দেশ ধরে ধরে বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ অর্থায়ন ট্র্যাক করবেন যেভাবে

English

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি দেশে দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই অর্থ কীভাবে খরচ করা হচ্ছে? কাদের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে?

এই টাকার ব্যবহার নিয়ে যদি অনুসন্ধান করতে চান, তাহলে জাতীয় পর্যায়ের ক্রয়সংক্রান্ত নথির পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের অনলাইন ডেটাও আপনার কাজে আসবে।

এই রিসোর্স তৈরি করা হয়েছে এমন অনুসন্ধানকে অনুপ্রাণিত করার জন্য। এখানে আমরা দেখাব, কীভাবে বিশ্বব্যাংকের রেকর্ড সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে হয়। জাতীয় পর্যায়ের কেনাকাটা-সংক্রান্ত নথিগুলোর সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের রেকর্ডগুলো মিলিয়ে গবেষণা করার কিছু পদ্ধতির কথাও এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বিশ্বব্যাংকই সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক দাতা। কিন্তু আরও অনেক প্রতিষ্ঠান (যেমন ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ)) থেকেও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে বিস্তারিত দেখুন গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ডেভেক্সের এই প্রবন্ধে।)

এর সঙ্গে যদি অন্যান্য দেশ ও ব্যক্তিমালিকানার ফাউন্ডেশন থেকে আসা অর্থসাহায্য যোগ করা হয়; তাহলে ডেভেক্সের তথ্য অনুসারে, “গত জানুয়ারি থেকে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে সাহায্য দেওয়া হয়েছে ২০ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।” দাতাগোষ্ঠীর অর্থসাহায্য নিয়ে তথ্যের জন্য দেখুন কোভিড-১৯ ফান্ডিং ট্র্যাকিং প্রোটোটাইপ (বর্ণনা পাবেন এখানে) এবং ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টেবিলিটি প্রজেক্টের আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম কোভিড-১৯ ডিএফআই ট্র্যাকার

কোভিড-১৯ মহামারিতে অনেক ক্ষেত্রে অর্থসাহায্য দেওয়া হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে। এই দিকটি বিশেষভাবে মাথায় রেখে এবং এই তহবিল নিয়ে নয়ছয় হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে জাতীয় পর্যায়ের ক্রয় ব্যবস্থা আরও উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। কার্যকর ও শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কিছু বেসরকারি সংগঠনও।

বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ প্রকল্প অনুসরণ এবং কিছু স্টোরি আইডিয়া

কোভিড-১৯ সামাল দিতে যে টাকা খরচ হচ্ছে, তা এখন সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। শুধু বিশ্বব্যাংকের নথিপত্র ঘেঁটেই এ ধরনের অনেক প্রতিবেদন করা সম্ভব। যেমন:

  • কোভিড-১৯ মোকাবিলায় পাওয়া অর্থ নিয়ে কী ধরনের প্রতারণা ও দুর্নীতি হচ্ছে?
  • আপনার দেশে এই অর্থ দিয়ে কী করার পরিকল্পনা করা হয়েছে?
  • বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে কেমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সে ক্ষেত্রে আপনার দেশ কেমন করছে?
  • এই অর্থ খরচের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাত সংস্কারের কোনো বিষয় জড়িত আছে কি না?
  • কেনাকাটার চুক্তিগুলো কি কোনো দরপত্র ছাড়াই করা হচ্ছে, নাকি প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে?
  • কী ধরনের চুক্তি সই হয়েছে?
  • কেনাকাটার পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন এসেছে?
  • ক্রয় প্রক্রিয়ায় কি সময় অনেক বেশি লাগছে?

কেনাকাটা ও চুক্তিসংক্রান্ত জাতীয় নথিপত্র এবং বিশ্বব্যাংকের নথিপত্র ব্যবহার করে আরও যত প্রতিবেদন হতে পারে:

  • কাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে?
  • ঠিকাদার কারা?
  • পণ্যগুলো কি সরবরাহ করা হয়েছে?
  • কাজটি কি শেষ করা হয়েছে?

