জিআইজেএন টুলবক্সে আপনাকে স্বাগতম। এখানে আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য সর্বশেষ টিপ ও টুল নিয়ে আলোচনা করি। এই সংস্করণে আমরা ডেটাবেস ও রিমোট সেন্সিং টুল সম্পর্কে বিস্তারিত জানব, যা স্থানীয় পরিবেশগত ঝুঁকি অনুসন্ধানে সাংবাদিকেরা ব্যবহার করতে পারেন।
নিচে আমরা যেসব রিসোর্স তুলে ধরেছি, তার বেশিরভাগই আলোচিত হয়েছে সাংবাদিকতার অলাভজনক আর্ন্তজাতিক জোট, এনভায়রনমেন্টাল জার্নাালিজম ফোরাম (ইআইএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে। আর বাকিগুলো এসেছে ফ্রিল্যান্স অনুসন্ধানী রিপোর্টার ও ইআইএফ-এর পরিচালক আলেক্সান্দ্রে ব্রুটেলের ফলো-আপ সাক্ষাৎকার থেকে।
ব্রুটেল মনে করেন পরিবেশগত অনুসন্ধানের ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জল; কারণ একদিকে কোলাবরেশন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, আর অন্যদিকে স্যাটেলাইট ছবি, ওপেন সোর্স জিওগ্রাফিকাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) ডেটা টুল, গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের মতো প্রতিষ্ঠিত ডেটাবেস ব্যবহারের সঙ্গে সাম্প্রতিক অনুসন্ধানের ডেটা শেয়ারিংয়ের মত সুযোগের সমন্বয় ঘটানো যাচ্ছে। ডেটা শেয়ারিংয়ের উদাহরণ হিসেবে তিনি আফ্রিকার উদ্ভাবনী অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠান অক্সপেকার্সের তৈরি পরিবেশগত অপরাধের ক্রমবর্ধমান আর্কাইভ #ওয়াইল্ডআই এর কথা উল্লেখ করেন। মিয়ানমারের কাঠ রপ্তানি থেকে ভারতে বন্যপ্রাণী পাচার পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ইকো-ট্রেডিং এবং তদসংশ্লিষ্ট গ্রেপ্তার, মামলা এবং বাজেয়াপ্ত করা সম্পদ ট্র্যাক করতে এর কিউরেটেড ডেটা ব্যবহার করতে পারেন সাংবাদিকেরা।
ব্রুটেল বলেন, “এটি সাংবাদিকদের তৈরি করা পরিবেশগত টুলের একটি ভালো উদাহরণ, এবং তাদের ডেটা দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার ভিত্তিভূমি থেকে এশিয়া, ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালে ফ্রান্সে অলাভজনক সংগঠন হিসেবে নিবন্ধনের পর থেকে – সীমিত বাজেট সত্ত্বেও – মধ্য পূর্ব ও উত্তর আফ্রিকা, বলকান, যুক্তরাষ্ট্র, ও ইউরোপের সাংবাদিক ও ডেটা সায়েন্স বিশেষজ্ঞসহ ৬০ জন ব্যক্তি-সদস্যের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ইআইএফ।
তিনি বলেন, “ইআইএফের উদ্দেশ্য, সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করা। নতুন নতুন পরিবেশ সাংবাদিকতা উদ্যোগ ও টুলের প্রসারে আমরা একটি বৈশ্বিক কনসোর্টিয়ামে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।”
হুমকিতে থাকা এলাকার প্রেক্ষাপট জানার বৈশ্বিক ডেটাসেট
