ডকুমেন্ট ব্যবস্থাপনার জন্য আমার সবচেয়ে প্রিয় টুলগুলোর একটি ডকুমেন্ট ক্লাউড। এর সবচে দুর্দান্ত বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, পিডিএফ থেকে টেক্সট তৈরি এবং আপলোড করা ফাইল থেকে পরিসংখ্যান বের করা। কিন্তু আপনাকে তথ্যের জন্য যখন হাজার হাজার দলিল বা ফাইল ঘাঁটতে হবে, তখন কী করবেন? তখন আপনার কাজে আসবে ওভারভিউ; এটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের কথা মাথায় রেখে তৈরি, একটি ডকুমেন্ট-মাইনিং টুল।
ডকুমেন্ট ক্লাউড সহ একাধিক সোর্স থেকে নথি আনতে পারে ওভারভিউ। অনায়াসে বিশ্লেষণ করতে পারে কয়েক ডজন থেকে কয়েক লক্ষ পাতার দলিল। এটি ডকুমেন্টে থাকা ডেটাকে, ওয়ার্ড ক্লাউড থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক গ্রাফের মত নানান পদ্ধতিতে ভিজ্যুয়ালাইজ করতে পারে। এতে রয়েছে, বিভিন্ন রকমের সার্চ টুল, যা দিয়ে ডেটাকে ফিল্টার (ছেঁকে) করে সুনির্দিষ্ট তথ্য বের করে আনা যায়। এর সবচে বড় বৈশিষ্ট্যগুলোর একটি হলো, কনটেন্টের ধরন বুঝে দলিলগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা ফোল্ডারে, গুছিয়ে ফেলা। ডকুমেন্ট ক্লাউডের মত এখানেও, ছবি দেখে বর্ণ চেনা বা অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশন (ওসিআর) সুবিধা আছে। তাই, আপনার ডকুমেন্টকে তার প্রকৃত ফরম্যাট বা টেক্সট, যে কোনও ভাবেই পড়া যাবে। এর সাথে আছে ট্যাগ এবং নোট যোগ করার ক্ষমতা; যা ওভারভিউর মাধ্যমে হাজার হাজার নথি থেকে ডেটা খুঁজে বের করার কাজকে (মাইনিং) সহজ করে দেয়।
কে টুইট করেছে?
টুইটার সাংবাদিকদের জন্য তথ্যের একটি দারুণ উৎস হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি প্রোগ্রামিং এবং টুইটার এপিআইয়ের ব্যবহার না জানেন, তাহলে একেকটি থ্রেড থেকে মাইনিং করে (খুঁজে) কার্যকর তথ্য বের করে আনা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ট্রিভার্স এই কাজটিকে অনেক সহজ করে তোলে। এটি সাম্প্রতিক সময়ে আমার প্রিয় আবিষ্কারগুলোর একটি। ট্রিভার্স একটি ক্রোম এক্সটেনশান, যা টুইটার থ্রেডে থাকা সব ইউজারকে এক জায়গায় নিয়ে আসে। ফলে কাউকে খুঁজে বের করা, একটি টুইটে ক্লিক করার মতোই, সহজ হয়ে যায়।
এই টুল ডাউনলোড করতে পারেন ক্রোম অ্যাপ স্টোর থেকে। এক্সটেনশানটি ইনস্টল করার পরে, টুইটারে প্রবেশ করুন, একটি সক্রিয় থ্রেড খুঁজুন এবং মূল টুইট বা বার্তা ওপেন করুন। টুইটটি খোলার পর, ট্রিভার্স এক্সটেনশান আইকনে ক্লিক করুন। এটি কথোপকথনে অংশ নেয়া সব ইউজারকে একটি ট্রি‘তে দেখাবে। পছন্দের ইউজারের উপর ক্লিক করুন। তখন ট্রিভার্স ওই ইউজারের করা টুইটগুলোকে, আগের টুইটগুলোর পাশাপাশি, একটি সাইডবারে লোড করবে। এটি টুইট থ্রেডকে পোস্টের সময়ের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন রঙে প্রদর্শন করে, ফলে সারিগুলো দেখতেও চমৎকার লাগে।
টুইটারে তথ্য অনুসন্ধান
টুইটার ব্যবহারকারীদের ডেটা অনুসন্ধানের জন্য সেরা টুলগুলোর একটি, FollowerWonk। এর মধ্যে ইউজার ডেটা বিশ্লেষণের বেশকিছু সরঞ্জাম রয়েছে। যেমন: একজন ব্যবহারকারীর সাথে আরেকজনের প্রোফাইলের তুলনা, টুইটারে তারা কী করছে, দুই জনের কমন বা অভিন্ন ফলোয়ার কারা – এসবই বের করা যায়, এর মাধ্যমে। FollowerWonk এর সবচেয়ে কার্যকর বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি হল, টুইটার বায়ো (নিজের সম্পর্কে বিবরণ) এর ভিত্তিতে সার্চ করার সুবিধা। কোনও বিশেষ খাতের ব্যক্তি বা বিশেষজ্ঞকে খুঁজে বের করতে এটি দারুণ কাজে আসে।
