সম্পাদকের কথা: ‘মোজো ওয়ার্কিং’ নামের নতুন কলাম চালু করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। এই কলামে খ্যাতিমান মোজো (মোবাইল জার্নালিজম) বিশেষজ্ঞ ইভো বুরাম মোবাইল সাংবাদিকতা সম্পর্কিত পরামর্শ দিবেন। জিআইজেএন সম্মেলনে ইভো’র কর্মশালাগুলো বেশ জনপ্রিয়। অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক এই সাংবাদিকের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রাইম-টাইম অনুষ্ঠান প্রযোজনার ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা। তিনি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন কৌশল শেখাবেন। আপনার মোজো দক্ষতা আরো শানিয়ে নেয়ার এটাই সুযোগ।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৩০০ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ৬০ লাখেরও বেশি অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতি মিনিটে অন্তত ৬০০ ঘণ্টার ক্লাজ (জোড়াতালি দেওয়া) ভিডিও আপলোড করেন। সাংবাদিক চার্লস ফেল্ডম্যান, সারাক্ষণ বইতে থাকা তথ্যের এই স্রোতকে “তথ্যের সুনামি” বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। আমি অবশ্য বিষয়টিকে একটা সুযোগ হিসাবে দেখি।
মোজোর স্বকীয় ভাষা ও ধরণ
মোবাইল সাংবাদিকতা বা মোজো বিষয়টা আসলে কী?
যিনি মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ল্যাপটপে সম্পাদনা করেন, তিনি কি একজন মোজো? যে ব্যক্তি ডিএসএলআর (ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্ট) ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে মোবাইলে সম্পাদনা করেন, তাকেও কি মোজোর সংজ্ঞায় ফেলা উচিৎ?
এমন যদি হয়, আপনি সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে ছিলেন এবং হাডসন নদীতে একটি বিমান ধ্বংস হতে দেখে তার একটা ভিডিও করে, আপলোড দিয়ে ফেলেছেন – এটা কি মোজো? যদি তাই হয়, তাহলে এক্ষেত্রে সাংবাদিক আসলে কে? ঘটনাচক্রে প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষটি, নাকি সিএনএন, যে নাগরিক সাংবাদিকতা নাম দিয়ে ভিডিওটি ব্যবহার করছে?
স্মার্টফোন ব্যবহার করে ভিডিও ধারণ, সম্পাদনা, লেখা এবং প্রকাশ করার প্রক্রিয়াকে আয়ারল্যান্ডের আরটিই নেটওয়ার্কের ইনোভেশনস প্রধান গ্লেন মালক্যাহি অ্যাখ্যা দেন, মোজোর “শুদ্ধতম ধারণা” হিসেবে। মালক্যাহি বিশ্বাস করেন, “মোবাইল সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য হল, মানুষকে এমন ভাবে ক্ষমতায়িত করা, যাতে সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিনি সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালো ভিডিও স্টোরি তৈরি করতে পারেন। ”
আমরা তার এই ব্যাখ্যার সাথে তখনই একমত, যখন ক্ষমতায়নের এই পদ্ধতিতে আধুনিক সাংবাদিকতার এমন কিছু জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা যায়, যাতে একজন সাংবাদিক – প্রযুক্তির ব্যবহার, স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি, সাংবাদিকসুলভ কণ্ঠ এবং সুবিন্যস্ত সম্পাদনার মাধ্যমে একটি ভিডিওকে বাস্তব করে তুলতে পারেন।
