অ্যামাজনের যে অংশ ভেনেজুয়েলায় পড়েছে, সেটি দেশটির রাজধানী থেকে বেশ দূরে। আর সেই বনাঞ্চলে, অবৈধ খননের কারণে হওয়া ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন আকাশ থেকেও দেখা যায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে এলাকাটি সুরক্ষিত এবং এখানে বেশ কিছু আদিবাসী গোষ্ঠীরও আবাস রয়েছে। কিন্তু হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মত বেসরকারি সংস্থাগুলোর মতে, সংগঠিত অপরাধী চক্রগুলো এখানকার অবৈধ খনিগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তারা রেইনফরেস্ট ধ্বংস করছে এবং এমনকি তাদের অবৈধ আয় বিদেশে পাচারের জন্য রানওয়ে-ও তৈরি করেছে। যদিও পর্যবেক্ষকদের সন্দেহ- ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অবৈধ খনন সমস্যা প্রকটতর হয়েছে, তবে সমস্যাটির প্রকৃত মাত্রা বোঝা আসলে কঠিন ছিল।
তবে স্প্যানিশ পত্রিকা এল পাইস ও জিআইজেএনের সদস্য ভেনেজুয়েলার অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান আর্মান্দোডটইনফো সমস্যাটির একটি সুনির্দিষ্ট চিত্র আঁকতে চেয়েছে এবং এর পেছনের চালিকাশক্তিগুলোকে তুলে আনার চেষ্টা করেছে। সহযোগিতামূলক এই উদ্যোগে তারা স্যাটেলাইট ডেটা, মেশিন লার্নিং ও মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টিং কৌশল ব্যবহার করেছে। দলটি ভেনেজুয়েলার দক্ষিণে বেশ কিছু বন-উজাড় হওয়া এলাকার সন্ধান পেয়েছে, যাদের মোট আয়তন ৪০ হাজার ফুটবল মাঠের সমান। তারা সেখানে তিন হাজারেরও বেশি খনি সনাক্ত করেছে, যাদের বেশিরভাগই অবৈধ এবং অনেকগুলোই গোপন রানওয়ের কাছে অবস্থিত।
কোরেদোর ফুরতিভো বা গোপন করিডোর নামের এই অনুসন্ধানে প্রায় এক বছর সময় লেগেছে। দলটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সংগঠিত অপরাধী চক্রগুলো সেসব এয়ারস্ট্রিপের কয়েকটিকে সোনা চোরাচালান ও মাদকপাচারের কাজে ব্যবহার করত।
ভেনেজুয়েলা, গত কয়েক বছরে একটি গভীর আর্থ-সামাজিক সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে, যার ফলে দেশটিতে অবৈধ কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক দুর্নীতি, দুটোই বেড়েছে। একই কারণে খাদ্য ও ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ঘাটতি, গোটা অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি, এবং বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির মত জনসেবা খাতের অবনতিও দেখা গেছে। দেশের এমন পরিস্থিতির কারণে অনুসন্ধানী প্রকল্পটি রসদ-যোগাড় ও শারীরিক নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছে। আপনি রাজধানী কারাকাস থেকে যত দূরে যাবেন, জ্বালানি তেল পাওয়া ততটাই কঠিন হয়ে পড়বে। আর জ্বালানি তেল পেতে এমন জটিলতা, সাংবাদিকদের জন্য দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো ইস্যু নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজটিকে প্রচণ্ড কঠিন করে তোলে। এছাড়া ভেনেজুয়েলার (প্রাকৃতিক খনিজ সমৃদ্ধ) এলাকা আর্কো মিনেরো ডেল অরিনোকোতে সহিংসতার বাড়তি হুমকি তো আছেই। অনেক অবৈধ খননকাজ এই এলাকায় হয়ে থাকে।
আর্মান্দোডটইনফোর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকল্প-প্রধান জোসেফ পোলিসজুক ২০০৬ সাল থেকে এই এলাকায় রিপোর্টিং করছেন। এবার তিনি ব্যতিক্রমী কিছু করতে চেয়েছেন: নিছক একটি খনি নিয়ে অনুসন্ধানের বদলে তিনি এমন কিছু দাঁড় করাতে চেয়েছেন, যা বৃহত্তর চিত্রটিকে তুলে ধরতে পারে।
ভেনেজুয়েলা থেকে “গোপন ফ্লাইটে বিপুল পরিমাণ সোনা পাচারের ঘটনা নতুন কিছু নয়” বলে জানিয়েছে দলটি। “তবে অবৈধ পণ্য আকাশপথে দেশের বাইরে নিতে চোরাচালান চক্রগুলো যে কত কৌশলগত স্থাপনা বসিয়েছে, সেটি প্রথমবারের মত একটি মানচিত্রে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে… এই যৌথ উদ্যোগ।”
ম্যাপিংয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার
প্রকল্পের শুরুটা হয়েছিল প্রথাগত সাংবাদিকতা দিয়ে: মাঠ-রিপোর্টিংয়ের কল্যাণে দলটি এমন প্রতিটি খনির একটি ডেটাবেস তৈরি করতে সক্ষম হয়, যেগুলোর অবস্থান আগে থেকেই জানা ছিল। পোলিসজুক বলেন, পরের ধাপটি ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতার ফেলো হিসেবে তিনিই প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ শুরু করেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় মেশিন লার্নিং, এআই এবং হিউম্যান-সেন্টার্ড ডিজাইন ব্যবহারে পারদর্শী সংগঠন নরওয়ের আর্থরাইজ মিডিয়ার বিশেষজ্ঞ এবং পুলিৎজার সেন্টারের রেইনফরেস্ট ইনভেস্টিগেশন্স নেটওয়ার্কের সহায়তায় একটি অ্যালগরিদম তৈরি করে দলটি। অ্যালগরিদমটি উন্মুক্ত-খনি ও গোপন রানওয়ে সদৃশ কোনো এরিয়াল ছবি দেখলেই সেটিকে চিহ্নিত করতে পারে এবং বলে দিতে পারে যে সেখানে এমন স্থাপনা আছে। এটি ব্যবহার করে দলটি দেখতে চেয়েছিল, জঙ্গলেও একইরকম প্যাটার্ন আছে কিনা।
পোলিসজুকের ভাষায়, “প্রথম দিককার দৃষ্টান্ত ও বিশেষজ্ঞদের সহায়তা কাজে লাগিয়ে আমরা অ্যালগরিদমকে একই ধরনের আরও স্পট সনাক্ত করতে শিখিয়েছি।”
কম্পিউটার-অ্যাসিসডেট বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের পিছনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো কোভিড-১৯ মহামারি। গোটা দেশ যখন লকডাউনে, মাঠপর্যায়ে রিপোর্ট করা তখন আরও কঠিন ছিল। রিপোর্টারদের আশঙ্কা ছিল, সারা দেশে স্থবিরতার সুযোগে অবৈধ খনন বেড়ে যাবে।
পোলিসজুক বলেন, “মহামারির ঠিক মাঝামাঝি সময় আমরা এই প্রকল্প করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কারণ চারপাশে তখনো সংবাদ হচ্ছিল।” আর মহামারির সময়টাতে চোরাচালান ও আধাসামরিক বাহিনীর বিস্তার-ই ছিল তাদের প্রধান উদ্বেগ।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এই অনুসন্ধানে, হাই-ডেফিনিশন স্যাটেলাইট ছবির সাহায্যে ভেনেজুয়েলার সবচেয়ে ঘন দুটি বনাঞ্চলে অবৈধভাবে সোনা উত্তোলনের হাজার হাজার স্পট সনাক্ত করা হয়। এধরনের খননে সব গাছ কেটে ফেলা হয় এবং পাম্প করে প্রচুর পানি তুলতে হয়। তারপর, সেই এলাকায় অবিশষ্ট থাকে শুধু বিষাক্ত বর্জ্যপানিতে পূর্ণ গর্ত; আর তার চারপাশে বিস্তীর্ণ, বিরাণ ভূমি।
এই প্রকল্পে যেসব গোপন খনি চিহ্নিত হয়েছে তাদের একটি ছিল গ্রান সাবানায়, যা কিনা ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি সুউচ্চ মালভূমি। এটি তেপুইস নামের একটি অঞ্চলের প্রবেশপথ। অঞ্চলটি জীববৈচিত্র্যের একটি হটস্পট। সেখানে এমন সব প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাস যা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। তারা কানাইমা ন্যাশনাল পার্কে খননের আরেকটি হটস্পট খুঁজে পান। ইউনেস্কোর এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাতটির অবস্থান। এই খনিগুলোর বেশিরভাগই এমন জায়গায় যেখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বাস; তাই বাধ্য হয়ে তাঁদেরকে অপরাধীদের পাশাপাশি থাকতে হয়, পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব সহ্য করতে হয়, এমনকি কখনো কখনো জোরপূর্বক নিয়োগের শিকার হয়ে ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নিতে হয়।
অবৈধ খনির অবস্থান ট্র্যাক করা ছাড়াও রিপোর্টিং দলটি বের করতে চেয়েছিল, এদের নেপথ্যে কারা আছেন।
তিনটি বেনামী সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধানী দলটি একটি অবৈধ সোনার খনি খুঁজে পায়। এর অবস্থান ছিল একটি আদিবাসী বসতি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে, যা ছিল রেভল্যুশনারি আর্মড ফোর্সেস অব কলম্বিয়ার (ফার্ক) অবশিষ্ট একটি অংশের নিয়ন্ত্রণে। এই গেরিলা সংগঠন একসময় সীমান্ত অঞ্চল জুড়ে একটি বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করত।
কিন্তু দেশটিতে ফার্কই একমাত্র সশস্ত্র গোষ্ঠী নয়। এই রিপোর্টিং প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্ব – দ্য হু ইজ হু অব ক্রিমিনাল কার্টেলস সাউথ অব দ্য অরিনোকো – অঞ্চলটিতে সংগঠিত অপরাধী চক্রদের উপস্থিতি চিহ্নিত করার কাজ শুরু করে। এই প্রকল্পে দুটি দলকে সনাক্ত করা হয়েছে, যারা অতীতে কলম্বিয়ায় সশস্ত্র সংঘাতে জড়িত ছিল এবং এখন ভেনেজুয়েলায় সক্রিয় রয়েছে। দল দুটির মধ্যে ঐতিহাসিক শত্রুতা থাকলেও খনি এলাকায় তাদের মধ্যে “কোন-বিরোধ-নয় চুক্তি” বজায় আছে এবং ধারণা করা হয়, তারা আদিবাসী জনগণকে জোরপূর্বক নিয়োগ দিচ্ছে। তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা – যারা খননের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি নিয়ে মাথা ঘামান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তিন বছরের সংবাদ ও সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে ও নিজস্ব ডেটাবেস তৈরির মাধ্যমে এই ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্ব তৈরি হয়েছে। পোলিসজুক বলেন, “এই প্রকল্প” হলো ডেটা সাংবাদিকতা ও “প্রথাগত, মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টিংয়ের” একটি হাইব্রিড প্রয়াস।
সংগঠিত অপরাধ বিষয়ক রিপোর্টিংয়ে নিরাপদ থাকা
ভেনেজুয়েলাভিত্তিক রিপোর্টার মারিয়া দে লস অ্যাঞ্জেলেস রামিরেজ, অবৈধ খনন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা সাংবাদিকদের অন্যতম। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এ ধরনের রিপোর্টিংয়ে নিজের নিরাপত্তাই মূল কথা। সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে, চলার সময় ও পরে নিরাপত্তা প্রোটোকলের মাধ্যমে দলটি তা নিশ্চিত করেছে।
