অনলাইনে অনুসন্ধানের এমন কোনো টুল নেই, যা আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে। এটি অনেকটা ধাঁধার মতো। প্রতিটি টুকরা জোড়া দিতে দিতে আপনাকে এগোতে হবে – কোথাও হয়তো একটি নাম পাবেন, অন্য কোথাও তার সঙ্গে কোনো সংযোগ – বিষয়টা এমনই। তবে ভালো খবর হলো, ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন অন্তত কয়েক ডজন টুল পাওয়া যায়, যারা সেই ধাঁধার টুকরোগুলোকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
এটি মাথায় রেখে, এবার ইনভেস্টিগেটিভ টুলবক্স জোর দিচ্ছে এমন সব টুলের ওপর, যা কোনো ব্যক্তির প্রোফাইল তৈরির জন্য দরকারি তথ্য খুঁজে পেতে সহায়ক হবে।
প্রথমে মানুষ খোঁজা
এজন্য প্রথম যে অস্ত্রটি রয়েছে তার নাম হলো peoplefindThor, অর্থাৎ ব্যক্তির খোঁজ। এটি ‘সাংবাদিকদের জন্য ফেসবুকে মানুষ খোঁজার হাতিয়ার’ হিসেবে সুপরিচিত। আর এই কাজটি বেশ ভালোভাবেই করতে পারে পিপলফাইন্ডথর।
টুলটির ইন্টারফেস সহজ। এতে বেশকিছু ফিল্টার আছে, যা দিয়ে আপনি সার্চের পরিধি ক্রমশ গুটিয়ে আনতে পারবেন, যা ফেসবুকে কোনো ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার কাজ সহজ করে তোলে।
এই ফিল্টার বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যে ব্যক্তি নিয়ে গবেষণা করছেন তার বন্ধু অথবা সহকর্মীদের সার্চ দিয়ে খুঁজে বের করতে পারেন অথবা আপনি একটি নির্দিষ্ট শহরের কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, এমন ব্যক্তিদেরও সন্ধান করতে পারেন। আপনার প্রতিবেদনের জন্য নতুন সোর্স বের করার ক্ষেত্রে এটি বেশ কার্যকর।
peoplefindThor-এর ব্যবহার ঠিকমতো বুঝতে হলে কিছুটা অনুশীলন প্রয়োজন। আর একবার হাত এসে গেলে, এটি আপনার খুব কাজের একটি হাতিয়ার হয়ে উঠবে।
মানুষের যত তথ্য
অনলাইন রিসার্চের অন্যতম কৌশল হলো, প্রথমে কারো সম্পর্কে যে-কোনো একটি তথ্য খুঁজে বের করা, তারপর সেটি ব্যবহার করে আরেকটি তথ্য খোঁজা এবং ওই ব্যক্তির একটি ভালো প্রোফাইল তৈরি করা পর্যন্ত খুঁজতে থাকা। কোনো ব্যক্তি সম্পর্কে এভাবে তথ্য অনুসন্ধানের সবচেয়ে ভালো জায়গাগুলোর একটি, PiPl।
PiPl ৩০ লাখ ব্যক্তির রেকর্ড রেখেছে তার ডেটাবেসে। আক্ষরিকভাবে এটি মানুষ খোঁজার সার্চইঞ্জিন।
PiPl ব্যবহার করা সহজ। একজন ব্যক্তির নাম ইনপুট করুন, দরকার হলে জায়গার নাম দিন এবং সার্চ করুন। অবশ্য খুব প্রচলিত কোনো নাম দিয়ে সার্চ করলে, শত শত বা এমনকি হাজার হাজার ফলাফলও আসতে পারে। এমন অবস্থায় ফলাফলের তালিকাটি ফিল্টার করার জন্য আপনাকে আরো কিছু কাজ করতে হবে।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, আপনি অল্প কয়েকটি ফলাফল পাবেন। এগুলির ওপর ক্লিক করলে ওই ব্যক্তির সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য, তাদের যত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, তার সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন ব্যক্তি, এমনকি অনলাইনে তার হরেক রকমের ইউজার নেমও বেরিয়ে আসবে।
ফোনটি এখন কোথায়?
এবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি HLR-Lookups সাইটটির সঙ্গে। এই পেজে একগাদা কারিগরি তথ্য আর তিন বর্ণের শব্দসংক্ষেপ দেখতে পাবেন। কিন্তু তাতে ঘাবড়ে যাবেন না। ফল পেতে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এইচএলআর হলো ‘হোম লোকেশন রেজিস্টার’। বিশ্বে যত ইউনিক বা স্বতন্ত্র আন্তর্জাতিক মোবাইল আইডি আছে সেগুলো ট্র্যাক করার জন্য এটি তৈরি করেছেন নেটওয়ার্ক অপারেটররা। এই স্বতন্ত্র মোবাইল আইডি, অপারেটরকে বলে দেয় কোন ডিভাইসটি কোন নেটওয়ার্কে রয়েছে। এর ভিত্তিতেই অপারেটররা এসএমএস বা খুদেবার্তাগুলো সঠিক প্রাপকের কাছে পৌঁছাতে পারে।
সেই ডেটা ব্যবহার করে কোন মোবাইল নম্বর কোন নেটওয়ার্কে আছে সেই তথ্য খুঁজে বের করে আনে এইচএলআর-লুকআপ । সাংবাদিকদের অনুসন্ধানেও এটি কাজে আসে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে যে নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন, তাঁর নম্বরটিকে যদি হঠাৎ অন্য নেটওয়ার্কে পাওয়া যায়, ধরে নিতে পারেন তিনি দেশের বাইরে গেছেন। কোনো ব্যবহারকারী ‘রোমিং’ হলে এইচএলআর-লুকআপ আপনাকে সতর্ক করবে এবং বলে দেবে তিনি এখন কোন নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন। অনুসন্ধান করলে এর চেয়েও অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায়। অবশ্য এটি আপনি কত গভীরে যেতে চান বা আপনার প্রয়োজন কী, তার ওপর নির্ভর করবে। এখানে আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তথ্য থাকতে পারে।
HLR-Lookups এর মাধ্যমে একটি বা একসঙ্গে অনেক ফোন নম্বরের তালিকা ধরে সার্চ করা যায়, যা অনেকগুলো ফোনের একটি নেটওয়ার্ককে এক জায়গায় রাখতে কাজে আসে।
এইচএলআর-লুকআপের ফ্রি সংস্করণ, বিনা পয়সায় অনেক বার সার্চ করার সুযোগ দেয়। অবশ্য তার বেশি ব্যবহারের জন্য আপনাকে টাকা দিতে হবে।
ব্যবসায়ের মানুষেরা
ব্যাবসায়িক স্বার্থ এবং তার সঙ্গে কোনো মানুষের সম্পর্ক খোঁজার জন্য দেশ বা বিষয়ভিত্তিক অনেক রেজিস্টার বা নিবন্ধক আছে। কিন্তু অনেক রকম তথ্যের জন্য একসঙ্গে একাধিক রেজিস্টার ঘাঁটা একরকম দুঃসাধ্য বলা যেতে পারে।
তবে ওপেন করপোরেটস (ওসি) বিশ্ব জুড়ে কোম্পানি এবং কোম্পানির কর্মকর্তাদের এমন একটি ডেটাবেস, যা সব রেজিস্ট্রির তথ্য এক জায়গায় অনুসন্ধানের সুযোগ করে দেয়। এটি কোম্পানি স্বার্থ এবং অফিসারদের আলাদা আলাদা নিবন্ধন তথ্য সংগ্রহ করে এবং তাঁদেরকে এক জায়গায় নিয়ে আসে। ওপেন করপোরেটস তৈরির সময় বিশ্বে ১৬ কোটি কোম্পানি এবং ২০ কোটিরও বেশি কর্মকর্তার নাম তালিকাভুক্ত ছিল। আর একসঙ্গে বিভিন্ন অঞ্চলের এত তথ্য অনুসন্ধানের এই সুযোগ, অনেক দেশে ছড়ানো সংযোগ খুঁজে পাওয়াও সহজ করে তোলে।
এই বিশাল ওপেন করপোরেটস ডেটাবেস সার্চ করতে পারেন কোনো কোম্পানি বা তার কর্মকর্তাদের সম্পর্কে জানার জন্য। সেই ফলাফলকে আবার দেশ, কোম্পানির ধরন, কোম্পানির অবস্থা এবং রেকর্ডের প্রকৃতিসহ বিভিন্নভাবে ফিল্টার করা যায়।
সাহায্য পাবেন যেখানে
অনেক সময় অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে মনে হয়, যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। বুদ্ধি কাজ করে না, মনে হয় এখানেই শেষ। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে আপনার কাজে আসবে ওসিসিআরপির ইনভেস্টিগেটিভ ড্যাশবোর্ড।
