জলবায়ু সংকট: অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আইডিয়া

English

জলবায়ু পরিবর্তন গোটা বিশ্বের জন্যই বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই এই রিসোর্স পেজ তৈরি করেছে জিআইজেএন। এর উদ্দেশ্য হলো, বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নতুন নতুন ধারণা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা, যেন তাঁরা বেশি করে রিপোর্ট করতে পারেন।  

এই রিসোর্স পেজে তিনটি ভাগ। 

প্রথম ভাগে, আমরা তুলে ধরেছি গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রবন্ধ। তাতে পাওয়া যাবে, কীভাবে অনুসন্ধান করতে হয়, সম্ভাব্য বিষয় কী হতে পারে এবং রিপোর্ট করতে গেলে কী মাথায় রাখতে হবে।

দ্বিতীয় ভাগে, আমরা জড়ো করেছি কিছু মন্তব্য প্রতিবেদন। এতে প্রাধান্য পেয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সমসাময়িক সাংবাদিকতার সমালোচনা। পরামর্শ রয়েছে, কীভাবে রিপোর্টিং আরও উন্নত করা যাবে।

তৃতীয় ভাগে, পাওয়া যাবে জলবায়ু নিয়ে সাংবাদিকদের জন্য দরকারি তথ্য ও রিসোর্সের লিংক।
প্রথম ভাগ: অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ও জলবায়ু পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তন: যেভাবে অনুসন্ধান করবেন এই শতাব্দীর সবচেয়ে জরুরি স্টোরি; লিখেছেন আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক জেমস ফান। এখানে তিনি তুলে ধরেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কত রকমের অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা যায়।

এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পরামর্শ:

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রধান উৎস হিসেবে কয়লা, তেল ও খনিজ গ্যাস উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলো হতে পারে আপনার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রধান বিষয়বস্তু।
আরও অনেক ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিয়ে সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছে। তাদের নিয়ে গভীর ও বিশ্লেষণী প্রতিবেদন করুন।
নজর রাখুন, গোষ্ঠীস্বার্থ কীভাবে প্রভাব ফেলছে বিভিন্ন দেশের সরকারি নীতিমালায়। রিপোর্ট করুন সেই নীতিগুলো নিয়ে। প্রশ্ন তুলুন, “সরকার কি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার চেষ্টা করছে, নাকি পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে?”
“শুধু নিজ দেশে কী ঘটছে, সেদিকে নজর রাখাই যথেষ্ট নয়। খতিয়ে দেখুন, আপনার সরকার অন্য দেশের পরিবেশের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে।”
সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করুন, আইনকানুনের প্রয়োগ ঠিকভাবে হচ্ছে কি না। 
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে নজরে রাখুন।
জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়ে প্রভাব বিষয়ে আরও বেশি বেশি রিপোর্ট করুন।
অনুসন্ধান করুন  জলবায়ু নিয়ে অ্যাকটিভিস্ট গ্রুপগুলো কী করছে, তাদের লক্ষ্য কী এবং তারা কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ ও অভিযোজনের ক্ষেত্রে সমাধানের উদ্যোগগুলোকেও অনুসন্ধানের আওতায় আনুন।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধ বা অভিযোজনের জন্য সামনে কী কী করা দরকার, তা-ও খতিয়ে দেখুন।

দ্য মিডিয়া আর কমপ্লেসেন্ট হোয়াইল দ্য ওয়ার্ল্ড বার্নস। লেখাটির উপশিরোনাম ছিল: “১.৫ ডিগ্রির পৃথিবীর পক্ষে লড়াই করা সাংবাদিকদের জন্য নতুন একটি গাইড।” ২০১৯ সালে প্রবন্ধটি লিখেন দ্য নেশনের পরিবেশবিষয়ক সাংবাদিক মার্ক হার্টসগার্ড এবং কলাম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক কাইল পোপ। তাঁরা বলেন, “এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যত রিপোর্ট হয়েছে, সেগুলো দেখে মনে হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যমই এই ইস্যুর গুরুত্ব পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। ব্রেকবিহীন একটি ট্রেন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। এর নাম জলবায়ু পরিবর্তন। এটি কোনো আতঙ্ক ছড়ানোর বিষয় নয়; এটি বৈজ্ঞানিক তথ্য।”

