আগের মোজো ওয়ার্কিং কলামে আমি মোজো টুলস, স্মার্টফোনে শব্দ রেকর্ড এবং সম্পাদনা সম্পর্কে লিখেছি। এ অংশটি হচ্ছে স্টোরি নির্মাণ এবং প্রযোজনা নিয়ে। প্রথম পর্বের পর এখন লিখছি দ্বিতীয় পর্ব। এখানে আলোকপাত করা হবে দরকারি সরঞ্জাম, সংবাদ সংগ্রহ এবং শব্দ ধারণের ওপর।
সরঞ্জাম, কোথায় কেমন?
স্মার্টফোন হচ্ছে উদ্ধত সুইস আর্মি নাইফের মত, গণমাধ্যমের ভাষায় যাকে বলে পকেট-বন্দী সৃজনশীল যন্ত্র। কাজ এবং স্থান ভেদে মোজো কিটের ধরণও আলাদা হতে পারে। যেমন, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় বড় আকারের কিট ব্যবহার করা যাবে না, কারণ সেগুলো দৃশ্যমান। রয়টার্সের সাবেক প্রতিনিধি এবং বর্তমানে জর্ডান টাইমসের সাংবাদিক রানা সাবাগ বলেন, ছোট সরঞ্জাম নিয়ে কাজ করার সুবিধা হচ্ছে, এতে “প্রতিকূল পরিবেশে সহজে কাজ করা যায়। বিশেষ করে যেখানে মানুষ ও নিরাপত্তা বাহিনী সাংবাদিকদের কাজে বাধা দিতে পারে অথবা বড় ক্যামেরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে।”
স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করা সবসময় সহজ না-ও হতে পারে। আর ফোনের অ্যাপগুলো কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্যেও অনেক চর্চা প্রয়োজন। আপনি কী ধরণের অ্যাপ ব্যবহার করবেন, তা অনেক সময় নির্ভর করে আপনি কেমন স্টোরি নিয়ে কাজ করছেন তার ওপর। এ কারণে, কাজের ধরণের ভিত্তিতে অ্যাপ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। তারপর নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিন। (দেখুন: প্রয়োজনীয় মোবাইল সাংবাদিকতা টুলস)।
কীভাবে কাভার করবেন?
সব ভিডিও প্রতিবেদনের মতই অনুসন্ধানী ভিডিও স্টোরিতেও ছবির প্রয়োজন হয়। খবর সংগ্রহের ধরণ দুই রকম – যা আপনি আগে থেকে ঠিক করে রাখেন এবং যেখানে আগে ঠিক করা দরকার হয় না।
ব্রমওয়েল তার ফোন দিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করতে পেরেছেন, ভিডিও সাংবাদিক হিসাবে কাজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণে। তিনি বলেন: “আমি সিকোয়েন্সে ছবি নিই, সেখানে অনেক ক্লোজ-আপ শট থাকে; ছবি হয় স্থির, সঠিক মাপের এবং সাধারণত প্যান, টিল্ট বা জুম এড়িয়ে চলি।”
একজন প্রযোজক এবং ক্যামেরাম্যান হিসাবে বিভিন্ন অঞ্চলে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আপনি সবসময় ট্রাইপড বের করে কাজ করতে চাইবেন না, কারণ সেটা আপনাকে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে। আপনার কাজের গতিও কমিয়ে দিতে পারে।
অবশ্যই লম্বা সাক্ষাৎকার, লম্বা-চওড়া প্যান এবং লং-লেন্স ক্লোজ-আপ শটের জন্য ট্রাইপড খুবই কার্যকরী। কিন্তু আপনাকে বেশিরভাগ কাজই করতে হবে হাতে ক্যামেরা নিয়ে। তাই ওয়াইড লেন্স লাগিয়ে, হাতে ক্যামেরা ধরে, ছবি তোলা চর্চা করুন।
পরামর্শ: আপনার শরীরের দুইপাশে কনুই চেপে রেখে তারপর দুই হাতে ক্যামেরা ধরুন। এভাবে আপনি আরো স্থির শট নিতে পারবেন, যেমনটা বিস্টগ্রিপ এর মত স্মার্টফোন ক্রেডলে করা যায়। (হ্যাঁ, প্রথমে এটাকে ডালেক বলেই মনে হয়।)
সব ধরণের কাভারেজের ক্ষেত্রেই এই প্রশ্নগুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন:
- গল্পটা কিভাবে সাজানো হবে? নাটকীয় ক্লোজ আপ, অর্থবহ ওয়াইড শট, গতিময় বি-রোল, তথ্যের বর্ণনা, সাক্ষাৎকার নাকি সবকিছু মিলিয়েই?
