
অলংকরণ: জিআইজেএনের জন্য মার্সেল লু
একটি স্টোরিকে বুলেটপ্রুফ করতে চাইলে শুধু তথ্য সঠিক রাখাই যথেষ্ট নয়, মান নিয়ন্ত্রণের কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে শুরু থেকেই একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়।
নিচে তিনটি চেকপয়েন্ট-সংবলিত এমনই একটি পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে এই কাঠামো গড়ে তুলেছে আমাদের মিশন ইনভেস্টিগেট নিউজরুম। এটি সুইডেনের ন্যাশনাল পাবলিক ব্রডকাস্টার, এসভিটির অনুসন্ধানী টেলিভিশন অনুষ্ঠান। বিগত বছরগুলোতে মিশন ইনভেস্টিগেট আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেক প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এদের বিষয়বস্তু ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ: আন্তসীমান্ত ঘুষ-বাণিজ্য ও সংঘবদ্ধ অপরাধ থেকে শুরু করে ক্যাথলিক চার্চ এবং জাতিসংঘ পর্যন্ত বিস্তৃত। এসব রিপোর্ট করতে করতে আমরা তথ্যের ভুলত্রুটি এড়াতে শিখেছি এবং নিশ্চিত করেছি যেন প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে, পরে নয়।
আশা করছি, এখান থেকে আপনারা কিছু অনুপ্রেরণা পাবেন।

ছবি: আনস্প্ল্যাশ, তামারা
তিন চেকপয়েন্ট
চেকপয়েন্ট কেন দরকার? অনেকের কাছে এটিকে অপ্রয়োজনীয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও মনে হতে পারে। কিন্তু কাজের প্রক্রিয়াটিকে একটি আনুষ্ঠানিক রূপ না দিলে মারাত্মক ঝুঁকি থাকে যে অনুসন্ধানটির প্রয়োজনীয় একটি অংশ হয়তো ছোঁয়াই হবে না। একটি ভুলের জন্য যে পরিমাণ মূল্য দিতে হয়, তার তুলনায় এই পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়াটাকে অনেক ন্যায্য বলে মনে হবে আপনার। এতে যে সময় লাগবে, (কয়েকটি ঘণ্টাব্যাপী মিটিং এবং এক দিনের একটি ফ্যাক্ট চেকিং সেশন) তা কোনো ছোট নিউজরুম, অনুসন্ধানী সাংবাদিক বা ফ্রিল্যান্সারকে নিরুৎসাহিত করবে না।
প্রকাশনার সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই কাজের পুরস্কার হিসেবে আপনি পাবেন মানসিক প্রশান্তি।
চেকপয়েন্ট নং ১: স্টার্ট-আপ মিটিং
প্রতিবেদনের বিষয় নিয়ে একটি প্রাক-গবেষণা সেরে ফেলার পর রিপোর্টারকে তৈরি হতে হবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার জন্য: প্রতিবেদনের কেন্দ্রীয় হাইপোথিসিস বা অনুমান (কোন বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন এবং কেন—এই প্রশ্নের উত্তর দেয় যে তত্ত্ব) কি ঠিক আছে? এই হাইপোথিসিসের বিপরীতে কী ধরনের কথাবার্তা আছে? এটিই স্টার্ট-আপ মিটিংয়ের কেন্দ্রীয় প্রশ্ন। বিষয়টির পেছনে সময় বা সম্পদ বিনিয়োগ করা যাবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখানেই নেওয়া হয়।
রিপোর্টারের সাধারণত তার স্টোরি আইডিয়ার সমস্যাজনক দিকগুলো অগ্রাহ্য করার প্রবণতা আছে। ফলে বিরুদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিষয়টির সমতা বিধান করতে হয়। এটি ডেভিলস অ্যাডভোকেটের ভূমিকা হিসেবে বেশি পরিচিত। সহকর্মীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে রাজি হবেন, এমন যেকোনো সম্পাদক বা রিপোর্টারই এই ভূমিকা পালন করতে পারেন। এ জন্য ব্যক্তিটিকে আগে থেকেই তৈরি হয়ে নিতে হবে এবং তিনিই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই অনুসন্ধানের মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবেন।
