পরিবেশ সাংবাদিকদের রিসোর্সের অভাব থাকতে পারে, কিন্তু অন্তত একটি জিনিস তাঁদের আছে: দুর্দান্ত সব স্যাটেলাইট, যাদের সাহায্যে তাঁরা পৃথিবীর পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে পারেন।
এবং সেপ্টেম্বরে, নাসা এমন আরেকটি স্যাটেলাইট চালু করেছে। প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো একটি সিরিজের সবশেষ সংস্করণ ল্যান্ডস্যাট ৯, উড়াল দিয়েছে গত ২৭ সেপ্টেম্বর। প্রায় তিন মাস ধরে ঝাঁকুনি খেয়ে এবং স্থিতিশীল হয়ে, এটি নিয়মিতভাবে চাহিদামাফিক ডেটা ডাউনলোড শুরু করবে।
আর হ্যাঁ, যে কোন সাধারণ সাংবাদিকও এখান থেকে স্টোরি পেতে পারেন, যদিও প্রযুক্তি-জ্ঞানসম্পন্ন সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার চিন্তাও মন্দ নয়।
যেখান থেকে ডেটা আসে
আগের দুটি মডেল ল্যান্ডস্যাট ৭ ও ৮ এখনো মহাকাশে ঘুরছে এবং কাজ করে যাচ্ছে (যদিও ৭ এর সরে আসার সময় হয়েছে)। তারা আলোক তরঙ্গের অন্তত নয়টি ব্যান্ডে, ১৫ মিটার রেজুলেশনে, ভূ-পৃষ্ঠের ওপর নজর রাখে এবং কমবেশি ১৬ দিনে পৃথিবী ঘুরে একই অবস্থানে ফিরে আসে।
ফলাফল, লক্ষ লক্ষ ছবি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শুধু বৈশ্বিক নয়, স্থানীয় পর্যায়েও পৃৃথিবী কীভাবে বদলে যাচ্ছে (এবং বদলানো হচ্ছে), তার প্রমাণ-ভিত্তিক উপসংহার আমাদের সামনে তুলে ধরে ৫০ বছরের এই টাইম-সিরিজ। এসব ছবি দিয়ে কী করা সম্ভব তার কিছুটা ধারণা মিলবে ল্যান্ডস্যাট ৮ এর মিডিয়া কিট ও ছবি গ্যালারি থেকে।
ল্যান্ডস্যাট সিরিজের কাজের ক্ষেত্র মূলত ভূ-পৃষ্ঠ, তবে পৃথিবী পর্যবেক্ষণকারী আরও স্যাটেলাইট আছে। কিছু কিছু স্যাটেলাইট জলবায়ু, বায়ুমণ্ডল অথবা সমুদ্র পর্যবেক্ষণ করে। এমনকি কিছু বাণিজ্যিক ও পূর্বতন স্পাই স্যাটেলাইটে আরও সূক্ষ্ম রেজোলুশন মেলে।
এর অর্থ হচ্ছে, ল্যান্ডস্যাটের মাধ্যমে বন উজাড় (অথবা বনায়ন বা পুনঃবনায়ন), বনের পরিবেশ, কৃষি ফসল ও অন্যান্য গাছপালার বিস্তার, উপকূলীয় ক্ষয়, জলাভূমি হ্রাস ও পুনরুদ্ধার, মাটি ও শিলা, নগরায়ন, শহরতলির বিস্তৃতি, খরা ও বন্যা এবং আরও অনেক কিছুর প্রবণতা জানা যায়।
এর সাহায্যে হিমবাহ, মহাদেশীয় হিমবাহ ও ভাসমান হিমশৈলের হ্রাস-বৃদ্ধি, দাবানলের প্রভাব, প্রবাল দ্বীপ, এবং অন্যান্য আরও অনেক প্রাকৃতিক সম্পদের বৈশিষ্ট্য বোঝা যায়।
অত্যাধুনিক এই ইমেজিংয়ের গোপন শক্তি হলো, এটি মাল্টিস্পেক্ট্রাল (বহুতরঙ্গভিত্তিক)। আলোক তরঙ্গের দৈর্ঘ্য (অথবা তাদের স্বতন্ত্র সংমিশ্রণ) দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য আলাদাভাবে চেনা যায়। এই স্যাটেলাইটে যেসব সেন্সর আছে, তা অনেকগুলো স্বতন্ত্র ব্যান্ড ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে আলো সংগ্রহ করে – শুধু দৃশ্যমান আলো নয়, ইনফ্রারেডও।
যথাযথভাবে ডেটা ব্যবহার
ল্যান্ডস্যাট ডেটা যে সবসময় বিনামূল্যে মিলত, তা নয়। ২০০৮ সালের আগ পর্যন্ত গবেষকদেরও ল্যান্ডস্যাট ছবির জন্য টাকা গুনতে হত।
ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) এটি ফ্রি করে দিয়েছিল। ল্যান্ডস্যাট ইন্সট্রুমেন্ট একবার চালু হলে এবং কাজ শুরু করলে, সেখান থেকে ডেটা সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে এই সংস্থাটি। তবে, এখন তারা টাকা দিয়ে ডেটা কেনার পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার কথা বিবেচনা করছে। তাই ব্যবহার করলে করুন, নয়তো পরে সুযোগ হারাবেন।
এরইমধ্যে ইউএসজিএস ল্যান্ডস্যাট, ডেটা ব্যবহার ও প্রাপ্তি আরও সহজ করেছে। তাদের একটি সহজ ওয়েবপেজ আছে, যেখানে আপনি অ্যাক্সেস মেনুর বেশিরভাগ অপশনই খুঁজে পাবেন। এই মেনু এমনভাবে সাজানো থাকে যেন প্রচুর পরিমাণ ডেটা সামলে অভ্যস্ত বিজ্ঞান-গবেষকেরা সুবিধাটি পেতে পারেন, আবার নির্দিষ্ট উপায়ে নির্দিষ্ট এলাকা দেখতে চাওয়া সাধারণ মানুষও চাইলে খুব সহজে তা দেখে নিতে পারেন।
সেখানে যা আছে, তা দেখার সহজ টুল হলো ল্যান্ডস্যাটলুক ২.০। এটি আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে, একটি নির্দিষ্ট এলাকা জুম করে দেখার সুযোগ দেবে। আর তরঙ্গ বেছে নেওয়া অথবা ল্যান্ডস্যাট মানচিত্রে অন্যান্য ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের লেয়ার বসানোর কথা না-হয় বাদ-ই রইল।
আপনি ডেটা সাংবাদিকতায় পারদর্শী না হলেও ক্ষতি নেই। এই ডেটার সাগরে পথ দেখানোর জন্য সোর্স, বিশেষজ্ঞ বা সহযোগী খুঁজে নিন। আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল, ফরেস্ট্রি ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগে গুরুর সন্ধান করুন। অথবা সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা থেকে কোনও প্রকল্পের নেতৃস্থানীয় কাউকে খুঁজে বের করুন, যিনি আপনার আগ্রহের বিষয় নিয়েও গবেষণা করেন।
আজকাল অনেক বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠানে ডেটা সাংবাদিকতা বিশেষজ্ঞ বা দল থাকে, যাঁরা সহযোগিতা করতে পারেন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড রিপোর্টিং, নিকার-এর ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্টারস অ্যান্ড এডিটরস দলে খোঁজ নিন।
স্টোরি লিড ও উদাহরণ
২০২০ সালে মোঙ্গাবের জন্য আমাজন বনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি ধারাবাহিক তৈরি করেন রিপোর্টার আনা ইয়োনোভা। এটি সোসাইটি অব এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টসের স্বীকৃতি পেয়েছিল। এই কাজে তিনি স্যাটেলাইট ছবির (যদিও তা ল্যান্ডস্যাট থেকে নয়) সাহায্য নিয়েছেন।
আরও সম্প্রতি এনপিআর-এর ক্যালিফোর্নিয়া নিউজরুম ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এনভায়রনমেন্টাল চেঞ্জ অ্যান্ড হিউম্যান আউটসোর্স ল্যাব দাবানলের ধোঁয়ার বিষাক্ত প্রভাব যাচাই করতে স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করেছে।
আর এই সেপ্টেম্বরে অ্যালেন কোরাল অ্যাটলাস তাদের স্যাটেলাইট-নির্ভর প্রবাল-ব্লিচিং (দূষণে প্রবালের সাদা রং ধারণ করা) অ্যাটলাস সম্পূর্ণ করার ঘোষণা দিয়েছে।
সাংবাদিকতা প্রকল্পে স্যাটেলাইট ইমেজিং ব্যবহারের অনেক উদাহরণ আপনি এই লেখায় খুঁজে পাবেন।
স্কাইট্রুথ কী করছে তাও দেখে নিতে পারেন। এই অলাভজনক ওয়াচডগ প্রতিষ্ঠান পরিবেশগত সমস্যা পরীক্ষা করতে স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে। এমন একটি উদাহরণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপালাচিয়া অঞ্চলের মাউন্টেন রিমোভাল মাইনিং নিয়ে গবেষণা। এখানে স্যাটেলাইট সাংবাদিকতা সম্পর্কে আরও পরামর্শ (এবং এখানে আরও) পাবেন।
মূল লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে সোসাইটি অব এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টসের ওয়েবসাইটে। অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশিত হল।
আরও পড়ুন
নিউ ডেটা টুলস অ্যান্ড টিপস ফর ইনভেস্টিগেটিং ক্লাইমেট চেঞ্জ
স্যাটেলাইট ছবিতে জীবন্ত হয়ে উঠেছে যে ৯টি অনুসন্ধান
আফ্রিকা থেকে: পরিবেশ নিয়ে অনুসন্ধানে যেভাবে শক্তি যোগাচ্ছে জিও-জার্নালিজম
জোসেফ এ. ডেভিস ওয়াশিংটনের একজন ফ্রিল্যান্স লেখক ও সম্পাদক। তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে পরিবেশ নিয়ে লিখছেন। তিনি সোসাইটি অব এনভায়রনমেন্টাল জার্নালিস্টসের অনলাইন টিপশিট, রিপোর্টারস টুলবক্স, ও ইস্যু ব্যাকগ্রাউন্ডার লিখেন এবং এসইজের প্রতিদিনের সংবাদ শিরোনাম সেবা তত্ত্বাবধান করেন। ডেভিস, এর বাইরে, এসইজের ফ্রিডম অব ইনফরমেশন প্রজেক্ট পরিচালনা করেন এবং মতামত কলাম লেখেন।