ভালো রিপোর্টাররা সবসময়ই সরকারি নথিপত্রের পেছনে ছোটেন – সরকার বা ক্ষমতাধররা তা যতই আড়াল করে রাখুক। সাক্ষাৎকার আর প্রাসঙ্গিক গবেষণার সাথে মিশিয়ে উপস্থাপন করতে পারলে, এই সব নথিপত্রই অনুসন্ধানী রিপোর্টকে আরো দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করায়, বের করে আনে দুর্নীতি, আনে সংষ্কার।
অবশ্য সরকারি নথির বাইরেও কিছু রেকর্ড থাকে, যেমন বেসরকারি বা ব্যক্তিগত নথি। কিছু সাংবাদিক এমন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে রিপোর্ট করেছেন। এই রেকর্ডগুলোও একই রকম কার্যকর এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবেদনে যোগ করতে পারে অভাবনীয় মাত্রা।
ব্যক্তিগত নথিপত্রের প্রশংসা করে ২০০৩ সালে পয়েন্টার অনলাইনে আমি একটি লেখা লিখেছিলাম। সেখানে প্রোপাবলিকা ইলিনয়ের প্রধান সম্পাদক লুই কিয়েরনান বলেছিলেন, “মানুষ সম্ভাব্য সব রকম পদ্ধতিতে নিজের জীবনটাকে রেকর্ড করে।” তিনি আরো বলেন, “তাঁরা যা লেখেন বা তাঁদের সম্পর্কে যা লেখা হয়, তা বেশিরভাগ সময়ই তাঁদের মুখের কথার চেয়ে বেশি সত্যি।” শিকাগো ট্রিবিউনে থাকার সময় পুলিৎজার পুরষ্কার জিতেছিলেন কিয়েরনান। তখন, আত্মহত্যা করেছেন এমন এক নারীর পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ডায়েরি থেকে উদ্বৃতি ব্যবহার করেছিলেন তিনি। মৃত্যুপথযাত্রী এক অধ্যাপকের প্রোফাইল তৈরির জন্য শিক্ষক মূল্যায়নের সব কাগজপত্র ঘেঁটে ফেলেছিলেন তাঁর এক সহকর্মী। (আপনি উপরের লিঙ্কে গিয়ে অন্য আরো অনেক উদাহরণ খুঁজে পাবেন। ইন্টারনেট আর্কাইভের ওয়েব্যাক মেশিন, আপনাকে মেয়াদোত্তীর্ণ লিংক খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।)
প্রোপাবলিকা ইলিনয়ের সাংবাদিকরা গত অক্টোবরে কিয়েরনানের নির্দেশনায় “উই উইল কিপ অন ফাইটিং ফর হিম” শিরোনামের একটি অনুসন্ধানী ন্যারেটিভ প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনের মূল উপাদান ছিল অদ্ভুত এক ব্যক্তিগত নথি। অষুধ কোম্পানীগুলো কোনো ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে তা মানুষের ওপর পরীক্ষা করে। এই অনুসন্ধানে বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ভোগা শিশুদের ওপর তেমনই এক পরীক্ষার প্রভাব উদঘাটন করা হয়। এর আগে শিকাগোর ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনই এক ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন সাংবাদিক জোডি এস.কোহেন। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন এই অনুসন্ধান শুরু করেন কোহেন। আর এই কাজে তাঁর সাথে জোট বাঁধেন এনগেজমেন্ট রিপোর্টার লোগান ইয়াফি।
ওষুধ কোম্পানীর এই গবেষণায় যেসব পরিবার অংশ নিয়েছিলেন তাদের সাথে যোগাযোগ শুরু করেন ইয়াফি। আর এভাবেই অ্যালিন নামের এক মায়ের অনলাইন জার্নাল খুঁজে পান তিনি। সেই রোজনামচা লেখা হয় ২০১০ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে। সেখানে তিনি লিখেছেন একটি গবেষণায় অংশ নিয়ে তাঁর ১০ বছর বয়সী সন্তান উইলসনের মারাত্মক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায় ভোগার কথা। (পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষার জন্য প্রোপাবলিকার চুক্তি অনুযায়ী এখানে তাদের মাঝের নাম অ্যালিন এবং উইলসন ব্যবহার করা হয়েছে।)