একের পর এক জটিল প্রশ্ন করার এই পর্ব কখনো কখনো উত্তেজনার মুহূর্ত জন্ম দিতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই বুঝতে পারে যে এটি আসলে ভালোর জন্যই।
মিটিং চেকলিস্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান জবাবদিহি। অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কখন ও কীভাবে যোগাযোগ করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা তৈরি। আমাদের জন্য সাধারণ নিয়ম হচ্ছে: যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ করা। এর একটি কারণ, আপনি নিজের প্রতিবেদনটির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারবেন; এবং দ্বিতীয় কারণটি হলো ন্যায্যতা। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যেমন, দমনমূলক দেশগুলোতে আপনাকে হয়তো প্রকাশনার ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
চেকপয়েন্ট নং ২: মিডপয়েন্ট মিটিং
এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় প্রথম খসড়াটি তৈরি হওয়ার পর। উদ্দেশ্য: গুণগত মান নিয়ে আলোচনা। এই পর্যায়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার সুযোগ থাকে।
বৈঠকে নিচের প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করুন:
- উপসংহার: আপনার হাইপোথিসিস কি প্রমাণিত হয়েছে, নাকি একটু এদিক-ওদিক করতে হবে? আপনি যা খুঁজে পেয়েছেন, তা নিয়ে কি প্রশ্ন উঠতে পারে বা সেগুলো কি মিথ্যা প্রমাণ করা যায়? বাকি সব ব্যাখ্যা কি আপনি বাদ দিতে পারছেন?
- জবাবদিহি: আমরা কি নিজেদের সাধ্যমতো স্বচ্ছ হতে পেরেছি? এমন কোনো পরিস্থিতি কি তৈরি হতে পারে, যা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে?
- বৃহৎ চিত্র: কোনো কিছু কি বাদ পড়ে গেছে, বা সঠিক জায়গায় নেই? আমরা কি বিষয়গুলো খুব সাদামাটাভাবে উপস্থাপন করছি?
আপনি প্রকৃত সত্যটি না বলেও সঠিক তথ্যনির্ভর প্রতিবেদন বানাতে পারেন। দুর্ভাগ্যবশত, রিপোর্টারদের মধ্যে প্রায়ই কনফার্মেশন বায়াস দেখা যায়, যেখানে তাঁরা নিজ অনুমানের সপক্ষে থাকা তথ্যগুলোকেই প্রাধান্য দেন এবং বিপরীতধর্মী তথ্যগুলো অগ্রাহ্য করেন। এর ফল হলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অনুপস্থিতি এবং বিভ্রান্তিকর অনুসন্ধান।
তথ্য নির্বাচন করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অন্তর্দৃষ্টি শুধু রিপোর্টারেরই থাকে। ফলে স্টোরিটেলিংয়ের পুরো প্রক্রিয়াজুড়ে নিচের এই প্রশ্নগুলো ক্রমাগত জিজ্ঞাসা করা এবং সেগুলোর সদুত্তর দেওয়া প্রয়োজন:
- অন্য কোনো তথ্য এসে কি সাধারণ চিত্রটাকে বদলে দিতে পারে?
- যেসব তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো জানলে মানুষ কি আশাহত হবে?
- বিশ্বাসযোগ্যতা না হারিয়ে আমরা কি এই তথ্য নির্বাচনকে বৈধতা দিতে পারি?
শেষ পর্যায়ে, আরও দুটি জিনিস থাকে যাচাইয়ের জন্য:
- সোর্স: তাঁরা কি বিশ্বাসযোগ্য? আমরা কি প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছি? আমরা কি প্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করেছি?
- বিশেষজ্ঞ: তাঁরা কি প্রতিনিধিত্বমূলক? আমরা কি নিশ্চিত যে এই বিশেষজ্ঞদের ওপর বিশ্বাস করা যায় এবং তাঁরা সমসাময়িক?
