সম্পাদকের নোট: ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্স আয়োজিত বার্ষিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সম্মেলন আইআরই২৩ এর প্যানেলে জিআইজেএনের সিনিয়র রিপোর্টার রোয়ান ফিলিপ তার পছন্দের কিছু কৌশল ও পরামর্শ উপস্থাপন করেন। এগুলো তিনি সংগ্রহ করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কাজ করা কয়েক ডজন সাংবাদিকের কাছ থেকে। আমরা জিআইজেএনের পাঠকদের জন্য তার সেই উপস্থাপনাকে নিবন্ধ আকারে উপস্থাপন করছি।
ধরুন, কৃষকের শস্যক্ষেতে পড়ে থাকা একজন শরণার্থীর মৃতদেহের মাত্র পাঁচ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ থেকে আপনি জানতে পারবেন বেসামরিক মানুষদের হত্যার জন্য কোন দেশের সরকার দায়ী। ২০২০ সালে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের দল বেলিংক্যাট তুরস্ক সীমান্তের কাছে একজন পাকিস্তানি শরণার্থীকে গুলি করে হত্যা ঘটনার সঙ্গে গ্রীক নিরাপত্তা বাহিনীর সংযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করে। এই কাজে তারা মৃতদেহের নীচে চাপা পড়া শস্য ও মাটির দাগের গভীরতা, ছায়ার অবস্থান ও দৈর্ঘ্য এবং বন্দুকের গুলির “ক্র্যাক” ও “ব্যাং” এর মধ্যকার সময়ের ব্যবধান নিয়ে কাজ করেন।
জিআইজেএনের প্রতিবেদক হিসেবে আমি ভীষণ সৌভাগ্যবান যে, নজরদারি থেকে শুরু করে দুর্নীতি বা জাতিগত বৈষম্য নিয়ে কাজ করা শীর্ষস্থানীয় অনুসন্ধানী রিপোর্টার ও সম্পাদকদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি এবং তারা অনুসন্ধানে কী ধরনের কৌশল অবলম্বন করেন, তাও জেনেছি।
এ সময় আমি এমন কয়েকজন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছি যারা সংঘাত ও দাঙ্গা পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃতভাবে করা ক্ষতি নিয়ে কাজ করেছেন। তারা অনুসন্ধানে সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে মনে করেছেন, এমন সব ওপেন সোর্স টুল ও ক্যাজুয়ালিটি ডেটাবেসের পাশাপাশি বিভিন্ন কৌশলের কথা জানিয়েছেন।
বিষয়টি ঘিরে বিশ্বের প্রধান গণমাধ্যমগুলোর গত কয়েক বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধানের দিকে তাকালে যা আমাকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করে তা হচ্ছে, নিজের সহজাত অনুভূতি বা বোধশক্তির ওপর আস্থা রাখার উপকারিতা: যেমন সংঘাত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রাথমিক দিকগুলো সম্পর্কে জানার পর প্রথম যে কথাটি আপনার মনের কোণে উঁকি দেয় বা আপনি অনুমান করেন, সেই ধারণাটি ঘিরে অগ্রসর হওয়া।
নিউইয়র্ক টাইমসের ভিজ্যুয়াল অনুসন্ধান দলটি গত বছর যখন ইউক্রেনের বুচায় এক ডজন বেসামরিক লোকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারে, তখন তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে যে, এই সৈন্যেরা এরপর কী করতে পারে? একজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যার পর পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরতে ব্যাকুল ১৯ বছর বয়সী একজন রাশিয়ান সৈন্য ঠিক কোন কাজটি করতে পারে? সাংবাদিক দলটির তত্ত্ব ছিল, তরুণ ওই সৈন্যরা সম্ভবত নিহতদের সেলফোনগুলো চুরি করে তা থেকে বাড়িতে কল করবে। তাদের মনে হয়েছিল যদি সত্যিই এমনটা ঘটে, সেক্ষেত্রে সেই সৈন্যের ডিজিটাল পদচিহ্নগুলো ব্যবহার করে তারা নৃশংসতার নেপথ্যে থাকা সামরিক ইউনিটকে সনাক্ত করতে সক্ষম হতে পারেন।
