ইন্টারনেটে যত সাইট আছে তাদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের সাইট থেকে ডেটা স্ক্র্যাপিং সবচেয়ে কঠিন।
তবুও ডেটা ও অনুসন্ধানী স্টোরির সূত্র পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এই সামাজিক মাধ্যম; বিশেষ করে, আপনি যদি প্ল্যাটফর্মগুলোতে ক্ষতিকর বিজ্ঞাপনের পেছনের ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে চান, টিকটকের রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম ট্র্যাক করতে চান, অথবা বিভ্রান্তি ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত কন্সপিরেসি গ্রুপ বা ইনফ্লুয়েন্সারদের বের করতে চান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যাড অ্যাকটরদের (অনিষ্টকারী) আটকাতেই কিছু প্ল্যাটফর্মের নিরাপত্তা-দল ইচ্ছা করে স্ক্র্যাপিংকে কঠিন করে তোলে বলে দাবি করে থাকে। তবে এটি অপকর্মে জড়িত অ্যাকাউন্ট বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গতিবিধি অনুসরণে ইচ্ছুক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদেরও পথরোধ করে।
সাংবাদিকেরা এতদিন ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের কন্টেন্ট ট্র্যাক করতে ক্রাউডট্যাঙ্গেলের মতো প্লাটফর্ম-মালিকানাধীন ইনসাইট টুল, এবং টুইট অনুসন্ধানে টুইটারের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেসের (এপিআই ) ওপর আস্থা রেখেছেন। কিন্তু এই ড্যাশবোর্ডগুলো ব্যবহারেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷
ওয়াশিংটন পোস্টের ডেটা রিপোর্টার জেরেমি মেরিল সতর্ক করে বলেন, “এগুলোর ভবিষ্যত শঙ্কার মুখে৷” “ক্রাউডট্যাঙ্গেল একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল হলেও এটির ব্যবহার শেষ হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। একইভাবে, টুইটার এপিআই ঐতিহাসিকভাবেই সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে ইলন মাস্ক পেইড এপিআই তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং গবেষকেরা কোন ধরনের ডেটা পাবেন তা নিয়ে সাংঘর্ষিক বিবৃতি দিয়েছেন।” আসলে মার্চের শুরুতেই টুইটার, তাদের এপিআই ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন স্তরের দাম বেঁধে দিয়েছে; বড় কর্পোরেশনগুলো বাদে প্রায় সবাইকে এই দাম দিতে হবে।
এদিকে, টিকটকের মতো বড় প্ল্যাটফর্মের জন্যেও কন্টেন্ট এক্সেসের এমন কোনো টুল নেই।
সম্প্রতি ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স অ্যান্ড এডিটর্সের বার্ষিক ডেটা সাংবাদিকতা সম্মেলন, নিকার২৩-এ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা একটি টুল নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেশন ছিল। জাঙ্কিপিডিয়া নামের এই টুলের সাহায্যে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের পাবলিক একাউন্টগুলোকে মনিটর করা যায়, যা সাংবাদিক ও গবেষকদের জন্যে বেশ কাজের ৷
জাঙ্কিপিডিয়া তৈরি করেছে অ্যালগরিদমিক ট্রান্সপারেন্সি ইনস্টিটিউট। এটি মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদিত অলাভজনক সংস্থা ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সিটিজেনশিপের একটি প্রকল্প, যার উদ্দেশ্য “আমেরিকায় নাগরিক জীবনযাত্রাকে আরও শক্তিশালী করা।” মূলত অপতথ্য ও “জাঙ্ক নিউজ” মনিটরিংয়ের জন্য নির্মিত হলেও, জাঙ্কিপিডিয়া এখন নতুন একটি বৈশ্বিক, সার্বজনীন অনুসন্ধানী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে এবং এ কারণে চলতি বছর তাদের নামও বদলে যাবে।
জাঙ্কিপিডিয়া ব্যবহারে পয়সা লাগে না এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষকেরা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনে টুলটি তৈরি করেছেন।
কয়েকটি সতর্কতা: এই প্ল্যাটফর্মে যে অনেক ডেটাসেট আছে, তা বলা যাবে না; ক্রাউডট্যাঙ্গেলের মতো প্রতিটি পাবলিক ফেসবুক পেজেও এর অ্যাক্সেস নেই; কয়েকজন গবেষক এর ইউজার ইন্টারফেসকে বড়, আর্থিকভাবে অবস্থাসম্পন্ন স্যোশাল ইনসাইট টুলগুলোর তুলনায় “সেকেলে” বলে অভিহিত করেছেন।
তবে এর কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধাও রয়েছে। নিকারের সেশনে ন্যাশনাল কনফারেন্স অন সিটিজেনশিপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ক্যামেরন হিকি বলেছেন, জাঙ্কিপিডিয়া “সবকিছুর ক্রাউডট্যাঙ্গেল” হতে চায়। এটি শুনে উপস্থিত দর্শকশ্রোতাদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা দেখা যায়!
হিকির মতে, সমস্যা জর্জরিত সামাজিক মাধ্যম কন্টেন্টের শেয়ার্ড ডেটাবেস ছাড়াও জাঙ্কিপিডিয়া এখন গেটার ও গ্যাবের মতো স্বল্পপরিচিত সাইট এবং টিকটক, ফেসবুক ও টেলিগ্রামের মতো প্রধান সাইটসহ এক ডজন বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যবহারকারীদেরকে সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টের তালিকা তৈরি ও ট্র্যাকিংয়ের সুবিধা দিয়ে থাকে।
একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জাঙ্কিপিডিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইংরেজি-ভাষার পডকাস্টগুলো ট্রান্সক্রাইব ও সার্চ করতে পারে।
“আমরা টুলটির কার্যকারিতা যথেষ্ট বাড়িয়েছি – তাই প্ল্যাটফর্মটির নতুন নাম খুঁজছি,” বলেন হিকি। “এখানে আপনি পডকাস্ট এবং এই ১২টি সামাজিক মাধ্যমের যে কোনোটি থেকে অ্যাকাউন্টের তালিকা বানাতে পারবেন এবং সিস্টেমটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাকাউন্টগুলোর সব পোস্ট সামনে আনবে। সেগুলোর কয়েকটির ক্ষেত্রে এটি আপনার সার্চ করা পোস্টগুলোও তুলে ধরতে পারে।”
তিনি আরও বলেছেন: “উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইউটিউবে ‘ব্যালট’ ও ‘জালিয়াতি’ শব্দগুলো লিখলে এটি কোনো ভিডিওর শিরোনাম বা বিবরণে থাকা এই শব্দগুলো খুঁজে বের করবে এবং সেসব ভিডিওর ডেটা তুলে ধরবে। আপনি অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত প্রচুর মেটাডেটাও দেখতে পাবেন।”
হিকি অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও ডেটা রিপোর্টারদেরকে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল ব্যবহার করে টুলটি ব্যবহারের আমন্ত্রণ জানান।
১২টি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি, হিকির কথা অনুযায়ী, জাঙ্কিপিডিয়া আরও যা যা করতে পারে:
- এর নতুন “অ্যাক্টর” ডেটাবেসের মাধ্যমে একাধিক প্ল্যাটফর্মে একই বিষয়ের বার্তা খোঁজা৷ হিকি বলেন, “অ্যাক্টর বলতে সাধারণত মানুষ বোঝালেও কখনো কখনও তা প্রতিষ্ঠানও হতে পারে; আর অনেক সময় অনেকগুলো সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্ট থাকে, তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম জুড়ে সেসব অ্যাকাউন্টের অর্ন্তভুক্তি বেশ কাজে আসতে পারে।” মেরিল যোগ করে বলেন: “অর্থ্যাৎ, মাত্র একটি ক্লিক, তারপর সবকিছু আপনার সামনে, যেমন, জর্জিয়া রাজ্যের নির্বাচনী দৌঁড়ে ডেমোক্রেটিক প্রার্থীরা গাঁজা সম্পর্কে যা যা বলেছেন।”
- আপনি যে সামাজিক মাধ্যম কন্টেন্ট নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, সেটির এনগেজমেন্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরা। হিকি নির্দিষ্ট করে বলেছেন, “সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর দেয়া যে কোনো এনগেজমেন্ট মেট্রিকের ছোট ছোট বিশ্লেষণে চোখ বুলাতে পারেন – যেমন, কতগুলো পোস্ট করা হয়েছে; লাইক এবং কমেন্ট ও কতবার দেখা হয়েছে।” “বিশেষ করে, এলন মাস্ক দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে টুইটারে কোনো টুইট কতবার দেখা হয়েছে, তা জানার সুবিধা যুক্ত হয়েছে যা আগে ছিল না। তাই আমাদের সিস্টেম এখন টুইটার পোস্টগুলো কতবার দেখা হয়েছে, তা জানতে পারে।”
