২০১৮ সালের গরমে আটলাসজোর সাংবাদিকরা দুটি বিলাসবহুল বাহনের গতিপথ অনুসরণ করেন। তাদের একটি ছিল বিমান, এবং অপরটি প্রমোদতরী। এই দুটি বিলাস-বাহনে চেপে হাঙ্গেরীর প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান, তার ঘনিষ্টজন এবং শাসক দলের সদস্যরা – কখনো ফুটবল খেলা দেখতে, কখনো ব্যবসায়িক সভায় অংশ নিতে, কখনোবা ছুটি কাটাতে যেতেন। দামী এই দুটি বাহন কোথায় নিবন্ধিত হয়েছে, আমরা তা খুঁজে বের করি ; তাদের গতিপথের পুরনো ডেটা থেকে ভ্রমনের মানচিত্র তৈরি করি; এবং তাতে আরোহী অবস্থায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারী কর্মকর্তাদের ছবি তুলি।
এই স্টোরি প্রকাশের পর হাঙ্গেরিজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। কিন্তু সরকারপন্থী গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞরা উল্টো আমাদের অনুসন্ধান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, এতে অবৈধ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। কেউ কেউ তো এমনও বলেছেন, এই অনুসন্ধানের পেছনে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার হাত আছে। বলে রাখা ভালো, আমরা এখানে ওপেন সোর্স ডেটা ব্যবহার করেছি। যাবতীয় তথ্য ও রিসোর্স ইন্টারনেটেই পাওয়া যায়, এবং তা দিয়েই আমরা বিমান ও ইয়ট ট্র্যাক করেছি। এর পাশাপাশি সাধারণ ক্যামেরা ও ড্রোন দিয়ে আরোহীদের ছবি তুলেছি।
সত্যিকার অর্থে আমাদের শুধু প্রচুর শ্রম, ধৈর্য্য, একাগ্রতা এবং অর্থ খরচ করতে হয়েছে। প্রায় ছয় কোটি ডলার দামের বিমান এবং আড়াই কোটি ডলারের ইয়ট – দুটোই নিয়মিত ব্যবহার করতেন প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানসহ তার দলের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং শাসক দল ঘনিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। এই বিমানে চেপেই প্রধানমন্ত্রী একবার বুলগেরিয়া গিয়েছিলেন, ভিডিওটন ও লুডোগোরেটের মধ্যকার ফুটবল দেখতে।
অতি-ধনীরা সাধারণত নিছক নাম-ডাকেই সন্তুষ্ট হন না। তারা নিজেদের প্রাচুর্য সবাইকে দেখাতেও চান। দামী ঘড়ি, গাড়ি, প্রাসাদ সমান বাড়ি, বিলাসী বিমান আর প্রমোদতরীর মাধ্যমে তারা নিজেদের ধনী হিসেবে প্রমাণ করতে ভালোবাসেন। শুধু হাঙ্গেরি নয়, সব দেশের অতি-ধনীদের জন্যই এটি প্রযোজ্য। হাঙ্গেরির সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পদ নিয়ে এর আগেও রিপোর্ট হয়েছে। যেমন: ২০১০ সালে ফিদেস পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী অরবানের বাল্যবন্ধু লোরিঙ্ক মিসারোশের রাতারাতি শতকোটি ডলারের মালিক বনে যাওয়া। কিন্তু আমরা সম্পদের এই বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরেছি, যা সবাই সহজে বুঝতে পারে।
