রুশ আগ্রাসনের ফলে ইউক্রেনে লাখ লাখ মানুষ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছেন। এই ঘটনা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা ও তাঁদের প্রতি বিরূপ আচরণের বিষয়টিকে নতুন করে সামনে এনেছে।
মাত্র কয়েক মাসে, সবাইকে অবাক করে ৬৫ লাখেরও বেশি মানুষ ইউক্রেনের বাইরে আশ্রয় চেয়েছে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিধিসম্মতভাবে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে এবং সেখানে তাদের সাদরে স্বাগত জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের হিসেবে রুশ আগ্রাসনের আগেই সিরিয়া, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, ভেনেজুয়েলা ও মিয়ানমারের মত দেশগুলো থেকে তিন কোটির বেশি শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী সুরক্ষার আশায় নিরাপদ দেশগুলোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। সেখানে পৌঁছাতে গিয়ে তাদের অনেকেই অনিয়মিত বা বিপজ্জনক অভিবাসন রুট বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এধরনের যাত্রাপথে তাঁরা চোরকারবারি ও মানবপাচারকারীসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধী চক্রের হাতে নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন এবং কড়া সীমান্ত নীতি ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়নের মুখে পড়েন।
অনেক ক্ষেত্রেই এসব ঘটনা ঘটে দুর্গম সীমান্ত এলাকায় এবং অবৈধ অর্থনীতির ছায়ায়। ভুক্তভোগীদের প্রায়ই বৈধ (নাগরিক বা অভিবাসী) মর্যাদা থাকে না অথবা তাদের নিজ দেশও তাদের অধিকারের পক্ষে কথা বলে না। অভিবাসন, একটি ইস্যু হিসেবে সমাজে বিভাজন তৈরি করে, যা ইচ্ছাকৃত মিথ্যা-প্রচারণা ও রাজনৈতিক উন্মাদনার বিষয়বস্তুও হয়ে থাকে। বর্ণবাদ ও ঔপনিবেশিকতার অব্যাহত প্রভাব এবং উন্নত ও অনুন্নত বিশ্বের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যহীনতার স্থায়িত্ব নিয়ে যে বৈশ্বিক আলোচনা, তার সঙ্গেও বিষয়টি অঙ্গাঙ্গি জড়িত।
এই বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের সম্ভাবনা বেশ সমৃদ্ধ: শরণার্থী পুর্নবাসন কর্মসূচিতে জেঁকে বসা দুর্নীতি উন্মোচন; চোরাচালান থেকে মুনাফা করা ব্যক্তিদের মুখোশ খোলা; সাগরে হারিয়ে যাওয়াদের ভাগ্য অনুসন্ধান; এবং সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিবদ্ধ করা – এর মাত্র কয়েকটি উদাহরণ।
এই স্টোরিগুলো উন্মোচনের প্রক্রিয়া অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার অন্য যে কোনো ধারার মতো অভিন্ন কৌশল ও টুলের ওপর নির্ভর করে: পদ্ধতিগত, গভীর রিপোর্টিং; উন্মুক্ত নথি ও ডেটা যাচাই; লম্বা সময় নিয়ে আস্থাভাজন সোর্স তৈরি। অবশ্য, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী সংশ্লিষ্ট ইস্যুর সঙ্গে সুনির্দিষ্ট যে প্রেক্ষাপট জড়িয়ে রয়েছে, তা স্বতন্ত্র কিছু চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি তৈরি করে। মনে রাখার জন্য এখানে কয়েকটি উত্তম চর্চা তুলে ধরা হলো:
১. ট্রমা-সচেতন রিপোর্টিং নীতিমালা মেনে চলুন
বিষয়টি মৌলিক হলেও, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী ইস্যু নিয়ে অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটটি মনে করিয়ে দেওয়া জরুরি: যে বাস্তবতা মানুষকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে সেটি মানসিকভাবে পীড়াদায়ক, এবং শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা তাদের যাত্রাপথে পদে পদে আরও মানসিক আঘাত ও হয়রানির শিকার হন। তাই এ ব্যাপারে সচেতন ও সংবেদনশীল হওয়া আবশ্যক।
এ কারণে, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় ট্রমা-সচেতন ও কম-প্রশ্ন-করা (লেস-এক্সট্র্যাকটিভ) সাংবাদিকতার উত্তম চর্চাগুলো অনুসরণ করা জরুরি। এ নিয়ে অনলাইনে অসংখ্য গাইড ও ওয়েবিনার আছে, যা রিসোর্স হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
২. সোর্সের কাছে আপনার চাওয়া যেন বাস্তবসম্মত হয়
সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে থাকা মানুষদের সঙ্গে কথা বলার সময় এটি মনে রাখা বিশেষভাবে জরুরি। অনেক শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী এমন পরিস্থিতিতে থাকেন। রিপোর্টিংয়ের সময় শরণার্থী সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসাহী ও দ্বিধাগ্রস্ত- দু’ধরনের সোর্সই দেখেছি। “দয়া করে আমার কথা অন্যদের জানান। এখানে কী ঘটছে, বিশ্ববাসী যেন তা জানতে পারে এবং আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে,” থেকে শুরু করে “কেন আমি আপনার কাছে আমার কথা বলব? আমি অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছি, এবং কিছুই বদলায়নি” – এমন অনেক ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি।
(সোর্সদের) অনিচ্ছা কাটাতে গিয়ে সাংবাদিকতার মহত্তম আদর্শ তুলে ধরা এবং একটি স্টোরি কীভাবে সব বদলে দিতে পারে সেই প্রতিশ্রুতি দেয়ার লোভ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে। বাস্তবে, বিষয়টি মোটেও এমন নয়। আমরা যে ফলাফলের নিশ্চয়তা দিতে পারি না, সে প্রতিশ্রুতি করার মানেই হচ্ছে মিথ্যা আশা দেওয়া, আর সেই আশা ভেঙ্গে গেলে তার ফল হয় মোহভঙ্গ ও ক্ষোভ। তাই যদি ঠোঁটকাটা না-ও হন, অন্তত সৎ থাকুন। মানুষকে বলুন, তাঁরা যে অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন সেটি যথাযথভাবে তুলে ধরতে আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন, তবে তারা যেন এটাও বোঝেন যে, এই পেশার সীমাবদ্ধতাও অনেক। আমি দেখেছি, অকপট আচরণ আস্থা তৈরি করে, যার ফলে মানুষ কথা বলতে আরও বেশি আগ্রহী হয়।
৩. আইনী কাঠামো সম্পর্কে জানুন
শরণার্থীদের আর্ন্তজাতিক সুরক্ষা কাঠামোর আইনী ভিত্তি হল জাতিসংঘের ১৯৫১ সালের রিফিউজি কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের প্রোটোকল। অন্য মূলনীতিগুলো উল্লিখিত রয়েছে ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র এবং আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার আইনে। সাধারণ মানুষ যেন নিজ দেশে যুদ্ধ ও নিপীড়নের শিকার হলে পালিয়ে ও নিরাপত্তার খোঁজে অন্য দেশে যেতে পারেন, তার স্পষ্ট অধিকার এই আইনী নীতি ও রীতিগুলোতে দেওয়া আছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিপদ বা নিপীড়নের আশঙ্কা আছে এমন দেশে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোও নিষিদ্ধ করা হয়েছে এসব নীতিতে।
