সম্পাদকের নোট: এই পোস্টটি জিআইজেএনের আসন্ন রিপোর্টার্স গাইড টু ইনভেস্টিগেটিং ডিজিটাল থ্রেটস্ শীর্ষক ধারাবাহিকের প্রথম অধ্যায়। আগামী সেপ্টেম্বরে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে পুরো গাইডটি প্রকাশ করা হবে।
গত ১৫ বছরে, বিশ্বজুড়ে অনলাইন ব্যবহারকারী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলোরও অভূতপূর্ব প্রসার হয়েছে। আর প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়ন্ত্রণ, সুরক্ষা ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগে পিছিয়ে পড়ায় এর ব্যবহারকারীরা নানা ধরনের শোষণের কবলে পড়ছেন। নেতিবাচক জনসংযোগ ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের মতো প্রথাগত প্রচারণা কৌশলের ফল হিসেবে বেড়ে ওঠা অনলাইন ম্যানিপুলেশন এখন নতুন গতি ও মাত্রা পেয়েছে। সাংবাদিকতার মাধ্যমে ভারসাম্য আনার চেষ্টা না করা গেলে, অপতথ্যের সমস্যা সত্যিই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট: “ডিসইনফর্মেশন” শব্দটিকে “মিসইনফর্মেশন” এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না। শব্দ দুটি প্রায়ই একই অর্থে ব্যবহৃত হলেও সংজ্ঞাগত সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে, যা জানাবোঝায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সতর্ক থাকা দরকার। সাধারণত মিসইনফর্মেশন বলতে বোঝানো হয় সাধারণভাবে ছড়ানো কোনো মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্যকে, যা কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই ছড়ানো হয়। অন্যদিকে ডিসইনফর্মেশন বলতে আরও সুনির্দিষ্টভাবে বোঝানো হয় ইচ্ছাকৃত ছড়ানো মিথ্যা বা ক্ষতিকর তথ্যকে, যেটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোনো জনগোষ্ঠীর মাঝে ভয় বা সন্দেহ ছড়িয়ে দিতে সাজানো হয়। এগুলোর বর্ণনায় “অনলাইন কারসাজির (ম্যানিপুলেশন)” মতো পরিভাষাও ব্যবহার করা যায়, বিশেষ করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বা ওয়েবসাইট নিয়ে রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে। কারণ এগুলো মাঝেমধ্যে সঠিক তথ্যও ছড়ায়, কিন্তু সেটি ছড়ানো হয় ম্যানিপুলেশনের উদ্দেশ্যে।
অনলাইন ম্যানিপুলেশন নিয়ে আমদের রিপোর্টিং কৌশলে গত কয়েক বছরে অনেক বদল এসেছে। কারণ এই সময়ে নতুন নতুন সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কের উত্থান হয়েছে, প্রাইভেসি আইন পাস হয়েছে, এবং সমস্যাটির ধরন নিয়ে বোঝাপড়াও ক্রমাগত বিকশিত হয়েছে। মিথ্যা তথ্য ছড়ানোয় ওয়েবসাইট যেমন এখনও ব্যবহার হচ্ছে, তেমনি ব্যবহার হচ্ছে ইনফ্লুয়েন্সার এবং নতুন ধরনের ভিডিও ও ছবি। অনেক দেশে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে অন্যতম ফেসবুক। তবে টিকটক, টেলিগ্রাম ও মেসেজিং অ্যাপগুলোও মিথ্যা বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
তা হলো, রিপোর্টার হিসেবে আমরা কীভাবে এই বিশাল ইকোসিস্টেম নিয়ে অনুসন্ধান করব?
