যারা জিআইজেএন-এর ডেটা সাংবাদিকতার সেরা ১০ বিষয়ে পরিচিত নন, তাদের জন্য সংক্ষেপে বলে নিচ্ছি: প্রতি সপ্তাহে আমরা টুইটারে জনপ্রিয় ডেটা সাংবাদিকতার খবরগুলো বাছাই করি। এ সংক্রান্ত টুইটগুলো নজরে রাখা ও সংগ্রহ করার জন্য আমরা ব্যবহার করি নোডএক্সএল। এরপর চিরাচরিত উপায়ে সেখান থেকে বাছাই করা হয় সবচে আলোচিত বিষয়গুলো। বছর শেষে, একই প্রক্রিয়ায়, আমরা শত শত টুইটের মধ্য থেকে তুলে এনেছি ২০২০ সালে ডেটা সাংবাদিকতার সেরা খবরগুলোকে।
মহামারির এই বছরে, জনপরিসর থেকে শুরু করে সংবাদপত্রের শিরোনাম; সবখানেই দাপুটে উপস্থিতি ছিল করোনাভাইরাসের। জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ পর্যন্ত আমাদের নোডএক্সএল ম্যাপিংয়েও ফুটে উঠেছে এই বাস্তবতা। জনপ্রিয় ডেটা সাংবাদিকতার বিষয়গুলোতে উঠে এসেছে কোভিড-১৯ সংকটের নানা দিক। এগুলো তৈরি করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস, ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, সুডয়চে সাইটুং ও মিডিয়াপার্ট। এছাড়াও ছিল আল জাজিরার কয়েকটি ব্যাখ্যামূলক ইন্টারঅ্যাকটিভ, মানুষের স্বপ্নের দুনিয়া নিয়ে ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন, ডিজাইনার ফ্রেডেরিকা ফার্গাফ্যানের একটি চমৎকার অভিযান, এবং বর্ণান্ধ পাঠকদের জন্য ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন তৈরির গাইড, যেটি তৈরি করেছেন ডেটার্যাপারের লিসা শার্লট রস্ট।
বিশ্বব্যাপী যেভাবে ছড়িয়ে পড়ল ভাইরাস
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ, লকডাউন ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তোড়জোড় শুরু হয় বছরের শুরুতেই। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। এতো কিছুর পরও, কেন ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো যায়নি, তা দারুনভাবে ম্যাপের মাধ্যমে তুলে এনেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। দেখিয়েছে: কিভাবে হাজারো মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছেন। এবছর পত্রিকাটির অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ডেটা সাংবাদিকতার মধ্যে ছিল: যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের বিস্তার, এবং অস্ট্রেলিয়ার বিধ্বংসী দাবানলের ম্যাপিং।
okay i know i already said i was so proud of @nytgraphics but i'm truly blown away by the work everyone has done. here's a look back at just the last week, starting with this incredible piece on how the virus got out of Wuhan by @dwtkns @dawncai624 @jwf825 https://t.co/OXVg8cJjSa
— Allison McCann (@atmccann) March 22, 2020
করোনাভাইরাস ট্র্যাকার
গত মার্চ থেকে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রাখছিল ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস। সেখানে তারা একই চার্টের মধ্যে তুলনা করে দেখিয়েছে বিভিন্ন দেশের মৃত্যুহার। একই সঙ্গে তারা পর্যালোচনা করেছে “অতিরিক্ত মৃত্যুহারও” (ঐতিহাসিক গড়ের তুলনায় বেশি মৃত্যু)। সেখান থেকে দেখা গেছে: বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত মৃত্যু, কোভিড-১৯ -এর নথিভুক্ত মৃত্যু সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি।
I’m going to be updating this chart over the course of the autumn/winter resurgence:
Covid deaths are rising again, with 100s of deaths per day in Europe at the moment, but it’s important to keep the extreme acceleration of the spring in mind when we evaluate these trajectories https://t.co/qN8voU0brh
— John Burn-Murdoch (@jburnmurdoch) October 21, 2020
নীল নদ রক্ষা
বিশ্বের অন্যতম পুরোনো ও দীর্ঘ নদী, নীল। তার ওপর বিশাল বাঁধ নির্মান নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছে মিশর ও ইথিওপিয়া। এ নিয়ে মিশর, সুদান ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য যে পাঁচটি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তার প্রতিটি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে আল জাজিরা। আরো ব্যাখ্যা করেছে: বাঁধটি কিভাবে এই অঞ্চলে অপরিবর্তনীয় ও অনিবার্য প্রভাব ফেলবে। আল জাজিরার আরো দুটি জনপ্রিয় প্রতিবেদনে দেখে নিতে পারেন: ভারত ও চীনের মধ্যকার বিতর্কিত সীমানার ম্যাপিং, এবং ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য পরিকল্পনার বিশ্লেষণ।
THREAD 👇
A mega-dam has triggered a big dispute between Egypt & Ethiopia over access to the Nile’s water resources.
