জুলাই মাসের শেষ দিকে, সিটিজেন ম্যাটার্স নামে একটি কমিউনিটি-কেন্দ্রিক সংবাদমাধ্যমের কাছে খবর আসে, দক্ষিণ ভারতের শহর চেন্নাইয়ে শিশুদের ক্ষুধার্ত থাকার ঘটনা বাড়ছে।
অলাভজনক একটি সংগঠন তাদের জানিয়েছিল: অঙ্গনওয়াড়ি নামে পরিচিত সরকারী কিন্ডারগার্টেনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, কমবয়সীদের মধ্যে পুষ্টিহীনতা দেখা যাচ্ছে। কিন্ডারগার্টেন ছাড়া, এসব শিশুদের জন্য দুপুরের খাবারের অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। এটিই তাদের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে একবার পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করত। সেন্টারগুলোকে বলা হয়েছিল বাচ্চাদের পরিবারগুলোতে শুকনো খাবার সরবরাহ করার জন্য। কিন্তু কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ত্রাণ তৎপরতার দিকে মনোযোগ ঘুরে যাওয়ায়, তা আর করা হচ্ছে না।
কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে সংখ্যার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই, দ্বিতীয় স্থানে আছে ভারত। আক্রান্ত হয়েছে ৫৪ লাখেরও বেশি মানুষ। বৈশ্বিক এই মহামারি নিশ্চিতভাবেই একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করেছে। এর মধ্যেও, কিন্ডারগার্টেনের প্রতিবেদনটি সামনে আনার মাধ্যমে, সিটিজেন ম্যাটার্স দেখাতে চেয়েছে: ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতার প্রভাব কেমন, এবং এর পরিণতি কতটা মারাত্মক হতে পারে।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর, বিষয়টি শিশু ও নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নজরে আসে এবং তারা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। সিটিজেন ম্যাটার্সের কর্মীদের কাছে এটি ছিল অপ্রত্যাশিত, কিন্তু সফল পরিণতি। নিজেদের কমিউনিটিতে এই মহামারি কেমন প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে তারা কাজ করছিল গত ছয় মাস ধরে।
এই গল্পটি থেকে আরেকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো: সিটিজেন ম্যাটার্সের মতো ছোট সংবাদমাধ্যমও বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষভাবে যখন নির্ভুল তথ্য সরবরাহ, এবং সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রসঙ্গ আসে।
২০০৮ সালে সিটিজেন ম্যাটার্সের যাত্রা শুরু হয় স্থানীয় একটি নিউজ ম্যাগাজিন হিসেবে। সেসময় তাদের অনলাইন ও প্রিন্ট; দুই ধরনের সংস্করণই ছিল। ২০১৩ সালে, এটি বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক উরভানি ফাউন্ডেশনের অংশ হয়ে ওঠে। উরভানি ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং জিআইজেএন-এর সদস্য সংগঠন। তারা কাজ করছে ওপেন নলেজ প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য, যা আরো উন্নত শহর তৈরিতে সহায়তা করবে। বর্তমানে, সিটিজেন ম্যাটার্স খুবই সফলভাবে শুধুই অনলাইন-ভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছে, এবং অন্যান্য শহরগুলোতেও তাদের কার্যক্রম প্রসারিত করছে।
উরভানির ট্রাস্টিদের একজন, মীনাক্ষী রমেশ, তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কে বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য: অতি-স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিকদের সাথে যুক্ত হওয়া। আমরা শুধু সেভাবেই চিন্তা করি, যাতে নাগরিকদের উপকার হয়।” দক্ষিণ ভারতের কান্নাড়া ভাষায় উরভানির অর্থ “জনগনের কণ্ঠ”।
