংকাট’স ডিজিটাল ফরেনসিক টুলস: ওপেন সোর্স এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধান চালায় বেলিংক্যাট। তাদের এই টিপশিটে স্যাটেলাইটসহ অনেক বিষয়ের রিসোর্স রয়েছে।

নোয়িং হোয়্যার টু লুক: সোর্সেস অফ ইমেজারি ফর জিওলোকেশন: বেলিংকাটের ইলিয়ট হিগিন্স ব্যাখ্যা করেছেন, ছবি বা ভিডিও যাচাই করার সময় তিনি সহায়ক তথ্য-প্রমাণের জন্য কোথায় যান।

জার্নালিস্টস্ টুলবক্স: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ইউএস প্রফেশনাল জার্নালিস্টস্ সোসাইটির তৈরি ম্যাপিং রিসোর্সের একটি বিশাল তালিকা।

এই রিসোর্সে যোগ করার মত কিছু থাকলে এখানে জিআইজেএনের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনি এই রিসোর্সের ইংরেজী সংস্করণটি পিডিএফ হিসেবে ডাউনলোড করতে পারেন।

 জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের পরিচালক টবি ম্যাকিনটোশ এই নির্দেশিকাটি সমন্বয় করেছেন। তিনি ওয়াশিংটনে ব্লমবার্গ বিএনএ’র সাথে কাজ করেছেন ৩৯ বছর। ফ্রিডমইনফো ডট ওআরজি (২০১০-২০১৭) এর সাবেক এই সম্পাদক, বিশ্বব্যাপী এফওআই নীতিমালা সম্পর্কে লিখেছেন এবং ফোয়ানেটের স্টিয়ারিং কমিটিতে কাজ করছেন।

জমির নথি থেকে যেভাবে দুর্নীতি উন্মোচন করলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা

English

জমির রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে অনেক বড় বড় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। যা দুর্নীতির নানান ঘটনা উন্মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

নিচে তেমন কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো। পড়লেই ‍বুঝতে পারবেন, সম্পত্তির রেকর্ড অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় কতটা বৈচিত্র্য আনতে পারে। এদের বেশিরভাগই করা হয়েছে ২০১৮ সালে।
কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রমাণে জমির নথি
“মিলিওনেয়ারস অ্যামোং দ্য নোমিনিস” নামের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে সারায়েভোর সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিং (সিআইএন)। অনুসন্ধানটি পরিচালিত হয় বসনিয়ার ১২১ জন রাজনীতিবিদের সম্পত্তি নিয়ে, যার কেন্দ্রে ছিলেন শীর্ষ ১০ ধনী-রাজনীতিবিদ। সিআইএনের রিপোর্টাররা ভূমি রেকর্ড এবং ঘোষিত সম্পদের বিবরণ থেকে তাদের সম্পত্তির যাবতীয় তথ্য যোগাড় করেন। পরে সব তথ্য “রাজনীতিবিদদের সম্পদ” নামের একটি ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়।

মাঝে মাঝে সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্পোরেট নির্বাহীদের বিলাসবহুল বাড়ীর খবরও উন্মোচন করার প্রয়োজন দেখা দেয়। আর আর্মেনিয়ার সাংবাদিকরা এই কাজ করেছেন বেশ কয়েকবার।

আর্মেনিয়ার কর্মকর্তারা কীভাবে আয় গোপন করে সেই টাকা দিয়ে চেক রিপাবলিকে সম্পদ গড়েছেন – তা খুঁজে বের করে হেটকিউ নামের একটি অনলাইন। রিপোর্টটি প্রকাশ করে দেশটির অ্যাসোসিয়েশন অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস। গভীর এই অনুসন্ধানী সিরিজের আরেকটি পর্বে দেখানো হয়, আর্মেনিয়া পুলিশের সাবেক প্রধান কীভাবে ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের একটি বিলাসবহুল বাড়ী ২০ লাখ ডলারে কিনে নেন, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে।”

ব্রাজিলের কেন্দ্রীয় আদালতের বিচারক মারসেলো এবং সিমোন ব্রেটাসের মালিকানাধীন ৫৮ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের বিশাল অট্টালিকা নিয়ে রিপোর্ট করে দি ইন্টারসেপ্ট। পরে পিয়াউই ম্যাগাজিনের রিপোর্টাররা জমি নিবন্ধনের রেকর্ড ঘেঁটে খুঁজে বের করেন – এই বিপুল সম্পদের মালিক আসলে ব্রাজিলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিচেল তেমের।

চীনের কর্পোরেট গ্রুপ এইচএনএ’র নির্বাহীরা বিলাসবহুল যত বাড়ী কিনেছেন, তার তালিকা প্রকাশ করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। আর এই অনুসন্ধানে বড় ভূমিকা রেখেছে আবাসন রেকর্ড।

বিদেশে নাইরেজিয়ান রাজনীতিবিদরা কত সম্পদ গড়েছেন, এই নিয়ে একটি অনুসন্ধান করেছিল দ্য হেরাল্ড ইন নাইজেরিয়া। তারা রিপোর্টটি দাঁড় করিয়েছিল আবাসন বিষয়ক ওয়েবসাইট এবং গুগল থেকে নেয়া ছবি ব্যবহার করে।

রাশিয়ার সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত এলাকায় লাখ লাখ ডলার দাম দিয়ে জমি কেনা হয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের একজন বডিগার্ডের নামে – পড়ুন নোভায়া গেজেটার এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।

অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রোজেক্ট (ওসিসিআরপি), তাদের একটি রিপোর্টে দেখিয়েছে, রাশিয়ার সাবেক শিল্পমন্ত্রী কীভাবে একটি গলফ কোর্সের কয়েক লাখ ডলার মূল্যের শেয়ার আত্মসাৎ করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়: “এই সম্পত্তির মালিক ছিলেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।  কিন্তু দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে তা নজরে পড়ে যায়, সেই মন্ত্রীর।”

পেরুতে জাল-জালিয়াতি করে জমি বেচাকেনার একটি চক্রকে উন্মোচন করেছিল মোংগাবে।  এই রিপোর্টের কারণে, মিথ্যা নথিপত্র তৈরির অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তা আটক হন।
ফাঁস হওয়া তথ্যে সম্পত্তির বিবরণ
ওপরে যত রিপোর্টের কথা বলা হয়েছে, তাদের সবই উন্মুক্ত, তথা পাবলিক রেকর্ড-ভিত্তিক। কিন্তু নিচের প্রতিবেদনগুলো তৈরি করা হয়েছে ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে।

জমি বা সম্পত্তির রেকর্ড কীভাবে খুঁজবেন, জানতে হলে পড়ুন জিআইজেএনের প্রোপার্টি গাইড।সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে জুলাই মাসে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০৬ লাখ মার্কিন ডলার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস – আইসিআইজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর কারণ ছিল পানামা পেপার্স। সেখানে উঠে আসে, বিদেশে নওয়াজ পরিবারের সম্পত্তির বিষয়টি।

“অবৈধ সম্পদ বিদেশে পাচার কীভাবে দুবাইয়ের সম্পত্তির বাজারকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলছে” সম্প্রতি তা বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানী প্রকল্প স্যান্ডকাসলস থেকে। অনুসন্ধানটি করেছে সি৪এডিএস নামের একটি আমেরিকান সংগঠন। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবাসন বিশেষজ্ঞরা দুবাইয়ে বিলাসবহুল বাড়ী বেচাকেনার যে তথ্য সংকলন করেছিলেন, সেটিই ফাঁস করে দেয়া হয় সি৪এডিএসের কাছে।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সংগঠন ফাইনান্স আনকভার্ড ফাঁস হওয়া সেই তথ্য ব্যবহার করে লিখেছে, “দুবাই লিকস: গোপন সম্পত্তি রেকর্ড বলছে, আমিরাত হচ্ছে পৃথিবীর “কোস্তা দেল ক্রাইম।” এই প্রতিবেদন দুবাইয়ের শত শত বিলাসবহুল সম্পত্তির মালিকদের পরিচয় উন্মোচন করে দেয়। সি৪এডিএস প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পেয়েছিলো, তার আরো গভীরে যাওয়ার জন্য এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে ওসিসিআরপি’র সংকলন করা রেকর্ড।

২০১৫ সালে সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসে খুব বিখ্যাত একটি অনুসন্ধান প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখানো হয়, নিউ ইয়র্ক শহরের সবচেয়ে দামী কয়েকটি আবাসিক ভবন, কীভাবে কেনা হচ্ছে কাগজ-সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের নামে। অনুসন্ধানটি শেষ করতে সময় লেগেছে দুই বছর। এই প্রতিবেদনে রিপোর্টাররা তাদের সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। ধনী ক্রেতাদের আগ্রহ কোথায় তা বুঝার জন্য তারা বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করেন। কাগজ-সর্বস্ব শেল কোম্পানিগুলোর তথ্য উদ্ঘাটন করতেও এই অনুসন্ধানটি কাজে এসেছে।
জমির তথ্যে লুকিয়ে থাকে সামাজিক সমস্যা
সামাজিক এবং নীতিমালার সমস্যা সংক্রান্ত প্রতিবেদনেও ভূমি বিষয়ক তথ্য ব্যবহার করা যায়।

ক্যালিফোর্নিয়ার সম্পত্তি কর নীতিমালার কারণে কীভাবে মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তি লাভবান হচ্ছেন এমন একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস। এই প্রতিবেদনের জন্য তারা ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকটি কাউন্টি থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হস্তান্তর সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে।