চলুন, শুরু করা যাক।

বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ অর্থায়ন ট্র্যাক করার কৌশল

বিশ্বব্যাংকের অনেক প্রকল্প আছে। তবে এই গাইডে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে “কোভিড-১৯ ফাস্ট-ট্র্যাক ফ্যাসিলিটি”-র কথা বলা হয়েছে, যা মূলত চলতি মহামারি মোকাবিলার জন্য দরকারি কেনাকাটা সারতে দেওয়া হয়েছে ৭৫টি দেশকে।

“কোভিড-১৯ ইকোনমিক ক্রাইসিস অ্যান্ড রিকভারি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ফাইন্যান্সিং” নামের আরেকটি প্রকল্প আছে বিশ্বব্যাংকের, যেখান থেকে সহায়তা পাচ্ছে ৭০টি দেশ। এদের অনেকেই আবার ফাস্ট-ট্র্যাক প্রোগ্রামেও রয়েছে। এই প্রকল্প থেকে টাকা দেওয়া হয় মূলত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। যেমন সরকারি প্রকল্পে সহায়তা বা ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।

বেসরকারি খাতের জন্য বিশ্বব্যাংক যে সহায়তা দেয়, তা পরিচালিত হয় ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন-এর মাধ্যমে। কারা এখান থেকে সুবিধা পাচ্ছে, সে ব্যাপারে তাদেরকে আরও স্বচ্ছ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এরই মধ্যে।

পর্ব ১: বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা

প্রথম ধাপ: বিশ্বব্যাংক কি আপনার দেশে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কেনাকাটায় সহায়তা দিয়েছে?

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেই সংক্রান্ত একটি পেজ আছে বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে। তার প্রধান পাতায় স্ক্রল করে নিচের দিকে এলে “রিসোর্সেস” নামে একটি বক্স পাবেন। সেখান থেকে দেখে নিতে পারবেন, কোন কোন দেশে তাদের অর্থসহায়তা প্রকল্প চালু আছে। “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপ অপারেশনাল রেসপন্স টু কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস) প্রজেক্ট লিস্ট” নামের এই পেজ নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়।

প্রতিটি দেশ ধরে ধরে যে লিংকগুলো দেওয়া আছে, সেগুলোতে গেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাওয়া যাবে। এবং সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট মানুষদের নাম-ঠিকানা দেওয়া আছে। তবে সেখানে বিস্তারিত কিছু থাকে না। প্রতিটি দেশের জন্য যে আলাদা পেজ, সেখানে গিয়ে ডান দিকে “রিলেটেড” ট্যাবের নিচে প্রতিটি দেশের জন্য নির্দিষ্ট পেজের লিংক দেওয়া থাকে। যেমন: “ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইন বেনিন”। দেশ ধরে ধরে তৈরি করা এই পেজগুলো অবশ্য কোভিড-১৯ তহবিল নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে খুব বেশি কাজে আসবে না। তবে এখানে বিশ্বব্যাংকের আরও কিছু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নাম পাবেন।

অন্য আরও অনেক ভালো নথিপত্র এখানে পেয়ে যেতে পারেন।

দ্বিতীয় ধাপ: আপনার দেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম খুঁজে বের করা

বিশ্বব্যাংক যে দেশগুলোতে কোভিড-১৯ প্রকল্প পরিচালনা করছে, তা পাবেন এই প্রজেক্টস অ্যান্ড অপারেশনস পেজে। এখান থেকে একটি দেশ বেছে নিন।

তৃতীয় ধাপ: আপনার দেশে পরিচালিত কোভিড-১৯ প্রকল্পের নথিপত্র খুঁজে বের করা

প্রজেক্টস অ্যান্ড অপারেশনস পেজ থেকে আপনার বাছাই করা দেশটির পেজে যাওয়ার পর আপনি শুরুতেই দেখতে পাবেন পেজের শিরোনাম: “রিসেন্টলি অ্যাপ্রুভড প্রজেক্টস।”

এখান থেকে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রকল্পটি সিলেক্ট করুন। এখানে লেখা থাকবে: “কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট” অথবা “কোভিড-১৯ ইকোনমিক ক্রাইসিস অ্যান্ড রিকভারি ডেভেলপমেন্ট পলিসি।”

