ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে সাংবাদিকদের কেন জানা উচিত, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ জানিয়েছেন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) ডেটা সম্পাদক ইয়ান স্ট্রোজিক। ইতালির পেরুজিয়ায় অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক সাংবাদিকতা উৎসবের একটি প্যানেলে তিনি জিআইজেএনকে বলেছেন, “[সাংবাদিকেরা] যাদের নিয়ে অনুসন্ধান করেন তাঁরাও এগুলো নিয়ে আগ্রহী হবেন – এবং ব্যবহার করবেন – তাই আপনারও এসব সম্পর্কে জানা উচিত।”
সংগঠিত অপরাধে জড়িত ব্যক্তি ও সাইবার চোরদের জন্য বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো “বেশ আকর্ষণীয়”, কারণ এসব নিয়ন্ত্রণের আইনী তদারকিতে ঘাটতি আছে এবং নাম-পরিচয় গোপন রেখে ব্যবহার করা যায়। ক্রিপ্টোকারেন্সিকে বুঝতে হলে আপনাকে একটি নতুন ধরনের আর্থিক ভাষা শিখতে হবে এবং এমন একটি সমান্তরাল আর্থিক ব্যবস্থার গভীরে যেতে হবে যা বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে অরাজকতা সৃষ্টিকারী পর্যন্ত সবাই পছন্দ করেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, এই অস্পষ্ট বিষয় নিয়ে অনুসন্ধানের বেশ কিছু উপায় আছে, যা রিপোর্টারদের ব্যাপক সাফল্য এনে দিতে পারে; বিশেষ করে তাদের, যারা সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্নটি করতে পারেন।
স্ট্রোজিকের মতে, সাংবাদিকদের প্রথমেই জানতে হবে, তারা কী নিয়ে কথা বলছেন। (ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিভাষা নিয়ে আরও জানতে স্টোরির শেষে সাংবাদিকদের জন্য স্ট্রোজিকের দেয়া শব্দকোষ দেখুন।) একেবারে নতুনদের জন্য তিনি একটি প্রাথমিক পাঠ দিয়েছেন:
প্রশ্ন: ক্রিপ্টোকারেন্সি কী?
স্ট্রোজিক: ক্রিপ্টোকারেন্সি বলতে মূলত এক ধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রাকে বোঝানো হয়, যা আপনি ইন্টারনেটে অর্থ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। কারিগরী দিক থেকে অবশ্য অফলাইনেও এই মুদ্রা ব্যবহার করা যায়, তবে মোটা দাগে এটি টুকরো টুকরো কোডের সমষ্টি, যা আপনি মুদ্রা বা নোট বা যে কোনো ধরনের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন।
প্রশ্ন: প্রচলিত টাকার সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়?
স্ট্রোজিক: প্রচলিত টাকা ও প্রচলিত আর্থিক লেনদেনের তুলনায় ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের কিছু সুবিধা আছে। এই সুবিধাগুলোর একটি হলো আপনি পরিচয় প্রকাশ না করেই, লেনদেন সারতে পারেন। ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনি যদি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে যান, তাহলে ব্যাংক আপনার পরিচয়পত্র দেখতে চাইবে, হয়তো জানতেও চাইবে এই টাকা আপনার কেন দরকার। অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা রাখলে, তারা এর উৎস সম্পর্কেও জানতে চাইতে পারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি, প্রযুক্তিগতভাবে কিছুটা আলাদাভাবে কাজ করে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণের কোনো একক কর্তৃপক্ষ নেই, তাই ব্যাংকের মতো লেনদেন নিয়ন্ত্রণের কোনো বিষয়ও এখানে নেই। কেউ আপনার কাছে কিচ্ছু জানতে চাইবে না।
প্রশ্ন: কারা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে আগ্রহী?
স্ট্রোজিক: এই গোপনীয়তা মূলত এমন একটি গোষ্ঠীর কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে আকর্ষণীয় করে তোলে, যাদের নিয়ে বেশিরভাগ রিপোর্টার-ই আগ্রহী। সেই গোষ্ঠী হলো, সংগঠিত অপরাধ ও সাইবার অপরাধী চক্র, যারা তাদের বিভিন্ন পরিকল্পনায় এটি ব্যবহার করে।
টাকা ধরে অনুসরণ
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান রাইজ প্রোজেক্ট রোমানিয়া ও ওসিসিআরপির অনুসন্ধানী সাংবাদিক আনা পোয়েনারিউ-ও পেরুজিয়ার এই প্যানেলের অন্যতম আলোচক ছিলেন। তিনি বলেন, নাম-পরিচয় গোপন রাখার বিষয়টি মূলত তাদেরই টানে যারা অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত: “প্রত্যেক অপরাধী মনে করে, ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা মানেই আড়ালে থাকা।”
স্ট্রোজিক বলেন, অপরাধীদের এমন ভাবনা অমূলক নয়। একটি নির্দিষ্ট ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বের করা – অথবা উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নির্দিষ্ট এই ব্যক্তি-ই যে লাখ লাখ ডলার স্থানান্তর করেছেন, তা প্রমাণ করা – বেশ কঠিন। তিনি বলেন, “একজন অনুসন্ধানী রিপোর্টার হিসেবে আপনি [প্রচলিত] ব্যাংক হিসাবের গ্রাহককে সনাক্ত করতে পারেন, কারণ সেখানে সরাসরি সংযোগ থাকে। ব্যাংক হিসাবের সঙ্গে একজন ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা দেখাতে পরষ্পর সংযুক্ত অনেক নথি আপনি খুঁজে পেতে পারেন। কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের বেলায় এটি বেশ, বেশ কঠিন।”
অবশ্য স্ট্রোজিক এও বলেছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য অন্য কিছু পথ খুলে দেয়। একটি নির্দিষ্ট ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতিটি লেনদেনের বিবরণ থাকে ব্লকচেইনে, যা কিনা বিকেন্দ্রীভূত ও উন্মুক্ত একটি খেরোখাতার মত কাজ করে। এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে। এখনকার সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে এই ব্লকচেইনই আপনাকে জানাবে একটি নির্দিষ্ট বিটকয়েন কখন কেনা বা বেচা হয়েছে, এবং কত দামে। স্ট্রোজিক বলেন, আর আপনি যখন জানেন আপনি কী খুঁজছেন, তখনই একটি সমৃদ্ধ আর্থিক অনুসন্ধানের পথ সুগম হয়। তিনি আরও বলেন, “স্বচ্ছ, সনাক্তযোগ্য বলতে আমি ঠিক এটাই বুঝিয়ে থাকি।”
বিটকয়েন লেনদেন নিয়ে যেসব গল্প প্রচলিত আছে, তাদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বিখ্যাতটি হলো এক ব্যক্তিকে নিয়ে, যিনি ২০১০ সালে ১০ হাজার বিটকেয়েন খরচ করে দু’টি পিজা কিনেছিলেন। সেসময় এই পরিমাণ বিটকয়েনের মূল্য ছিল মাত্র ৪০ মার্কিন ডলার। তিনি যদি সেগুলো রেখে দিতেন, তবে বর্তমান মূল্য দাঁড়াত কয়েক শ’ মিলিয়ন ডলার। তাত্ত্বিকভাবে, সেই বিপর্যয়কর লেনদেনের তথ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ডেটায় এখনো পাওয়া যাওয়ার কথা।
বিটকয়েন ও অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির পেছনে কোনো সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমর্থন নেই। তাই তাদের দামের এমন উন্মত্ত ওঠানামা নতুন কিছু নয়। এই মুদ্রার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বে অনেক বিটকয়েন মিলিয়নেয়ার তৈরি হয়েছে। তবে সম্প্রতি ব্যাপক দরপতনের কবলে পড়ে তাদের অনেকে আবার হারিয়েও গেছেন। এই অস্থিরতা খুব স্বাভাবিক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান গ্যারি জেন্সলার ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারকে বুনো পশ্চিমের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, এই ব্যবস্থা “জালিয়াতি, কেলেঙ্কারি, ও অপব্যবহারের আধার।”
ক্রিপ্টোকারেন্সির অনেক ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষ, ও বিনিয়োগকারী। তবে এটি আর্থিক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের কাছেও জনপ্রিয়, যারা তাদের আর্থিক লেনদেন আড়াল করতে চান।
জার্মানির সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম বায়েরিশার রুন্ডফুঙ্কের কর্মরত হাকান তানরিওয়ার্দি তার এক প্রতিবেদনে, ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন ও সামাজিক মাধ্যম প্রোফাইল অনুসন্ধান করে একজন অভিযুক্ত র্যানসমওয়্যার মিলিয়নেয়ারকে সনাক্ত করেছিলেন। অনুসন্ধানটি শুরু হয়, মুক্তিপণ চেয়ে পাঠানো এক নোট থেকে এবং তারপর সেটির পদাঙ্ক অনুসরণ করে।
“র্যানসমওয়্যার হলো এরকম: কেউ যখন আপনার কোম্পানির নেটওয়ার্ক হ্যাক করবে, তারা সব ডেটা এনক্রিপ্ট করে ফেলবে। দেখবেন আপনার পিডিএফ কাজ করছে না। ছবি দেখা যাচ্ছে না। আপনার ডকুমেন্ট ফাইল কাজ করছে না। শুধু একটি ফাইলই কাজ করছে, আর তা হলো র্যানসমনোট.টেক্সট। আপনি এটি খুললে, হ্যাকারদের একটি বার্তা দেখবেন: ‘আপনাকে হ্যাক করা হয়েছে। ডেটা ফিরে পেতে চাইলে, আপনি এভাবে আমাদের নাগাল পাবেন’” – পেরুজিয়াতে সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন তানরিওয়ার্দি।
র্যানসমওয়্যার হ্যাকারদের চেষ্টাই থাকে যত বেশি সম্ভব কোম্পানির কাছ থেকে যত বেশি সম্ভব অর্থ আদায় করা। তানরিওয়ার্দির মতে, এ কারণেই তাদেরকে অর্থ লেনদেনের প্রক্রিয়াটি “সহজ” রাখতে হয়। “এর মানে হলো যে হ্যাকাররা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য প্রয়োজনীয় সব তথ্য সেই ফাইলে রেখে দেবে, যেটি দিয়ে তারা কোম্পানিটিকে হ্যাক করেছে,” বলেন তিনি। “আপনার যা জানা প্রয়োজন, সবই এই ফাইলে পাবেন।”
তানরিওয়ার্দির ঘটনায় দু’টি বিষয় ছিল: র্যানসমওয়্যার নোট ধরে অনুসন্ধান এবং একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের ডিজিটাল আইডির সঙ্গে একজন সত্যিকারের মানুষের যোগসূত্র স্থাপন। রিপোর্টিং দলটি মনে করে, তারা একটি র্যানসমওয়্যার দলের এক মূল সদস্যকে খুঁজে পেয়েছিল, যাদেরকে ৫.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবৈধ বিটকয়েন লেনদেনের নেপথ্যে থাকা সম্ভাব্য ১০টি ম্যালওয়্যার দলের একটি হিসেবে সনাক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ।
অনুসন্ধানী টুল
ক্রিপ্টো পরিসরে কারো পিছু লাগা জটিল হলেও রিপোর্টারদের সহায়তা করার মতো বেশ কিছু টুল আছে বলে জানান স্ট্রোজিক।
- নেটওয়ার্কিং ডায়াগ্রাম টুল নিও৪জে: তিনি বলেন, “কেউ একজন একটি স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, সেখানে আপনি ব্লকচেইন ইম্পোর্ট করতে পারবেন এবং সব ধরনের বিশ্লেষণও চালাতে পারবেন।”
- লার্ন মি আ বিটকয়েন: তিনি উল্লেখ করেন, “এটি একটি চমৎকার ওয়েবসাইট ও বিশ্লেষণী টুল যেখানে আপনি ঠিকানা ও লেনদেনের আইডি লিখে বের করতে পারবেন কে, কাকে টাকা পাঠিয়েছে। এটিই মৌলিক বিষয়, তবে বিটকয়েন ও ব্লকচেইন সম্পর্কিত কাজ নিয়ে এখানে প্রচুর ডকুমেন্টেশন আছে।”
- ব্লকচেইন.কম: ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট সম্পর্কে ঐতিহাসিক ডেটা নিয়ে জানার জন্য রিপোর্টারেরা এটি ব্যবহার করতে পারেন। স্ট্রোজিক বলেন, “ব্লকচেইন আসলে অনেক, অনেক, অনেক লম্বা একটি তালিকা, যেখানে সব ধরনের লেনদেন লিপিবদ্ধ থাকে। কিছু টুল আছে যা আপনাকে ব্লকচেইন বিশ্লেষণ করতে এবং কে, কাকে, কোন ঠিকানা থেকে কোন ঠিকানায় অর্থ প্রেরণ করেছে, তা নির্ধারণে সাহায্য করবে।”
- এলিপটিক: তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমরা ওসিসিআরপিতে এটি ব্যবহার করি। এটি পেইড টুল, যেখানে আপনি চমৎকার ভিজ্যুয়াল তৈরি ও ক্লাস্টারিং করতে পারবেন। এলিপটিক মূলত র্যানসমওয়্যারের সঙ্গে জড়িত, হ্যাকার, সব ধরনের সাইবার অপরাধীদের ধরার জন্য ইন্টারনেট স্ক্যান করে। এরপর এটি ওয়ালেটটিকে ট্যাগ করে, যেন আপনি সনাক্ত করতে পারেন, সেই ওয়ালেট আগে কোনো অপরাধে ব্যবহৃত হয়েছিল কি না। অপরাধে জড়িত কোনো ওয়ালেট থেকে কেউ যদি প্রচুর অর্থ পেয়ে থাকেন, তবে খুব সম্ভব এই ব্যক্তিও অপরাধ বা কোনো ধরনের সাইবার অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত।”
- আলেফ: স্টোজিক আরও বলেন, ওসিসিআরপির ডেটাবেস টুলকিট আলেফেরও ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুসন্ধানের কিছুটা দক্ষতা আছে, এবং সাংবাদিকেরা বিনামূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারেন। “এর সাহায্যে আপনি ফাঁসকাণ্ড বা অন্যান্য সোর্স থেকে পাওয়া ইমেইলের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সির যোগসূত্র খুঁজে দেখতে পারেন। একটি ওয়ালেটের পেছনের মানুষকে সনাক্ত করতে এটি একটি ভালো পদক্ষেপ।”
- ওয়েল অ্যালার্ট: এই টুল আসলে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট। কেউ যখন কোনো বড় লেনদেন করে, তখন একটি সতর্ক বার্তা পাঠায়। স্ট্রোজিক একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “যখন কেউ এক জায়গা থেকে অন্য কোথাও অন্য একজনকে ১৭৮ মিলিয়ন ডলার বিটকয়েনে পাঠান, তখন আপনি সেই লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন এবং সেখান থেকে অনুসন্ধান শুরু করতে পারেন।”
সূত্র অনুসরণ ও তার প্রয়োজনীয়তা
অনেক দিন ধরে পোয়েনারিউ ভাবতেন, অপরাধী ও সংগঠিত অপরাধীদের জন্য অবৈধ অর্থ বৈধ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো আবাসনখাত। “তবে আমি ভুল ছিলাম,” বলেন তিনি। “অবৈধ অর্থ বৈধ করার সহচেয়ে সহজ উপায় বিটকয়েন। চোরদের বিবর্তন হয়েছে।”
বেশ কিছু আন্তঃসীমান্ত অনুসন্ধানসহ পুরস্কারজয়ী রিভিয়েরা মায়া গ্যাং সিরিজে কাজ করা পোয়েনারিউ ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাদের জীবনযাত্রা যেমন ডিজিটাল হয়েছে, সম্পদ আত্মসাৎকারীদের কৌশলের ক্ষেত্রেও তেমনটাই। আর আইনী তদারকিতে ঘাটতির সুযোগ নিয়ে অনলাইন মুদ্রা বাণিজ্যে জড়িত ব্যক্তিরাও ব্যাপক মুনাফা করে থাকেন। তিনি বলেন, বিটকয়েন ২০০৯ সালে তৈরি হলেও, তাঁর নিজ দেশ রোমানিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০২০ সালের আগ পর্যন্ত কোনো ক্রিপ্টো বাজেয়াপ্ত করতে পারেনি।
তিনি উল্লেখ করেন, “আমাদের কর্তৃপক্ষগুলো কিছুটা পিছিয়ে থাকে, যার ফলে, শুধু মুদ্রাপাচার নয়, বরং কার্ড ডেটা চুরি, এমনকি মাদক পাচারেও ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহৃত হয়।” সংগঠিত অপরাধের সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতা বিশ্বাস করাতে, ছদ্মবেশ নিয়ে একটি ক্রিপ্টো ফার্ম থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে যাওয়া পোয়েনারিউ বলেছেন, সাংবাদিকেরা তাদের নিজ দেশে কী ঘটছে তা খুঁজে পেতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন।
১. ক্রিপ্টোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি সনাক্ত করুন। তিনি বলেন, “আমি যেসব জিনিস আবিষ্কার করেছি তার মধ্যে একটি হলো হার্ডওয়্যার অনুসরণ করা – এখানে আমি মাইনিংয়ের কথা বলছি।” মাইনিং হলো সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মাইনারেরা তাদের কম্পিউটার দক্ষতা ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন যাচাই ও নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি টোকেন তৈরি করেন। কিন্তু এর জন্য মাইনারদের যন্ত্রপাতি দরকার হয়। তিনি জানান, “মাইনিং করতে এবং বাজারে নতুন ক্রিপ্টো আনতে হার্ডওয়্যার থাকতে হয়। এটি অনলাইনে বা ই-বে থেকে কেনা যেতে পারে, তবে যখন এসব কোনো দেশে যায়, তখন আপনি ট্রেডিং ডেটায় তার সন্ধান পাবেন।”
২. বিদ্যুৎ চলে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রবণতা ট্র্যাক করুন। “আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো বিদ্যুতের ব্যবহার যাচাই করা: নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার দেশ বা শহরের সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী কে” বলেন তিনি। “ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইন করতে প্রচুর, প্রচুর বিদ্যুতের প্রয়োজন। ভাবুন: বিদ্যুৎ সরবরহাকারী কে? এ ধরনের ডেটা আপনি কোথায় পাবেন?” কসোভো ও ইরানের মতো অনেক দেশ, স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের ওপর চাপের কারণে ক্রিপ্টো মাইনিং নিষিদ্ধ করেছে এবং পোয়েনারিউ বলেন, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনা অনুসন্ধান শুরুর একটি সূত্র হতে পারে।
৩. এখনো মাঠের কাজ-ই আসল। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান ও ক্রিপ্টোকারেন্সি এটিএম ট্র্যাক করুন [বিরল হলেও, এর অস্তিত্ব আছে]। এই এক্সচেঞ্জগুলো দুই ধরনের হতে পারে: অনলাইন, যেখানে আপনাকে পরিচয়পত্র ও ইমেইল দিয়ে নিজেকে সনাক্ত করতে হবে; অথবা সশরীর, যা অনেকটা অফিসে গিয়ে ক্রিপ্টো বিনিময়ের মতো, যেভাবে আপনি ইউরো বা ডলার ভাঙান। এটিএমগুলোতে গিয়ে দেখুন, সেখানে কী হচ্ছে। সেখানে কাছাকাছি কী ক্যামেরা আছে? আমরা অবশ্য মানব সোর্সের ওপরও নির্ভর করি, সেই এক্সচেঞ্জে কী আপনার পরিচিত কেউ কাজ করেন বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কী কেউ আছেন?”
৪. পরিশেষে, তিনি রিপোর্টারদের পরামর্শ দেন, নিজ দেশে আদালতের এমন কোনো রায় খুঁজে দেখতে, যেখানে বিটকয়েন বা অন্য কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে রোমানিয়ায় মাত্র দুটি মামলা ছিল, যেখানে এ ধরনের তথ্য ছিল। তবে তার পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৪৫টি রায় এসেছে, যেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট ডেটা আছে এবং এই মামলাগুলোর প্রায় ৯০% অপরাধ সংশ্লিষ্ট। তিনি বলেন, “আপনার বিবেচনায় এই জগতে খারাপ বলে যত কিছু আছে, তার সবই আপনি আদালতের রায়ে খুঁজে পাবেন।”
স্ট্রোজিকের মতে, অপরাধী এবং খলনায়কদের পছন্দের কর্মপ্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করার মানে হচ্ছে, মাত্র কয়েকটি টুকেরো দিয়ে একটি বড় ধাঁধা সমাধানের চেষ্টা করা। “আমার মনে হয়, সততার সঙ্গে বললে, এই টুল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরাই ব্যবহার করেন,” বলেন তিনি। “যেহেতু আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে এই অপরাধীদের নিয়ে আগ্রহী, তাই এটি এমন এক বিষয় যা আমাদেরও জানা জরুরী।”
আরও পড়ুন
ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে জঙ্গি অর্থায়ন ট্র্যাকিং করবেন যেভাবে
জিআইজেসি২১: দ্য নিউ অর্গানাইজড ক্রাইম
লরা ডিক্সন জিআইজেএনের সহযোগী সম্পাদক ও যুক্তরাজ্যের ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক। তিনি কলম্বিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো থেকে রিপোর্ট করেছেন এবং তাঁর কাজ দ্য টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট ও আটলান্টিকসহ অনেক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স মিডিয়া ফাউন্ডেশন এবং পুলিৎজার সেন্টার অন ক্রাইসিস রিপোর্টিং থেকে রিপোর্টিং ফেলোশিপ পেয়েছেন।