আধুনিক দাসপ্রথা, মানব পাচার ও শ্রম নিপীড়ন নিয়ে গার্ডিয়ানে একটি রিপোর্টিং সিরিজ সম্পাদনা করেছেন অ্যানি কেলি। তাঁর মতে, “মানব পাচার অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা আসলে অপরাধ অনুসন্ধান করছি।” “আপনি অপরাধ জগৎ নিয়ে কাজ করছেন, যা আপনার নিজের ও আপনার স্থানীয় সোর্সের বা আপনার যে কোনো অংশীদারের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।”
জার্নালিজমফান্ড ডট ইউ আয়োজিত ওয়েবিনারে, কেলির সঙ্গে সহ-বক্তা হিসেবে ছিলেন সমুদ্রে কর্মী শোষণ ও পরিবেশগত আইন লঙ্ঘন নিয়ে রিপোর্টিং করা অলাভজনক সংগঠন আউট ল ওশান প্রোজেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান আরবিনা। বিশ্বজুড়ে মানব পাচারের ঘটনা নথিভুক্ত করতে গিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং তাঁরা যেসব নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন, সেগুলোই এই আলোচনায় তুলে ধরেছেন।
তাঁদের দুজনেরই পণ্যের সরবরাহ চেইনে শ্রম নিপীড়ন, আন্তঃসীমান্ত আধুনিক দাসপ্রথা এবং মানব পাচার নিয়ে সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার অভিজ্ঞতা আছে এবং শিল্পের বিশ্বায়নের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো প্রায়ই তাঁদের অনুসন্ধানে উঠে আসে।
কেলি বলেন, “সবাই যা ব্যবহার করি, ভোগ করি, পরিধান করি – আমরা মূলত সেই বিষয়গুলোতে নজর দিতে এবং সেই সাপ্লাই চেইনের নিম্ন স্তরে থাকা মানুষগুলোর গল্প তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি, আর এই ব্যবস্থায় কীভাবে শ্রম নিপীড়ন ও মানব পাচারের প্রসার ঘটেছে তা উন্মোচন করতে চেয়েছি।”
এ ধরনের গভীর-অনুসন্ধানে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে; তাই সাংবাদিক ও তাঁদের সোর্সের ঝুঁকি কমাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সমন্বয় প্রয়োজন। বিস্তর পরিকল্পনার পরও এই বিষয় নিয়ে কাজ করা বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এমন রিপোর্টিংয়ের পরিসরটাই অনিশ্চয়তায় পরিপূর্ণ।
আরবিনা বলেন, “বাস্তবতা হল, আপনি যখন মাঠে নামেন, তখন আপনার কেমন সোর্স প্রয়োজন তার ভিত্তিতেই সবকিছু বদলে যায়।” তবুও, তাঁর দল অনুসন্ধানী রিপোর্টিং অভিযান পরিকল্পনায় কয়েক মাস ব্যয় করে — যা দলটির নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
লিবিয়া থেকে ইতালির ল্যাম্পেডুসার হয়ে সাব-সাহারান অভিবাসীদের যাত্রা নিয়ে রিপোর্ট করার সময় আরবিনার দল যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিল, তিনি তা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তাঁর দেয়া পরামর্শগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- কয়েকটি পরিপূরক দল তৈরি করুন: দ্য ওশান আউট ল প্রোজেক্ট অনুসন্ধানে একটি “অন-ল্যান্ড” দল লিবিয়ার অভিবাসী নির্যাতন কেন্দ্র ও সেই কেন্দ্রগুলোর একটিতে একজন অভিবাসীর মৃত্যু নিয়ে অনুসন্ধান করেছিল এবং আরেকটি “অফশোর” দল ডক্টরস উইদাউট বর্ডার নামের একটি চিকিৎসা সহায়তা সংস্থার ভাড়া করা জাহাজে পাঁচ সপ্তাহ কাটিয়েছিল।