নতুন খনি হোক বা বিষাক্ত বর্জ্য ছড়িয়ে পড়া – আপনি যখন কোনো নির্দিষ্ট পরিবেশগত হুমকি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করছেন, তখন ঐ জায়গার বিদ্যমান সংরক্ষণ আইন, পরিবেশগত ঝুঁকির তথ্য, এলাকাটির ব্যবস্থাপনার ইতিহাস, এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর তুলে ধরা সমস্যা সম্পর্কে চট করে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ব্রুটেল বলেন, নিম্নোক্ত তিনটি বৈশ্বিক ডেটাবেস এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং মনে আরও অনেক প্রশ্ন তৈরি করতে পারে।
- ডোপা এক্সপ্লোরার: “খুব সাধারণ হলেও সত্যিই কাজের একটি টুল ডোপা (DOPA), যা মূলত সব ধরনের জলাভূমি, পাখিদের চারণভূমি, রামসার [জলাভূমি] সাইট, এবং ইউনেস্কো সংরক্ষিত এলাকাসহ আর্ন্তজাতিকভাবে সুরক্ষিত এলাকাগুলোর একটি ব্যবহারকারীবান্ধব তালিকা,” বলেন ব্রুটেল। “উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন জানতে পারি আফ্রিকার একটি দেশে কোনো নতুন পশ্চিমা খনি কোম্পানি কাজ করছে, তখন আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হয় এলাকাটির ভৌগলিক অবস্থানগত তথ্য (কোঅর্ডিনেটস বা স্থানাঙ্ক) নেওয়া এবং দেখা যে সেটি ডোপা ডেটা অনুযায়ী কোনো সুরক্ষিত এলাকার সঙ্গে ওভারল্যাপ করছে কি না।” ইউরোপীয় কমিশনের জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের তৈরি করা ডিজিটাল অবজারভেটরি ফর প্রোটেক্টেড এরিয়াস (ডোপা) রিপোর্টারদের কেবল ম্যাপের ভেতর আইনগতভাবে সুরক্ষিত এলাকাই দেখায় না, বরং দুর্বল ইকোসিস্টেম ও বিভিন্ন প্রজাতির ওপর আইনের প্রাসঙ্গিক প্রভাবও বিশদভাবে তুলে ধরে। তিনি বলেন, “যা কাজে লাগে তা হলো, আপনি যে এলাকা দেখছেন, সেখানে বিপন্ন প্রজাতি বা লাল তালিকায় থাকা প্রাণী আছে কিনা – সংরক্ষণ সংক্রান্ত এমন অন্যান্য বিষয়ের ওপর এখানে তথ্য রয়েছে।”
- প্রোটেক্টেড প্লানেট: সাংবাদিকেরা ডোপা এক্সপ্লোরারের সঙ্গে প্রোটেক্টেড প্লানেটও ব্যবহার করতে পারেন। এটি ২৬৯০০০ স্থলজ ও জলজ সুরক্ষিত এলাকার একটি ডেটাবেস। এটি জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক কর্মসূচির একটি প্রকল্প। দূষণকারী শিল্পকারখানা ও দূষণ পর্যবেক্ষকেরা এটি ব্যবহার করে থাকেন। ইআইএফের রিমোট সেন্সিং বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিনা ওরিয়েশনিগ ব্যাখ্যা করে বলেন, এই সাইটে সুরক্ষিত এলকার ব্যবস্থাপনা মূল্যায়ন, স্থানীয় অংশীদারদের তথ্য, এবং সাংবাদিকদের জন্য সহজে গ্রাফিক ডাউনলোডের সুযোগ আছে। তিনি বলেন, “আমি সত্যিই এই সাইটটি পছন্দ করি। এখানে পর্যাপ্ত শেপফাইল আছে, যেখান থেকে আপনি বিশ্বের যে কোনো সুরক্ষিত এলাকার তথ্য ডাউনলোড করতে পারেন।”
- ইজেঅ্যাটলাস: অটোনোমাস ইউনিভার্সিটি অব বার্সেলোনার ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি পরিচালিত এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস অ্যাটলাস (ইজেঅ্যটলাস) হলো কমিউনিটির ওপর পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাব ও পরিবেশগত সংঘাতের হটস্পটগুলোর দ্রুত বর্ধনশীল বৈশ্বিক তালিকা। এই মানচিত্রজুড়ে অসংখ্য নোড আছে এবং সেখানে ক্লিক করে হাজার হাজার পরিবেশগত ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে আইনী ফলাফল ও স্থানীয়দের প্রতিবাদের মতো ঘটনা রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক নথিপত্র, গবেষণা, এবং অ্যাক্টিভিস্টদের ওয়েবসাইট যুক্ত থাকে।
ব্রুটেল বলেছেন, অ্যাটলাস প্রাথমিক সোর্স নয় বরং স্টোরির সূত্র ও ধারণার জন্য রিসোর্স হিসেবে বেশি কার্যকর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উত্তর আফ্রিকার খনিতে নিপীড়ন নিয়ে অনুসন্ধানের সময় ব্রুটেল এই টুল থেকে জানতে পারেন যে, একই এলাকায় বিদেশি রাজপরিবারের সদস্যরা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাখিও অবৈধভাবে শিকার করে। “শুধুমাত্র ব্রাউজ করে এই টুল থেকে অনুসন্ধানের নতুন নতুন ধারণা পাওয়া যেতে পারে” বলেও তিনি জানান। “এমনিতে এটিকে স্টার্টিং পয়েন্ট বলাই ভালো, তবে আপনি যে এলাকা নিয়ে কাজ করছেন সেখানকার কোনো পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপট বা প্রতিবাদের ইতিহাস যাচাই করার ক্ষেত্রে এটি বেশ সহায়ক। কোনো দূর্গম অঞ্চল বা আপনার পক্ষে পৌঁছনো অসম্ভব এমন কোন জায়গায় পরিবেশগত অপরাধ নিয়ে রিপোর্টিংয়ে এটি বেশ কার্যকর।”
স্কাইট্রুথ ফ্লেয়ারিং ম্যাপ
তেল কূপ ও শোধনাগারে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রজ্বলনের কারণে পরিবেশে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ও মিথেন যুক্ত হয় এবং এখান থেকে এমন গ্যাসও নির্গত হতে পারে যা সংরক্ষণ করা ব্যয়বহুল। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন অগ্নিশিখা ও মিথেনের ঘনত্ব থেকে দূষণের চিত্র সম্পর্কে ধারণা মেলে, যা মহাকাশ থেকেও সনাক্ত করা যায়। স্যাটেলাইট ছবিতে ইনফ্রারেড ফিচারের স্বয়ংক্রিয় বিশ্লেষণ ব্যবহার করে স্কাইট্রুথ ফ্লেয়ারিং ম্যাপ বিশ্বব্যাপী খনিজ গ্যাস প্রজ্বলনের প্রায় রিয়েল-টাইম মানচিত্র তৈরি করে। এটি প্রজ্বলনের পরিমাণ-সূচক মানচিত্রও তৈরি করে, যা লাল বিন্দুর মাধ্যমে মিথেনের উচ্চ ঘনত্ব তুলে ধরে।
তিউনিশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে গোপন, “অপ্রচলিত” গ্যাস খনন প্রকল্পের ঝুঁকি নিয়ে সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানে প্রথমবারের মতো স্কাইট্রুথ ব্যবহার করেন ইআইএফের রিমোট সেন্সিং বিশ্লেষক মোমচিল ইয়োরদানভ; তিনি খুব দ্রুত অতিরিক্ত গ্যাস রিগ এবং গ্যাস উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত জ্বালানি কোম্পানিগুলোকে সনাক্ত করে ফেলেন।
ইয়োরদানভ বলেন, “গ্যাস নির্গমন সনাক্তকরণে এটি ভালো কাজ করে, ঠিক যেমন টুল নিয়ে আমরা কাজ করতে চাই।”
ব্রুটেল আরও বলেন, “যেমন, খননকাজ নিয়ে স্কাইট্রুথের আরও কিছু চমৎকার টুল আছে, তবে ফ্লেয়ারিং ম্যাপ তাদের বৈশ্বিক টুল।”
তিনি উল্লেখ করেন, “প্রধান প্রধান ফ্লেয়ারিং সাইট দেখার জন্য এই রেজ্যুলুশন যথেষ্ট ভালো। আপনার দেশের ক্ষেত্রে আপনাকে শুধু ম্যাপের লাল বিন্দুতে যেতে হবে এবং তারপর ফ্লেয়ারিংয়ের চিহ্ণের সঙ্গে বাস্তবে কী হচ্ছে, তা মিলিয়ে নিতে হবে।”
ব্রুটেল বলেছেন, এই টুল দিয়ে মিথেন উৎপন্নকারী অন্যান্য প্রক্রিয়া সনাক্ত করা যায়। তিনি বলেন, “লাল বিন্দু দেখলে নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন: এই জায়গায় মিথেনের ঘনত্ব বেশি কেন, এটি কি কোনো সুরক্ষিত এলাকায় অবস্থিত এবং এটি কি আইনি সীমার ওপরে? এটি উন্মুক্ত বায়ু-বর্জ্য ডাম্প, বা আবর্জনা পোড়ানো, বা অবাঞ্ছিত জ্বালানি পোড়ানোর সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট হতে পারে।”
গ্যাস ফ্লেয়ারিং সম্পর্কে আরও জানতে জিআইজেএনের ক্লাইমেট চেঞ্জ রিপোর্টিং গাইডের মিথেন অনুসন্ধান অধ্যায় দেখুন।
গুগল আর্থ ইঞ্জিন
সবচেয়ে পছন্দের অনুসন্ধানী টুল সম্পর্কে জানতে চাইলে ইআইএফের ওরিয়েশনিগ বলেন, “এক কথায় গুগল আর্থ ইঞ্জিন!”
ক্লাউডের শক্তি কাজে লাগিয়ে গুগল আর্থ ইঞ্জিন দ্রুত বিপুল পরিমাণ স্যাটেলাইট ইমেজ ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৩ সালে, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড পরিচালিত গ্লোবাল ফরেস্ট চেঞ্জ প্রকল্পের কথা। বৈশ্বিকভাবে বনাঞ্চল হ্রাসের অবস্থা জানতে তারা নাসার ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট থেকে নেয়া ২০ টেরাপিক্সেলের বিপুল পরিমাণ ছবি প্রক্রিয়াজাত করেছিল এই সিস্টেমের সাহায্যে। গবেষকরা জানিয়েছেন, “একটি কম্পিউটার যে কাজ করতে ১৫ বছর সময় নেয় গুগল আর্থ ইঞ্জিন কম্পিউটিং ব্যবহার করে তা মাত্র কয়েকদিনে শেষ করা গিয়েছিল।”
এই টুলও অনুসন্ধানী রিপোর্টারদের জন্য পৃথিবীর ভূ ও জলপৃষ্ঠের পরিবর্তন সনাক্ত ও পরিমাপে সহায়ক হতে পারে। গত বছর, বুলগেরিয়ার লেক ভার্না ও সংলগ্ন জলাধারে তরল বর্জ্য নিঃসরণের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অনুসন্ধান করেছে ইআইএফ। এই জলাধার কৃষ্ণসাগরকে যুক্ত করে এবং মাছ ধরা ও পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দলটি এই লেকে ব্যাপক হারে জন্ম নেয়া শৈবাল সনাক্তকরণে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তারা আবিষ্কার করে, এই বিপুল ডেটা প্রক্রিয়াজাত করতে তাদের অনেক বেশি শক্তিশালী কম্পিউটিং সক্ষমতা প্রয়োজন।
ওরিয়েশনিগ বলেন, “এত ডেটা বিশ্লেষণ করতে গেলে আমার কম্পিউটার হয়ত ভেঙে পড়তো।” তিনি আরও বলেন, অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস – এপিআই এক ধরনের সফটওয়্যার কোড, যা একটি ওয়েবসাইট, অ্যাপ, বা প্রোগ্রামকে অন্যটির সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ করে দেয়। এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় বিধায়, রিপোর্টারেরা “খুব দ্রুত ও সহজে জাভাস্ক্রিপ্ট প্রোগ্রামিং পরিবেশে থেকে অতি দ্রুত এবং সহজে হিসাব নিকাশ করতে পারেন। অবশ্যই আপনি ফলাফলগুলো আপনার গুগল ড্রাইভে এক্সপোর্ট করতে পারেন, তবে ডেটা প্রসেসিং হয় গুগল সার্ভারে।”
এই সেবার মধ্যে সবসময় ব্যবহারযোগ্য একটি স্যাটেলাইট ডেটা ক্যাটালগ রয়েছে। এটিতে ৪০ বছরের ছবি রয়েছে যা নিয়মিত হালনাগাদ করা হয় এবং সার্চ করা যায়। ওরিয়েশনিগ ব্যাখ্যা করে বলেন, ব্যবহারের অনুরোধ জানাতে রিপোর্টারদের গুগল আর্থ ইঞ্জিন হোম পেজের ওপরে ডান কোণে “সাইন-আপ” চিহ্নে ক্লিক করতে হবে। তিনি বলেন, “আমাকে প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল ব্যবহার করতে হয়নি – সাড়া পেতে চার দিন সময় লেগেছে, এবং অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এটি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়।”
শৈবাল ও ”পরিস্কার” পানি যে পুরোপুরি আলাদা তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো শোষণ করে – এটি মেনে নিয়ে লেক ভার্নায় শৈবালের বিস্তার পরিমাপের জন্যে এই ডেটা টুল ব্যবহার করেন ওরিয়েশনিগ। এই কাজে তিনি তরঙ্গদৈর্ঘ্যকে ভিত্তি হিসেবে ধরেন। তিনি আরও বলেন, “মজার বিষয় হল, এভাবে এই ডেটা ব্যবহার করলে আমরা কেবল শৈবালের বর্তমান অবস্থানই নয়, সেই সাথে এর ঘনত্ব সম্পর্কেও জানতে পারি।”
মোটাদাগে, একটি বাসের চেয়ে আকারে বড় – দাবানল থেকে শুরু করে বন্যা বা শৈবালের বিস্তৃতি – এমন যে কোনো কিছু ধারণ ও পরিমাপ করা যায় ফ্রি ও ওপেন অ্যাক্সেস স্যাটেলাইট ছবির কল্যাণে। এর একটি উদাহরণ হল, সেন্টিনেল হাব, যা ১০ মিটার রেজ্যুলুশনের ছবিও তুলতে পারে।
যেসব রিপোর্টার অল্পবিস্তর জাভাস্ক্রিপ্ট এপিআই জানেন, তাদেরকে জিওস্পেশিয়াল ডেটা নিয়ে কাজের জন্য এই টিউটোরিয়াল ও এই ব্লগ দেখার পরামর্শ দিয়েছেন ওরিয়েশনিগ।
স্যাটেলাইট কোম্পানির কাছে ডেটার জন্য অনুরোধ পেশের উপায়সহ অনুসন্ধানে স্যাটেলাইট ছবির ব্যবহার নিয়ে আরও জানতে পড়ুন জিআইজেএনের গাইড: স্যাটেলাইট ছবি কোথায় পাবেন এবং কীভাবে ব্যবহার করবেন।
কেস স্টাডি: এশিয়ার মেকং উপত্যকা
খাদ্য, বিদ্যুৎ, পরিবহন, ও বাণিজ্যের জন্য দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ লোয়ার মেকং রিভার বেসিনের নদী ও সমৃদ্ধ জীববৈচিত্রের উপর নির্ভর করে। তবে থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, এবং ভিয়েতনাম নিয়ে এই বিশাল এলাকা পরিবেশগত অবক্ষয়, নগরায়ন, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে হুমকির মুখে। সৌভাগ্যবশত অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় মেকং ডেল্টা নিয়ে পরিবেশগত ডেটার সহজলভ্যতা বাড়ছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার হাইড্রোলজি ও পরিবেশগত ইস্যুর বিশেষজ্ঞ ওরিয়েশনিগ, এই অঞ্চলের রিপোর্টারদেরকে এই রিসোর্সগুলো দেখার পরামর্শ দেন:
- মেকং রিভার কমিশন ডেটা পোর্টাল: ডেটাবেসটিতে এই অঞ্চলের পানি প্রবাহ নিয়ে ১০ হাজারের বেশি ডেটাসেটের সংকলন ও বিশ্লেষণ রয়েছে। ওরিয়েশনিগ বলেন, “জলবিদ্যা এবং বন্যা থেকে শুরু করে মৎস্যসম্পদ এবং ভূমি আবরণ পর্যন্ত সবকিছুর ডেটার জন্য এই সেবার কাছে আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ।”
- মেকং ড্যাম মনিটর: অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্টিমসন সেন্টারের তৈরি করা মেকং ড্যাম মনিটর এই অঞ্চলে অবস্থিত বাঁধ ও জলবিদ্যুতের আপ-টু-ডেট তথ্যের জন্য স্যাটেলাইট ছবি, জিআইএস বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য ডেটা সোর্স ব্যবহার করে। তিনি বলেন, “এটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কার্যক্রম ও নির্মাণ, দুটোই পর্যবেক্ষণ করে।”
- ওপেন ডেভেলপমেন্ট মেকং: পরিবেশগত ইস্যুর মানবিক প্রেক্ষাপট নিয়ে ডেটা খুঁজে পেতে এই সাইটের পাশাপাশি ওপেন ডেভেলপমেন্ট কম্বোডিয়া ও তার বিশাল ডেটা হাবের মতো দেশভিত্তিক সাইট যাচাই করার পরামর্শ দেন ওরিয়েশনিগ। তিনি বলেন, “তাদের কাছে জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং পরিবেশগত ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক উন্মুক্ত ডেটা আছে।”
ইআইএফের সদস্য ও দক্ষতা বেড়েছে ঠিক, কিন্তু টাকার টানাটানি আছে। তাই তারা বেশ কিছু উদ্যোগের জন্য অর্থায়ন খুঁজছে। তবে, ব্রুটেল বলেন, ইআইএফ দিনশেষে তাদের নিজস্ব পরিবেশ পর্যবেক্ষণ টুল তৈরি করতে চায়, যার মধ্যে ফ্র্যাকিং কর্মকাণ্ড সনাক্তকরণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই সিস্টেমও রয়েছে। তারা সাংবাদিকদের ব্যবহারের জন্য এই টুলগুলো উন্মুক্ত করে দিতে চান।
ব্রুটেল বলেন, ”আমরা ইতিমধ্যে তিনটি হাই-ইম্প্যক্ট ডিটেকশন ও মনিটরিং টুলের রূপরেখা তৈরি করেছি, যা আমাদের সদস্যদের রিপোর্ট থেকে এসেছে; এবং আমরা এগুলো তৈরি করতে চাই এবং শেয়ার করতে চাই।”
আরও পড়ুন
জিআইজেএন টুলবক্স: গোপন অর্থ লেনদেন ও আর্থিক স্বার্থের সংঘাত অনুসন্ধান
ড্রোন ও স্যাটেলাইট ছবি ব্যবহার করে আকাশ থেকে মিথ্যা উন্মোচন
পরিবেশ সাংবাদিকেরা নাসার নতুন ল্যান্ডস্যাট ৯ স্যাটেলাইট ব্যবহার করবেন যেভাবে
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশি প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।