ইয়ট এবং প্লেন-স্পটার কমিউনিটির কারণে আমাদের অনুসন্ধান অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। ইন্টারনেটে বেশ কিছু ওপেন সোর্স ওয়েবসাইট আছে যাদের মাধ্যমে একেবারে রিয়েলটাইমে ইয়ট এবং বিমানের গতিপথ অনুসরণ করা যায়, এমনকি আর্কাইভ থেকে তাদের পুরনো ভ্রমণপথও বের করা যায়। যেমন: ভেসেলফাইন্ডার, মেরিনট্রাফিক, রেডারবক্স২৪ ও প্লেনফাইন্ডার। এই সাইটগুলো ব্যবহার করার জন্য কাজ চালানোর মত ইংরেজি জানলেই চলে। তবে আর্কাইভ পেতে হলে অনেকসময় টাকা খরচ করতে হয়। ইয়ট এবং প্লেন-স্পটাররা অনেকটা নিয়মিত নৌবন্দর এবং বিমানবন্দরে যান; খোঁজ নেন কোন ইয়টটি ভিড়লো বা ছেড়ে গেল, কোন বিমানটি উড়লো বা নামলো। তাদের অনেকেই ইয়ট বা বিমানের ছবি তোলেন, ভিডিও করেন। এমন অনেক সাইট আছে, যেখানে তারা এসব ছবি বা ভিডিও আপলোড করেন। কে কত ভালো ছবি তুললেন, এটি অনেকটা তার প্রদর্শনীর মত। চাইলে যে কেউ সেসব দেখতে পারেন।
২০১৮ সালের বসন্তে একজন প্লেন স্পটার আমাদের কাছে একটি গোপন খবর নিয়ে আসেন। জানান, বুদাপেস্ট বিমানবন্দরের যে টার্মিনালে প্রাইভেট জেট, অর্থ্যাৎ ব্যক্তিমালিকানাধীন বিমান ওঠানামা করে, সেখানে ঘন ঘন একটি বোম্বার্ডিয়ার জেট আসা-যাওয়া করছে। বিমানটির রেজিস্ট্রেশন কোড ওই-এলইএম। তখনই আমরা গুগলে সার্চ দিই। দেখা যায়, বিমানটি অনেক দামী। আমরা বুঝতে পারি, এই জেটটি যারা ব্যবহার করছেন তারা নিঃসন্দেহে বিত্তশালী। ঠিক ঐ দিন থেকে আমরা বিমানটির গতিপথ অনুসরণ করা শুরু করি। একজন ফটোগ্রাফারকে বিমানবন্দরে নিযুক্ত করি। তার দায়িত্ব ছিল বিলাসবহুল সেই উড়োজাহাজে যারা যাতায়াত করছেন, তাদের ছবি তোলা।
বিমানটির নিবন্ধন কোডের প্রথম দুই অক্ষর ”ওই” বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। এর মানে এটি অস্ট্রিয়াতে নিবন্ধিত। অস্ট্রিয়ার এভিয়েশন ডেটাবেস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা বেশ সহজ। সেখানে ওই-এলইএম লিখে সার্চ দিয়ে আমরা দেখতে পাই, বিমানটির মালিক ইন্টারন্যাশনাল জেট ম্যানেজমেন্ট নামের একটি অস্ট্রিয় কোম্পানি। এই তথ্য পাওয়ার পর আমাদের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়। কারণ, বিমানটি অস্ট্রিয় হলেও, এটি সবসময় বুদাপেস্ট বিমানবন্দরেই বসে থাকে, যতক্ষণ না কোন যাত্রী পায়। আমরা আরো দেখতে পাই, বিমানটির প্রকৃত মালিকদের নাম অস্ট্রিয় এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ গোপন রেখেছে। তারা শুধু কোম্পানিটির নামই প্রকাশ করেছে। এটি তখনই ঘটে, যখন কেউ গোপনে জেট পরিচালনা করতে চায়।
আমাদের জন্য আরেকটি বড় সাফল্য বয়ে আনে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে হাঙ্গেরির একটি অনলাইনে প্রকাশিত ছবি। তাতে দেখা যায় – অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে লেডি এমআরডি নামের একটি বিলাসবহুল প্রমোদতরীতে বসে আছেন, প্রধানমন্ত্রী অরবানের বন্ধু ও ধণাঢ্য ব্যবসায়ী লোরিঙ্ক মেসারোশ। ঐ দিন থেকে আমরা বিমানের পাশাপাশি সেই ইয়টটিকেও অনুসরণ শুরু করি। নৌযানটিকে নিয়ে আমাদের গবেষণাও চলতে থাকে সমান তালে। বেরিয়ে আসে, ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে আরো অনেক হাঙ্গেরিয় ধনকুবের এবং সরকারি কর্মকর্তা, সেই ইয়টে আতিথেয়তা নিয়েছেন।