- অভিযানের রুট ও পালানোর কৌশল পরিকল্পনা করে রাখুন: আরবিনা বলেছেন যে অভিযান শুরুর আগের সভায় প্রতিদিনের যাত্রাপথ নির্ধারণ এবং প্রতিটি পদক্ষেপের ঝুঁকি মূল্যায়নে মনোযোগ দেয়া হয়। একবার নিরাপত্তা মূল্যায়ন হয়ে গেলে, দলটি আটক বা গ্রেফতারের ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবস্থা কী হতে পারে, তা ঠিক করে (জরুরি যোগাযোগ, দেশে ও বিদেশে সহায়ক সোর্স)।
- প্রতিদিন খোঁজ নিন: গোপন দলের নীতিমালাতেই ছিল যে তারা প্রতি ছয় থেকে ১২ ঘন্টা পর পর স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের দলের সঙ্গে কথা বলে তাদের খোঁজ খবর নেবেন। সেই দলে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা কর্মী ছিলেন এবং অফশোর দলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তাদের দু’জন সবসময় অনলাইনে থাকতেন।
- জরুরী অবস্থার জন্য একটি নথি তৈরি করুন: আরবিনা ও তাঁর দল সময় নিয়ে একটি “ওয়ান-স্টপ-শপ নথি হালনাগাদ করে গেছেন যেখানে আপনি যার যার সাথে যোগাযোগ করতে চান তাদের প্রত্যেকের ফোন নম্বর এবং কোন ক্রমে, কোন পরিস্থিতিতে, এবং কে কোন বিষয়ে ভালো – তার সবকিছু তাতে আছে,” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন। এই তালিকায় হোয়াইট হাউস, কংগ্রেসের কর্মকর্তা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর আছে। এছাড়াও রেড ক্রস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো নির্ভরযোগ্য সংস্থাগুলোর আঞ্চলিক ও দেশভিত্তিক যোগাযোগের নম্বরও আছে।
- প্রত্যেকের — এবং সবকিছুর — বীমা নীতিমালা জানুন: আরবিনা পরামর্শ দেন যে রিপোর্টারদের নিজের জন্য তো বটেই, সঙ্গে থাকা ব্যয়বহুল সরঞ্জামগুলোর বীমা সম্পর্কেও জানাশোনা থাকা জরুরি। নিশ্চিত করুন যে আপনি উপযুক্ত চিকিৎসার খরচ বহনের নিশ্চয়তা ও সরঞ্জামের সুরক্ষা পাবেন এবং কীভাবে দাবি করতে হয় তা জানেন।
আরবিনা বলেন, আপনি যত ভালো প্রস্তুতিই নিন না কেন, মনে রাখবেন, মানব পাচার অনুসন্ধানে ঝুঁকি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে: “আপনি যত দুর্গম জায়গায় যাবেন, এই [সুরক্ষা] তালিকা বজায় রাখা তত কঠিন।”
আউট ল ওশান প্রোজেক্টের বেশিরভাগ রিপোর্টিং সমুদ্রে হওয়ায় এর পরিচালন প্রোটোকলগুলো ক্রমাগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, যেমন (নেটওয়ার্ক) সংযোগের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ে যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হয়।
রিপোর্টিং চলাকালে নিরাপত্তা
শুরু থেকেই চেষ্টা করুন যেন আপনার ওপর নজর না পড়ে, তবে আপনার সাংবাদিক পরিচয় জটিল পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে পারে: “সম্ভব হলে পরিচয়ের প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখুন,” কেলি পরামর্শ দেন।
২০১৩ সালে, গার্ডিয়ানের রিপোর্টার পিট প্যাটিসন ২০২২ বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে কাতারের জোরপূর্বক শ্রম নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন। কেলি ও তাঁর দল কাতারে থাকাকালীন প্যাটিসনকে এবং জবরদস্তিমূলক কাজে নিয়োজিত ও অভিবাসন শিবিরে বসবাসরত শারীরিকভাবে দুর্বল সোর্সদের সুরক্ষায় সহায়তা দিতে কাজ করেছিলেন৷
স্টোরিটি এখনো ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করা না হলেও প্যাটিসন স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধানের শুরুতে “আপেক্ষিক” সুরক্ষা পেয়েছিলেন। সরকারের অনাকাঙ্ক্ষিত নজর এড়াতে তিনি পর্যটক হিসেবে নিজের পাসপোর্ট নিয়ে সেই দেশে প্রবেশ করেছেন।
কেলি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, মূল কৌশল ছিল নিখুঁতভাবে, এবং যতটা সম্ভব বেনামে কাজ করা। এমন পরিস্থিতিতে কাজ করা রিপোর্টারদের জন্য তিনি নিচের পরামর্শগুলো দিয়েছেন:
- দেরি করবেন না: দ্রুত স্থান বদলের মাধ্যমে রিপোর্টাররা সনাক্ত হওয়া এড়াতে পারেন। কাতারের এক ঘটনায়, প্রতিবেদক নিজের ওপর নজরদারি এড়াতে এক জায়গায় ৪৫ মিনিটের বেশি সময় কাটাননি।
- রাস্তার ব্যবহারযোগ্যতা মূল্যায়ন করুন: প্যাটিসনের অভিযান শুরুর আগে ঝুঁকি মূল্যায়নে, দলটি নিশ্চিত করেছে যে তিনি যে শ্রমিক শিবিরগুলোতে যাবেন সেগুলোর সড়কপথ ব্যবহারযোগ্য; এবং এই প্রতিবেদক যখনই ক্যাম্পের দিকে রওনা হবেন, কাতারে ও সেই দেশের বাইরে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তির কাছে সতর্ক বার্তা পৌঁছে যাবে।
- ঘনঘন অবস্থান বদলান, বিভিন্ন সময়ে দেখা করুন: কেলির পরামর্শ, রিপোর্টাররা একই হোটেলে একবারে দু’দিনের বেশি যেন না থাকেন এবং বিভিন্ন স্থানে ও বিভিন্ন সময়ে যেন সাক্ষাতের সময়সূচি ঠিক করেন।
- বার্নার ফোন ব্যবহার করুন: ঘন ঘন সিম কার্ড বদলানো আপনার যোগাযোগ সুরক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
প্যাটিসন তাঁর সম্পাদক কেলির সঙ্গে দিনে দু’বারও দেখা করেছেন। অভিযানের আগে, কাতারে থাকাকালীন প্যাটিসনের জন্য ভালো যোগাযোগ নিশ্চিত করতে দলটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
রিপোটিংয়ের সময় নিরাপদ থাকার এই বাড়তি পরামর্শগুলো দিয়েছেন আরবিনা:
- শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং যন্ত্র যুক্ত করুন: সামর্থ্য থাকলে একটি স্যাটেলাইট লোকেশন ডিভাইস কেনার কথা ভাবুন। আউট ল ওশান প্রোজেক্টের সব কর্মীরা নিজেদের বেল্টের সঙ্গে ছোট গারমিন ট্র্যাকিং ডিভাইস যুক্ত করেন। এগুলোর একটি এসওএস কোড আছে এবং স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।
- সবসময় সঙ্গে রাখার মত প্রয়োজনীয় জিনিস: অফশোর টিমের রিপোর্টারদের কাছে সবসময় নগদ স্থানীয় মুদ্রা, পাসপোর্ট, পরিচয়পত্র এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত লেমিনেটেড কার্ডের কপি থাকে। এই কার্ডগুলোতে স্বাস্থ্যগত জরুরী অবস্থার জন্য যেকোনো অ্যালার্জি, ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে। প্রতিবেদকেরা এগুলো তাদের জুতোর তলায় ও গোপন ব্যাকপ্যাকের পকেটে লুকিয়ে রাখেন। রিপোর্টাররা দলচ্যুত হলে বা তাঁদের জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত হলে এই কিটটি গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রতিদিনের লক্ষ্য ও নিরাপত্তা যাচাই করুন: প্রতিদিন খোঁজ নেওয়া এবং পরবর্তী দিনের জন্য লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করা জরুরী। অভিযানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দলটি পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় এবং প্রয়োজন অনুসারে যাত্রাপথে পরিবর্তন আনে। তাঁরা সক্রিয়ভাবে যাচাই করে দেখে যে মাঠপর্যায়ের প্রত্যেকে প্রতিদিন এই পরিকল্পনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে কি না, প্রয়োজনে কোনো নির্দিষ্ট দিনে তাঁদেরকে দলের বাইরে থাকার সুযোগ দেন।
নিজের সহজাত প্রবৃত্তিতে আস্থা রাখুন