তারপর অভাবনীয় এক ঘটনা ঘটে। প্রোপাবলিকা তাদের রিপোর্টের অর্ধেকটাই ঘুরিয়ে নিয়ে যায় সেই মা এবং ছেলের দিকে। আদর্শ একটা প্রতিবেদন যেমন হয়, কিছুটা বর্ণনা, কিছুটা বক্তব্য – যেখানে গল্পের নিয়ন্ত্রণ থাকে লেখকের হাতেই – তেমনটা না করে এই স্টোরির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া হয় গল্পের চরিত্রদের ব্যক্তিগত ন্যারেটিভের ওপর। কিয়েরনাানের মতে, “এখানে তাঁরা নিয়ম ভেঙ্গেছেন, তবে সঠিক উপায়ে।” কোহেন ও ইয়াফি এই স্টোরিতে এমন একটি অপ্রচলিত কাঠামো তৈরি করেন, যা নথিপত্র, সাক্ষাৎকার ও গবেষণার গতানুগতিক ন্যারেটিভ থেকে বেরিয়ে একটি পরিবারের দুর্দশার ব্যক্তিগত দিনলিপির দিকে সরে যায়।
রিপোর্টাররা এখানেই থেমে থাকেননি। তাঁরা মা এবং ছেলেকে উদ্ধুব্ধ করেছেন অতীতে ফিরে যেতে, উইলসনের ওপর চিকিৎসা পদ্ধতির যে মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। আর অ্যালিনের আট বছর আগের সেই অভিজ্ঞতা জোড়া দিয়ে একটি রিয়েল-টাইম ইন্টার্যাক্টিভ প্রেজেন্টেশন তৈরি করেন ডিজাইনার রব ওয়েচার্ট।
এভাবেই তৈরি হয় একটি দুর্দান্ত স্টোরি, যেখানে ক্ষমতার অপব্যবহার দেখে পাঠক কখনো ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন, কখনোবা তাদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে মানুষের চরম কষ্ট বুঝতে পেরে। একটি ব্যক্তিগত রোজনামচার শক্তি কতোখানি হতে পারে, তাও এই রিপোর্টে প্রকাশ পায়। ন্যারেটিভ বা বর্ণনামূলক লেখায় অভ্যস্ত সাংবাদিকদের জন্য এটি একটি শিক্ষা হয়ে থাকবে। ইয়ারবুক, চিঠি, ডায়েরি, ছবির মত ব্যক্তিগত উপকরণ যে কীভাবে আপনার স্টোরিটেলিং বদলে দিতে পারে, তুলে ধরতে পারে গভীর কোনো বাস্তবতা, এটি তাঁর বড় উদাহরণ।
এমন স্টোরিতে সবসময় তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ বা কঠিন পরিশ্রম করার দরকার পড়েনা। চিলেকোঠা, বেজমেন্ট আর পুরোনো বাক্সের ভেতরে খুঁজে দেখার জন্য সোর্সদের অনুরোধ করলেই, লেখক পেতে পারেন কারো জীবনের অজানা অধ্যায় বা ইতিহাস উন্মোচন করা নথিপত্র।
যে ধরনের রিপোর্টিং, লেখনী ও পারষ্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই অসাধারণ স্টোরিটি তৈরি হয়েছে, তাঁর পেছনের গল্প জানার জন্য নিম্যান স্টোরিবোর্ড যোগাযোগ করে, প্রোপাবলিকা ইলিনয়ের সাথে। নিচে রইল, ডেপুটি এডিটর স্টিভ মিলস এবং অনুসন্ধানী দলের সাথে ইমেইলে হওয়া সেই কথোপকথনের মূল অংশ।
সাধারণত সাংবাদিকরা তাদের নিজের মত করেই স্টোরি লেখে, যার প্রধান ভিত্তি হয় সাক্ষাৎকার। কিন্তু,“উই উইল কিপ অন ফাইটিং ফর হিম”-এ অর্ধেকের বেশি অংশ গড়ে উঠেছে – একজন মা এবং তাঁর সন্তানকে ঘিরে। এই অ্যাপ্রোচের কারণ কী?