For Ethiopia it promises much-needed electricity; for Egypt, the fear of a devastating water crisis.
Could a dam kill the River Nile? https://t.co/TJeHsyRx4y pic.twitter.com/XtprPVNhEQ
— Al Jazeera English (@AJEnglish) January 23, 2020
যেখানে স্বপ্ন যেমন
কখনো ভেবেছেন: মানুষ তার ভাষা-সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে একই রকম স্বপ্ন দেখে কিনা? উত্তর খোঁজার জন্য গুগল সার্চ ট্রেন্ডের ডেটা ব্যবহার করে একটি চমৎকার স্বপ্ন অনুসন্ধান তৈরি করেছেন ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন ডিজাইনার ফ্রেডেরিকা ফার্গাফ্যান। তুলে এনেছেন, বিশ্বজুড়ে মানুষ কী ধরনের স্বপ্ন দেখে, আর ভাষাভেদে তাতে কোনো পার্থক্য হয় কিনা। যেমন, রুশ ভাষাভাষীরা মাশরুম তোলার স্বপ্ন নিয়ে সার্চ করেছেন বেশি, এবং পর্তুগিজ ভাষাভাষীরা রসুনের; এমন নানা রকম স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটি কিভাবে তৈরি হয়েছে, সেটি এখানে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
Thank you @visualisingdata for having featured https://t.co/ViBAvUfMxt in your collection of the best #dataviz from March 2020! https://t.co/AH37T5f3FG#Datavisualization project for @GoogleTrends@paolocorti_ @AlbertoCairo @smfrogers pic.twitter.com/nV0boWEuo2
— Federica Fragapane (@fedfragapane) June 15, 2020
সাইকেলে লন্ডনের অলিগলি
বাড়ি থেকে অফিস যাওয়ার পথটি মাত্র ২৫ মিনিটের। সেই রাস্তায় সাইকেল চালাতে চালাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন ডেভিস ভিলুমস। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সৃজনশীল কিছু একটা করার। সেই ভাবনা থেকেই, প্রধান রাস্তার পাশাপাশি মধ্য লন্ডনের সম্ভাব্য প্রতিটি অলিগলি, উঠান, পার্কের রাস্তা দিয়ে তিনি সাইকেল চালানো শুরু করেন। এবং প্রতিটি যাত্রা রেকর্ড করেন এন্ডোমোন্ডো অ্যাপে। কাজটি করতে তার চার বছর লেগেছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি করেই ছেড়েছেন!
Exactly 5 years ago I started my journey to visit every single street in Central London. This is how London's grid emerges, using only my cycling journeys.
Here's a little story, how I did it.https://t.co/VwnjnLz832 pic.twitter.com/kGMwp2tqz5— Dāvis Viļums 🥔 (@DavisVilums) February 23, 2020
বড় আন্তসীমান্ত অনুসন্ধান
এবছর বেশ ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)। জানুয়ারিতে, ২০টি দেশের সহযোগীদের সঙ্গে জোট বেঁধে তারা প্রকাশ করেছে লুয়ান্ডা লিকস অনুসন্ধান। তাতে উঠে আসে: আফ্রিকার সবচে ধনী নারী বলে পরিচিত ইসাবেল দস সান্তোস, নানান চুক্তি ও সরকারের সহায়তা নিয়ে, মাত্র দুই দশকে কিভাবে এই সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। এই অনুসন্ধান করা হয়, ফাঁস হওয়া সাত লক্ষ আর্থিক ও ব্যবসায়িক রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে। কিভাবে তারা এই বিশাল ডেটাসেট নিয়ে কাজ করেছে, তা জানতে পারবেন এখানে। গত সেপ্টেম্বরে, বিশ্বজুড়ে অর্থপাচার সংক্রান্ত আরেকটি অনুসন্ধান প্রকাশ করে আইসিআইজে। ফিনসেন ফাইলস নামের এই অনুসন্ধানে যুক্ত হয়েছিলেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চারশরও বেশি সাংবাদিক।
NEW: Africa’s richest woman @isabelaangola claims to be a self-made billionaire. Today, we reveal the inside story of how she made her fortune while leaving #Angola one of the poorest countries on earth.
