সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও স্বচ্ছতার নিম্নগামী প্রবণতা পাকিস্তানের গণমাধ্যম পরিবেশে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। গভীর ও ধারালো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য দেশটির পরিবেশও একেবারেই অনুকূল নয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনের সঙ্গে যোগ হয়েছে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য আরও বাস্তব এবং একই সঙ্গে হতাশাজনক এক চ্যালেঞ্জ: ডিজিটাল রেকর্ডের ঘাটতি, যা সাংবাদিকদের জন্য ডেটা স্টোরির গভীরে যাওয়া কঠিন করে তুলেছে।
এরপরও তাঁরা হাতের নাগালে যেসব রিসোর্স আছে, তা দিয়েই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন; জুতোর শুকতলি ক্ষয় করা রিপোর্টিং, বারবার ফোন কল ও দরজায় দরজায় কড়া নাড়ার মত কৌশল ব্যবহার করছেন এবং তথ্য – এমনকি কখনো কখনো ডেটা – পেতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর শরণাপন্ন হচ্ছেন।
পাকিস্তানের সাংবাদিকরাও দেশের সীমানা ছাড়িয়ে নথি এবং সূত্র খুঁজছেন সেসব দেশে, যেখানে স্বচ্ছতা বেশি এবং অনুসন্ধানের উপকরণ পাওয়া সহজ। ফাঁস হওয়া তথ্যও তাদের জন্য অনুসন্ধানের গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ছিল, আগের মতোই। অন্দরমহলের এইসব গোপন আলোচনা অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক খোশগল্পকে ঘিরে আবর্তিত হলেও, কোথাও কোথাও ফাঁস হওয়া তথ্যের পেছনে নথির সমর্থনও ছিল – যা বরাবরই সাংবাদিকদের জন্য সোনার খনি।
এ বছর আমরা সে সব স্টোরি বাছাই করেছি, যেগুলো দেশটির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় ছোট কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি এনে দিয়েছে। এই স্টোরিগুলো চমৎকার কিছু নতুন কৌশল সামনে এনেছে। এসব কৌশল, কিছু পুরনো স্টোরিকে নতুন ভাবে তুলে ধরেছে যেগুলোতে আগে ডেটার ঘাটতি ছিল। কিছু স্টোরি, দুর্নীতির মত ওপেন-সিক্রেট বিষয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কাঠামোগত সমস্যাগুলোকে দেখিয়ে দিয়েছে, যা অপরাধীদের শাস্তি ছাড়াই অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। – আমেল ঘানি, জিআইজেএন উর্দু সম্পাদক
মালিক রিয়াজ ও চুক্তির গুণ
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/Screenshot-779-e1640194787468-771x442.png)
ছবি: স্ক্রিনশট
পাকিস্তানের অন্যতম শীর্ষ ইংরেজি পত্রিকা ডনের এই লং-ফর্ম অনুসন্ধান ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় আবাসন ব্যবসায়ী মালিক রিয়াজকে নিয়ে। সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করা সংস্থা ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির (এনসিএ) একটি তদন্তের নথি দিয়ে এই প্রকল্পের শুরু। নথিগুলো ফাঁস করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংগঠন ফাইন্যান্স আনকভার্ড। তদন্তটির জের ধরে রিয়াজ পরিবারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ১৯ কোটি ডলারে দফারফা হয়। পুরো প্রক্রিয়ায় শর্তগুলোকে গোপন রাখা হয় এবং এজেন্সির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই অর্থপ্রদান “কোনও অপরাধের প্রতিনিধিত্ব করে না।” এই প্রতিবেদন পাকিস্তানের আদালতে রিয়াজ সংশ্লিষ্ট এবং ধনীদের জন্য বিশেষ আবাসন নির্মাণে ব্যবহৃত ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির প্রভাব তুলে ধরেছে।