- সাক্ষাৎকারের শুরুতে ও মূল বক্তব্যের সময় কেমন বি-রোল প্রয়োজন?
- ধারাবর্ণনার ওপরে আপনি কোন বি-রোল ব্যবহার করবেন?
- প্রতিবেদনেকে গতিশীল করতে কেমন বি-রোল এবং সাক্ষাৎকার প্রয়োজন?
- আপনি কিভাবে প্রতিবেদনটি শেষ করবেন এবং সেখানে কেমন দৃশ্য ও শব্দ প্রয়োজন?
- আপনি কি অবস্থান বুঝে দরকারি সাড়া দিতে প্রস্তুত?
নিচে খবর সংগ্রহের দুই পদ্ধতি নিয়ে ভাবার জন্য দুইটি টেমপ্লেট রয়েছে।
একটি হচ্ছে ক্লাসিক ফাইভ-শট রুল, যাকে বলা হয় সম্পাদনার সবচেয়ে কার্যকর কৌশল। এই পদ্ধতি সাধারণ ঘটনা কাভারের জন্য ব্যবহার হয়।
সম্পাদনার সময় দৃশ্যগুলো যেভাবে সাজানো হবে, তা-ই পুরো বিষয়টিতে ভিন্নতা এনে দেবে। বর্ণনা এবং অন্যান্য উপাদানের সাথে মিল রেখে দৃশ্য সাজানোর মাধ্যমেই গল্পে গতি আর গুরুত্ব তৈরি হয়। এবার নিচের তিনটি শটের দিকে খেয়াল করুন। একই দৃশ্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ক্রপ করা হয়েছে। প্রতি ফ্রেমই এখানে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি প্রকাশ করে। তাই, গল্পটা ঠিকমত বলার জন্য ফ্রেম ঠিক করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাক্ষাৎকার, বর্ণনা এবং প্রাসঙ্গিক বি-রোল যুক্ত করুন। যদি পরিকল্পনা এবং স্ক্র্যাপ(SCRAP) তৈরি করে থাকেন এবং সেখানে কিছুটা “আবেগ” রাখতে পারেন, তাহলেই সম্পাদনার জন্য একটা শক্ত স্টোরি পাওয়া যাবে।
সিকোয়েন্স তৈরির জন্য দরকারি পাঁচ ধরণের দৃশ্য, সাক্ষাৎকার এবং ধারাবর্ণনার মাধ্যমেই মূল গল্পটা বলা হবে। আপনার স্টোরিতে পাঁচ থেকে ১৩টা সিকোয়েন্স থাকতে পারে। প্রতিটি সিকোয়েন্সেই শটের ধরণ হবে আলাদা এবং গল্প তৈরিতে তাদের অবদানও হবে ভিন্ন। অর্থ্যাৎ একেকটি সিকোয়েন্স গল্পের একেকটি অংশ তুলে ধরবে। তাই আপনি গল্বপটাকে প্যানেলে বসে যেভাবে এডিট করতে চান, প্রতিটি সিকোয়েন্সের ছবিও তুলতে হবে সেই ধারাবাহিকতায়। এজন্য ছবি নেয়ার আগেই পরিকল্পনা করতে হবে।
এ কারণে আমার পরামর্শ থাকবে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এবং কাঠামো আছে এমন কিছু শ্যুট করার মাধ্যমে সিকোয়েন্স নিতে শেখা।
যেমন, পাস্তা, ডিম বা বেকন রান্না করার দৃশ্য শ্যুট করুন। অথবা লেদ মেশিনের সাহায্যে এক টুকরো কাঠকে টেবিলের পায়ায় পরিণত করার দৃশ্য শ্যুট করুন। ভাবুন, এই কাজগুলো সম্পূর্ণ কাভার করতে কতগুলো আলাদা আলাদা সিকোয়েন্স দরকার?