যে পেঁয়াজে ঝাঁঝ নেই
বেশিরভাগ অনুসন্ধানী কাজে আপনাকে কোনও না কোনও সহযোগী বা সোর্সের সাথে ডকুমেন্ট শেয়ার করতে হয়। এজন্য ড্রপবক্স এবং গুগল ড্রাইভের মতো কয়েক ডজন অনলাইন সার্ভিস আছে। অনেক ক্ষেত্রে ইমেলও কাজে দেয়। কিন্তু যদি নথি সংবেদনশীল হয় অথবা আপনি চান না এটা অন্য কারো হাতে পড়ুক অথবা আপনি ডকুমেন্ট শেয়ার করতে চান বেনামে – এমন পরিস্থিতির জন্য সবচে ভালো শেয়ারিং টুল, OnionShare।
এটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এবং উইন্ডোজ, ম্যাক ওএস এবং লিনাক্সসহ বেশিরভাগ অপারেটিং সিস্টেমে চলে। একবার সফটওয়্যারটি ইন্সটল হয়ে গেলে ব্যবহারকারীরা অনিয়ন শেয়ারে ফাইল টেনে আনতে পারেন। যখন তারা ফাইল শেয়ার করা শুরু করবেন, OnionShare একটি সুরক্ষিত টর (Tor) সার্ভার সেট আপ করবে এবং একটি URL তৈরি করবে। প্রাপক ফাইল ডাউনলোডের সময় নিরাপদ এবং বেনামী টর ব্রাউজার ব্যবহার করে এই URL টি খুলবে।
ফাইল ডাউনলোড হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অনিয়ন শেয়ার, তার সংযোগটি বন্ধ করে দেবে যাতে তারা অন্যরা আর ফাইলটি খুঁজে না পায়।
আরেক ধাপ এগিয়ে
OnionShare এর চেয়ে আরো স্থায়ী কোনও সমাধান চাইলে আপনি একটি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) সেটআপ করতে পারেন। একটি সংস্থার ভেতরে নিরাপদে যোগাযোগের জন্য ভিপিএন ভালো, তবে এটি বসানো ব্যয়বহুল ও জটিল। কিন্তু Outline-এ এই দুই সমস্যার কোনটিই নেই।
এটি তৈরি করেছে জিগস’ (অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান)। আউটলাইন, ডিজিটাল ওশানের মতো সার্ভিস ব্যবহার করে, মাসে মাত্র কয়েক ডলার খরচের একটি ভিপিএন সেট আপ করে। আউটলাইনে এমন ম্যানেজমেন্ট টুল আছে, যার মাধ্যমে আপনি যত ইচ্ছা ভিপিএন এবং ক্লায়েন্ট সেটআপ করতে পারবেন। এই ক্লায়েন্টরাই মূলত ভিপিএন ব্যবহার করবে।
সতর্ক নজর রাখুন
নানা কারণে আপনি একটি ওয়েবসাইটের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে চাইতে পারেন। হতে পারে, আপনি দেখতে চান কোনও ব্যক্তির প্রোফাইল, একটি কোম্পানি বা কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থার পেইজে পরিবর্তন হচ্ছে কিনা। সেই পরিবর্তন স্ক্যান করার জন্য রোজ সকালে সাইটটি খোলার পরিবর্তে, একটি মনিটরিং টুল ব্যবহার করুন। এটি আপনার জীবনকে সহজ করবে। অনলাইনে এমন বেশ কিছু ভাল ওয়েবসাইট মনিটরিং টুল পাওয়া যায়। আমার পছন্দ Versionista এবং VisualPing। দুটোই ব্যবহারে সহজ: যে সাইটের ওপর নজর রাখতে চান, তার URL এবং আপনার ইমেল ঠিকানা সেখানে যুক্ত করুন। এরপর যখনই সাইটে কোনও পরিবর্তন হবে, টুলগুলো আপনাকে সতর্ক বার্তা পাঠাবে। তারা আপনার মনিটরিং করা সাইটের, সব সংস্করণ সংরক্ষণ করবে, যাতে আপনি সময়ের সাথে সাথে পেইজটির বিবর্তন দেখতে পারেন। দুটো সার্ভিসই বিনামূল্যে কিছু মৌলিক সেবা দেয়। আরো উন্নত পর্যায়ের সেবার জন্য টাকা দিতে হয়।
যদি আপনার শেয়ার করার মতো কোনো টুলস্ বা টিপস্ থাকে তবে আপনি লেখককে ইমেইল করতে পারেন এই ঠিকানায় : alastair.otter@gijn.org।
অ্যালাস্টেয়ার ওটার জিআইজেএন–এর আইটি সমন্বয়কারী। তিনি জোহানেসবার্গ–ভিত্তিক ডেটা জার্নালিজম উদ্যোগ, মিডিয়া হ্যাক কালেক্টিভের একজন ব্যবস্থাপনা অংশীদার। সেখানে তিনি ইন্টারেক্টিভ ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং কয়েকটি অনলাইন মিডিয়া সাইট পরিচালনা করেন।