কিছু কিছু সাইট আছে যেখানে ইয়টের ভ্রমণপথ নির্দিষ্ট অবস্থানসহ, রিয়েলটাইমে দেখা যায়। সেখানে ইয়টের ব্র্যান্ড, মডেল, আকার, এমনকি আগের যাত্রাগুলোর বিবরণও থাকে। তথ্যের সাথে স্পটারদের তোলা ছবিও পাওয়া যায়। এভাবেই আমরা খুঁজে পাই ইয়টটির আদি নাম ছিল, লেডি এম। এটি প্রথমে নিবন্ধিত হয় কেইম্যান আইল্যান্ডে, পরে স্থানান্তরিত হয় মাল্টার রেজেস্ট্রিতে।
প্রমোদতরীটির মালিক কে – তা নিশ্চিত হতে আমরা তিনটি পথ অবলম্বন করি। প্রথমে ইনভেস্টিগেটিভ ড্যাশবোর্ডে তথ্যের জন্য আবেদন পাঠাই, তারপর আইসিআইজের অফশোর লিকস ডেটাবেসে খোঁজ করি, এবং এর পাশাপাশি মাল্টার সাংবাদিকদের মাধ্যমে তাদের স্থানীয় রেজিস্ট্রি থেকে তথ্য সংগ্রহ করি। কাগজপত্রে দেখা যায়, ইয়টটির মালিকানা স্থানীয় কোম্পানি এলঅ্যান্ডএল চার্টার লিমিটেডের নামে। তার মালিক আবার মাল্টারই আরেকটি প্রতিষ্ঠান, যারা এমন আরো ২০০টি অফশোর কোম্পানি পরিচালনা করে।
ওই-এলইএম এবং লেডি এমআরডিকে অনুসরণ করতে গিয়ে আমরা দেখতে পাই, সেই গ্রীষ্মে দুটি বাহনের ভ্রমণপথই একাধিকবার কয়েকটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। অর্থ্যাৎ, ইয়ট এবং বিমান দুটোই একই সময়, একই জায়গায় গেছে। এটি দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিই, এর আগে তারা একসঙ্গে যেসব জায়গায় গিয়েছে, তার মানচিত্র সংগ্রহের। কিন্তু বিমান এবং জাহাজ ট্র্যাকিংয়ের বেশিরভাগ সাইট থেকে আর্কাইভ বা পুরনো তথ্য টাকা দিয়ে কিনতে হয়। এটিই তাদের আয়ের উৎস। তার মানে, এই তথ্য পেতে হলে আমাদেরও টাকা দিতে হবে। কিন্তু টাকার অংকের চেয়ে প্রাপ্তিটা বড় ছিল। তাই আমরা তথ্য কেনার সিদ্ধান্ত নিই। এভাবে লেডি এমআরডির পুরনোর যত “পোর্ট কল” এবং ওই-এলইএমের ফ্লাইট রুটের যাবতীয় পুরনো তথ্য আমাদের হাতে আসে।
প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা বিমান বা ইয়টের যাত্রীদের ছবি কিভাবে পেলাম। জাহাজ হোক বা বিমান – বন্দর ত্যাগের আগে তাদের সবাইকে গন্তব্যের নাম ঘোষণা করতে হয়। এর অর্থ হচ্ছে, যখনই লেডি এমআরডি বা ওই-এলইএম বন্দর ছেড়েছে, তখনই আমরা জেনে গেছি তারা কোথায় যাচ্ছে। সেই সূত্র ধরে আমরা আগেই ফটোগ্রাফার পাঠিয়ে দিয়েছি, তাদের গন্তব্যে। বাহন দু’টি বুদাপেস্ট বিমানবন্দর বা ক্রোয়েশিয়ার অ্যাড্রিয়াটিক সাগরতীরে পৌঁছানো পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করেছেন। পৌঁছানোর পর নিজেদের ক্যামেরা বা ড্রোনে তারা ছবি তুলেছেন।
২০১৮ সালের ১৬ই আগস্টে, ওপাশিয়ার কাছে অ্যাড্রিয়াটিক সাগরতীরে দ্য লেডি এমআরডি।