সহজ ভাষায়, মোজো হচ্ছে দক্ষ ডিজিটাল স্টোরিটেলিং এবং টুলসের এমন সমন্বয়, যা প্রাথমিক ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্ট (ইউজিসি) থেকে একটি পরিপূর্ণ ইউজার জেনারেটেড স্টোরি (ইউজিএস) জন্ম দেয়। অর্থ্যাৎ, যা একজন ব্যক্তির তোলা ভিডিওকে একটি গল্পে বদলে দেয়।
মোজোতে স্মার্টফোন-ই যে একমাত্র টুল, তা নয়। কাজের জন্য সঠিক টুল কোনটি হবে তা নির্ধারণ করবে স্টোরির ধরণ।
বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত মোজোতে লম্বা লেন্সসহ ডিএসএলআর ক্যামেরা অথবা ওপর থেকে দৃশ্য-ধারণের জন্য ড্রোন দরকার হয়। আবার, সিরিয়াতে কর্মরত একজন সাংবাদিককে নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক কারণে সতর্কতার সাথে, এমনকি কখনো কখনো মাইক্রোফোন ছাড়াও কাজ করতে হয়। মোখতার আলিব্রাহিম নামের একজন সিরিয় সাংবাদিক বলেন, “যেসব এলাকায় ছবি তোলা নিষিদ্ধ, সেখানে মোজো খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিবিসির জন্য অনেক রিপোর্ট তৈরি করেছি (মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ ও সম্পাদনা করে)। ছোট ও সহজে দেখা যায়না বলে এই কাজে আমি আমার আইফোন ৫ ব্যবহার করি।”
মিশরীয় সাংবাদিক আলি সোতৌহি, সিরিয় শরণার্থীদের নিয়ে দা ইস্টার্ন গেইটওয়ে নামে যে তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন, তাতে মোজো টুলের ব্যবহার দেখা গেছে। সোতৌহি, মোজো সম্পর্কে জানতে পারেন আরিজের (আরব নেটওয়ার্ক অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস) একটি কর্মশালা থেকে। এরপর তিনি স্মার্টফোন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ডিএসএলআর ও ভিডিও ফুটেজ ব্যবহার করে তার চলচ্চিত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। আসলে, স্টোরিটি কী এবং কোথায় – তারওপরই নির্ভর করবে মোজো কেমন হবে, যা এই পদ্ধতিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য আদর্শ করে তুলেছে।
পরামর্শ: অ্যাসাইনমেন্ট এবং স্টোরিই ঠিক করে দেবে, মোজোতে আপনার কোন ধরনের টুল প্রয়োজন।
আপনি কোন ধরনের মোজো করবেন, তার ওপর নির্ভর না করেই বলা যায়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় মোবাইল টুল কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবে। কার্যকর মোজো করার জন্য সহায়ক ডিভাইস এবং অ্যাপ সম্পর্কে নিচের তালিকায় বিস্তারিত বলা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকেই মোজো করা সম্ভব।
প্ল্যাটফর্ম বাছাই
আমার জানা মতে, বেশিরভাগ সাংবাদিক আইওএস স্মার্ট ডিভাইস (আইফোন) ব্যবহার করেন। কারণ আইওএস অপারেটিং সিস্টেম শক্তিশালী এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য। অনেকে আবার সস্তা হওয়ার কারণে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহার করেন। গোড়ার দিকে, উন্নত বিশ্বের মোজো প্রশিক্ষকরা আইওএস ব্যবহার করতেন, এর ট্র্যাক ভিডিও এডিটর অ্যাপের জন্য, যা এখন অ্যান্ড্রয়েডেও পাওয়া যায়।