তাঁদের পরামর্শ:

পাঠকদের দোষ দেবেন না। আর শিশুদের কথা শুনুন।
জলবায়ু নিয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ ডেস্ক গড়ে তুলুন, কিন্তু রিপোর্ট যাতে একঘেয়ে না হয়।
বিজ্ঞান সম্পর্কে জানুন।
কোনো এক পক্ষের কথায় ভজে যাবেন না। 

ক্ষমতাকেন্দ্রিক মনোভাব পরিহার করুন।
দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করুন।
সমাধান নিয়ে কথা বলুন।
কারও দিকে আঙুল তুলতে ভয় করবেন না।

২০১৯ সালে শীর্ষ সাংবাদিক, বিজ্ঞানী ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের এক জায়গায় করেছিল কলাম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউ ও দ্য নেশন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল “বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রির নিচে ধরে রাখার যে লক্ষ্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সাংবাদিকতার একটি গাইড বানানো।” এখানে দেখুন পাঁচ ঘণ্টার সেই টাউন হল মিটিং-এর ভিডিও। লন্ডনভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হুয়ান মেয়রগা টুইটারে, তার স্প্যানিশ অনুবাদও প্রকাশ করেছিলেন। এই সম্মেলন থেকেই শুরু হয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, যার নাম: কভারিং ক্লাইমেট নাও।

এখানে দেখুন সেই সম্মেলন নিয়ে সিজেআর-এর সারমর্ম। লিখেছেন জন ওসোপ। এই সম্মেলন নিয়ে অন্যদের মতামত ছিল এ রকম:

বলিভিয়ার আম্বিয়েদাল ডে ইনফরমেসিয়ন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক এদুয়ার্দো ফ্রাঙ্কো বার্টন বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন জিআইজেসি১৯-এ। এবং নিজের বক্তব্যের সারমর্ম টেনেছিলেন সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে। দেখুন সেই টিপশিট। 
লিটারারি হাব-এর কোরিন সেগাল লিখেছেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য জার্নালিস্টস হু আর ট্রায়িং টু সেভ ইউ;
ডেপল বিশ্ববিদ্যালয়ে কলেজ অব কমিউনিকেশনের সহযোগী অধ্যাপক জিল হপকে লিখেছেন: এক্সপার্টিজ অব ক্লাইমেট চেঞ্জ কমিউনিকেশন রিসার্চার্স নিডেড ইন #কাভারিংক্লাইমেটনাও;
নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে কমিউনিকেশন, পাবলিক পলিসি অ্যান্ড আরবান অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক এবং এনভায়রনমেন্টাল কমিউনিকেশন জার্নালের প্রধান সম্পাদক ম্যাথিউ সি. নিসবেট লিখেছেন: সায়েন্স, পাবলিকস, পলিটিকস: দ্য ট্রাবল উইথ ক্লাইমেট ইমার্জেন্সি জার্নালিজম।

দ্য মিডিয়া ইজ ফেইলিং অন ক্লাইমেট চেঞ্জ – হিয়ার ইজ হাও দে ক্যান ডু বেটার অ্যাহেড অব ২০২০; গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এই লেখায় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এমিলি হোল্ডেন: 

সংখ্যায় কম হলেও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভাবে, এমন কনজারভেটিভদের দিকে দৃষ্টি দিন।
নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রার্থীরা সামনে না আনলেও আপনারা সামনে আনুন জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আসুন স্থানীয় নিউজ স্টোরি হিসেবে।
সমাধানের দিকে মনোযোগ দিন।
লিখুন বা বলুন খুব সাবধানতার সঙ্গে।

কলাম্বিয়া জার্নালিজম স্কুলের ডক্টোরাল ক্যান্ডিডেট রোসলিন্ড ডোনাল্ড তাঁর দ্য ক্লাইমেট ক্রাইসিস ইজ আ স্টোরি ফর এভরি বিট প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনকে নিউজরুমের প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তাঁর তালিকায় আছে: স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, রাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিবাসনের সম্পর্ক, জাতীয় নিরাপত্তা, খেলাধুলা, খাদ্য ও কৃষি। লেখাটি ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিল কলাম্বিয়া জার্নালিজম রিভিউয়ে। একই বিষয়ে ২০১৯ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া একটি বক্তৃতা নিয়ে লেখা এই প্রবন্ধও দেখতে পারেন: এইট নিউজরুম বিটস ইউ ডিডন্ট নো কভারড ক্লাইমেট চেঞ্জ।

১০টি “বেস্ট প্র্যাকটিসের” তালিকা তৈরি করেছে কভারিং ক্লাইমেট নাও। সহযোগিতামূলক এই প্রকল্পের অংশীদার হিসেবে আছে ৪০০টি সংবাদমাধ্যম। 

১.