বছরের পর বছর ধরে পাকিস্তানে আবাসন ব্যবসা নিয়ে অনুসন্ধান করা সাংবাদিক নাজিহা সাঈদ আলীর লেখা প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র ফাইন্যান্স আনকভার্ডের নথিপত্রে নজর দেয়নি, বরং মামলার গোপন নিষ্পত্তিতে সরকারের ভূমিকা তুলে ধরতে পাকিস্তান আদালতের নথি এবং দাপ্তরিক সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়েছে। সাঈদ দাবি করেন, এনসিএ সম্ভবত নিজেদের “পাকিস্তানি ক্ষমতার ক্রীড়নকদের স্বার্থে ব্যবহৃত“ হওয়ার এবং গোপনীয় অপ্রকাশযোগ্য চুক্তিনামার মাধ্যমে ঘটনাটিকে লুকিয়ে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। ডন পত্রিকার এই অনুসন্ধানে রিয়াজ বা সরকারের কোন প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। অবশ্য, পাকিস্তান সরকারের “জবাবদিহিতা উপদেষ্টার” দপ্তর, এনসিএ’র সঙ্গে এই চুক্তিকে “যুক্তরাজ্য ও পাকিস্তানের একাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যকার ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সাফল্যের গল্প” বলে স্বাগত জানিয়েছে।
মানব স্বাস্থ্যের বর্জ্য
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/Screenshot-781.png)
ছবি: স্ক্রিনশট
হাসপাতালে মেডিকেল বর্জ্য এক ধরনের বিশেষ চুলায় পুড়িয়ে ফেলার কথা। কিন্তু এক সাংবাদিক আবিষ্কার করেন, এই দূষিত পদার্থ কীভাবে বাসাবাড়ির ব্যবহার্য জিনিসে রুপান্তরিত হচ্ছে। পাকিস্তানের স্বাধীন সংবাদ প্রতিষ্ঠান সুজাগের এই প্রতিবেদন হাসপাতাল প্রশাসন, দারোয়ান, বর্জ্য সংগ্রহকারী ও বিক্রেতা, এবং শিল্পপতিসহ গোটা চক্রের মুখোশ উন্মোচন করেছে। মেডিক্যাল বর্জ্য যেন সঠিক উপায়ে বিনষ্ট করা হয়, সে ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট থাকলেও এই শিল্পপতিরা বর্জ্যকে প্লাস্টিক পণ্যে রুপান্তরিত করেন। যে কাঠামোগত ত্রুটির কারণে এই ব্যত্যয় ঘটে, তা উন্মোচন করতে গিয়ে এই রিপোর্টার, চুল্লির একজন কর্মচারী থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত, গোটা সরবরাহ চক্র খতিয়ে দেখেন। এই কর্মচারী অভিযোগ করেন, তার কাছে পৌঁছানোর পূর্বে সাধারণ বর্জ্য ও মেডিক্যাল বর্জ্য আলাদা করা হয় না।
ধর্ষণ বিষয়ক ডেটার প্রাপ্যতা
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/Rape-data-map-Pakistan-771x434.jpg)
করাচির পুলিশ স্টেশনগুলোর সীমানা নিয়ে একটি শৈল্পিক মানচিত্র। ছবি: স্ক্রিনশট
পাকিস্তানে ডেটা খুঁজে পাওয়া সবসময় একটি চ্যালেঞ্জ, এবং এমনকি খুব সাদামাটা ডেটাশিট সংগ্রহ করতে গিয়েও কখনো কখনো রিপোর্টাররা জুতোর শুকতলি ক্ষয় করা প্রথাগত রিপোর্টিং কৌশলের আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। ২০২১ সালের প্রথমার্ধে, মূলধারার টেলিভিশন চ্যানেল সামা’র অনলাইন সংস্করণ সামা ডিজিটাল, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর করাচিতে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের প্রকৃত সংখ্যা জানতে মাঠে নামে। তারা দেখতে পায়, “এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ নয়, কারণ সরকার, হাসপাতাল, এবং পুলিশ এই ডেটা প্রকাশ করে না।” তাই রিপোর্টাররা করাচির সব সরকারি হাসপাতালে যান এবং জানতে চান, ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে আসা কতজন ভুক্তভোগী নারীর মেডিকেল-আইনী পরীক্ষা করা হয়। এভাবেই তাঁরা সন্ধান পান প্রতিটি হাসপাতালের “ধর্ষণ রেজিস্টারের”, যেখানে চিকিৎসকরা স্বাস্থ্য-পরীক্ষার খুঁটিনাটি নথিবদ্ধ করেন। তাঁরা জানতে পারেন, করাচির তিনটি প্রধান হাসপাতালে এমন ৩০২টি পরীক্ষা হয়েছে এবং এই তথ্য দিয়ে সাংবাদিকেরা একটি প্রাথমিক ডেটাসেট তৈরি করতে সমর্থ হন। এই অনুসন্ধানে সামগ্রিক চিত্র পুরোপুরি উঠে না এলেও, তাঁরা অল্প সময়ের মধ্যে ধর্ষণের শত শত ঘটনা খুঁজে পান।
বিশ্ব ব্যাংক কি করাচির উচ্ছেদ অভিযানে অর্থায়ন করেছে?