উরভানি, পাঠকদের সাথে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, সেটিই তাদের জনপ্রিয় করে তুলেছে, পাঠক ও মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের কাছে। মিডিয়া পর্যবেক্ষক ও আইসিআইজে-র নাইট ফেলো নাসের উল হাদি বলেছেন, “উরভানির যে বিষয়টি আমি পছন্দ করি, তা হলো: মানুষের জীবন কিভাবে প্রভাবিত হচ্ছে, সেদিকেই তারা মনোযোগ দেয়; তাদের মিশন অনেক জীবন-ঘনিষ্ঠ।”
বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই
উরভানির প্রতিষ্ঠাতা, মীরা কে এবং সুব্রামনিয়াম ভিনসেন্ট তাদের শহরে নাগরিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক ধরনের শূণ্যতা লক্ষ্য করেছিলেন। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো মরতে বসেছে, যেগুলো টিকে আছে, তারাও পাঠকের সাথে কমিউনিটি হিসেবে যুক্ত হতে পারছে না। এমন একটা পরিস্থিতির সামনে পড়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল সিটিজেন ম্যাটার্সের।
মজার ব্যাপার হলো: প্রতিষ্ঠাতাদের কারোই সাংবাদিকতার সাথে সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তারা চেয়েছিলেন এমন একটি সংবাদমাধ্যম তৈরি করতে, যেটি নাগরিক সাংবাদিকতাকে সামনে রাখবে। তাদের কাজের কমিউনিটিতে, মানুষ যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছে, তা তুলে নিয়ে আসার ব্যাপারে তৎপর হবে।
সিটিজেন ম্যাটার্স-এর একজন সম্পাদক, সাতরূপা ভট্টাচার্য বলেছেন, “আমরা এখানে যা করি তা সত্যিই কমিউনিটি-ভিত্তিক সাংবাদিকতা”। যার লক্ষ্য: নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে, এমন সব ইস্যুর দিকে নজর দেওয়া এবং পাঠককে এমন অনুভূতি দেওয়া যে, তিনিও এই রিপোর্টিংয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত।
ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে এই প্রকাশনার যাত্রা শুরু হয়। বেঙ্গালুরু শহরটি ভারতের সিলিকন ভ্যালি নামে পরিচিত। যেখানে উদ্যোক্তারা নিত্যনতুন সব চিন্তা নিয়ে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরি করছেন। এখানকার নাগরিকদের মধ্যেও সচেতনতা ও ভালো ধারণা আছে নাগরিক সাংবাদিকতা সম্পর্কে। ফলে এ ধরনের নতুন কোনো উদ্যোগের পরীক্ষা চালানোর জন্য ৮৪ লাখ মানুষের এই শহরটি আদর্শ ছিল।
এখন পর্যন্ত এটি ভালোভাবেই কাজ করছে: গত চার বছরে, দক্ষিণ ভারতে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি শহর, চেন্নাইয়ে পুরোদমে রিপোর্টিং কর্মকাণ্ড শুরু করেছে সিটিজেন ম্যাটার্স। সেখানে সরকার, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো নিয়ে রিপোর্টিংয়ের জন্য তাদের তিনজন পূর্ণকালীন কর্মী আছে। বেঙ্গালুরুতে এমন কর্মী আছেন দুজন। এবং ফ্রিল্যান্স লেখকদের একটি নেটওয়ার্ক দিয়ে দেশের আরো বেশ কিছু শহরও কাভার করে সাইটটি।
সম্পাদকরা বলেছেন, পাঠকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণেই তাদের বেশিরভাগ প্রতিবেদন তৈরি হয়। সংবাদমাধ্যমটি, খুবই আগ্রহী পাঠকদের নিয়ে এমন একটি কমিউনিটি তৈরি করতে পেরেছে, যারা শুধু পাঠ-প্রতিক্রিয়াই নয়, নানাবিধ খবরের সূত্রও সরবরাহ করে।