লোগান ইয়াফি: আমাদের একটু পেছনে ফিরে স্মরণ করা দরকার, অ্যালিনের কাছ থেকে প্রথম কীভাবে ঘটনাটা শুনি। জোডি কোহেনের প্রথম অনুসন্ধান প্রকাশ হওয়ার পরে আমরা আশা করেছিলাম, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. মানি পাভুলুরির গবেষণায় অংশ নেয়া ব্যক্তিদের সাড়া পাবো। কারণ গোপনীয়তার দোহাই দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্যই দিচ্ছিলো না। আমরা তারপরও কথাগুলো বলতে চেয়েছি। (আমাদের নিউজলেটার থেকে পড়ুন: হোয়াট উই লার্ন্ড ফ্রম লেটিং আ মাদার অ্যান্ড হার সান টেল দেয়ার ওউন স্টোরি।) অ্যালিনের মেয়ে কাজ করতেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে। তিনি মা-কে জোডির আগের স্টোরিটি মেইল করেন। সেটি পড়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন অ্যালিন। জানান, পাভুলুরির গবেষণায় তাঁর ছেলে অংশ নিয়েছে এবং তিনি সেই অভিজ্ঞতা একটি ব্যক্তিগত জার্নালে লিখে রেখেছেন।
প্রথমে জোডি, লুইজি, স্টিভ এবং আমি, সেই জার্নালের পুরোটা পড়ি। এটি আমাদের সবাইকেই স্পর্শ করে। আমরা বুঝি, লেখাটা কেবল একটি শিশুর ওপর গবেষণার প্রভাব নিয়ে নয়। সেটি মানসিক অসুস্থতার সাথে যুদ্ধ করে যাওয়া একটি পরিবার নিয়ে, তাদের ভালোবাসা, হতাশা আর আশা নিয়ে – যে আশায় বুক বেঁধে তাঁরা গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন।
আমরা সবাইই অনুভব করতে পেরেছিলাম, রুক্ষতা, আবেগ এমনকি ভুল বানানও অ্যালিনের জার্নালের লেখার এবং আমাদের গল্পের একটি অংশ। গল্পটি তাঁর এবং তাঁর পরিবারের। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নথিপত্রের ওপর নির্ভর করে। আর এক্ষেত্রে অ্যালিনের জার্নালটিই ছিলো সেই নথি। আমরা এই ডকুমেন্টকে যেভাবে আছে সেভাবেই রক্ষা করতে চেয়েছি, কারণ এটাই তাঁর গল্পের সঠিকতম রূপ।
ব্যক্তিগত সেই ডায়েরি নিয়ে আপনারা কী প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত নেন?
জোডি এস. কোহেন: ইউআইসিতে ওষুধ পরীক্ষার সমস্যা নিয়ে আমাদের প্রথম অনুসন্ধান প্রকাশিত হওয়ার অল্প কিছুদিন পরেই অ্যালিন আমাদের ইমেইল করেন। তিনি তাঁর ছেলের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বিস্তারিত জার্নাল লিখেছেন বলে উল্লেখ করেন। আমরা অবশ্যই “এখানে কেমন সম্ভাবনা আছে” তা নিয়ে ভেবেছি।
অ্যালিনের সাথে আমার পরদিন ফোনে কথা হয় এবং তারপর আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, তিনি তাঁর জার্নাল শেয়ার করতে রাজি আছেন কিনা। তিনি প্রথমে তাঁর ছেলের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান, এবং পরের সপ্তাহে তিনি সেটি আমার কাছে পাঠিয়ে দেন।
জার্নালটি পড়েই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, সেটি প্রকাশ করতে হবে, যে কোনো উপায়ে। আরো ছয় জন সাংবাদিক ও সম্পাদক শক্তিশালী সেই লেখা পড়েন এবং সম্মিলিতভাবে একই সিদ্ধান্ত নেন। এরপরের ধাপটি ছিলো এটি ব্যবহার করার সবচেয়ে ভালো উপায় খুঁজে বের করা।
জার্নালটি লেখা হয়েছে আট বছর আগে। এরপর মানবদেহে লিথিয়াম পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করা ডাক্তার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা নিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। ততদিনে এই পরীক্ষার প্রভাব সম্পর্কে অ্যালিনের পরিবারও অনেক কিছু জেনেছে। আর এই সব কিছুই একে একে গল্পের অংশ হয়ে ওঠে। এই সব অভিজ্ঞতা তুলে আনতেই, আমরা জার্নালের পাশাপাশি তাদের উদ্ধৃতি ব্যবহারের অনুমতি চাই। মা-ছেলে দুইজনই তাতে সায় দেন। আমরা আলাদা করে তাদের সাথে কয়েকবার দেখা করি এবং সাক্ষাৎকার নিই। এখান থেকেই নির্দিষ্ট অংশ স্টোরিতে উদ্ধৃতি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
আমাদের স্টোরির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো, ছবির যথার্থ ব্যবহার। আমরা গল্পটিকে একটি পারিবারিক স্ক্র্যাপবুকের মত করে দেখাতে চেয়েছি। আবার কোনো ছবিই যাতে তাদের পরিচয় প্রকাশ না করে, সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হয়েছে। আমরা তাদের অ্যালবাম থেকে সঠিক ছবি বেছে নিতে অনেক সময় খরচ করেছি।
সাধারণত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলো পাবলিক রেকর্ডের ওপর নির্ভর করে। উইলসন ও তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করে দেওয়া ক্লিনিকাল ট্রায়াল নিয়ে আপনার প্রথম অনুসন্ধানেও তা দেখা গেছে। এই স্টোরিতে প্রাথমিক উৎস হিসাবে ব্যক্তিগত জার্নালের ওপর নির্ভর করতে গিয়ে আপনি বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে কী ভেবেছেন?