অনুসন্ধানী দলটি এরপর ওইসব সেলফোন থেকে রাশিয়াতে যাওয়া কলগুলো খুঁজে বের করার কাজে নামে। দেখা যায়, কলগুলো করা হয়েছিল ফোন মালিকদের মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পর। পরবর্তীতে ফোন নম্বরগুলো ব্যবহার করে তারা কিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টেরও হদিস পায় এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পরিচয়সূচক স্মারকচিহ্নসহ ছবির মাধ্যমে তারা বুচার ঘটনায় জড়িত সামরিক ইউনিটের পরিচয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।
২০১৮ সালে, একইভাবে নিজের অনুভূতিকে অনুসরণের মাধ্যমে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক আজমত খান একটি সাড়া জাগানো ঘটনার উন্মোচন করতে সক্ষম হন। উত্তর ইরাকে বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা পর্যালোচনা সংক্রান্ত পেন্টাগনের একটি প্রতিবেদনে তিনি সুস্পষ্ট পক্ষপাত ও ত্রুটির হদিস পান। এরপর তার মনে হয়েছিল যে, এ অঞ্চলে বিমান হামলার অন্যান্য রিপোর্টগুলোতেও হয়তো একইরকম পক্ষপাত থাকতে পারে। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পাবলিক রেকর্ড থেকে একই ধরনের ১ হাজার ৩০০টিরও বেশি প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। আজমত খান আমাকে বলেন যে, কীভাবে এই পদ্ধতিগত ভুলগুলো অনেক সময় বেসামরিক ব্যক্তিদের প্রাণঘাতী পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। আজমত খান সবখানে ’কনফার্মেশন বায়াস’ (পক্ষপাতদুষ্ট নিশ্চিতকরণ বা যে প্রবণতা মানুষের চিন্তাভাবনাকে একপেশে করে তোলে) খুঁজে পান। যেমন, বিবৃতিগুলোতে বলা হয়েছে “আমরা লোকেদের গেট খুলতে দেখেছি – যা আইএসআইএসের একটি সুপরিচিত কৌশল।” এ ধরনের একটি ড্রোন ফুটেজ দেখে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা কিভাবে নিশ্চিত হন যে, “সেখানে কোন নারী বা শিশু ছিল না” এবং এ ধরনের অনুমিত সত্যের ওপর ভিত্তি করে তারা ওই স্থানে ড্রোন হামলার অনুমোদন দেন। এ ধরনের হামলার অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে তারা এ সত্যটিকে উপেক্ষা করেছেন যে, উক্ত ভিডিওটি হয়তো দিনের উষ্ণতম সময়ে ধারণ করা বলে সেখানে নারী বা শিশুর অস্তিত্ব চোখে পড়েনি। আজমত খানের অনুসন্ধানে উঠে আসে, অঞ্চলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী পরিচালিত প্রতি পাঁচটি হামলার মধ্যে একটি তথাকথিত “নির্ভুল হামলায়” বেসামরিক ব্যক্তিরা নিহত হয়েছেন।
এ ধরনের ঘটনায় অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন, কারণ সংঘাত ও দাঙ্গার অঞ্চলগুলো বিশৃঙ্খল ও বিপজ্জনক হয়। তাছাড়া হতাহতের পরিসংখ্যান ও তথ্যগুলো প্রায়ই আসে সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু উল্লিখিত ঘটনাটি তুলে ধরে যে, আমরা সাংবাদিকেরা যদি আমাদের সহজাত কৌতূহল বা প্রশ্নগুলোকে অনুসরণ করি তাহলে অনেক সময়ই কুয়াশা কেটে আলোর দেখা মিলতে পারে।
এ ধরনের বিষয়গুলোকে ক্ষতিয়ে দেখার জন্য শত শত দুর্দান্ত কৌশল রয়েছে— অনলাইন শ্যাডো ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে টাইমলাইন এডিটিং টুলস কিংবা আফ্রিকাতে যেমন ব্যবহার করা হচ্ছে ওপেন সোর্স টুলস এবং ডেটাবেসের জন্য বিশাল সব ড্যাশবোর্ড।
এখানে আমরা জিআইজেএন ইন্টারভিউ নোটবুকের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং হালনাগাদ কৌশল ও পরামর্শের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরছি —
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দূর থেকে কাজ করা: পছন্দের কিছু টুল
- ভিজ্যুয়াল ফরেনসিকের চারটি ধাপ অনুসরণ করুন। আপনি যদি শারীরিকভাবে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে উপস্থিত না থাকেন, তাহলে ভিডিও এভিডেন্সের জন্য কোনো একটি ঘটনার ওপর দৃষ্টি রাখুন। শুরুটা করুন নতুন কিছু আবিষ্কারের মাধ্যমে (এডিট বা কাটাছেঁড়া করা হয়নি এমন ভিডিও সংগ্রহের চেষ্টা করুন এবং সংরক্ষণ করুন)— এরপর তা যাচাই-বাছাই, ভূ-অবস্থান নির্ধারণ ও সবশেষে ক্রোনোলোকেশন (ভিডিও ক্লিপগুলোর মধ্যে ঘটতে থাকা ঘটনার ক্রম ও সময় মিলানো) নিয়ে কাজ করুন। কাজগুলো গুছিয়ে করুন।
- স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করুন. শুরুটা করুন গুগল আর্থ (এবং এর ডেট স্লাইডার ফাংশন) ও সেন্টিনেল থেকে পাওয়া ছবির মাধ্যমে, এরপর যদি উন্নত রেজুল্যুশনের ছবির প্রয়োজন পড়ে সেক্ষেত্রে যারা বাণিজ্যিকভাবে কাজগুলো করে থাকেন তাদের শরণাপন্ন হন। একাধিক সাইটের জন্য, স্ট্রিমলিটের নতুন স্যাটেলাইট চিপস অ্যাপ ব্যবহার করে দেখতে পারেন, যেখানে ভূপৃষ্টের মসৃন ছবির পাশাপাশি ক্রপ করা স্যাটেলাইট ইমেজ খুঁজে পাওয়া যায়।
- পরিস্থিতি বিবেচনায় ক্রাউডসোর্সড ম্যাপিং টুল ব্যবহার করুন। দূরবর্তী স্থানের ক্ষেত্রে স্থানীয় ক্রাউডসোর্স তথ্যের জন্য লাইভইউএম্যাপ, ওপেন স্ট্রিট ম্যাপ এবং উইকিম্যাপিয়া ব্যবহার করতে পারেন।
- বেসামরিক লোকেদের হতাহতের পরিসংখ্যান জানতে নির্ভরযোগ্য ডেটাবেস সূত্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা করুন। এয়ারওয়ারস ক্যাজুয়ালটি ওয়াচডগ ডেটাবেসে আরবি-ভাষার সোশ্যাল মিডিয়া ও এনজিও রিপোর্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা সাংবাদিকদের মাধ্যমে যাচাইকৃত ও বিশ্বাসযোগ্য। এছাড়াও, ড্রোন ওয়ার ডেটাবেস দেখতে পারেন।
- গুগুল সার্চের সময় শক্তিশালী বুলিয়ান অপারেটরগুলোকে গুরুত্ব দিন। ওপেন সোর্সের ঝানু অনুসন্ধানকারীরাও অনলাইন সার্চকে গঠনমূলক ও সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি বিভিন্ন সাইট ও সম্পর্কিত নামগুলো বাদ দিতে বেসিক সিনট্যাক্স টার্মস যেমন “অ্যান্ড”, “অর”, “সাইট” এবং মাইনাস সাইন ব্যবহার করেন। উন্নত “গুগল ডর্কস” ছাড়াও, যুদ্ধ বা সংঘাত ক্ষেত্রগুলোতে কাজ করেন এ ধরনের সাংবাদিকেরা দুটো জিনিসের মধ্যে সংযোগ করতে চাচ্ছেন এমন কিছু সার্চ দেওয়ার সময় “অ্যারাউন্ড (১৬)” লিখতে পছন্দ করেন। এর মাধ্যমে দেখা যায় কোনো একটি নথিতে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের কত (এখানে ১৬) শব্দের মধ্যে আরেকটি বিষয় পাওয়া যায়।
- রাজনৈতিক সহিংসতার নির্ভরযোগ্য ডেটাবেস দেখুন। এর মধ্যে রয়েছে আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট প্রোজেক্ট; এসিএলইডি কনফ্লিক্ট সেভারিটি ইনডেক্স; ইইসিডিটি কনফ্লিক্ট এনসাইক্লোপিডিয়া; এবং হুওয়াজইনকমানন্ডডটকম।
- টেলিগ্রামে অনুসন্ধান করতে প্রমাণিত কৌশলগুলোর আশ্রয় নিন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাইট:টি.মি/* (site:t.me/*) টিজিস্ট্যাট (Tgstat), টেলিগ্যাগো (Telegago) এবং জাঙ্কিপিডিয়া (Junkipedia) এর মতো সাইটগুলো টেলিগ্রামের চ্যানেলগুলোর মধ্যে চমৎকার অ্যাক্সেস দিতে পারে।
- নির্ভরযোগ্য ফেসিয়াল রিকগনিশন এবং ফটো অ্যানালাইসিস টুলের মাধ্যমে অপরাধীদের ট্রেস করুন। এক্ষেত্রে টিনআই এবং ইয়ানডেক্স এর মতো টুল ব্যবহার করতে পারেন।
- সংঘাত সম্পর্কিত পরিসংখ্যান ঘিরে সন্দেহপ্রবন হতে হবে। “সেক্স, ড্রাগস এবং বডি কাউন্টস: দ্য পলিটিক্স অফ নাম্বারস ইন গ্লোবাল ক্রাইম অ্যান্ড কনফ্লিক্ট” পড়ুন— এটি গবেষক কেলি গ্রিনহিলের একটি বই।
- নতুন ডেটাবেস ও সামরিক ম্যাগাজিনগুলোতে হামলার ঘটনা ও অস্ত্র বিক্রয়ের তথ্য খুঁজুন: সিকিউরিটি ফোর্স মনিটর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থাকে (নিউজরুম) ইয়েমেনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অংশীদার দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রয়; এ দুটি ঘটনার মধ্যে সংযোগ খুঁজে দেখার জন্য তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলো অনুসরণের সুযোগ করে দেয়। তারা এয়ারফোর্সেস মান্থলি, টাইমস অ্যারোস্পেস এবং স্ক্র্যাম্বলের মতো সামরিক প্রকাশনা থেকে প্রাপ্ত বিস্তারিত তথ্যের ওপর নির্ভর করে এবং যে কোনো রিপোর্টারের জন্য সৌদি-আমিরাত জোটের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র, যুদ্ধবিমান ও সরঞ্জাম বিক্রয়ের তথ্যবহুল নিজস্ব ডেটাবেসকে উন্মুক্ত করে দেয়।
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য মেটাডেটা ফাংশন সচল রাখুন। যুদ্ধ বা সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে কাজ করছে এমন রিপোর্টারদের কাছে তথ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করুন, যদি সম্ভব হয়, মেটাডেটা সংগ্রহের জন্য তাদের ফোনের লোকেশন অ্যাকটিভ করতে বলুন। তাছাড়া: আপনার তথ্য সরবরাহকারীদের ওপর আস্থা রাখুন ও বিশ্বাস করুন।
শহরে সংঘটিত দাঙ্গায় গোলাগুলির ঘটনা অনুসরণ
- শহরের ভেতরের ঘটনার জন্য “জিওকোড ট্রিক” ব্যবহার করুন। গুগল ম্যাপে এ ঘটনাকে পিন করুন, রাইট-ক্লিক করুন এবং ’হোয়াট ইজ হেয়ার’ ট্যাব করে দাঙ্গা বা সংঘাত কতটুকু অঞ্চলজুড়ে সংগঠিত হয়েছে (দ্রাঘিমাংশ/অক্ষাংশ) তা নির্ধারণ করুন। শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ ঘটনা সম্পর্কিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যতগুলো পোষ্ট দেয়া হয়েছে তা সংগ্রহ করতে টুইটডেকে “geocode:” এবং ব্যাসার্ধ (“1 Mi”) পেস্ট করুন। যদি এটি প্রথমে কাজ না করে তবে চেইনের মধ্যকার স্পেস মুছে ফেলার চেষ্টা করুন।
- ফুটেজ সংগ্রহের জন্য সড়কের পাশে থাকা দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করতে আপনার স্টোরির প্রসঙ্গ টানুন। সহিংস ঘটনা যেখানে ঘটেছে গুগল ম্যাপে ওই জায়গাকে জুম ইন করুন। এরপর পপ আপ হওয়া আশেপাশের দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নম্বরে কল করুন এবং ঘটনার সময় আশেপাশের দোকানী বা ব্যবসায়ীদের কাছে তাদের সিসিটিভি ফুটেজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন। যদি তারা দিতে রাজি না হয় (প্রাথমিকভাবে অনেকেই করবে), তাহলে পরের দিন ঘটনার ওপর লেখা আপনার প্রথম প্রতিবেদনটির অনুলিপি পাঠান— এবং আবার জিজ্ঞাসা করুন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দোকানের ম্যানেজাররা প্রায়ই তাদের মন পরিবর্তন করেন।
- ফ্রি ভিডিও আর্কাইভিংয়ের নতুন শক্তিশালী টুল ব্যবহার করুন। বেলিংক্যাট অটো আর্কাইভার টুলের নতুন সংস্করণের জন্য নিবন্ধন করুন, এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রতিটি ভিডিও ইউআরএল-এর জন্য সেরা ডাউনলোড কৌশল খুঁজে বের করতে পারে। অন্যথায়, ইউটিউব-ডিএল এর মতো থার্ড পার্টি সাইটগুলোর মাধ্যমে ভিডিও সংরক্ষণ করতে পারেন।
- নতুন সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্র্যাপিং টুল ‘ক্রাউডট্যাঙ্গেল-ফর-এভরিথিং’ ব্যবহার করে দেখুন। যদিও এটিতে এখনও অনেক বেশি ডেটাসেট নেই, জাঙ্কিপিডিয়া সোশ্যাল মনিটরিং টুলটি সাংবাদিকেরাই সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করেছে— এটি বর্তমানে বারোটি প্ল্যাটফর্ম থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে পারে, এর মধ্যে সামরিক বাহিনী কর্তৃক ব্যবহারিত প্ল্যাটফর্ম রয়েছে— যেমন টেলিগ্রাম, গেটার (GETTR) এবং গ্যাব (Gab)। রিপোর্টাররা এই লিঙ্কের মাধ্যমে টুলগুলোর জন্য নিবন্ধন করতে পারেন।
- অনিচ্ছাকৃত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি ভুলে যাবেন না। অনেক সময় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও যথাযথভাবে উপলব্ধি করে না যে, তাদের কর্মপদ্ধতির কারণে সাধারণ বেসামরিক জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা ঘটনার সত্যতা তুলে ধরে তাৎক্ষণিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন। ২০০০ সালে নিউইয়র্ক টাইমস এ ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়। তারা দেখিয়েছিল, দাঙ্গা প্রতিরোধে পুলিশ “প্রাণঘাতী নয়” ধরে নিয়ে যে গোলমরিচের বল (পিপার বল) ব্যবহার করেছিল, তা প্রাণঘাতী পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
সংক্ষিপ্ত প্রিভিউ: যুদ্ধাপরাধের অনুসন্ধানের জিআইজেএন গাইড
আসছে সেপ্টেম্বরে সুইডেনের গোথেনবার্গে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স ২০২৩ (জেআইজেসি২৩)-এ জিআইজেএন যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ ১৬ অধ্যায়ের একটি রিপোর্টার গাইড প্রকাশ করবে। নির্দেশিকাটিতে যৌন সহিংসতা, নিষিদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত অস্ত্র, গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, পরিবেশ এবং ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কৌশলসহ জোর করে প্রত্যাবাসন, জিম্মিকরণ, মানব ঢাল এবং শিশু সৈন্য ব্যবহারের মতো বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন সম্পর্কিত বিভিন্ন কৌশল ও পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এরইমধ্যে সাতটি অধ্যায় জিআইজেএনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে:
- Reporter’s Guide to Investigating War Crimes: Open Source Research
- Reporter’s Guide to Investigating War Crimes: Attacks on Civilians
- Reporter’s Guide to Investigating War Crimes: Combatants and Other Hostile Actors
- Reporter’s Guide to Investigating War Crimes: Banned and Restricted Weapons
- Reporter’s Guide to Investigating War Crimes: Conflict-Related Sexual Violence
- Reporter’s Guide to Investigating War Crimes: Genocide and Crimes Against Humanity
- Reporter’s Guide to Investigating War Crimes: Environmental and Property Crimes
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।