সাধারণ একটি দিনে, বেশ কয়েকটি শহরে ছড়িয়ে থাকা রিপোর্টার ও ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে সমন্বয় করেন ভট্টাচার্য। তিনি নিশ্চিত করেন: সিটিজেন ম্যাটার্সে যা প্রকাশিত হচ্ছে তাতে যেন অনুসন্ধানী, উপকারী ও নাগরিক তথ্য ভিত্তিক সংবাদের ভারসাম্য থাকে। মহামারির আগে, তারা পরিবেশগত ইস্যু নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন। শিশুশ্রমের মতো সামাজিক ইস্যুর কথা বলতে গিয়ে ডেটা সাংবাদিকতার কৌশল ব্যবহার করেছেন, এবং কমিউনিটির দৃষ্টিকোন থেকে, ইন-ডেপথ নির্বাচনী কাভারেজ প্রচার করেছেন।
বিপন্ন সমাজ নিয়ে রিপোর্টিং
গত মার্চে যখন ভারতে পুরো দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন সাংবাদিকরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। সবচে বড় চ্যালেঞ্জটি ছিল মাঠপর্যায়ের গল্পগুলো তুলে আনা। সেসময় সাংবাদিকদের চলাফেরার সীমানা ভীষণভাবে সংকুচিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সিটিজেন ম্যাটার্স, তাদের কাজের জায়গাগুলোতে ছড়িয়ে থাকা নাগরিক সংগঠন ও শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনেক তথ্য তুলে আনতে পেরেছে। যার ফলে কোভিড-১৯ ও সেই সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মানুষদের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছে।
শারীরিক যাতায়াত বা যোগাযোগের ওপর আমরা সত্যিই কখনো নিজেদের খুব বেশি নির্ভরশীল করে তুলিনি,” বলেছেন ভট্টাচার্য, “যে মূল ভিত্তির ওপর সিটিজেন ম্যাটার্স তৈরি হয়েছে, তা হলো: সংবাদ অবশ্যই একদম মাঠপর্যায় থেকে আসতে হবে। এই মহামারির সময় দেখা গেছে, এমন পরিস্থিতিতেও অনেক সাড়া জাগানো সব প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে, ভট্টাচার্য, তাদের সাম্প্রতিক কিছু অনুসন্ধানের উল্লেখ করেছেন। যেখানে তারা দেখিয়েছেন লকডাউনের মধ্যে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা ও কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য হাসপাতালে স্থান স্বল্পতার চিত্র।
ভট্টাচার্য বলেছেন, “কোনো খবরের সূত্র পেলে আমরা সাধারণত শুরুতেই দেখি যে, এটি নিয়ে কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির সম্ভাবনা আছে কিনা। হতে পারে, সেখানে এমন অনেক জিনিস আছে, যা আরো গভীরে তলিয়ে দেখা দরকার, এর ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করা দরকার, এবং এই কাজে একজন সাংবাদিককে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করা দরকার।”
কিভাবে সিটিজেন ম্যাটার্স নাগরিকদের প্রভাবিত করছে এবং তারা আরো কী বাড়তি পদক্ষেপ নিতে বলছে; এই বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য বিচার করেন ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, “আমার কাছে, সবচে বড় তৃপ্তির ব্যাপার হয়, যখন আমরা খুবই ভালো কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করি। আপনি যখনই কোনো ইস্যুর দিকে টানা দৃষ্টি দেবেন, তখন সেটি আপনাআপনিই পাঠকদের মধ্যে একটি আলোচনা তৈরি করবে।” সিটিজেন ম্যাটার্সের সবচে বেশি পঠিত প্রতিবেদন হলো একটি গাইড। যেখানে বলা হয়েছে: কিভাবে জনস্বার্থ বিষয়ক কোনো মামলা দায়ের করতে হয়।
এই মুহূর্তে অবশ্যই তাদের দৃষ্টি সরে গেছে কোভিড-১৯ মহামারির খবর সংগ্রহের দিকে। কিন্তু এক্ষেত্রেও তারা প্রথমে চিন্তা করছেন পাঠকদের চাহিদার কথা। উরভানির ট্রাস্টি, রমেশ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “আমরা নিজেরাই নিজেদের জিজ্ঞাসা করেছি, ‘এখন নাগরিকরা কোন ধরনের জিনিস বেশি খুঁজছেন? কোন তথ্যগুলো বেশি উপকারী হবে? আমাদের মতো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম কিভাবে কোভিড পরবর্তী বিশ্বে কাজ করবে?