- দূষণ সৃষ্টিকারী বা শোষণমূলক কর্মকাণ্ডের আড়ালে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সামাজিক বার্তা ছড়ানোর প্রচারণা প্রকাশ করে দিয়ে কর্পোরেট “গ্রিনওয়াশিং” ও “ওক-ওয়াশিং” উন্মোচন করা৷ হিকি বলেছেন, “জীবাশ্ম জ্বালানি পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে জড়িতরা অনেক সময় তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়াতে বা পুনরুদ্ধার করতে সামাজিক ইস্যু কাজে লাগায়; যেমন, গাড়ি বা জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপনে ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার, এলজিবিটিকিউআইএ+, বা ব্যক্তির জেন্ডার পরিচিতির মতো বিষয়ে আলোকপাত করে, যা গবেষকদের মতে এক ধরনের ওক-ওয়াশিং বা গ্রিনওয়াশিং।”
- কন্টেন্ট সার্চ ও ফিল্টার করতে ফ্রন্ট-এন্ড মনিটরিং ড্যাশবোর্ড ব্যবহার করা।
- টিকটক, ইউটিউব, টেলিগ্রাম ও পডকাস্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইংরেজি-ভাষার অডিও ট্রান্সক্রাইব করা। মেরিল বলেছেন, “বছরের পর বছর ধরে পডকাস্টগুলো আসলে ব্ল্যাক বক্স (যেখানে ইনপুট-আউটপুট ও অদেখা অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা যায়) হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।” “আপনি কি প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা স্টিভ ব্যাননের (পডকাস্টে) কথা শুনতে চান? – না। জাঙ্কপিডিয়ার কল্যাণে আমাদের কাছে এখন সেই পডকাস্টগুলো ট্রান্সক্রাইব করা অবস্থায় আছে।” হিকি আরও বলেছেন: “অর্থপূর্ণ বিষয়গুলোও আপনি বের করতে পারেন বা সচরাচর ব্যবহার হয়, এমন পরিভাষাগুলোও শনাক্ত করতে পারেন।”
- সামাজিক মাধ্যমে পাবলিক লিস্ট তৈরি করা। অস্ট্রেলিয়ার শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী বা ইউরোপে ভ্যাকসিন-ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকা সেখানেই পাবেন এবং আপনি এমন আরো তালিকা বানাতে ও শেয়ার করতে পারবেন।
- রাজনীতিবিদ ও তাদের নিজ নিজ দলের অ্যাকাউন্টগুলোর মতো নোটসহ অ্যাকাউন্টের একটি ডেটাবেস তৈরি করা।
- বিল্ট-ইন লেবেলিং টুলের মাধ্যমে আপনার লাইভ প্রকল্পগুলোর টীকা তৈরি করা৷
সাম্প্রতিক অনুসন্ধানী কেইস স্টাডি
নিকারের প্যানেলটিতে হিকির সঙ্গে ছিলেন মেরিল এবং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদক আন্দ্রেয়া ফুলার।
মেরিল বলেছেন, “ট্রাম্পের ‘ডাহা মিথ্যা’ সামাজিক মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের একটি নতুন প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছিল” শিরোনামে ২০২২ সালে তিনি যে অনুসন্ধান করেছিলেন, তাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল ছিল জাঙ্কিপিডিয়া। এতে উঠে আসে যে, ২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জালিয়াতি নিয়ে মিথ্যা