বিপদের উৎস সনাক্ত করতে না পারলেও, অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে বা নিজের সুরক্ষার প্রশ্নে বরাবরই মন যা বলে তাতেই সাড়া দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন দুই সাংবাদিক।
তাঁরা সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় রিপোর্টারদের এই মৌলিক নিয়মগুলো অনুসরণের পরামর্শ দেন:
- রাতে সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক করা এবং বার বা অ্যালকোহল পান করা হয়, এমন পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
- ভেতরে যান, বেরিয়ে আসুন। একই স্থানে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটাবেন না। কোনো স্থানে যত বেশি সময় কাটাবেন, আপনার উপস্থিতিতে অন্যের নজর ও হস্তক্ষেপের ঝুঁকি তত বেশি।
- মানবপাচারের ভুক্তভোগীদের সঙ্গে তাঁদের বাড়িতে বা কর্মস্থলে দেখা করবেন না। কেলি ও আরবিনা ভুক্তভোগীদের দৈনন্দিন পরিবেশ থেকে দূরে বাস স্টপ, রেস্তোরাঁ বা অন্যান্য নিরাপদ স্থানে কথা বলার পরামর্শ দেন।
- একটি ছদ্ম কাজের আড়াল নিন। সমুদ্রে রিপোর্টিংয়ের সময়, আরবিনা কোনো সোর্সের সঙ্গে কথা বলার সময় জাহাজেরই কোনো কাজে জড়িত হওয়ার পরামর্শ দেন, যেন আশেপাশের মানুষের তেমন একটা চোখে না পড়ে যে আপনি সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, “এই অদ্ভুত কৌশল সাক্ষাৎকারের বিষয়টি আড়াল করতে সক্ষম যা পরবর্তীতে কাজে আসতে পারে।” কেলি আরো যোগ করে বলেন, কাতারে একজন প্রতিবেদক তাঁর রিপোর্টিং আড়াল করতে একটি ক্যারোসেলে ঘোড়ায় চড়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।
আরবিনা সোর্সের ভালোর জন্য এবং সেইসঙ্গে আপনার সাংবাদিকতার স্বার্থে সোর্সকে চোখে চোখে রাখার পরামর্শ দেন। কোনো সোর্স তাঁদের ফোন নম্বর দিতে না চাইলে জানতে চান যে আপনি তাঁদের দেশের কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন কিনা, যিনি আপনার ও সোর্স উভয়ের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারেন।
নিজ দেশে অনুসন্ধান
নিজ দেশে মানবপাচারের অনুসন্ধান করা একটি বাড়তি চ্যালেঞ্জ সামনে আনে: স্টোরি প্রকাশের পর একজন বিদেশী সাংবাদিকের মত আপনার সামনে দেশ ছাড়ার সুযোগ থাকে না।
“নিশ্চিত করুন যে এমন কিছু মানুষের হাত আপনার সঙ্গে আছে, যারা আপনাকে ও আপনার স্টোরিকে সমর্থন করছেন, যা গুরুত্বপূর্ণ,” কেলি বলেছিলেন। তিনি কোনো বড় বা আন্তর্জাতিক সংস্থার অংশীদার হওয়ার পরামর্শ দেন, যাঁরা বিপদে আপনার পাশে দাঁড়াতে পারেন৷
সর্বসাধারণের মাঝে আপনার কাজের পরিচিতি বাড়াতে সামাজিক মাধ্যমে আপনার উপস্থিতি বাড়ান, যা কাজে আসতে পারে।
“যেখানে প্যারাসুটিস্ট রিপোর্টারদের পালিয়ে যাওয়ার পরিষ্কার সুযোগ আছে, আমার মতে, সেখানে স্থানীয় রিপোর্টাররা দেশের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের কথা ভাবতে পারেন এবং করা উচিত,” আরবিনা পরামর্শ দেন।
অর্থাৎ পুলিশ এজেন্ট, আইনজীবী ও অন্যদের সঙ্গে একটি মানবিক সম্পর্ক আপনার দীর্ঘমেয়াদী স্টোরি অনুসন্ধানে আপনাকে রক্ষা করতে পারে।
পরিশেষে, নিরাপদে কাজ করতে আপনার দেশের আইন সম্পর্কে একটি বোঝাপড়া থাকা আবশ্যক – বিশেষ করে গণমাধ্যম ও দায়বদ্ধতা আইন।
সাংবাদিকতা নাকি অ্যাডভোকেসি? সোর্সের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা কোথায়?
