গোটা বিশ্বেই ওয়াচডগ (প্রহরীর ভূমিকা পালন করা) সাংবাদিকদের সবচেয়ে দৃঢ়সংকল্প ও উদ্যোগী বলে বিবেচনা করা হয়। আবার তারাই কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, বিশেষ করে যাঁরা দমনমূলক পরিবেশে সাংবাদিকতা করেন। তাঁদের সমর্থন দরকার। জিআইজেএনের মিশন হলো: গভীরতাধর্মী ওয়াচডগ সাংবাদিকতা জোরদার করা এবং ছড়িয়ে দেওয়া। আমরা সব সময় ভাবি, কীভাবে এই সমর্থনকে আরও উন্নত এবং এর পরিসরকে আরও বিস্তৃত করা যায়। এই লক্ষ্য সামনে রেখেই আমরা আনন্দের সঙ্গে জিআইজেএন অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস চালু করছি, যা আমাদের সেবা, নতুন নতুন টুল ও রিসোর্স, সাংবাদিকদের জন্য সহজলভ্য করবে।
আমাদের হেল্প ডেস্কও জিআইজেএন অ্যাডভাইজরি সেবার অন্তর্ভুক্ত, যেখান থেকে প্রতিবছর হাজারো সাংবাদিকের জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়া হয়। আমরা যেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে অনুসন্ধানী কৌশল, অনলাইন গবেষণা, ডেটা বিশ্লেষণ এবং বিশ্বব্যাপী সোর্স ও সহযোগিতা করার মতো সাংবাদিকদের সন্ধান দেওয়া। এ জন্য আমরা ৮২টি দেশে জিআইজেএনের ২১১টি সদস্য সংগঠন, এবং সাংবাদিক ও বিশেষজ্ঞদের বিশ্বজোড়া নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করি। এ ছাড়া আমাদের রিসোর্স সেন্টারে আছে একাধিক ভাষায় লেখা বিষয়ভিত্তিক টিপশিট, রিপোর্টিং গাইড এবং শিক্ষামূলক ভিডিও।
ব্যবসা ও ব্যবস্থাপনা, আইনি সহায়তা এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নতুন নতুন রিসোর্স এবং ওয়াচডগ সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা পর্যালোচনার মতো দরকারি সেবা যোগ হয়েছে আমাদের ভাণ্ডারে। আরও উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টা থেকে আমরা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এবং অসামান্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জোট বেঁধেছি। তাদেরকেও ধন্যবাদ।
ব্যবসা এবং ব্যবস্থাপনা
মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (এমডিআইএফ)-এর সঙ্গে অংশীদারত্বের কল্যাণে এখন সাংবাদিকতার ব্যবসার দিক নিয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ দিতে পারে জিআইজেএন। কারিগরি ও উপদেষ্টা সেবার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে সমর্থন জোগানোর বিশদ অভিজ্ঞতা রয়েছে এমডিআইএফের। জিআইজেএন অ্যাডভাইজরি সেবার অধীনে আয়ের উৎস বাড়ানো, কার্যকরভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা এবং টেকসই ব্যবসা কৌশলসহ বিভিন্ন বিষয়ে এমডিআইএফ থেকে পরামর্শ নিতে পারবে বাছাই করা স্বাধীন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো।
আইনি সহায়তা
আইনি প্রতিরক্ষা—নির্বাচিত ওয়াচডগ গণমাধ্যমগুলোর জন্য বিনা মূল্যে আইনি সুরক্ষা সেবার সুযোগ করে দিতে পেরে জিআইজেএন অত্যন্ত আনন্দিত। এটি সম্ভব হচ্ছে মিডিয়া ডিফেন্সের সঙ্গে অংশীদারত্বের সুবাদে। অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠানের কাজ হলো বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোকে আইনি সহায়তা দেওয়া। অবশ্য অ্যাডভাইজরি সার্ভিসের অধীনে জিআইজেএন আগে মূল্যায়ন করবে, কোনো সংবাদ প্রতিষ্ঠানের আইনি প্রতিরক্ষা সেবা দরকার আছে কি না।
আইনি সেবা—সাইরাস আর ভ্যান্স সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল জাস্টিসের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্বের কল্যাণে বাড়তি কিছু আইনি সহায়তা পাওয়া যাবে। এই অলাভজনক সংস্থা বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনা পয়সায় আইনি প্রতিনিধি জোগান দেয়। জিআইজেএনের সুপারিশ করা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে তিন ধরনের সেবা দেবে ভ্যান্স সেন্টার: প্রাক্-প্রকাশনা বা প্রাক্-সম্প্রচার পর্যালোচনা (নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করা মিডিয়ার জন্য প্রযোজ্য), চুক্তি পর্যালোচনা ও দর-কষাকষি এবং এনজিও নিবন্ধন।
নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা
সুরক্ষা প্রশিক্ষণ এবং রিসোর্স—বিশ্বব্যাপী নজিরবিহীন এক আক্রমণের প্রথম সারিতে রয়েছেন ওয়াচডগ সাংবাদিকেরা । এমন সহকর্মীদের সহায়তার জন্য জিআইজেএন জোট বেