সবুজ রঙা ছাদের এক গুচ্ছ ভবন এবং একটি দীর্ঘ, বৃত্তাকার প্রবেশদ্বার যেখান দিয়ে অনায়াসে একটি বড় লরি ঘোরানো যায়। একটি ছবি, তাতে অনেকগুলো ভিজ্যুয়াল ক্লু। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের স্যাটেলাইট ছবিতে ঠিক এমন কিছুই খুঁজছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা।
ছবিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোর। এর সূত্র ধরেই মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের (এআই) এভিডেন্স ল্যাবের গবেষকেরা বুঝতে পেরেছিলেন যে মিয়ানমারে ভয়াবহ বিমান হামলার সঙ্গে জড়িত বিমানগুলোর জ্বালানি কীভাবে দেশটিতে পৌঁছেছিল এবং কীভাবে তা সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করা হয়েছিল।
মিয়ানমারে, সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে দুই বছর আগে। এর পর থেকে তারা ক্রমবর্ধমান হারে বিমানবাহিনীকে ব্যবহার করে বিরোধীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। বোমা বর্ষণ করেছে দেশটির কায়াহ রাজ্যে অবস্থিত বাস্তুচ্যুতদের একটি ক্যাম্পে, যেখানে সহিংসতার হাত থেকে বাঁচতে মরিয়া অসংখ্য সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। হামলার শিকার হয়েছে আরো অনেক বেসামরিক এলাকা, যার ফলে ব্যাপক হতাহত ও বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে।
মানবাধিকার সংস্থা জাস্টিস ফর মিয়ানমারের সঙ্গে মিলে অ্যামনেস্টির একটি দল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সরবরাহ চেইন নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। ডেডলি কার্গো নামের এই অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে: কোন কোন দেশী ও বিদেশী কোম্পানি সামরিক জান্তার জঙ্গিবিমানের জন্য জ্বালানি “সরবরাহ, আমদানি, ওঠানামা, সংরক্ষণ ও বিতরণ” করেছে।” যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত একটি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে কোম্পানিগুলোর সংশ্লিষ্টতার এই খবর বেরুনোর ১০ দিন পরই সেই কোম্পানিগুলোর একটি মিয়ানমার ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
এই অনুসন্ধানে তারা নানা ধরনের সূত্র ব্যবহার করেছেন। যেমন: ফাঁস হওয়া কোম্পানি-নথি, সরকারি দলিলপত্র, সাবেক সেনা সদস্যদের সাক্ষাৎকার, বিমান হামলা থেকে বেঁচে ফেরাদের সাক্ষ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ স্যাটেলাইট ছবি। স্যাটেলাইট ছবি কাজে লাগিয়ে তারা তেলের ডিপোর অবস্থান ও সমুদ্রপথে জ্বালানি সরবরাহের রুট থেকে শুরু করে মিয়ানমারের আকাশপথে যুদ্ধবিমানের সক্রিয়তা এবং বিমান হামলায় ক্ষয়ক্ষতি পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব যোগসূত্র শনাক্ত করেছেন।
ইতালির পেরুজিয়ায় আয়োজিত ২০২৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল জার্নালিজম ফেস্টিভালে অ্যামনেস্টির এভিডেন্স ল্যাবের রিমোট সেন্সিং বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা মিকাহ ফাফোর দর্শকদের কাছে তুলে ধরেন, তারা কীভাবে এই অনুসন্ধানে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করেছেন এবং এ ধরনের কাজে তিনি কোন কোন কৌশল ও টুল ব্যবহার করেন।
অ্যামনেস্টির অনুসন্ধান পরিকল্পনা ও প্রাক-প্রতিবেদন নির্দেশিকায় স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহারের প্রসঙ্গ টেনে ফাফোর বলেছেন, “দিন দিন স্যাটেলাইট ছবি সবার হাতের নাগালে চলে আসছে৷ কোন অঞ্চলগুলোতে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে বা কোথায় গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, বা কোথায় প্রচুর বাস্তুহারা বা শরণার্থী রয়েছে তা দেখতে আমরা স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করি এবং সে অনুযায়ী অনুসন্ধান পরিকল্পনা সাজাই।”
বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমারের কোকো দ্বীপপুঞ্জে চীনা গোয়েন্দা সংস্থার স্থাপনা তৈরির অভিযোগ অনুসন্ধানে স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করেছিল পরামর্শক সংস্থা চ্যাথাম হাউস।
অনুসন্ধানে কেন স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করবেন
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান বা সুদানের বর্তমান সংঘাতের মতো সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে অনুসন্ধান বা রিপোর্টিংয়ে স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে আপনি কয়েক দিন বা এমনকি ২৪ ঘন্টার মধ্যে দুর্ভেদ্য সেই সব অঞ্চলে প্রবেশের অভিজ্ঞতা পেতে পারেন।
এটি কাজে লাগিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা ক্রমানুসারে ঘটনাগুলো দেখতে পারেন, যেমন কোনো বিমান হামলার আগে ও পরে, বা কোনো ঘটনার কয়েক দিন বা মিনিট পরের অবস্থা। “গবেষণা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্তির জন্য এটি বেশ সহজ উপায়,” বলেন ফাফোর।
এর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংশ্লিষ্ট সুবিধাও আছে। যেমন, ফাফোর বলেছেন: “আপনি হয়ত কোনো সাংবাদিককে মাঠপর্যায়ে পাঠাতে চান না। অনেক সময় আমাদের গবেষকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আমরা খুব সতর্ক থাকি। তবুও স্যাটেলাইট ছবি দেখে তাঁরা মাঠপর্যায়ের কিছু ভিজ্যুয়াল উপকরণ পেতে পারেন।”
কোনো অনুসন্ধানের ফলাফল প্রকাশে ছবির শক্তি অনস্বীকার্য, আর একারণে স্যাটেলাইট ছবিও সাক্ষ্যপ্রমাণ জোরালো করার “মোটামুটি দ্রুত ও সাশ্রয়ী উপায়” হিসেবে প্রমাণিত। তিনি আরও বলেন: “কেউ কথায় বিশ্বাসী না হলেও ছবিতে ঠিকই আস্থা রাখে [আস্থা অর্জনের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে]।”
ফাফোর স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহারের জন্য সাংবাদিকদের উৎসাহ দিয়েছেন এবং এটি অনুসন্ধানের ঠিক কোথায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে তা আগে থেকেই ভাবতে বলেছেন। আবার এও মনে রাখতে বলেছেন যে, এটি প্রতিবেদন তৈরিতে কোনো কাজে নাও আসতে পারে বা বাস্তব কারণে কাজ নাও করতে পারে।
অবকাঠামো বা গাছপালা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে – এমন জায়গা শনাক্তকরণে স্যাটেলাইট ছবি দারুন কাজে আসে। বিশেষ করে অবকাঠামোগুলো খড় বা কাঠের মতো অত্যন্ত দাহ্য পদার্থ দিয়ে বানানো কিনা তা দেখা বেশ সহজ৷ ফাফোর বলেছেন, “এখন প্রচুর অ্যালগরিদম রয়েছে যা আপনাকে বলে দেবে ঠিক কোন অবকাঠামোটি পোড়ানো হচ্ছে, আর এমন কতগুলো আছে।”
একইভাবে, খনিতে সাফাই বা খননকাজে ব্যবহৃত বড় বড় যন্ত্রপাতি স্যাটেলাইট ছবি থেকে বের করা সম্ভব, যদি না তা মাটির নিচে হয়ে থাকে। বন উজাড়, অবৈধ খনন বা বধ্যভূমি সংশ্লিষ্ট যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানে এটি কাজে আসতে পারে। স্যাটেলাইট ছবিতে যদি কোনো দেওয়াল বা বেড়া ধরা পড়ে তাহলে বুঝতে হবে এটি একটি নতুন সুরক্ষিত এলাকা নির্মানের ইঙ্গিত। ফাফোর বলেন, বিমান হামলার ক্ষয়ক্ষতি সাধারণত স্যাটেলাইট ছবিতে বেশ ভালোভাবে দেখা যায়।
অবশ্য অনেক সময় স্যাটেলাইট ছবি খুব একটা কাজে আসে না, বিশেষ করে সেটির অবস্থান বা প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে।
ফাফোরের মতে, রাতের বেশিরভাগ ঘটনাই স্যাটেলাইট ছবি দিয়ে অনুসন্ধান করা কঠিন। ছবিতে ছায়া এড়াতে স্যাটেলাইটগুলো স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ছবি তোলে, তাই সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট অবস্থানের রাতের ছবি খুব কম পাওয়া যায়।
স্যাটেলাইট এমনভাবে আকাশ থেকে ছবি তোলে যে পর্বত ঘেরা অঞ্চলগুলোকে “শিল্পীর চিত্রকর্মের” মতো মনে হয়। এ প্রসঙ্গে ফাফোর বলেছেন, “আফগানিস্তানের মতো ঘন পার্বত্য অঞ্চল হলে যে অ্যাঙ্গেলে ছবি তোলা হয়, তাতে কিছুই ঠিক মতো বোঝা যায় না।” উজ্জ্বল বালুকাময় অঞ্চলে আলোর প্রতিফলনের কারণে ঘোড়া বা কাঠামো দেখার মতো ছবি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তিনি আরও বলেন, স্যাটেলাইট ছবির জন্য বালুঝড়, মেঘের আচ্ছাদনের মতো হয়ে যায়।
এখন মেঘ ভেদ করে দেখার মতো রিমোট সেন্সিং সক্ষমতা থাকলেও এ ধরনের সুবিধা সচরাচর যুক্তরাষ্ট্রেই বেশি পাওয়া যায়। তাই নাইজার রিভার ডেল্টার মতো ঘন মেঘলা অঞ্চলের স্যাটেলাইট ছবি পাওয়া যাবে নেহাতই অল্প অথবা পরিষ্কার ছবিগুলো কেবল বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যাবে৷
ফাফোর বলেছেন, ঘরের ভেতর সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু ভিডিও তাঁকে পাঠানো হয়েছে আর অবস্থানটি শনাক্ত করতে ফুটেজ ও স্যাটেলাইট ছবিগুলোর সূত্র ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। “আমি কয়েকটি খুঁজে পেয়েছি তবে সচরাচর এমনটি হয় না।” একইভাবে, স্যাটেলাইট ছবিতে নির্দিষ্ট কাউকে শনাক্ত করা সহজ নয়। তিনি বলেছেন, “আপনি আসলেই একজন থেকে অন্যজনকে আলাদা করতে পারবেন না। আমি হয়ত দেখতে পারতাম, এবং ছায়া দেখে কোনো মানুষের অস্তিত্বও বুঝতে পারতাম, তবে সেই মানুষটি কে তা জানা সম্ভব হতো না।”
তিনি বলেন, স্যাটেলাইট ছবি থেকে ছোট অস্ত্রের উপস্থিতি শনাক্তের চেষ্টার মতো অন্যান্য ক্ষেত্রে যে কোনো সন্দেহের সত্যতা নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে প্রচুর গবেষণা করতে হবে।
প্রমাণ হিসেবে হাতে খোঁড়া কবরের ছবি বিশ্লেষণের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আপনি হয়তো “স্যাটেলাইট ছবির বাইরেও অন্য কোনো সত্যের” খোঁজ করছেন। মাটির রঙে পরিবর্তন বা সাফ করা ঝোপঝাড় কবর খননের ইঙ্গিত দিতে পারে, তবে একই সঙ্গে সেটি ফসল কাটার লক্ষণও হতে পারে। এছাড়াও আপনাকে সমাধিস্থলে যাওয়ার পথ, মৃতদেহ পরিবহনে ব্যবহৃত যানবাহন ও কবরের অবস্থান স্থানীয় রীতিনীতি বা সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই কিনা, সেসব প্রমাণের দিকেও নজর দিতে হবে।
স্যাটেলাইট ছবি থেকে সর্বোচ্চ পেতে যা করবেন
বিভিন্ন স্পেকট্রাল ব্যান্ড ব্যবহার করুন
স্পেকট্রাল ব্যান্ডগুলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের বিভিন্ন অংশ আর নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্য কভার করে। (এখানে বিভিন্ন স্পেকট্রাল ব্যান্ড সম্পর্কে একটি সহজবোধ্য ভূমিকা দেওয়া হলো।) স্যাটেলাইট সব ব্যান্ড ধারণ করে কিন্তু স্যাটেলাইট ছবি প্রথমে দেখে মনে হতে পারে যেন প্রাকৃতিক রঙ। অন্যান্য স্পেক্ট্রাল ব্যান্ডে একই ধরনের ছবি দেখে সাংবাদিকেরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা খুঁজে নিতে পারে। যেমন, নিয়ার ইনফ্রারেড ব্যান্ডের (যে আলো খালি চোখে দেখা যায় না) ব্যবহারে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি আরও স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