চেকপয়েন্ট নং ৩: ফ্যাক্ট-চেকিং
লাইন ধরে ধরে তথ্য যাচাই শুরুর আগে, আমাদের অবশ্যই অনুসন্ধানের কেন্দ্রীয় ব্যক্তির কাছ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে হবে। সাধারণত এ ধরনের ব্যক্তিরাই অনিয়মের ব্যাপারে অন্য যে কারও চেয়ে (রিপোর্টারের চেয়েও) বেশি জানেন।
তার জন্য খবরটি হয়তো খারাপ। তবু আপনি এবং আপনার অনুসন্ধানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি—উভয়ই চাইবেন: যে তথ্য প্রকাশিত হবে, তা যেন খুবই সঠিক হয়। কেউ যদি আপনাকে সাক্ষাৎকার দিতে অস্বীকৃতিও জানান, তখনো তাঁকে তথ্যগুলো জানিয়ে মন্তব্য করতে বলার ভালো সুযোগ থাকে।
অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য জানানোর সময় আপনাকে নিজের দিক থেকে স্বচ্ছ-উন্মুক্ত হতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে, এমনকি প্রতিবেদনের কিছু শব্দ-বাক্য হুবহুও পড়ে শোনাতে হতে পারে। কিন্তু কখনোই এমন কোনো তথ্য দেবেন না, যা থেকে সোর্সের নাম-পরিচয় প্রকাশ পেয়ে যায়।
মনে রাখবেন, যাঁকে নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, তিনিই আসলে প্রতিবেদনটির বিষয় সম্পর্কে “আসল বিশেষজ্ঞ”। তাঁর কাছ থেকে তথ্য-যাচাই করে নেওয়া ছাড়াও আপনি আরও কিছু সুবিধা পাবেন: সম্ভাব্য নানা রকম ব্যাখ্যা খতিয়ে দেখার পর্যাপ্ত সময় এবং হয়তো প্রতিবেদনে যোগ করার মতো বাড়তি কোনো তথ্য। আর নিশ্চিতভাবেই প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিক্রিয়া পাওয়ার চেয়ে প্রকাশের আগে বক্তব্য পাওয়াই ভালো।
অবশ্যই, এমন অনেক জায়গা আছে, যেখানে আপনি এত স্বচ্ছ হতে পারবেন না। যেমন, সহিংস গোষ্ঠী বা স্বৈরাচারী সরকার নিয়ে কাজ করার সময় ভিন্ন ধরনের কর্মপদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়। টিপস ফর দ্য নো সারপ্রাইজ লেটার শিরোনামে জিআইজেএন-এর এই লেখায় এমনটাই বলা হয়েছে। তবে, বিপজ্জনক ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করার সময়ও নির্ভুল ও যথার্থ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিন্দুমাত্র কমে না, বরং তখন তা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এবার আসা যাক বাক্য ধরে ধরে (লাইন বাই লাইন) তথ্য যাচাই প্রক্রিয়ায়।
মূলনীতিটি খুব সাধারণ। যাচাই করা সম্ভব—এমন প্রতিটি তথ্যের জন্য মূল সোর্স পর্যন্ত যেতে হবে। প্রতিবেদন প্রকাশের আগে পর্যাপ্ত সময় হাতে রেখে এই তথ্য যাচাইয়ের কাজটি করতে হবে। এবং ডেভিলস অ্যাডভোকেটকে রাখতে হবে কেন্দ্রীয় ভূমিকায়।
প্রক্রিয়াটি কার্যকর করে তোলার জন্য গবেষণার যাবতীয় নথিপত্র হাতের কাছে রাখতে হবে। প্রতি পেজ বা সেকশনের নিচে লিংক দিয়ে কিছু ফুটনোট তৈরি করলে নথিপত্রের সন্ধান রাখার কাজটি সহজ হতে পারে।
তথ্য যাচাইয়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ মনোযোগ দরকার হয়। ফলে এক দিন ধরে টানা কাজ করে যাওয়াটা কঠিন হতে পারে। তাই শুরুতেই মূল ও বেশি জটিলতাপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করা ভালো হবে। প্রশ্ন তোলার মতো কিছু না কিছু জিনিস সব সময়ই প্রতিবেদনে থাকবে। ফলে আপনাকে শুরুতে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিতে হবে, যেন আপনি অন্যান্য তথ্যের জোয়ারে ভেসে না যান।
এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে কখনো ভুলবেন না: যেসব সিদ্ধান্ত টানছেন, সেগুলোর সব কটির পেছনে কি পর্যাপ্ত যুক্তি-প্রমাণ আছে? কিছু বিষয় হয়তো আরও শানিয়ে নেওয়ার দরকার হতে পারে, বা কিছু ক্ষেত্রে নমনীয়ও হওয়ার প্রয়োজনও দেখা দিতে পারে।