কোভিড-১৯: যখন আতশি কাচের নিচে সরকারি কেনাকাটা

English

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার জন্য বিশ্বের দেশগুলো বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খুব দ্রুত খরচ করছে। কোন ধরনের সরকারি চুক্তির মাধ্যমে এসব অর্থ খরচ করা হচ্ছে, তা তলিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়ছে।

এই সংকট কিছু নতুন চ্যালেঞ্জ হাজির করেছে। দেশে দেশে সরকারি কর্মকর্তারা এসব কেনাকাটা করছেন জরুরি ভিত্তিতে। জনসাধারণের কাছে সেসব তথ্য ‍উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে তৈরি করছেন প্রতিবন্ধকতা এবং তথ্য অধিকার আইনে করা আবেদনগুলোর জবাব দিচ্ছেন দেরিতে।

এমন নতুন ও পুরোনো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও রিপোর্টাররা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে যাচ্ছেন সরকারি কেনাকাটা-সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

কীভাবে এসব প্রতিবেদন তৈরি করা যায়, তার কিছু পরামর্শ থাকছে জিআইজেএন-এর এই রিসোর্স গাইডে। সঙ্গে থাকছে নানা উদাহরণ। এখান থেকে জানা যাবে: দুর্নীতির আভাস-ইঙ্গিত কীভাবে পাবেন এবং কেনাকাটা-সংক্রান্ত প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের তথ্য কোথায় মিলবে? জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায় তে বটেই, আমরা এখানে তুলে ধরেছি বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অর্থের হিসাব চিহ্নিত করার উপায়ও।

সরকারি চুক্তি ও কেনাকাটা নিয়ে কাজ করার মৌলিক পরামর্শগুলো সংক্ষেপে সংকলন করা হয়েছে এই এক পৃষ্ঠার টিপশিটে।
সূচিপত্র
তথ্য কোথায় খুঁজবেন

আগেই সতর্ক হবেন যেসব চিহ্ন দেখে

কাজ কে পেল ঘোষণা হলে কী খুঁজবেন

ঠিকাদার ও সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুসন্ধান

কাজের মান যাচাই

প্রকিউরমেন্ট ডেটা ব্যবহার

আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থসাহায্য অনুসন্ধান

আরও তথ্যসূত্র

পরামর্শ কোথায় পাবেন

এই গাইডের জন্য জিআইজেএন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে ওপেন কন্ট্রাক্টিং পার্টনারশিপের কর্মীদের কাছে। তাঁদের সাপ্তাহিক নিউজলেটারে এসব চুক্তি নিয়ে অনুসন্ধানের নানা উপকরণ থাকে।
মৌলিক, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ
প্রথমেই আপনাকে নিজ দেশের সরকারি ক্রয়কাঠামো বুঝে নিতে হবে এবং জানতে হবে দুর্নীতি, দরপত্র জালিয়াতি, গোপনীয়তা ও প্রতারণার বিষয়গুলো খুঁজে পেতে কোন জায়গাগুলোতে নজর দিতে হবে।

এখানে থাকছে একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

সাধারণত একটি ক্রয়‍চুক্তির প্রক্রিয়ায় পাঁচটি পর্যায় থাকে:

