অনুসন্ধানী কাজকে প্রায়ই ম্যারাথনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে ওয়াচডগ রিপোর্টারদেরও প্রতিনিয়ত গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে হয়।
ব্রেকিং স্টোরি তো আছেই, তাদের এমন পরিস্থিতিতেও দৌড়াতে হয়: যেমন, যখন কোনো অপরাধী বা প্ল্যাটফর্ম অপরাধের অনলাইন তথ্য-প্রমাণ মুছে ফেলে; যখন প্রতিদ্বন্দ্বী বার্তাকক্ষ স্কুপ হিসেবে খবরটি ছেপে দেয়; যখন কোনো হুইসেলব্লোয়ারের মুখ বন্ধ করতে রাতারাতি তাকে ভয় দেখানো বা আইনি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়; যখন একজন গুরুত্বপূর্ণ সোর্স হয়ত শুধু পূর্বপরিচিত একজন রিপোর্টারের সঙ্গেই কথা বলতে চান; এবং সম্পাদক যখন কোনো বিট-রিপোর্টারকে পিচের পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় বেধে দেন এবং ব্যর্থ হলে বিটে ফেরত যেতে বলেন।
ভেতরের কোনো সোর্সকে কল করার আগে, সাধারণত প্রথম ধাপটি হয়ে থাকে মৌলিক বুলিয়ান পদ্ধতি ব্যবহার করে, নজরে আসা অপরিচিত নামগুলো খোঁজ করে নেওয়া। সম্প্রতি “সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুসন্ধানের উপায়” শিরোনামে জিআইজেএন একটি ওয়েবিনার আয়োজন করে। সেখানে অনলাইন অনুসন্ধান প্রশিক্ষক হেঙ্ক ফন এস, মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের একটি গ্রামে খুন হওয়া এক ব্যক্তি ও তার বেলজিয়ান পরিবারের সম্পূর্ণ তথ্য বের করে দেখান। ঘটনার পর সেই ব্যক্তির নাম গোপন রাখা হয়েছিল। হেঙ্ক ফন এসের এই ত্বরিৎ (কুইক-স্ট্রাইক) কৌশলের মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান তথ্য উদ্ধৃতি চিহ্ন দিয়ে গুগলে সার্চ করা, বেলজিয়ামের বহুল প্রচলিত বংশগত নাম “ফন”-এর পাশে ওই শহরের নাম লিখে ফেসবুকে খোঁজ করা এবং এভাবে পাওয়া ফলাফলগুলো লিংকডইনে বসিয়ে সার্চ করা। [লিংকডইনে অনুসন্ধানের জন্য হেঙ্কের নতুন টিপস দেখুন, এখানে।]
সম্প্রতি আইআরই২৩ কনফারেন্সের ‘’ব্যাকগ্রাউন্ডিং পিপল ইন আ আওয়ার” সেশনে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার মাইকেল বিসেকার, বোস্টন গ্লোবের কুইক স্ট্রাইক অনুসন্ধানী দলের সম্পাদক ব্রেন্ডন ম্যাকার্থি এবং স্বাধীন অনুসন্ধানী রিপোর্টার মেলিসা সেগুরা অল্প তথ্যের ভিত্তিতে, স্বল্প সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কৌশল বাতলে দিয়েছেন।
“আমরা সবাই খবর ব্রেক হবে-হচ্ছে ধরনের পরিস্থিতিতে পড়েছি এবং বরাবরই প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে পাওয়া বা পুলিশের ফাঁস করা কোনো নাম সম্পর্কে আরো তথ্য খুঁজে বের করার একটি প্রতিযোগিতা থাকে,” বলেন বিসেকার। “অনুসন্ধানী ধাপগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকার ঠিক করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে।”
মানুষ ও বিভিন্ন মানুষের মধ্যে সংযোগ বের করার রিসোর্সগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হলো ওসিসিআরপির আলেফ ডেটাবেস, ওপেন সোর্স ওপেনকরপোরেটস ড্যাশবোর্ড, বিভিন্ন অনলাইন সেবায় সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল ট্র্যাক করার টুল হোয়াটসমাইনেম অ্যাপ, নাম থেকে ইমেইল ঠিকানা অনুমানের টুল নেমটুইমেল এবং শক্তিশালী ও কার্যকর পেইড ডিজিটাল আইডেন্টিটি সার্চ ইঞ্জিন পিপল।
আইআরই প্যানেলের কুইক ব্যাকগ্রাউন্ডিং টিপস:
- সম্ভব হলে সাংবাদিকদের মধ্যে জীবনী-তথ্য সংগ্রহের বিষয় ভাগ করে দিন। ৬ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যাপিটল দাঙ্গার সময়, নেদারল্যান্ডসভিত্তিক অনুসন্ধানী দল বেলিংক্যাট ঘটনাস্থলের লাইভ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোকে একটি টুইটডেক চ্যানেলে নিয়ে আসে। কাজটি করতে তারা তিনজন প্রতিবেদককে আলাদা দায়িত্ব দেয়: প্রথমজনের কাজ ছিল টুইটার পোস্ট সংগ্রহ, দ্বিতীয়জনের ফেসবুক লাইভস্ট্রিম ক্যাপচার করা এবং তৃতীয়জনের ইউটিউব ক্লিপ ডাউনলোড করা৷ প্যানেল আলোচনায় বলা হয়, অল্প সময়ে কোনো ব্যক্তির প্রোফাইল তৈরির সময়ও একই পদ্ধতি প্রযোজ্য। ম্যাকার্থি তার সহ-প্যানেলিস্টদের নাম ধরে বলেন, “আমি হয়তো ব্যক্তিগত প্রোফাইলের অংশ দেখছি, মেলিসা আর্থিক রেকর্ডগুলো নিয়ে কাজ করছে, এবং একই সময়ে মাইক সেই ব্যক্তির অলাভজনক বা সামরিক কাজের ইতিহাস সংগ্রহ করছে।”
- গুগল ডকে একটি উইকি ফোল্ডার তৈরি করুন৷ “যে কোনো ব্রেকিং নিউজ পরিস্থিতিতে, আমি দ্রুত একটি ফোল্ডার তৈরি করি – হতে পারে সেটি একটি উন্মুক্ত গুগল ডক, বা ‘স্ক্র্যাচ প্যাড’ – যেখানে সবকিছুর নোট রাখা যায়,” ম্যাকার্থি ব্যাখ্যা করেন। “আপনি যত খুটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করেছেন তা এখানে টুকে রাখুন — যেমন বিবাহবিচ্ছেদ, ঠিকানা, অপরাধের রেকর্ডসহ এমন সবকিছু। প্রতিটি তথ্য কোথা থেকে এসেছে সে সম্পর্কিত একটি লিংক যুক্ত করুন বা নোট রাখুন — যেমন ‘এটি টুইটার থেকে এসেছে;’ ‘এটি সন্দেহভাজন ব্যক্তির ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে।’ এভাবে লিপিবদ্ধ তথ্যগুলো আপনার সতীর্থদের সামগ্রিক অবস্থার একটি চিত্রকল্প তৈরি করতে সাহায্য করবে। তাছাড়া এগুলো পরে যাচাইবাছাইও করা যেতে পারে, কেননা এটি আপনার দলের জন্য উন্মুক্ত।”
- বিস্তৃত পরিসর নিয়ে খোঁজ শুরু করুন এবং এরপর একটি নির্দিষ্ট দিকে নজর দিন। “শুরুতে সামগ্রিকভাবে কাজে নেমে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর দিকে ফোকাস করুন,” ম্যাকার্থি বলেন। “আপনি যখন কারও অতীত ইতিহাসে ডুব দেবেন, বেশিরভাগ সময়ই দেখবেন কোনো একটি সূত্র আপনাকে অন্য আরেকটির পথ দেখাচ্ছে।” বিসেকার খানিকটা যোগ করে বলেন, কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির সঙ্গে অন্যদের সংযোগ খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের পছন্দ হলো, পরিচিত বলয়ের বাইরে থেকে শুরু করা। “হয়তো আপনি আপনার প্রথম সোর্স হিসেবে মা কিংবা বাবাকে চাচ্ছেন না, এক্ষেত্রে খালা বা চাচার মতো কারো সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করুন, তারপর পরিবারের কেন্দ্রে ঢুকে পড়ুন,” বলেন বিসেকার। “মৃত ব্যক্তির ফেসবুক বন্ধুদের সন্ধান করুন; সোর্স খুঁজে পেতে তাদের সামাজিক সংযোগগুলো ব্যবহার করুন। প্রাক্তন সহপাঠীদের সন্ধান করুন।”
- ওয়েবসাইট এবং সুস্পষ্ট সোর্স অগ্রাহ্য করবেন না। “কখনও কখনও ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য দিয়ে কাজ শুরু করাটা সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ,” সেগুরা বলেন। “যেকোন ওয়েবসাইটের ‘অ্যাবাউট’ পৃষ্ঠাটি দেখুন। টাইটানিক পরিদর্শনে যাওয়া ডুবোজাহাজটি যখন নিখোঁজ হয়েছিল, তখন একজন রিপোর্টার ওশানগেট সাবমার্সিবল সাইটে ঢুকেছিলেন। এখান থেকেই সাংবাদিকেরা প্রথম আঁচ করতে পারেন যে নৌযানটি কতটা বিপদে ছিল।” তিনি আরো বলেন, “বিনিয়োগকারী সম্পর্কে জানতে ‘ইনভেস্টর রিলেশন’ বিভাগে স্ক্রল করুন, যেখানে বিনিয়োগকারী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া থাকে, যেমন আর্থিক বিবৃতি বা বিভিন্ন সভা বা সম্মেলন সম্পর্কিত তথ্য। আমি বডি ক্যামেরার কার্যকারিতা নিয়ে একটি স্টোরির ওপর কাজ করছিলাম। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি, ক্যামেরাগুলোর কিছু ফিচার কাজ না করলেও তারা জোরপূর্বক তা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অনেক দামে বিক্রি করছে।”
- ব্যক্তির নাম ও জন্মস্থানের খোঁজ করুন। “আপনি হয়তো অবাক হবেন যে অপ্রচলিত কোনো নামের সঙ্গে ছোট একটি শহর উল্লেখ করে সার্চ দেয়ার পুরস্কার হিসেবে আপনার হাতে কত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আসতে পারে। স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে শুরু করে নিছক একটি আবিচুয়ারি আপনাকে গোটা পারিবারিক কাঠামো সম্পর্কে ধারণা দেবে,” বলেন বিসেকার।
- অপরাধের ক্ষেত্রে, অবিলম্বে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো বিশ্লেষণ করুন৷ “বিশেষ করে যদি কাউকে অভিযুক্ত করা হয় বা নির্বিচারে গুলি চালানোর অভিযোগ আনা হয়, কিংবা গ্রেপ্তারের মতো ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে দ্রুত তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে অনুসন্ধান চালান, কারণ প্রায়ই দেখা যায় ওই অ্যাকাউন্টগুলো পুলিশ বা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সরিয়ে নেয়,” বিসেকার বলেন। ‘‘ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও লিংকডইনে তাদের নাম লিখে অনুসন্ধান করুন।’’
- প্রথম ব্যক্তি হিসেবে অভিযুক্তের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। “আপনি সবার আগে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন, কারণ তারা সাধারণত সেই রিপোর্টাদের সঙ্গেই কথা বলেন যারা আগে কল করেন, পঞ্চম বা ষষ্ঠ ব্যক্তি নয়,” বিসেকার বলেন।
- প্রাক্তন স্ত্রী বা সঙ্গীদের সনাক্ত করুন এবং তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন৷ “আমি প্রাক্তনদের কল করতে পছন্দ করি,” বিসেকার বলেন। “যদি আপনি কারো সম্পর্কে ময়লা ঘাটতে চান, তাহলে তাদের প্রাক্তন স্ত্রী বা সঙ্গীর সাথে কথা বলুন। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ। যদি তা খারাপ ব্রেক-আপ হয়, তবে তারা আপনাকে অন বা অফ দ্য রেকর্ডে অনেক তথ্য দিতে পারে। প্রাক্তনেরা আপনাকে ওই ব্যক্তির ঘনিষ্ট বন্ধুদের নাম দিতে পারে, যারা তাদের বিয়েতে ছিল, যারা ব্যবসায়িক অংশীদার ছিল।” তবে সতর্কতার বিষয় হচ্ছে: এই ধরনের উৎস – যাদের সঙ্গে ব্যক্তির স্বার্থের সুস্পষ্ট দ্বন্দ্ব থাকতে পারে – থেকে পাওয়া তথ্য ও ভাষ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বা ফ্যাক্ট-চেক করা উচিত।
- সবসময় স্ক্রিনশট রাখুন। “আপনার অনুসন্ধানে, প্রতিটি প্রাসঙ্গিক পোস্টের একটি স্ক্রিনশট রাখুন এবং এগুলো সরাসরি ডেস্কটপে বা আপনার তৈরি করা ফাইলে রাখুন,” বিসেকারের পরামর্শ। “তখনই তথ্যগুলোকে গোছানো বা আত্মস্থ করা নিয়ে ভাববেন না; মনে রাখবেন আপনি সময়ের বিপরীতে দৌড়াচ্ছেন, তাই তথ্যগুলো সম্পর্কে জানুন, লিপিবদ্ধ করুন এবং কাজ চালিয়ে যান।”
- ওপেন সোর্স টুলের সাহায্যে গুরুত্বপূর্ণ ওয়েব পেজগুলো আর্কাইভ করুন। “আর্কাইভ টুডে টুলের সাহায্যে একটি সম্পূর্ণ ওয়েবপেজ আর্কাইভ করা যায়, এতে ক্রোমের একটি প্লাগ-ইনও রয়েছে,” বলেন বিসেকার। “এভাবে আপনি কারো সম্পূর্ণ টুইটার পেজ সংরক্ষণ করতে পারেন।” তবে, তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “অসুবিধা হচ্ছে একবার আপনি এটিকে সিস্টেমে সংরক্ষণ করলে, আপনার প্রতিযোগীরাও তা ব্যবহার করতে পারবে, এক্ষেত্রে আপনাকে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার বিষয়টি মেনে নিতে হবে।” যদি ওই ব্যক্তির একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকে বা তার মালিকানাধীন ব্যবসা থাকে, সেক্ষেত্রে আগের সংস্করণগুলো দেখতে ওয়েব্যাক মেশিনে খোঁজ করার পরামর্শ দেন বিসেকার। “যদি কোনো সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়, তবে তা এখানে পাওয়া যেতে পারে।”
- আদালতের কেরানিদের কল করুন — বিশেষ করে ছোট শহরে। “আদালতের কেরানিদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য আপনি আপনার যে মূল্যবান সময়গুলো খরচ করছেন তা গুরুত্বপূর্ণ,” ম্যাকার্থি বলেন। “হ্যাঁ, তারা প্রায়ই আপনাকে বলবে যে তথ্য দেওয়ার ‘স্বাধীনতা তাদের নেই’, কিন্তু, বিশেষ করে ছোট শহরগুলোতে, যেখানে কেরানিরা সাংবাদিকদের বিষয়ে খুব একটা অভিজ্ঞ নয়, তারা জানতে চান কী হচ্ছে। তাই তাদের জিজ্ঞাসা করুন ‘আমি আর কার সাথে কথা বলতে পারি?’”
- আপনি যেসব রেকর্ড সংগ্রহ করছেন তা আপনার প্রোফাইলকৃত ব্যক্তির সঙ্গে মিলছে কিনা যাচাই করুন৷ “আপনি যে রেকর্ডগুলো দেখছেন তা ওই ব্যক্তির কিনা- এ ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে হবে,” বিসেকার সতর্ক করেন। “অনেক লোকের একই নাম থাকে, এমনকি একই শহরে বা একই পরিবারেও। যে কোনো ব্রেকিং নিউজ রিপোর্টারের জন্য দুঃস্বপ্ন হচ্ছে, আপনি হয়তো অন্য কোনো টম জে জোনসকে নিয়ে রিপোর্ট করছেন, যিনি নিরাপরাধ। কিন্তু একই নামে অন্য কোনো ব্যক্তির অপরাধমূলক কার্যক্রমের রেকর্ড রয়েছে।” তিনি আরো যোগ করেন: “যদি আপনি ওই ব্যক্তির একটি ছবি খুঁজে পেতে সক্ষম হন — হতে পারে শুধু মুখের ছবি, যা আপনি কোনো মিডিয়া রিপোর্টে বা তার সোশ্যাল মিডিয়াতে পেয়েছেন, সেক্ষেত্রে সবগুলো ছবি মিলছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। যদি জানতে পারেন ওই ব্যক্তি কোথায় কাজ করে, তাহলে লিংকডইনে যান; এটি তথ্যের দুর্দান্ত ভান্ডার। এখানে আপনি একই বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের লোকদের খুঁজে বের করতে পারবেন। ওই ব্যক্তির সহকর্মীদের কাজের ইমেইলে সরাসরি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করুন, এটি যে কোনো বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার একটি দারুন উপায়।”
- ফৌজদারি ও আইনি মামলার রেকর্ড খুঁজে পেতে নিজ দেশের বৈধ ডেটাবেস ব্যবহার করুন। “যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আপনি পাবলিক অ্যাক্সেস টু কোর্ট ইলেক্ট্রনিক রেকর্ডস (পিএসিইআর) ব্যবহার করতে চাইবেন,” বলেন বিসেকার। “এবং দেওয়ানী মামলা সন্ধান করুন। এগুলো আপনাকে ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনা বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তথ্য দিবে এবং বিরাগভাজন ব্যবসায়িক অংশীদারদের খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। প্রায়ই ক্ষেত্রেই আপনি তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের হদিস পাবেন। কর্পোরেট বা ব্যবসায়িক ফাইলিং আপনাকে ব্যবসায়িক অংশীদারদের নাম দিতে পারে।”
- সামরিক সার্ভিসের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করুন – এবং আরোপিত অভিযোগগুলোর ফ্যাক্ট চেক করুন। “যদি ওই ব্যক্তি [মার্কিন] সামরিক বাহিনীতে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনি প্রতিরক্ষা বিভাগে কল করতে পারেন; প্রেস অফিসারের অবশ্যই সার্ভিস (চাকরি) শাখা এবং সাধারণত সার্ভিস সম্পর্কিত তারিখগুলো নিশ্চিত করা উচিত,” বিসেকার বলেন। “প্রায়ই মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়– কেউ হয়তো নিজেকে বীর প্রমাণের জন্য বিশেষ বাহিনীর বলে দাবি করেছে, কিন্তু দেখা যায়, সে মূলত কোনো জাহাজে বাবুর্চি হিসেবে কাজ করেছে। আপনি অবাক হবেন যে লোকেরা তাদের সামরিক সার্ভিসের সময়কে কতটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলে ধরে।”
সময়সীমায় বাঁধা অনুসন্ধানের জন্য প্রস্তুতির টিপস
- অফ দ্য রেকর্ডে আপনার পাঠানো বার্তার উত্তর দেবে এমন ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করুন। নিখাদ ব্রেকিং নিউজ সংশ্লিষ্ট উচ্চপদস্থ সোর্সদেরও একটি তালিকা তৈরি করুন যাদের সঙ্গে আপনি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করেছেন: যেমন আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের আইনজীবী, এবং সংকট ব্যবস্থাপনা, বিমান চলাচল, জনস্বাস্থ্য, সন্ত্রাসদমন ও নির্বাচন পরিচালনাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ। কোনও ঘটনার প্রথম ঘন্টাখানেক সময় জুড়ে এমন সোর্সেরা ব্যস্ত থাকতে পারেন। তাদেরকে এমন প্রশ্ন করুন যা আপনার অনুসন্ধানকে একধাপ সামনে নিয়ে যাবে; যেমন নাম, ক্ষতির মাত্রা এবং প্রাথমিক মূল্যায়ন (“এটি সন্ত্রাসবাদ, নাকি ঘৃণামূলক অপরাধ?”) – অফ-দ্য-রেকর্ড টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে জানতে চান।
- বিকল্প ও অপ্রচলিত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে শিখুন৷ “যদি ব্যক্তিকে কোনো চরম ডান-পন্থি গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত বলে মনে হয়, সেক্ষেত্রে আপনি বিকল্প সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলো দেখবেন,” বিসেকার বলেন। “সুতরাং, পার্লার, টেলিগ্রাম, গ্যাব, 8কুন, ও ফেসবুকের রাশিয়ান সংস্করণ ভিকে, যা শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়। আগে থেকেই এই সাইটগুলো সম্পর্কে জানুন এবং সার্চ টুলগুলো শিখুন।”
- পাবলিক রেকর্ডস ডাটাবেস লেক্সিসনেক্সিস দেখুন। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট, সেলফোন নম্বর, কর্মসংস্থান এবং ব্যাংক দেউলিয়াত্বের তথ্যসহ কয়েক ডজন দেশের ৮০ বিলিয়নেরও বেশি পাবলিক রেকর্ড নিয়ে লেক্সিসনেক্সিস পাবলিক রেকর্ডস যেন একটি সোনার খনি। এতে যদি আপনার নিউজরুমের সাবস্ক্রিপশন থাকে, অথবা আপনি আপনার একাডেমিক বা প্রধান লাইব্রেরি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রবেশের অনুমতি পান, তাহলে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রকাশিত বিশাল অনুসন্ধানযোগ্য এক সংরক্ষণাগারে প্রবেশ করতে পারবেন। “এখানে আপনি ব্যক্তির পুরো নাম, বয়স, সম্ভাব্য মোবাইল নম্বর, সম্ভাব্য আত্মীয় এবং এমনকি পাশের বাড়ির প্রতিবেশীদের তথ্যও জানতে পারবেন,” বলেন বিসেকার। “কারো দেউলিয়া হওয়ার রেকর্ড, তাদের সাম্প্রতিক কর্মসংস্থানের ইতিহাস, পেশাদার লাইসেন্স এবং আরও অনেক কিছুর খোঁজ আপনি এখানে পাবেন।”
- গ্রেফতার পরবর্তী সুনির্দিষ্ট আইনি পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে জানুন। “আদালতে প্রথম উপস্থিতি এবং অভিযোগগুলো নিয়ে কীভাবে কাজ করা হয় তা বুঝতে চেষ্টা করুন; কিভাবে তালিকাভুক্ত করা হয়; কোন নথিগুলো সিল করা হয় এবং কখন তা উন্মোচন করা হয়,” ম্যাকার্থি যোগ করেন।
আরও পড়ুন
জিআইজেএন টুলবক্স: ক্রাউডট্যাঙ্গল, ইকোসেক ও সোশ্যাল মিডিয়া সার্চ
অনলাইনে গবেষণা ও অনুসন্ধানের যত কৌশল
যেভাবে অ্যালগরিদমের ক্ষতিকর প্রভাব অনুসন্ধান করবেন এবং এআই নিয়ে অতি-কথন এড়াবেন
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।
খুব সুন্দর ছিল লেখাটি। সাংবাদিকতায় এটি আমাদের অনেক সহায়ক ও নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে আশাকরি।
– মুনশী ইকবাল, সিলেট।