বর্তমান সময়ে, সরকারের দিকে থেকে যেরকম স্বচ্ছতার অভাব দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রতিদিনের সাধারণ সব রিপোর্টিংয়ের কাজকেও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মতো মনে হচ্ছে। এখান থেকে এমন প্রশ্ন উঠছে যে, “কী ধরনের জিনিস কাজ করছে?” এবং “এরকম কোনো গাইডলাইন কী তৈরি করা যায়, যা থেকে মানুষের সাহায্য হবে?” এধরনের প্রশ্ন থেকে আমরা কিছু ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদনের আইডিয়া পেয়েছি। যেমন: কিভাবে বাড়িতে কোভিড-১৯ বর্জ্য আলাদা রাখা যায়। এবং কিভাবে আবাসিক ভবনগুলোতে কোভিড-১৯ সেবাকেন্দ্র গঠন করা যায়।
মেগাসিটিতে সম্প্রসারণ
সিটিজেন ম্যাটার্স, মুম্বাইয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে জুলাই মাস থেকে। এবং আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দিল্লিতেও তাদের কাজ করার পরিকল্পনা আছে। আর এসব করতে গিয়ে তারা নতুন নতুন সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন। তারা শিক্ষা নিচ্ছেন গত সাত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে, আর ক্রমাগত নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অবশ্য তারা এ ব্যাপারেও সচেতন যে, ভিন্ন ভিন্ন শহরের ভূতাত্ত্বিক ও সামাজিক অবস্থা ভিন্ন রকমের। এবং বেঙ্গালুরুর জনসংখ্যার কারণে তারা সেখানে যেভাবে মানিয়ে নিতে পেরেছেন, তা অন্য কোনো জায়গায় কঠিনও হতে পারে।
আইসিআইজে নাইট ফেলো উল হাদি বলেছেন, “বেঙ্গালুরুর ক্ষেত্রে উরভানির এই কর্মপদ্ধতি কাজ করেছে, কারণ সেখানে আগে থেকেই একটি সচেতন পাঠকগোষ্ঠী ছিল, যা এই ধরনের মিডিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উত্তর ভারতের কোনো শহরে এটি কাজ করবে, তা আমি ভাবতেও পারি না। সেখানে বেঙ্গালুরুর মতো সক্রিয়, অংশগ্রহণকারী নাগরিক সংস্কৃতি তেমনভাবে নেই। এখানে সব কিছুই বেশিমাত্রায় রাজনৈতিক হয়ে ওঠে।”
তবে রমেশ আশা হারাচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, “প্রত্যেকটা শহরই স্বতন্ত্র, কিন্তু কিছু পর্যায় পর্যন্ত আমরা সবাই সমান।”
সচেতন নাগরিক গোষ্ঠী গড়ে তোলার পাশাপাশি, উরভানির জন্য আরেকটি বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে পর্যাপ্ত টাকার যোগান; বিশেষ করে ভারতের মত একটি দেশে যেখানে গণমাধ্যম উন্নয়নের কোনো কাঠামো নেই।
এখন, সিটিজেন ম্যাটার্সের সাইটে একটি “ডোনেট” বাটনের মাধ্যমে পাঠকদের উৎসাহিত করা হয় অনুদান দেওয়ার জন্য। রমেশ বলেছেন, “মানুষ যে ধরনের সাংবাদিকতার ব্যাপারে আগ্রহী, তার জন্য তারা অর্থ খরচ করতেও রাজি আছে। আমরা আমাদের পাঠকদের জন্য খুবই কম পরিমান অর্থ দেওয়ারও ব্যবস্থা রেখেছি। আপনি যদি একটি প্রতিবেদন পছন্দ করেন, এবং সেজন্য মাত্র ৫০০ রুপি দিতে চান; আমরা তাতেও খুশি। আমরা জানছি যে, আপনি আমাদের সাথে আছেন।”