প্রথমত, আমাদের এটিকে এভাবেই দেখতে হবে: একটি ইকোসিস্টেম। পরিকল্পিত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানো বা প্রচারণা চালানো আর অনিচ্ছাকৃত এক-আধবারের ভুল এক জিনিস নয়। প্রতিটি রিপোর্টারকে শুরুতেই যে প্রাথমিক প্রশ্নটি সামনে আনতে হবে, তা হলো: তারা কী কোনো একক ঘটনা দেখছেন, নাকি বিস্তৃত পরিসরে কারসাজির ঘটনা? একটি ইকোসিস্টেমে অনেক বিষয় জড়িত থাকে, আর আমাদের অনুসন্ধানে এটিকে ভালভাবে সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন। এই ইকোসিস্টেমকে বর্ণনার সাধারণ পদ্ধতি হলো: বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে সংযোগ তুলে ধরা, যারা সমন্বিতভাবে একই বার্তা প্রচার করছে। এখানে কতগুলো সহায়ক সূচক ও প্রশ্ন রয়েছে: অ্যাকাউন্টগুলো কখন তৈরি হয়েছিল, কন্টেন্ট কখন শেয়ার করা হয়, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কারা কন্টেন্টগুলো ছড়িয়েছে এবং কন্টেন্টগুলোতে কী কী মিল আছে? এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে যে, ফেসবুক ও টুইটারে একই ওয়েবসাইটের প্রচার হচ্ছে। বা টিকটকের ইনফ্লুয়েন্সাররা এই ইস্যুতে একই ভাষায় কথা বলছেন। সময়ও অনেক কিছু বলতে পারে — একই ধরনের অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু কন্টেন্ট কি কয়েক মিনিট বা এমনকি সেকেন্ডের মধ্যে শেয়ার করা হয়েছে?
অনলাইন কারসাজির উৎস ও উদ্দেশ্য সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর যতটা সম্ভব কাছাকাছি যেতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের উচিত হাতের নাগালে পাওয়া সব ধরনের প্রথাগত ও ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা। কোনো একক ব্যক্তির (যিনি হয়তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সত্যিই কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে পড়েছেন) মাধ্যমে প্রচারিত কোনো তথ্য থেকে রাষ্ট্র বা ব্যক্তিমালিকানাধীন কর্পোরেশনের মদদে চালানো প্রচারণাগুলো আলাদা করে সনাক্ত করা যায়। এই সব ধরনের ম্যানিপুলেশনেরই প্রভাব আছে, তবে উদ্দেশ্য ও সফলতার বিচারে সেগুলোর মধ্যে পার্থক্য করা যায়। সব সময় এমন কোনো প্রচারণার উৎস পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয় না। অপতথ্যের ব্যবহার করে লন্ড্রোম্যাটরা যেন তাদের গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতে পারে– সেজন্য অনেক জনসংযোগ সংস্থাও গড়ে উঠেছে। ফলে অনলাইনে কারো প্রকৃত পরিচয় খুঁজে বের করার জটিল কাজ আরও জটিল হয়েছে।
জাতিগত উচ্ছেদ অভিযান, সহিংসতা ও যুদ্ধের প্রসারে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয় ডিজিটাল ডিসইনফর্মেশন। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবায় যেমন এর প্রভাব আছে, তেমনি গত এক দশকে বড় বড় নির্বাচন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার পেছনেও এর ভূমিকা আছে। প্রভাব তৈরির আগেই এগুলো সনাক্ত করার জন্য সাংবাদিকদের অবশ্যই সেসব কমিউনিটিকে বুঝতে হবে, যারা এর সম্ভাব্য শিকার হতে পারে। সরেজমিন রিপোর্টিংয়ের মতো এক্ষেত্রেও আপনি হুট করে কিছু একটা বুঝে নিতে পারবেন না। চারপাশে ভালোমতো দেখুন, এবং বোঝার চেষ্টা করুন যে ইস্যুটি কতো গভীরে গিয়েছে। কারণ অনলাইন ম্যানিপুলেশন বিদ্যমান সামাজিক বিভাজনগুলোর ফায়দা নেয়, এবং সেগুলো আরও বাড়িয়ে তোলে। প্রায়ই খুব বিপজ্জনকভাবে। এই বিভাজনগুলো সম্পর্কে ভালো বোঝাপড়া ছাড়া আমরা এসব ম্যানিপুলেশন ও ডিসইনফর্মেশন নিয়ে রিপোর্ট করতে পারব না।
তথ্য উন্মোচন ও ডেটাকে আরও নিবিড়ভাবে পর্যালোচনার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে নিচে বর্ণিত টুল ও পদ্ধতিগুলো। এগুলো কখনোই কঠোর পরিশ্রমসাধ্য প্রথাগত সাংবাদিকতার বিকল্প নয়, এমনকি এগুলোর উদ্দেশ্যও তা নয়। অনলাইন অনুসন্ধানী কৌশলগুলোর সঙ্গে সোর্স ও নথিপত্র নিয়ে কাজের মতো প্রথাগত রিপোর্টিং পদ্ধতি একসঙ্গে মেলালেই কেবল অনলাইন ম্যানিপুলেশন নিয়ে সবচেয়ে ভালো রিপোর্টিং করা সম্ভব। আশার খবর হলো আপনি একা নন। আরও অনেক গবেষক, সাংবাদিক ও একাডেমিকেরা অনলাইন কারসাজির ক্ষতিকর দিকগুলো উন্মোচন করছেন। এই গাইডটি পড়ার মাধ্যমে আপনিও তাঁদের দলে নাম লেখাবেন। এসব নিয়ে অনুসন্ধানের সময় সাহায্য চাইতে ও সাহায্যের হাত বাড়াতে কোনো সংকোচ করবেন না।
সংগঠিত থাকুন: অনুসন্ধান শুরুর আগে ঠিক করুন যে, আপনি কীভাবে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট এবং অন্যান্য অনলাইন বিষয়াদি নজরে রাখবেন। এসব কাজ করতে গিয়ে ব্রাউজার ট্যাবের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। তাই এগুলো সাজানো ও সংরক্ষণের জন্য একটি নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকা খুব জরুরি। অর্থের বিনিময়ে ব্যবহারযোগ্য হাঞ্চলি স্বয়ংক্রিয় সংরক্ষণ সক্ষমতার জন্য এই ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ জনপ্রিয়। আরেকটি পদ্ধতি হলো অ্যাকাউন্ট, ওয়েবসাইট, ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য আগ্রহের বিষয়গুলো এক জায়গায় জড়ো করে একটি বিষয়ভিত্তিক স্প্রেডশিট তৈরি করা। সহজেই টাইমলাইনে দেখতে অ্যাকাউন্ট তৈরির তারিখ এবং একেকটি পোস্টের প্রকাশনা তারিখ ও সময় যুক্ত করার কথা ভাবতে পারেন। পোস্ট ও অ্যাকাউন্ট যে কোনও সময় মুছে দেওয়া যায় বলে আপনার অনুসন্ধানের জন্য তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি স্ক্রিনশট ও নোট নিতে ভুলবেন না৷
আপনি যা দেখছেন, তা ট্র্যাক করা এবং আপনার ভাবনাগুলো সংগঠিত রাখা জরুরি। আপনার নোট ও স্ক্রিনশট বা আগ্রহের বিষয়গুলো এক জায়গায় রাখার জন্য এক বা একাধিক গুগল ডক ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যা দেখছেন তা সর্বজনীনভাবে সংরক্ষণ করাও গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেট আর্কাইভে একটি অ্যাকাউন্ট খুললে আপনি বিনামূল্যে তাদের বাল্ক আর্কাইভিং টুল ব্যবহার করতে পারবেন। এটি গুগল শিটের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং সেখানে থাকা প্রতিটি লিঙ্ক আর্কাইভ করে রাখে। তথ্যের ট্র্যাক রাখতে স্ক্রিনশটের চেয়ে আর্কাইভ একটি ভাল উপায়, কারণ এগুলো নিয়ে কারসাজি করা বেশ কঠিন এবং আপনার প্রতিবেদনেও এগুলো যুক্ত করতে পারেন৷ তবে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও লিঙ্কেডইনের মত কিছু সামাজিক নেটওয়ার্কের পোস্ট আর্কাইভ করা সহজ নয়। ফলে তাদের প্রত্যেকটির জন্য আলাদা স্ক্রিনশট ফোল্ডার রাখতে পারেন। এছাড়াও মনে রাখবেন, ভিডিওগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আর্কাইভে যুক্ত হয় না। ফলে সেগুলোকেও আলাদা আলাদা ফোল্ডারে রাখতে হবে।
জনগোষ্ঠী সম্পর্কে জানুন: ডিসইনফর্মেশন ছড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের সবচেয়ে সাধারণ কৌশলগুলোর একটি হলো কোনো দেশ বা জনগোষ্ঠীতে বিদ্যমান সামাজিক সমস্যা চিহ্নিত করা এবং সেখানে উত্তেজনা ও বিভাজন বাড়িয়ে তোলা। সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের সেরা উপায়গুলোর একটি হলো বিভেদ সৃষ্টিকারী বা পক্ষপাতদুষ্ট কন্টেন্ট পোস্ট করা। তাই কারসাজির শিকার জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভালোমতো জানা জরুরি। ভুক্তভোগী সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলুন এবং তাদের বাস্তবতা বোঝার চেষ্টা করুন। এই ইস্যুগুলো তৈরি হয়েছিল কী কারণে এবং কেন এসব অনলাইন ম্যানিপুলেশন কার্যকরী হয়ে উঠছে? এমন কোনো কথোপকথন কি হয়েছে যা আপাতদৃষ্টিতে দুরভিসন্ধিমূলক মনে হলেও আসলে পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাভাবিক? এ ধরনের ডিজিটাল বাস্তবতায় মিশে গিয়ে আপনি আরও সম্যকভাবে ডিসইনফর্মেশনের বিষয়টি বুঝতে পারবেন এবং অনেক ক্ষেত্রে, এ ধরনের পরিস্থিতির আগেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বিশেষভাবে আপনার নজরে পড়বে।
প্রভাব বিবেচনা করুন: কোনো মিথ্যা তথ্য কাভার করবেন কিনা– সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো যথার্থ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নেই। এর মাধ্যমে একদিকে, আপনি এই মিথ্যা তথ্যের বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। অন্যদিকে, আপনি সেটির বিস্তার কমাতেও সহায়তা করতে পারেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন, এই তথ্যের কোনো সম্ভাব্য বা পরিমাপযোগ্য প্রভাব আছে কিনা। অপতথ্যটিকে আপনি প্রথমে যে কমিউনিটিতে দেখেছেন, সেটি তার বাইরেও চলে গেছে কিনা। এটি কি শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে? যারা পোস্ট করেছেন, তারা কি এর ফলে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে? এই তথ্যের প্রসারে কি কেনো বিশেষ প্রভাবশালী ব্যক্তির হাত ছিল? সম্ভাব্য সব ক্ষতি ও সুবিধার দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি দল হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
ক্ষতির আশঙ্কা কমিয়ে আনুন: মিথ্যা তথ্যের বিষয়ে কাজ করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের জন্য আপনার উচিত ইন্ডাস্ট্রির সেরা চর্চাগুলো প্রয়োগ করা। যেমন, কোনো ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন লিখলে শিরোনামেই সঠিক তথ্যটি জানিয়ে দিন। টেক্সটের মূল অংশে “ট্রুথ স্যান্ডউইচ” কৌশল ব্যবহার করুন: সত্য-মিথ্যা-সত্য। এ ধরনের প্রতিবেদন পড়ে পাঠক মিথ্যা তথ্যের বদলে সত্যটাই বেশি মনে রাখবে। মিথ্যা তথ্যের আর্কাইভ করা সংস্করণটি লিংক হিসেবে যুক্ত করুন। এতে করে ডিসইনফর্মারদের সাইটে ট্রাফিক পাঠানোর বিষয়টি এড়ানো যাবে। পরিশেষে, মিথ্যা তথ্যটির কোনো স্ক্রিনশট যুক্ত করলে ছবির চারপাশে একটি লাল রেখা বা “ভুয়া” শব্দটি উল্লেখ করুন। আপনার লক্ষ্য হলো আপনার অনুসন্ধানে যেন “কোনো ক্ষতি না হয়” এবং অসাবধানতাবশত ভুল বা ক্ষতিকর তথ্য আরও ছড়িয়ে না পড়ে।