প্রতিবেদনের বিষয় যদি খুব জটিল হয়, তাহলে তথ্য যাচাই শুরুর আগেই যাবতীয় গবেষণার উপাদান সম্পাদকের কাছে জমা দিতে হবে। সঙ্গে এই ব্যাখ্যাও দিতে হবে যে, কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত টানলেন। কিছু ক্ষেত্রে বিষয়টি মুখে বলার চেয়ে বাস্তবে করা অনেক কঠিন প্রমাণিত হতে পারে। যেমন, অনুসন্ধান থেকে খুঁজে পাওয়া কোনো তথ্য হয়তো কোনো বড় ডেটাসেট বা অর্থনৈতিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন সংখ্যা-পরিসংখ্যানের মধ্যে থাকে।
কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবেই লাইন বাই লাইন তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। প্রয়োজন হলে তথ্যগুলো ভালোভাবে যাচাই বা অনুসন্ধানের পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য বাইরে থেকে কোনো বিশেষজ্ঞের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে।
এই প্রশ্নগুলোরও উত্তর দিতে হবে:

Unsplash/wocintechchat
ছবি: আনস্প্ল্যাশ, ক্রিস্টিনা ওকিনটেকচ্যাট
- প্রতিবেদনটি কি ন্যায্য এবং বিপরীতধর্মী যুক্তিগুলোকে কি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে?
- আপনি কি সব অভিযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক উত্তর পেয়েছেন? এটি যাচাইয়ের জন্য আপনাকে সাক্ষাৎকারগুলোর পূর্ণাঙ্গ প্রতিলিপি আবার দেখতে হতে পারে।
- অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সব নেতিবাচক তথ্যই কি প্রয়োজনীয়? যেকোনো গুরুতর পরিস্থিতির জন্য আপনি তৈরি তো?
প্রতিটি বাক্য ধরে ধরে সম্পাদনার সময়, সব ধরনের তথ্যই আবার যাচাই করে দেখা জরুরি। এমনকি সবচেয়ে নির্দোষ মনে হবে—এমন তথ্যগুলোও। সামান্য ভুলত্রুটিও আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্টের জন্য ব্যবহার করা হতে পারে। “আমি জানি এটি সত্য”—এই কথা বলে আপনি কোনো ব্যতিক্রমকে ন্যায্যতা দিতে পারবেন না।
শেষ পর্যায়ে নাম, শিরোনাম, তারিখ, সংখ্যা এবং এ ধরনের সবকিছু আবার যাচাই করুন। উদ্ধৃতিগুলো খেয়াল করুন। কোনো সাক্ষাৎকারদাতা যদি ভুল হন, তাহলে আপনার সেটি জানা থাকা উচিত।
তথ্য যাচাইয়ের ১০টি টিপস
১. আসল নথিপত্র ব্যবহার করুন: যেসব ক্ষেত্রে মূল জায়গা থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব, সেখানে অন্য আর কিছুই গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয়।
২. উদ্ধৃতি ব্যবহারের আগে যাচাই করে নিন: অন্য কোনো মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়া তথ্যের ওপর ভরসা করবেন না, সেগুলো যতই বিশ্বাসযোগ্য মনে হোক।
৩. সংখ্যার ব্যাপারে যথার্থ হোন: বাড়িয়ে বলার তাড়না থেকে দূরে থাকুন। যেমন, যদি ১২ জন মানুষ আক্রান্ত হয়, তাহলে “অনেকে” (অস্পষ্ট একটি হিসাব) বলার চেয়ে বরং সেই সংখ্যাটিই (নির্দিষ্ট তথ্য) বলা উচিত।
৪. ভুক্তভোগীর সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখুন: ভুক্তভোগীর কথা আপনি কতটা বিশ্বাস করেন, তা কোনো বিষয় নয়। তাদের বলা কথাগুলোও যাচাই না করে সত্য বলে ধরে নেবেন না। যেমন, “তাঁর কিছুই স্মরণে নেই” (যাচাই করা কঠিন)-এর সঙ্গে তুলনা করুন “তিনি বলেছেন, তাঁর কিছু মনে নেই” (এই বক্তব্য একটি তথ্য)।
৫. প্রমাণ করতে পারা কঠিন—এমন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন: একটি সিদ্ধান্তকে বেশি দূর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া অযাচিত কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন, আপনি যদি বলেন যে, চাকরিদাতা “সুরক্ষাসংক্রান্ত নিয়ম অগ্রাহ্য করেছে”, তাহলে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে, এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। অন্যদিকে, আপনি যদি বলেন যে, চাকরিদাতা “সুরক্ষাসংক্রান্ত নিয়ম মানেননি”, তাহলে আপনি শুধু একটি তথ্যই বলছেন।
৬. না জানা বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকুন: আপনি কী জানেন না, সে ব্যাপারে খোলামেলা থাকুন। প্রমাণ করতে পারবেন না—এমন কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার প্রলোভনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। স্বচ্ছতা আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়াবে।
৭. শনাক্ত করা যাবে—এমন তথ্য মুছে দিন: গ্রাফিকস, ছবি ও ভিডিওতে থাকা অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য মুছে দিন। যেমন নাম, নথিপত্রে থাকা অন্যান্য তথ্য, লাইসেন্স প্লেট, সড়ক নম্বর ও লেটারবক্সের নাম।
৮. প্রতি ফ্রেম ধরে ধরে বিশ্লেষণ করুন: ছবিটি কি আসল নাকি ভুয়া? তথ্য যাচাইয়ের সময় ছবিকে প্রায়ই অগ্রাহ্য করা হয়। কারণ, সেগুলো স্ক্রিপ্ট বা টেক্সটে থাকে না। গুগল ইমেজ, ফেসবুক ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে সহজেই ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রয়োজন হলে এসব ছবির আদি উৎস খুঁজে দেখুন। এ জন্য রিভার্স ইমেজ সার্চ ও অন্যান্য টুল ব্যবহার করতে পারেন। (এ বিষয়ে আরও জানতে পড়ুন জিআইজেএন-এর “স্মার্টফোনে ছবি যাচাইয়ের চারটি সহজ পদ্ধতি”)
৯. শেষটায় পরীক্ষা করুন নিজেকে দিয়ে: কোনো কিছু নিয়ে কি রিপোর্টার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন? কোনো বিষয়ে এখনো সন্দেহ রয়ে গেছে? তাহলে দয়া করে সেটি নিয়ে কথা বলুন। কারণ, তেমন কথা বলার এটিই শেষ সময়!
১০. সংশোধনগুলো সব জায়গায় ঠিকঠাক হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করুন: স্ক্রিপ্ট বা টেক্সটে কোনো পরিবর্তন সব জায়গাতেই প্রযুক্ত হওয়া উচিত। যেমন, কোনো নামের বানানে ভুল থাকলে সংশোধনটি গ্রাফিকসসহ অন্যান্য জায়গাতেও ঠিক করা উচিত। ফলে একটি ফলোআপ রুটিন গুরুত্বপূর্ণ।
এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবেই অনেক ভুলত্রুটি বেরিয়ে আসবে। অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবে আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে সেগুলো খুব গুরুত্ব দিয়ে সংশোধন করা উচিত। আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, অন্যথায় যাঁকে নিয়ে রিপোর্ট করছেন, আপনি তাঁর অন্যায় ক্ষতির কারণ হতে পারেন।
লাইন ধরে ধরে সম্পাদনার এই কাজের পুরস্কারও আপনি পাবেন তাৎক্ষণিকভাবে। এর ফলে আপনাকে কোনো গুরুতর ভুলের কথা চিন্তা করে শীতের রাতে ঘুম ভেঙে ঘেমে যেতে হবে না; বরং আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবেন এই জেনে যে, আপনি প্রতিবেদনের ঝুঁকি কমানোর জন্য বা ভুল এড়ানোর জন্য সর্বোচ্চটিই করেছেন।
নিলস হ্যানসন একজন পুরস্কারজয়ী ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী সম্পাদক। ২০১৮ সাল পর্যন্ত, ১৪ বছর ধরে তিনি মিশন ইনভেস্টিগেট-এর নির্বাহী প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করেছেন। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তাঁর অভিজ্ঞতা ৩০ বছরের, এবং তিনি প্রায় ৫০০টি অনুসন্ধানে অংশ নিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে সর্বশেষ দুই বছরে এই অনুষ্ঠান ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে। তাঁর হ্যান্ডবুক অন ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম সুইডেনে একটি অবশ্যপাঠ্য বই।