প্রভাবশালী ফরাসি গণমাধ্যম মিডিয়াপার্টের অনুসন্ধানী দলের সহ-পরিচালক হিসেবে ফ্যাব্রিস আরফি গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেশ কিছু সাড়া জাগানো প্রতিবেদনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে, ধনী ও ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও অপরাধ খুঁজে বের করার জন্য সুপরিচিত।
২০১০ সালে, বেটেনকোর্ট কেলেঙ্কারির মধ্য দিয়ে ফরাসি সরকারের একেবারে কেন্দ্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে আনে তাঁর অনুসন্ধান। এ ঘটনায় ল’রিয়ালের মালিক বিলিয়নেয়ার লিলিয়ান বেটেনকোর্টের সঙ্গে দেশটির শ্রম মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। দুই বছর পর কাহুজাক কাণ্ড নিয়ে আরেকটি অনুসন্ধানে উঠে আসে, তৎকালীন ফরাসি সরকারের (অন্তত কাগজে কলমে সমাজতন্ত্রী) বাজেট মন্ত্রীর সুইজারল্যান্ডে একটি গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছিল। সেই মন্ত্রী শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন এবং এর জের ধরে আন্দোলনের মুখে একটি জাতীয় আর্থিক প্রসিকিউটর কার্যালয় গঠন করা হয়েছিল। সারকোজি ও গাদ্দাফির মধ্যকার সম্পর্ক অনুসন্ধানেও জড়িত ছিলেন, মিডিয়াপার্টে ১৫ বছর ধরে কাজ করা আরফি। এই অনুসন্ধানে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজির পুনঃনির্বাচনের প্রচারাভিযানে লিবিয়ার কথিত অবৈধ অর্থায়নের বিষয়টি তলিয়ে দেখা হয়। পরবর্তীতে আরও কয়েকজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে এই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টও অভিযুক্ত হন।
আরফি একজন স্ব-শিক্ষিত রিপোর্টার। তিনি ফ্রান্সের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জগতে অন্যতম পরিচিত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন। জিআইজেএনের ফরাসি সংস্করণ, তাঁর সঙ্গে একটি অনলাইন মাস্টারক্লাস কর্মশালার আয়োজন করেছে। নিচে রইল, একটি নিখাদ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর কয়েকটি পরামর্শ।
সব বিষয় জানুন, একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হোন
অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা প্রায়ই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হলেও আরফির মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ রিপোর্টিং দক্ষতা অর্জন করাও জরুরি। “আপনাকে অবশ্যই সব কাজের কাজি হতে হবে, তবে একই সঙ্গে আপনার কিছু ক্ষেত্রে সম্পাদকীয় দক্ষতা থাকতে হবে,” তিনি বলেন। “সব বিষয়ে সাধারণ দক্ষতার পাশাপাশি একটি ক্ষেত্রে আপনার বিশেষজ্ঞতা, বাড়তি যোগ্যতা, দারুণ দক্ষতা অর্জন করা দরকার। আমার মতে, এভাবেই একজন তরুণ সাংবাদিক বিভাগীয় প্রধান ও শীর্ষ সম্পাদকদের নজরে পড়েন।”
তিনি আরও বলেন, “ভালো ধারণা থাকাই যথেষ্ট নয়। আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে, যা আপনি সাংবাদিকতায় নিজস্ব জগৎ তৈরির মাধ্যমে অর্জন করেন। আমি [সাংবাদিকতার] স্কুলে যাইনি, স্নাতক ছাড়া আমার আর কোনো ডিগ্রী নেই।”
নিজের মনকে অনুসরণ করুন, তবে মনটিকেও খোলা রাখুন
আরফি নিছক অনুমানের ভিত্তিতে কাহুজাকের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেন: বামপন্থী রাজনীতিবিদ হয়েও জেরোম কাহুজাক অপকর্মের দায়ে অভিযুক্ত একজন ডানপন্থী মন্ত্রীর পক্ষে বারবার কথা বলছিলেন দেখে তাঁর কৌতুহল হয়। তিনি রিপোর্টারদের বলেন, “সন্দেহপ্রবণ মন থাকা আমাদের কাজের অংশ। পূর্বধারণার বৃত্তে বন্দী হয়ে থাকাটা দুঃখজনক হবে। আমাদের লক্ষ্য হল বাস্তবতা যাচাই করা, এবং তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারি কি না … তা আমাদের অনুমানকে নিশ্চিত করে কি না, তা দেখা।”
আপনার কাজ আর্কাইভ করুন
ঘটনার বহু বছর পর পুরনো নথিতে কীভাবে সূত্র পাওয়া যায় তা ইঙ্গিত করে আরফি বলেছেন, “আপনাকে একটি ভালো সংরক্ষণ ব্যবস্থা (আর্কাইভ) গড়তে হবে, এবং আপনার করা কাজটির ট্র্যাক রাখতে হবে; নথিপত্র রেখে দিন। আমাদের সংরক্ষণাগারে, আমাদের কাছে থাকা ফাইল ঘেঁটে বেশ কিছু ভালো স্টোরি পেয়েছি, কারণ সেখানে এমন একটি নাম ছিল যিনি কোনো না কোনো সময়ে অমুক-অমুক মন্ত্রণালয়, অমুক-অমুক কোম্পানির দায়িত্বে ছিলেন, অমুক-অমুক মামলায় তাকে দেখাা যায়, অমুক-অমুক ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন। অনুসন্ধান করার মতো কোন বিষয় থাকলে এই সুতোটিকে টেনে আমরা বড় করতে পারি এবং উন্মোচন করতে পারি।”
দলগতভাবে কাজ করুন
আরফি জোর দিয়ে বলেন, বিশেষ করে অনুসন্ধানে যৌথ উদ্যোগ কীভাবে একই সঙ্গে সহায়ক ও ফলপ্রসূ হতে পারে। মিডিয়াপার্টের অনুসন্ধানে প্রায়ই দুই, তিন, এমনকি চারটি বাইলাইন থাকার বিষয়টি যোগ করে আরফি বলেন, “লেখা ব্যক্তিগত দক্ষতার যোগফল হতে পারে না। আমরা কাজকে এক সুঁতোয় বাঁধি এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি কারণ, কয়েকজন থাকলে অতি উৎসাহী কাউকে সামলাতে সবসময় কেউ না কেউ থাকেন। আপনার পাশের সহকর্মীর সঙ্গে, এমনকি বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গেও একই লেখা বারবার পড়া, (একটি অনুসন্ধানের অগ্রগতি) ভাগাভাগি করার এই সক্ষমতা থাকা খুবই জরুরি।”
লম্বা সময় ধরে খেলুন
আরফি বলেন, একটি নির্দিষ্ট স্টোরি আপনার পরিকল্পনা মতো না হলেও রিপোর্টিং কখনোই নষ্ট হয় না। “নিজের অনুসন্ধানের বিকাশ ঘটিয়ে আপনি নিজস্ব সম্পাদকীয় রীতি তৈরি করেন, আর এমন একটি সময় আসে যখন আপনাকে স্টোরি ধারণার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে হবে: আপনার কাছে কি স্টোরি প্রকাশ করার মতো যথেষ্ট উপাদান আছে? নাকি আমাদের হাল ছাড়তে হবে?” তিনি বলেন। “আর সেটিই মিডিয়াপার্টে আমাদের কাজের অদৃশ্য অংশ। বাস্তবে, আমরা স্টোরি প্রকাশে যতটা সময় দেই, অপ্রকাশিতের জন্য তার চেয়ে বেশি সময় ব্যয় করি, কিন্তু এটি কখনোই হারায় না।”
সোর্সের অধীন হয়ে পড়বেন না, স্বাধীন থাকুন
আরফি সতর্ক করে বলেন, “যে বিষয়ে রিপোর্ট করছেন ও লিখছেন, সে বিষয়ের সঙ্গে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাওয়ার, বা সেই জগতের অংশ হয়ে পড়ার ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে।” তিনি আরও পরামর্শ দেন, রিপোর্টারদের নিজেদের ও সাক্ষাৎকারদাতাদের মাঝে একটি “নৈতিক দূরত্ব” বজায় রাখা উচিত। “আমাদের কাজ হলো একে অন্যের প্রয়োজন বোঝার চেষ্টা করা, কিন্তু আমরা এখানে নৈতিক মতামত নিতে আসিনি, আর সোর্সের কাছে নিজের স্বকীয়তা বিকিয়ে দিতে আসিনি। আমাদের কাজ হলো জগৎ যেভাবে আছে সেভাবে অনুধাবন করা।”
তিনি আরও বলেন: “আমি বেশ কয়েক বছর ধরে আর্থিক অপরাধের মত বিষয় নিয়ে কাজ করছি, আর তাই যারা দুর্নীতি করেন এবং দুর্নীতি করান, [তাদের পাশাপাশি] সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত বা জনসাধারণের কল্যাণের চিন্তায় তাড়িত হয়ে কথা বলতে আসা হুইসেলব্লোয়ারদেরও যোগাযোগের তালিকায় রাখাকে দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছি। তবে স্বার্থান্বেষী মহলের মানুষও নিজেদের স্বার্থে কথা বলে, আর আমার মনে হয় না, এই কাজটি করার সময় আপনি তাদের এড়িয়ে চলতে পারবেন। নিঃসন্দেহে আমাদের কাজ হলো আমাদের সঙ্গে কথা বলা সোর্সদের ব্যক্তিস্বার্থ বুঝতে পারা… তবে সেখান থেকেও অনেক সময় নেয়ার মতো ভালো তথ্য থাকে।”
সবসময় আন্তরিক থাকুন
আরফি বলেন, আপনার সোর্স যেই হোক না কেন, তাদের সঙ্গে আচরণে এবং তাদের ঝুঁকির প্রতি সম্মান বজায় রাখা উচিত। “সোর্সকে সামলানোর ব্যাপারে আপনাকে অবশ্যই সবসময় খুব আন্তরিক হতে হবে,” তিনি বলেন। “আমরা এই নৈতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা করি।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, হুইসেলব্লোয়ার ও সোর্সদের ব্যাপারে রিপোর্টারদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ তাঁরা কথা বলার জন্য বড় ঝুঁকি নেয়। “বড় স্টোরি করতে গিয়ে অনেক সোর্স আক্ষরিক অর্থেই কোনো কোনো অনুসন্ধানে নিজেদের বিপদের মুখে ফেলেন – সেটি হতে পারে ব্যক্তিগত বিপদ, বা পেশাগত বিপদ।”
সোর্স গড়ুন, তবে মনে রাখুন তাঁদেরও জীবন আছে
তিনি বলেন, “সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে কারো দায় পড়েনি। আপনি নিছক নাক উঁচিয়ে বলতে পারেন না যে, ‘এ বিষয়ে আমি আগ্রহী, আমাকে কিছু তথ্য দিন।’” স্মৃতি হাতড়ে তিনি ১৯৮১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিডনি পোলাকের চলচ্চিত্র “অ্যাবসেন্স অফ ম্যালিস” থেকে পাওয়া একটি শক্তিশালী শিক্ষার কথা স্মরণ করেন। চলচ্চিত্রটিতে পল নিউম্যান ছিলেন একইসঙ্গে একজন তথ্যফাঁসকারী এবং ফাঁসের বিষয়বস্তু, আর সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন স্যালি ফিল্ড। রিপোর্টারের সঙ্গে এই সমস্যাসংকুল সম্পর্কের ফলাফল: ‘এটি আপনার স্টোরি, তবে আমার জীবন।’ আরফি সতর্ক করে বলেন, “আপনাকে এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে — এমনকি আমরা যদি কখনও এমন কারো সম্পর্কে লিখি যাদের আমরা ঘৃণা করি, তবুও এটি তাঁদের জীবন।”
তিনি সংবেদনশীল সোর্সের কাছে যাওয়ার আগে রিপোর্টারদের তাঁদের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জানারও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “আমি মনে করি, একজন সাংবাদিককে অবশ্যই জানতে হবে কীভাবে নিজেকে এমনভাবে তুলে ধরা যায়, যেন সোর্স তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হন।” “আপনাকে অবশ্যই আপনার বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। সম্পর্কের সূত্রপাত করার জন্য আপনার সঙ্গে আলোচনায় একজন সোর্সের ভাবনাচিন্তায় কিছুটা হলেও আগ্রহ থাকতে হবে।”