ভূমিধ্বসের ঝুঁকিতে থাকা একটি এলাকায় নিয়ন্ত্রণহীন নির্মাণকাজের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে, ক্রাইম মলদোভা। “দ্য ‘স্লাইডিং’ বিজনেস অফ দা স্টাটি ফ্যামিলি” নামের সেই অনুসন্ধানে তারা সম্পত্তির মালিকানার রেকর্ড ব্যবহার করেছে।

একজন ইথিওপিয়ান কফিচাষীর পিতৃদত্ত জমি ফেরত পাওয়ার লড়াই নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় প্লেইস-এ। জমির আনুষ্ঠানিক দলিল না থাকলে কী ধরণের সমস্যা হয়, তা-ই ছিল এই অনুসন্ধানের মূল উপজীব্য। প্লেইস হচ্ছে ভূমি অধিকার সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইট। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন তাদের পৃষ্ঠপোষক। পরিবেশ বিপর্যয় বা খাদ্যের অভাব থেকে শুরু করে সংঘাত এবং যুদ্ধের মত কারণে কেউ ভূমি অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে – সমাজ, রাজনীতি বা অর্থনীতিতে তার যে প্রভাব পড়ে, তার সবকিছুই বিশ্লেষণ করে প্লেইস। তাদের আরেকটি প্রতিবেদন ছিল: “কৃষকদের জন্য ভূমি অধিকার কি ঘানার কোকোয়া খাতকে বাঁচাতে পারবে?” নেটওয়ার্ক অফ ইরাকি রিপোর্টারস ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ২০১৭ সালে “আইসিসের আবাসন সাম্রাজ্য: নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং সম্পত্তি জালিয়াতির প্রত্যাবর্তন,” শিরোনামে একটি অনুসন্ধান প্রকাশ করে। সেখানে তারা উন্মোচন করে, আইসিস কীভাবে জমির দলিল বিকৃত করে মানুষের বাড়িঘর দখল করে নিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বন্য প্রাণী চোরাচালান প্রতিরোধে ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের সীমানায় নিরাপদ অঞ্চল তৈরির প্রভাব নিয়ে অনুসন্ধান করে অক্সপেকার্স। তারা দেখতে পায় “দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের সহায়তায় ভিনদেশী ধনীরা জায়গাটি দখল করে ফেলেছে।” এই অনুসন্ধানে তারা কী পদ্ধতি এবং টুল ব্যবহার করেছে, দেখে নিন এই প্রতিবেদনে।
সচিত্র উপস্থাপনা
যেখানে ডেটা আছে, সেখানেই গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তা উপস্থাপনেরও সুযোগ থাকে।

গ্যাস স্টেশন, অবকাঠামো সংস্কার এবং ক্যাফেসহ কয়েকশ অবৈধ নির্মাণ-কাজের এলাকাভিত্তিক চিত্র, গ্রাফিক্সের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে কিয়েভ পোস্টের এই প্রতিবেদনে।

নিউ ইয়র্ক শহরের আবাসন বিষয়ক গণমাধ্যম রিয়েল ডিল “প্রথমবারের মতো একটি অসাধারণ র‍্যাংকিং” প্রকাশ করে, যার শিরোনাম ছিল “নিউ ইয়র্কের মালিক কে?”

জমির মালিকানা: জানা জরুরি, কিন্তু পাওয়া কঠিন

English

জমির মালিকানা কার – এই তথ্য খুঁজে বের করা বেশ কঠিন কাজ। সব দেশেই সম্পত্তির নিবন্ধন পদ্ধতি চালু আছে, তবু তথ্যের মান এবং তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলে থাকেন, বিশ্বে মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশের নিজ মালিকানাধীন জমির আইনগত নিবন্ধন রয়েছে। কিন্তু তাদের এই পরিসংখ্যানও অনুমান-নির্ভর।

তারওপর সম্পত্তির অসম্পূর্ণ বা ভুল রেকর্ড তো আছেই।

২০১৮ সালের একটি ব্লগ পোস্টে বিশ্বব্যাংকের ভূমি বিশেষজ্ঞ ক্লস ডেইনিংগার বলেন, “বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দেশ, তাদের রাজধানীতে থাকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির নিবন্ধন বা মানচিত্র তৈরি করতে পারেনি। রাজধানীর বাইরে তো দূরের কথা, অনেক সময় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নিবন্ধনই করা হয় না।” বিশ্বব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ভূমি রেকর্ডের নিরাপত্তায় ঘাটতির মানে, একই জমি একাধিক মালিকের নামে তালিকাভুক্ত হতে পারে যে কোনো সময়ই।

তারপরও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও হংকংয়ের মতো অনেক উন্নত দেশে  ভূমি নিবন্ধনের তালিকা সবার জন্য উন্মুক্ত। এখান থেকে মূল্যবান তথ্য বের করে আনা সম্ভব। রেকর্ডগুলো সাধারণত স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হয়। কেন্দ্রীয় জাতীয় নিবন্ধন এবং অনলাইনে তা না-ও পাওয়া যেতে পারে। ডেইনিংগারের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের এক তৃতীয়াংশেরও কম দেশ ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণ করে।

আরেকটি জটিলতা হচ্ছে. ব্যক্তি-গোপনীয়তা রক্ষার্থে অনেক দেশে সম্পত্তির মালিকের নাম প্রকাশ করা হয় না। উন্নয়নশীল এবং উন্নত – দুই ধরণের দেশেই এমনটা ঘটতে দেখা যায়।

খুঁজে পাওয়া সম্ভব এমন যে কোনো ভূমি রেকর্ড পেতে আপনাকে সাহায্য করবে জিআইজেএনের এই নির্দেশিকা। শুরুতেই থাকছে আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং জাতীয় উৎসগুলোর লিংক এবং বর্ণনা।
জমির তথ্য কী কাজে আসে?

জমির মালিকানা: রিপোর্ট আপনার পায়ের নিচেই!

English

সম্পত্তি রেকর্ডের স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে গণমাধ্যমে খুব একটা রিপোর্ট হয় না। কারণ বেশিরভাগ সাংবাদিকের এই বিষয় নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। ভূমি নীতি বিশেষজ্ঞরা সাংবাদিকদের এমন অনীহায় রীতিমত হতাশ।

কোনো কোনো সময় জাতীয় দৈনিকের শিরোনামে স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও কর্পোরেট স্বার্থের মধ্যে ভূমি মালিকানা নিয়ে সুনির্দিষ্ট বিবাদের খবর চোখে পড়ে। কিন্তু ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতা, দুর্নীতি, দুর্বল ভূমি অধিকার আইন এবং অস্পষ্ট রেকর্ডের মত নেপথ্য কারণগুলো নিয়ে পর্যাপ্ত রিপোর্ট হয়না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে সঠিক রেকর্ডের অভাব। সম্পত্তি অধিকার নিয়ে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীনতার পেছনেও এটিই কাজ করে।

দলিলবিহীন জমির সমস্যাটি বেশ প্রকট। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ ভূমির দলিল নেই।

“বিশ্বে বড়জোর অর্ধেক দেশের রাজধানীতে (আফ্রিকাতে মাত্র ১৩ শতাংশ দেশে) ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির নিবন্ধন বা মানচিত্র পাওয়া যাবে। বেশিরভাগ সময় সরকারি জমির নিবন্ধন থাকেই না” – ২০১৮ সালের একটি ব্লগ পোস্টে বলেছেন বিশ্বব্যাংকের ভূমি বিশেষজ্ঞ ক্লস ডেইনিংগার। এক-তৃতীয়াংশেরও কম দেশে ডিজিটাল রেকর্ড রাখা হয় বলে তিনি জানান।

এসব সমস্যার সামাজিক প্রভাব অনেক, বিশেষ করে, পরিবেশ এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর। এসব বিষয় নিয়ে রিপোর্ট হওয়া উচিৎ। দলিল না থাকলে আদিবাসী গোষ্ঠীর দখলে থাকা জমি চলে যেতে পারে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের অধীনে। তার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে তারা পরিবেশেরও ক্ষতি করতে পারে। ভূমির অপর্যাপ্ত রেকর্ড দূর্নীতির পৃষ্ঠপোষক হিসাবে কাজ করে। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে, ভূমি অধিকারের অভাব বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

সমস্যাটির গুরুত্ব এতই যে, জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যেও (লক্ষ্য ১.৪, সূচক ১.৪.২)  ভূমি ভোগদখলের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

গ্লোবাল ল্যান্ড অ্যালায়েন্স এবং ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের যৌথ উদ্যোগ পিআর-ইনডেক্স ভূমি ভোগদখলের সুরাক্ষা নিয়ে দেশ-ভিত্তিক পরিস্থিতি পরিমাপ করবে। এটি ভবিষ্যতে লেখালেখির খোরাক যোগাতে পারে।
সংস্কারের সম্ভাব্য সুবিধা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, নির্ভুল, গতিশীল এবং স্বচ্ছ ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থার অনেক সুবিধা। যেমন

বিনিয়োগ বৃদ্ধি
দুর্নীতি হ্রাস
কর রাজস্ব বৃদ্ধি
অবকাঠামো উন্নয়নে প্রণোদনা
কৃষকের নিরাপত্তা
স্থির এবং স্বচ্ছ আবাসন বাজার তৈরি
দুর্যোগে দ্রুত সাড়া দেয়ার সক্ষমতা
নগর পরিকল্পনার উন্নয়ন
উন্নততর স্বাস্থ্য সেবায় সহায়তা
পরিবেশ সংরক্ষণ এবং টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনার প্রসার
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা

দুর্বল রেকর্ড-রক্ষণ এবং বিস্তৃতির অভাবের কারণে বিশ্বব্যাংক এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমি নিবন্ধন এবং ক্যাডেস্টারের আধুনিকীকরণ নিয়ে কাজ করছে (২০১৮ সালের সিস্টেমেটিক প্রোপার্টি রেজিস্ট্রেশন: রিস্কস অ্যান্ড রেমেডিস দেখুন)। এক্ষেত্রে সহায়তার সম্ভাব্য নতুন ক্ষেত্র হতে পারে এরিয়াল ছবি এবং ব্লকচেইন ব্যবস্থা। কিন্তু নতুন প্রযুক্তি প্রবর্তন এবং ধরে রাখার চড়া খরচ এবং আমলাদের প্রতিবন্ধকতার কারণে এর প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস ক্যাডেস্টার আধুনিকীকরণের জন্য একটি টুলকিট তৈরি করেছে।

ইউরোপিয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই রেকর্ডের স্বচ্ছতা এবং ভূমি নীতিমালা হয়ে উঠেছে আলোচনার মূল বিষয়।
তথ্যের বড় উৎস বিশ্বব্যাংক
বিশ্বব্যাংকের অসংখ্য রিপোর্ট আছে, যা আপনাকে সম্ভাব্য অনুসন্ধানের সূত্র যোগাবে।

জাতীয় পর্যায়েও এমন রিপোর্ট রয়েছে। যেমন, বিশ্বব্যাংক ২০১৪ সালে ভিয়েতনামের ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থা নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করেছে।

জমি বা সম্পত্তির রেকর্ড কীভাবে খুঁজবেন, জানতে হলে পড়ুন জিআইজেএনের প্রোপার্টি গাইড।ভিয়েতনাম ল্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি স্টাডি নামের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী “স্বচ্ছতার সমস্যা প্রভাব ফেলেছে সেখানকার স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর আচরণ, সক্ষমতা আর নেতৃত্বে।”

বিশ্বব্যাংক অনেক ভূমি বিষয়ক প্রকল্পে যুক্ত। আরো জানতে “ল্যান্ড রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ক্যাডেস্টার” সার্চ করুন।

বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের এই রিপোর্ট নিয়ে ফলো-আপ করা উচিত সাংবাদিকদের। এখানে মানচিত্র ও ভূমি-কর ব্যবস্থার উন্নয়নের স্যাটেলাইট ছবির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

ল্যান্ড পোর্টাল ওয়েবসাইটে ডেটাসেটের দারুণ একটি সংকলন পাওয়া যায়।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার পত্রিকা বিজনেস ডে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার দুর্নীতি দমন সংস্থা একটি ভূমি সংস্কার প্রকল্পে এমন “ব্যবস্থাপনাগত দূর্বলতা” খুঁজে পেয়েছে, যার মাধ্যমে ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার দামের জমি, প্রতারণার মাধ্যমে জবর দখল করা হয়েছিলো।
অন্যান্য রিপোর্ট
ইন্টারনেট ঘাঁটলেই ভূমি সংস্কার নিয়ে অনেক রিপোর্ট পাওয়া যায়। যেমন: ইনোভেশনস ইন ল্যান্ড রেজিস্ট্রি ম্যানেজমেন্ট নামের ২০১৮ সালের এই অ্যাকাডেমিক পেপার। এখানে বলা হয়েছে, “জমি নিবন্ধন ব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে ছোট-বড় দুই ধরণের দুর্নীতিকেই উৎসাহিত করে।” এই পেপারে ভূমি নিবন্ধন সংস্কারের কিছু কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে।

কম্বোডিয়া, ভারত এবং পাকিস্তানের মতো দেশগুলোতে ভূমি বিষয়ক সেবা পেতে ঘুষের পরিমাণ অনেক সময় ৫০ শতাংশও ছাড়িয়ে যায়। এমন তথ্য পাবেন ল্যান্ডপোর্টাল ওয়েবসাইটের ল্যান্ড অ্যান্ড করাপশন পোর্টফোলিওতে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতে আফ্রিকায় মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ মানুষ ভূমি-দুর্নীতির শিকার। যুবসমাজকে ভূমি সংস্কারে আগ্রহী করে তোলার জন্য সম্প্রতি তারা একটি প্রতিযোগিতা শুরু করেছে।

কার্বিং করপোরেশন ভূমি অধিকার এবং দুর্নীতির মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে একটি দুর্দান্ত গাইড প্রকাশ করেছে। সেখানে “ভূমি ব্যবস্থাপনায় দুর্নীতির বিভিন্ন রূপ” সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা হয়েছে।

টেরোরিজম, ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন সেন্টারের ২০১৮ সালের একটি রিপোর্টে জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের শার স্কুল অফ পলিসি অ্যান্ড গভর্নমেন্ট বলছে, “আবাসনখাতে অর্থ পাচার – উন্নত এবং উন্নয়নশীল দুই ধরণের দেশের জন্যেই সমস্যা।”

ভূমি সংস্কারে অগ্রগণ্য দেশগুলোর একটি নেদারল্যান্ডস। তারা ক্যাডেস্টার অ্যাব্রোড নামের একটি নিউজলেটার প্রকাশ করে।

ভূমি রেকর্ডে প্রবেশাধিকার বেশিরভাগ সময়েই সংরক্ষিত থাকে। দেশের মাত্র এক শতাংশ মানুষ উন্মুক্তভাবে তাদের ভূমি মালিকানার তথ্য প্রকাশ করে, অন্যদিকে, ওপেন ডেটা ব্যারোমিটার বলছে, ১০ শতাংশ দেশে বাজেটের তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত। ওপেন নলেজ ইন্টারন্যাশনালের তৈরি গ্লোবাল ওপেন ডেটা ইনডেক্স অনুযায়ী, সবার জন্য উন্মুক্ত ১৫ ধরণের তথ্যের মধ্যে ভূমি মালিকানার তথ্য সবচেয়ে নিচে।

গণমাধ্যমের অনীহা
ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ক পত্রিকাগুলো বাড়ী বেচাকেনা, আবাসনখাতে নতুন ধ্যানধারণা এবং বাজার-প্রবণতা নিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট করে। কিন্তু প্রচলিত গণমাধ্যমের মত, তারাও ভূমি বিষয়ক সমস্যাগুলো এড়িয়ে যায়।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা রাজনৈতিক দুর্নীতি জাতীয় প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে হয়তো সম্পত্তির রেকর্ড ব্যবহার করেন। কিন্তু তারা ভূমি ব্যবস্থাপনার ভেতরে খুব একটা ঢুকতে চান না বা ভূমি রেকর্ডের অস্বচ্ছতা নিয়ে অনুসন্ধান করেন না।

এদের মধ্যে ব্যতিক্রম হচ্ছে থমসন রয়টার্সের প্লেইস। তারা ভূমি নিয়েই কাজ করে। তাদের সাম্প্রতিক রিপোর্টের মধ্যে আছে:

কেনিয়ার অধিবাসীরা জমি বিক্রি করছেন নামমাত্র মূল্যে
দরিদ্রদের বদলে কারখানাকে ভূমি দিতে আইন সংশোধন করলো ভারতের গুজরাট রাজ্য
কৃষকদের ভূমি অধিকার কি ঘানার কোকোয়া খাতকে বাচাঁতে পারবে? জমি দখলের প্রতিযোগিতায় ইথিওপিয়ার কফি চাষিরা বিপাকে

রেকর্ড ব্যবস্থা আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাগুলোও অবশ্য বিতর্কের উর্ধ্বে নয়। রয়টার্সের একটি রিপোর্টে উঠে আসে, কারো সাথে পরামর্শ না করেই কেনিয়ায় ভূমি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরে তা বন্ধ করার দাবি ওঠে।

ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থা বেসরকারিখাতের হাতে ছেড়ে দেয়ার বেশ কিছু সুবিধা আছে। আবার এ নিয়ে বিতর্কও কম নয়। অস্ট্রেলিয়ার ফাইনান্সিয়াল রিভিউতে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিয়ে বিতর্কের খবর ছাপা হয়েছে।
প্রণোদনার অভাব
ভূমি নিয়ে রিপোর্টিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা পান না সাংবাদিকরা।

বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকতাকে সহায়তা দেয় পুলিৎজার সেন্টার অন ক্রাইসিস রিপোর্টিং। তারা ভূমি এবং সম্পত্তির অধিকার বিষয়ক ডেটা জার্নালিজম প্রকল্পে পৃষ্ঠপোষকতা করে।

এন/কোর এবং ওমিডায়ার নেটওয়ার্ক পরিচালিত ইমপ্যাক্ট জার্নালিজম গ্রান্ট, ভারতে ভূমি এবং সম্পত্তি বিষয়ক উদ্ভাবনী সাংবাদিকতার প্রসারে কাজ করছে।
এনজিওর তৈরি রিপোর্ট
বিভিন্ন এনজিও ভূমি নীতিমালা নিয়ে রিপোর্ট করে। তাদের রিপোর্টে  অনেক সময় অনুসন্ধানী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

জমির রেকর্ড থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা কীভাবে দুর্নীতি খুঁজে বের করেছেন, দেখুন জিআইজেএনের এই সংকলনে।মোঙ্গাবে, ২০১৮ সালের অগাস্টে প্রকাশিত এক রিপোর্টে তুলে ধরে, ইন্দোনেশিয়ার সরকার আদিবাসীদের জমি বাদ দিয়ে কীভাবে ভূমি-ব্যবহার ডেটাবেস ও মানচিত্র তৈরির পরিকল্পনা করছিল।

২০১৭ সালের এপ্রিলে “সাও পাওলো: ডাজ করাপশন লিভ নেক্সট ডোর?”