পরামর্শ: দাম যদি গুরুত্বপূর্ণ না হয়, তাহলে আপনি শক্তিশালী অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করতে পারেন, যা ১৬০ মার্কিন ডলারের মধ্যেই আপনার প্রয়োজনীয় সব মোজো অ্যাপ চালাতে পারবে।
ক্যামেরা হার্ডওয়্যার
মোজোর অন্যতম প্রধান উপকরণ, স্মার্টফোন। স্মার্টফোনের ক্যামেরা কতটা শক্তিশালী হবে তা নির্ভর করে, ক্যামেরা অ্যাপটি ফোনের অভ্যন্তরীণ বৈদ্যুতিক ক্ষমতা কতখানি ব্যবহার করতে পারে, তার ওপর।
আপনার ক্যামেরাটি কত মেগাপিক্সেলের হওয়া উচিৎ? পিক্সেল যত বড় হবে, ক্যামেরা তত বেশি আলো ধারণ করতে পারবে। দারুণ! কিন্তু ক্যামেরার সেন্সরের আকার না বাড়িয়ে শুধু পিক্সেলের পরিমাণ বাড়ানোর মানে হচ্ছে, পিক্সেল আসলে ছোট এবং তা কম আলোতে ভালো কাজ করে না।
পরামর্শ: অন্তত ১২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা কিনুন। আরও বড় সেন্সর ও বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরাসহ স্মার্টফোন বাজারে পেলে, আপগ্রেড করার কথা ভাবুন।
আপনি যদি মোবাইল সাংবাদিকতা করতে চান, তাহলে এমন ফোন কিনুন, যেটিতে বেশি ক্ষমতার প্রসেসর আছে এবং ক্রেডলস, লেন্স, লাইট, মাইক্রোফোন ও মোজো অ্যাপ ব্যবহার করা যায়।
পরামর্শ: আমার মূল মোজো সরঞ্জামের মধ্যে আছে একটি ওয়াইড অ্যাঙ্গেল জেইস এক্সোলেন্স (২৯৯ অস্ট্রেলিয় ডলার) যা দিয়ে হাতে রেখেও স্থিরভাবে কাজ করা যায়। এটি থাকলে সাবজেক্টের বেশি কাছে যাওয়া সম্ভব হয়, ফলে আরও উন্নত শব্দ রেকর্ড করা যায়। এর সাথে ব্যবহার করি, ম্যানফ্রোটো পিক্সি ট্রাইপড (৪০ অস্ট্রেলিয় ডলার), রোড ভিডিও মাইক্রোফোন (৭৫ অস্ট্রেলিয় ডলার), স্মার্ট ল্যাভ + (৬০ অস্ট্রেলিয় ডলার), লুমি মিউজ লাইট (১৬০ অস্ট্রেলিয় ডলার), এয়ারস্ট্যাশ ট্র্যান্সফার ইউএসবি স্টিক (৫০ অস্ট্রেলিয় ডলার) এবং এক সেট হেডফোন।
মাইক্রোফোন
এমটিভি বলছে, মানুষ নিম্নমানের ভিডিও দেখে, কিন্তু নিম্নমানের অডিও শুনতে চায়না। আপনি যদি আপনার বিষয়বস্তুর যথেষ্ট কাছে থাকেন এবং আশেপশে বেশি শব্দ না থাকে, তাহলে আপনার স্মার্টফোনের বা হেডসেটের মাইক্রোফোনেই কাজ হবে। তারপরও, এই মাইক্রোফোনগুলো ব্যবহার করলে অডিওর মান দারুণভাবে বৃদ্ধি পাবে:
- হাতে ধরে ক্লোজ কোয়ার্টার ভিডিও করার সময়ে শটগান মাইক্রোফোন দরকার। আমি আইওএস ডিভাইসের জন্য তুলনামূলক সস্তা রোড ভিডিও মাইক্রোফোন (৭৫ অস্ট্রেলিয় ডলার) এবং একটি এসসি৪ (১৫ অস্ট্রেলিয় ডলার) অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করি।
- স্মার্টফোন থেকে দূরে অডিও রেকর্ড করার জন্য ওয়ারলেস মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়। সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার জন্য স্মার্ট ল্যাভ+ (৭০ অস্ট্রেলিয় ডলার) এর মতো সস্তা ল্যাপেল মাইক্রোফোনই যথেষ্ট।
- আমি একটি শেনহেইজার এভিএক্স সিস্টেম (১৩০০ অস্ট্রেলিয় ডলার) ব্যবহার করি। ৪৭৫ অস্ট্রেলিয় ডলারের মত খরচ করলেই দুর্দান্ত কিছু মডেল পাওয়া যায়।