কোহেন: জার্নালটিতে আমরা পরিবারটির যেসব তথ্য পেয়েছি, তা অন্য রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে নিয়েছি। সেগুলো তাঁদের পক্ষেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। আমরা তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার বিভিন্ন ডকুমেন্ট যোগাড় করেছি। পরিবারটিও বেশ কিছু নথিপত্র যোগাড় করেছে, যা গোপনীয়তার জন্য ইউআইসি আমাদের দিতো না। এই রেকর্ডগুলোই জার্নালের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। আমরা সেগুলো প্রমাণ হিসাবেও ব্যবহার করেছি। যেমন, পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় উইলসনের লিথিয়াম টক্সিসিটি আছে, যেটা অ্যালিন তাঁর জার্নালেও উল্লেখ করেছেন। ওষুধের কারণে উইলসনের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে, সে ব্যাপারে ডাক্তারের বক্তব্যও রয়েছে।
জার্নাল পাওয়ার পর আপনাকে কী পরিমাণ তথ্য নিয়ে কাজ করতে হয়েছে? কী ব্যবহার করবেন এবং কী করবেন না, এবং কোন অংশটির সাথে উদ্ধৃতি দিবেন – এতকিছু কীভাবে ঠিক করেছেন? সম্পাদনা কতটা করেছেন এবং মা-ছেলে এই প্রক্রিয়ায় কতটা যুক্ত ছিলো?
কোহেন: আমরা যা প্রকাশ করেছি, জার্নালটা সম্ভবত তাঁর দ্বিগুণ হবে। আমরা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে চেয়েছি, একই সাথে জার্নালে লেখা মূল তথ্যগুলোও দিতে চেয়েছি। সাধারণ একটি প্রতিবেদন পড়তে পাঠককে যত সময় দিতে হয়, এখানে তার দ্বিগুন সময় দিতে হয়েছে।
সাক্ষাৎকারের সময়ে আমরা জার্নালে লেখা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সরাসরি প্রশ্ন করেছি। ইন্টারভিউ অনুলিখনের জন্য আমরা অনলাইন ট্রান্সক্রিপশন সেবা ট্রিন্ট ব্যবহার করেছি। আগের কোনো ঘটনার ওপর তাদের বর্তমান ভাবনাকে ব্যাখ্যা করার জন্য উদ্ধৃতিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। জার্নাল, উদ্ধৃতি এবং লেখা – সবকিছু মিলেই গল্পটি পাঠকের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠে।
কোন উদ্ধৃতি ব্যবহার হবে, সেই সিদ্ধান্ত আমরাই নিয়েছি। অ্যালিন ও তাঁর ছেলের এখানে কোনো ভূমিকা ছিল না।
ইয়াফি: আমরা অ্যালিনের সাথে আলোচনা করেছি এবং ২০১২ ও ‘১১ তে তাঁর তোলা সব ছবিও দেখেছি। আমরা তাঁর সাহায্য নিয়ে ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে এমন ছবি বাছাই করেছি যা তাদের সে সময়ের জীবন সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং একই সাথে তাদের গোপনীয়তাও রক্ষা করে। তারপর লুই কিয়েরনান তাঁকে অনুরোধ করেন, পরিবারের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে জার্নালে শেষ একটি লেখা লিখতে। অ্যালিন এই প্রক্রিয়ার অংশ হওয়ার জন্য খুবই উৎসুক ছিলেন, কিন্তু যেমনটা জোডি বলেছেন, তিনি সম্পাদনার কাজে অংশ নেননি।
লোগান, এনগেজমেন্ট রিপোর্টার হিসাবে আপনার কাজ এখানে কী ফল বয়ে এনেছে?
ইয়াফি: আমার কাজ হচ্ছে রিপোর্টটি সম্পর্কে যাতে পাঠকরা জানতে পারে, তা নিশ্চিত করা। এমনভাবে মানুষ এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছে স্টোরি ও তথ্যগুলো পৌঁছে দেওয়া, যাতে এটি তাদের কাছে অর্থবহ হয়। (পড়ুন: প্রোপাবলিকা ইলিনয় ইন লিসনিং।)
স্টোরিতে আপনার ভূমিকা কী ছিলো?
ইয়াফি: আমার প্রাথমিক দায়িত্ব ছিলো জোডির প্রথম অনুসন্ধানটি মানুষের সামনে নিয়ে আসা, বিশেষত, সেই গবেষণায় অংশগ্রণকারীদের সামনে, যারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল, তাদেরকে আমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য উদ্বুদ্ধ করা।
অ্যালিনের গল্পটা শোনার পর আমার ভূমিকা সামান্য বদলে যায়। এরপর আমার চেষ্টা ছিল, অ্যালিন ও উইলসনকে সাথে নিয়ে স্টোরিটি তৈরি করা। জার্নালের ওপর ভিত্তি করে জোডি আর আমি সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তৈরি করেছি, তাদেরক জিজ্ঞেস করার জন্য। রেডিও ও মাল্টিমিডিয়ায় আমার অভিজ্ঞতা আছে, তাই আমি তাদের সাক্ষাৎকার রেকর্ড করেছি এবং পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা করে স্টোরিটি বলার জন্য বিভিন্ন উপকরণ কিভাবে ব্যবহার করা যায়, সে ব্যাপারে চিন্তা করেছি।
লেখার সময় আমার কাজ ছিল মূলত অনুসন্ধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরে সেটি নিয়ে কোথায়, কী আলোচনা হচ্ছে, সে সম্পর্কে খোঁজ রাখা এবং অ্যালিনকে সেখানে যুক্ত করাও ছিলো আমার কাজ। রেডিটে “আস্ক মি এনিথিং”-এর দায়িত্বে ছিলাম আমি। প্রতিবেদন প্রকাশের পর, সেখানেও অ্যালিনের সাথে এক সপ্তাহের মত কাজ করেছি।
লুই, আপনি আগেও ন্যারেটিভে ব্যক্তিগত রেকর্ড ব্যবহার করেছেন। ন্যারেটিভ ননফিকশন লেখকদের জন্য এ ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন কী?
লুই কিয়েরয়ান: জার্নাল, পোস্টকার্ড বা লেখার মাধ্যমে মানুষ যেভাবে নিজের জীবনের রেকর্ড রাখে, তা খুব শক্তিশালী রিপোর্টিং টুল হতে পারে। এই রেকর্ডগুলো আপনাকে এমন সময়ে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যা বিশ্বাসযোগ্যতা ঠিক রেখে নতুন করে তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে অনিবার্যভাবে ন্যারেটিভও বদলে যায়। ভাগ্য ভালো থাকলে আপনি তেমন কোনো ব্যক্তিগত রেকর্ড পেয়ে যেতে পারেন। এটি একটি গোপন দরজা, যার ভেতর দিয়ে পেছনে ফিরে যাওয়া যায়।
লোগান, কাগজে ঢাকা একটি বিশাল বোর্ডের সামনে আপনার একটি ছবি আছে। সেখানে কী ঘটছিল?
ইয়াফি: আমরা ধীরে ধীরে আমাদের ওয়ার্কফ্লো তৈরি করেছি। প্রতিবেদনটি তৈরি করার জন্য চারটি বড় সম্পদ ছিলো আমাদের হাতে: ১) জার্নাল ২)উদ্ধৃতি ৩) পারিবারিক ছবি ৪) সবকিছুর সংযোগ ঘটানোর জন্য আমাদের লেখা টেক্সট। আমরা চেয়েছি তথ্যের এই অংশগুলো একে অন্যের পরিপূরক হয়ে উঠুক, কিছু যেন অপ্রয়োজনীয় না মনে হয়। আমরা একইসাথে বিভিন্ন কম্বিনেশন ব্যবহার করে দেখতে চেয়েছি, কোনটা ভালো কাজ করে।