ইনভেস্টিগেটিভ ড্যাশবোর্ড সেবা দেয় বিনা পয়সায়। বিশ্বের যে-কোনো দেশের সাংবাদিকরা গবেষণার জন্য তাদের সাহায্য চাইতে পারেন। তাদের বিভিন্ন বিষয়, ভাষা এবং অঞ্চলের জন্য আলাদা বিশেষজ্ঞ আছে। যা খুব বিষয়-নির্দিষ্ট গবেষণার অনুরোধ মেটাতে সহায়তা করতে পারে।
ওসিসিরআরপি বিভিন্ন ডেটাবেইস থেকে যত তথ্য সংগ্রহ করেছে, তাও এই ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সহজে সার্চ করা যায়। যেমন আলেফ ডেটাবেস। এটি উন্মুক্ত ও লিক হওয়া তথ্যের এক বিরাট সংগ্রহ। এই ডেটাবেস তৈরির সময় সেখানে ১৭ কোটি ৮০ লাখ রেকর্ড এবং লিক অন্তর্ভুক্ত হয়।
সামাজিক মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ
সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাবের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা ছবি, ব্যক্তিগত ও কোম্পানি তথ্য এবং ভিডিওর পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়েছে অনলাইনে। বিশেষ করে টুইটার হয়ে উঠেছে, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ট্র্যাক করার এবং তাদের সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য সংগ্রহের সমৃদ্ধ উৎস।
তবে প্রয়োজনীয় ডেটা স্ক্র্যাপ করার জন্য প্রোগ্রামিং করা লাগে, নইলে টুইটার থেকে আপনার যত তথ্য দরকার, তা সংগ্রহ করা বেশ সময়সাপেক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।
Twlets এমন একটি ক্রোম এক্সটেনশন যা আপনার জন্য সেই কঠিন কাজটিই করে দেয়। এটি ব্যবহারের জন্য আগে একটি ফ্রি অ্যাকাউন্ট খুলুন। তারপর সেখানে সাইন ইন করুন। প্রবেশের পর আপনি যে-কোনো টুইটার অ্যাকাউন্টের সামগ্রিক তথ্যসংবলিত পেজে যেতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি তাদের করা টুইটের তালিকা, ফলোয়ার বা অনুসরণকারীদের তালিকা অথবা তারা যাদেরকে ফলো করছেন তাদের তথ্যের তালিকাও খুলতে পারেন। আপনি যে তথ্যটি চান তা বাছাই করার পরে, বুকমার্ক বারের টুইলেট বোতামে ক্লিক করুন। তখন এটি আপনার কম্পিউটারে সাম্প্রতিক পোস্ট, ছবি, ভিডিও বা ইউজার নেমের মতো তথ্যগুলি ডাউনলোড করে নেবে।
টুইলেটস সাধারণভাবে ১০টি করে টুইট, ছবি, অনুসারী ইত্যাদি ডাউনলোড করবে। তবে বুকমার্ক বারে টুইলেট আইকনে রাইট ক্লিক করে ডিফল্ট সেটআপ পরিবর্তন করা যায়। এভাবে একটি ফ্রি অ্যাকাউন্টের জন্য ডাউনলোডের সীমা সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৫০ হাজার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
ফলাফলগুলো একটি এক্সেল স্প্রেডশিট হিসেবে ডাউনলোড হয়। সেখানে ফলোয়ারদের বিভিন্ন তথ্য থাকে যা টুইটের সেন্টিমেন্ট স্কোর (ইতিবাচক, নিরপেক্ষ, নেতিবাচক)-এর ভিত্তিতে বিশ্লেষণ বা ভিজ্যুয়ালাইজেশন করা যায়।
যদি আপনার শেয়ার করার মতো কোনো টুলস্ বা টিপস্ থাকে তবে আপনি লেখককে ইমেইল করতে পারেন এই ঠিকানায় : alastair.otter@gijn.org।
অ্যালাস্টেয়ার ওটার জিআইজেএন–এর আইটি সমন্বয়কারী। তিনি জোহানেসবার্গ–ভিত্তিক ডেটা জার্নালিজম উদ্যোগ, মিডিয়া হ্যাক কালেক্টিভের একজন ব্যবস্থাপনা অংশীদার। সেখানে তিনি ইন্টারেক্টিভ ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং কয়েকটি অনলাইন মিডিয়া সাইট পরিচালনা করেন।