এখানে ক্লিক করলে আসবে “প্রজেক্ট ডিটেইলস” পেজ, যেখানে আপনি পুরো প্রকল্পটির ব্যয়, অর্থের উৎস, টিম লিডার ও প্রজেক্ট আইডি নাম্বারএমন সাধারণ সব তথ্য পাবেন।

টিম লিডারের নাম দেওয়া থাকলেও ইমেইল অ্যাডড্রেস দেওয়া থাকে না। তবে বিশ্বব্যাংকের কর্মীদের ইমেইল সাধারণত এ রকম হয়: (প্রথম নাম)(শেষ নাম)@worldbank.org।

এই পেজে স্ক্রল করে নিচের দিকে এলে দেখতে পাবেন “রেজাল্ট ফ্রেমওয়ার্ক”। এখানে খুব সংক্ষেপে, সরকারের ১২-২০টি নির্দিষ্ট ধরনের লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে। যেমন: “আইসোলেশন ব্যবস্থাযুক্ত স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র গড়ে তোলা।”

সতর্কতা: এই পেজের চার্টগুলোতে থাকা নম্বরগুলো দিয়ে কখনো শতকরা হার বোঝানো হয়েছে এবং কখনো কখনো সত্যিকারের নম্বর বোঝানো হয়েছে। রেজাল্ট ফ্রেমওয়ার্কে এই দুয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্যের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। তবে এখন আমরা যে পূর্ণাঙ্গ নথি (“প্রজেক্ট অ্যাপ্রাইজাল ডকুমেন্ট”) নিয়ে কথা বলব, সেখানে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে।

চতুর্থ ধাপ: অর্থ খরচসংক্রান্ত পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করা

এগুলো পাওয়ার জন্য, আপনার বাছাই করা দেশের “কোভিড-১৯ প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট” (আপনি যদি এখন পর্যন্ত এই নির্দেশনা অনুসরণ করে থাকেন, তাহলে আপনার এই পেজেই থাকার কথা) পেজের ওপরের দিকে “ডকুমেন্টস” লেখা বারে ক্লিক করুন।

এখানে আপনি পাবেন এই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট যাবতীয় নথিপত্র। সেগুলোর মধ্যে আছে “ইমপ্লিমেন্টেশন স্ট্যাটাস অ্যান্ড রেজাল্টস রিপোর্টস (আইএসআর)”, “প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানস”, “প্রজেক্ট অ্যাপ্রাইজাল ডকুমেন্ট (পিএডি)”, “এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিভিউজ (ইএসআর)” এবং আরও অনেক কিছু। যে দেশের জন্য সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, সেখানকার সরকারের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই নথিপত্রগুলো তৈরি করে বিশ্বব্যাংক।

প্রকল্পটির পুরো চিত্র ও কিছু বিস্তারিত তথ্যের জন্য পড়তে পারেন “প্রজেক্ট অ্যাপ্রাইজাল ডকুমেন্ট (পিএডি)।”

নোট: “কোভিড-১৯ ইকোনমিক ক্রাইসিস অ্যান্ড রিকভারি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ফাইন্যান্সিং”- এই প্রকল্পের জন্য আরেকটি প্রধান নথি “প্রোগ্রাম ডকুমেন্ট।”

পিএডি-তে বেশ কিছু বিস্তারিত তথ্য আছে। এখানে প্রকল্পটির লক্ষ্য এবং কীভাবে সাফল্য মূল্যায়ন করা হবে, তার মানদণ্ডের কথা বলা আছে। প্রাসঙ্গিক আরও অনেক পূর্বপ্রসঙ্গের উল্লেখ আছে। যেমন “প্রিপেয়ার্ডনেস” স্কেলে কোনো দেশের স্কোর কত। [সম্প্রতি, কিছু দেশের জন্য প্রকল্পের অগ্রগতিসংক্রান্ত একটি রিপোর্টও (আইএসআর) প্রকাশ করা হয়েছে।]

উদাহরণের জন্য দেখতে পারেন সিয়েরা লিওনের ২৭ মার্চের পিএডি ও ৮ জুলাইয়ের আইএসআর

আরও তথ্যের জন্য দেখুন “প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান।”

অনেক দেশের ক্ষেত্রেই, “প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান”-এর একাধিক ভার্সন পাওয়া যাবে। ফলে সবচেয়ে সাম্প্রতিক নথিটি দিয়ে শুরু করুন। (নোট: বিভিন্ন সময়ের নথিগুলো তুলনা করলে বুঝতে পারবেন যে কোন জিনিসগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে বা যোগ করা হয়েছে।)

পঞ্চম ধাপ: প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান পরীক্ষা

“প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান” লেখা লাইনে ক্লিক করার পর, আপনি একটি নথিসংক্রান্ত নির্দিষ্ট পেজে চলে যাবেন। এই নথিতে আপনি দেখতে পারবেন কী ধরনের জিনিস বা যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনা হয়েছে, কোথায় কোথায় ক্লিনিক বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এই নথি থেকেই আপনি গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য পাবেন। স্প্রেডশিটটি জুম করে আরও ভালো করে প্রতিটি অংশে গেলে আপনি দেখবেন:

  • সম্পন্ন হওয়া প্রতিটি চুক্তির একটি ছোট বর্ণনা।
  • প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ।
  • চুক্তি করার পদ্ধতি। এখানে খেয়াল করতে পারেন “নো কনট্রাক্ট বিড (এনসিবি)” ও “ডিরেক্ট কনট্রাক্টিং (সোল সোর্স)” পদ্ধতি কী পরিমাণে ব্যবহার করা হয়েছে।
  • বিডিং নোটিশ দেওয়ার তারিখ
  • চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাব্য তারিখ। কিছু প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখাতে পারে “ক্যানসেলড” বা “সাইনড” বা “পেন্ডিং ইমপ্লিমেন্টেশন।”

তবে কোন ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে, সেই তথ্য এখানে পাবেন না।

উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারেন ঘানার ১৮ জুলাইয়ের প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান

ষষ্ঠ ধাপ: বিশ্বব্যাংকের ওয়েবসাইটে আরও তথ্যের খোঁজ

আবার ফিরে যান “প্রজেক্ট ডিটেইলস” পেজে। সেখানে যাওয়ার জন্য আপনাকে আবার এই পেজে গিয়ে আপনার দেশ সিলেক্ট করতে হবে এবং “কোভিড-১৯ প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্রজেক্ট” লাইনে ক্লিক করতে হবে।

এবার এই পেজে আসার পর ওপরের দিকে “প্রকিউরমেন্ট” ট্যাবে ক্লিক করুন।

এই পেজে হয়তো দেখাতে পারে, “নো প্রকিউরমেন্ট নোটিশ অ্যাভেইলেবল ফর দিস প্রজেক্ট।” অথবা এখান থেকে আপনি পেতে পারেন কার সঙ্গে কী ধরনের কেনাকাটা-সংক্রান্ত চুক্তি করা হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য।

প্রতিটি চুক্তির জন্য আপনি এই তথ্যগুলো জানতে পারবেন:

  • চুক্তির উদ্দেশ্য কী, তা নিয়ে এক লাইনের বর্ণনা
  • ঠিকাদারের নাম
  • ঠিকাদারের ঠিকানা
  • চুক্তির সময়সীমা
  • চুক্তির আর্থিক পরিমাণ
  • চুক্তির রেফারেন্স নম্বর
  • চুক্তি করার তারিখ

অবশ্য বিশ্বব্যাংকের সাইটে মূল চুক্তিপত্রের লিংক থাকে না। তালিকাটি এখনো ছোট।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় যেসব কেনাকাটা করা হয়েছে, সেগুলোর আরও তথ্য পাবেন “প্রকিউরমেন্ট রেজাল্টস” নামের আরেকটি পেজে। এখানে কোভিড-১৯-সহ সব ধরনের কেনাকাটার তথ্য আছে। এই পেজে গিয়ে আপনি দেশ ধরে ধরে সার্চ করতে পারবেন, কিন্তু প্রকল্প ধরে সার্চ করতে পারবেন না। ফলে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোও আলাদা করে সার্চ করতে পারবেন না।

উদাহরণের জন্য দেখুন: কেনিয়ার প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান, যেখানে ভেন্টিলেটর কেনার জন্য ৪ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তির কথা উল্লেখ আছে।

পর্ব ২: দেশীয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য আরও যা কিছু জানতে হবে