তাদের এক সহকর্মী ভেনেজুয়েলার আরেক সীমান্ত রাজ্য আমাজোনাস থেকে রিপোর্ট করেছেন। কারাকাস ছাড়ার পর থেকে ফোনের মাধ্যমে গোটা যাত্রাপথজুড়ে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। আর বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও তাঁরা কৌশল বদলাতে ভয় পাননি। যেমন; ঐ এলাকার সশস্ত্র বাহিনী সাংবাদিকদের উপস্থিতি জানতে পেরেছে – এমন সতর্কবার্তা পাওয়ার পর তাঁদেরকে নিজেদের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
এই প্রকল্পে ম্যাপিং ও ডেটাবেসের মত উপাদানের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টিংও গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে জানান রামিরেজ। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “ভেনেজুয়েলার দক্ষিণে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কঠিন। আপনি কী করতে চান, কোথায় যেতে চান, এবং কোন জনগোষ্ঠীর কাছে যেতে চান, তা আপনাকে আগে থেকে জানতে হবে। আমরা ডেটাবেসে যা দেখছি, তার সত্যতা নিশ্চিত করতে এবং সাক্ষ্য পেতে এটি আমাদের সাহায্য করেছে।”
এই অনুসন্ধানের অংশ না হলেও, অবৈধ খনি নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ভেনেজুয়েলার ডেটা ও ডিজাইন সাংবাদিক লিসেথ বুন এ বিষয়ে একমত যে, “প্রযুক্তি ও মাঠ পর্যায়ের রিপোর্টিংকে এক সুতোয় বাঁধা ছিল এই প্রকল্পের সফলতা। বিশেষ করে যদি বিবেচনায় নিই যে আমরা এমন একটি এলাকা নিয়ে কথা বলছি যেখানে প্রবেশ করা সত্যিই কঠিন।”
প্রতিটি রিপোর্টিং ট্রিপের জন্য দলটি কতগুলো বিষয় ঠিক করেছে: কত ঘন ঘন তারা একে অপরের খোঁজ নেবেন, কোন ফোন নম্বর ব্যবহার করবেন (যেন নিশ্চিত করা যায় তারা সেই সেবাদানকারীর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন যেটি জঙ্গলে কাজ করে), এবং কোনো কারণে সংবাদ প্রতিষ্ঠান সাংবাদিককে না পেলে জরুরি যোগাযোগের জন্য বিকল্প কী হবে।
রামিরেজ লাইফ৩৬০ নামের একটি অ্যাপ ব্যবহার করতেন। এই অ্যাপের সাহায্যে আপনার “সার্কেল” বা বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা দূর থেকে আপনাকে ট্র্যাক করতে পারেন। এই অ্যাপের একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অবস্থান আপডেট করার মাধ্যমে প্রতি দুই সেকেন্ড পরপর আপনার রিয়েল-টাইম গতিবিধি জানাতে পারে। রিপোর্টিং দলটি গুছিয়ে কাজ করার জন্য কনফ্লুয়েন্স ব্যবহার করেছে; এটি রিমোট বা বিচ্ছিন্ন দলের জন্য তৈরি করা ওয়ার্কস্পেস অ্যাপ। এছাড়া এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের মাধ্যমে নিরাপদে তথ্য শেয়ারের জন্য তারা মেসেজিং অ্যাপ সিগনাল ব্যবহার করেছে। অনুসরণ করেছে, অ্যাকোস অ্যালায়েন্সের নিরাপত্তা সুপারিশও। পুলিৎজার সেন্টার এই অ্যালায়েন্সের অন্যতম সদস্য। ঝুঁকি মূল্যায়ন করা এবং রুট, পরিবহন, যোগাযোগ ও জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের কৌশল সনাক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের নির্দেশনা কাজে আসে।
রামিরেজ, এল পাইসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার গুরুত্বও তুলে ধরেন। পত্রিকাটি একই সময়ে তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। রামিরেজ বলেন, “ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও সম্পাদনায় এল পাইসের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তারা কেবল কাজটির প্রসারেই ভূমিকা রাখেনি, পোস্ট-প্রোডাকশনও সামলে নিয়েছে।” এল পাইসের অন্তত ১০জন এই প্রকল্পে কাজ করেছেন।
অর্জিত শিক্ষা ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
বুন বলেছেন, প্রকল্পটি ভালো সাড়া পেলেও ভেনেজুয়েলার সংকট এতটাই প্রকট যে, আপাতত তার বাস্তব প্রভাবগুলো চিহ্নিত করা কঠিন হবে। তবে তিনি আরও বলেন, এর মানে এই নয় যে, দলটির চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে রিপোর্টের প্রয়োজনীয়তা এখনো আছে, যেন দেশের বাইরে থেকে মানুষ ঘটমান বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন “ও একটি পরিষ্কার ধারণা পেতে” পারেন, যা শেষপর্যন্ত সংগঠনগুলোকে সংকট মোকাবিলায় সহায়তা করতে পারে।
পোলিসজুক বলেন, এই প্রকল্পের অন্যতম বড় অর্জন হলো এই অঞ্চলের আদিবাসী জনগোষ্ঠী যেসব অভিযোগ করে আসছিলেন, তার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারা। এই আদিবাসীরা বছরের পর বছর ধরে সতর্ক করছেন যে সরকার ব্যবস্থা না নিলে অবৈধ খনন ও তার পরিবেশগত প্রভাব কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
রামিরেজ বলেন, এই ধরনের অনুসন্ধানে কাজ করার ফলে তাঁর কর্মপন্থায় পরিবর্তন এসেছে। তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্প আমাকে শিখিয়েছে, কীভাবে তথ্যকে সুশৃঙ্খল করতে হয়। এই এলাকায় রিপোর্টিংয়ে আমার অনেক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেও এই ডেটাসেট আমাকে শিখিয়েছে, প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা ও নতুন কিছু যোগ করা কতটা জরুরি। ফলে বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে বোঝা যায়।”
রামিরেজ আরও বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা হলো এই ডেটাবেসকে বড় করতে থাকা। আর সেখান থেকে আমরা আরও অনেক কিছু করতে পারি। বাস্তবতা হলো, সংগঠিত অপরাধের এই নেটওয়ার্ক সীমানা বোঝে না। এটি শুধু ভেনেজুয়েলার দক্ষিণের সমস্যা নয়: এই সমস্যা পুরো দেশের, পুরো অঞ্চলের।”
আরও পড়ুন
ইনভেস্টিগেটিং ফরেস্ট ফায়ারস অ্যামিড এ ডেটা ভ্যাকুয়াম ইন ভেনেজুয়েলা
হাও আর্মান্দোডটইনফো’জ এক্সাইলড রিপোর্টার্স কিপ রিপোর্টিং অন ভেনেজুয়েলা
ডিজাইন ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য যেসব টুল পছন্দ করেন ভেনেজুয়েলার লিসেথ বুন
মারিয়েল লোজাদা জিআইজেএনের স্প্যানিশ ভাষার সহযোগী সম্পাদক এবং নিউ ইয়র্ক সিটি ভিত্তিক ভেনেজুয়েলান ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের ক্রেইগ নিউমার্ক গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নাালিজম থেকে এনগেজমেন্ট জার্নালিজমে স্নাতকোত্তর করেছেন, এবং তিনটি দেশে স্বাস্থ্য, জেন্ডার, অভিবাসন, ও মানবাধিকার নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।