পরিকল্পনা – যখন কী কী জিনিস কিনতে হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আলোচনা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই পরিকল্পনার পর্যায়টি খুব তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কখনো কখনো এসব সিদ্ধান্তের কথা জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত করা হচ্ছে না এবং কোনো নথিপত্রও থাকছে না।
টেন্ডারিং – এই পর্যায়ে সরকার কোট, বিড বা প্রস্তাব আহ্বান করে। (কখনো কখনো এটিকে অন্য নামেও ডাকা হয়। যেমন রিকোয়েস্ট ফর প্রোপোজাল, অ্যাপ্রোচ টু মার্কেট ও সলিসিটেশন)
কাজ দেওয়া – এই পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, চুক্তিটি কার সঙ্গে করা হবে। এটা নির্ধারিত হয় হাই বিডার দেখে বা অন্য কোনো উপায়ে।
চুক্তি – এই পর্যায়ে চুক্তির নানা শর্ত বিস্তারিত লেখা হয়। এটি আইনি সমঝোতার বিষয়। কখনো কখনো, এসব চুক্তিপত্রের সংশোধন ও সংযোজনের জায়গাগুলোতে পাওয়া যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য।
বাস্তবায়ন – কাজটি কি শেষ হয়েছে?

ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: জেনে নিন কীভাবে পিচ করবেন

English

একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক কোনো গণমাধ্যমের কাছে একটি সাধারণ রিপোর্ট যেভাবে প্রস্তাব করেন, একই পদ্ধতিতে অনুসন্ধানী রিপোর্টও প্রস্তাব করতে হয়। কিন্তু অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের বেলায় প্রস্তাব বিক্রি করা একটু কঠিন। কারণ, এ ধরনের ওয়াচডগ সাংবাদিকতায় আগ্রহী হওয়ার মতো গণমাধ্যমের সংখ্যা খুব বেশি নয়।

অনিশ্চিত ও বিতর্কিত ফল আসতে পারে, এমন অনুসন্ধান পিচ বা প্রস্তাব করার বিষয়টি আরও চ্যালেঞ্জিং। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের দরকার হয়।

সমস্যা আরও আছে। যে টাকা পাওয়া যায়, তাতে দীর্ঘ সময় ধরে চলা অনুসন্ধানের বাড়তি খরচ মেটানোও অনেক সময় দায় হয়ে পড়ে। অনুসন্ধানটিতে আপনার ঠিক কতটা সময় ও শ্রম দিতে হবে, তা অনুমান করাও খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে লাভ-খরচের খসড়া হিসাব করতে গেলেও সেটি আন্দাজে ঢিল ছোড়া ছাড়া আর কিছু হয় না।

সবশেষে, এই কাজে ব্যক্তিগত ঝুঁকি থাকে। বিতর্কিত ইস্যুতে কাজ করতে গিয়ে ফ্রিল্যান্সাররা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন; পড়তে পারেন আইনি ও শারীরিক ঝুঁকির মুখে; যা হয়তো সংবাদমাধ্যমগুলোর ধারণার বাইরে।

অনুসন্ধানটিতে আপনার ঠিক কতটা সময় ও শ্রম দিতে হবে, তা অনুমান করাও খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে লাভ-খরচের খসড়া হিসাব করতে গেলেও সেটি আন্দাজে ঢিল ছোড়া ছাড়া আর কিছু হয় না।এত কিছুর পরেও অনেকেই কাজ করছেন ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে। কারণ, এই কাজে স্বাধীনতা আছে। কোন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করবেন, কোন বিষয় নিয়ে কাজ করবেন—সবকিছুই তিনি নিজেই বেছে নিতে পারেন। কেউ কেউ সম্পাদক ও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কেউ কেউ বাড়তি আয়ের জন্য এর পাশাপাশি আরও নানা কাজ করেন। নিজেদের পরিচিতি ও আয় বাড়িয়ে নেন লেখক, শিক্ষক ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শের ভিত্তিতে এই লেখায় জিআইজেএন তুলে ধরেছে: একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক হিসেবে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের কাছে কীভাবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের প্রস্তাব জমা দেবেন এবং কাজ পাওয়ার পথে মূল বাধাগুলো কীভাবে মোকাবিলা করবেন।

আমরা এখানে যে বিষয়গুলোতে নজর দিয়েছি:

সম্ভাব্য সংবাদমাধ্যম খুঁজে বের করা
কার্যকরভাবে প্রতিবেদন পিচ করা
চিন্তা ও আইডিয়ার সুরক্ষা
বাজেট তৈরি করা