উরভানির বাৎসরিক বাজেট প্রায় ৯০ হাজার ডলারের কাছাকাছি। তারা সিটিজেন ম্যাটার্সের পাশাপাশি ইন্ডিয়া টুগেদার নামেও আরেকটি নিউজ ওয়েবসাইট পরিচালনা করে। যেটি উন্নয়ন, নীতি-নির্ধারণ ও সামাজিক নানা ইস্যু নিয়ে কাজ করে। তাদের এই বাজেটের ২০ শতাংশ আসে পাঠকদের কাছ থেকে। ২৫ শতাংশ আসে বিভিন্ন অনুদান থেকে। বাজেটের বাকি অংশ আসে উচ্চপর্যায়ের কোনো ব্যক্তি বা সোর্স থেকে। যেমন অলাভজনক সংগঠন ও সাংবাদিকতার কোনো প্রকল্প বা উদ্যোগ।
কিন্তু এই অর্থায়নের বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত থেকে গেছে। রমেশ বলেছেন, “আমাদের সামনে এখন চ্যালেঞ্জ হলো: এমন কিছু স্ট্র্যাটেজিক অনুদানদাতা খুঁজে বের করা, যারা আমাদের কর্মকাণ্ডগুলো বুঝবে। আমাদের দরকার একজন অ্যাঙ্কর ডোনার।”
ভারতে হিন্দুস্থান টাইমস ও দ্য হিন্দু-র মতো বড় বড় সংবাদমাধ্যম তাদের আঞ্চলিক কার্যালয়গুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সিটিজেন ম্যাটার্সের মতো কমিউনিটি ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি দরকার। নতুন নতুন আরো অনেক সংবাদমাধ্যমের উদ্যোগও প্রতি বছর দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ইন্ডিয়াস্পেন্ড ও স্ক্রোলের মতো নতুন উদ্যোগের সঙ্গে সিটিজেন ম্যাটার্সের পার্থক্য হলো: তাদের প্রধান মনোযোগ নাগরিক সাংবাদিকতায়।
এখন তাদের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ টিকে থাকা। ভারতে, পাঠকের অর্থায়নে পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ক্রমে বাড়ছে। কিন্তু সমাজসেবকদের কাছ থেকে সহযোগিতার ঘাটতি এখনো আছে।
অনুদান-নির্ভর সাংবাদিকতার কোনো মডেল এখনো সেভাবে গড়ে না ওঠায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন রমেশ। তিনি বলেছেন, “সাংবাদিকতাকেও যে দাতব্য কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখা যায়, তা ডোনারদের বোঝানোটাই একটি চ্যালেঞ্জ। তবে এটাও ঠিক যে: নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করার জন্য দান করা আর কোনো দরিদ্র মানুষকে খাওয়ানো বা স্কুলে কম্পিউটার বিতরণের জন্য দান করার অনুভূতি একই রকম হয় না।”
আরো পড়ুন
পরিবেশ নিয়ে অনুসন্ধানে যেভাবে শক্তি যোগাচ্ছে জিও-জার্নালিজম
মুক্ত সাংবাদিকতার তিউনিসিয় মডেল ইনকিফাদা
অ্যান ইউক্রেনিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ নিউজ টিম ফাইটস ফর মিডিয়া ফ্রিডম
আমরুতা বিয়াতনাল দিল্লি ভিত্তিক সাংবাদিক। তিনি ডেভেক্স-এর একজন সহযোগী সম্পাদক। বিশেষভাবে কাজ করেন জেন্ডার, স্বাস্থ্য ও নাগরিকত্ব নিয়ে। তিনি দ্য ফরেন পলিসি, দ্য লিলি ও দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ানে তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।