“অনেকদিন দেখা নেই, এমন কোনো পুরনো সোর্সের কাছ থেকে যখন বার্তা আসে, ‘আহ, আপনার কথা কিন্তু মনে পড়ে, কারণ আপনার কাছ থেকে আমি [এক্স ও ওয়াই] জানতে পেরেছি,’ – পেশাগত জীবনে এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে,” তিনি বলেন। “অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই ঘটনাগুলো দারুণ অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।”
নেটওয়ার্ক বাড়াতে তৈরি থাকুন
সোর্সের ক্ষুদ্র ও পরিচিত নেটওয়ার্ক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার ব্যাপারে আরফি সতর্ক করেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাজের মূল কথা হলো মানুষকে ফোন করা, তথ্যের জন্য তাড়া দেওয়া, পরিশেষে দেখা করা। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করার খুব ভালো একটি উপায় হলো সাধারণত যৌথ আগ্রহের বিষয়ে কথা বলা। আর তারপর এই মানুষটিই হয়ত একদিন আপনার সোর্স হিসেবে কাজে আসবে কারণ, আপনি জানেন, একদিন প্রত্যেকেরই সাংবাদিকের দরকার পড়ে।”
লেখার ধরন স্পষ্ট ও সহজ রাখুন
আরফি বলেন, “অনুসন্ধানী স্টোরি লেখার সময় আপনার লেখায় পরিমিতি থাকতে হবে। লেখার যেখানে সেখানে বিশেষণ ও ক্রিয়াবিশেষণ দেয়াটা আমার পছন্দ নয়। আমরা কোনো অপরাধের বিষয়ে লিখি না যে এটি ‘ভয়ঙ্কর;’ আমরা বরং বর্ণনা তুলে ধরি, আর মতামত দেয়ার জন্য সবাই আছে। অনুসন্ধানে আমি অনেকটা প্রকৃত ঘটনার নিরস, নির্মম উপস্থাপনার পক্ষে।”
সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ সুরক্ষিত রাখুন বা সামনাসামনি দেখা করুন
“নিঃসন্দেহে প্রযুক্তি আমাদের – সিগন্যাল, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম – এর মতো সুরক্ষিত অ্যাপের মাধ্যমে সংবেদনশীল সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগের দারুণ উপায় করে দিয়েছে, আর আপনাকে শুধু বার্তা মুছে ফেলার অপশন চালু করতে হবে,” – আরফি ব্যাখ্যা করে বলেন। “অন্যদিকে, আমি অতটা আধুনিক নই। আমার মনে হয়, সুরক্ষিত অ্যাপ সাক্ষাতের সময় নির্ধারণে বেশ ভালো, তবে মানুষের সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি। প্রযুক্তি কেবলই একটি মাধ্যম, শেষ গন্তব্য নয়। আর ভুলে গেলে চলবে না, সাংবাদিকতাকে যে বিষয়টি চিরন্তন করে তোলে, তা হলো সবসময় মানুষের সঙ্গে দেখা করা।”
মানুষকে প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় দিন
তিনি বলেন, “‘আমরা প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছি, তারা কথা বলতে চায়নি,’ এই বলে আইনী মারপ্যাঁচ থেকে গা বাঁচাতে প্রতিবেদন প্রকাশের দুই ঘন্টা আগে কাউকে কল করবেন না। ভালো মুখোমুখি সাক্ষাৎকার মানে নির্দিষ্ট প্রশ্ন নিয়ে মুখোমুখি হওয়া। প্রশ্নের সংখ্যা এবং স্টোরিতে সেই ব্যক্তির ভূমিকা অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় দিতে হবে। অর্থাৎ হতে পারে সেটি ২৪ ঘন্টা, বা কয়েক দিনের অপেক্ষা।”
কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইবেন সে সম্পর্কে তিনি বলেন: “অনেক সময় আমরা মৌখিকভাবে প্রশ্ন করতে পারি, তবে সবসময় প্রশ্নের একটি লিখিত রেকর্ড রাখা ভালো। প্রথমত, এর ফলে প্রতিবেদন নিয়ে কাজের সময় আমরা প্রশ্ন করার সুযোগ পাই, এবং এরপর, মামলার মুখোমুখি হলে আমাদের হাতে লিখিত প্রমাণ থাকে।”
প্রয়োজনে আইনি পরামর্শ নিন
সম্ভাব্য আইনি হুমকি মাথায় রেখে আরফি সতর্ক করেন: “পরোক্ষ ইঙ্গিতেও মানহানি হতে পারে। আপনি শর্তসাপেক্ষ বাক্য ব্যবহার করা মানে এই নয় যে, এটি মানহানিকর হতে পারে না। প্রশ্নবোধক চিহ্ন দিয়েছেন [বিবৃতি না দিয়ে] মানে এই নয় যে, একটি বিবৃতি মানহানিকর নয়; এটি কোনো সুরক্ষা কবচ নয়।”
আর যখন সন্দেহ হয়? তিনি জানান, “এসব ইস্যুতে যতটা সম্ভব অবস্থান পোক্ত করতে আইনজীবীদের কাছ থেকে আইনি দৃষ্টিভঙ্গি জেনে নেয়াও ভালো। তার মানে এই নয় যে আপনাকে সবসময় আইনজীবীদের সব কথাই শুনতে হবে। শেষ পর্যন্ত, প্রকাশ করা বা না-করার সিদ্ধান্ত প্রধান সম্পাদকের।”
চালাকি (একটু)
আরফি বলেন, পরস্পরবিরোধী তথ্যও সঠিকতা নিশ্চিতে সহায়ক হতে পারে: “কখনও কখনও আমাদের হাতে দুটি ভালো সোর্স থাকে যারা তথ্য দেয় আর, সত্যি কথা বলতে কী, পরস্পরবিরোধী তথ্য হাতে আসার কারণেই আমরা সেটি প্রকাশ করতে পারি, কারণ আমরা যার মুখোমুখি হয়েছি তিনি (সেই তথ্য) অস্বীকার করেননি, এমনকি নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টাও করেছেন, যা আসলে সেই তথ্যের সত্যতাই নিশ্চিত করে। কখনও কখনও আমাদের জানতে চাওয়া প্রশ্নে কিছুটা চালাকির আশ্রয় নিতে হয়৷ সতর্ক থাকুন, জেনেবুঝে এই চালাকিটা করতে হয়। আপনার দিন তারিখ ঠিক করতে হয়, স্থান জানতে হয়, (কথা কাজে) যথাযথ হতে হয়, আপনি কী বিষয়ে কথা বলছেন তা জানতে হয়।”
অন্য সোর্সদের আগ্রহ প্রকাশের সুযোগ করে দিন
একটি ছোট স্টোরি, বা টিজারের প্রকাশে যে বিষয়টি সামনে আনতে পারে, তা হলো আপনি একটি ইস্যুতে আগ্রহী, আর এই আগ্রহ আপনাকে আরও সোর্স ও তথ্য এনে দেয় ৷ “একটি নিয়ম আছে: সংবাদপত্রের কোনো একটি বিষয়ে আগ্রহ দেখানোটা অনর্থক নয়, বরং এর ফলে সোর্সের খোঁজ মেলে,” আরফি বলেন। তিনি এই স্টোরিগুলোকে বলেন ‘পোস্টকার্ড।’ “হাতে সামান্য উপাদান নিয়েই লিখতে বসে যাওয়াটা ইঙ্গিত করে যে, আমরা একটি বিষয়ে আগ্রহী – আর এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। আমরা লেখা শুরু করলে মানুষই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে: ‘আহ, আপনি এই বিষয়ে লিখেছেন, তবে আমি আপনাকে আরও বলতে পারি…’”
আরও পড়ুন
সাংবাদিকদের জন্য এডউই প্লেনেলের ৫টি পরামর্শ
যৌন সহিংসতা যাদের হাত ধরে হয়ে উঠেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নতুন ধারা
হাও ফ্রান্স’স মিডিয়াপার্ট বিল্ট এ সাকসেসফুল নিউজ মডেল অ্যারাউন্ড ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম
মার্থে হুবিও জিআইজেএনের ফরাসি ভাষা সম্পাদক। স্পেন ও আর্জেন্টিনায় পাঁচ বছর কাজের পর তিনি বর্তমানে তাঁর জন্মভূমি ফ্রান্সে কাজ করেন। তিনি আর্জেন্টিনার লা নাসিওন পত্রিকায় ডেটা দলে কাজ করেছেন। স্লেট ও লিবারেশন পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করেছেন এবং বুয়েনেস আইরেসে লা ফিগারো এবং মিডিয়াপার্টের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।