প্রথমে আমরা জার্নালটি প্রিন্ট করি। তারপর আমরা সম্ভাব্য সব উদ্ধৃতি প্রিন্ট করি। আমরা প্রতিটি জার্নাল এন্ট্রি কাঁচি দিয়ে কাটি। তারপর উদ্ধৃতিগুলোও কাটি এবং কার বক্তব্য কোনটি তা বোঝানোর জন্য দুইটি ভিন্ন রঙের কাগজে আলাদা করে সেগুলো লাগাই। আমরা প্রতিটি জার্নাল এন্ট্রির জন্য কাগজের বড় রোল ব্যবহার করি, তারপর প্রাসঙ্গিক বক্তব্যের রঙের সাথে মিলিয়ে এন্ট্রির লেখাগুলো হাইলাইট করি। তারপর আমরা বড় কাগজে উদ্ধৃতিগুলো লাগাতে শুরু করি। এর ফলে আমরা বুঝে যাই, আমাদের ঠিক কোথায়, কী লিখে দুইটি অংশের মধ্যে সংযোগ ঘটাতে হবে।
আপনি আসলে যা দেখছেন, তা একটি স্টোরিবোর্ড, যার অনেকগুলো অংশ রয়েছে। এটা দেখেই আমরা বুঝতে পারি পুরো স্টোরিটি দেখতে কেমন হবে। এটা অনেকটা ম্যানুয়াল গুগল ডকের মতো। শুধু এখানে কন্ট্রোল-সি আর কন্ট্রোল-ভি এর বদলে আমরা সত্যিকারের কাঁচি আর টেপ ব্যবহার করেছি। আমরা প্রথমে সম্পাদনার জন্য সত্যিকার অর্থেই কাটা-ছেঁড়া করলেও, যখন জোডি আর আমার মনে হয়েছে যে প্রথম খসড়া দাঁড়িয়ে গেছে, তখন আমরা “আর্ট প্রজেক্ট”-কে গুগল ডকে লিখেছি।
ইন্টার্যাক্টিভ প্রেজেন্টেশনের উদ্দেশ্য কী ছিলো?
রব ওয়েচার্ট: এই ডিজাইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সময় এবং একাধিক দৃষ্টিভঙ্গিতে স্টোরির পট পরিবর্তনের সাথে পাঠককে পরিচিত করা। এখানে আট বছর আগে লেখা একটি জার্নাল রয়েছে, যেটি অনিশ্চয়তা আর আবেগে পরিপূর্ণ। তাঁর সাথে আছে সেই জার্নালের ওপর অ্যালিন ও উইলসনের বর্তমান মন্তব্য, আরো আছে প্রোপাবলিকার লেখা প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন লেখা। এই বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবে উপস্থাপনের জন্য লেআউট ও টাইপোগ্রাফির দিকে দিতে হয়েছে সতর্ক দৃষ্টি।
অ্যালিনের জার্নাল এন্ট্রিগুলোই এই স্টোরির চুম্বক অংশ, আর সেটি লেখা মনোস্পেস ফন্টে, যেমনটা টাইপরাইটারে দেখা যেতো। এই স্টাইলটা রূপক অর্থে বোঝায় যে এই লেখাগুলো ব্যক্তিগত, অসম্পাদিত এবং পুরোনো। যখন এর মাঝে উদ্ধৃতি ও প্রাসঙ্গিক লেখাগুলো এসেছে, তখন স্যানস-শেরিফ ফন্ট পাঠককে বর্তমানে ফিরিয়ে আনতে এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করে। বক্তাকে আমরা রঙের মাধ্যমে আলাদা করেছি, অ্যালিন ও উইলসনের রঙ গাঢ়, অন্যদিকে প্রোপাবলিকার রঙ হালকা ধূসর। আর স্ক্রিনে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে আপনি উদ্ধিৃতিগুলো আলাদা কলামেই দেখতে পাবেন।
আমাদের এতো পরিশ্রমের পরেও অনেক পাঠক হয়তো কোডের এতো ঘনঘন পরিবর্তন দেখে একটু অসুবিধায় পড়তে পারেন, যে কারণে আমরা উদ্ধৃতি লুকিয়ে রাখার অপশনও রেখেছি।
থার্ড পারসন ন্যারেটিভের সাথে ফার্স্ট পারসন জার্নাল এন্ট্রি এবং তাঁর সাথে অ্যালিন ও উইলসনের উদ্ধৃতি পাশাপাশি যুক্ত করার এই ন্যারেটিভ স্টাইলটি বেশ জটিল। ন্যারেটিভ থেকে জার্নালের দিকে স্টোরির গতি পরিবর্তন এবং অন্যান্য ব্যাপারগুলো নিয়ে এই কাঠামো তৈরি করার ব্যাপারে আপনারা সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছিলেন?
