যুক্তরাষ্ট্রের ডাবল এক্সপোজার (ডিএক্স) চলচ্চিত্র উৎসবের বার্ষিক আয়োজনে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও প্যানেল আলোচনার মূল বিষয় ছিল গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি নিয়ে নির্মিত অনুসন্ধানী তথ্যচিত্রগুলো।
জিআইজেএনের সদস্য সংগঠন হান্ড্রেড রিপোর্টার্সের পৃষ্ঠপোষকতায় ডিএক্স ২০২২-এর চার দিনব্যাপী হাইব্রিড আয়োজনে, কলেজে র্যাগিং থেকে শুরু করে আফগানিস্তান থেকে তাড়াহুড়ো করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে ১২টি সাড়া জাগানো অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র ও ছয়টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হয়। আর ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান, যেখানে উপস্থিত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র পরিচালকেরা তাঁদের কাজের পদ্ধতি ও প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কথা বলেন।
কয়েকটি চলচ্চিত্র এমন সব ঘটনার সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করেছে, যা যেকোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশেই কল্পনাতীত। যেমন: রায় নিয়ে মাফিয়া নেতাদের সঙ্গে উচ্চ আদালতের বিচারকদের শলা-পরামর্শ; সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে অনুসন্ধানের লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তিদের কাছে সাংবাদিকদের বাড়ির ঠিকানা প্রকাশ করে দেওয়া; গোপনে সরকারের সমালোচনার অভিযোগে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক সাধারণ কিশোরদের দায়ী করা। তথ্যচিত্রগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে ওঠে৷
মিয়ানমার ডায়েরিজ”-এর প্রযোজক করিন ভ্যান এগেরাত বলেছেন, “গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া এবং তা আবারও হাতছাড়া হওয়ার অনুভূতি কেমন হয়, তা আমি মিয়ানমারের নাগরিকদের কাছ থেকে জেনেছি।” ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানে দূর্বল প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের পতনের পর থেকে এশিয়ার এই দেশটির জীবন ও প্রতিরোধের গল্প তুলে ধরেছে মিয়ানমার ফিল্ম কালেক্টিভের এই চলচ্চিত্র।
একই ধরনের বিষয়বস্তু নিয়ে উৎসবে জায়গা পাওয়া অন্য দুটি চলচ্চিত্র হলো: “দ্য নিউ গ্রেটনেস কেস” ও “দ্য কিলিং অব এ জার্নালিস্ট।” প্রথমটি অনলাইন চ্যাট গ্রুপে মত প্রকাশের দায়ে সাধারণ রুশ তরুণদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিচারিক কার্যক্রমের ঘটনাগুলোকে নথিবদ্ধ করেছে; অপরটি স্লোভাকিয়ার অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ইয়ান কুসিয়াকের হত্যাকাণ্ড এবং দেশটির সরকারে সংক্রমিত মাফিয়া-ধাঁচের দুর্নীতি উন্মোচন করেছে।
ডাবল এক্সপোজারের প্রতিষ্ঠাতা ও সহ-পরিচালক ডায়ানা জিন স্কিমো জানান, “আমাদের চোখে পড়েছে, এই উৎসবে নির্বাচিত কয়েকটি তথ্যচিত্র কয়েকটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের ব্যর্থতার প্রমাণ তুলে ধরেছে। মানুষ একাত্মতা বোধ করতে পারে এমনভাবে এত বড় একটি পরিবর্তনকে কীভাবে ধারণ করবেন?”
“মিয়ানমার ডায়েরিজ”-এর শুরুর দৃশ্যে একটি পিলে চমকানো তুলনা তুলে ধরা হয়: ২০২১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি, শরীরচর্চা প্রশিক্ষণ ক্লাসের একটি ঘরে-তোলা ভিডিওচিত্রের পটভূমিতে দেখা যাচ্ছিল, সরকারের পতন ঘটাতে শহরের ভেতর দিয়ে সামরিক যান চলাচল করছে। পরবর্তী মাসগুলোতে সামরিক জান্তাদের সহিংসতা ও দমন-পীড়নের ছবি ছাড়াও, হঠাৎ থমকে যাওয়া একটি সমাজের গণবিক্ষোভ, নাগরিকদের অসহযোগ এবং একান্ত ব্যক্তিগত সব গল্পও তুলে এনেছে চলচ্চিত্রটি। এতে আরও দেখা যায়, সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিবেশিদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রান্নাঘরের জানালার বাইরে থালাবাসন দিয়ে সজোরে আঘাত করছে। পশ্চিমারা তাদের সমাজে যেসব যেসব সমস্যার মুখে পড়েন তার তুলনায় গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আসলে কতটা ভালো এবং একই সঙ্গে কতটা ভঙ্গুর হতে পারে, পশ্চিমা দর্শকদের সেটাই গুরুত্বের সঙ্গে মনে করিয়ে দেয় “মিয়ানমার ডায়েরিজ।”
ডাচ চলচ্চিত্র নির্মাতা ভ্যান এগেরাত বলেছেন, “আমি ও আমার স্বামী ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে ছিলাম। সেসময় আমরা গণতন্ত্রের উত্তরণ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলাম আর তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের শেখানো শুরু করেছিলাম।” তিনি বলেন, “স্বাধীনতার স্বাদ বঞ্চিত তরুণদের আশেপাশে থাকার অভিজ্ঞতাটি দুর্দান্ত। দেশটিতে ইন্টারনেট সবে চালু হয়েছে; এমনকি সেখানে একটি হিউম্যান ফ্লাইট ফিল্ম ফেস্টিভালও আয়োজন হয়েছিল। কিন্তু অভ্যুত্থানের দিন থেকেই সামরিক জান্তা নিজেদের জনগণকেই আতঙ্কের মধ্যে রেখেছে।”
কারাগারে নাভালনিকে নিপীড়ন
ড্যানিয়েল রোহের “নাভালনি” প্যানেল আলোচনার মধ্য দিয়ে ডিএক্স আলোচনাচক্র শুরু হয়েছিল। রাশিয়ার নির্যাতিত বিরোধী-নেতাকে নিয়ে নির্মিত এই তথ্যচিত্র দেখানো হয় ১২ অক্টোবর, সিএনএনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উৎসব-পূর্ব আয়োজনে। প্যানেলের আলোচকদের মধ্যে ছিলেন অ্যালেক্সি নাভালনির অ্যান্টি-করাপশন ফাউন্ডেশনের প্রধান অনুসন্ধানকারী মারিয়া পেভচিক, যিনি ২০২১ সালে জিআইজেএনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন।
২০২০ সালে নাভালনির ওপর বিষ প্রয়োগের ঘটনায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে রুশ সরকারের সম্পৃক্ততা তুলে ধরতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা যে কৌশলগুলো ব্যবহার করেছিলেন এই চলচ্চিত্রটি তার-ই রূপরেখা তুলে ধরেছে।
উৎসব চলাকালে পেভচিক রাশিয়ার সর্বোচ্চ সুরক্ষিত কারাগারে একাধিক মিথ্যা অভিযোগে ১১ বছরেরও বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত নাভালনির চিকিৎসার সর্বশেষ তথ্য নিয়ে সরাসরি সম্প্রচারে এসেছিলেন। তিনি তাঁর বিশদ বর্ণনায় বলেন, “কয়েকদিন আগেই তিনি নির্জন কারাবাস থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, কিন্তু গতকালই তাঁকে আবার সাজা দেয়া হয়েছে আর কারাগারের দেয়াল পরিষ্কারে অস্বীকৃতি জানানোয় তাঁকে পানিশমেন্ট সেল নামে পরিচিত একটি বিশেষ কারাগারে পাঠানো হয়েছে।” পেভচিক আরও বলেন, তিনি ৪৩ দিন এই পানিশমেন্ট সেলে কাটিয়ে ফেলেছেন — দুই মিটার চওড়া, তিন মিটার দীর্ঘ একটি কক্ষ, সঙ্গে একটি মগ, একটি বই আর একটি টয়লেট, যেখানে হেলান দেয়ার কোনো উপায় নেই। এমনকি সকাল ৬টা থেকেই বেঁধে রাখায় বিছানায় বিশ্রাম নেয়ারও কোনো উপায় নেই। তাঁকে সেখানে পাঠানোর কারণ যে কত নগন্য হতে পারে তার একটি উদাহরণ: তার কারাগারের পোশাকে একটি বোতাম লাগানো ছিল না, অথচ পোশাকটির মাপই তার তুলনায় বেশ ছোট।”
অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও “দ্য কিলিং অব এ জার্নালিস্ট” প্রকল্পের অংশীদার ড্রিউ সুলিভান বলেছেন, তিনি আশা করেছিলেন, এই চলচ্চিত্র স্লোভাকিয়ার নাগরিক ও সাংবাদিকদের জন্য একটি “জেগে ওঠার ডাক” হিসেবে আবির্ভূত হবে। চলচ্চিত্রটি ২০১৮ সালে স্লোভাকিয়ায় সাংবাদিক ইয়ান কুসিয়াক ও তাঁর বাগদত্তা মার্টিনা কুশনিরোভা হত্যার পেছনে সীমাহীন দুর্নীতির চিত্রকে প্রকাশ্যে এনেছে।
সুলিভান বলেছেন, “গণতন্ত্র একটি বাগানের মতো, এবং এটির পরিচর্যা করতে হয় – আর আমার মতে, স্লোভাকিয়ার জনগণ একটা সময়ের জন্য তা ভুলে গিয়েছিল। উন্নত জীবনযাত্রায় তারা এতটাই মজে ছিল যে বুঝতে পারেনি, তলে তলে সেই বাগান পচে যাচ্ছে, এবং একটি সংগঠিত অপরাধী চক্র দেশ বেচে দিয়ে সত্যি সত্যিই সরকারের চালকের আসনে বসেছে।”
গণতন্ত্রের মৃত্যু যেভাবে নথিবদ্ধ করবেন
“গণতন্ত্রের মৃত্যু” শীর্ষক তথ্যচিত্র অধিবেশন থেকে পাওয়া কিছু ব্যবহারিক পরামর্শ:
- অনলাইনে নাগরিকদের পোস্ট করা কন্টেন্ট বুঝতে সেগুলো অনুবাদ করুন। ভ্যান এগেরাত বলেছেন, তাঁর দল মিয়ানমারের প্রতিরোধ নিয়ে অনলাইনে প্রকাশিত ভিডিও কন্টেন্টের সংখ্যা দেখে অবাক হয়েছিল। অথচ এসব কিছু বাইরের সাংবাদিকদের নজরে পড়েনি। বিষয়টি তিনি খোলাসা করে বলেন, “আমরা দেখেছি, মিয়ানমারে অনলাইনে প্রচুর নাগরিক সাংবাদিকতার ফুটেজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে – অথচ এগুলো নিয়মিত সংবাদ প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হচ্ছে না, কারণ এগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়নি।”
- অন্যান্য অনুসন্ধান বা প্রথিতযশা স্থানীয় সংবাদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় সোর্সের সঙ্গে বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করুন। ইয়ান কুসিয়াক ও তাঁর বাগদত্তার হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিজের প্রকল্প নিয়ে সুলিভান বলেছেন, “বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করুন যেন মানুষের মনে বিশ্বাস জন্মায় যে, এই সাংবাদিকেরা সত্যিই আমাদের তথ্য কাজে লাগাবে। এই বিশ্বাসের বলেই আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি। আমরা দেখেছি, অন্যদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা, এবং অন্যান্য স্টোরি করা অব্যাহত রাখা ও দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরিতে সাহায্য করেছে, ফলে মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।”
- আপাতদৃষ্টিতে ছোট আদালতের মামলা, গ্রেপ্তার ও ভিন্নমত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নজরদারিতে মনোযোগ দিন। ২০১৭ সালে টেলিগ্রামে চ্যাটের অভিযোগে ১০ যুবককে যখন বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল, রুশ অনুসন্ধানী প্রতিবেদক ভাসিলি পোলোনস্কি তখন আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন আর সেই বিচার প্রক্রিয়ার নথিবদ্ধ করেছেন। এটি তাঁর “দ্য নিউ গ্রেটনেস কেস” চলচ্চিত্রটি তৈরিতে কাজে এসেছিল। স্মৃতি হাতড়ে পোলনস্কি বলেন, “কেউ জানত না এই মামলায় কী হতে যাচ্ছে, কিন্তু ঘটনাচক্রে প্রথম শুনানিতে আমি আদালতে উপস্থিত ছিলাম।”
- স্বৈরশাসনের অবসানের সময় পাঠকশ্রোতার প্রত্যাশার চাপ সামলান। সুলিভান জোর দিয়ে বলেন, আগের কর্তৃত্ববাদী শাসনামলের ব্যক্তি ও নীতিমালা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনকে সামনে রেখে সাংবাদিকদেরকে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রকৃত কারণগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে।
২০২২ ডিএক্স ফেস্টিভালের উল্লেখযোগ্য ছয় চলচ্চিত্র
“মিয়ানমার ডায়েরিজ”
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অংশীদারদের সহায়তায় ১০ জন অজ্ঞাতনামা বার্মিজ চলচ্চিত্র নির্মাতা তাঁদের নির্মিত চলচ্চিত্রে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান পরবর্তী সহিংস দমনপীড়ন ও নাগরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা তুলে ধরেন। ১০ নির্মাতার পাঁচজন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। তাঁরা নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় ক্রেডিট লাইনে নাম দেননি ৷ এই চলচ্চিত্রে নাগরিক সাংবাদিকদের কাছ থেকে পাওয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রাপ্ত ভিডিও ক্লিপগুলো অনুসন্ধান ও অনুবাদ করা হয়। এছাড়া চলচ্চিত্রটি সাহসী প্রতিবাদ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধের প্রশিক্ষণের প্রমাণও তুলে ধরে৷
“দ্য গ্র্যাব”
ডিএক্স ২০২২-এর জমকালো সূচনা পর্বে অর্থের গতিপথ অনুসরণ নিয়ে নির্মিত এই জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ তথ্যচিত্রটি পুরস্কৃত হয়েছে। পুরস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্যাব্রিয়েলা কোপার্থওয়েট চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন। সরকারি উদ্যোগে “স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ভোগান্তিতে ফেলে” সবার আড়ালে খাদ্য ও পানির উৎসগুলোর দখল নিয়ে সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টিংয়ের আট বছর মেয়াদী অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে এই চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর শুরুটা হয় ২০১৪ সালে, চীন সরকারের অর্থায়নে আমেরিকার স্মিথফিল্ড হ্যামসকে কিনে নেওয়ার পর থেকে, যে ঘটনার ফলে আমেরিকার প্রায় ২৫% শূকরের মালিক বনে যায় চীন। এরপর ফাঁস হওয়া এক গুচ্ছ কর্পোরেট নথি ব্যবহারে মাধ্যমে গোটা বিশ্বে একই রকমের সরকার-সমর্থিত চুক্তিগুলোকে উন্মোচন করা হয়, যেগুলোর নির্মম লক্ষ্যবস্তু ছিল বিদেশি সম্পদ।
“দ্য কিলিং অব এ জার্নালিস্ট”
ওসিসিআরপি এবং ফাইনাল কাট ফর রিয়েলের প্রযোজনায় এই চলচ্চিত্র ২০১৮ সালে স্লোভাকিয়ায় অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইয়ান কুসিয়াক ও তাঁর বাগদত্তা মার্টিনা কুশনিরোভা হত্যার ঘটনা সামনে আনে আর এই ঘটনার নেপথ্যে থাকা মাফিয়া-ধাঁচের সরকারি দুর্নীতি ফাঁস করে। এর পিলে চমকানো উন্মোচনগুলোর একটি হলো, বিচারকেরা সংগঠিত অপরাধীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, এ ধরনের মামলাগুলোতে তাদের কেমন রুল জারি করা উচিত।
“দ্য নিউ গ্রেটনেস কেস”
আনা শিশোভা পরিচালিত এই তথ্যচিত্রটি বার্তা আদান প্রদানের প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামের চ্যাট গ্রুপের সদস্যদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার প্রথম ফৌজদারি মামলার ঘটনাটিকে অনুসন্ধান করে। এই নজির স্থাপনকারী মামলায় অভিযুক্ত ১০ যুবক কেবল পরিবেশ নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করেছিল, অথচ তারা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছে। একজন ডিএক্স মডারেটর যেমনটা বলেছেন: ১৭ বছর বয়সী একজন অভিযুক্তের চেহারায় যে ( নিচের ট্রেলারে যেমনটা দেখা যায়) ভয় ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব ফুটে উঠে, তা বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের শিকার সকল ভুক্তভোগীর প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে।
“মারিউপোলিস ২”
২০১৬ সালে ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলে বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন লিথুয়ানিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মানতাস কেভেদারাভিসিয়াস। ২০২২ সালের গোড়ার দিকে নতুন করে রুশ আগ্রাসনের বিষয়গুলো নথিবদ্ধ করতে তিনি সেখানে ফিরে যান, এবং যুদ্ধে নিহত হন। এই নতুন চলচ্চিত্রটিতে সেই অসমাপ্ত সাহসী কাজটিকে সম্পন্ন করেছেন তাঁর সহযোগীরা। তুলে ধরেছেন, অবিরাম হামলার শিকার একটি শহরের ট্র্যাজেডি ও বীরত্বগাঁথা।
“রেট্রোগ্রেড”
অস্কার-মনোনীত চলচ্চিত্র নির্মাতা ম্যাথু হাইনেম্যান পরিচালিত “রেট্রোগ্রেড” চলচ্চিত্রে আফগানিস্তান থেকে তাড়াহুড়ো করে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং স্থানীয় সৈন্য, গাড়িচালক ও দোভাষীদের ওপর এর প্রভাব তুলে ধরা হয়, যারা কিছু বুঝে উঠার আগেই নিজেদের তালেবান শাসনের অধীনে আবিষ্কার করেন। এই চলচ্চিত্র মার্কিন গ্রিন বেরেট সৈন্য, তাদের স্থানীয় মিত্রদের পরিবার এবং এক হতাশাগ্রস্ত আফগান জেনারেলের অসহনীয় প্রতিকূলতা তুলে ধরেছে।
ডিএক্স-এর অন্যান্য দুর্দান্ত অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র:
- “আমেরিকান পেইন” – অক্সিকোডোন পাচার নিয়ে ড্যারেন ফস্টারের তথ্যচিত্র।
- “বডি পার্টস” – নারী অভিনয়শিল্পীদের “পুরুষের দৃষ্টিতে যৌনবস্তু হিসেবে উপস্থাপনের প্রবণতার” নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে ক্রিস্টি গেভারা-ফ্লানাগানের নির্মাণ।
- “হেজিং” – কলেজ চত্বরে অবমাননাকর ও বিপজ্জনক আচার শেখানোর চর্চা নিয়ে বায়রন হার্টের চলচ্চিত্র।
- “ইনটু দ্য উইডস” – একটি বড় রাসায়নিক কোম্পানি সৃ্ষ্ট স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে জেনিফার বাইচওয়ালের চলচ্চিত্র।
- “প্রে ফর আওয়ার সিনার্স” – অবিবাহিত মায়েদের ওপর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নিপীড়ন নিয়ে সিনিয়াড ও’শিয়ার চলচ্চিত্র।
“দ্য কিলিং অব এ জার্নালিস্ট” এর একটি দৃশ্যে, ইয়ান কুসিয়াকের হত্যার প্রতিবাদে এক বিশাল স্লোভাকিয় জন সমাবেশে লাউডস্পিকারে নিম্নলিখিত ভাষ্য শোনা যায়: “এমনকি সবচেয়ে সাহসী সাংবাদিকও একা গণতন্ত্রের মুক্তির দূত হতে পারেন না!”
ভ্যান এগেরাত বলেছেন: “আসুন আমরা সবাই গণতন্ত্র নামের এই বাগানের মহান পরিচর্যায় নেমে পড়ি এবং সাংবাদিকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াই।”
আরও পড়ুন
২০২২ ডিগ ফেস্টিভাল অ্যাওয়ার্ড: তথ্যচিত্রে উঠে আসা গোপন বাহিনী, গুপ্ত হত্যা ও স্বৈরশাসকের পতন
নাভালনিকে বিষপ্রয়োগে জড়িত গুপ্তচরদের যেভাবে উন্মোচন করেছেন সাংবাদিকরা
ডাবল এক্সপোজার ফিল্ম ফেস্ট শোকেসেস ডকুমেন্টারি ট্রেডক্রাফট
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশ প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।