
তাইজ শহরের আশেপাশে বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বোমা হামলায় ইয়েমেনে স্কুল ও ঘরবাড়ির মত বেসামরিক অবকাঠামোও ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। ছবি: শাটারস্টক
ইয়েমেনে দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে চলা যুদ্ধকে বিশ্বের সবচেয়ে শোচনীয় মানবিক সংকট হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। এই সংকটে ১ কোটি ৩৫ লাখ বেসামরিক ইয়েমেনি নাগরিক অনাহারের ঝুঁকিতে পড়েছে।
২০১৪ সালে ইয়েমেনের রাজধানী হুথি বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাওয়ার পর থেকে ইয়েমেনের যুদ্ধে মার্কিন সমর্থিত সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ব্যাপক বোমা হামলা দেখা যাচ্ছে। এই জোটে আছে উপসাগরীয় ও উত্তর আফ্রিকার নয়টি রাষ্ট্র; আর আছে সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও ইরানের মতো আঞ্চলিক শক্তির হস্তক্ষেপ। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা অনুসরণ করা মার্কিন অলাভজনক সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রজেক্ট (আক্লেড) এর হিসেবে, শুধু সৌদি জোটের বিমান হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার বেসামরিক ইয়েমেনি নাগরিক নিহত হয়েছেন।
ইয়েমেনে একদিকে আছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট সমর্থিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার; অন্যদিকে ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীরা। এমন বিভিন্ন ধরনের সামরিক শক্তির পাশাপাশি দেশটির ভেতরে আছে স্বাধীন মতপ্রকাশ ও ভ্রমণের উপর কঠোর বিধিনিষেধ। ফলে অসংখ্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার পেছনের অপরাধীদের সনাক্ত করা কঠিন হয়ে উঠেছে সাংবাদিকদের জন্য।
যাই হোক, “ডিজিটাল যুগে মানবাধিকার বিষয়ক বিশ্বের শীর্ষ সম্মেলন” হিসেবে পরিচিত রাইটসকন ২০২২-এর একটি প্রেজেন্টেশনে কয়েকটি অলাভজনক গবেষণা সংস্থা দেখিয়েছে যে, এমন বিশৃঙ্খলতার মধ্যেও কীভাবে উদ্ভাবনী পদ্ধতির ব্যবহার করে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করা যায়, এবং সেগুলো অন্যান্য সংঘাতময় পরিস্থিতিতেও একই রকম প্রভাব রাখতে পারে।

ছবি: শাটারস্টক
এই অনুসন্ধানী পদ্ধতিগুলোর মধ্যে প্রথাগত সামরিক জার্নালে লেখালেখির সন্ধান থেকে শুরু করে বিভিন্ন হামলা ও সামরিক-ক্রয়ের ডেটাবেজ ব্যবহার; বোমায় ধ্বংসযজ্ঞের থ্রি-ডি মডেলিং, সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া ভিডিও পোস্টের নানা দৃশ্যমান বস্তুর জিওলোকেশন নির্ধারণ পর্যন্ত অনেক কিছুই। ইয়েমেন সংকট নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সেশনে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উঠে আসে, তা হলো: সাংবাদিক ও গবেষকরা প্রায়ই এমন সব ডেটাসেট প্রকাশ করছেন, যেগুলো অন্যান্য অনুসন্ধানকারীরা বিনামূল্যে ব্যবহার করতে পারেন। ফলে ক্রমেই আরও বড় হচ্ছে এসব সংঘাত বিষয়ে যাচাইকৃত তথ্যের জ্ঞান-ভাণ্ডার।
গ্লোবাল লিগাল অ্যাকশন নেটওয়ার্কের আইনী কর্মকর্তা ডিয়ারব্লা মিনোগ বলেছেন, “প্রবেশাধিকারের অভাব এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন নথিভুক্তির কাজে নিয়োজিতদের মাঠপর্যায়ে নানামুখী বিপদের কারণে, কমিউনিটি হিসেবে আমাদের কাজের একটি বড় অংশের জন্য আমরা সত্যিই উন্মুক্ত সোর্সের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল।”
এই মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন পোস্ট ও সিকিউরিটি ফোর্স মনিটরের (এসএফএম) একটি অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে বোমা হামলা শুরুর পর নির্বিচার বিমান হামলায় জড়িত উপসাগরীয় জোটের স্কোয়াড্রনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অনেকগুলো প্রতিরক্ষা চুক্তি থেকে লাভবান হয়েছে।
কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ল স্কুলের হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউট ভিত্তিক – এসএফএম-এর পরিচালক টনি উইলসন বলেছেন, এই অনুসন্ধানের কেন্দ্রে ছিল একটি প্রথাগত ডেটা মেথডলোজি: সামরিক বিমান বিষয়ক জার্নাল, একাধিক উদ্যমী ম্যাগাজিন ও নির্ভরযোগ্য বই সহ বিভিন্ন টেক্সট সোর্সের নিবিড় বিশ্লেষণ।

ইয়েমেনি আর্কাইভ নামে মানবাধিকার গোষ্ঠী মেমোনিক-এর একটি প্রকল্প অনুসন্ধানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পদ হতে পারে। ছবি: স্ক্রিনশট
রাইটসকন সম্মেলনে, ডেটা নিয়ে গবেষণার সবচেয়ে অপ্রচলিত উদাহরণ হাজির করেছিল মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা গ্রুপ, মেমোনিক। তারা দেখিয়েছে: কিভাবে দ্য ইয়েমেনি আর্কাইভ প্রকল্পে কাজের সময়, তারা ২০২০ সালে এডেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছিল; তা-ও বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী দুটি বিষয়কে কাজে লাগিয়ে – মেঘ ও ছায়া। (এ নিয়ে আরও পড়ুন নিচে)
মার্কিন চুক্তিগুলো নিয়ে গবেষণায় তারা যে পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন, তার বিস্তারিত তুলে ধরে একটি ব্লগ পোস্টে এসএফএম ব্যাখ্যা করেছে, কীভাবে এই কৌশল অন্যান্য ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতে পারে: “আইনজীবী ও মানবাধিকার গবেষকেরা জোটভুক্ত দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যত অস্ত্র বিক্রি ও সৌদি-আমিরাতি জোটের বিমানবাহিনীর কাছে অন্যান্য দেশের অস্ত্র বিক্রি পর্যবেক্ষণের জন্য একই কর্মকৌশল ব্যবহার করতে পারেন।”
উইলসন বলেছেন, বিমান যুদ্ধে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার চাবিকাঠি হলো হামলার সঙ্গে জড়িত স্বতন্ত্র স্কোয়াড্রনগুলোকে সনাক্ত করা: প্রতিটির ব্যবহৃত বিমান, অস্ত্র ও চুক্তির ধরন বোঝা; এবং, অবশেষে, সেগুলোর টেইল নাম্বার দিয়ে একেকটি বিমানকে ট্র্যাক করা।
তিনি বলেছেন, “পোস্ট দলের সঙ্গে কাজ করে আমরা দেখেছি যে, জোটভুক্ত সব দেশের ৩৯টি স্কোয়াড্রন ছিল, যেগুলো ইয়েমেনে বিমান হামলা চালাতে পারে, এবং আমরা ১৯টি স্কোয়াড্রন নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করেছি, যারা ইয়েমেনে কাজ করেছে। এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক সমর্থন ছিল: কমপক্ষে ৯৪টি মার্কিন চুক্তি থেকে এই স্কোয়াড্রনগুলো লাভবান হয়েছে।”
এসএফএম হুওয়াজইনকমান্ড নামে একটি সার্চযোগ্য ডেটাবেসও প্রকাশ করেছে, যেখানে রিপোর্টাররা বিশ্বজুড়ে সামরিক ও পুলিশ বাহিনী, দায়িত্বরত গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা, এবং অসদাচরণের অতীত অভিযোগ অনুসন্ধান করতে পারেন।
বিমানবাহিনী ও তাদের সাপ্লায়ারদের কর্মকাণ্ড অনুসন্ধান
ইয়েমেন নিয়ে অনুসন্ধানকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে এসএফএমের উইলসন কতগুলো কৌশলের কথা জানিয়েছেন, যা রিপোর্টাররা যে কোনো দেশে বিমানহামলায় জড়িত বাহিনী ও ব্যবহৃত অস্ত্র সনাক্তের কাজে ব্যবহার করতে পারেন:
- যোদ্ধা স্কোয়াড্রনগুলোর কাঠামো ও গঠন বোঝার জন্য বিশেষায়িত ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট থেকে ডেটা সংগ্রহ করুন। এই স্কোয়াড্রনগুলো এমন সব হামলায় জড়িত থাকতে পারে, যেখানে বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ইয়েমেনের ঘটনার ক্ষেত্রে, এ অঞ্চলের বিমানবাহিনীগুলো নিয়ে একটি স্প্রেডশিট তৈরির জন্য এয়ারফোর্সেস মান্থলি, টাইমস অ্যারোস্পেস, এবং ডাচ এভিয়েশন সোসাইটির স্ক্র্যাম্বল ডেটাবেজ ব্যবহার করেছে এসএফএম।
- আঞ্চলিক ভাষা ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী সম্পর্কে স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। উইলসন বলেছেন, আরবি ভাষার সোর্স ও রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের রিপোর্ট পর্যালোচনার জন্য ইয়েমেনের অলাভজনক সংস্থা মোয়াতানা ফর হিউম্যান রাইটসের সঙ্গে জোট বেঁধেছে এসএফএম।
- নির্দিষ্ট বিমান অভিযানে কোন স্কোয়াড্রন জড়িত ছিল, তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ক্রস রেফারেন্সিং ও ভিডিও বিশ্লেষণ করুন। এসএফএম, সংবাদ প্রতিবেদন বা প্রচারণা সংক্রান্ত ছবিতে দেখানো বিমানের স্বতন্ত্র টেইল নাম্বার সনাক্ত করেছে, এবং এয়ারফোর্স মান্থলির মত সোর্সগুলোর বিমান তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখেছে।
- বিদেশি শক্তিগুলোর সঙ্গে করা চুক্তি ও সহায়তার তালিকাগুলো খোঁজ করুন। সৌদি জোটের কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি সম্পর্কে জানার জন্য উইলসনের দল যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সিকিউরিটি কোঅপারেশন এজেন্সি (ডিএসসিএ)- এর মেজর আর্মস সেলস ডেটাবেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের চুক্তিগুলো যে পোর্টালে থাকে, তা অনুসন্ধান করেছে। উইলসন সতর্ক করে বলেছেন, এই দুই ডেটাবেসে বিশদ বিবরণ থাকলেও মাঝে মাঝে কিছু ভুলভ্রান্তি বা বিভ্রান্তিকর কোডিং থাকে। তাই সাংবাদিকদের চুক্তিগুলো সতর্কতার সঙ্গে পড়তে হবে, প্রয়োজনে বারবার পড়তে হবে। উইলসন বলেছেন, “যেমন; ডিএসসিএ-এর ওয়েবসাইট প্রায়ই একই দেশে একাধিক ট্যাগে বিক্রয়ের ঘোষণা দেয় – সৌদি আরবের পাঁচটি ভিন্ন ট্যাগ রয়েছে।” তিনি জানান, “আর ডিওডি [প্রতিরক্ষা বিভাগ] ঘোষণাগুলো কখনও কখনও একটি দেশকে উল্লেখ করে বিভিন্ন উপায়ে। এটি বিশেষ করে ঘটে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্ষেত্রে, এমনকি দেশের নামের বানানেও ভুল থাকতে পারে। যেমন ‘জর্ডান’ এর পরিবর্তে ‘জর্ডন‘।
- মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অস্ত্র বিক্রির বিষয়ে আপনার নিজস্ব উন্মুক্ত ডেটাবেস তৈরি করুন। এসএফএম সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে মার্কিন সরঞ্জাম এবং অস্ত্র বিক্রির একটি ডেটাবেস তৈরি করেছে। জোটের ব্যবহৃত বিমান এবং সরঞ্জামগুলো এই ডেটাসেটে পাওয়া যাবে।
সিকিউরিটি ফোর্স মনিটর এফ-১৬ডটনেটের মত বিমান বিক্রয়ের ডেটাবেসের সঙ্গে জোট বাহিনীর ভিডিওতে দেখা বিমানের টেইল নাম্বার মিলিয়েছে। ছবি: স্ক্রিনশট
২০২০ সালের ৩০শে ডিসেম্বর এডেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিক্ষিপ্ত তিনটি রকেটের উৎস খুঁজে বের করার জন্য গত বছর, অলাভজনক অনুসন্ধানী সংস্থা বেলিংক্যাটের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল ইয়েমেনি আর্কাইভ। এই হামলায় ২২ জন নিহত হন। অনুসন্ধানে দেখা যায়: সেখানে একটি সমন্বিত রকেট হামলা পরিচালিত হয়েছিল। দুটি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল হুথি নিয়ন্ত্রিত শহর ধামারের পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে এবং আরও দুটি রকেট ছোড়া হয়েছিল বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত আরেকটি শহর তাইজ থেকে। (একটি রকেট মাঝপথে ব্যর্থ হয়।)
ইয়েমেনি আর্কাইভ যেভাবে এডেন বিমানবন্দর আক্রমণে ব্যবহৃত রকেট ট্র্যাক করেছে
ইয়েমেনি আর্কাইভের অনুসন্ধানী গবেষক বারাহ তারেক, বিমানবন্দরে হামলার উৎস সনাক্তে ব্যবহৃত ভৌগলিক অবস্থান এবং যাচাইয়ের ধাপগুলো ব্যাখ্যা করেছেন:
- দলটি সামাজিক মাধ্যমের তিনটি ভিডিও সনাক্ত ও সংরক্ষণ করেছে। ভিডিওটিতে দক্ষিণ-পশ্চিম ইয়েমেনের ধামার শহর থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ দেখা যায়। দলটি সামাজিক মাধ্যমে তারিখ দিয়ে সার্চ করার জন্য হু পোস্টেড হোয়াট? টুলটি ব্যবহার করেছে।
- তারেক জানান, ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ এবং একটি ছোট, স্বতন্ত্র আকৃতির মেঘের সঙ্গে মিলিয়ে ভিডিওগ্রাফারদের আপেক্ষিক অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। “এভাবে, আমরা খুঁজে পেয়েছি এবং নিশ্চিত হয়েছি যে, ভিডিওগুলো একটি আরেকটির কাছাকাছি স্থান থেকে নেওয়া হয়েছিল।”
ইয়েমেনি আর্কাইভ উপরে লাল পিন নির্দেশিত একখণ্ড ছোট মেঘ ট্র্যাক করেছে। উদ্দেশ্য ছিল, এটি নিশ্চিত করা যে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের তিনটি ভিডিও প্রায় একই স্থানে এবং সময়ে নেয়া হয়েছিল। ছবি: ইয়েমেনি আর্কাইভ
- তাঁরা ভিডিওগুলোতে দেখা বড় দালানগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে উৎক্ষেপণের স্থান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথের ভৌগলিক অবস্থান নির্ধারণ করেছেন। তারপর সেই একই দালান ও একটি হাইওয়ে গুগল আর্থে খুঁজে পেয়েছেন৷
- তারপর তারা শ্যাডোক্যালকুলেটর দিয়ে দালানের ছায়া পরিমাপ করে নির্ধারণ করেছেন যে: ভিডিও এবং ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ কোন সময় করা হয়েছে। শ্যাডোক্যালকুলেটর টুলটি সাধারণত আবাসিক বাড়ির ক্রেতা ও নির্মাতারা ব্যবহার করেন, এটি দেখতে যে বিভিন্ন ঋতুতে তাদের বাগান কতটা সূর্যের আলো পায়। তারেক বলেছেন, “আমরা ছায়ার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছি, এবং নিশ্চিত হয়েছি যে, ভিডিওগুলো নেওয়া হয়েছিল স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২২মিনিটে। এবং এটি এডেন বিমানবন্দরে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের সময়ের সঙ্গে মিলে যায়।”
- ইয়েমেনি আর্কাইভ, অনেক অনুসন্ধানের জন্য ইয়েমেন ডেটা প্রজেক্টের সংগৃহীত যুদ্ধের বর্ণনা তুলে ধরে। এই প্রজেক্ট একটি স্বাধীন অলাভজনক সংস্থা, যা সংঘাতের ধরন নিয়ে ডেটা সংগ্রহ করে।
তারেক বলেছেন, “আমাদের অনেক বড় একটি সংগ্রহশালা আছে। আপনি সাংবাদিক, গবেষক বা আইনজীবী হলে সাক্ষ্য-প্রমাণসহ আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে আমরা খুশি হব।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ইয়েমেনের গবেষক আফরাহ নাসের বলেছেন, এপ্রিলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির পর থেকে তিনি যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সহিংসতা “যথেষ্ট কমে আসতে” দেখেছেন।
নাসের জোর দিয়ে বলেছেন, “তবুও গত সাত বছরে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো সনাক্ত করে যাওয়া জরুরি, যেসব ঘটনার ফলে হাজারো বেসামরিক নাগরিক নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচে, আমরা সৌদি/আমিরাত জোটের অন্তত ১০০টি বেআইনি হামলা নথিভুক্ত করেছি। সামরিক বাহিনীগুলো নিষিদ্ধ মাইন ব্যবহার করেছে এবং বেসামরিক এলাকায় নির্বিচারে আর্টিলারি হামলা চালিয়েছে এবং জোরপূর্বক গুমের ঘটনা বেড়েই চলেছে।”
কিন্তু এসব ঘটনায় দায়ী করার মত আরও অনেকেই আছেন। “ব্যাপক নিপীড়নের জন্য হুথিরাও দায়ী,” তিনি যোগ করেছেন। “এই যুদ্ধে অপরাধের দায় থেকে কেউ মুক্ত নয়।”
এই স্টোরি মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে তৈরি ধারাবাহিকের সর্বশেষ পর্ব।
আরও পড়ুন
১০ টিপস ফর ইউজিং জিওলোকেশন অ্যান্ড ওপেন সোর্স ডেটা টু ফুয়েল ইনভেস্টিগেশনস
প্লেনস্পটিং: আকাশের উড়োজাহাজ ট্র্যাক করবেন যেভাবে
যুদ্ধাপরাধ অনুসন্ধানের ১৫টি পরামর্শ
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশি প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।