প্রমাণে ঘাটতি রাখা যাবে না: কল্পনা করুন: বেশ কয়েকটি বেনামি টুইটার অ্যাকাউন্ট একই ওয়েবসাইট থেকে একই সঙ্গে কন্টেন্ট শেয়ার করছে৷ ওয়েবসাইটটি জুড়ে আছে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য। এবং সেটির ডোমেইন রেকর্ড দেখার পর আপনি বুঝতে পারলেন যে, এর নিবন্ধন হয়েছিল রাশিয়ায়৷ তাহলো কি ধরে নেবেন যে, আপনি একটি রুশ প্রচারাভিযান উন্মোচন করে ফেলেছেন? তেমনটি না-ও হতে পারে। অফলাইনের মতোই ডিজিটাল অনুসন্ধানেও আপনি যত বেশি প্রমাণ জোগাড় করতে পারবেন, আপনার প্রতিবেদনও তত শক্তিশালী হবে। সমর্থনযোগ্য সাক্ষ্যপ্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত কারো দিকে অভিযোগের আঙুল তুলবেন না।
এখন ধরা যাক, ওয়েবসাইটটি ফেসবুকেও শেয়ার হচ্ছে। যে পোস্টগুলো নিয়ে আপনার সন্দেহ হয়েছে, সেগুলোর জন্য ফেসবুকের পেজ ট্রান্সপারেন্সি অপশনটি খুলে দেখতে পেলেন যে সবগুলো পোস্টের এডমিনের অবস্থান রাশিয়ায় এবং পেজটির মালিক একটি রুশ জনসংযোগ সংস্থা৷ এখন হাতে প্রমাণের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু আপনি জানেন যে ডোমেইন রেকর্ড ও ফেসবুক পেজ ম্যানেজারের মতো তথ্যগুলোও কারসাজির মাধ্যমে বদলানো যায়। তাহলো আপনি সংস্থাটির এমন প্রাক্তন কর্মচারীদের খুঁজে বের করুন, যারা তাদের কার্যক্রমের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করতে পারেন এবং জনসংযোগ সংস্থার মালিকের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য নিশ্চিত করতে পারেন। এখন আপনার হাতে এই প্রচারাভিযানের উৎস নিয়ে আরও শক্তিশালী সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে। সবসময় নিজেকে প্রশ্ন করুন: এই কর্মকাণ্ডের ক্রীড়ানকদের সম্পর্কে সম্ভাব্য আরও কোনো ব্যাখ্যা কি আছে? নাকি আমাদের হাতে কেবলই অসংলগ্ন কিছু প্রমাণ আছে?
উদ্দেশ্য খুঁজে বের করুন: ডিসইনফর্মেশন একটি কৌশল। আর্থিক বা রাজনৈতিক উন্নতি, প্রভাব বিস্তার আর এমনকি আইন বদলাতেও এই কৌশলের ব্যবহার হতে পারে। আপনি যদি অনলাইন কারসাজির প্রচারাভিযানে জড়িত কোনো ব্যক্তির নাম খুঁজে পান, তবে সেখানেই থামবেন না। জড়িত কোম্পানি, অনুদানের রেকর্ড ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করুন। সবসময় সম্ভব না হলেও আপনি তাদের উদ্দেশ্যের যত কাছে যাবেন, সত্যেরও তত কাছে যাবেন।
সামাজিক মাধ্যমের গণ্ডি থেকে বের হোন: রিপোর্টাররা সচরাচর সবচেয়ে সহজে প্রবেশগম্য প্ল্যাটফর্মগুলো নিয়েই ঘাঁটাঘাটি করেন। একদিক থেকে সবচেয়ে বেশি গবেষণা করা সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর একটি হলো টুইটার, কারণ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় এর ডেটা পাওয়া সহজ। (তবে টুইটারের এপিআই অ্যাক্সেসে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের কারণে এখন আর তা সহজ নয়।) অন্য দিকে, ইউটিউব বা পডকাস্ট প্ল্যাটফর্ম তুলনামূলক কম খতিয়ে দেখা হয়, কারণ একজন রিপোর্টারকে অনেক কন্টেন্ট দেখতে হয় আর ডেটা ফিডও থাকে অপর্যাপ্ত। তবে আমাদের কাছে কম পরিচিত বা বেশি সময় দিতে হয়, এমন প্ল্যাটফর্মগুলো এড়িয়ে চললে আমাদের অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতছাড়া হতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি কেবল একটি প্ল্যাটফর্মে সীমাবদ্ধ থাকে না আর রিপোর্টারদেরও তেমনটি থাকা উচিত নয়।
অ্যাডভান্সড সার্চ: অনলাইন অনুসন্ধানের টুলগুলো খুবই অস্থায়ী অবস্থায় থাকে। এগুলো নির্ভর করে সোশ্যাল মিডিয়া পরিচালকদের খেয়ালখুশির ওপর, যারা যেকোনো সময় উন্মুক্ত ডেটা প্রাপ্তির ধরনে পরিবর্তন আনতে পারেন। ফলে অনুসন্ধানের জন্য শুধুই বিভিন্ন টুলের ওপর নির্ভর করার ধারণাটি ভুল। তবে প্রায় যে কোনো অনুসন্ধানে কাজে আসে একটি জিনিস: অ্যাডভান্সড সার্চ। লাইভ ব্রেকিং নিউজের কোনো ঘটনায় চোখ রাখতে টুইটারের অ্যাডভান্সড সার্চ ব্যবহার করতে পারেন। গুগল অ্যাডভান্সড সার্চ ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে এমন তথ্য বের করে আনতে পারেন যা হয়তো অন্য কোনোভাবে পাওয়া সম্ভব হতো না। সার্চ হচ্ছে ডিজিটাল অনুসন্ধানী কাজের মূল বিষয় আর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের অপারেটরগুলো কাজে লাগাতে ও সেগুলো থেকে প্রশ্ন তৈরিতে আপনাকে পারদর্শী হতে হবে। এসব কাজে সহায়তার জন্য দেখতে পারেন জিআইজেএন-এর এই চমৎকার টিউটোরিয়াল।
জাঙ্কিপিডিয়া টুল: অ্যালগরিদমিক ট্রান্সপারেন্সি ইনস্টিটিউটের জাঙ্কিপিডিয়া মূলত ডিসইনফর্মেশন ও “জাঙ্ক নিউজ” পর্যবেক্ষণের জন্য বানানো হয়েছিল। তবে এর কাজের ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হয়েছে। তাই বিস্তৃত বিষয়গুলো তুলে ধরতে এ বছরের শেষ দিকে টুলটির নতুন নাম দেয়া হবে। এটি এখন ব্যবহারকারীদের গেটর ও গ্যাব-এর মতো স্বল্প পরিচিত সাইটগুলোর পাশাপাশি টিকটক, ফেসবুক ও টেলিগ্রামের মতো প্রধান সাইটগুলো সহ এক ডজন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলোর তালিকা ট্র্যাক করা ও তালিকা তৈরির সুবিধা দেয়৷ এছাড়াও জাঙ্কিপিডিয়ায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইংরেজি ভাষার পডকাস্ট ট্রান্সক্রাইব ও সার্চ করা যায়। [জিআইজেএন জাঙ্কিপিডিয়ার সার্চ সক্ষমতাকে আরও গভীরভাবে তুলে ধরেছে।]
উইভেরিফাই টুল: আরেকটি নির্ভরযোগ্য ও অপরিবর্তনীয় টুল হলো উইভেরিফাই। এটি ফ্যাক্ট-চেকারদের জন্য ফ্যাক্ট-চেকারদের বানানো একটি টুল। ছবি বা ভিডিও রিভার্স সার্চ, কারসাজি ধরতে ছবিগুলোর তুলনা, এবং টুইটার বিশ্লেষণে আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন। ডিসইনফর্মেশন বিষয়ক রিপোর্টারদের জন্য এটি দুর্দান্ত কাজের টুল। এটি অ্যাডভান্সড অপশনগুলোতে সবচেয়ে ভালো কাজ করে, তাই আপনার একটি ওয়ার্ক ইমেইল অ্যাড্রেস থাকলে বিনামূল্যে অ্যাকাউন্টের জন্য সাইন আপ করতে ভুলবেন না৷
এসবের বাইরেও আরও অনেক টুল আছে আর অনলাইন কারসাজি নিয়ে প্রতিবেদনের ক্ষেত্রটি ক্রমাগত বড় হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর বিকাশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সাংবাদিকতারও বিকাশ হতে হবে। এক্ষেত্রে সবসময় নতুন পদ্ধতির খোঁজ করা খুব জরুরি। আপনি এখানে যা শিখেছেন তা মাত্র শুরু।
কেইস স্টাডি
ইউক্রেন: ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রা আগ্রাসনের পরপরই কীভাবে নকল টেলিগ্রাম চ্যানেল তৈরি করা হয়েছিল, ইউক্রেনের অনুসন্ধানী সংবাদ সংস্থা টেক্সটির একটি অভিনব প্রকল্প তাই তুলে ধরেছে। চ্যানেলগুলো নিজেদের স্থানীয় সংবাদ সোর্স হিসেবে হাজির করলেও “আসলে সেগুলো রুশ বয়ান প্রচার এবং দখলদারদের সমর্থন বাড়াতে নিয়োজিত ছিল।” অনুসন্ধানে উঠে আসে, কোনো অঞ্চল মুক্ত হওয়ার পর চ্যানেলগুলো সেখানে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। সব সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোর মধ্যে টেলিগ্রাম ডেটা সবচেয়ে বেশি প্রবেশগম্য এবং একটি পুরো চ্যানেলের ফিড ডাউনলোড করতে বা এর কন্টেন্ট ও এনগেজমেন্ট সম্পর্কিত ডেটা সংগ্রহে আপনার বিশেষ কোনো টুলের প্রয়োজন নেই৷ টেলিগ্রাম ডেটা ব্যবহার করে মাঠপর্যায়ে থাকা সেনাবাহিনী ও অনলাইনে প্রচারাভিযানের সম্পর্ক তুলে ধরেছিল টেক্সটি।
ফিলিস্তিন: ২০২১ সালে ইসরায়েলি বাহিনীর আল-আকসা মসজিদে আক্রমণ ও ১৫০ জনেরও বেশি মানুষকে আহত করার পর ইসরাইল ও ফিলিস্তিন একটি অস্থিতিশীল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু এটি আকাশে রকেট নিক্ষেপ সাময়িকভাবে বন্ধ করলেও খুব অল্পই ভূমিকা রেখেছে “অনলাইন প্ররোচিত হত্যাকাণ্ড” বন্ধের ক্ষেত্রে। ডিসিইনফর্মেশন পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপ ফেকরিপোর্টার তেল আভিভের দক্ষিণে সমুদ্রতীরবর্তী শহর বাট ইয়ামে আরবদের ওপর হামলার সূতিকাগার ১০০টিরও বেশি হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের হিব্রু-ভাষী গ্রুপে নজর রেখেছিল। এসব গ্রুপে সহিংসতার আহ্বান সত্যিকারের সহিংসতা তৈরি করেছিল। সৈকতে যাওয়ার পথে শুধু আরব হওয়ার কারণে এমন সহিংসতার শিকার হয়েছিলেন চার সন্তানের জনক এক ব্যক্তি। মারধরের পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গণমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে স্টোরি করা সহ ইসরায়েলি রথি মহারথিরাও অনলাইনে এই বিদ্বেষ উসকে দিতে সামিল হয়। টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলোতে কে এই বিদ্বেষমূলক প্রচারণা শুরু করেছে তা শনাক্তে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকলেও ঘটনাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল যে অনলাইন কারসাজি ও ঘৃণার চাষ কীভাবে বাস্তব দুনিয়ায় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র: ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভিত্তিহীন ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আর কীভাবে সেই অভিযোগ থেকে ৬ই জানুয়ারির সহিংসতা ও অরাজকতার সূত্রপাত হয়েছে, তা নিয়ে অনেক কাজ হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের জিম রুটেনবার্গের একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই প্রতিবেদনে ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের নির্বাচনের ঠিক আগ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করতে রিপাবলিকানদের নানা অপচেষ্টার কথা তুলে ধরা হয়। রুটেনবার্গ বিভিন্ন রাজ্যে মিথ্যা দাবিগুলোতে নজর দেন, দাবির উৎস খতিয়ে দেখেন এবং দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণে ব্যবহৃত আইনি পরিবর্তনগুলো উন্মোচন করেন৷ রাজনৈতিক ক্ষমতার সঙ্গে ডিসইনফর্মেশনের সংশ্লিষ্টতা বুঝতে স্টোরিটি একটি যুগান্তকারী কাজ।
ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো: এই উদ্বেগজনক উদাহরণে দেখা যায়, কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালে কতিপয় কঙ্গোলিয় ফেসবুক পেজের অ্যাডমিনরা কীভাবে একটি কার্যকরী অপতথ্যের প্রচারণা শুরু করেছিল। একজন ফরাসি সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক এবং মাদাগাস্কার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সহ উচ্চপদস্থ খ্যাতিমান ব্যক্তিত্বদের মিথ্যা উদ্ধৃতি ব্যবহার করে এই ছোট দলটি ভিত্তিহীন ভ্যাকসিন বিরোধী প্রচার ও রোগ সারানোর জালিয়াতি নিয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়েছে। ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর অবজারভারের একটি দল অবশেষে এসব অপতথ্যের নেপথ্যে থাকা একজনকে শনাক্ত করেছিল। কিনশাসা নামের ২০ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী স্বীকার করেছিল যে এসব মিথ্যা ছড়ানোর জন্য পেছনে উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক মাধ্যমে তার পেজগুলোর উপস্থিতি বাড়ানো এবং “হৈ চৈ” ফেলে দেয়া।
ফিলিপাইন: এটি গণমাধ্যমের কোনো স্টোরি নয়, বরং একাডেমিক রিপোর্ট, তবুও ডিসইনফর্মেশন অনুসন্ধানে নিয়োজিতদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। লেখক জোনাথন কর্পাস ওং এবং স্যামুয়েল ক্যাবুয়াগ ফিলিপাইনে ২০১৯ সালের নির্বাচন চলাকালে ছদ্মনামী ট্রলের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। তারা দেখতে পান, সচরাচর উপেক্ষিত ইন্টারনেটের এই পর্বটি অনলাইন প্রপঞ্চ সচল রাখা এবং রাজনৈতিক বার্তা প্রচারে খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রবন্ধটি ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য মাইকেল ব্লুমবার্গের প্রচারণার সঙ্গে কিছুটা সমান্তরালভাবে তুলে ধরে এবং এর অনুসন্ধানী কৌশল ও উপসংহার দুটোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্য।
কোস্টারিকা: দুই শিক্ষাবিদের এই শ্বেতপত্রে ২০১৮ সাল থেকে কোস্টারিকার নির্বাচন ও রাজনীতিতে তথাকথিত সাইবার সৈন্যদের হস্তক্ষেপ নথিভুক্ত করা হয়েছে। এই সাইবার সৈন্যদের সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে এভাবে, “অনলাইনে কারসাজি করে জনমত বদলে দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকার বা রাজনৈতিক কর্মী।” তারা কেবল ২০১৮ সালের নির্বাচনেই ভূমিকা রাখেনি, বরং রাজস্ব ও বেসামরিক কর্ম ব্যবস্থায় সংস্কার নিয়ে পরবর্তী প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনার তুমুল বিরোধিতা করতে ডানপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষেও কাজ করেছে। জনমতকে ভুলভাবে তুলে ধরতে ভুয়া রাজনৈতিক জরিপ ও প্রতিপক্ষের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে ভুয়া সংবাদের মাধ্যমে এই স্বদেশী ডিসইনফর্মেশনের ক্রীড়ানকেরা লাতিন আমেরিকার অন্যতম এই স্থিতিশীল দেশটিতে বিশৃঙ্খলা ও বিভেদের বীজ বপন করেছিল।
আরও পড়ুন
ডিজিটাল থ্রেটস: এ সাইবার ইনভেস্টিগেশন ট্রেনিং কোর্স
মেক্সিকো ওয়েজেস সাইবার ওয়ারফেয়ার এগেইন্সট জার্নালিস্টস
জেইন লিটভেনেঙ্কো একজন ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার এবং হার্ভার্ডের শোরেনস্টাইন সেন্টারের একজন গবেষক। তার কাজ ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য আটলান্টিক এবং অন্যান্য প্রকাশনায় প্রকাশিত হয়েছে। পূর্বে, তিনি বাজফিড নিউজের একজন সিনিয়র প্রযুক্তি লেখক ছিলেন, যেখানে তিনি ভুয়া তথ্য নিয়ে সাংবাদিকতা করেছেন। জেনের বেড়ে ওঠা ইউক্রেনের কিয়িভে এবং তিনি এখন পোল্যান্ডের ওয়ারশতে থাকেন।