ইয়াফি: স্টোরিবোর্ড তৈরির সময়ই আমরা বুঝতে পারি কোথায় কোথায় রিপোর্টিং দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে। ন্যারেটিভের ফাঁক-ফোকরগুলোর ওপর ভিত্তি করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যখন আমরা দেখেছি যে অ্যালিনের জার্নালে উল্লেখিত কোনো বক্তব্য স্পষ্ট করার জন্য আমাদের কাছে আলাদা তথ্য আছে, তখনও আমরা এই কাজ করেছি।
কোহেন: আমরা তখনই লিখেছি, যখন আমাদের মনে হয়েছে কোনো কিছু স্পষ্ট করার প্রয়োজন রয়েছে। যেমন: পরিবারের সদস্যদের ব্যাকগ্রাউন্ড এবং কিভাবে পরিবারটি উইলসনের মানসিক অসুস্থতার ভয়াবহতা আবিষ্কার করলো, ইত্যাদি। আমরা ইউআইসির গবেষণায় ত্রুটি এবং তাদের কোন গবেষণায় উইলসন অংশ নিয়েছিলো, সে ব্যাপারেও লিখেছি। আমাদের হাতে অন্যান্য ডকুমেন্টও ছিলো, যা অ্যালিনের জার্নালের লেখাগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। আমরা সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় ও পাভুলুরির জবাবও ব্যবহার করেছি। জার্নালের অনেক অংশ আমরা প্রকাশ করিনি। সেগুলো আমরা পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে সারাংশ আকারে জুড়ে দিয়েছি।
কীভাবে এবং কখন সম্পাদকরা এখানে যুক্ত হন?
লুই কিয়েরনান: আমাদের কার্যক্রম বেশ ক্ষুদ্র পরিসরের এবং আমরা সবাই একটি রুমেই কাজ করি। তাই আমি মনে করি সবাইই সব স্টোরিতে বিভিন্নভাবে যুক্ত। জোডি এই জার্নালটি নিয়ে আসার পর আমরা আলাদাভাবে এবং একসাথে সবার সাথেই অনানুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে কথা বলেছি, মিটিং করেছি। আমাদের সম্পাদনার প্রক্রিয়াটি অনেক সহযোগিতাপূর্ণ। স্টিভ [মিলস] প্রাথমিক সম্পাদনা করেছেন এবং আমি প্রয়োজন হলে হাত লাগিয়েছি। আমার মনে হয়, ন্যারেটিভ এবং আবেগ দিয়ে স্টোরিটিকে কিভাবে প্রকাশ করতে চাই, সে ব্যাপারে আমার আগে থেকেই ধারণা ছিলো। আমরা সেখানেই পৌঁছাবার চেষ্টা করেছি। এ ব্যাপারে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি।
স্টিভ মিলস: আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো জার্নাল ও টীকার মাধ্যমে পরিবারটিকেই তাদের কথাগুলো যথাসম্ভব বলতে দেওয়া। তাই আমরা মাঝখানের জোডি ও লোগানের লেখা অংশগুলো যথাসম্ভব কম রাখতে চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় ঠিক এ কারণেই পাঠক স্টোরির সাথে এতোটা নৈকট্য অনুভব করেছে।
এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে অ্যালিন ও উইলসনের মন্তব্য কী?
কোহেন: অ্যালিন একসময় আমাকে বলেছিলো, এই স্টোরিতে তাঁর লক্ষ্য ছিলো “এমনভাবে তাদের পরিবারের গল্প বলা, যাতে অন্যদের কিছুটা আশাবাদী করে তোলা যায়।” নিজের ছেলের সবচেয়ে কঠিন সময়ে তিনি তাঁর পাশে থাকতে চেয়েছেন, যদিও তাদের দুইজনেরই মারাত্মক মানসিক অসুস্থতা আছে। গল্পটি তাঁর এই কথার মাধ্যমে শেষ হয়: “আমি চাই এই স্টোরিটা অন্য পরিবারের কাজে লাগুক, যাদের আমি আট বছর আগে খুঁজেছিলাম।”
অন্যদের সাহায্য করার জন্য তিনি সরাসরি মানুষের মন্তব্যের জবাব দিয়েছেন এবং রেডিটের “আস্ক মি এনিথিং”-এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য অংশ নিয়েছেন। আমাদের সাথে এই স্টোরিতে কাজ করার জন্য আমি যতোবারই তাকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি আমাদেরকে এই স্টোরি প্রকাশ করার জন্য পালটা ধন্যবাদ জানান, যদিও সেই দুঃসময়ের কথা এতোদিন পর আবার রোমন্থন করাটা বেশ কঠিন ছিলো তাদের জন্য।
স্টোরিটি একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৈরি করতে কতোদিন সময় লেগেছে?