প্যানেলিস্টরা উল্লেখ করেন যে কীভাবে সোর্সের প্রতি সাংবাদিকদের দায়িত্ববোধে পরিবর্তন এসেছে। স্টোরি প্রকাশের পর একজন সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এখন খুব সাধারণ বিষয়, যেটি আপনার মধ্যে রিপোর্টিং ও অ্যাডভোকেসির পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন জাগাতে পারে।
“আমার মনে হয়, ২৫ বছর আগেও স্টোরি-পরবর্তী কমিটমেন্টকে সঠিক বলে মনে করা হত না,” আরবিনা বলেছিলেন। “সাংবাদিকতা ও ‘অ্যাডভোকেসি’-এর মাঝে অনেক বড় দেয়াল ছিল। তবে এখন আমি মনে করি এটি কেবল সুবিধা-অসুবিধার বিষয় নয়, বরং প্রত্যাশিত যে, স্টোরি প্রকাশের পর – তাঁদের নাম উল্লেখ করা হোক বা না হোক – সোর্সদের নিয়ে চিন্তা করা, সাংবাদিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব।”
গার্ডিয়ান-এর অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরাও সোর্সের কাছে তাঁদের দায়বোধের মাত্রা নিরূপণে নৈতিক দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন। অনুসন্ধানের পুরো সময়টি জুড়ে সবচেয়ে ভালো কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ, এবং নির্দিষ্ট কিছু মূলনীতি অনুসরণ করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন সম্পাদক ও রিপোর্টারেরা।
“স্টোরিটি আরও বর্ণিল করে তোলার জন্য আমরা এমন কোনো ইঙ্গিত দেই না, এমন কোনো সনাক্তকরণ বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণনা করি না, যেখান থেকে সেই শ্রমিকদের সনাক্ত করা যায়,” কেলি বলেছিলেন। “যেমন, কোনো কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমরা নিশ্চিত করি যেন শ্রমিকদের সনাক্ত করা না যায়।”
কেলি বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে তাঁর দল সোর্সদের সুরক্ষা দিতে গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয় নিয়ম কানুনের বাইরেও যান। নাম-পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, এবং সোর্সের পরিবার, বাড়ি বা তাদের কর্মক্ষেত্র সংক্রান্ত যে কোনো তথ্য বাদ দেওয়া হয়।
কেলি আরও বলেন, একটি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি যে আপনি সোর্সের গল্পে সৎ থাকছেন, একইসঙ্গে তাঁদের জীবনে আপনার প্রতিবেদনের প্রভাব নিয়ে চিন্তা করাও গুরুত্বপূর্ণ। সোর্সের সুরক্ষার একটি অংশ আসে তাদের প্রত্যাশা সামলানোর জায়গা থেকে। এটি করতে পারেন আপনার অনুসন্ধানের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবগুলোর তালিকা করার মাধ্যমে, একইসঙ্গে জানাতে পারেন এই অনুসন্ধানী প্রকল্প তাদের জন্য কী বয়ে আনতে পারে।
আরবিনা পরামর্শ দেন, “তথ্য নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী এবং সম্ভাব্য কী ঘটবে বা ঘটবে না, তা নিয়ে সোর্সের সঙ্গে শুরুতেই একটি সত্যিকার অর্থে মার্জিত ও অকপট আলোচনা করুন।”
অবশেষে, কেলি জানান, সব সময় এই প্রশ্নটি করা জরুরী: “স্টোরিটি কি আপনার নিজেকে ও অন্যদের ঝুঁকিতে ফেলার যোগ্য?”
সম্পূর্ণ ওয়েবিনার দেখতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে।
আরও পড়ুন
মানব পাচার ও জোরপূর্বক শ্রম নিয়ে সাংবাদিকতার টিপস
ফ্রিল্যান্সিং: সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি
হিউম্যান ট্রাফিকিং, ফোর্সড লেবার, অ্যান্ড স্লেভারি রিপোর্টিং গাইড
স্মারান্দা তোলোসানো জিআইজেএনের অংশীদারিত্ব ও অনুবাদ বিষয়ক সম্পাদকীয় সমন্বয়ক এবং ফরাসি বংশোদ্ভূত রোমানীয় ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, কানাডা ও মরক্কোতে বসবাস করেছেন ও রিপোর্ট করেছেন। ২০১৬-১৭ সালে, তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির, ক্যালাইসের “জঙ্গল” এর শেষ দিনগুলো তুলে ধরেছিলেন।