ছোট নিউজরুমগুলোতে বেশিরভাগ সময়ই সম্পদের স্বল্পতা থাকে। যে কারণে এসব প্রতিষ্ঠানকে সফল ও টেকসই অবস্থায় নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু ১১তম গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে ছোট সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে কাজ করা সাংবাদিকরা জানালেন, টেকসই ব্যবসা দাঁড় করানো একেবারে অসম্ভব নয়। সুইস সাময়িকী রিপাবলিকের রিপোর্টার সিল্ক গ্রুনওয়াল্ড বলেছেন, “সাংবাদিকতারও যে ব্যবসায়িক মডেল থাকতে পারে, আমরা তার পক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরেছি মাত্র।”
দেখে নেয়া যাক, ছোট নিউজরুমের জন্য অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের পরামর্শ।
সহযোগিতা
ছোট নিউজরুমের বাজেট সাধারণত কমই থাকে। তাই অন্য নিউজরুম বা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোলাবরেশন, অর্থ্যাৎ সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করার চেষ্টা করতে পারেন। এজন্য অনেক পরিকল্পনা দরকার। জেনে নিন কীভাবে করবেন।
নেটওয়ার্ক: সমমনা মানুষদের খুঁজে বের করার জন্য দারুন একটা জায়গা হতে পারে বিভিন্ন সম্মেলন। আপনি কী ধরনের কাঠামোতে কাজ করতে চান, তা আগে চিন্তা করে নিন: স্বাধীন নেটওয়ার্ক চান, নাকি শুধুই তথ্য আদান-প্রদানের জায়গা? নাকি সহযোগিতার একটি উন্মুক্ত ক্ষেত্র, যেখানে সবাই যোগ দিতে পারে? আপনার কি নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্য কোনো রিপোর্টারের সহযোগিতা হলেই চলবে? নাকি কাঠামো এমন হবে, যেখানে শুধু অনুমোদিত সদস্যরাই অংশ নিতে পারবে? অন্যদের সঙ্গে বিশ্বাসপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন, সেখানে সময় দিন এবং কথা বলুন অর্থায়ন ও আইনি সহায়তা নিয়ে।
দল গড়ে তুলুন: দল গড়ার ক্ষেত্রে যতটা পারা যায় বৈচিত্র্যপূর্ণ থাকুন। বিভিন্ন অঞ্চলের সাংবাদিকদের এখানে যুক্ত করুন; খেয়াল রাখুন যেন নারী-পুরুষ উভয়েই থাকে। আর আপনি যদি আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার কথা চিন্তা করেন, তাহলে দলে ভেড়ান বিভিন্ন ভাষার মানুষদের। এমন মানুষদের সঙ্গে জোট বাঁধুন যাদের দক্ষতা, সোর্স ও নেটওয়ার্কের মধ্যে বৈচিত্র্য আছে। সিদ্ধান্ত নিন, কে বা কারা দলটিকে নেতৃত্ব দেবে। নিজেরা কোন ভাষায় যোগাযোগ করবেন, ঠিক করে নিন। অনুসন্ধানে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন? অনলাইন ও অফলাইন, দুই ক্ষেত্রেই নিজেদের নিরাপত্তার জন্য কী করবেন- এই পরিকল্পনাগুলো আগেই তৈরি করুন। কোন সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, তার তারিখ ঠিক করুন সবাই মিলে। আলাপ করুন অর্থায়ন নিয়ে। দেখুন, কে কত টাকা যোগান দিতে পারছে।
সহযোগিতা গড়ে তুলুন ও ধরে রাখুন: যতটা সম্ভব সামনাসামনি দেখা করুন। নিরাপত্তা বজায় রেখে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। যৌথ-প্রকল্প ব্যবস্থাপনার কিছু অ্যাপ আপনাকে সাহায্য করতে পারে। সেখানে দেখতে পারবেন, কে কী করছে।
অনুসন্ধান করুন ও প্রতিবেদন লিখুন: রিপোর্টিংয়ের সময়, সবাই মিলে আলোচনা করে সাংবাদিকতার একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করুন। যেমন, সুইজারল্যান্ডের চেয়ে জার্মানিতে গোপন ক্যামেরা ব্যবহার করা বেশি কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করবেন এবং তার নৈতিক ভিত্তি কী হবে – এসব বিষয়ে আপনাদের একমত হতে হবে।
প্রকাশ করুন: গল্প বলার ধরণ একেক দেশে একেক রকম হতে পারে। গ্রুনওয়াল্ড বলেছেন, “এক দেশে যাকে সোপ অপেরা বলে বিবেচনা করা হয়, অন্য দেশে তাকেই সংবাদ পরিবেশনের সেরা মাধ্যম হিসেবে ধরা হতে পারে।” তথ্য যাচাইয়ের ব্যাপারগুলো কীভাবে সামাল দেবেন, সে ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিন।
খোঁজ করতে থাকুন: প্রকাশ হয়ে যাওয়া মাত্রই একটা গল্প শেষ হয়ে যায় না। গ্রুনওয়াল্ড বলেছেন, প্রকাশের পরও “অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার মতো পর্যাপ্ত দম রাখুন।”