ফাফোর বলেছেন, “অগ্নিকাণ্ডের শিকার এলাকা খুঁজতে নিয়ার ইনফ্রারেড ব্যান্ডটি বেশ কাজের। এটি সাধারণত গাছপালা ও গাছপালার স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে ব্যবহৃত হয়। শক্তিশালী প্রতিফলন হয়, এমন জিনিসগুলো নিয়ার ইনফ্রারেডে উজ্জ্বল লাল ও গোলাপি দেখায়। ফসলের দিকে নজর দিলে এই পার্থক্য আপনার চোখে পড়বে।”
উদাহরণ হিসেবে ফাফোর ২০১৭ সালে আইএসআইএস-এর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সংঘর্ষ চলাকালীন সিরিয়ার রাক্কার একটি ইনফ্রারেড স্যাটেলাইট ছবি তুলে ধরেন। সেখানে অগ্নিকাণ্ডের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে দেখা গিয়েছিল।
অনুমানের ওপর নির্ভর করবেন না এবং সাংস্কৃতিক পক্ষপাত থেকে দূরে থাকুন
২০২৩ সালের এপ্রিল, সুদানের জেবেল মারা অঞ্চলের একগুচ্ছ স্যাটেলাইট ছবি দেখান ফাফোর। নিয়ার ইনফ্রারেড ছবিগুলোতে অগ্নিদগ্ধ এলাকাগুলো দেখা যায় যা সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে সেই অঞ্চলগুলোতে ক্ষয়ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। তবে, একই অঞ্চলের আগের স্যাটেলাইট ছবি দেখে ফাফোরের বুঝতে বাকি থাকে না যে প্রতি বছর একই এলাকা অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়, হয়ত কৃষি সংশ্লিষ্ট কারণে। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, “আপনি যেখানে থাকেন, সেখানে অগ্নিকাণ্ড হয়নি বলে অনুমাননির্ভর কোনো উপসংহারে উপনীত হবেন না।”
গুগল আর্থ প্রো ব্যবহার করে বিভিন্ন দিকে ছবি ঘুরিয়ে দেখুন
“গুগল আর্থ প্রো ডেস্কটপে স্যাটেলাইট ছবিগুলোর দিকে নজর দিলে ভবনগুলো দু’পাশে থাকে,” বলেন ফাফোর। “ভবনগুলো রাস্তার দুধারে থাকলে আমার মস্তিষ্ক ছবিগুলো বুঝতে পারে না, কি হচ্ছে, তা নিয়ে আমার কোন ধারণাও থাকে না। এমন পরিস্থিতিরও মুখোমুখি হয়েছি যেখানে আমি সেল ফোনের টাওয়ার আছে কি না বা কেউ এসে সেগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে কি না, তা বোঝার চেষ্টা করছি।”
সমস্যা আরও জটিল হয়, যখন বিশেষ করে চলমান ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে, তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে আমরা (অ্যামনেস্টি) পৌঁছাতে পারি না। তখন গুগল আর্থ প্রো-এর ডায়াল দিয়ে ছবিটি ঘুরিয়ে দেখলে, আপনি বিষয়গুলো আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন।
ধরন শনাক্ত করুন
মিয়ানমারে বিমানের জ্বালানি সরবরাহ চেইন অনুসন্ধানে জ্বালানি ডিপোগুলো শনাক্ত করতে ধরন বোঝা খুব জরুরি ছিল। একটি কোম্পানির ওয়েবসাইটে অবস্থানগুলোর তালিকা সার্চের পরিসর ছোট করে আনতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু ডিপোগুলোতে যুক্ত হওয়া ও উপর থেকে দৃশ্যমান সাম্প্রতিক নতুন পরিচিতি, সবুজ ছাদ ও নতুন সুরক্ষা বৈশিষ্ট্যই ছিল পুনরাবৃত্তিমূলক ধরন যা এগুলোর অবস্থান শনাক্তে ফাফোরের কাজে এসেছিল।
জুম আউট করুন
ফাফোর বলেছেন, “অনেক সময় আপনি ছবিটিকে খুব কাছে এনে খুঁটিয়ে দেখেন, কিন্তু আপনি যদি জুম আউট করেন, কিছু বিষয় আপনার চোখে পড়বে। আপনি হয়তো দেখতে পেতেন যে কাছাকাছি হাসপাতাল আছে, কিন্তু বিমানবন্দরে কোনো বিশেষ বিমানের ওপর মনোযোগ দিতে গিয়ে হাসপাতালটি আপনার চোখ এড়িয়ে যায়।”
গুগল আর্থের ডেস্কটপ সংস্করণে আপনি কোনো নির্দিষ্ট দেশ শনাক্ত করতে পারেন, এক্ষেত্রে, মিয়ানমার।
রাজধানী বা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চল জুম করে দেখুন।
আর রাস্তার ধারে বাড়ির ছাদ, অবকাঠামো ও যানবাহন দেখতে আরও খুঁটিয়ে দেখুন।
স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণী টুল
ফাফোর স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার ও বিশ্লেষণের জন্য সহজলভ্য টুলগুলোর ব্যাপ্তি তুলে ধরেছেন।
গুগল আর্থ প্রো — ডেস্কটপ সংস্করণ। সহজে ব্যবহারযোগ্য এই টুলটি বেশ কাজের। কারণ এখানে ধারাবাহিক সময়কাল দেখা যায়। ফলে আপনি পুরানো ছবিগুলো দেখতে এবং সাম্প্রতিক ভিজ্যুয়ালের সঙ্গে তুলনা করতে পারবেন৷ ফাফোর ব্যাখ্যা করে বলেন, ”একেবারে গতকাল ঘটে যাওয়া বিমান হামলার অবস্থান সম্বলিত আপডেট ছবি এখানে পাবেন না, তবে এলাকার মূল মানচিত্র পাবেন এবং আগে সেখানকার অবস্থা ও ভবনগুলোর অবস্থা বুঝতে পারবেন।”
সেন্টিনেল হাব ইও ব্রাউজার (বিনামূল্যে ও অর্থের বিনিময়ে)। যারা আগে স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করেননি, তাদের জন্য ফাফোরের পরামর্শ: শুরু করার জন্য এই টুল দুর্দান্ত। কারণ বিনামূল্যে ব্যবহারযোগ্য অনেক টুল, কাঙ্খিত তথ্য ও টিউটোরিয়াল এখানে পাবেন।
প্ল্যানেট ল্যাবের সেরা পণ্যগুলোর একটি হলো প্রতিদিনের পৃথিবীর চিত্র তুলে ধরা ৩.৭ মিটার (১২ ফুট) রেজ্যুলিউশনের ছবি ৷ বড় বড় ভবন, জাহাজ ও বিমানগুলো দেখা গেলেও এর আসল সুবিধা হলো একই দিনে তোলা ছবিগুলোর তুলনা করতে পারা৷ “ফলে আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিমান হামলার সময় বের করতে পারি,” বলেন ফাফোর। “এর আগে, খুব গুরুত্বপূর্ণ এলাকার কিছু না হলে আপনি প্রতি তিন মাস অন্তর একবার একটি ছবি পেতেন। উচ্চতর রেজ্যুলুশনের ছবির কোথায় চোখ রাখতে হবে তা বলতে আমি এটিকে এক ধরনের রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করি।”
ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট ফরেস্ট্রি প্ল্যাটফর্মে বিনামূল্যের কিছু ছবি সহজেই পাওয়া যায় যা পরিবেশগত অনুসন্ধানে কাজে আসতে পারে।
স্কাইওয়াচ ছোট এলাকাগুলোতে সস্তায় ছবি বেচে। ফাফোর ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “সাধারণত, এক বর্গ কিলোমিটারের মতো নির্দিষ্ট জায়গার ছবি প্রয়োজন হলে একসঙ্গে অনেকগুলো স্যাটেলাইট ছবির অর্ডার দিতে হয়।”
ইমেজ হান্টারে ছবি কেনা যায়, এবং মানুষ কোথায় ছবি পাওয়ার চেষ্টা করছে তা দেখা যায়। অনুসন্ধানের জন্য আগ্রহের বিষয় শনাক্তে এটি সহায়তা করতে পারে। ফাফোর বলেছেন, “আমি মানচিত্রে নজর দিব আর মানুষ কোথায় ছবি পাওয়ার চেষ্টা করছে তা দেখতে পাব। কেন কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় মানুষ ঠিক এখনই ছবি পাওয়ার চেষ্টা করছে?”
পেরুজিয়াতে মিকাহ ফাফোরের আইজেএফ অধিবেশন দেখুন নিচের লিঙ্কে।
আরও পড়ুন
ড্রোন ও স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে আকাশ থেকে মিথ্যা উন্মোচন
চীনা “গুগল ম্যাপ” ঘেঁটে জিনজিয়াংয়ের বন্দীশিবির অনুসন্ধান
রিপোর্টার্স গাইড টু ইনভেস্টিগেটিং ওয়ার ক্রাইমস: ওপেন সোর্স রিসার্চ
লরা অলিভার যুক্তরাজ্যভিত্তিক একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি গার্ডিয়ান, বিবিসি, ইউরোনিউজ ও অন্যান্য গণমাধ্যমে লিখেছেন। তিনি থম্পসন ফাউন্ডেশন ও থম্পসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনে সাংবাদিকতার নিয়মিত প্রশিক্ষক এবং অনেক সংবাদকক্ষের জন্য শ্রোতা কৌশল পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। এখানে তাঁর আরও কাজ পাবেন।