বিশ্বব্যাংকের এই নথিগুলো থেকে আপনি ধারণা পাবেন, কোনো দেশের সরকার এই অর্থ দিয়ে কী করতে যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে নানা চুক্তি করার কাজ বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর হাতে ছেড়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তারা শুধু চুক্তিগুলো নিয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে। কিন্তু সেটিও অপূর্ণাঙ্গ ও দেরিতে প্রকাশিত হয়। ফলে আপনি যে দেশ নিয়ে কাজ করছেন, সেখানকার নানা পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণাও গুরুত্বপূর্ণ।

কোনো নির্দিষ্ট দেশের আইন ও প্রকিউরমেন্ট সংস্থাগুলো সম্পর্কে তথ্যের জন্য বিশ্বব্যাংকের এই ডেটাবেস দেখুন। এখান থেকে একটি দেশ বেছে নিন। এরপর ডান দিকে রিসোর্সের নিচে “পাবলিক প্রকিউরমেন্ট এজেন্সি” লিংকে ক্লিক করুন।

দুর্ভাগ্যবশত, কিছু দেশের ক্ষেত্রে এই পেজটি পাওয়া যেতে পারে অপূর্ণাঙ্গ অবস্থায়। এবং এটি ব্যবহার করাও কঠিন হতে পারে। আদর্শ অবস্থায়, এখানে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রকল্প আইডি নম্বরের রেফারেন্স থাকার কথা। (কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই তা অনুপস্থিত।)

কেনাকাটা-সংক্রান্ত এই প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখা মানে আপনাকে দরপত্র আহ্বান, চুক্তি স্বাক্ষরএমন নানা ধরনের উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি পড়তে হবে।

এই প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব হয়তো রিপোর্টিংকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। কিছু দেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের চুক্তি আছে, বড় প্রকিউরমেন্ট চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তার প্রাসঙ্গিক তথ্য উন্মুক্ত করতে হবে। তবে বিশ্বব্যাংক থেকে পাওয়া নানা তথ্য ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্য আপনাকে দেশটির নিজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে।

নোট: কিছু কাগজপত্রে বিশ্বব্যাংক বেশ খোলামেলা ও সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছে জাতীয় ক্রয় পদ্ধতি নিয়ে। কিছু দেশ এগুলো সংস্কারেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দীর্ঘ মেয়াদে এই তহবিলের ব্যয় অডিট করা বাধ্যতামূলক করেছে বিশ্বব্যাংক। ফলে, এই অডিট রিপোর্ট যদি প্রকাশিত হয়, তাহলে হয়তো অনেক কিছুরই পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব পাওয়া যাবে। তবে এর বাইরেও অনুসন্ধান করার মতো অনেক কিছু আছে।

অডিট প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ অর্থায়ন ট্র্যাক

ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তহবিলের খরচ নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন তৈরি করবে বিশ্বব্যাংক, বিভিন্ন দেশের সরকার ও বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষীয় প্রতিষ্ঠান।

এগুলো কত সহজে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে ভিন্নতা থাকতে পারে। কিছু হয়তো এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়ে গেছে; অন্যগুলো ভবিষ্যতে প্রকাশিত হবে।

কোন জিনিসগুলোর দিকে নজর রাখবেন:

বিশ্বব্যাংকের করা পর্যালোচনা

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেই নানা উপায়ে কোভিড-১৯ প্রকল্পগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে আইএসআর। বিভিন্ন সরকারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ত্রৈমাসিক প্রকল্প রিপোর্টগুলো লেখেন বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা। রিপোর্টগুলোতে বলা হয়, প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন দেশের সরকার কতটা সফল হতে পারছে।

বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, কোভিড-১৯ প্রকল্পগুলো সব সময় নজরে রাখবে তাদের প্রকিউরমেন্ট ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত একটি বিশেষ দল। কিন্তু তারা এই পর্যবেক্ষণগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ ছাড়া “জিও-এনাবলিং ইনিশিয়েটিভ ফর মনিটরিং অ্যান্ড সুপারভিশন (জিইএমএস)” এবং “ইটারঅ্যাকটিভ বেনিফিশিয়ারি মনিটরিং” পদ্ধতিতেও পর্যালোচনার পরিকল্পনা আছে বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু এ বিষয়ে খুব বেশি তথ্য এখনো জানা যায়নি।