ব্রমওয়েল বলেন, “আমি সবসময় সবাইকে সহজ কাজগুলো ভালো করে করতে উৎসাহ দেই, তাতে সুন্দর ফল পাওয়া যায়।” দুই মিনিটের একটা শক্তিশালী ফিল্মের জন্য আধ ঘন্টার চেষ্টাই যথেষ্ট। তবে সেখানে থাকতে হবে আবেগ, তথ্য, বি রোল আর সাক্ষাৎকার। সাথে সহজ পদ্ধতির শ্যুটিং, স্পষ্ট গঠন, কাভারেজ এবং বিশেষত সিকোয়েন্স।
আই লাইন বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি একটা ক্যামেরা ব্যবহার করে সাক্ষাৎকার নেওয়ার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আপনি B চিত্রের পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারেন। অনেক অঞ্চলে, সাক্ষাৎকারদাতার ঠিক সামনে, বুক বা কোমর সমান উচ্চতায় ক্যামেরা রেখে এবং তাকে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বলানো হয়। তারা একেই স্বাভাবিক মনে করেন। কিন্তু ক্যামেরার অবস্থান আসলে চোখের উচ্চতায় থাকা ভালো। এই ধরণের সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সামনে থেকে শ্যুট করাটা কঠিন, কারণ এতে সাক্ষাৎকারদাতার সাথে আপনার আই কনট্যাক্ট এ অসুবিধা হতে পারে। তাই, B চিত্রের মত, ক্যামেরা যতোখানি সম্ভব সামনে রেখে ক্যামেরার পাশে সাংবাদিককে (মোজো) রাখতে হবে। এটাই গতানুগতিক সাক্ষাৎকারের আই লাইন। একা কাজ করলে C চিত্রের পদ্ধতিতে না যাওয়াই ভালো। আপনি আই লাইনের পেছনে ক্যামেরা তখনই রাখবেন যখন আপনার সাথে ফ্রেম চেক করার জন্য একজন ক্যামেরা পার্সন থাকবেন।
খুব দরকার হলে আপনি A চিত্রের মত প্রোফাইল শট (এক পাশের ছবি) নিতে পারেন। কিন্তু প্রোফাইল শট এড়িয়ে চলারও কিছু কারণ আছে:
- সামনে থেকে শ্যুট করলে আপনি নড়াচড়া না করেই বিভিন্ন রকম শট পাবেন।
- ওয়াইড লেন্সের ক্ষেত্রে আপনি ক্যামেরা সামনের দিকে নিতে পারেন।
- ক্লোজ-আপ শটের জন্য আপনি জুমও করতে পারেন, তবে খুব দরকার না হলে না করাই ভালো।
ফ্রন্ট-অন (মুখোমুখি) বা প্রায় ফ্রন্ট-অন শট বেশি শক্তিশালী, কারণ এক্ষেত্রে ক্যামেরা আই লাইন থেকে না সরিয়েই আপনি মানুষটির মুখ, চোখ এবং তার অনুভূতি দেখতে পারেন।
দৃশ্য এবং সিকোয়েন্স শ্যুট করার জন্য কিছু পরামর্শ:
- স্মার্টফোনটিকে এয়ারপ্লেন মোডে রাখুন যাতে অযাচিত কল বা ওয়াইফাই ঝামেলা না করে।
- ব্যাটারির চার্জের ব্যাপারে খেয়াল রাখুন।
- ফোনে পর্যাপ্ত মেমোরি আছে কিনা খেয়াল রাখুন।