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/Did-the-World-Bank-fund-Karachis-nullah-evictions-2-771x434.jpg)
ছবি: স্ক্রিনশট
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল নগরী করাচির জনসংখ্যা ১ কোটি ৬১ লাখ। ক্রমবর্ধনশীল এই মহানগরের আয়তন শহরটির বয়স ও নগর-অবকাঠামোর উপর ক্রমাগত চাপ সৃষ্টি করছে। ২০২০ সালের আগস্টে অপ্রত্যাশিত মৌসুমী বর্ষণের ফলে শহরজুড়ে, বিশেষত নব্য উচ্চ-মধ্যবিত্ত অঞ্চলে প্রবল বন্যা দেখা দেয়, যা করাচির পয়ঃনিষ্কাষন ব্যবস্থা বা নালার বেহাল দশাকে আলোচনায় নিয়ে আসে। শহরজুড়ে এই বন্যার পর সরকার পরিচ্ছন্নতা প্রকল্প হাতে নেয় এবং এর অধীনে শহরটির নদী তীর ও নালার পার্শ্ববর্তী স্থাপনায় ব্যাপক উচ্ছেদ অভিযান চালায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সামা প্রশ্ন তোলে, এই অভিযান বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় হচ্ছে কি না। কারণ বিশ্ব ব্যাংক নালা পরিচ্ছন্নতায় সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এই অভিযানে তাদের সর্মথন অস্বীকার করেন। কারণ এ ধরনের অভিযান বিশ্ব ব্যাংকের সামাজিক দায়িত্বের মূলনীতির বিরুদ্ধে যায়। কিন্তু অনুসন্ধানে পরোক্ষ সমর্থনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়, যেখানে এক বিশেষজ্ঞ প্রশ্ন তোলেন, “ঘর বাড়ি না সরিয়ে কীভাবে নালা পরিষ্কার করা যায়?” আরেকটি প্রাসঙ্গিক স্টোরিতে করাচির পয়ঃনিষ্কাষণ নালাগুলো চিহ্নিত করে এ সংক্রান্ত ডেটা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় সামা ডিজিটাল।
মানব পাচারের পথঘাট
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/human-smuggling-map.jpg)
ডন পত্রিকার জন্য এ ছবিটি আঁকেন সামিয়াহ বিল্লাহ। ছবি: স্ক্রিনশট
একজন দ্রুতগামী চালক, একটি ভাঙা গাড়ি এবং একটি সীমাহীন মরুপ্রান্তর। ডন পত্রিকার রিপোর্টার আকবর নোৎযাই যখন অনিবন্ধিত অভিবাসীর ছদ্মবেশ নিয়ে পাকিস্তান ও আফগান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইরান যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখনও তিনি জানতেন না, ভাগ্যে কী আছে। তবে তাঁর এই দীর্ঘ অনুসন্ধান থেকে পাঠকেরা বেলুচিস্তানের মানব পাচার চক্র সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিজ্ঞতা জানতে পারেন। প্রতিবেদন অনুসারে, “পাকিস্তান হয়ে হাজার হাজার আফগান নাগরিক ইরান সীমান্ত পাড়ি দেয়।”
এই গল্পে তিনি অভিবাসীদের করুণ অবস্থা তুলে ধরেন। এই কাজে তিনি নিজের জীবন এমন একদল মানুষের হাতে ছেড়ে দেন, যারা তাঁকে ক্ষমাহীন এক অঞ্চলে নিয়ে যায়। ভূতত্ত্ববিদরা এই অঞ্চলকে “পৃথিবীতে মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি” অঞ্চল বলে অভিহিত করেছেন। ইউরোপ যেতে গিয়ে অভিবাসীদের বিক্ষুব্ধ সাগর পাড়ি দেওয়ার বিষয়টি এর আগে সংবাদপত্রে বেশ ভালোভাবে উঠে আসলেও যাত্রাপথের এই অংশটি নিয়ে তেমন জানাশোনা ছিল না। পুরোপুরি ভূমির ওপর দিয়ে হলেও এই যাত্রা একইরকম বিপদসংকুল।
পাকিস্তানে শিকার মৌসুম
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/shutterstock_1702519186-771x514.jpg)
বিপন্ন প্রজাতির হোবারা বাস্টার্ড। ছবি: শাটারস্টক
প্রতি বছর, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজপরিবারের শেখরা পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চল বেলুচিস্তানে আসেন। তাঁদের আগমনের উদ্দেশ্য বিপন্ন প্রজাতির হোবারা বাস্টার্ড পাখি শিকার। অনেক সংস্কৃতিতে মনে করা হয়, এই বিরল পাখির মাংস খেলে পুরুষের কামশক্তি বাড়ে। এই মৌসুমী শিকার কোনও গোপন বিষয় নয়। বিবিসি উর্দু এই দারিদ্রপীড়িত অঞ্চলে রাজপরিবারের ভ্রমণের বিলাসবহুল আয়োজনের পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে। বিবিসির রিপোর্টারের মতে, “পাশনির মতো অঞ্চলে ব্যয়বহুল এই আয়োজন সম্পন্ন হয়, অথচ অধিকাংশ স্থানীয়দের কাছে মৌলিক চাহিদা পূরণ-ই এখনো চিন্তার বাইরে।” প্রতিবেদনে উঠে আসে, “ধনী উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার উপায় হিসাবে পাকিস্তানের ক্ষমতাধর মহল কয়েক দশক ধরে গোপন শিকারকে সমর্থন করে যাচ্ছেন।”
পাকিস্তানে বিচারবহির্ভূত হত্যা
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/Screenshot-783-771x380.png)
ছবি: স্ক্রিনশট
ভয়েসপিকের এই অনুসন্ধান, তিনটি ভিন্ন শহরের তিনটি হত্যাকাণ্ডকে গোটা পাকিস্তানে পুলিশী বর্বরতার একটি পদ্ধতিগত সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পাকিস্তানের এই স্বাধীন সংবাদমাধ্যম প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের ওপর আলোকপাত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করে।
পুলিশের হাতে মানুষের মৃত্যুর বিভিন্ন ধরন নিয়ে গভীর এই অনুসন্ধানে ভয়েসপিকের রিপোর্টাররা উল্লেখ করেন, “২০২১ সালের জানুয়ারিতে সহিংস মৃত্যুর ঢল কোন দৈব ঘটনা নয়। পাকিস্তানী আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্যাতন ও নির্মমতার ইতিহাস বেশ পুরনো।”
এক বছরের প্রদেশভিত্তিক ডেটা বিশ্লেষণ করে, স্টোরিটি উপসংহারে পৌছায়, “বিগত বছরে পুলিশি হেফাজতে ও মুখোমুখি বন্দুকযুদ্ধে ৫৬টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মধ্য দিয়ে পাঞ্জাব পুলিশ-ই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা-প্রবণ এবং প্রাণঘাতী বলে প্রমাণিত হয়েছে।” একটি সম্পূর্ণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ চিত্র তুলে ধরতে রিপোর্টাররা পুরনো সংবাদ প্রতিবেদন তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখেন, কারণ বিষয়টি নিয়ে সচরাচর আলোচনা হয় না, এবং কেবলমাত্র নির্মমতম কিছু ঘটনাই মনোযোগ পায়।
নকল প্যারিস
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2021/12/Screenshot-785-771x432.png)
ছবি: স্ক্রিনশট
পরিকল্পনাটি ছিল ফ্রান্সের রাজধানীর আদলে একটি আবাসন গড়ে তোলা। উত্তর পাঞ্জাবের অন্যতম প্রধান শহর গুরজানওয়ালার বাসিন্দারা এই প্রকল্পে বিনিয়োগ করছিলেন, কারণ তাদেরকে কেবল একটি নিরাপদ গেটেড কমিউনিটি নয়, বরং ডিজনিল্যান্ডের মত বিনোদন পার্ক এবং এশিয়ার অন্যতম বড় মসজিদেরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। জমির প্লটগুলো বন্টন করা হতো ব্যালট পদ্ধতিতে। নিবন্ধন খরচ ছিল এক লক্ষ পঁচিশ হাজার রুপি, এবং কেবলমাত্র নিবন্ধন সনদধারীরা ব্যালট পদ্ধতিতে অংশ নিতে পারতেন।
কিন্তু স্বাধীন সংবাদ সাইট সুজাগের অনুসন্ধান অনুযায়ী, “কেউ জানে না এটি ঠিক কোথায় নির্মিত হবে” এবং লা প্যারিস প্রকল্পের বিশাল প্রতিশ্রুতি ও ব্যাপক বিজ্ঞাপনী প্রচারণাতেও বিষয়টি ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে।” পাকিস্তানের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন যখন জমির লটারি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, তখন গুজরানওয়ালা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বিবৃতি দেয়, লা প্যারিস “একটি ভুয়া ও অবৈধ আবাসন প্রকল্প, এবং সেটি জিডিএ’র অনুমোদন নেয়নি” এবং ব্যালট পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি জানায় সংস্থাটি। লা প্যারিস প্রকল্পের আইনী পরামর্শক স্বীকার করেন, প্রতিষ্ঠানটি কেবল “ভবিষ্যত ক্রেতাদের নিবন্ধন করছিল।” তবে তিনি রিপোর্টারকে বলেন, প্রকল্পটি অবৈধ নয় এবং এসইসি’র আপত্তি “ভিত্তিহীন।” প্রতিষ্ঠনটির আরেক কর্মী বলেন, প্রকল্পের অবস্থান এখনো না জানানোর কারণ- জানাজানি হয়ে গেলে লা প্যারিস প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য জমির মালিকেরা দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন। (সুজাগের ওয়েবসাইট পরিবর্তনের কারণে আপাতত লিংকগুলো কাজ করছে না। পরবর্তীতে হালনাগাদ করা হবে।)
আরও পড়ুন
সুজাগ: ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম ফ্রম দ্য মার্জিনস অব পাওয়ার ইন পাকিস্তান
ডন, পাকিস্তান’স পেপার অব রেকর্ড, আন্ডার প্রেসার অ্যাজ মিলিটারি টাইটেনস গ্রিপ
মিট দ্য এক্সাইলড পাকিস্তানি জার্নালিস্ট ডকুমেন্টিং সেন্সরশিপ ইন সাউথ এশিয়ান নিউজরুমস
জিআইজেএনের উর্দু সম্পাদক আমেল ঘানি পাকিস্তানে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান থেকে শুরু করে পরিবেশ ও ডিজিটাল অধিকার পর্যন্ত অনেক বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করেছেন। তিনি একজন ফুলব্রাইট ফেলো এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তিনি সেখানে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় বিশেষায়িত জ্ঞান লাভ করেন।