বিশ্বব্যাংকের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন পলিসির অধীনে তথ্য চেয়ে আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে পারবেন এখান থেকে

প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবিরোধী বিধিমালা মেনে চলা নিশ্চিত করার জন্য, বিশ্বব্যাংক চাইলেই কোনো সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দেখার অধিকার রাখে। কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। তবে এমন তদন্তের ফলাফল বেশ কিছু সময়ের জন্য উন্মুক্ত করা হয় না। এই তদন্তগুলো পরিচালিত হয় বিশ্বব্যাংকের ভেতরে একটি স্বাধীন ইউনিট, ইন্টেগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি-র মাধ্যমে।

সরকারি মূল্যায়ন জোরদার করার তাগিদ 

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে কিছু দেশের সরকারকে বলা হয়েছে: কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলো নিরীক্ষা করার জন্য তৃতীয় কোনো পক্ষকে নিয়োগ দিতে।

যেমন, ১৫ জুলাইয়ের প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী, গাম্বিয়া বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে পেয়েছে প্রায় ১ কোটি ডলার। এর মধ্যে “এক্সটারনাল অডিট” বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ১১ হাজার ডলার। তৃতীয় পক্ষের করা এই অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্বব্যাংকের এক মুখপাত্র বলেছেন, “এমনটি না-ও হতে পারে। এ ধরনের কোনো আবশ্যিক শর্ত নেই।”

সরকারগুলো তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতেও অডিট পরিচালনা করতে পারে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছে, কিছু দেশের ক্ষেত্রে সক্ষমতার ঘাটতি এবং পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ আছে।

এই অডিট রিপোর্টগুলো কি উন্মুক্ত করা হবে? হয়তো না। কিন্তু এগুলোর অস্তিত্ব আছে, এটি জানা থাকলেও সেগুলোর খোঁজ শুরু করা যেতে পারে।

অন্যান্য রিসোর্স

সরকারের করা বিভিন্ন চুক্তিতে প্রতারণা ও দুর্নীতি শনাক্ত করার জন্য দেখুন জিআইজেএন-এর রিসোর্স গাইড: যখন আতশি কাচের নিচে সরকারি কেনাকাটা। এর একটি সারাংশ পাবেন এই এক পাতার টিপশিটে

বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে অনুসন্ধান বিষয়ে একটি ওয়েবিনারও আয়োজন করেছিল জিআইজেএন। এখানে অংশ নিয়েছিলেন ওপেন কন্ট্রাকটিং পার্টনারশিপের একজন বিশেষজ্ঞ এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এ ছাড়া ওপেন কন্ট্রাকটিং পার্টনারশিপ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত প্রকিউরমেন্ট ডেটা সংগ্রহ, ভিজ্যুয়ালাইজ ও প্রকাশ করার গাইড। বিশ্বজুড়ে নানা চুক্তি নিয়ে ভালো ভালো অনুসন্ধানের খবর থাকে ওসিপির সাপ্তাহিক নিউজলেটারে।

বিশ্বব্যাংকের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জরুরি তহবিলের অর্থ কীভাবে খরচ করা হচ্ছে, তার একটি ডেটাবেস (কোভিড-১৯ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইমার্জেন্সি রেসপন্স: প্রজেক্টস রিপোজিটরি) তৈরি করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক এনজিও দ্য ব্যাংক ইনফরমেশন সেন্টার। এখানে ক্রয়চুক্তির দিকে ততটা নজর দেওয়া হয়নি, তবে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় শনাক্ত করা হয়েছে।


টবি ম্যাকিনটশ জিআইজেএন রিসোর্স সেন্টারের সিনিয়র পরামর্শক। তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক রিপোর্টার ছিলেন এবং ৩৯ বছর ধরে বুমেরাং বিএনএ-এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।  তিনি অলাভজনক ওয়েবসাইট ফ্রিডমইনফো.ওআরজি-র সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। টবি আইঅনগ্লোবালট্রান্সপারেন্সি.নেট নামে একটি ব্লগ চালান।