- কোথায় এবং কখন আপনি শ্যুট করবেন, সে ব্যাপারে কাউকে জানিয়ে রাখুন।
- শ্যুটিং পরিকল্পনা করুন। কী শ্যুট করেছেন ও কতটা বাকি আছে তা বুঝতে এবং পরে সম্পাদনায় সাহায্য করবে।
- যাদের সাক্ষাৎকার লাগবে তাদের নিয়ে গবেষণা করুন, প্রশ্ন ঠিক করুন এবং একটা কাঠামোয় ফেলুন, যাতে সম্পাদনার সময় কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তা বুঝতে পারেন।
- আপনার কাঁধের ওপরে এবং বিষয়বস্তুর ওপর আলো ফেলুন।
- প্রয়োজন না হলে ট্রাইপড ব্যবহার করবেন না।
- ক্যামেরা হাতে নিয়ে দৃশ্যটি সুষমভাবে ধরে রাখতে শিখুন। এটি ওয়াইড লেন্সে সহজ। শট স্থির রাখার জন্য দুই হাতে ক্যামেরা ধরে কনুই শরীরের সাথে লাগিয়ে V আকৃতি তৈরি করুন। (উপরের চিত্র দেখুন।)
- ক্যামেরা আগে চালু করে তারপর প্রশ্ন করুন, যাতে উত্তরটির শুরুর অংশটি বাদ না পড়ে যায়।
- হ্যাঁ বা না জাতীয় উত্তর এড়াতে ওপেন-এন্ডেড প্রশ্ন করুন, যদি না আপনি হ্যাঁ বা না শুনতে চান।
- সাক্ষাৎকারদাতাকে মিডিয়াম ক্লোজ-আপে রাখুন, যদি তারা হাত না নাড়ে। আর হাত নাড়লে মিডিয়াম শটে কাজ করুন।
- প্রতিটি শট কমপক্ষে ১০ সেকেন্ডের হতে হবে। তাহলে বুঝবেন বি-রোল স্থির আছে কিনা। সেই শটের বিভিন্ন অংশ পরেও ব্যবহার করতে পারবেন।
- প্যান শট নেওয়ার আগে এবং পরে সবসময় কয়েক সেকেন্ডের স্থির শট ধারণ করুন যাতে আপনার প্যান শটের শুরু এবং শেষ – দুই পাশই স্থির থাকে এবং আপনি তিনটি সম্ভাব্য শট পান।
- সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে বি-রোল শ্যুট করে ফেলুন। যেমন, কোনো ভবনে ঢোকার সময়, ঘটনাস্থলে সাক্ষাৎকারের আগে কথা বলার সময় বা তার পরপরই।
- সময় অল্প হলে শট নিয়ে ভাববেন না। কী তথ্য দরকার, সেদিকে লক্ষ্য করুন। স্টোরিটি ভাবুন।
- ফ্রেম বা ক্যামেরার নড়াচড়াও অনেকসময় গতিশীল দৃশ্য তৈরি করতে পারে। তবু ক্যামেরা স্থির রাখাই ভালো।
- স্ক্রিন নির্দেশনা এবং ১৮০ ডিগ্রি রুল মাথায় রাখুন, কিন্তু প্রয়োজনে কীভাবে নিয়ম ভাঙতে হয়, কাজ করতে করতে তা-ও শিখুন।
- সঠিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন। (দেখুনঃ প্রয়োজনীয় মোবাইল সাংবাদিকতা টুলস)
যে প্রশ্নগুলো মাথায় রাখতে হবে, সেগুলো হলো:
- সাক্ষাৎকার এবং ধারাবর্ণনা কিভাবে গল্পে মোচড় তৈরি করে?
- একটি দৃশ্য তৈরি করতে, সাক্ষাৎকারে উপরে বসাতে এবং কোনো নির্দিষ্ট মূহুর্তকে টেনে লম্বা বা ছোট করতে – ঠিক কতোখানি এবং কী ধরণের বি-রোল দরকার? ঘটনাস্থলের পারিপার্শ্বিক শট নিতে ভুলে যাবেননা। যথেষ্ট বি-রোল হয়েছে, এমন মনে হওয়ার পরও বাড়তি কিছু শট নিন।
- আপনার কি বাজ ট্র্যাক (Buzz Track) বা রুমের পরিবেশ বোঝায় এমন আনুষঙ্গিক অডিও প্রয়োজন? তাহলে অন্তত ৩০ সেকেন্ড রেকর্ড করুন। স্টোরিতে শব্দের ব্যবহার মসৃণ করতে এগুলো কাজে আসে।
- কোনো গ্রাফিক্স দরকার হবে কি না এবং তা কোত্থেকে যোগাড় হবে – আপনার ডিভাইসে তৈরি করা হবে নাকি এয়ারস্ট্যাশ বা এয়ারড্রপ ব্যবহার করে ইমপোর্ট করা হবে?
- যদি আর্কাইভ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, কোথায় পাবেন? তা কি কপিরাইট মুক্ত? এজন্য কত টাকা লাগবে?
- স্ট্যান্ড-আপ দরকার আছে? কেন? ছবি, সাক্ষাৎকার বা তথ্য দিয়ে কোনো কিছু ব্যাখ্যা না করা গেলে এবং সাংবাদিকের অবস্থান স্পষ্ট করতে হলে স্ট্যান্ড-আপ কাজে আসে।
স্ট্যান্ড-আপের স্ক্রিপ্ট ছোট রাখুন। প্রতি বাক্যে মাত্র একটি বিষয় নিয়ে কথা বলুন এবং প্রতি অনুচ্ছেদে একটি বাক্য ব্যবহার করুন। প্রতি অনুচ্ছেদের জন্য একটি মূল শব্দ বাছাই করুন। রিটেক নিতে হলে শ্যুট চলতে থাকা অবস্থাতেই আবার নিন। কোনো সমস্যা দেখা দিলে ধরে নিন, তা স্ক্রিপ্টের কারণে। স্ক্রিপ্ট ঠিক করার পরও যদি ভুল হতে থাকে, তাহলে জুতার মধ্যে একটা ধারালো পাথর রাখুন এবং পাথরের দিকে মনোযোগ থাকতে থাকতেই পিটিসি দিয়ে ফেলুন।
শব্দের মারপ্যাঁচ
মোজোতে অডিও রেকর্ড করার মানে হচ্ছে সঠিক মাইক্রোফোন ও নিখুঁত পরিকল্পনা সঙ্গে নিয়ে অবস্থান বুঝে কাজ করা। মোজোরা সাধারণত একাই কাজ করেন। তাই শব্দ ধারণ তাদের জন্য জটিল হয়ে দাঁড়ায়। ওয়াশিংটন ডিসির সংবাদভিত্তিক রেডিও স্টেশন ডাব্লিউটিওপি’র বিখ্যাত সাংবাদিক এবং রেডিও মোজোর অগ্রদূত নিল অগেনস্টেইন এর বিচারে, পেশাদার শুর মাইক্রোফোনে রেকর্ড করে যে অডিও পাবেন, সেই মানের ৯২ শতাংশ পাওয়া যাবে আইফোনের বিল্ট-ইন মাইক্রোফোনে ধারণ করা কথায়।
অগেনস্টেইন আরো জানান “ব্রডকাস্ট প্রসেসিং চেইনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার পরে “শব্দের মান খারাপ হলেও” শ্রোতারা তা বুঝতে পারেন না। তাই কোলাহল নেই, কাজ করা দরকার দ্রুত, আর স্মার্টফোনটিও রয়েছে শব্দের উৎসের কাছ – এমন পরিস্থিতিতে ফোন দিয়েই শব্দ রেকর্ডের কথা ভাবতে পারেন। ভিডিও সাংবাদিকতায় ‘অবস্থান’ যতটা জটিল হয়ে দেখা দেয়, রেডিও বা অডিও সাংবাদিকতায় ততটা নয়। (দেখুন: স্মার্টফোনে শব্দ রেকর্ড।)
পরামর্শ: অনুবাদ করতে হলে, ঘটনাস্থলে বসেই করুন। কারণ তাতে সংশোধন প্রয়োজন হতে পারে, যা হয়তো অনুবাদ শেষ হওয়া ছাড়া বুঝবেন না।