তবে সব রাষ্ট্র জাতিসংঘের এই কনভেনশনে সই করেনি এবং কিছু দেশ ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে সুরক্ষার সুযোগ বাড়াতে বা কমাতে নিজস্ব আইন তৈরি করেছে। সামগ্রিকভাবে, স্থানীয় আদালতের সীমাবদ্ধতা ও আর্ন্তজাতিক আদালতের অকার্যকারিতার কারণে একটি দেশকে শরণার্থী আইন মানতে বাধ্য করা কঠিন। এর অর্থ হচ্ছে – সুরক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা থাকলেও শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা প্রায়ই আইনের কৃষ্ণগহ্বরে আটকে যান। যেসব বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী ও এনজিওকর্মী জবাবদিহির ঘাটতি নিয়ে পড়াশোনা করেন এবং সেই ঘাটতি কমাতে চেষ্টা করেন, তাদের সাক্ষাৎকার আপনাকে এই জটিল পরিস্থিতি বুঝতে এবং সম্ভাব্য আইন লঙ্ঘনের ধরনগুলো জানতে সহায়তা করতে পারে।
৪. পরিভাষা সম্পর্কে জানুন
১৯৫১ সালের জাতিসংঘ কনভেনশন অনুযায়ী, আইনগতভাবে শরণার্থী বলতে বোঝায় “জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ বা রাজনৈতিক মতামতের জন্য নিপীড়নের শিকার হওয়ার যথাযথ ভয়ের কারণে যাঁরা নিজ দেশে ফিরতে পারেন না বা ফিরতে অনিচ্ছুক।” তবে প্রচলিত অর্থে যুদ্ধ বা নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা যে কারো ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য। যেসব শরণার্থী নিরাপত্তার আশায় ঘরবাড়ি ত্যাগ করেছেন, কিন্তু জাতিসংঘ বা আশ্রয়দাতা দেশের স্বীকৃতি পাননি, তাঁদেরকে আশ্রয়প্রার্থী বলে। আর “অভিবাসী” পরিভাষাটির অর্থ বেশ ব্যাপক। বিভিন্ন কারণে যারা রাষ্ট্রীয় সীমান্ত পাড়ি দেন বা কখনো কখনো সীমান্তের অভ্যন্তরে স্থান পরিবর্তন করেন, তাদেরকে অভিবাসী বলে।
বাস্তবে মানুষের ঘর ছাড়ার কারণ বেশ জটিল এবং এদের সরল শ্রেণিবিভাজন হয় না। সীমান্ত পাড়ি দেয়া মানুষদের বোঝাতে “অনথিভুক্ত অভিবাসী” বা “ছুটে চলা মানুষ” বা “বেআইনী বহিরাগত” – এ জাতীয় বেশ কিছু পরিভাষা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এবং কখনো কখনো অপমানসূচকভাবে ব্যবহার করা হয়। দিনশেষে শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসী সবার নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও গল্প আছে। তাদের শ্রেণীবিভাজনে ব্যবহৃত পরিভাষা ও তার ব্যাখ্যা জানা জরুরি, যেন অবমাননাকর ভাষ্যগুলোই স্থায়ী হয়ে না যায়।
৫. নির্ভরযোগ্য ডেটা বের করুন এবং এর উপস্থাপনা সম্পর্কে সজাগ থাকুন
শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীরা সাধারণত সীমানা পারাপারের আনুষ্ঠানিক জায়গা দিয়ে চলাচল করেন না, যা এনজিও বা অন্য স্বাধীন সংগঠনগুলোর পক্ষেও পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। তাই ছুটে চলা মানুষের সংখ্যা এবং যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে কী হচ্ছে – এ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য ডেটা খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুতি ও শরণার্থীদের গতিবিধি নিয়ে পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) অভিবাসনকালে হারিয়ে যাওয়া বা মারা যাওয়া মানুষের ডেটা সংকলন করে। দুটি সংস্থাই সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক স্ন্যাপশট, পর্যালোচনা এবং নির্দিষ্ট ঘটনাভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। শরণার্থী ও অভিবাসন প্রবণতার ওপর নজর রাখতে এই প্রকাশনাগুলো বেশ সহায়ক। বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থা এবং অনেক ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও অনিয়মিত অভিবাসন ও সীমান্তে আইনপ্রয়োগ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।