পরামর্শ ১: সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় বিষয়বস্তুর এক মিটারের মধ্যে অবস্থান করুন, বাইরে মাইক্রোফোনের সাথে পাওয়া উইন্ডসক ব্যবহার করুন। স্মার্ট ল্যাভ
পরামর্শ ২: আপনার বিষয়বস্তুকে বাতাসের বিপরীতে বসান যাতে ল্যাপেল মাইক্রোফোনটি বাতাসের শব্দ থেকে রক্ষা পায়। ল্যাপেল মাইক্রোফোন সাবজেক্টের মুখ থেকে ৮ ইঞ্চি নিচে রাখতে হয়।
পরামর্শ ৩: আপনি যদি রেডিও মাইক্রোফোন কিনেন, তাহলে একটু বেশি খরচ করুন, কারণ এই টুল সবসময় কাজে আসবে।
এবার এভিএক্স সিস্টেম এর একটি ভিডিও দেখা যাক। এখানে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন মাইক্রোফোনের রেকর্ডিংয়ের নমুনা শুনতে পাবেন।
অ্যাপস
২০০৮ সালে আইফোন চালু হওয়ার পরই অ্যাপ ইন্ডাস্ট্রির সূচনা হয়। এখন আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড এবং অন্যান্য ডিভাইসের জন্য ৬০ লাখেরও বেশি অ্যাপ রয়েছে।
ক্যামেরা অ্যাপস
আমি সাধারণত ফোনের সাথে পাওয়া বিল্ট-ইন ক্যামেরা অ্যাপ ব্যবহার করি। কিন্তু ক্যামেরা সেটিংসের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হলে, আমি নিচের অ্যাপগুলো ব্যবহার করি:
- ফিল্মিক প্রো (১৪.৯৯ ইউএস ডলার) হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভিডিও ক্যামেরা অ্যাপ, যেখানে আপনি আলাদা করে হোয়াইট ব্যালেন্সিং, লাইট মিটারিং এবং ফোকাস পয়েন্ট, ভ্যারিয়েবল ফ্রেম রেট এবং রিয়াল-টাইম অডিও মনিটরিং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
- ক্যামেরা+2 (২.৯৯ ইউএস ডলার) হচ্ছে তর্কসাপেক্ষে বাজারের সেরা স্টিল ফটোগ্রাফি অ্যাপ। এখানে আপনি উচ্চতর ইমেজ কন্ট্রোল, স্ট্যাবিলাইজার এবং আলাদা করে এক্সপোজার, ফোকাস, হোয়াইট ব্যালেন্স, ব্রাইটনেস, কালার ও শার্পনেস নিয়ন্ত্রণের সুবিধা পাবেন।
পরামর্শ: ফোনের বিল্ট-ইন ক্যামেরা অ্যাপ দিয়েই শুট করতে শিখুন। এক্সপোজার, ফ্রেমিং এবং গল্পটি তুলে ধরবে, এমন শটের প্রতি মনোযোগ দিন।
সাউন্ড অ্যাপস
প্রাথমিকভাবে ভিডিওর সাথে সাথে অডিও বা ভয়েস ওভার রেকর্ড করুন, যাতে একই জায়গায় (ক্যামেরা রোল বা গ্যালারি) ভিডিও-অডিও দুই ধরনের মিডিয়াই থাকে। এতে করে সীমিত ডেডলাইনে কাজের সময় এগুলোকে দ্রুত খুঁজে পাওয়া যায়। আর ভিডিও থেকে অডিও আলাদা করতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড লাগে।
পরামর্শ: ভয়েস ওভার রেকর্ডের সময় আমি লেন্স ঢেকে নিয়ে ক্যামেরা অ্যাপ ব্যবহার করতে বলি, যাতে ভিডিও ট্র্যাকটির স্ক্রিন কালো দেখায়। এতে করে, ক্যামেরা রোল থেকে ভয়েস ওভার ক্লিপ সহজে আলাদা করা যায়, কারণ সেগুলো কালো।
আপনার যদি ভিইউ মিটারের দরকার হয়, তাহলে ফিল্মিক প্রো ব্যবহার করতে পারেন। আর যদি ৯৬ কেবিপিএস, লসলেস (এএলএসি/.সিএএফ) অথবা ওয়েভ ফরম্যাট চান, তাহলে এই দুটো দারুণ অডিও অ্যাপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন:
- ফেরাইট নামের অ্যাপটিতে নানা রকমের রেকর্ডিং ও শেয়ারিং এর সুবিধাসহ (ইন-অ্যাপ পার্চেজ সহ ফ্রি অ্যাপ) আপনার প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রফেশনাল সেটিংস রয়েছে।