আমি সুপারিশ করবো:
- ফোনের সাথে সবসময় একটা শটগান মাইক এবং ব্যাগে একটা ল্যাপেল মাইক রাখুন।
- আপনি যদি হেঁটে হেঁটে সাক্ষাৎকার নিতে চান, তাহলে রেডিও মাইক ব্যবহার করুন। (দেখুন: মাইক্রোফোন ১০১)।
- প্রশ্ন স্পষ্ট করতে চাইলে নিজেই একটা স্প্লিটার এবং ল্যাপেল মাইক ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখুন, আপনার স্মার্টফোনে সাক্ষাৎকার প্রদানকারী এবং গ্রহণকারী – দুইজনেরই অডিও একই ট্র্যাকে রেকর্ড হবে।
- আপনি যদি আলাদা আলাদা ট্র্যাক চান, তাহলে দ্বিতীয় ট্র্যাক রেকর্ড করতে (ক্ল্যাপ ব্যবহার করুন) জুম এইচ১ এর মত ডিভাইস ব্যবহার করুন এবং সম্পাদনার সময় ট্র্যাক দুইটি সিংক করুন।
সার কথা হলো, শব্দের ওপর ছবি বসিয়ে দিলেই ভিডিও স্টোরি হয় না। ভিডিওর একেকটি উপাদানকে জোড়া দিয়ে নিখুঁত একটি গল্প তৈরির কৌশল জানা-ই মোবাইল সাংবাদিকতায় সবচে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যেমনটা ব্রমওয়েল বলেন, “সবকিছুকে সফলভাবে এক জায়গায় জড়ো করার জন্য আপনার কাজে শৃঙ্খলা থাকতে হবে।”
মোজো হিসাবে কাজ করা একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া। আপনাকে বুদ্ধিদীপ্ত হতে হবে এবং যেকোনো জায়গার আলাদা প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সাড়া দিতে হবে। আপনার ভাবনা ও কাজ হতে হবে একজন সাংবাদিকের মত। শব্দ ধারণ ও সম্পাদনা করতে হবে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার মত মনোযোগ দিয়ে। আপনাকে কাজ করতে হবে নীতি ও আইন মেনে। জানতে হবে প্রযুক্তির ব্যবহারও। আবার এটাও মাথায় রাখতে হবে প্রযুক্তি যাতে কখনো বেঁধে না ফেলে। এতো কিছু জানা বেশ কঠিন মনে হচ্ছে? কিন্তু এই জ্ঞান গল্পকে নিয়ন্ত্রণের এক অনন্য ক্ষমতা দিবে। চেষ্টা করে দেখুন, মোজোর অপার সম্ভাবনা আপনাকে অভিভূত করবে অবশ্যই! গো মোজো!
আগের মোজো ওয়ার্কিং এর কলামগুলো এবং আরো অনেক কিছু পেতে দেখুন মোবাইল সাংবাদিকতার ওপর জিআইজেএন এর রিসোর্স পেইজ।
ইভো বুরাম একজন অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক, লেখক এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত টেলিভিশন প্রোডিউসার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২৫০০ ঘণ্টার বিভিন্ন ধরণের প্রাইম টাইম অনুষ্ঠান প্রযোজনার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ইভো মোবাইল সাংবাদিকতার একজন অগ্রদূত। বুরাম মিডিয়া নামে একটি মোজো এবং ওয়েব টিভি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর, যা বিশ্বসেরা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাংবাদিক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।