জিআইজেএন টুলবক্সে আপনাকে স্বাগতম। এখানে আমরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য সর্বশেষ টুল ও কৌশল খুঁজে বের করি। এই সংস্করণে থাকছে তিনটি নতুন অথবা পরিবর্ধিত টুলের পরিচিতি, যেগুলো আর্থিক গোপনীয়তা এবং দুর্নীতি বা অপরাধ থেকে অর্জিত গোপন সম্পদ অনুসন্ধানে ব্যবহৃত হয়।
আর্থিক গোপনীয়তা অনুসন্ধানের বেশ কিছু নামকরা রিসোর্স আছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এএমএল রাইটসোর্সের মানি লন্ডারিং অনুসন্ধান ড্যাশবোর্ড, ওপেনকর্পোরেটসের বিশাল কোম্পানি ডেটাবেস, আমদানি/রপ্তানির ডেটাবেস পাঞ্জিভা, এবং অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্টের (ওসিসিআরপি) ফলো-দ্য-মানি ডেটা সংগ্রহশালা আলেফ। তবে এখন বিশেষায়িত কিছু টুল বেরিয়েছে যা দুর্নীতি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করতে পারে। আর বিভিন্ন উৎস থেকে টুকরো টুকরো তথ্য সংগ্রহের পর বৃহত্তর ধাঁধার শেষ অংশটি খুঁজে পেতে আপনাকে সাহায্য করতে পারে আমাদের শেয়ার করা এই নতুন টুলগুলো।
ভুলে গেলে চলবে না, এ ধরনের অনুসন্ধানে ডিজিটাল নিরাপত্তার চর্চা খুব জরুরি, কারণ অবৈধ অর্থের মালিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদ ও অর্থবিত্তের বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখতে অসাধু কৌশল অবলম্বন করে।
ওপেনস্যাংশন্স
কর ফাঁকি নিয়ে আপনার অনুসন্ধানে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের যে নির্বাহীর নাম এসেছে, তার সঙ্গে কি কোনো বিদেশি স্বৈরশাসক বা সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পর্ক থাকতে পারে? আপনার দেশের রাষ্ট্র প্রধানের কাছে একজন ইন্ডাস্ট্রি লবিস্টের যাওয়া-আসা কি অর্থনৈতিক বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার বিষয়বস্তু হতে পারে, অথবা রাজনীতিক হিসেবে এখানে কোনো স্বার্থের সংঘাত আছে কি?
ওপেনস্যাংশন্স নামের একটি নতুন উন্মুক্ত সোর্স ডেটাবেস রিপোর্টারদের জন্য “পার্সনস অব ইন্টারেস্ট” হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে দ্রুত তথ্য পাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ (ও তাদের সহযোগী) এবং যাদের অপকর্মের কারণে জনস্বার্থের ক্ষতি হয়েছে – এমন ব্যক্তিরা পার্সন অব ইন্টারেস্টের সংজ্ঞায় পড়েন। রিপোর্টাররাও সাধারণত এদের নিয়ে অনুসন্ধান করতে চান। এই তথ্যের ব্যবহার নতুন স্টোরির পথ দেখায়, অথবা অনুসন্ধানের পরিধিকে আরও প্রসারিত করে। বড় বড় ডেটাবেস এবং নিষেধাজ্ঞার বিদ্যমান তালিকার সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির অংশীদার, সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত এবং অন্যান্য রেড ফ্ল্যাগ (সতর্ক-চিহ্ন) মিলিয়ে দেখারও একটি উপায় এটি। মনে রাখবেন: যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাতি-নাতনির মতো আরও অনেক নাম এই সাইটে পাবেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে এদের সবার বিরুদ্ধেই অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাদের নাম সেখানে এসেছে।
প্রকল্পটির প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেডরিক লিন্ডেনবার্গ, আগে ওসিসিআরপির ডেটা দল পরিচালনা করতেন। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ডেটা সংগ্রহ শুরু করার মাসখানেকের মধ্যে এই ডেটাবেস এমন এক লাখ ৪০ হাজার ব্যক্তির প্রোফাইল সংযুক্ত করেছে, যাদের নিয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকেরা আগ্রহী হতে পারেন। এদের মধ্যে ২৪ হাজারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, আর পলিটিকালি এক্সপোজড (রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ) ব্যক্তি আছেন হাজার হাজার। এই তালিকার বাকিরা হলেন, সরকারি তহবিল পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি বলেন, প্রাথমিক তালিকার এই ব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্কিত আরও ৫০ হাজার ব্যক্তিকে নিয়েও বিস্তারিত তথ্য মিলবে এই প্রকল্পে।
লেক্সিসনেক্সিস এবং রেফিনিটিভের মত প্লাটফর্মে বাণিজ্যিক “রেড ফ্ল্যাগের” নির্ভরযোগ্য তালিকা কিনতে পাওয়া যায়। তবে লিন্ডেনবার্গের মতে, ওপেনস্যাংশন্স হল বিনা পয়সায়, ব্যবহারকারী-বান্ধব পদ্ধতিতে, এবং সাংবাদিকদের উপযোগী করে- ডেটা পাওয়ার উপায়।
পার্সন অব ইন্টারেস্ট হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানার জন্য একটি সাধারণ সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করতে পারে ডেটাবেসটি। জিআইজেএন এই টুলের সার্চ বারে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ীর নাম প্রবেশ করানো মাত্র সিস্টেমে উঠে আসে যে তার নাম ২০২১ সালের ব্রিটিশ আর্থিক নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ছিল। সেখানে তার কয়েকজন আত্মীয় সম্পর্কেও বিশদ তথ্য পাওয়া যায়, যাদের ওপর সম্প্রতি আর্ন্তজাতিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
লিন্ডেনবার্গ বলেন, এটি বড় বা বহুজাতিক অনুসন্ধানী প্রকল্পের জন্য সবচেয়ে কার্যকর টুল হয়ে উঠতে পারে। এমন ক্ষেত্রে সাংবাদিকেরা ওপেনস্যাংশন্সে থাকা নামের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নাালিস্টসের (আইসিআইজে) ডেটাশেয়ার বা ওসিসিআরপির আলেফের মতো অনুসন্ধানী ডেটাসেটের তথ্য মিলিয়ে দেখতে পারেন। (এই লিঙ্কে একটি নমুনা টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে।)
শরীরের সমস্যা সনাক্ত করতে এমআরআই স্ক্যানের আগে ডাক্তারেরা রোগীকে যে ডাই এজেন্ট ইনজেকশন দেন, তার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “আমি মনে করি, এটিকে সনাক্তকরণ টুল হিসেবে ব্যবহার করা-ই বেশি দারুন হবে।” তিনি বলেন, এই সিস্টেম আসলে স্প্রেডশিটের একটি অপরিচিত নামকেও সাংবাদিকদের কাছে আগ্রহের বিষয়বস্তু করে তুলতে পারে, কারণ সেই ব্যক্তির হয়তো সরকারি তহবিল ব্যবহারের ক্ষমতা বা অনিয়মের ইতিহাস রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, “যেমন, ধরুন, পানামা পেপার্সে প্রায় সোয়া সাত লাখ মানুষের নাম আছে। তাদের অধিকাংশই নিছক কর-এড়ানো ব্যবসায়ী, আর এটি সাধারণত অবৈধ নয়। কিন্তু বিশাল ওপেনস্যাংশন্স ডেটাবেসে আপনি জবাবদিহিতার বিচারে গুরুত্বপূর্ণ, ক্ষুদ্র একটি অংশ সম্পর্কে খোঁজখবর করতে পারবেন – যে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা মুদ্রা পাচারের সঙ্গে জড়িত হিসেবে, অথবা রাজনীতিবিদ হিসেবে, অথবা নিষেধাজ্ঞার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন কিনা।”
যেসব রিপোর্টার ডেটা ক্রাঞ্চিং জানেন, তারা ওপেনরিফাইনের মত ওপেন সোর্স অ্যাপ্লিকেশনের সাহায্যে এই ডেটা থেকে নিজস্ব তালিকাও তৈরি করে নিতে পারেন। ওপেনস্যাংশন্সে একটি গ্রাফিকাল স্কোরিং সিস্টেম রয়েছে। অ্যালগরিমদটি নিজের ডেটাবেসের সঙ্গে অন্য একটি ডেটাবেসের তুলনা করে। এবং নিজের সার্চ ফলাফলে পাওয়া কোনও ব্যক্তির সঙ্গে অপর ডেটাবেসে কোনও ব্যক্তির মিল পেলে সেটি সনাক্ত করে। গ্রাফিক্যাল স্কোরে দেখানো হয়, দুই ডেটাবেসে যে একই ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে, সে ব্যাপারে অ্যালগরিদমটি কতটা আত্মবিশ্বাসী।
ওপেনস্যাংশন্সের লিন্ডেনবার্গ বলেন, “গত চার মাসে এটির আকার চারগুণ হয়েছে। আমি এই টুলকে গোটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য কার্যকরী রিসোর্স হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি।”
গ্রেলিস্ট ট্রেস
বিভিন্ন কারিগরী বাধা এবং বিশ্বজুড়ে ডেটা প্রাইভেসি, প্রতারণামূলক ইমেইল এবং ব্যাংকিং গোপনীয়তার মতো পরস্পর-সম্পর্কিত আইনের কারণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য দ্রুত ও বিধিসম্মতভাবে অফশোর ব্যাংকের অবৈধ অর্থ অনুসরণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্যে তৈরি একটি প্রোপ্রাইটরি অ্যালগরিদম সাংবাদিকদের জন্য – আইন এবং গোপনীয়তার নীতিমালা লঙ্ঘন না করেই – লুকোনো অর্থ অনুসন্ধানের সীমিত কিন্তু চমকপ্রদ একটি সুযোগ তৈরি করেছে। সাধারণত, বিবাহবিচ্ছেদ এবং আইনী মোকদ্দমায় গোপন অর্থের সন্ধান পেতে আইনজীবীরা এই অ্যালগরিদম ব্যবহার করেন।
গ্রেলিস্ট ট্রেস, সম্পত্তি অনুসন্ধানের জন্য বিশেষায়িত একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের সাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, “প্রতারণা ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ কীভাবে নীতিসম্মত ও বৈধ উপায়ে ব্যাংক একাউন্টে গিয়ে পৌঁছায়, সেটি অনুসন্ধান করাই তাদের কাজ।” তাদের অ্যালগরিদম, ব্যাংকের সুরক্ষা দেয়াল ভেঙ্গে ডেটায় অনুপ্রবেশ করে না এবং অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা আছে, তা-ও দেখার চেষ্টা করে না। বরং নির্দিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের লেনদেন বিভাগের অতীত যোগাযোগ যাচাইয়ের মাধ্যমে এটি খুঁজে বের করে, সেখানে তার কোনো একাউন্ট আছে কিনা।
গ্রেলিস্ট ট্রেসের প্রতিষ্ঠাতা বব ডাফিল্ড বিবিসির সাবেক অনুসন্ধানী রিপোর্টার ও প্রযোজক। তাঁর রিপোর্টের কারণে, যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া কয়েকজন নিরপরাধ ব্যক্তি ব্রিটিশ জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, ডেটা প্রাইভেসির সীমাবদ্ধতা ও আইন সত্ত্বেও তাঁর প্রতিষ্ঠানের অ্যালগরিদম গোপন অর্থের নির্দিষ্ট ধরন চিহ্নিত করার একমাত্র আইনসম্মত পথ, এবং এটির তৈরি করা রিপোর্ট আদালতে সাক্ষ্য হিসেবেও গৃহীত হয়।
ডাফিল্ড বলেছেন যে নতুন ব্যবস্থাটি এখনো কোনো প্রকাশিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় ব্যবহৃত হয়নি – তবে চুরি করা সরকারি তহবিল কোথায় রাখা হয়েছে সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত পেতে এটি দারুন সম্ভাবনাময় হয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, ট্রেসিং সিস্টেম কাজ করে এভাবে:
- কোনো গ্রাহক – অথবা, হতে পারে, একটি বার্তাকক্ষ – এমন একজন ব্যক্তি বা সরকারি কর্মকর্তার ইমেইল অ্যাড্রেস প্রদান করবে যিনি গোপন অর্থ-সম্পদের মালিক বলে সন্দেহ করা হচ্ছে;
- অ্যালগরিদম সেই ইমেইলকে একটি কোড প্যাকেটে রূপান্তরিত করবে এবং এটিকে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্যাংক ও ব্যাংকের শাখার ইমেইল সার্ভার ফিল্টারে পাঠাবে, কিন্তু কখনোই ব্যাংকে নয়;
- কোড প্রবেশের পর, সিস্টেমটি ফিল্টারগুলোর প্রতিক্রিয়ার সময় পরিমাপ করবে। এই সময়ের ভিন্নতা নির্ভর করে দুটি জিনিসের ওপর: ব্যাংকের লেনদেন বিভাগের সঙ্গে আগে সেই ইমেইলের কোন যোগযোগ হয়েছিল কিনা, অথবা ইমেইল অ্যাড্রেসটিকে “সাদা তালিকাভুক্ত” করা হয়েছিল কিনা। তারপর কোড প্যাকেটটি নিজ থেকে ধ্বংস হয়ে যাবে;
- সপ্তাহখানেকের মধ্যে এই অ্যালগরিদম যে কোনো ব্যাংকে সন্দেহভাজন ব্যক্তিটির সম্ভাব্য সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টের অতীত লেনদেনের একটি রিপোর্ট দেবে।
এই শেষ পয়েন্টটাই প্রধান। একটি “ইতিবাচক” ফলাফল কেবল শক্তিশালী আর্থিক সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেয়। তবে গ্রেলিস্ট ট্রেস বলতে পারে না যে এটি এখনো সচল কিনা। তাই সক্রিয় অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত করতে বা ব্যালেন্স জানতে অন্যান্য রিসোর্স ব্যবহার করে অতিরিক্ত রিপোর্টিংয়ের প্রয়োজন পড়ে।
ডাফিল্ড বলেন, “এর ব্যবহার আইনত বৈধ হওয়ায় এটি এতটা শক্তিশালী। এই অ্যালগরিদম ব্যাংকিং সিস্টেমের অভ্যন্তরে পরিচালিত হয় না; ব্যাংকের ইমেইল সার্ভারগুলোকে রক্ষাকারী ফিল্টারিং সিস্টেম যেভাবে অ্যালগরিদমকে সাড়া দেয় তার ভিত্তিতে এটি একটি সম্ভাব্য অনুমান তৈরি করছে।”
ডাফিল্ড বলেন, নিছক খোঁজাখুঁজির জন্য নয় বরং বড় ধরনের জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ঘটনায়, যেখানে প্রচলিত রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে কোনো লুকোনো অর্থ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে, কেবলমাত্র সেখানেই এই সেবা ব্যবহারের কথা বিবেচনা করা উচিত বার্তাকক্ষগুলোর। বিনা পয়সায় ব্যবহারের অনুরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোনো সাংবাদিক যদি এসে বলে, ‘আমার সন্দেহ হয়, এই রকস্টারের অফশোর অ্যাকউন্ট আছে’ – এটি তার জন্য নয়। তবে আমরা অবশ্যই মাঝে মাঝে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে পারি।”
প্রতিষ্ঠানটি জবাবদিহিমূলক সাংবাদিকতার লক্ষ্যকে সমর্থন করে। তবে ডাফিল্ড বলেন, বার্তাকক্ষ থেকে বিনা পয়সায় বা কম খরচে রিপোর্ট দেয়ার অনুরোধ তারা কদাচিৎই রাখতে পারেন, ঠিক যেমনটা কিছু লাভজনক স্যাটেলাইট ছবি সরবরাহকারী করে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে, এই সেবায় একটি ইমেইলের সঙ্গে ব্যাংকের যোগাযোগ সন্ধান করতে প্রায় ১৩৫০ মার্কিন ডলার মূল্য নেয়া হয়। সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসা প্রতিটি ব্যাংকের জন্য আরও ১৩৫০ ডলার নেয়া হয়। একজন সর্বোচ্চ তিনটি ব্যাংকের রিপোর্ট নিতে পারেন।
অফশোর লিকস ডেটাবেস – প্যান্ডোরা সহ
আপনার অনুসন্ধানে কী দেখা যাচ্ছে, অফশোর প্রতিষ্ঠান বা ট্যাক্স হ্যাভেনের (যেখানে কম বা নামমাত্র কর দিয়ে টাকা রাখা যায়) পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কারা? দুর্বোধ্য কর্পোরেট জালের মাধ্যমে রাজনীতিকেরা গোপন স্বার্থের সংঘাত কী করে লুকাচ্ছেন?
গত মাসে এমন ১৫ হাজার অফশোর প্রতিষ্ঠান ও ফাউন্ডেশনের মালিকানার তথ্য অফশোর লিকস ডেটাবেসে যোগ করেছে আইসিআইজে। বর্তমানে এই সংগ্রহশালায় অফশোর কাঠামোর আড়ালে থাকা ৭ লাখ ৪০ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম আছে।
এটি হল প্যান্ডোরা পেপার্স ডেটার প্রথম সার্চযোগ্য কিস্তি। গত অক্টোবরে প্রকাশিত সহযোগিতামূলক এই অনুসন্ধানে ৩৫ জন বর্তমান ও সাবেক বিশ্ব নেতা এবং একশর বেশি বিলিয়নেয়ার ও তারকার নাম বেরিয়ে এসেছে। এছাড়া নতুন ডেটাসেটে নিওফোরজে টুল ব্যবহার করে বোধগম্য ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংযোগ তুলে ধরা হয়েছে। নোড আইকনে ক্লিক করে রিপোর্টাররা একনজরে সংযোগগুলো দেখে নিতে পারেন।
গোপনীয়তা আইনের কারণে, ফাঁস হওয়া এই ১ কোটি ১৯ লাখ নথি থেকে ব্যাংক রেকর্ড ও আর্থিক লেনদেনের মত কিছু রেকর্ড প্রকাশ করা যায় না। আইসিআইজের ডেটা সাংবাদিক ডেলফিন রয়টার বলেন, হয়তো শীগগিরই প্যান্ডোরা পেপার্সের আরও কিছু ডেটা প্রকাশিত হবে। পানামা পেপার্স ও প্যারাডাইস পেপার্স সহ চারটি অনুসন্ধানী প্রকল্পের ডেটা এরই মধ্যে সেখানে তোলা হয়েছে। নতুন তথ্যগুলো আর্থিক গোপনীয়তার এই ডেটায় একটি নতুন স্তম্ভ যুক্ত করবে।
রয়টার বলেন, “আমরা এখন প্যান্ডোরা পেপার্স থেকে আরও ডেটা কাঠামোবদ্ধ করছি, যা আমরা সামনের মাসগুলোতে একত্রে প্রকাশ করার আশা রাখি।” তিনি বলেন, প্যান্ডোরায় ১৪টি অফশোর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ডেটা ফাঁস হয়েছে, কিন্তু এদের সবার ডেটা আইসিআইজে প্রকাশ করতে পারে না। কারণ, “একটি থেকে অন্যটির গুণগত মান ও কাঠামোয় অনেক পার্থক্য থাকে।”
প্রকাশিত নতুন ডেটাগুলো এসেছে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে: পানামার একটি আইনী সংস্থা, এবং ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপের একটি শেল কোম্পানি এজেন্সি।
রয়টার রিপোর্টারদের সতর্ক করেছেন এই বলে যে প্যান্ডোরা সহ আগের চার অনুসন্ধানের ডেটাসেটে যে তথ্য রয়েছে তা শুধু সেই সময়ের জন্য যথাযথ, যখন ডেটাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্যের জন্য রিপোর্টারদের কর্পোরেট রেজিস্ট্রির মতো চলতি সোর্সে প্রবেশাধিকার প্রয়োজন।
তিনি আরও পরামর্শ দেন, সার্চ করার সময় সাংবাদিকদের উচিত প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নামেও চেষ্টা করা। যেমন; “লিমিটেড” এবং “এলটিডি” – এবং সন্দেহজনক ব্যক্তির নামের সঙ্গে উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা উচিত।
অনুসন্ধানের জন্য কার্যকর টুল পেতে চান? আমাদের ইমেইল করুন এই ঠিকানায়: hello@gijn.org
আরও পড়ুন
রিপোর্টারের গাইড: সংঘবদ্ধ অপরাধীদের অর্থ লেনদেন অনুসন্ধান করবেন যেভাবে
জিআইজেএন টুলবক্স: ক্রাউডট্যাঙ্গল, ইকোসেক ও সোশ্যাল মিডিয়া সার্চ
লেসনস ফ্রম দ্য প্যানডোরা পেপার্স: হাউ টু ইনভেস্টিগেট ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম স্টোরিজ
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএনের প্রতিবেদক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমস পত্রিকার সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ছিলেন। বিদেশি প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বের ২৪টির বেশি দেশে সংবাদ, রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন।