নবীন সাংবাদিক হিসেবে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করা মোটেও সহজ নয়। তবুও, বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বাড়ছে, আর বিশ্বজুড়ে অনেক শিক্ষার্থী তাঁদের একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি প্রভাব বিস্তারকারী, সাড়া জাগানো স্টোরি তৈরি করছে। এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ সাইটগুলো এই শিল্পে হাত পাকানোর মোক্ষম সুযোগ করে দিচ্ছে, এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর গুরুত্বপূর্ণ সূত্র খোঁজার উর্বর ভূমি হয়ে উঠেছে।
পশ্চিমা বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়-কেন্দ্রিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কেন্দ্রগুলো গড়ে উঠছে ক্যাম্পাসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় প্রধান সব সাংবাদিকতা স্কুল, নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অফ বার্গেন, কানাডার ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অফ উইটওয়াটার্সরান্ড এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷ (যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাস-ভিত্তিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যে কতটা গভীর হতে পারে, তা দেখতে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন ইনভেস্টিগেটিভ রিপোটার্স অ্যান্ড এডিটর্স-এর বাৎসরিক স্টুডেন্ট অ্যাওয়ার্ডে।)
তবে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের অত্যাবশ্যকীয় সমর্থন না পেলে, শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে পারেন। অনুসন্ধানের বিষয় যখন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়, বিশেষ করে আমলাতান্ত্রিক একাডেমিক ব্যবস্থার সচরাচর ব্যর্থতার দিকে যখন নজর দেয়া হয়, তখন জটিলতায় বাড়তি মাত্রা যুক্ত হয়।
তারপরও, এমন অনেক নজির আছে, যেখানে রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত অনেক শিক্ষার্থী তাঁদের নিজ প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পান। আবার অনেকে সরাসারি বিরোধিতার মুখে না পড়লেও অসহযোগিতার শিকার হন।
বিশ্বের অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীদের পত্রিকা আছে যা আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বাধীন সম্পাদকীয় নীতি দ্বারা পরিচালিত। তবে এমনও অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে অর্থায়নের সমস্যা, নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার্থীদের করা প্রতিবেদনের ওপর আস্থার ঘাটতি, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে, সহিংস শারীরিক হামলার শিকার হওয়ার নজির মিলবে। যেমন, রাশিয়ার মস্কোতে সমাবেশের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানিয়ে রিপোর্ট করার কারণে শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের দু’বছরের “সংশোধনমূলক শ্রমের” দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর চীনে, সম্প্রতি এক বিখ্যাত শিক্ষার্থী প্রতিবেদককে কোনো ধরনের আইনি সহায়তার সুযোগ ছাড়াই একটি গোপন “কালো কারাগারে” আটকে রাখা হয়েছিল।
ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকদের যেসব চাপের মুখে পড়তে হয় তা জানতে জিআইজেএন গোটা বিশ্বের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী-সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা শুরু করি আফ্রিকা থেকে; সেখানে শিক্ষার্থী রিপোর্টিং দ্রুতই সাংবাদিকতার বিকাশের মূল স্তম্ভ হয়ে উঠলেও, সংশ্লিষ্টরা ব্যাপক দমনপীড়ন ও বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরেছেন।
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুুঁকি ও প্রয়োজনীয় টুলের ঘাটতি
দক্ষিণ আফ্রিকার ইউনিভার্সিটি অফ উইটওয়াটার্সরান্ডের সাবেক শিক্ষার্থী অনুসন্ধানী রিপোর্টার, নন্ডু লেহুতসো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় উদ্যোগী হয়েছিলেন “মূলত সমস্যার গভীরে যেতে, যেন সচেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বোঝাপড়া তৈরিতে জনসাধারণকে সাহায্য করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থী হিসেবে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করা বেশ কঠিন, কারণ আপনি এখনো বয়সে তরুণ, এখনো সাংবাদিকতায় নিজের জায়গা খুঁজছেন। আপনাকে নিজের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার কথাও ভাবতে হবে।”
আপনার নিকটজনের সুরক্ষার চিন্তাও বাড়তি চাপ তৈরি করে – ভয় হয়, পাছে কোনো ভুল না হয়, লেহুতসো যোগ করেন।
“আমি মনে করি, কোনো স্টোরি সত্যিই নেয়ার মত কি না, আর একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবেন কি না এবং আপনার কাছের মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে সুরক্ষা দিতে পারবেন কি না, তা ঠিক করার উপায় জানাটাই কঠিন।”
যেমন, লেহুতসো বলেছেন, গত বছরের মার্চে ছাত্র-বিক্ষোভ নিয়ে রিপোর্ট করার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ তাঁকে গুলি করে। “সক্রিয় সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি থাকলেও প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমাকে উপস্থাপন করা হয়েছিল,” তিনি দাবি করেন। “পুলিশের অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে আমাকে লক্ষ্য করে দু’বার গুলি করা হয়েছে।”
ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী রিপোর্টার ও উগান্ডার মেকেরেরে ইউনিভার্সিটির ফ্যাক্ট-চেকার রিগান কিয়িমবা বলেন, মূলধারার সংবাদমাধ্যমে যুক্ত না থাকলে শিক্ষার্থীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন।
“পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে সনাক্ত করার মত কোনো পরিচয়পত্র না থাকলে মানুষ আপনাকে তথ্য দিতে ভয় পাবে, আর আপনার ওপর আস্থা হারাবে,” তিনি উল্লেখ করেন। “আপনি একটি এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার ঠিক করলেন, কিন্তু মানুষ আপনাকে দেখবে এমনভাবে যেন আপনি জনসাধারণের কাছে সেই তথ্য পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট সক্ষম নন।”
কিয়িমবা আরও বলেন, ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকদের কাছে সবসময় প্রয়োজনীয় রিসোর্স থাকে না।
“অনুসন্ধানী রিপোর্টার হিসেবে কার্যকরভাবে কাজ চালিয়ে নিতে আমাদের হাতে প্রায়ই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম থাকে না,” তিনি বলেন। “শিক্ষার্থীরা হাল ছেড়ে দিতে পারে, কারণ কোনো ইস্যুতে অনুসন্ধানের সহায়ক সরঞ্জাম তাদের নাগালের বাইরে থাকে, ফলে ছাত্রাবস্থায় সাংবাদিকেরা এই ইস্যু থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়।”
এদিকে, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং নাইজেরিয়ার ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ক্যাম্পাস জার্নালিস্টসের জোনাল কো-অর্ডিনেটর, আবিওদুন জামিউ দাবি করেছেন যে, ক্যাম্পাসের স্বাস্থ্য ক্লিনিকের করুণ অবস্থা নিয়ে একটি গোপন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার জন্য তিনি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
তিনি বিশ্বাস করেন, শিক্ষার্থীদের করা অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ঢেউ অনিবার্য, এবং তরুণ রিপোর্টারদের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
“সচেতন সিদ্ধান্তগ্রহণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরও যে দায়িত্ব আছে, তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝতে হবে,” তিনি বলছিলেন। “চলমান ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া তুলে ধরতে শিক্ষার্থী-অনুসন্ধান অপরিহার্য – এই প্রতিক্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের জন্য যেন তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।”
“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই বুঝতে হবে, শিক্ষার্থী সাংবাদিকদেরও সাংবাদিকতার মূল নীতি মেনে চলতে হয়,” জামিউ জোর দিয়ে বলেন।
যুৎসই তহবিল কাঠামোর খোঁজে
কেটি ট্যারান্ট, এখন যুক্তরাজ্যের সানডে টাইমসের একজন সংবাদ প্রতিবেদক; বেশ কয়েক বছর আগে তিনি ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পত্রিকা, দ্য বোয়ার-এর বার্তা সম্পাদক ছিলেন। তিনি “গ্রুপ চ্যাট কেলেঙ্কারি” অনুসন্ধান করেন, যেখানে একটি ফাঁস হওয়া চ্যাটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে শিক্ষার্থীরা আলোচনা করছিল কীভাবে তাদের মেয়ে সহপাঠীদের যৌন নিপীড়ন করা হতো।
“প্রধান সম্পাদক ১৩ জন ছেলের একটি গ্রুপ চ্যাট সম্পর্কে জানতে পারেন, আর তাদের শেয়ার করা ক্ষুদে বার্তায় উঠে আসে যে তারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও মেয়েদের ধর্ষণ করবে, যা তারা জানত,” ট্যারান্ট ব্যাখ্যা করে বলেন৷ “বর্ণবাদ, যৌনতা, হোমোফোবিয়া – আপনি এটির যে নামই দেন না কেন, তারা চ্যাটে এ ধরনের বার্তা শেয়ার করছিল – এবং আমরা এমন প্রায় ১০০টি স্ক্রিনশট পেয়েছি।”
ট্যারান্ট জানান, অনুসন্ধান যত এগিয়ে যায় দ্য বোয়ারের সাংবাদিকেরা ততই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে থাকেন, কারণ তাতে কোনো পেশাদার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ও তার হাত ধরে আসা আইনি দলের সমর্থন ছিল না৷
“ব্যাপারটা আমাদের জন্য বেশ ভীতিকর ছিল। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল, আর আমাদের বলা হয়েছিল যে তাদের সঙ্গে আইনজীবী আছে, তাই আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে তারা পিছপা হবে না,” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন। “আমাদের একজন আইনজীবী ছিলেন, যার মাধ্যমে আমরা সবকিছু করতাম, কিন্তু তিনি একেবারেই একা, তাঁকে আমরা প্রতি মাসে ৫০ পাউন্ড (৬০ মার্কিন ডলার) বা এরকম একটা কিছু দিতে পারতাম। তিনি সত্যিই অভিজ্ঞ এবং খুব কাজের ছিলেন – তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে এইসব ইমেইল পাঠানো, আবার একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হওয়া, বেশ ভয়াবহ ব্যাপার ছিল।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের অসদাচরণ নিয়ে অনুসন্ধান করা অন্যান্য শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের মতো তিনিও এই ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন যে, পত্রিকায় তার কাজ প্রকাশিত হলে সেটি তার পরীক্ষার ফলাফলের জন্য হুমকি হতে পারে।
ট্যারান্ট বলেন, “শুনে পাগলামি মনে হতে পারে, কিন্তু আমি কয়েকবার ভেবেছি: কোনোভাবে কী এটি আমার গ্রেডে প্রভাব ফেলতে পারে – কারণ আমি এমন ব্যক্তি যে কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতির সত্যিকারের ক্ষতি করছে, আর আমি দেখছি যে পর্দার আড়ালে তারা খুব একটা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে না?”
অনেক বাণিজ্যিক গণমাধ্যম সাইটকেও যে উভয়সংকটে পড়তে দেখা যায়, সেই জটিল সমস্যা দ্য বোয়ারেরও ছিল, আর সেটি হলো পত্রিকাটি বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষকতার জন্য স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করত, যারা তাদের ওপর কালিমা লেপন করা অনুসন্ধানকে সবসময় না-ও মেনে নিতে পারেন।
“লেমিংটন স্পা-এর একজন এজেন্ট আমাদের স্পনসর করেছিল। লেমিংটন স্পা এমন একটি শহরে যেখানে অনেক শিক্ষার্থী বাস করে, আর আমি সবসময় ভাবতাম, এটি বিতর্কিত,” ট্যারেন্ট স্মরণ করেন৷ “আমি লেমিংটনের আবাসন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র শেষ করতে না করতেই সেই স্পনসর তাদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে নিতে শুরু করে। তারা আমাদের বছরে প্রায় ২,০০০ পাউন্ড দিচ্ছিল, যা এই শিক্ষার্থী সংবাদপত্র চালানোর জন্য যথেষ্ট ছিল – আপনি এই টাকা দিয়ে প্রায় চারটি পত্রিকা ছাপাতে পারতেন।”
“পত্রিকাটির ব্যবসায়িক দল আমার সঙ্গে বেশ কঠোর ছিল,” স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন। “তারা বলেছে: ‘আপনি কি নিশ্চিত, এটি ছাপবেন? কারণ আমরা সম্ভবত এই বিজ্ঞাপনটি হারাচ্ছি, আর তারপর আপনি এমন অন্য স্টোরি ছাপানোর সক্ষমতাও হারাবেন।”
পত্রিকার ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ওপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের (এসইউ) খবরদারি ছিল।
“আমাদের প্রকাশনা মূলত শিক্ষার্থীদের ইউনিয়নের কাছে ঋণগ্রস্ত ছিল, কারণ বিজ্ঞাপন নিয়ে আমাদের ঝামেলা পোহাতে হত, তাই প্রকাশনা হিসেবে আমাদের কাছে কোন অর্থ ছিল না,” ট্যারান্ট বলেন। “সত্যিকারের সমস্যায় পড়া ও মুদ্রন বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি ঠেকাতে আমরা কত টাকা ঋণ নিতে পারব, সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ইউনিয়নই নিতে পারত, তাই তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হত। আমি বলব যে, আপনি যাদের জবাবদিহি করতে চান তাদের হাতেই আপনার তহবিল আটকে থাকার মানে সেখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব আছে।”
এরপরও, ট্যারান্ট বিশ্বাস করেন যে শিক্ষার্থীদের ইউনিয়নের মত একটি কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সহায়তা পাওয়াই মূলত শিক্ষার্থী-রিপোর্টিং অর্থায়নের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
“এটি টাকা যোগানোর সবচেয়ে সহজ মডেল নয়, তবে আমি মনে করি, যতদিন আপনি শিক্ষার্থীদের ইউনিয়নের কাছ থেকে সম্পাদকীয় স্বাধীনতা পাবেন, ততদিন হয়ত এটিই সেরা,” তিনি বলেন। “আমাদের গ্রুপ চ্যাট অনুসন্ধানের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় তার যৌন নিপীড়ন মোকাবিলার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছিল, আর যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের অনুসরণ করে। এই তহবিল ছাড়া, সম্ভবত এটি কখনোই আলোর মুখ দেখত না।”
কম পারিশ্রমিক আর কর্তৃপক্ষের হুমকি
ঋষভ রাজ সিং ভারতের মধ্য প্রদেশের একজন ছাত্র ও ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী সাংবাদিকেরা এই অঞ্চলের পেশাদার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে নিয়মিত শোষণের শিকার হন, যারা আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন অনুসন্ধান প্রকাশ করে বিপদে পড়েন।
“মধ্যপ্রদেশে সাংবাদিক হওয়া মানেই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়া,” তিনি বলেন। এ বছরের এপ্রিলে, একটি আন্দোলন কভার করার পর একজন সাংবাদিককে মধ্যপ্রদেশের একটি থানায় লাঞ্ছিত করা হয়েছিল এবং তাকে তার পোশাক খুলতে বাধ্য করা হয়েছিল।
“একজন শিক্ষার্থী সাংবাদিক হিসেবে আপনি আরও বেশি দুর্বল, কারণ আপনার ক্যারিয়ার সবে শুরু হয়েছে,” সিং যোগ করেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী সাংবাদিকেরা স্টোরি করার সময়ও তহবিল সংকটের মুখে পড়েন। এগুলোর জন্য ব্যাপক গবেষণা ও আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়, কারণ সংস্থাগুলো খুব কমই খরচ দিয়ে থাকে।
“জায়গাগুলো পরিদর্শন এবং স্টোরির বিস্তারিত খসড়া তৈরিতে আমরা যে সময় ও অর্থ ব্যয় করেছি, তা তারা স্বীকার করে না,” বিষয়টি তিনি খুলে বলেন। “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের নির্ধারিত রেট ২৫ ডলারের কম। স্টোরি ও প্রকাশনার ভেদে এখানে একজন ফ্রিল্যান্সারের স্বাভাবিক রেট ৭৫ থেকে ১৪০ ডলারের মধ্যে থাকে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং করার সময় গণমাধ্যম সংস্থাগুলো এমনভাবে কাজ করে যেন মনে হয়, ক্যারিয়ারের শুরুতে একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে তারা আমাদের উপকার করছে, অথচ তারা আমাদের কাছ থেকে মানসম্পন্ন স্টোরি পাচ্ছে।”
তিনি দাবি করেন, কয়েকটি স্টোরির পর ভারতীয় রাজনীতিক ও স্থানীয় পুলিশ বাহিনী তাঁকে হুমকি দিয়েছে। মধ্যপ্রদেশে পুলিশের হাতে নির্মমভাবে মারধরের শিকার একজন আইনজীবীকে নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশের জের ধরে, পুলিশ ঋষভ রাজ সিংকে খুঁজে বের করেছিল।
“আমিই প্রথম বিষয়টি তুলে ধরেছিলাম; ভুক্তভোগী আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত ছিলেন,” তিনি বলেন। “পুলিশ আমার যোগাযোগ ট্রেস করেছে আর, আমাকে স্টোরিটি নামিয়ে ফেলতে বলেছে, না হলে আমাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। শিক্ষার্থী হিসেবে আমার সঙ্গে এমনটি হলে ডিগ্রি শেষেও আমাকে সমস্যার মুখে পড়তে হবে।”
তথ্য অধিকার নিয়ে আইনি লড়াই
২০১৬ সালে, ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকি তাদেরই শিক্ষার্থী-সংবাদপত্র, কেনটাকি কার্নেলের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, কারণ তারা প্রকাশনাটি থেকে উন্মুক্ত রেকর্ড চেয়ে অনুরোধ পাঠিয়েছিল। কার্নেল একটি সূত্র পেয়েছিল যে একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে যৌন অসদাচরণের অভিযোগের পর একজন অধ্যাপককে নীরবে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যেতে অর্থ দেয়া হয়েছিল।
পত্রিকার সাবেক প্রধান সম্পাদক ও বর্তমানে শার্লট অবজারভারের রাজনীতি বিষয়ক প্রতিবেদক উইল রাইট বলেন, “একটি উন্মুক্ত রেকর্ডের অনুরোধ থেকে আমরা স্টোরির কিছু বিবরণ সম্পর্কে নিশ্চিত হই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মামলার অন্যান্য তদন্ত নথি হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানায়।”
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যাখ্যান করায় আমরা কেনটাকি অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে একটি আবেদন করি,” তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন। “তাঁর অফিস সম্মতি জানিয়ে বলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিল তাঁদেরকে দেয়া। তারপরও তারা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যেন তারা পরে আদালতে গিয়ে আপিল করতে পারে।”
এই মামলার সঙ্গে যুক্ত একটি গোপন সোর্স ২০১৬ সালে কার্নেলের কাছে রেকর্ডগুলো প্রকাশ করেন, যা সেই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
“এসব শুরুর পর আমরা একটি বিকল্প সোর্সের মাধ্যমে বেশ দ্রুত নথিগুলো পেয়েছিলাম,” রাইট ব্যাখ্যা করে বলেন। “আদালতের মামলাটি নীতি নৈতিকতার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, এবং নজির স্থাপন করে।”
আর খোদ সংবাদপত্রটিই আর্থিক পরিণতির ঝুঁকিতে থাকায় জড়িত ব্যক্তিরা মামলায় নাম গোপন রাখার সুবিধা পেয়েছিলেন, যা অন্যান্য শিক্ষার্থীদের এই মামলা চালিয়ে যেতে উৎসাহ জুগিয়েছে।
“এসব শুরুর কিছুদিনের মধ্যেই আমি স্নাতক সম্পন্ন করেছি,” রাইট ব্যাখ্যা করে বলেন। “আমার মনে হয় এসব কিছুর মধ্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বছরের পর বছর, শিক্ষার্থী সাংবাদিকেরা এই মামলার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প যেখানে অনেক মানুষের ভূমিকা ছিল।”
২০২১ সালের মার্চে, ছয় বছরের আইনি লড়াইয়ের পর, কেন্টাকি সুপ্রিম কোর্ট কার্নেলের পক্ষে রায় দিয়েছিল।
“নিঃসন্দেহে আমরা সঠিক পথেই ছিলাম, বা অন্তত আমার কোনো সন্দেহ ছিল না,” রাইট বলেন। “আবেগের জায়গা থেকে, মনে হয়েছিল আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু করছিলাম – আর আমি এখনও বিশ্বাস করি আমরা তা-ই ছিলাম।”
সেই অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে রাইট বলেন, তিনি এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অবিচল থাকতে উৎসাহ দিতেন।
“আপনার পেছনে যদি যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা থাকে, তাহলে উন্মুক্ত রেকর্ডের জন্য যতটা পারেন লড়াই চালিয়ে যান,” তিনি বলেন। “এটি ভীতিকর হতে পারে, তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারকে অবশ্যই সৎ হতে হবে, আর তার জন্য আপনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।”
ছাত্রাবস্থায় অনুসন্ধানী রিপোর্টিংয়ের ভবিষ্যৎ
অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার পরও, শিক্ষার্থী সাংবাদিকেরা ক্যাম্পাসে সত্য উদঘাটন এবং আরও দূরের কোনো গল্প উন্মোচনের ক্ষেত্রে তাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা দেখিয়ে গেছেন। এই সমস্যাগুলো মোকাবিলার মধ্য দিয়ে বাধা সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা নিয়ে তারা এই পেশায় প্রবেশ করতে পারেন, যে বাধাগুলো পেশাদার বার্তাকক্ষে প্রায়ই দেখা যায়।
রিচার্ড ড্যানবেরি, সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় স্নাতোকোত্তর প্রোগ্রাম পরিচালনা করেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে একজন শিক্ষার্থী অবস্থাতেই অনুসন্ধানে কাজ করা রিপোর্টার হিসাবে বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
“আমি প্রায় এক দশক ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি,” তিনি বলেন। “সত্যি কথা বলতে কী, এটি করার একমাত্র উপায় হলো শিক্ষার্থীদের তাদের নিজেদের অনুসন্ধানে কাজ করানো। এই কাজগুলো সুরক্ষিত, নিয়ন্ত্রিত উপায়ে করতে হবে, কারণ শিক্ষার্থীরা ভুল করে। [কিন্তু] ভুল না করে আপনি শিখতে পারবেন না।”
আরও পড়ুন
কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা: উঠতি অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য পরামর্শ
দ্য কোলাবোরেশন দ্যাট ম্যাচড অ্যাওয়ার্ড-উইনিং রিপোর্টার্স উইথ ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস
দ্য টিনেজ ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টার্স টেকিং অন করাপশন ইন কিরগিজস্তান
এমিলি ও’সুলিভান জিআইজেএনের একজন এডিটোরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট। সিটি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর শুরুর আগে তিনি বার্মিংহামভিত্তিক মিডিয়া গ্রুপের ডেপুটি এডিটর হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বেশ কিছু প্রকল্পে তিনি গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
আদমজি কায়িম আবদুল-হাফিজ একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এবং সৃষ্টিশীল স্টোরিটেলার। তাঁর মূল আগ্রহের বিষয় সংস্কৃতি, গণমাধ্যম, আইন ও প্রযুক্তি। তিনি পুনোক্রেসির সহযোগী সম্পাদক, এবং দ্য ফিল্ম কনভার্সেশনের ফিচার সম্পাদক।