দাবি ছড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে, সামাজিক মাধ্যম প্লাটফর্মগুলো পরবর্তীতে ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে আরো অনেক মিথ্যা প্রচারণা উস্কে দিতে ভূমিকা রেখেছে। অনুসন্ধানটি করতে গিয়ে মেরিল ২০২০ সালের ৭ই ডিসেম্বরে জো বাইডেন সুস্পষ্টভাবে জয়ী হওয়ার পর নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপনকারী ৭৭ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির পোস্ট ও পডকাস্ট যাচাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন।
মেরিল ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “অন্যান্য বিভেদ সৃষ্টিকারী ইস্যুগুলো নিয়ে কথা বলতে তারা এই মিথ্যার প্রভাব কাজে লাগিয়েছিল, তাই এই প্ল্যাটফর্মের সুবিধাগুলো ছিল তাদের জন্য আশীর্বাদ। বিশেষ করে, আমি গ্যাব বা গেটারের মতো স্বল্পপরিচিত প্ল্যাটফর্মের জন্য স্ক্র্যাপার তৈরি বা পডকাস্টে ডানপন্থীরা যা যা বলছে তা শোনার ব্যাপারে অত উৎসাহী ছিলাম না। তাই আমি জাঙ্কিপিডিয়ায় ফিরে এসেছিলাম।”
সম্প্রতি ফুলার ও তাঁর দল বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন কীভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করেছে, তা নিয়ে একটি অনুসন্ধান করেছে। এখানে তারা জাঙ্কিপিডিয়ার মাধ্যমে ১৫টি টেলিহেলথ সংস্থার ১,৮০০টি সামাজিক মাধ্যম বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করেছেন। এসব বিজ্ঞাপনে ঝুঁকি সম্পর্কে কোনো সতর্কবানী দেওয়া হয়নি এবং অনুমোদনবিহীন ব্যবহারের প্রচারণাও চালানো হয়েছিল ৷
ফুলারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে, মার্কিন ওষুধ বিপণন বিধিমালার লঙ্ঘন করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা বিজ্ঞাপনে ক্রেতার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
ফুলারের ব্যাখ্যায় উঠে আসে: “ফেসবুক অ্যাড লাইব্রেরির একটি এপিআই রয়েছে, তবে তা কেবল রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের জন্য প্রযোজ্য, কিন্তু আমাদের আগ্রহ ছিল কর্পোরেট বিজ্ঞাপনে; বিশেষ করে কিছু টেলিহেলথ কোম্পানির। তারা এমন সামগ্রী বিক্রি করতো যেগুলোর ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত। তিনি বলেন, “আমরা যে বিজ্ঞাপনগুলো সংগ্রহ করছিলাম, জাঙ্কিপিডিয়া সেগুলোর সব ডেটা ও তাদের সংগৃহীত ছবিগুলোর লিঙ্ক দিয়েছিল এবং আমরা যে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলাম, সেগুলোর ডেটা জোগাড় করেছিল৷ আমরা প্রায় ৪,০০০ বিজ্ঞাপন পেয়েছিলাম এবং সেগুলোর কোড করেছিলাম অনেকটা এভাবে: ‘এই বিজ্ঞাপনটিতে একটি নিয়ন্ত্রিত সামগ্রীর নাম রয়েছে; এই বিজ্ঞাপনে একজন অভিনেতা গ্রাহকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন৷”
জাঙ্কিপিডিয়ার সীমাবদ্ধতা ও বিকল্প
হিকি বলেছেন, টুলটির বৈশ্বিক প্রসার এটির ব্যবহারকারীদের ইনপুট নির্ভর। তিনি উল্লেখ করেছেন, “এটি জার্মানী ও অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে – এটি প্রায় সর্বত্র ব্যবহার করা যায়, তবে ক্ষমতা ব্যবহারকারীদের হাতে।”
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন যে, সব সামাজিক পর্যবেক্ষণে জাঙ্কিপিডিয়া ব্যাপকভাবে ব্যবহারযোগ্য টুল নয়।
হিকি স্বীকার করেন যে, “এমন আরও অনেক টুল আছে, যেগুলো আরও ব্যাপক ডেটাসেট সংগ্রহ করে। যেমন, ক্রাউডট্যাঙ্গেলের আরও কিছু ডেটা রয়েছে যা সেগুলোর এপিআই থেকে আসে না, তাই আমরা সেগুলো সংগ্রহ করি না।”
মেরিল বলেছেন, “কিছু ক্ষেত্রে আমরা যে প্রশ্নগুলো জানার চেষ্টা করছি, জাঙ্কিপিডিয়ার কাছে সেগুলোর উত্তর নেই।”
জাঙ্কিপিডিয়া যা পারে না, সেসব ক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যম স্ক্র্যাপিংয়ে সাংবাদিকদের জন্য মেরিলের পরামর্শ:
- এসএনস্ক্র্যাপ: এই কমান্ড-লাইন টুল কোনো নির্দিষ্ট টুইটার পেজ থেকে সব কন্টেন্ট স্ক্র্যাপ করতে টুইটার থেকে লগ-আউট করা ব্যবহারকারীর মতো কাজ করতে পারে। মেরিল বলেছেন, “এটি ওপেন সোর্স, তাই অভিনব কিছু করতে চাইলে আপনি তা সংশোধন করতে পারেন। টুইটারে লগ-আউট অবস্থায় ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে যা যা দেখা যায়, সেসব তথ্যের ক্ষেত্রে এসএনস্ক্র্যাপ বেশ কাজের।”
- স্ম্যাট অ্যাপ: জাঙ্কিপিডিয়া ফোরচ্যান, এইটকুন, ও পার্লারের এর মতো স্বল্পপরিচিত সামাজিক মাধ্যম সাইটগুলো নিয়ে কাজ করে না। এগুলোর পোস্ট সার্চ ও বিশ্লেষণ করতে পারে এই অ্যাপটি।
- ওয়েব্যাকপ্যাক: এই কমান্ড-লাইন টুল নির্দিষ্ট ইউআরএল-এর জন্য গোটা ওয়েব্যাক মেশিন আর্কাইভ ডাউনলোড করতে পারে। মেরিল একটি হালনাগাদ ফিচার সম্বলিত “ওয়েব্যাকপ্যাকটু” সম্পর্কে বলেছেন, যা সামাজিক মাধ্যমে পূর্ববর্তী তারিখে পরিবর্তিত সংখ্যাও খুঁজে পেতে পারে, যেমন কোনো অ্যাকাউন্টের দাবিকৃত ফলোয়ারের সংখ্যা হুট করে অনেক বেশি বেড়ে যাওয়া।
হিকি আরও বলেছেন, স্ক্র্যাপিং টুলের সুবিধাসম্পন্ন সাংবাদিকদের এর ব্যবহার নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। সাধারণত বিশ্বের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্ক্র্যাপিংকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এর নীতিমালা জটিল হতে পারে। হিকি বলেছেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টের সব ডেটা স্ক্র্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে নৈতিক ঝুঁকি কম মনে হলেও কিশোর-কিশোরীদের অনেক টিকটক ভিডিও এবং তাদের মন্তব্য স্ক্র্যাপিংয়ের ক্ষেত্রে ভিন্ন নৈতিক প্রশ্ন সামনে আসে।” মূল বিষয় হলো টুল হিসেবে স্ক্র্যাপিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কখন, তা ঠিক করা। “চাপ ও হুমকির কাছে মাথা নত না করা।”
আরও পড়ুন
টিপস ফর মাইনিং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইথ হেঙ্ক ভন এস
কন্টেন্ট বিতরণ ও পাঠক সম্পৃক্তি বাড়াতে সোশ্যাল মিডিয়ার সর্বোচ্চ ব্যবহার যেভাবে করবেন
জিআইজেএন টুলবক্স: ক্রাউডট্যাঙ্গল, ইকোসেক ও সোশ্যাল মিডিয়া সার্চ
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।