তবে, অভিবাসন সম্পর্কিত ডেটা নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে সতর্ক দৃষ্টি রাখা জরুরি, কারণ এটি কেবল ঘটমান বিষয়ের খণ্ডচিত্র তুলে ধরে। প্রায়ই এই খণ্ডচিত্রে ফাঁকফোকর থাকে এবং সেটি এমনভাবেও উপস্থাপিত হতে পারে যেন তথ্য সংগ্রহকারী আর্ন্তজাতিক বা সরকারি সংস্থার স্বার্থ রক্ষা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিশ্বে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ১০ কোটি। ইউএনএইচসিআর-এর এই পরিসংখ্যান হয়ত প্রায়ই উদ্ধৃত হবে। অথচ এই সংখ্যার অর্ধেক নিজ দেশে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির শিকার, যাঁরা পুরোপুরিভাবে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী সংক্রান্ত আইনী কাঠামোর বাইরে।
যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও “আইনপ্রয়োগের ঘটনার” ডেটা সংগ্রহ করে, কিন্তু এই ডেটা থেকে বোঝা যায় না যে জড়িতেরা একবারের বেশি, বা আদৌ সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময়, গ্রেফতার হয়েছেন কিনা। ফলে এই পরিসংখ্যান থেকে দেশটিতে নিয়মবর্হিভূতভাবে প্রবেশের চেষ্টা করা মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা পাওয়া যায়।
৬. অর্থের গতিবিধি অনুসরণ করুন
বাস্তুচ্যুতির ঘটনায় মানবিক প্রতিক্রিয়া ও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের সরকারি প্রচেষ্টা – উভয় ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। সেখানে সম্ভাব্য দুর্নীতি, অপচয়, তহবিলের নয়ছয় ও প্রতারণা থাকাটা অবধারিত। দাতা গোষ্ঠী, সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে জবাবদিহি করতে সাংবাদিকদের ভূমিকা আছে। অনেক দেশ ও দাতা প্রতিষ্ঠানকে উন্মুক্ত ডেটাবেস রাখতে হয়, যা অর্থের গতিবিধি অনুসন্ধানে সমৃদ্ধ উপাদান যোগান দিতে পারে। স্টেট ওয়াচ, ট্রান্সন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ও লাইটহাউস রিপোর্টসের মত কিছু এনজিও ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠান প্রহরীর ভূমিকা পালন করে। টাকা কীভাবে ব্যয় (বা অপব্যয়) হচ্ছে, কে লাভবান হচ্ছে, আর বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহল কীভাবে জননীতিকে প্রভাবিত করছে – এ বিষয়ে তারা গভীর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে।
৭. যতটা সম্ভব মাঠ থেকে রিপোর্ট করুন
এখন ডেটা ঘেঁটে ও উন্মুক্ত তথ্য ব্যবহার করে দূর থেকেই অনেক অনুসন্ধানী কাজ করা যায়। এরপরও মাঠপর্যায় থেকে রিপোর্ট করা জরুরি। আগে যেমনটা বলা হয়েছে, শরণার্থীদের নিয়ে অনুসন্ধানে অনেক ঘটনা থাকে যা প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকায় ঘটে। চলমান ঘটনা সম্পর্কে দূর থেকে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া কঠিন, আর নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব ও মিথ্যা তথ্যের আধিক্য পুরো চিত্রটিকে আরও ঘোলাটে করে তুলতে পারে। এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় হলো সীমান্ত এলাকায় যাওয়া, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলা এবং ঘটনা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা। ডের স্পিগেল ও লাইটহাউস রিপোর্টের একটি স্টোরি ইইউর বহির্সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ইউরোপীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা উন্মোচন করেছে। এটি এ ধরনের অনুসন্ধানের এক দারুণ দৃষ্টান্ত, যা কেবল কাজ মাঠপর্যায়েই করা যায়।
৮. সমষ্টিগত ডেটা ও প্যাটার্ন আপনার বন্ধু
সরকার সাংবাদিকদের সীমান্ত এলাকায় প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, এলাকাটি সহিংস বা প্রত্যন্ত, অথবা সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতির কারণে সেখানে প্রবেশ ঝুঁকিপূর্ণ – এমন সব কারণে মাঠে গিয়ে রিপোর্ট করা কঠিন হলে সমষ্টিগত ডেটা আপনার জন্য ঘটনাকে বোঝার একটি শক্তিশালী টুল হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহির্সীমান্তে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য উন্মোচনে একই কৌশল ব্যবহার করে অনুসন্ধানী রিপোর্টের আরও দারুণ সব নজির আছে।
কোনো ঘটনা বা তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাত্র একজন ব্যক্তির সাক্ষ্য যথেষ্ট নয়। সময় নিয়ে একই রকমের ডজন খানেক বা শ’ খানেক সাক্ষ্য নেওয়া গেলে সেটি একটি স্পষ্ট আচরণগত প্যাটার্ন দাঁড় করাতে পারে যা অপরাধ উন্মোচন ও অপরাধীদের জবাবদিহি করতে কাজে লাগানো যায়।
৯. জাতীয় দুর্যোগ জাতীয় শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
এই যুক্তিটি আমার একার নয়, আগেও অনেকেই বলেছেন, তবুও এটি আবার বলার দাবি রাখে। মানুষ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতির শিকার হলে এবং তারা সীমান্ত পাড়ি দেওয়া শুরু করলেই অবধারিতভাবে সংবাদের শিরোনামেও কিছু শব্দ চলে আসে: মানুষের “বন্যা”, “ঢেউ”, এবং “জোয়ারে” অঞ্চলগুলো “ছেয়ে গেছে,” “ভেসে গেছে” অথবা “উপচে পড়েছে”। এই শব্দগুলো ধ্বংসাত্মক প্রাকৃতিক শক্তির সঙ্গে তাঁদের তুলনা করে এবং তাদেরকে সমস্যা হিসেবে উপস্থাপন করে, যা শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য অবমাননাকর। এটি শরণার্থী-বিরোধী মনোভাব বা বিদেশি-ভীতির উগ্রপন্থাকে উস্কে দিতে পারে এবং কট্টর নীতির পথকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করে।
শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে প্রতিবেদনে ভাষার ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত এবং ভীতি ছড়ানো বা পক্ষপাত পরিহার করে ফলাফল উপস্থাপন করা উচিত। এটি আপনাকে ত্রুটিপূর্ণ সাংবাদিকতার চিরায়ত চর্চা থেকে দূরে রাখতে, যাদের কথা বলছেন তাদের মানবিকভাবে তুলে ধরতে, এবং আপনার অনুসন্ধানকে এর কাঙ্ক্ষিত প্রভাব এনে দিতে সাহায্য করতে পারে।
আরও পড়ুন
জিআইজেএন’স মাইগ্রেশন রিপোর্টিং গাইড: সোর্স, গাইডলাইন, কনটেস্ট
আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে অভিবাসন নিয়ে রিপোর্টিং গাইড
ম্যাপিং মাইগ্রেশন ডেথস উইথ জিআইএস মডেলিং
লিডিং উইথ এমপ্যাথি হোয়েন রাইটিং অ্যাবাউট ডিসপ্লেসড পিপল
এরিক রেইডি একজন পদকজয়ী সাংবাদিক এবং জিআইজেএনের সদস্য, স্বাধীন অলাভজনক সংবাদমাধ্যম নিউ হিউম্যানিটারিয়ানের অভিবাসন বিষয়ক এডিটর অ্যাট লার্জ। প্রতিষ্ঠানটি মূলত শত শত কোটি ডলারের জরুরি সহায়তা খাত নিয়ে কাজ করে। রেইডি গত আট বছরে ভূমধ্যসাগর, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত ও বৈশ্বিক পর্যাযের অভিবাসন নিয়ে অনেক রিপোর্ট করেছেন।