- রোড রেকর্ডিংয়ে পাবেন অনেক ধরনের ফিল্টার, কমপ্রেশন থ্রেসহোল্ডস, ৪৮ ডেসিবল গেইন, মার্কারস এবং ভ্যারিয়েবল প্লেব্যাক স্পিড (৯.৯৯ অস্ট্রেলিয় ডলার)।
এডিট করার অ্যাপ
দ্রুত এবং পেশাদার স্মার্টফোন এডিটিং এর জন্য অন্তত দুইটি ভিডিও ট্র্যাকসহ এডিটিং অ্যাপ প্রয়োজন। প্রথম ভিডিও ট্র্যাকে ভয়েসওভার সম্পাদনা করুন। তারপর প্রথম ভিডিও ট্র্যাকের কথার সাথে মিলিয়ে দ্বিতীয় ভিডিও ট্র্যাকে বি-রোল ভিডিও যুক্ত করুন।
বাজারে মোজোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ভিডিও-এডিটিং অ্যাপগুলো নিচে দেয়া হলো:
- আইমুভি হচ্ছে আইফোনের বিল্ট-ইন অ্যাপ, যাতে দু’টি ভিডিও ট্র্যাক ব্যবহার করা যায়। দ্রুত প্রফেশনাল স্টোরি এডিট করার জন্য যা যা দরকার, তার সবই পাবেন আইমুভিতে। কিন্তু এতে শক্তিশালী টাইটেলিং টুল এবং কিফ্রেম অডিও এডিটিং সুবিধার অভাব রয়েছে। এই ফ্রি অ্যাপ সহজেই ব্যবহার করা যায়।
- আইওএস-এ নতুন এসেছে লুমা ফিউশন। এটি সম্ভবত এই মূহূর্তে সবচেয়ে শক্তিশালী এডিটিং অ্যাপ। এতে তিনটি ভিডিও এবং পাঁচটি অডিও ট্র্যাক একসাথে এডিট করা যায়। আরও রয়েছে স্লিপ-ট্রিম, অ্যাংকর্ড এডিট, কালার কারেকশন, লেয়ার্ড টাইটেল কন্ট্রোল, কিফ্রেম অডিও, ইন্সার্ট এবং ওভাররাইট এডিটের সুবিধা। এটি তৈরি হয়েছে পেশাদার এডিটিংয়ের উপযোগী করেই (১৯.৯৯ মার্কিন ডলার)।
- কাইনমাস্টার হচ্ছে আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েডের জন্য প্রথম প্রফেশনাল স্মার্টফোন এডিট অ্যাপ, যাতে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করার সুবিধা আছে। লুমা ফিউশন এর বিভিন্ন সুবিধার মধ্যে রয়েছে ক্রোমা কি টুল, সহজ একটি টাইটেলিং টুল, ব্লার, অডিও ম্যানিপুলেশন এবং আরও অনেক কিছু। (এটি ফ্রি, তবে ৪০ মার্কিন ডলারের বার্ষিক সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে ওয়াটারমার্ক দূর করাসহ কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়)।
পোস্ট প্রোডাকশন অ্যাপস
আলো বা রংয়ের ভারসাম্য নেই, এমন ভিডিও সম্পাদনার জন্য আমি ভিডিও গ্রেড (৬ ইউএস ডলার) অ্যাপটি ব্যবহার করি। এতে পোস্ট প্রোডাকশনের ১৪ টি ফাংশন রয়েছে। আপনার এডিট অ্যাপের টাইমলাইনে ফেলার আগেই ভিডিওটি সংশোধন করে নিন।
ট্রান্সফার ডিভাইস
স্মার্টফোন অতিরিক্ত কন্টেন্টে ভরে গেলে আমরা প্রায়ই জায়গা খালি করার জন্য মূল্যবান মিডিয়া মুছে ফেলি। কিন্তু আপডেট করার জন্য মাসখানেক, এমনকি বছরখানেক পরেও পুরনো স্টোরি এবং তার র’ (Raw) ভিডিও দেখার প্রয়োজন হতে পারে। তাই ফাইল না মুছে, বরং হার্ডড্রাইভ বা কম্পিউটারে নিজের মিডিয়া লাইব্রেরিতে ট্রান্সফার করে রাখুন।
আমি আমার স্মার্টফোনের মেমোরি খালি করার জন্য মিডিয়া স্ট্রিমার নামের একটি ট্রান্সফার ডিভাইস ব্যবহার করি। অনেক ব্র্যান্ডের ট্রান্সফার ডিভাইস থাকলেও তা মূলত দুই ধরনের হয়। আইওএস ডিভাইসের জন্য লাইটনিং ভার্শন (যেমন স্যান্ডডিস্ক নির্মিত আইএক্সপ্যান্ড) এবং ওয়াইফাই ভার্শন যা সব প্ল্যাটফর্মেই কাজ করে (যেমন ম্যাক্সেল নির্মিত এয়ারস্ট্যাশ)।