লেডি এমআরডি এবং তার যাত্রীদের রিয়েকা বন্দরে আসার ভিডিও ছিল আমাদের কাছে। সেটি দেখে সরকারপন্থীদের অনেকেই মনে করেছেন এর পেছনে বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার (তিন অক্ষরে পরিচিত) হাত আছে। কিন্তু গুগলে সার্চ করলেই দেখতে পাবেন, রিয়েকা বন্দরের একটি লাইভ ক্যামেরা স্ট্রিম আছে। তাতে দেখা যায়, বন্দরটিতে কোন জাহাজ আসছে বা যাচ্ছে। যে কেউই ইন্টারনেটে এই লাইভ স্ট্রিম দেখতে পারেন। লেডি এমআরডি সেই ক্যামেরার কাছ দিয়েই বন্দর ছেড়ে যায়। এর ফলে আমরাও তার ভিডিও পেয়ে যাই। জাহাজটি যখন ভিড়েছে, অথবা তার যাত্রীরা যখন কালো একটি মিনিভ্যান থেকে বন্দরে নামছে – এমন সময়ে আমাদের কাজ ছিল শুধু ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে লাইভ ভিডিও রেকর্ড করা।
এই ভিডিও যে আমরা নেহাত ঘটনাচক্রে পেয়েছি, তা নয়। অনেক দিন ধরেই রিয়েকা বন্দরের ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। আমরা এও জানতাম ওই-এলইএম বিমানটি ঠিক কখন রিয়েকার বিমানবন্দরে নামছে। যখন দেখতে পাই জাহাজটির নাবিকরা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন এবং যাত্রীদের স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন – তখনই আমরা রেকর্ড শুরু করি। আমাদের একজন রিপোর্টারকে এই কাজের জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার সামনে দু’টি ল্যাপটপ ছিল। একটিতে সে তার স্বাভাবিক কাজ করতো, অন্যটিতে বন্দরের লাইভ স্ট্রিম চলতো এবং সেই বিলাসবহুল বিমানের গতিপথ অনুসরণ করা হতো।
২০১৮ সালের ২০ আগস্ট, ক্রোয়েশিয়ার রিয়েকা বন্দরে দ্য লেডি এমআরডি।
২০১৮ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে এসে, দুই বিলাসবহুল বাহনের গতিপথ এবং তাদের এক জায়গায় মিলিত হওয়ার জায়গাগুলোকে একটি মানচিত্রে আনা শুরু করি। প্রথমে আমরা একটি স্প্রেডশিট তৈরি কেরি। সেখানে বিমান ও ইয়টটির যাত্রা, গন্তব্য, তারিখ এবং সময় লিপিবদ্ধ করি। এই তথ্য থেকে তৈরি করা হয় গতিপথের মানচিত্র। দেখা যায়, দু’টি বাহন কয়েক দফা একই সময়ে একই জায়গায় গিয়েছে। শুরুর দিকে, আমাদের কাছে শুধু যাত্রা ও গন্তব্যের নাম এবং সময় ছিল। কিন্তু মানচিত্র তৈরির জন্য প্রতিটি জায়গার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ বের করা জরুরি হয়ে পড়ে। আমরা প্রতিটি যাত্রার জন্য আলাদা পরিচিতি নম্বর দিই, যাতে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক মানচিত্রে ধরা পড়ে।
স্প্রেডশিট থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো, দু’টি বিলাসবহুল বাহন গেল ছয় মাসে একাধিকবার একই জায়গায় গেছে। কিন্তু মানচিত্রে রেখা এঁকে সংযোগ দেখানোর মাধ্যমে বিষয়টি আরো পরিষ্কার করে বোঝানো সম্ভব হয়। সেখান থেকে ভ্রমণপথের একটি প্যাটার্নও আমাদের সামনে ফুটে ওঠে। বিমানটি সাধারণত বুদাপেস্ট বা ভিয়েনা থেকে উড়তো, তার গন্তব্য হত এমন এক শহর যেখানে ইয়টটি ভিড়েছে। এই শহরগুলোর মধ্যে আছে ইতালির ক্যাস্তেলামারে দি স্তাবিয়া, পোর্তো দেল এতনা, এবং কালাপোন্তে; ক্রোয়েশিয়ার রিয়েক, পুলা, ওপাশিয়া, দুবরোনভিক এবং সাভতাত; মন্টেনিগ্রোর পোডগোরিসা, তিভাত, কোতর এবং হেরসেগ নভি।
ম্যাপ তৈরি করতে গিয়ে অনেক ঝামেলা হয়েছে। আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় ছিল, মানচিত্র যাতে পরিস্কার বোঝা যায়। এজন্য আমরা ম্যাপবক্স ব্যবহার করি। এই সফটওয়্যারে শুধু দেশের সীমারেখা দেয়া থাকে। আমরা রংও বাছাই করি আটলাসজোর ব্র্যান্ডিংয়ের সাথে মিলিয়ে (লাল, কালো, নীল ও সাদা)। তার সাথে আমাদের দেখাতে হয়, ১৫৪টি বন্দর এবং ভ্রমণ পথ। আমরা প্রতিটি রুট ধরে একেটি পয়েন্টকে যুক্ত করি। এর পাশাপাশি, ঘটনাপ্রবাহকেও সাজাতে থাকি। এভাবে সময় ধরে ধরে প্রতিটি যাত্রা আলাদাভাবে মানচিত্রে উঠিয়ে আনা সম্ভব হয়। স্বচ্ছতার খাতিরে মানচিত্র এবং তার নেপথ্যের ডেটাবেস – দুটোই আমরা অনলাইনে প্রকাশ করেছি।
তিন মাসের এই অনুসন্ধান থেকে আমরা যা পেয়েছি, তা প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে। এর জের ধরে গোটা দেশে বিতর্কের ঝড় ওঠে। আটলাসজো যখন প্রতিবেদনটি তৈরি করে, তখন সরকার থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। কিন্তু প্রকাশের পরই প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়া জানান, হুমকির মাধ্যমে।
“কেউ যদি আমাদের আঘাত করে, আমরাও তার জবাব দেব,” সরকারি রেডিও চ্যানেলকে দেয়া নিয়মিত সাক্ষাৎকারে বলেন অরবান। “যেমন কর্ম, তেমন ফল-ই ভোগ করতে হবে সবাইকে।”
এর পরে সরকার সমর্থক গণমাধ্যমসহ গোটা সরকারী প্রোপাগান্ডা মেশিন আমাদের ওপর হামলে পড়ে। তাদেরকে এমন শিরোনামও করতে দেখা যায়: সরকার-ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি করতে মানুষবিহীন উড়োজাহাজ ব্যবহার করছেন জর্জ সরোস।” বলে রাখা ভালো, এই প্রতিবেদনের জন্য কয়েকটি বড় পুরস্কার জিতেছে আটলাসজো; যার মধ্যে প্রাইজ ফর কোয়ালিটি জার্নালিজম এবং ট্রান্সপারেন্সি-সোমা প্রাইজ ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজমও রয়েছে।
কাতালিন এরদি বুদাপেস্ট-ভিত্তিক অলাভজনক অনুসন্ধানী নিউজরুম, আটলাসজো-র অনুসন্ধানী সাংবাদিক। এরদি, সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন থিক স্কিন-এর ব্লগ দিয়ে। আটলাসজো-র সঙ্গে কাজ করছেন ২০১২ সাল থেকে। হাঙ্গেরির রাজনৈতিক দুর্নীতি ও বিভিন্ন সরকারী চুক্তি নিয়ে তিনি বিশেষভাবে কাজ করেন।
আতিলা ব্যাতোরফি একজন ডেটা সাংবাদিক। তিনি আটলাসজো-র ডেটা সাংবাদিকতা দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। এর আগে তিনি ছিলেন ক্রিয়েটিভ ম্যাগাজিন ও ভিএস ডট এইচইউ-এ। প্রতিষ্ঠা করেছেন ডেটা সাংবাদিকতা ও ভিজ্যুয়ালাইজেশনের ব্লগ ও কমিউনিটি, ডেটাবানিয়া। ডেটা সাংবাদিকতা নিয়ে প্রশিক্ষণও দেন ব্যাতোরফি।
তমাস বোদোকি আটলাসজো-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও পরিচালক। এর আগে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন সাপ্তাহিক ম্যাগার নারাঞ্জ-এ। সম্পাদনা করেছেন হাঙ্গেরির অন্যতম প্রধান নিউজ সাইট ইনডেক্স ডট এইচইউ। ২০১১ সালে আটলাসজো শুরুর আগে তিনি জিতেছেন বেশ কয়েকটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পুরস্কার।