সংখ্যা নয়, নজর দিন গুনগত মানে
ছোট নিউজরুম হিসেবে, আপনাকে সম্পদ কাজে লাগাতে হবে বিচক্ষণতার সাথে। একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনাকে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে হবে। তারপর জানতে হবে সেই বিষয়ে পাঠক কী চায়। তাকে কেন্দ্র করেই ঠিক করুন আপনি কী নিয়ে রিপোর্ট করবেন। বিষয় নির্বাচন করার সময় একনিষ্ঠ ও কৌশলী থাকুন। গ্রুনওয়াল্ড বলেছেন, “আপনাকে শিখতে হবে কীভাবে না বলতে হয়।”
প্রকাশের সঠিক সময় নির্ধারণ করুন
ছোট নিউজরুম হিসেবে আপনি যদি প্রভাব তৈরি করতে চান, তাহলে প্রতিবেদন তৈরি ও তা প্রকাশের সঠিক সময় নির্ধারন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবার আগে রিপোর্ট প্রকাশ করা নিয়ে বড় নিউজরুমগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় নামবেন না। অনেক সময় ধরে আরো অনুসন্ধান করাটাই আপনার জন্য ভালো।
পুয়ের্তো রিকোর সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এর নির্বাহী পরিচালক কার্লা মিনেট বলেছেন, “লেগে থাকাটাই প্রধান ব্যাপার।” উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ফাঁস হওয়া আলাপ নিয়ে রিপোর্ট করেছিল তাঁর অনুসন্ধানী দল। এর ফলে শেষপর্যন্ত পদত্যাগ করতে হয়েছিল পুয়ের্তো রিকোর গভর্নরকে।
তিনি বলেছেন, “আলাপচারিতাটা পাওয়ার জন্য সোর্সের সঙ্গে লেগে থাকার ধৈর্য্য দেখিয়েছিলাম আমরা। প্রকাশের প্রথম সপ্তাহেই প্রতিবেদনটি পড়েছিল ১০ লাখেরও বেশি মানুষ। একই দিনে, মানুষ রাস্তায় নেমে এসে প্রতিবাদ শুরু করেছিল।”
নিউজরুমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করুন
বড় বড় মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে ছোট নিউজরুমগুলোকে নিজেদের কাজটা করতে হবে খুব দক্ষতার সাথে। ফলে আপনার কর্মীদের দক্ষ করে তুলতে হবে। মিনেট বলেছেন, “আপনি যে কাজটি করছেন, তাতে আপনাকে খুবই দক্ষ হতে হবে। কাজেই দলের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়াটা জরুরি।”
নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন
আপনি যদি জনসম্পৃক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন, তাহলে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, ঘটনা অস্বীকার ও আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন; এগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকুন। বড় গণমাধ্যমের তুলনায় ছোট নিউজরুমে এসব হুমকি-হামলার আশঙ্কা বেশি থাকে। পেরুর আইডিএল-রিপোর্তেরোসের অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোমিনা মেল্লা জানিয়েছেন, তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিকদের আত্মরক্ষা ও ডিজিটাল নিরাপত্তার প্রশিক্ষণ দেন। আপনি এখানে একজন আইনজীবীকেও অন্তর্ভূক্ত করতে পারেন। কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে সহযোগী সংগঠনের খোঁজ করতে পারেন। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে আপনি কিছুটা নিরাপদে থাকবেন। ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের অধীনে প্রতিবেদন প্রকাশের কথা বিবেচনা করতে পারেন। এতে অন্যরা এটি পুনঃপ্রকাশ করতে পারবে।
লিওনি কিজেস্কি কলম্বিয়া ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার। তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, ভয়েস অব আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি পত্রপত্রিকায়। তিনি বলতে পারেন জার্মান, ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ ও ডাচ ভাষায়। কলম্বিয়ার নম পেন পোস্টে কাজ করেছেন সাব-এডিটর ও রিপোর্টার হিসেবে। লিওনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়েছেন আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে।
That’s good idea. Thanks for advice & teach me