কিয়েরনান: জোডি ও লোগান গ্রীষ্মেই স্টোরি নিয়ে কাজ শুরু করেন। পরে দুই মাসের জন্য বন্ধ থাকে। তখন শিকাগোতে অভিবাসী শিশুদের আশ্রয় নিয়ে অনুসন্ধানী সিরিজের কাজে ছিলেন জোডি। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে আমরা শুরু করি। আপাতদৃষ্টিতে যতোটুকু মনে হয়, প্রতিবেদনটিতে তাঁর চেয়ে অনেক বেশি রিপোর্টিং প্রয়োজন হয়েছে। গোটা জার্নাল প্রকাশ করে দিলে তাতে কাজ হতো না। জোডি শত শত পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট যোগাড় করে যাচাই করে দেখেছে, উইলসনের সাথে আসলেই কী ঘটেছে। উদ্ধৃতি যুক্ত করার অন্য তিনি আর লোগান ঘণ্টার পর ঘণ্টা অ্যালিন ও উইলসনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাঁরা জার্নাল এন্ট্রিগুলো সম্পাদনার জন্য এবং অর্থপূর্ণ একটি স্টোরি দাঁড় করাতে, একসাথে কাজ করেছেন। এটা বলতেই হয়, আমাদের প্রায় শূন্য থেকে এই প্রেজেন্টেশনটি তৈরি করতে হয়েছে।
স্টোরির শেষ কথাটি আসে অ্যালিন থেকে, উইলসনের মা হিসাবে, বর্তমানের অবস্থা জানাতে। স্টোরিটি এভাবে কেন শেষ হয়?
কিয়েরনান: এভাবে শেষ করার চিন্তাটি আমার মাথায় আসে আমাদের একটি মিটিংয়ে। আমার মনে আছে, আমি বলছি, “আচ্ছা, আমার মাথায় একটি অদ্ভুত বুদ্ধি এসেছে…” আমি জানতাম না এ ব্যাপারে জোডি, লোগান আর স্টিভ কী ভাববে, কিন্তু তাঁরা সাথে সাথেই এটি পছন্দ করে ফেলে। জার্নালটি পড়ে সবসময়ই মনে হয়েছে এর একটি সমাপ্তি দরকার এবং যেহেতু আমাদের মূলনীতি ছিলো অ্যালিন ও উইলসনকেই তাদের স্টোরিটা বলতে দেওয়া, তাই আমাদের মনে হয়েছে তাদের কথাই এখানে শেষ কথা হওয়া উচিৎ।
এই প্রতিবেদনে যেভাবে ব্যক্তিগত রেকর্ড ব্যবহার করা হয়েছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সোর্সদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটি সাধারণ নিয়ম থেকে ভিন্ন। এখানে কি এরকম আরো সাধারণ নিয়ম-বহির্ভূত সিদ্ধান্ত আছে?
কিয়েরনান: যেহেতু এটি একটি ব্যক্তিগত স্টোরি, আমরা অ্যালিন ও তাঁর পরিবারকে এটি প্রকাশ করার আগে যাচাই করতে দিয়েছিলাম। তাঁরা প্রকাশের আগেই স্টোরিটি দেখতে চেয়েছে, এমন না। আবার তাঁরা আপত্তি জানালেই যে আমরা কিছু পরিবর্তন করবো, এমন কোনো কথাও আমরা দেইনি। কিন্তু তাঁরা আমাদের এতোটাই বিশ্বাস করেছে যে আমরা চেয়েছে স্টোরিটা প্রকাশের আগে তাঁরা দেখুক এবং সম্ভাব্য কোনো সমস্যা থাকলে জানাক। জোডি ল্যাপটপ নিয়ে গাড়ি চালিয়ে প্রেজেন্টেশন দেখানোর জন্য তাদের বাসায় গিয়েছেন, যেটি শিকাগো থেকে বেশ খানিকটা দূর। অ্যালিন আমাদের একটি শব্দও পরিবর্তনের জন্য বলেননি।
এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় নিম্যান স্টোরিবোর্ডে। এখানে অনুমতি নিয়ে পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে।
চিপ স্ক্যানল্যান একজন পুরষ্কারজয়ী সাংবাদিক, যিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস, এনপিআর, ওয়াশিংটন পোস্ট ম্যাগাজিন এবং আমেরিকান স্কলারে কাজ করেছেন। বেস্ট আমেরিকান এসেস-এ তাঁর দুইটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তিনি পয়েন্টার ইন্সটিটিউটে ১৯৯৪-২০০৯ সাল পর্যন্ত লেখালেখির ওপর শিক্ষকতা করেছেন এবং এখন ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে থেকে লেখালেখি চালিয়ে যাচ্ছেন।