এই গাইডের বাইরে কোভিড-১৯ মহামারির সময় ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বিশেষ পরামর্শ ও কৌশল শিরোনামে আরেকটি লেখা তৈরি করেছে জিআইজেএন।
সম্ভাব্য সংবাদমাধ্যম খুঁজে বের করা
কোনো সংবাদমাধ্যম একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ওপর তখনই বাজি ধরে, যখন তাদের গভীর বিশ্বাস ও আস্থা থাকে; যে কারণে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দেয়।

শুরু করুন—অনুসন্ধানী নয়, এমন প্রতিবেদন দিয়ে। এটি সম্পর্ক গড়ে তোলার ভালো উপায়। হুট করে একটি সংবেদনশীল প্রতিবেদন নিয়ে গিয়ে সেটি বিক্রির চেষ্টা করা কঠিন হতে পারে।

এ ক্ষেত্রে সাধারণ পরামর্শ হলো: বিভিন্ন সেমিনার বা সম্মেলনে গিয়ে সমমনা সম্পাদকদের সঙ্গে আলাপ করা।

গবেষণা করে নিন

আপনি যাদের কাছে আপনার প্রতিবেদন প্রস্তাব করতে পারেন, এমন সম্ভাব্য সংবাদমাধ্যমের ওপর গবেষণা করুন। সাধারণত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, শুধু এমন সংবাদমাধ্যমই নয়, বরং আপনার অনুসন্ধানের বিষয় নিয়ে আগ্রহ আছে, এমন প্রতিষ্ঠানেরও খোঁজ করুন।

সম্ভাবনা আছে, এমন মনে হলে এসব বিষয়ে আরও খোঁজখবর করুন:

দেখুন, আপনার বিষয়টি নিয়ে আগে কী কী প্রকাশিত হয়েছে।
তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানুন।
তাদের মিশন সম্পর্কে আরও খুঁটিয়ে দেখুন।
শীর্ষ সম্পাদকদের ব্যাপারে খোঁজখবর করুন।
খোঁজ নিন, পরিচিত এমন কেউ আছে কি না, যার সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত যোগাযোগ আছে, এবং যিনি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন।

২০১৯ সালের জিআইজেএন সম্মেলনে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে একাধিক সেশন ছিল। সেই আলোচনা নিয়ে একটি প্রবন্ধে রোয়ান ফিলিপ লিখেছিলেন, “সংবাদ সংগ্রহ প্রক্রিয়ার প্রতিটি অংশের যথাযথ মূল্য” বের করে আনার জন্য আপনাকে বিষয়টি একাধিক মাধ্যমে বিক্রি করার কথা চিন্তা করতে হবে।

অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রোয়ান লিখেছেন, “বিকশিত হতে গেলে বা এমনকি টিকে থাকতে গেলেও প্রতিটি রিপোর্টিং কর্মকাণ্ড একাধিক জায়গায় বিক্রি করাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলতে হবে ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের।”

এই সেশনের আলোচকেরা বলেছিলেন, কীভাবে আয় বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সাংবাদিকেরা একই অনুসন্ধানকে প্রিন্ট, ভিজ্যুয়াল ও অডিওসহ নানা রকম ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে উপস্থাপনের কথা চিন্তা করতে পারেন।
এবার প্রস্তাব তৈরি করুন

প্রতিবেদন কোন জায়গায় পাঠাবেন, তা ঠিক করে ফেলার পর আপনাকে প্রস্তাব তৈরি করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের সাধারণ পরামর্শগুলো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিক্রির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। প্রতিবেদনের প্রস্তাব হওয়া উচিত যথাযথ, বলিষ্ঠ ও আকর্ষণীয়।

“সম্পাদককে আপনার বোঝাতে হবে যে, কাজটির জন্য আপনিই সঠিক ব্যক্তি। আসলে তাকে বোঝাতে হবে: এই প্রতিবেদন একমাত্র আপনিই করতে পারেন।” — সাংবাদিক কাতালিনা লোবো গেরেরো“সম্পাদককে আপনার বোঝাতে হবে যে, কাজটির জন্য আপনিই সঠিক ব্যক্তি। আসলে তাকে বোঝাতে হবে: এই প্রতিবেদন একমাত্র আপনিই করতে পারেন। কারণ, বিষয়টির ইতিহাস, প্রেক্ষাপট, সোর্স, অভিজ্ঞতা ইত্যাদি সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা আছে। বা আপনার কাছে ফাঁস হওয়া এমন কিছু নথি আছে, যা অন্য কারও কাছে নেই,” বলেছেন কলম্বিয়ার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও জিআইজেএন-এর সাবেক সম্পাদক কাতালিনা লোবো গেরেরো।

সম্পাদকদের পরামর্শ

২০১৭ সালের এক সাক্ষাৎকারে এই পরামর্শগুলো দিয়েছিলেন আটলান্টিকের জাতীয় সংবাদ বিভাগের সম্পাদক স্কট স্টোসেল:

কিছু প্রি-রিপোর্টিং করুন। আপনার প্রতিবেদনের পিচ বা প্রস্তাবটি যেন সুবিবেচনাপ্রসূত হয়, তা নিশ্চিত করুন।
বিস্তারিত বর্ণনা দিন। এখানে কোন কোন চরিত্র সম্পৃক্ত, পরিণাম কী হতে পারে এবং পাঠকের জন্য বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ, তা তুলে ধরুন।
আপনার লেখনীর দক্ষতা দেখান। আপনার এই প্রস্তাবটিই যেন একটি গল্প বলে দেয় এবং এখানেই যেন প্রতিবেদনের দৃষ্টিভঙ্গিটি ফুটে ওঠে।
কিছুটা নাটকীয় ভাব রাখুন। প্রস্তাবটিতেও সেই নাটকীয়তার কেন্দ্রে চলে যান।
সংবাদের গুরুত্ব বুঝুন। সমসাময়িক সংবাদের সঙ্গে এটির সংযোগ যত স্পষ্ট হবে, তত ভালো।
সময়োপযোগী করে তুলুন।

কনরাড অ্যাডেনাওয়ার স্টিফটুং-এর গ্লোবাল মিডিয়া প্রোগ্রাম প্রণীত, ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ম্যানুয়াল অনুযায়ী, একটি প্রস্তাবের মধ্যে থাকা উচিত:

প্রতিবেদনের ধারণা
প্রতিবেদনটি কেন এই নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যম বা তাদের পাঠকদের জন্য যথার্থ
কাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও পদ্ধতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
সময় পরিকল্পনা
বাজেট

প্রতিবেদন প্রস্তাব লেখা নিয়ে একটি টিপশিট তৈরি করেছিলেন টাইপ ইনভেস্টিগেশনের (পূর্বের ইনভেস্টিগেটিভ ফান্ড) নির্বাহী সম্পাদক সারাহ ব্লুস্টেইন। সেখানে তিনি জোর দেন প্রস্তাবটিকে “ছোট রাখা”, “সুনির্দিষ্ট হওয়া” এবং “প্রতিবেদনটি সামনে নিয়ে যাওয়ার জন্য সম্পাদকদের যা যা প্রয়োজন, তা সরবরাহ করার” দিকে। তিনি সাধারণত চার অনুচ্ছেদের একটি প্রতিবেদন প্রস্তাব তৈরির পরামর্শ দেন, যেখানে এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থাকতে হবে:

প্রতিবেদনটি কী নিয়ে।
কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং কেন এটি এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি কী কী খুঁজে পেয়েছেন।
কেন একমাত্র আপনারই এই বিষয়টি নিয়ে লেখা উচিত।

অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি ম্যাগাজিন, মাদার জোনসও তাদের ফ্রিল্যান্স লেখক গাইডলাইনে এই বিষয়গুলোর দিকে জোর দিয়েছে:

“অল্প কয়েকটি অনুচ্ছদের মধ্যে আমাদের বলুন: আপনি কোন বিষয়টি কাভার করার পরিকল্পনা করছেন, কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় এবং কীভাবে আপনি এটি রিপোর্ট করবেন। এখানে আপনার কাজের দৃষ্টিভঙ্গি, পদ্ধতি, প্রকাশভঙ্গি ইত্যাদি উঠে আসবে। এবং আপনাকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে: এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য আপনার কী কী নির্দিষ্ট যোগ্যতা আছে? সোর্সের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া কেমন?

দেশ ধরে ধরে বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ অর্থায়ন ট্র্যাক করবেন যেভাবে

English

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি দেশে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই অর্থ কীভাবে খরচ করা হচ্ছে? কাদের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে?