একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনি কীভাবে বিনামূল্যে একাডেমিক গবেষণাপত্র পাবেন বা কী ধরনের পন্থা অনুসরণ করবেন সে সম্পর্কিত পরামর্শ নিয়ে মূল লেখাটি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে, যা এখন নতুন তথ্যসহ হালনাগাদ করা হয়েছে। এটি প্রকাশ করে দ্য জার্নালিস্ট’স রিসোর্স। অনুমতি নিয়ে লেখাটি এখানে পুনরায় প্রকাশ করা হলো। ছবি: শাটারস্টক
দ্য জার্নালিস্ট’স রিসোর্স-এ, আমরা গবেষণা — বিশেষ করে পিয়ার-রিভিউড (বিশেষজ্ঞ বা সমকক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে পর্যালোচনা করানো) গবেষণা — ভীষণ পছন্দ করি। জননীতি নিয়ে সাংবাদিকতা বা কোনো ধরনের দাবি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে একাডেমিক গবেষণা সাংবাদিকতার সবচেয়ে মূল্যবান হাতিয়ারগুলোর একটি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একাডেমিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা তথ্য পেতে সাংবাদিকদের প্রায়ই বিভিন্ন ঝুট-ঝামেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক জার্নালে পেওয়ালের বাধ্যবাধকতা থাকে এবং বার্তাকক্ষ ও ব্যক্তি-সাংবাদিকদের জন্য সাবস্ক্রিপশন কেনাও ব্যয়বহুল হতে পারে। যেমন, ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সের জার্নাল, প্রসিডিংস অব ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স-এর সাবস্ক্রিপশন কিনতে একজন ব্যক্তিকে বছরে ২০০ ডলারের বেশি খরচ করতে হয়। বিশ্বে এমন হাজার হাজার জার্নাল আছে।
তবে একজন দক্ষ সাংবাদিক হিসেবে ভিন্ন উপায়ে আপনি বিভিন্ন গবেষণাপত্রে বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার পেতে পারেন। কীভাবে এগুলো খুঁজে পাবেন, তা নিয়ে আটটি পরামর্শ রইল এখানে:
১. গ্রন্থাগারে যান
গণগ্রন্থাগারগুলো সাধারণত বিভিন্ন একাডেমিক জার্নাল সাবস্ক্রাইব করে। তাই লাইব্রেরি কার্ড থাকলে যে কেউ তা ব্যবহার করে গবেষণাপত্র পড়তে পারেন। কর্মব্যস্ত সাংবাদিকদের জন্য সুখবর হচ্ছে, কিছু লাইব্রেরি তাদের ব্যবহারকারীদের যেকোনো স্থান থেকে পিয়ার-রিভিউ করা গবেষণার অনলাইন ডেটাবেসে প্রবেশের অনুমতি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের একাডেমিক গ্রন্থাগার থেকে অনলাইনে একাডেমিক জার্নালে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার সাধারণত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। তাছাড়া বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই প্রাক্তন ছাত্রদের গ্রন্থাগার ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে থাকে।
২. একাডেমিক জার্নালের কাছে ফ্রি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে জানতে চান
জনপ্রিয় অনেক জার্নাল সাংবাদিকদের সৌজন্যমূলক প্রবেশের সুযোগ দিয়ে থাকে, আবার কোনো কোনো জার্নাল বিনামূল্যে প্রবেশের সুবিধা কিছু নির্দিষ্ট বিষয় বা বিটের সাংবাদিকদের জন্য সীমাবদ্ধ রাখে। যেমন, আমেরিকান ইকোনোমিক অ্যাসোসিয়েশন (এইএ) তাদের আমেরিকান ইকোনোমিক রিভিউসহ আটটি জার্নালে গণমাধ্যম পেশাজীবীদের বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার দেয়। অ্যাকাউন্ট খুলতে অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস পেজে যোগাযোগ করুন।
“আমার মনে হয় না, বিষয়টি সম্পর্কে সবাই খুব বেশি ওয়াকিবহাল, কিন্তু এই বার্তাটি আমরা ছড়িয়ে দিতে চাই,” বলেন এইএ-র ওয়েববিষয়ক সম্পাদক ক্রিস ফ্লেইশার। “আমরা চাই সাংবাদিকেরা জানুক যে তারা চাইলে আমাদের জার্নালগুলো ব্যবহার করতে পারে।”
জেনে রাখা ভালো, অনেক জার্নাল একটি নির্দিষ্ট দিনের আগে প্রকাশ না করার শর্তে, সাংবাদিকদের সঙ্গে গবেষণাপত্রের অনুলিপি শেয়ার করে এবং একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পরবর্তী গবেষণাগুলো সম্পর্কেও অবহিত করে। আপনি যেসব জার্নাল নিয়ে আগ্রহী, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
৩. ওপেন অ্যাক্সেস জার্নাল ও প্ল্যাটফর্ম খুঁজে বের করুন
অনেক স্কলারলি জার্নাল, ওপেন অ্যাক্সেস বা ওএ নামে পরিচিত, যা বিনা পয়সায় ব্যবহার করা যায় এবং এদের অনলাইন কন্টেন্ট সবার জন্য উন্মুক্ত। উঁচুমানের অনেক জার্নাল আছে, তবে একজন সাংবাদিক হিসেবে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে, কারণ এদের কেউ কেউ অনৈতিক চর্চায়ও জড়িত। স্বনামধন্য ওএ জার্নালগুলোর একটি বিশ্বস্ত উৎস হচ্ছে ডিরেক্টরি অফ ওপেন অ্যাক্সেস জার্নাল।
শীর্ষস্থানীয় ওএ জার্নালগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে প্লস ওয়ান (PLOS One), এটি বিশ্বের প্রথম বহু-বিভাগীয় ওএ জার্নাল। আরো রয়েছে বিএমসি বায়োলজি।
বেশ কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মও বিনা খরচে তাদের গবেষণাপত্রে প্রবেশের অনুমতি দেয়। এমন একটি সাইট হলো আনপেওয়ালডটওআরজি। এটি প্রায় ৪৮ লাখ একাডেমিক নিবন্ধের একটি ফ্রি-ডেটাবেস।
৪. গুগল স্কলার চেক করুন
গুগল স্কলার মূলত একটি ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন যা বিভিন্ন সাইটে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধের একটি ইনডেক্স বা সূচী তুলে ধরে। এখানে আপনি কোনো বিষয় লিখে সার্চ দেয়ার পর সার্চ-ফলাফলে গবেষণা নিবন্ধটি পিডিএফ আকারে পেয়ে যাবেন। যদিও কিছু পিডিএফ ফাইলে খসড়া নিবন্ধের পূর্ববর্তী সংস্করণ দেয়া থাকতে পারে, যা হয়তো কোনো বিশেষজ্ঞকে দিয়ে পর্যালোচনা করিয়ে নেয়া হয়নি, এমনকি গবেষণাটি হয়তো কোথাও প্রকাশিতও হয়নি।
পুরোনো সংস্করণগুলোও কাজে আসতে পারে, তবে গবেষণাটির ফলাফল নিয়ে রিপোর্ট করার আগে লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নেওয়া জরুরি। ওয়ার্কিং পেপারে (চলমান গবেষণা নিয়ে লেখা নিবন্ধ) যে প্রাথমিক ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো গবেষণার চূড়ান্ত ও প্রকাশিত সংস্করণ থেকে পুরোপুরি আলাদাও হতে পারে। (ওয়ার্কিং পেপান ও একাডেমিক নিবন্ধের মধ্যকার পার্থক্যগুলো আরও ভালভাবে বুঝতে, আমাদের এক্সপ্লেইনার দেখুন।)
৫. ব্রাউজার এক্সটেনশন ইনস্টল করুন
একাডেমিক গবেষণাপত্রের বিনামূল্যের সংস্করণগুলো খুঁজে পেতে আপনাকে সহযোগিতা করবে বিভিন্ন ব্রাউজার এক্সটেনশন। আনপেওয়াল ব্রাউজার এক্সটেনশন বিশ্বব্যাপী ৫০ হাজারের বেশি জার্নাল এবং ওপেন-অ্যাক্সেস রিপোজিটরি থেকে নিবন্ধ সংগ্রহ করে। তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ওপেন অ্যাক্সেস বাটনটি “বিশ্বের সকল অ্যাগ্রিগেটেড রিপোজিটরি, হাইব্রিড আর্টিকেল, ওপেন অ্যাক্সেস জার্নাল এবং গবেষকদের ব্যক্তিগত পেজসহ” বিভিন্ন উৎস থেকে “লাখ লাখ নিবন্ধ” অনুসন্ধান করতে সক্ষম।
আপনি যে নিবন্ধগুলো খুঁজছেন ওপেন অ্যাকসেস বাটন যদি এর ফ্রি সংস্করণ খুঁজে না পায়, সেক্ষেত্রে এটি লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং একটি ওপেন অ্যাক্সেস রিপোজিটরিতে তাদের কাজ শেয়ার করার অনুরোধ জানাবে।
৬. গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন
ধরুন, আপনি একটি গবেষণা নিবন্ধ খুঁজে পেয়েছেন যেখানে শুধুমাত্র সারাংশ দেয়া আছে। এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিবন্ধটির অনুলিপি চেয়ে মূল লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ বা তাদেরকে ইমেইল করুন। জার্নালের সারাংশে লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য অথবা, অন্ততপক্ষে, সংশ্লিষ্ট লেখকের ইমেইল দেয়া থাকে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে গবেষকরা সাধারণত তাদের কাজের অনুলিপি শেয়ার করেন। যদি কোনো গবেষক আপনাকে তার একাডেমিক নিবন্ধের একটি প্রাক-প্রকাশিত সংস্করণ শেয়ার করেন, তবে তা প্রকাশিত সংস্করণের সঙ্গে কতটা সাদৃশ্যপূর্ণ এবং ফলাফলগুলো একই কিনা তা জিজ্ঞাসা করতে ভুলবেন না।
আরেকটি বিকল্প : গবেষকেরা প্রায়ই নিজেদের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে একাডেমিক গবেষণার লিঙ্ক পোস্ট করেন। এছাড়া যারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের ফ্যাকাল্টি পেজে প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধগুলো তালিকাভুক্ত করেন।
৭. মিডিয়া রিলেশন অফিসগুলোতে যোগাযোগ করুন
বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণাসংস্থার মিডিয়া অফিস আপনাকে তাদের গবেষকদের নিবন্ধের অনুলিপি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। এটি আপনাকে গবেষকদের কাছেও পৌঁছাতে সহায়তা করতে পারে।
প্রধান প্রতিবন্ধকতা: মিডিয়া রিলেশন অফিসগুলো নিউজরুমের সময় সম্পর্কিত সীমাবদ্ধতার প্রতি সংবেদনশীল হলেও একই সময়ে তারা হয়তো আপনার মতো অন্য অনেক সাংবাদিককে সহযোগিতার কাজে ব্যস্ত থাকতে পারে। তবে তাদের মাধ্যমে প্রায়ই লেখকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করাটা দ্রুত ও সহজ হয়। গবেষকদের প্রতিক্রিয়া জানাতে দেরি হলে মিডিয়া রিলেশন কর্মীরা তাদের তাড়া দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের বিভিন্ন অনুষদ ও গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত নতুন একাডেমিক গবেষণা সম্পর্কিত প্রচার-প্রচারণার জন্য প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে থাকে। আপনার বিট অনুসারে নতুন গবেষণা সম্পর্কিত তথ্য কীভাবে পেতে পারেন তা জিজ্ঞাসা করুন।
৮.গবেষণাকর্ম প্রচার করে এমন সংস্থার নিউজলেটার ও প্রেস রিলিজের জন্য সাইন আপ করুন
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার একগুচ্ছ নতুন গবেষণা সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার একটি দ্রুত উপায় হলো ফিউচারিটি এবং ইউরেকাঅ্যালার্টের মতো সংস্থার ইমেইলের জন্য সাইন আপ করা।
ফিউচারিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার ৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গঠিত। এটি সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও বিজ্ঞানের মতো চারটি বিশদ ক্ষেত্রে গবেষকদের গবেষণা কাজকে তুলে ধরে।
ইউরেকাঅ্যালার্ট! এটি মূলত আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স পরিচালিত একটি নিউজ-রিলিজ বিতরণ প্ল্যাটফর্ম। এরা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা কেন্দ্র, সরকারি সংস্থা, একাডেমিক জার্নাল প্রকাশক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ গবেষণার সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার সংবাদ প্রকাশ করে।
আরও পড়ুন
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় একাডেমিক গবেষণা ব্যবহারের ৫ কৌশল
একাডেমিক-সাংবাদিক সহযোগিতা যেভাবে এগিয়ে নিচ্ছে কানাডার একটি রিপোর্টিং ল্যাব
নিউ মডেলস: হাও একাডেমিকস, ননপ্রফিট নিউজ অ্যান্ড গভর্নমেন্ট আর কোলাবোরেটিং
ডেনিস–মেরি অর্ডওয়ে ২০১৫ সালে দ্য জার্নালিস্টস রিসোর্সে যোগদান করেন। এর আগে তিনি অরল্যান্ডো সেন্টিনেল ও ফিলাডেলফিয়া ইনকোয়ারার সহ যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্য আমেরিকার একাধিক সংবাদপত্র ও রেডিও স্টেশনে রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। ইউএসএ টুডে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্টের মত পত্রিকাতেও তাঁর কাজ প্রকাশিত হয়েছে।