এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে থাকার পর নির্বাহী পরিচালক ডেভিড কাপলান ঘোষণা করেছেন যে তিনি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর পদ থেকে অবসরে যাবেন।
২০০৩ সালে যে ৩০টি সদস্য সংগঠন নিয়ে জিআইজেএন প্রতিষ্ঠিত হয়, তাদের একটির প্রতিনিধি ছিলেন কাপলান এবং ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি প্রথম পূর্ণকালীন নির্বাহী পরিচালক হন।
জিআইজেএনের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ব্র্যান্ট হিউস্টন বলেছেন, “বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও নেটওয়ার্কিংয়ের প্রধান সংগঠন হিসেবে জিআইজেএনের বিকাশে ডেভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা ৯০টি দেশে ২৪৪টি গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট অলাভজনক সংস্থার একটি জোট তৈরি করেছি, যা আইডিয়া, রিসোর্স, স্টোরি এবং পদ্ধতিগত দুর্নীতি উন্মোচন ও কল্যাণের জন্য বিশ্বকে বদলে দেওয়ার ইচ্ছা ছড়িয়ে দেয়।”
“একটি বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে একদল অসাধারণ মানুষের সমর্থনে এটি একটি অসাধারণ কাজ,” বলেন কাপলান। “বিশ্বজুড়ে এত প্রতিভাবান, প্রতিশ্রুতিশীল ও সাহসী সাংবাদিকদের সঙ্গে কাজ করাটা সম্মানের বিষয়। আমরা প্রতিদিন অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের প্রভাব দেখেছি।”
কাপলানের অধীনে জিআইজেএনের অর্জন:
- বিনা তহবিলের একটি শিথিল নেটওয়ার্ককে ২.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বার্ষিক বাজেট ও ২৪টি দেশে কর্মী সমৃদ্ধ একটি বৈশ্বিক অলাভজনক সংস্থায় পরিণত করা।
- আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও গণতন্ত্রে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ভূমিকা পালনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা। জিআইজেএন ও এর সদস্য সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ও বড় বড় ফাউন্ডেশনগুলোর সামনে একটি গ্রহণযোগ্য নজির স্থাপন করেছে যে ভালো বিদ্যালয়, সৎ বিচারক ও সুষ্ঠু অর্থনৈতিক নীতির মতই জবাবদিহিমূলক সাংবাদিকতা উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
- এক ডজন ভাষায় সামাজিক মাধ্যম ও ই-নিউজলেটারের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে উদ্যোগী সাংবাদিকদেরকে যুক্ত করে একটি বৈশ্বিক “নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক” তৈরি করা। ২০১২ সালে কয়েকশ ফলোয়ার থেকে জিআইজেএনের আজ বিশ্বব্যাপী চার লাখেরও বেশি সামাজিক মাধ্যম ফলোয়ার রয়েছে, যারা প্রতিদিন কৌশল, পরামর্শ ও সুযোগের সর্বশেষ খবর পান।
- বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের পদ্ধতি ও মানদণ্ড পৌঁছে দেয়া। ২০১২ সাল থেকে জিআইজেএন তাদের সম্মেলন, কর্মশালা ও ওয়েবিনারে ১৫ হাজারেরও বেশি সাংবাদিককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের অনুবাদ কর্মসূচিতে ৩২টি ভাষায় মৌলিক প্রশিক্ষণ সামগ্রী তৈরি করা হয়েছে।
- মূলত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ৪৯টি অলাভজনক সংস্থা থেকে জিআইজেএনের সদস্যপদ পাঁচগুণ বাড়িয়ে ৯০টি দেশে ২৪৪টি সংগঠনে উন্নীত করা, যেগুলোর অর্ধেকেরও বেশি রয়েছে উন্নয়নশীল বা রূপান্তরশীল দেশগুলোতে৷
- বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের জন্য বিনামূল্যে হেল্প ডেস্ক চালু করা, যা ২০১২ সাল থেকে প্রায় ১৫,০০০ সহায়তার অনুরোধে সাড়া দিয়েছে।
- জিআইজেএনের গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সের আকার তিনগুণ করা, এশিয়ান ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্স চালু করা এবং বিশ্বব্যাপী আঞ্চলিক সম্মেলনে সমর্থন জোগানো। ২০১৩ সাল থেকে জিআইজেএন তাদের সম্মেলনে যোগদানের জন্য উন্নয়নশীল ও পরিবর্তনশীল দেশগুলোর সাংবাদিকদের ১,০০০টিরও বেশি ফেলোশিপ দিয়েছে।
- দেড় হাজারের বেশি টিপ শীট, রিপোর্টিং গাইড ও ভিডিও সহ একটি বহুভাষিক রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা, যা প্রতিদিন ১৪০টি দেশের সাংবাদিকেরা ব্যবহার করতে পারেন।
কাপলান বলেছেন, “আমরা একসঙ্গে যা করেছি, তার জন্য আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ ও গর্বিত। এত মানুষের সমর্থন, লক্ষ্য ও অঙ্গীকার না থাকলে জিআইজেএন আজ কখনোই এখানে পৌঁছাতে পারত না — এই নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা ব্রান্ট হিউস্টন ও নিলস মুলভাদ; জিআইজেএনের কর্মীবৃন্দ, বিশেষ করে উপ-পরিচালক গ্যাবি ম্যানুলি, যাঁরা শুরু থেকেই আমার সঙ্গে ছিলেন; আমাদের পরিচালনা পর্ষদ, সদস্য সংস্থা, দাতা, এবং বিশ্বব্যাপী বন্ধু ও সহযোগীবৃন্দ। তাঁদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।”
কাপলান আরও বলেন, “আমাদের বৈশ্বিক দলটি এত প্রাণবন্ত ও বৈচিত্র্যময় হতে পেরেছে তাঁদের আন্তরিক চেষ্টার কারণেই।”
২০২৩ সালের ১৯ থেকে ২৩শে সেপ্টেম্বরে সুইডেনের গোথেনবার্গে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ২০২৩ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে কাপলান বিদায় জানাবেন।
হিউস্টন বলেছেন, কাপলান বিনয়ের সঙ্গে তাঁর বিদায়ের বিষয়টি আমাদের আগেভাগেই জানিয়েছেন। তাই অবিলম্বে একজন নতুন নির্বাহী পরিচালকের খোঁজ করা হবে।
“সামনের সময়ে জিআইজেএনকে নেতৃত্ব দেয়ার মত একজন উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়া মোটেও সহজ নয়,” হিউস্টন বলেছেন। “আমরা মনে করি, এই পদে সঠিক মানুষ খুঁজে পেতে কয়েক মাস লেগে যাবে আর আমরা নতুন নির্বাহী পরিচালককেও বুঝে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে চাই।”
কাপলান বলেছেন, তিনি নতুন নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা, আর তারপর গান শোনা, রান্না করা ও ঘুরে বেড়িয়ে প্রিয় অবসর যাপনে আরও বেশি সময় কাটানোর জন্য মুখিয়ে আছেন। তিনি বলেন, “এখন ব্যস্ততা কিছুটা কমানোর সময়। এই দুর্দান্ত কর্মী বাহিনী, যাঁদের আমরা এক সুঁতোয় বেঁধেছি, আমি তাঁদের অভাব বোধ করব, আর বিশ্বজুড়ে সহকর্মীদের সহায়তা করার প্রতিদিনের পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হব। কিন্তু আলোকবর্তিকা হাতবদলের এটাই সময়।”