Read #LuandaLeaks: https://t.co/bkYsjpsqKf
📹: @shirafu pic.twitter.com/yGuFZoggnS
— ICIJ (@ICIJorg) January 19, 2020
কোভিডের রেখাকে সমতলে আনার উপায়
করোনাভাইরাসের বিস্তার কতো দ্রুতগতিতে হচ্ছে, তা দেখাতে এবং ফ্ল্যাটেনিং দ্য কার্ভ ধারণার গুরুত্ব তুলে ধরতে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো দেশে আক্রান্তের সংখ্যা একটি চার্টের মাধ্যমে দেখিয়েছিল, জার্মানির দৈনিক সংবাদপত্র সুডয়চে সাইটুং। এসব দেশেই করোনা আক্রান্তের হার ছিল সবচে বেশি। এবছর তাদের জনপ্রিয় ডেটা সাংবাদিকতার মধ্যে আরো ছিল: জার্মানির রাজনীতিবিদদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিতর্ক, এবং জার্মানির পার্লামেন্টে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার বিবর্তন।
Ich habe nochmal zu #Corona recherchiert und etwas gerechnet. Und ich glaube, wir nehmen das Problem weiterhin nicht ernst genug. Warum? 👇https://t.co/DP0r0iJx9o
— Christian Endt (@c_endt) March 10, 2020
কোভিডের কোন সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্য
গত মার্চে, ফ্রান্সে কোভিড-১৯ সনাক্ত ও মৃত্যুর সরকারি সংখ্যায় ভুলের বিষয়টি তুলে ধরেছিল দেশটির অনলাইন অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম, মিডিয়াপার্ট। কোভিড-১৯ পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও সীমাবদ্ধতার নীতির কারণে আক্রান্তের সংখ্যা কম নথিভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করা হয় প্রতিবেদনটিতে। বলা হয়, নার্সিং ও প্রাইভেট হোমগুলোতে হওয়া মৃত্যুর সংখ্যা সেখানে যোগ করা হয়নি। এছাড়াও দেখতে পারেন মিডিয়াপার্টের এই রিপোর্টিং প্রকল্প, যেখানে পুলিশের অনিয়মের জন্য কোনো সাজা না হওয়ার বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে। এখানে উঠে এসেছে: পুলিশি অনিয়ম অনুসন্ধানে কর্তৃপক্ষের ঢিলেমি এবং পুলিশি সহিংসতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অভিযোগ নিয়ে তদন্তে অবহেলা।
[THREAD] Pas de confinement pour l'intérêt général: plus que jamais en temps d'épidémie nous devons défendre notre droit de savoir. C'est une protection quand l'opacité et le secret des pouvoirs nous exposent et nous fragilisent. Illustration par le travail récent de @Mediapart⤵️
— Edwy Plenel (@edwyplenel) March 25, 2020
বর্ণান্ধদের জন্য ডেটাচিত্র
কিভাবে নিশ্চিত করবেন যে, বর্ণান্ধ পাঠকরাও আপনার ভিজ্যুয়ালাইজেশন পুরোপুরি বুঝবে? ডেটার্যাপারের লিসা শার্লট রোস্ট বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন তিন পর্বের একটি লেখা। এখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন: কিভাবে বিভিন্ন রঙের উপাদানগুলো আলাদা ভাবে বুঝাতে বিভিন্ন লেবেল, ইন্টারঅ্যাক্টিভিটি, সংকেত এবং বর্ণান্ধ-বান্ধব কালার প্যালেট কিভাবে ব্যবহার করবেন। এখানে পাবেন সিরিজটির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব।
Yay, it's out: I just published the 2nd part of the @Datawrapper colorblindness series, showing ways to visualize data well for colorblind readers.
Expect glyphs, patterns, blue, orange, and me criticizing a popular colorblind-safe color palette: https://t.co/kGUVENkj5O pic.twitter.com/T0YxbRJG6k
— Lisa Charlotte Rost (@lisacrost) June 23, 2020
প্রেক্ষিত যখন ডেটার চিত্রায়ন
পুরো বছরজুড়ে, ডেটা সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখেছেন ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন বিশেষজ্ঞ অ্যালবার্তো কায়রো। এখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন, কোন ধরনের চিত্রায়ন বেশি কার্যকর এবং কিভাবে সেগুলো আরো উন্নত করে তোলা যায়। ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে কিভাবে একটি বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা যায়, তা নিয়ে তাঁর এই লেখাটি টুইটারের ডেটা কমিউনিটিতেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন অ্যানোটেট করার ক্ষেত্রে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস ভালো উদাহরণ তৈরি করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন কায়রো। এজেন্সিয়া লুপা’র উদ্ভাবনী কোভিড-১৯ প্রকল্পটির কথাও উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।
New post: Visualization often puts stories in perspective https://t.co/r5HdvMXYbz #dataviz #infographics #ddj pic.twitter.com/pema2WgZc9
— Alberto Cairo (@AlbertoCairo) February 12, 2020
লিংকগুলো সংগ্রহ ও গ্রাফিক্সের মাধ্যমে সাজানোর জন্য আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি কানেক্টেড অ্যাকশনের মার্ক স্মিথ ও হেরাল্ড মাইয়ার-কে। ডেটা সাংবাদিকতার সেরা ১০ বাছাই করা হয় সাপ্তাহিক ভিত্তিতে।
ইউনিস অউ, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক-এর প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী। তিনি এর আগে মালয়েশিয়ার নিউ স্ট্রেইটস টাইমসের জেনারেল বিট রিপোর্টার এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক দ্য স্ট্রেইটস টাইমস-এর মালয়েশিয়া প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।