আমি ফোন থেকে কোনো কন্টেন্ট, নেটওয়ার্ক এডিটর বা অন্য কোন সহকর্মীর কাছে পাঠানোর জন্য প্রায়ই উই ট্রান্সফার ব্যবহার করি।
পরামর্শ: এডিট প্রজেক্টটি ভিডিও হিসাবে রেন্ডার করার আগ পর্যন্ত কোনোভাবেই মূল মিডিয়া ফাইল ফোন থেকে মুছে ফেলবেন না।
আনুষঙ্গিক
স্মার্টফোন বাছাইয়ের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, কী কী আনুষঙ্গিক মোজো যন্ত্রপাতি ফোনটিতে ব্যবহার করা যায়। আমি নিজের জন্য এইগুলো ব্যবহার করি:
লেন্স
ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স আপনাকে বিস্তৃত দৃশ্যের ছবি তুলতে এবং দৃঢ়ভাবে স্মার্টফোন ধরতে সাহায্য করবে। ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করলে সাক্ষাৎকারদাতার আরও কাছে যাওয়া যায়, ফলে অডিওর মান ভালো হয়।
বিস্টগ্রিপ প্রো একটি দুর্দান্ত ক্রেডল। এতে যেকোনো ধরনের মোবাইল ফোন, নানা রকমের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল ও টেলিফটো লেন্স, মাইক্রোফোন, লাইট এবং ট্রাইপড ব্যবহার করা যায়।
চাইলে আরো দামী কেনকো ০.৭৫ ওয়াইড অ্যাঙ্গেল লেন্স প্যাকেজ কিনতে পারেন। দাম পড়বে ২৪৮ মার্কিন ডলার।
ট্রাইপড
ছোট ও সহজে বহনযোগ্য ট্রাইপড ব্যবহার করুন, যা হ্যান্ডহেল্ড শটকে স্টাবিলাইজ করতে কাজে আসবে। আপনার যদি বেশি উচ্চতা দরকার হয়, তাহলে গাড়ির ছাদে, দেয়ালে বা কেবিনেটের ওপর ট্রাইপড রেখে, তাতে ক্যামেরা যুক্ত করে কাজ করতে পারেন। ম্যানফ্রোটো পিক্সি (৪০ অস্ট্রেলিয় ডলার) এই কাজে দারুণ। এর গঠন মজবুত। রয়েছে চক্রাকার বল জয়েন্ট ও সোয়া ইঞ্চি থ্রেড। ট্রাইপডটি দুইটি ভিন্ন আকৃতিতে পাওয়া যায়।
আপনার যদি আরও বেশি উচ্চতা প্রয়োজন হয় এবং বেশি ওজনেও আপত্তি না থাকে, তাহলে ছড়ানো পায়ের মনোপড ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন ম্যানফ্রোটো ৫৬০বি১ মডেলটি (১৬৫ ইউএস ডলার)। এর কার্বন নির্মিত হালকা ভার্শনও বাজারে পাওয়া যায়।
ব্যাটারি প্যাক
আমি ২২০০০ এমএএইচ এর পাওয়ার স্টেশন এসি (১৯৯ ইউএস ডলার) ব্যবহার করি। এর সাহায্যে আমি ২৪ থেকে ১০০ ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজ করতে পারি।
উপরের তথ্যগুলো আপনার কাজে লাগলো কিনা, আমাদের জানান। আর কোন কোন বিষয়ে মোজো কলাম দেখতে চান, সেটাও আমাদের জানান। গো মোজো!!!
ইভো বুরাম একজন অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক সাংবাদিক, লেখক এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত টেলিভিশন প্রোডিউসার। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ২৫০০ ঘণ্টার বিভিন্ন ধরনের প্রাইম টাইম অনুষ্ঠান প্রযোজনার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। ইভো মোবাইল সাংবাদিকতার একজন অগ্রদূত। বুরাম মিডিয়া নামে একটি মোজো এবং ওয়েব টিভি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁর, যা বিশ্বসেরা মিডিয়া প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সাংবাদিক এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নাগরিক সাংবাদিকদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।