ওমায়া সোসা পুয়ের্তো রিকোর সেন্ট্রো ডি পেরিওডিসমো ইনভেস্টিগেটিভো (সিপিআই বা ইংরেজিতে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম) এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-পরিচালক। পুয়ের্তো রিকোসহ অন্যান্য ক্যারিবীয় দ্বীপে গণমাধ্যমের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রকল্প গড়ে তোলা ও পরিচালনায় তাঁর অভিজ্ঞতা ২০ বছরের। এই যাত্রায় তিনি অনেক কিছুই দেখেছেন, যার মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মুখোশ উন্মোচনের পর সহকর্মীদের হুমকির শিকার হওয়া, এবং এমনকি তাদের বসবাসের ভিসা বাতিল হওয়ার মত ঘটনাও রয়েছে। প্যারাডাইস লস্ট নামের ধারাবাহিকে সম্পাদক হিসেবে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গত নভেম্বরে তিনি লাতিন আমেরিকার অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সম্মেলন কলপিনে একটি পুরস্কার পেয়েছেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কথা নিয়ে জিআইজেএনের চলমান ধারাবাহিকের একটি পর্ব হলো এই সাক্ষাৎকার।
১. আপনার সমস্ত অনুসন্ধানী কাজের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দের কোনটি এবং কেন?
ওমায়া সোসা: হারিকেন মারিয়া ইজ ডেড; কারণ সরকারের পক্ষ থেকে দুর্যোগকালীন ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা সত্ত্বেও আমরা তাদের অবহেলায় পুয়ের্তো রিকোর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনা প্রমাণ করতে পেরেছি।
২. পুয়ের্তো রিকোতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?
ও.সো.: প্রশ্নের উত্তর দিতে সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষের অনীহা। ভৌগলিক আকারের কারণে দ্বীপটিতে অনুসন্ধান করা কঠিন, কারণ সবাই একে অন্যকে চেনে এবং পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত।
৩. অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে আপনার সামলানো সবচেয়ে বড় বাধা বা চ্যালেঞ্জ কী ছিল- সেন্সরশিপ, ব্যক্তিগত বিপদ, সোর্সের খোঁজ পাওয়া, বৈষম্য?
ও.সো.: দ্বীপটিতে নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার কর্মস্থল গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি সেন্সরশিপের শিকার হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় শত্রুতা তো আছেই। আমি নজরদারির ঘটনাও বুঝতে পেরেছি। পুয়ের্তো রিকোয় তারা সাংবাদিকদের হত্যা করে না বটে, তবে একবার আমার বাড়িতে ঢুকেছিল। আরেকবার আমি একটি ড্রোন খুঁজে পেয়েছিলাম। বিশেষ করে বর্তমানে সাবেক গভর্নর রিকার্ডো রোসেলোকে নিয়ে অনুসন্ধানের সময়।
৪. সাক্ষাৎকার নেয়ার ক্ষেত্রে আপনার সেরা কৌশল কী?
ও.সো.: অনেক সৃজনশীলতা এবং ফোকাস না হারানো।
৫. আপনার অনুসন্ধানে ব্যবহৃত প্রিয় রিপোর্টিং টুল, ডেটাবেস বা অ্যাপ কোনটি?
ও.সো.: সহজ শোনালেও এক্সেল, কারণ এটিই সবকিছুর ভিত্তি।
৬. আপনার পেশাজীবনে এখন পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে ভালো পরামর্শ কী ছিল আর সম্ভাবনাময় কোনো অনুসন্ধানী সাংবাদিকের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ও.সো.: সম্ভবত আমার পাওয়া সেরা পরামর্শ হলো, হাল না ছাড়া। যে তথ্য আপনি খুঁজছেন, সবসময় তা পাওয়ার কোনো না কোনো উপায় আপনি পাবেন। আপনার যদি মনে হয় সেখানে একটি গল্প আছে, হয়ত সত্যিই আছে। আর অর্থের গতিপথ অনুসরণ করুন। সবকিছুই অর্থসংশ্লিষ্ট।
৭. একজন সাংবাদিকের নাম বলুন, যার প্রতি আপনার মুগ্ধতা কাজ করে এবং কেন?
ও.সো.: আমি সত্যিই লাতিন আমেরিকার অনেক নারী সাংবাদিকের প্রশংসা করি: মেরিনা ওয়াকার গেভারা, জিয়ানিনা সেগনিনি, লিসে ওলসেন। আমি তাঁদের দৃঢ়তা, সাহস ও নৈপুণ্য এবং বড় ধরনের অনুসন্ধান পরিচালনা সক্ষমতার প্রশংসা করি।
৮. আপনার সবচেয়ে বড় ভুল কী ছিল আর এই ভুল থেকে আপনি কী শিখেছেন?
ও.সো.: আমার করা একটি অনুসন্ধানী কাজে, একটি প্রতিক্রিয়া [স্টোরিতে উদ্ধৃত এক ব্যক্তির] বাদ দিয়ে তারপর ছাপানোর জন্য সম্পাদকের কাছে দিয়েছিলাম। কারণ সম্পাদক ঐ ব্যক্তিকে পছন্দ করতেন না। স্টোরির অখণ্ডতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমার এটি নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
৯. আপনি কাজজনিত ক্লান্তি কীভাবে সামলান?
ও.সো.: বছরের পর বছর ধরে আমি শিখেছি, সবকিছুই সাংবাদিকতা নয়। আমাকে নিজের জীবনের অন্যান্য বিষয়ের জন্য জায়গা তৈরি করতে হবে। আমি প্রায়ই আমার মোবাইল ও কম্পিউটার বন্ধ করে দেই। আমি বিভিন্ন কাজে ভারসাম্য রাখি আর আমি নিজের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করি।
১০. অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কোন বিষয়টি আপনার কাছে হতাশাজনক বলে মনে হয়, অথবা সামনে কী বদলাবে বলে আশা করেন?
ও.সো.: নিজেদের কাজগুলোকে আমাদের অবশ্যই মানুষের কাছে আরও বেশি সহজলভ্য করে তুলতে হবে আর আমরা যা চাই, তাই নয়, বরং মানুষ যা চায়, তা নিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। কেবল অভিজাতদের নয়, বরং সাধারণ মানুষের কাছে যা কিছু অর্থবহ, তা নিয়ে অনুসন্ধানে সক্ষমতা অর্জন করুন। সহজ ও প্রাসঙ্গিক ভাষায় কথা বলুন।
আরও পড়ুন
আমি যা শিখেছি: দ্য ক্যারাভানের বিনোদ কে. যোশির শিক্ষা ও পরামর্শ
লেসনস লার্নড ফ্রম ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট হায়াত আবদু, ফ্রম দ্য কোমোরোস
এডিটরস পিক: ২০২২ বেস্ট ইনভেস্টিগেটিভ স্টোরিজ ফ্রম লাতিন আমেরিকা
আন্দ্রেয়া আরজাবা একজন সাংবাদিক এবং জিআইজেএনের স্প্যানিশ সম্পাদক। প্রতিবেদক ও গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে তিনি লাতিন আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লাতিন জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা স্টোরিতে তুলে ধরেছেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশনের একজন ফেলো এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ইয়ং জার্নালিস্টস প্রোগ্রামের একজন।