সরবরাহ চেইন অনুসন্ধানের যত রকম কৌশল

English

সাপ্লাই চেইন, যার বাংলা করলে দাঁড়ায় সরবরাহ শিকল। এটি হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট পণ্য উৎপাদন, বিতরণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিগুলোর একটি নেটওয়ার্ক। এই শিকলে থাকতে পারে কাঁচামাল সরবরাহকারী থেকে শুরু করে, সেই কাঁচামাল দিয়ে পণ্য উৎপাদনকারী, উৎপাদিত পণ্য গুদামে সংরক্ষণকারী, বাজারে বিতরণকারী এবং শেষ পর্যন্ত পণ্যটি ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া খুচরা বিক্রয়কারী পর্যন্ত সব ধরনের প্রতিষ্ঠান। পোশাক, ইলেকট্রনিকস, যানবাহন, খাদ্য বা ওষুধ—পণ্য যেমন হতে পারে বৈচিত্র্যময়, সরবরাহ চেইনও ঠিক তেমনই। 

পণ্য—তা সে কৃষিজাত হোক বা শিল্প—কোথা থেকে আসে বা কোথায় যায়, তার অনুসন্ধান হতে পারে রিপোর্টারদের জন্য কাজের দারুণ ক্ষেত্র। এ ধরনের অনুসন্ধান থেকে বেরিয়ে আসে জোরপূর্বক শ্রম, পরিবেশগত অপরাধ, দুর্নীতি, এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও। 

তবে গুরুতর চ্যালেঞ্জ হলো, এত কিছুর মধ্যে সংযোগ খুঁজে বের করাটা।

কোনো ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষিজমি, প্রাকৃতিক সম্পদের খনি বা শিল্পকারখানায় কাজের পরিবেশ কেমন এবং তাদের সঙ্গে সরবরাহ চেইনের সম্পর্ক কী, তা উন্মোচন করতে গেলে আপনার দরকার হবে অনেক ধরনের অনুসন্ধানী টুল। 

আপনার হাতে সেই সব টুল, গবেষণার উপকরণ, রিপোর্ট এবং নানা রকম তথ্যের উৎসের খবর তুলে দিতেই জিআইজেএন তৈরি করেছে সাপ্লাই চেইন রিসোর্স পেইজ। এর বাইরেও যদি জানতে চান, পড়ে নিন জিআইজেএনের  প্রাসঙ্গিক এই রিসোর্সগুলো:  

সাগরে থাকা জাহাজ অনুসরণ

মানব পাচার ও দাসত্ব 

খনিজ উত্তোলন শিল্প

দুর্নীতি বিষয়ক তথ্যভাণ্ডার

বিষয়টি সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে চাইলে, পড়তে পারেন: লার্নিং কাস্টম ল্যাঙ্গুয়েজ টু ট্র্যাক শিপমেন্ট। অষ্টম এশিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে এটি উপস্থাপন করেছিলেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার শিক্ষক জিয়ানিনা সেনিনি। তিনি এখানে তুলে ধরেছেন কাস্টমস কোডের ব্যবহার, বিল অব লেডিং, জাহাজ অনুসরণ এবং কীভাবে পণ্যবাহী কনটেইনার ট্র্যাক করতে হয়। 

এ ছাড়া দেখতে পারেন জিআইজেনের এই ভিডিও, যেখানে এপির সাংবাদিক মার্থা মেনডোজা বলেছেন, তারা মৎস্যশিল্পে দাসপ্রথার চল নিয়ে কীভাবে অনুসন্ধান করেছেন। 

অনুসন্ধান হতে পারে বহুমুখী 
সরবরাহ চেইন নিয়ে রিপোর্টিং করাটা নানা কারণেই চ্যালেঞ্জিং। কারণ, এর পরতে পরতে জড়িয়ে আছে প্রতারণা ও গোপনীয়তা। নিজেদের আড়াল করতে চাওয়া সরবরাহ নেটওয়ার্কের কর্মকাণ্ড উন্মোচন করতে গেলে দরকার হয়, উদ্ভাবনী দক্ষতা ও লেগে থাকার মানসিকতা। সরবরাহ চেইন অনেক সময় হতে পারে জটিল এবং একাধিক দেশে বিস্তৃত। ফলে সামগ্রিক চিত্র তুলে আনতে গিয়ে আপনার দরকার হতে পারে অন্য দেশের সাংবাদিকদের সহযোগিতা। এসব কারণে এ ধরনের অনুসন্ধানী প্রকল্পগুলো হয়ে উঠতে পারে ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। 

পণ্য সরবরাহের শিকলটিকে বুঝতে হলে আপনাকে তার প্রতিটি সংযোগ চিহ্নিত করতে হবে। অনুসন্ধানে এই কাজটিই সবচেয়ে কঠিন। শিকলের জোড়াগুলোকে খুঁজে বের করতে যেসব তথ্য দরকার হয়, তা পাওয়া যায় বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সোর্স বা উৎস থেকে। পানজিভা, পিয়ার্স বা ইনিগমার মতো বাণিজ্য-তথ্যের দরকারি সেই উৎসগুলোর ঠিকানা মিলবে জিআইজেএনের এই টুলকিটে।

সরবরাহ চেইনে ছোট-বড় নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকে। একেবারে নিচের দিকের ছোট কোম্পানিগুলোর মালিক কারা, তা খুঁজে বের করাও আপনার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ অনেক দেশেই করপোরেট মালিকানার তথ্য প্রকাশসংক্রান্ত আইনগুলো দুর্বল। মালিকানার তথ্য খোঁজার জন্য সাংবাদিকেরা ওপেন করপোরেটস, ইনভেস্টিগেটিভ ড্যাশবোর্ড এবং বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসোর্স সেন্টারের মতো কিছু প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন। আমাদের রিসোর্স তালিকায় তাদের পরিচিতিও তুলে ধরা হয়েছে।
সমসাময়িক উন্মোচন
জটিলতা যতই থাকুক, তার গভীরে গিয়ে সমস্যাকে তুলে আনাই সাংবাদিকদের কাজ। সরবরাহ চেইন নিয়েও এমন অনেক অনুসন্ধান হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানে তেমনই কিছু উদাহরণ।

২০১৯ সালে গার্ডিয়ান ও দ্য ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ নিউজের সঙ্গে জোট বেঁধে পরিবেশবিধ্বংসী মাংস ব্যবসার খবর প্রকাশ করেছিল রিপোর্টার ব্রাজিল। মারফ্রিগ একটি ব্রাজিলিয় মাংস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তারা ফাস্ট ফুডের দোকানে মাংস সরবরাহ করে। সাংবাদিকেরা অনুসন্ধান করে বের করেন, প্রতিষ্ঠানটি যে খামার থেকে গবাদিপশু কেনে, তারা গরু পালনের নামে অবৈধভাবে বনভূমি ধ্বংস করছে। (দেখুন সেই প্রতিবেদন)

২০১৯ সালে ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভ নিউজের সংগ্রহ করা তথ্যের সঙ্গে নিজেদের তথ্য মিলিয়ে দেখেছিল জার্মানির সংবাদপত্র ওয়েল্ট এম জোনট্যাগ। তারা হিসেব করে দেখায়, জার্মানির রেস্তোরাঁ ও রিটেইল চেইনশপগুলোতে বছরে গড়ে ৪০ হাজার টন গরুর মাংস লাগে। আর এই মাংস তারা আমদানি করেছে ব্রাজিলীয় প্রতিষ্ঠান জেবিএস, মারফ্রিগ ও মিনার্ভার কাছ থেকে।

২০১৬ সালে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সাংবাদিকেরা উন্মোচন করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মৎস্যশিল্পে দাসপ্রথার করুণ চিত্র। এই রিপোর্টের কারণে মুক্তি পেয়েছিল দুই হাজারের বেশি আধুনিক ক্রীতদাস, যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি কোম্পানির হয়ে সাগরে মাছ ধরতেন। এপির সাংবাদিকেরা খুঁজে বের করেন, এই সামুদ্রিক মাছগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন সুপারমার্কেটে যায়, এবং কারা সেই মাছ দিয়ে পোষা প্রাণীর খাদ্য তৈরি করে। এই অনুসন্ধানী সিরিজের জন্য, ২০১৬ সালে পাবলিক সার্ভিস ক্যাটাগরিতে পুলিৎজার পুরস্কার জেতে এপি।২০১৮ সালের জুনে সাড়া জাগানো আরেকটি অনুসন্ধান প্রকাশ করে এপি। এবার তারা দেখায়, কীভাবে বিদেশি জলসীমা থেকে ধরে আনা ইয়েলোফিন টুনা বিক্রি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে, যদিও মার্কিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দাবি ছিল, মাছগুলো নেহাতই সাধারণ ও সামুদ্রিক। এই অনুসন্ধানে এপির সাংবাদিকেরা আমেরিকার সবচেয়ে বড় মাছের বাজারে নজরদারি করেছেন, মাছবাহী  ট্রাক অনুসরণ করেছেন, স্বাদ বুঝতে একজন বাবুর্চিকে সঙ্গে নিয়েছেন, মাছের ডিএনএ টেস্ট করিয়েছেন এবং তিনটি মহাদেশের জেলেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। মার্কিন এই কোম্পানির সরবরাহ চেইন খুঁজতে গিয়ে সাংবাদিকেরা পেয়েছেন বিদেশি জলসীমায় কাজ করা অভিবাসী জেলেদের। তাদের মুখ থেকেই উঠে আসে, “শ্রম আইন লঙ্ঘন, চোরাচালান এবং হাঙর, তিমি ও ডলফিন হত্যার গুরুতর অভিযোগ ।”

এবার নজর দেওয়া যাক পোশাকশিল্পের দিকে। এই খাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা অনেক, বিভিন্ন দেশে তদন্তও হয়েছে।

২০১৬ সালে বিবিসি একটি অনুসন্ধান করে। তারা দেখায়, তুরস্কে শরণার্থী হয়ে আসা সিরীয় শিশুদের দিয়ে পোশাক তৈরি হচ্ছে মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার এবং অনলাইন রিটেইলার আসোসের জন্য। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসের রিপোর্টার নাটালি কিট্রোয়েফ ও ভিক্টোরিয়া কিম, ২০১৭ সালে লিখেছিলেন এই প্রতিবেদন: ১৩ ডলারের একটি শার্টের নেপথ্যে ঘণ্টায় ৬ ডলার পাওয়া শ্রমিক। লেখার উপশিরোনাম ছিল, “কম মজুরিতে পোশাক বানিয়ে দায় এড়াচ্ছে ফরেভার ২১ এবং অন্য রিটেইলাররা।”

কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনের চিপ তৈরিতে ব্যবহার হয় কোবাল্ট। এটি উত্তোলন করা হয় খনি থেকে। কঙ্গোর কোবাল্ট খনিতে কভাবে শিশুশ্রম ব্যবহার হচ্ছে, তা নিয়ে ২০১৮ সালে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিবিএস নিউজ। এ জন্য কঙ্গোর সেই খনিতে যান তাদের রিপোর্টার ডেবোরা পাট্টা। সিবিএস-এর সেই রিপোর্টে বলা হয়, “কঙ্গোর কোবাল্ট খনিতে কাজের পরিবেশ নিয়ে এতই স্পর্শকাতরতা ছিল যে, প্রতি একশ ফুট পরপর সিবিএস নিউজের দলকে থামানো হয়েছে; নিরাপত্তারক্ষীরা বারবার কাগজপত্র দেখতে চেয়েছে; যদিও আগেই অনুমতি নেওয়া ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।”

কঙ্গোতে যারা কোবাল্ট কেনাবেচা করে, তারা কখনো প্রশ্ন করেনি—এই কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে কি না। গোপন একটি ক্যামেরা ব্যবহার করে ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছিল সিবিএস। বড় বড় কোম্পানি দাবি করে, তারা এজাতীয় কোবাল্ট ব্যবহারই করে না।

ওয়ালমার্টের চীনা কারখানাগুলো কীভাবে পরিবেশ দূষণ করছে, তা তুলে এনেছিলেন অ্যান্ডি ক্রোল। ২০১৩ সালে মাদার জোনসের একটি আর্টিকেলে তিনি উপসংহার টানেন, কোম্পানির অডিটররা যেন কিছুই দেখছেন না। 
মূল্যবান হতে পারে এনজিও যোগাযোগ
সরবরাহ চেইন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকেরা প্রায়ই স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর সাহায্য নেন। তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে। একেকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে একেক খাতের তথ্য পাওয়া যায়। যেমন সিফুড, তৈরি পোশাক, খনিজ দ্রব্য, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি। অনুসন্ধানের জন্য প্রাথমিক তথ্য আসতে পারে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট, ইউনিয়ন, কমিউনিটি গ্রুপ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকেও।

সরবরাহ চেইন নিয়ে এনজিওগুলো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান করেছে। ২০১৮ সালের মে মাসে গ্রিনপিসের একটি রিপোর্ট ছিল সমুদ্রে মাছ ধরার পরিস্থিতি নিয়ে। সমুদ্রে দুর্দশা নামের এই রিপোর্টে দেখানো হয় করুণ কর্মপরিবেশ এবং তাইওয়ানে দূর থেকে বসে মাছ ধরার ক্ষতিকর পদ্ধতি। ২০১৮ সালের জুনে, ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বৈশ্বিক জোট এবং শ্রম ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো প্রকাশ করে আরেকটি রিপোর্ট। সেখানে দেখানো হয় এইচএন্ডএম এর পোশাক সরবরাহ চেইনে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার চিত্র। 

কখনো কখনো, সাংবাদিকেরা সরাসরি কাজ করেন অ্যাকটিভিস্টদের সঙ্গেও।

দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদমাধ্যম, কার্তে ব্লস কাজ করেছিল অস্ত্র চোরাচালান বিশেষজ্ঞ ক্যাথি লিন অস্টিনের সঙ্গে জোট বেঁধে। তাঁরা গন্ডার শিকারের ঘটনাস্থলগুলো ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছিলেন ব্যবহৃত বুলেট-গোলাবারুদ, যা তৈরি হয়েছে চেক রিপাবলিকে। চার পর্বের এই সিরিজ প্রযোজনা করেন জাশা সোয়েনডেনওয়াইন। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এই অনুসন্ধানী প্রকল্পে রিপোর্টিং করা হয় মোজাম্বিক, পর্তুগাল, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। নজরদারি এবং সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের। খুঁজে বের করা হয় সরকারি নথিপত্র এবং ব্যবহার করা হয় গোপন ক্যামেরা।
করপোরেট আইনের সুবিধা নিন
সরবরাহ চেইন নিয়ে গবেষণার জন্য আপনাকে করপোরেট আইন বুঝতে হবে। এসব আইনের কারণেই প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শীর্ষ নির্বাহীরা নিয়ন্ত্রণে বা চাপে থাকেন। 

করপোরেট আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইন ক্রমেই বাড়ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং এনজিওগুলোর উদ্যোগে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসার নানা পদ্ধতিও তৈরি হচ্ছে। তেমনই কয়েকটি এনজিও – নো দ্য চেইন, টার্নিং পয়েন্ট এবং করপোরেট হিউম্যান রাইটস বেঞ্চমার্ক।

করপোরেশনগুলো যেন তাদের সরবরাহ চেইনে থাকা সমস্যা খুঁজে বের করে এবং তা সমাধান করে, সে জন্য তাদের ওপর চাপ অব্যাহত আছে। আর এই কাজে তাদের সহায়তার জন্য গড়ে উঠছে অনেক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। রিপরিস্ক তাদের অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য: “স্বতন্ত্র তথ্যপ্রযুক্তি টুল ব্যবহারের মাধ্যমে, রিপরিস্ক প্রতিদিন ৮০ হাজারের বেশি সংবাদমাধ্যম ও স্টেকহোল্ডারদের থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই ও মূল্যায়ন করে। কোনো সমস্যা বা ঝুঁকি দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য, ১৫টি ভাষায় চালানো হয় এই যাচাই ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া।”

কিন্তু তাদের কাছ থেকে খুব বেশি স্বচ্ছতা আশা করবেন না। এই পরামর্শকেরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছে দায়বদ্ধ। সরবরাহ চেইন নিয়ে এসব করপোরেট রেকর্ড সংবাদমাধ্যমের কাছে পৌঁছায় না বললেই চলে। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতার কারণে কিছু প্রতিষ্ঠান সাংবাদিকদের তথ্য দিয়ে সাহায্য করে। 

সরবরাহ চেইন অনেক সময় হতে পারে জটিল এবং একাধিক দেশে বিস্তৃত। ফলে সামগ্রিক চিত্র তুলে আনতে গিয়ে আপনার দরকার হতে পারে অন্য দেশের সাংবাদিকদের সহযোগিতা।২০১০ ক্যালিফোর্নিয়া ট্রান্সপারেন্সি ইন সাপ্লাই চেইন অ্যাক্ট এবং যুক্তরাজ্যের ২০১৫ মডার্ন স্লেভারি বিলের মতো কিছু আইনের কারণে এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আগের চেয়ে বেশি তথ্য প্রকাশ করে।

এভাবে, সামনের দিনগুলোতে হয়তো স্বচ্ছতা আরও বাড়বে, এবং তার প্রতিফলন দেখা যাবে দোকানে রাখা পণ্যের তাকে। 

প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের কিছু অংশে এমন দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে যেখানে ক্রেতারা তাদের ফোন দিয়ে মোড়ক স্ক্যান করে দেখে নিতে পারছেন – পণ্যটি কোথায়, কারা, কোন পরিস্থিতিতে তৈরি করেছে। কিন্তু এ ধরনের প্রক্রিয়া আরও বিস্তৃত আকারে বাস্তবায়ন এখনো অনেক দূরের ব্যাপার।
খবরের প্রতিক্রিয়া 
সংবাদমাধ্যমের কাভারেজ এই ইস্যুতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। 

২০১৭ সালে স্ট্র্যাটেজিক ম্যানেজমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণার শেষটা করা হয়েছিল এভাবে: “এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স  (ইএসজি)-কে ঘিরে সংবাদমাধ্যমের নেতিবাচক প্রতিবেদন একটি প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট রিস্ক বাড়ায়।” 

কখনো কখনো সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা শ্রমিকদের জীবনও বাঁচায়। এপির সাংবাদিক মার্থা মেনডোজা ও তাঁর সহকর্মীরা মিলে ১৮ মাস ধরে একটি অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন। যার ফলে ইন্দোনেশিয়ার জেলে নৌকায় ক্রীতদাসের মতো কাজ করা দুই হাজার মানুষ মুক্তি পেয়েছিলেন।

এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমাগত ঘটতে থাকে। তাই ফলোআপ করাটা জরুরি। সাংবাদিক ও গবেষক নিকোলাস পোপ বলেন, “কখনো কখনো বিষয়টি আমাদের চোখের আড়ালেই রয়ে যায়।” তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন এভাবে: “সাধারণত দেখা যায়, বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে পণ্য সরবরাহ করে, এমন কোনো কারখানায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ পেলে (ধরা যাক শিশুশ্রম নিয়ে), সত্যিকারের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে বরং সেখান থেকে সরে পড়ে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি। তারা বড় বড় ঘোষণা দেয়। বলে, এসব তারা জানত না এবং অবিলম্বে সেই সরবরাহকারী কারখানার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করবে। তাদের আশা থাকে, কেলেঙ্কারিটা যেন এভাবে সবার অগোচরে চলে যায়।”

কিন্তু কাহিনি এখানেই শেষ হয় না। এমন ছোট ছোট কারখানার সঙ্গে বড় একটি ব্র্যান্ড চুক্তি বাতিল করলে হাজারো শ্রমিক তাদের জীবিকা হারান। এঁদের সহায়তায় কেউই কিছু করে না। যে সাংবাদিকেরা এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো উন্মোচন করছেন, তাঁদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, নিপীড়নের শিকার শ্রমিকদের এই দুরবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য বড় ব্র্যান্ডগুলোই যেন পদক্ষেপ নেয়। কারণ, দাম ও পণ্য হস্তান্তরের সময় নিয়ে ব্র্যান্ডগুলো যে চাপ তৈরি করে, তা-ই সমস্যার প্রধান কারণ, বিশেষত তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে।

সরবরাহ চেইন নিয়ে রিপোর্টিং বিপজ্জনকও হতে পারে। যেমন: ইন্দোনেশিয়ার দুর্গম অঞ্চলে পাম তেল উৎপাদন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হুমকি ও শারীরিক নিপীড়নের মুখে পড়েছেন সাংবাদিকেরা। তুর্কমেনিস্তানের তুলা শিল্পে জোরপূর্বক শ্রম নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে কারাগারে বন্দি হয়েছেন গ্যাসপার মাতালেভ। ইন্টারন্যাশনাল লেবার রাইট ফোরাম ও দ্য ইনডিপেনডেন্ট সূত্রে জানা গেছে, তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

এই গাইড সম্পাদনা করেছেন জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের পরিচালক টবি ম্যাকিনটশ। তিনি ছিলেন ওয়াশিংটনভিত্তিক রিপোর্টার এবং ৩৯ বছর ধরে ব্লুমবার্গ বিএনএ-এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। অলাভজনক ওয়েবসাইট ফ্রিডমইনফো ডট ওআরজি-এর সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। এখানে তিনি কাজ লেখালেখি করেছেন বিশ্বজুড়ে তথ্য অধিকারের ব্যবহার নিয়ে। তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, এফওআইএনেট-এর পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন তিনি।

নিখোঁজের খোঁজে: গুম, অপহরণ ও হারানো মানুষ নিয়ে অনুসন্ধানের গাইড

English

এই বিশ্বে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ নিখোঁজ হয়ে যান। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পিপল বলছে, এসব ঘটনার বেশির ভাগের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র; বিশেষ করে মাদক পাচারকারীরা।  এ ছাড়া বন্য প্রাণী চোরাচালান, মানব পাচার, প্রাকৃতিক সম্পদ চুরি—এমন আরও অনেক অপরাধী চক্র মানুষের এভাবে হারিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে।

এমন অপরাধ ঠেকাতে সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা আছে; বিশেষ করে যেসব জায়গায় রাষ্ট্র ও আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। সেটি হতে পারে লেখালেখির মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করে, অথবা ঘটনার গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে।সবচেয়ে ডাকসাইটে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড, সাধারণত হয় বিশ্বজোড়া। তারা খুবই সুসংগঠিত, আর তাদের কারবারও বেশ নিয়মতান্ত্রিক। তাদের চোখে পড়বে আমাদের চারপাশে, নিত্যদিনের জীবনে; কখনো কখনো তারা ঢুকে পড়ে সিস্টেমের একেবারে গভীরে; তাদের দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ সব সামাজিক সংগঠনে।

যখন সব জায়গায় দুর্নীতি প্রবলভাবে জেঁকে বসে, তখন সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর কারণে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এসব মানুষ নিয়ে কোনো অনুসন্ধান হয় না। জাতীয় বা আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষকে তারা প্রায়ই চুপ করিয়ে রাখে অর্থের বিনিময়ে। আবার কখনো অপরাধী গোষ্ঠীর ক্ষমতা ও ব্যাপ্তি এতই বড় হয়ে ওঠে যে, কোথাও অপরাধের কোনো তথ্যই পাওয়া যায় না। যেসব গুমের সঙ্গে কোনোভাবে রাষ্ট্র জড়িত;  যেখানে একজন মানুষকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে, গোপনে আটকে রেখেছে অথবা মেরে ফেলেছে এবং লাশটাকে লুকিয়ে ফেলেছে—তাদের বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।

এই অপরাধের ধরন অনেক রকম হতে পারে: একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, একসঙ্গে অনেক মানুষের গুম হয়ে যাওয়া, অথবা নির্দিষ্ট সময়ে পরস্পর সংযুক্ত একাধিক ঘটনা। অনেকে আবার নিখোঁজ হন নিজের ইচ্ছাতেও।

এমন অপরাধ ঠেকাতে সাংবাদিকদের বড় ভূমিকা আছে; বিশেষ করে যেখানে রাষ্ট্র ও আইনের শাসন ভেঙে পড়েছে। সেটি হতে পারে লেখালেখির মাধ্যমে নিরুৎসাহিত করে, অথবা ঘটনার গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে। কিন্তু নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে একজন সাংবাদিক নিজেও এ ধরনের অপরাধের শিকার হতে পারেন। তাঁরা কোনোভাবেই ঝুঁকির বাইরে নন।

এসব কারণে সংঘবদ্ধ অপরাধ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান করার কাজটি হয়ে ওঠে জটিল ও সূক্ষ্ম। এই বিষয় নিয়ে কাজ করতে গেলে একজন সাংবাদিককে সব সময় সতর্ক থাকতে হয় এবং চিন্তা করে এগোতে হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই হারিয়ে যাওয়া মানুষ নিয়ে বড় বড় অনুসন্ধান হয়েছে। আমরা এই গাইডে তুলে ধরেছি তেমন কিছু উদাহরণ, গবেষণাসূত্র, প্রাসঙ্গিক সংগঠনের পরিচিতি এবং মাঠপর্যায়ে রিপোর্টিংয়ের পরামর্শ।

গাইডটি প্রকাশিত হয়েছে জিআইজেএন ও রেজিলিয়েন্স ফান্ড আয়োজিত “ডিগিং ইনটু ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স” ওয়েবিনার সিরিজের অংশ হিসেবে। এই সিরিজের বিষয় ছিল সংঘবদ্ধ অপরাধ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান। এটি দেখতে পাবেন ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায়। ফরাসি ভাষায় আয়োজিত ওয়েবিনারে উঠে এসেছে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনার কথা। এবং বিভিন্ন ভাষায় প্রচারিত হয়েছে: কীভাবে খুঁজবেন নিখোঁজদের।

সূচিপত্র

কেস স্টাডি
দরকারি গাইড ও সংগঠন
রিপোর্টিং টিপস

ঘটনাস্থল সম্পর্কে জানুন
নিরাপদ থাকা ও রাখা
তথ্য দেবে কারা
সূত্র খুঁজবেন কী করে
সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ
যখন কাজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে
মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের নিয়ে কাজ
নিজের যত্ন

কেস স্টাডি
নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষদের নিয়ে সাম্প্রতিক কিছু অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বাছাই করা হয়েছে এখানে।

সার্চিং উইথ দ্য মাদারস অব মেক্সিকো’স ডিজঅ্যাপিয়ার্ড (২০২০)। এই প্রতিবেদনে, মেক্সিকোতে গুম বা নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছে দ্য নিউ ইয়র্কা, যারা এখনো হারানো স্বজনকে খুঁজে পেতে মরিয়া।
মিসিং ইন ফ্রান্স: দ্য প্লাইট অব ভিয়েতনামিজ চিলড্রেন হু আর ট্রাফিকড ইনটু ইউরোপ (২০২০)। ভিয়েতনামের শিশুরা কীভাবে নিখোঁজ হচ্ছে, তা নিয়ে এই অনুসন্ধান করেছেন সাংবাদিকেরা। এতে দেখা গেছে, ফ্রান্সের একটি বিমানবন্দর থেকে তুলে নিয়ে এই শিশুদের ইউরোপের অন্য দেশে পাচার করা হয়েছে।
রুয়ান্ডায় গণহত্যা, ফ্রান্সে আত্মগোপন ও পিছে লেগে থাকা এক সাংবাদিক (২০২০)। এই লেখায় জিআইজেএন কথা বলেছে থিও এঙ্গেলবার্টের সঙ্গে। যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে খুঁজে বের করেছিলেন রুয়ান্ডার সাবেক সেনা কর্মকর্তা অ্যালোয়েস নিউইরাগাবোকে। যিনি দীর্ঘ সময় ধরে আত্মগোপন করে ছিলেন।
সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে যেভাবে বেরিয়ে এলো ২০০০ গুপ্ত কবর (২০১৯)। তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ, ডেটা বিশ্লেষণ ও পরিবারের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে মেক্সিকোতে নিখোঁজ হওয়া মানুষদের ওপর অনুসন্ধান চালিয়েছিলেন মার্সেলা তুরাতি ও তাঁর দল। এই লেখায় তিনি সেই অনুসন্ধান নিয়ে কথা বলেছেন জিআইজেএন-এর সঙ্গে।
মিসিং অ্যান্ড মার্ডারড: দ্য আনসলভড কেসেস অব ইনডিজিনাস ওমেন অ্যান্ড গার্লস (২০১৭-১৮)। সিবিসি নিউজের এই পুরস্কারজয়ী পডকাস্টে উন্মোচিত হয়েছে, কানাডার আদিবাসী নারীদের ব্যাপক হারে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাগুলো কেন অমীমাংসিত থেকে গেছে।
জোনাস বার্গোস: ট্র্যাপড ইন আ ওয়েব অব লাইভস (২০১৩)। ফিলিপিনো বিদ্রোহী জোনাস বার্গোসকে নিয়ে এই অনুসন্ধান করেছেন র‌্যাপলারের গ্লোরিয়া গ্লেন্ডা।
দ্য সার্চ: মিসিং অ্যান্ড মার্ডারড ইনডিজিনাস ওমেন (২০১৯)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আদিবাসী নারীদের নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া নিয়ে এই তথ্যচিত্র তৈরি করেছে আল-জাজিরা।
দ্য এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স অব দ্য আয়োজিনাপা স্টুডেন্টস (২০১৭)। ডেটা মাইনিং ও থ্রিডি ইন্টারঅ্যাকটিভ মডেলিং ব্যবহার করে ২০১৪ সালে মেক্সিকোতে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৪৩ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ফরেনসিক আর্কিটেকচার ।
হাউ দ্য ইউএস ট্রিগার্ড আ ম্যাসাকার ইন মেক্সিকো (২০১৭)। মেক্সিকোর আলেন্দে-তে মাদক সংশ্লিষ্ট গণহত্যা  এবং এর ফলে কয়েক শ মানুষ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নিয়ে এই রিপোর্ট করেছিলেন জিনজার থম্পসন ও আলেক্সান্দ্রা জানিক ভন বারট্রাব।
হোয়াই আর ১০,০০০ মাইগ্রেন্ট চিলড্রেন মিসিং ইন ইউরোপ? (২০১৬)। এখানে শিশু পাচার ও হারিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের নিয়ে তৈরি ইউরোপোলের পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেছে বিবিসি।
দ্য রুম অব বোনস (২০১৫)। এল সালভাদরে তিন দশকের সামাজিক অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে চার মা খুঁজে বেড়াচ্ছেন তাঁদের সন্তানদের মৃতদেহ। এমন এক পরিস্থিতি নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই তথ্যচিত্র।
লস্ট গার্লস অব ইন্দোনেশিয়া অ্যামং ৬১,০০০ ডেড অ্যান্ড মিসিং মাইগ্রেন্টস (২০১৮)। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ইন্দোনেশিয়ার সেসব মেয়ের কথা, যাদের বিদেশে চাকরি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে ঘরছাড়া করা হয়েছে এবং আর কখনো দেখা যায়নি।

দরকারি গাইড ও সংগঠন
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অন মিসিং পিপল (আইসিএমপি) বিশেষভাবে নজর দেয় নিখোঁজ ব্যক্তিদের মামলাগুলোর দিকে। এই বিষয় সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনকানুন সম্পর্কে তাদের ভালো দখল আছে।

অফিস অব দ্য ইউনাইটেড নেশনস হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) কাজ করে অভিবাসী ও অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে হওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে। গুম বা অপহরণের শিকার হয়ে যাঁরা হারিয়ে গেছেন, তাঁদের জন্য একটি কমিটিও আছে এই প্রতিষ্ঠানের।
অভিবাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের কেউ মারা গেছে কি না কিংবা নিখোঁজ হয়েছে কি না, তার খবর রাখছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর দ্য মিসিং প্রজেক্ট।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও বলপূর্বক নিখোঁজ বা গুম হওয়া ব্যক্তিদের ঘটনা নিয়ে কাজ করে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স জার্নালিস্টস গাইড টু অর্গানাইজড ক্রাইম। এই গাইড থেকে জানা যাবে, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র কীভাবে সাংবাদিকদের কাজ বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) নিখোঁজ সাংবাদিকদের নিয়ে বেশ কিছু অনুসন্ধান ও রিপোর্ট করেছে।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) নিখোঁজ সাংবাদিকদের নিয়ে প্রকাশিত সব প্রতিবেদন এক জায়গায় সংরক্ষণ করে। এবং তাদের এই বিষয়ে তাদের একটি ডেটাবেসও আছে।
মেক্সিকোতে, ডেটা ব্যবহার করে গণকবর খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে হিউম্যান রাইটস ডেটা অ্যানালাইসিস গ্রুপ (এইচআরডিএজি)। তারা গুম বা অপহরণের কারণে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের নিয়ে অনুসন্ধান করে এবং নির্দিষ্ট দেশ ধরে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
আর্জেন্টাইন ফরেনসিক অ্যানথ্রোপোলজিস্টস টিম (ইএএএফ), নিখোঁজ ব্যক্তিদের শনাক্ত ও খুঁজে বের করতে বিজ্ঞানভিত্তিক ফরেনসিক কৌশল ব্যবহার করে।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস (আইসিআরসি) বিশ্বজুড়ে গুম বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার দিকেও নিবিড় নজর রাখে।

রিপোর্টিং টিপস
এলাকাটি সম্পর্কে জানুন
কোনো নির্দিষ্ট কেস নিয়ে কাজ করার সময়, সেই এলাকা সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নেওয়া জরুরি। এতে করে আপনি কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। একই সঙ্গে বুঝতে পারবেন: সেখানে কী ধরনের সংগঠিত অপরাধী চক্র সক্রিয় আছে এবং কারা জড়িত থাকতে পারে। একই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটলে, সেই মামলাগুলো থেকে আপনার অনুসন্ধান শুরু করতে পারেন।  সেই এলাকায় আগে কাজ করেছে, এমন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলুন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে খোঁজাখুঁজি করুন এবং সেখানকার অপরাধ জগতের কর্মকাণ্ড বোঝার চেষ্টা করুন।

বিশ্বস্ত কোনো সূত্রের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে যাবেন না। এবং প্রয়োজন হলে কীভাবে দ্রুত সেই এলাকা ছেড়ে যাবেন, তার একটি বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা তৈরি রাখুন।

নিরাপদ থাকা ও রাখা
সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র নিয়ে অনুসন্ধান শুরুর সময়, আপনার নিজের ও সূত্রদের নিরাপত্তার দিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি শক্তিশালী নিরাপত্তা পরিকল্পনা। প্রথমত, আপনাকে ঠিক করতে হবে: আপনি কী ধরনের অনুসন্ধান করতে চান এবং আপনিই এই নির্দিষ্ট অনুসন্ধানটি করার জন্য সঠিক সাংবাদিক কি না।

এরপর, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আপনি কীভাবে নিরাপদে তথ্য সংরক্ষণ করবেন এবং আপনার দল ও সাক্ষাৎকারদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আপনার কম্পিউটার বা ফোনে সংবেদনশীল কোনো তথ্য নিয়ে চলাচল করবেন না। কোথাও যাওয়ার সময় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে: আপনি কোথায় যাচ্ছেন, তা যেন আপনার দলের অন্য সদস্যরা জানেন। কোনো বিপদের মুখে পড়লে কীভাবে তাঁদের সতর্কসংকেত দেবেন, তা-ও আগে থেকে ঠিক করে রাখুন।

অনুসন্ধান প্রকাশিত হওয়ার পর সোর্সদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারা হয়তো আপনার এই কাজের জন্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাদেরকে হামলার লক্ষ্য বানানো হতে পারে। বিষয়-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর (যেমন: কোনো এনজিও) সঙ্গে জোট বেঁধে কাজ করলে আপনার সূত্রের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সহজ হতে পারে। তখন আপনিও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, কখন প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলে ভালো হয়। সাধারণভাবে, আপনার প্রতিবেদনে সূত্রের এমন কোনো ব্যক্তিগত তথ্য রাখবেন না, যাতে করে তিনি বা তাঁর স্বজনেরা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। বিশেষভাবে, এমন ছবি ও ভিডিও-র ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যেখান থেকে বোঝা যেতে পারে: কারা আপনার সূত্র এবং তারা কোথায় আছে। সাক্ষাৎকারদাতা কেমন পোশাক পরে ছিলেন, সেখান থেকেও তাঁর পরিচয় সম্পর্কে ধারণা মিলতে পারে। আরও তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে আপনার ছবির মেটাডেটায়।
তথ্য দেবে কারা
অন্য যেকোনো অনুসন্ধানের মতো, এখানেও আপনাকে শুরু করতে হবে সূত্র চিহ্নিত করা ও গড়ে তোলা দিয়ে। কী ঘটেছিল—এই প্রশ্ন সামনে রেখে যাবতীয় তথ্য সবার আগে এক জায়গায় করুন। তারপর আপনার কাজ শুরু করুন। বেশ কয়েকটি জায়গা থেকে আপনি প্রাথমিক তথ্য পেতে পারেন:

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন
আদালতের নথিপত্র
তথ্য অধিকার আইনের আবেদন
প্রত্যক্ষদর্শী
এনজিও
আইনজীবী
পুলিশ
নিখোঁজ ব্যক্তির বন্ধুবান্ধব ও পরিবার

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের কাছে স্থানীয় অপরাধ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তথ্য থাকে। হয়তো দেখবেন, সেই এলাকায় অপরাধী চক্রগুলো কীভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কেও তাদের জানাশোনা আছে। আবার কখনো কখনো নিখোঁজ ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য তার প্রিয়জনেরা অনেক তথ্য বাদ দেয় বা গোপন করে। সব খুঁটিনাটিই সাংবাদিকদের বিবেচনা করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। গুম বা অপহরণের শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হিসেবে কাজ করবে। তবে তাদের দেওয়া সেই তথ্যগুলো আপনাকে যাচাই করে নিতে হবে বিশ্লেষণী দৃষ্টি দিয়ে।

অন্যান্য স্থানীয় সূত্র

আপনার অনুসন্ধানের এলাকা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে, এমন ব্যক্তিরা হয়তো আরও বেশি খোলামেলা কথা বলতে আগ্রহী হবে। কারণ, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম। এমন সূত্র ও তথ্যদাতাদের একটি ম্যাপ তৈরি করে নিলে আপনার সুবিধা হতে পারে। কারাগারের বন্দিরাও আপনার গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হতে পারে। কারণ, অপরাধী চক্রের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাদের আছে। তবে তাদের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিটি তথ্য সব সময় ক্রসচেক করে নেওয়া উচিত।

সোশ্যাল মিডিয়া

ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত (নিখোঁজ বা সন্দেহভাজন ব্যক্তি) মানুষদের কর্মকাণ্ড নজরে রাখার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রায়ই অনেক সহায়তা পেতে পারেন। এখান থেকে আপনি সেই অঞ্চলের অপরাধী কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও অনেক প্রাসঙ্গিক তথ্য পেতে পারেন। মাঠপর্যায়ের সূত্রদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য যাচাই করে নেওয়ারও একটি ভালো মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া।

সূত্র খুঁজবেন কোথায়
কিছু ক্ষেত্রে, নিখোঁজ ব্যক্তিরা তাঁদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বা সূত্র রেখে যান। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের মধ্যে তাঁরা শেষ কার সঙ্গে কথা বলেছেন, তা খুঁজে বের করার মাধ্যমে আপনি আপনার কাজ শুরু করতে পারেন, বিশেষভাবে আধুনিক দাসপ্রথা ও মানব পাচারের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে।

আপনি যদি নিখোঁজ ব্যক্তির সেলফোন বা অন্য কোনো মোবাইল ডিভাইস ট্র্যাক করতে পারেন, তাহলে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে অনেক মূল্যবান তথ্য পাবেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য থেকেও বেরিয়ে আসতে পারে যে নিখোঁজ ব্যক্তিটি কোথায় আছেন বা তাঁদের ভাগ্যে কী ঘটেছে।

আরও তথ্য পাওয়ার জন্য এবং নতুন সূত্রদের আকৃষ্ট করার জন্য, আপনি প্রাথমিক কিছু তথ্য দিয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু এ-ও মাথায় রাখবেন: এমন প্রতিবেদন বাড়তি ঝুঁকিও তৈরি করবে।
সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ
কখনো কখনো আপনার অনুসন্ধান চলার সময়ই কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো গ্রুপ একটি মৃতদেহ খুঁজে পেতে পারে। আপনি যে নিখোঁজ ব্যক্তিকে নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, মৃতদেহটি তারই কি না, তা যাচাই করে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি লাশের গায়ে থাকা জামাকাপড় বা ট্যাটুর বর্ণনা মিলে যায়, বা তার সঙ্গে সঠিক শনাক্তকরণ কাগজপত্র পাওয়া যায়, তারপরও আপনার সেটি ভালোমতো যাচাই করা উচিত। কারণ, দুজন মানুষের মধ্যে একই রকম শারীরিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে বা তাদের জামাকাপড় ও শনাক্তকরণ কাগজপত্র বদলে দেওয়া হতে পারে। আদর্শ পদ্ধতি হলো: প্রতিবেদন প্রকাশের আগে আপনি ফরেনসিক ভেরিফিকেশন করিয়ে নেবেন।

অনেক দেশেই, পুলিশ খুব বিশদভাবে তদন্ত করে না এবং তাদের বাজেট, সক্ষমতা বা ইচ্ছার ঘাটতি থাকে। তাদের কাছে প্রায়শই কোনো ডিএনএ ল্যাব বা জটিল মামলা নিয়ে কাজ করার মতো পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ থাকে না। এমন জায়গায় তদন্তের ফলাফল বাইরের কোনো বিশেষজ্ঞকে দিয়ে যাচাই করে নেওয়ার চেষ্টা করুন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বা সরকারি তদন্তকারীদের কাছ থেকে যেসব ফরেনসিক প্রমাণ ও বিশ্লেষণ পাবেন, সেগুলোর ব্যাপারে সংশয়ী থাকুন। এখানে কোনো স্বার্থের সংঘাত বা দুর্নীতির সংযোগ থাকতে পারে, যা হয়তো ফলাফলকে প্রভাবিত করেছে।
কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ
কিছু ক্ষেত্রে, সাংবাদিকদের সতর্ক থাকতে হবে কর্তৃপক্ষের ব্যাপারেও। মাথায় রাখতে হবে যে, তাদেরও অপরাধীদের সঙ্গে সংযোগ থাকতে পারে। ঘটনা আসলেও এমন কি না, তা জানার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন এবং অন্য যেকোনো সূত্রের মতো তাদের কথাগুলোও যাচাই করে নিন। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও আপনি সহায়ক নথিপত্র পেতে পারেন।

তবে কিছু ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সহায়ক ভূমিকাতেও দেখা যায়। সেসব ক্ষেত্রে এমন কোনো তথ্য প্রকাশের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন, যার কারণে তাদের অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত হতে পারে বা নিখোঁজ ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যেতে পারে।

মানসিকভাবে বিপর্যস্তদের নিয়ে কাজ
এ ধরনের অনেক প্রতিবেদনের কেন্দ্রে থাকে স্বজন হারানোর কষ্ট। তাই আপনাকে অবশ্যই সংবেদনশীল হতে হবে। নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার বা প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বলার সময় ভাষার ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকুন। যদি কোনো পরিবার বিশ্বাস করে, হারানো ব্যক্তিটি এখনো জীবিত, তাহলে তাদের সঙ্গে “অতীতকাল সূচক ভাষায়” তা কথা বলবেন না।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সততা ও স্বচ্ছতা থাকা জরুরি। কথা বলার আগেই পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া উচিত, সাংবাদিক হিসেবে আপনি একই বিষয় নিয়ে অন্য কোনো সোর্স—যেমন অপরাধী চক্রের সদস্য বা এমন কারও সঙ্গে কথা বলেছেন কি না। এতে সেই পরিবারটি বুঝতে পারবে, ভবিষ্যতে কী হতে পারে। তবে যাচাই করা হয়নি, এমন কোনো তথ্য তাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন না। তাদের কোনো মিথ্যা আশা দেবেন না।

আগে সংঘবদ্ধ অপরাধের শিকার হয়েছেন, এমন কোনো মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সময় খুবই স্পষ্টভাবে বলুন: আপনি কে এবং কী করছেন। আপনার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সেই ব্যক্তির নতুনভাবে ট্রমার শিকার হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। এবং সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে, তাঁরা হয়তো ভয় পেয়ে আবার লুকিয়ে যেতে পারেন। সোর্সরা যেন বিপদে না পড়েন, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।

সাংবাদিক হিসেবে আপনার সীমাবদ্ধতার কথা খেয়াল রাখুন। এবং রাখতে পারবেন না, এমন কোনো ওয়াদা করবেন না। কীভাবে কোনো ভিকটিমের সাক্ষাৎকার নেবেন, তা আগে থেকেই ভেবে নেওয়াটা জরুরি। কীভাবে এমন ভিকটিম ও সারভাইভারদের সঙ্গে কাজ করতে হয়, তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ পাবেন ডার্ট সেন্টারের এই টিপশিটে। আরও পড়ুন: ভুক্তভোগী ও বেঁচে ফেরাদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার ক্ষেত্রে মেক্সিকান সাংবাদিক মার্সেলা তুরাতির পরামর্শ।
নিজের যত্ন
নিখোঁজ খোঁজ করার কাজটা হয়ে উঠতে পারে ক্লান্তিকর, হতাশাজনক ও ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে, গণকবরে গিয়েও খোঁজাখুঁজি করতে হতে পারে সাংবাদিকদের, দেখতে হতে পারে বীভৎস সব দৃশ্য। অথবা এমন কোনো ভিকটিমের সঙ্গে কাজ করতে হতে পারে, যার ওপর চালানো হয়েছে ভয়াবহ শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন।

এই ঘটনাগুলো প্রচণ্ড মানসিক চাপ তৈরি করতে পারে। আপনি যদি খুব শক্ত মনেরও হন, তবু ট্রমা কাটিয়ে উঠতে বাইরের কারও সহায়তা দরকার হতে পারে। সহকর্মী, বন্ধু ও ভালো থেরাপিস্টের সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমে, আপনি এমন কাজের জন্য নিজেকে আগেভাগেই তৈরি রাখতে পারেন।

গাইডটি তৈরি করেছেন জিআইজেএন-এর সম্পাদনা সহযোগী হানা কুগানস। তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি থেকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। হংকংয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেছেন বন্য প্রাণী পাচারসংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে। কাজ করেছেন যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর-এর বিভিন্ন প্রোগ্রামের জন্যও। বর্তমানে আছেন লন্ডনে।

এই গাইডে অবদান রাখার জন্য মার্সেলা তুরাতিকে বিশেষ ধন্যবাদ। তুরাতি একজন ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক, যিনি নিখোঁজ মানুষ, বলপূর্বক গুম, অভিবাসীদের গণহত্যা, গণকবর এবং সহিংসতার ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য বিখ্যাত।

গাইডটি প্রকাশিত হয়  ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এবং আরও কিছু রিসোর্স যোগ করে ডিসেম্বর ২০২০-এ  হালনাগাদ করা হয়।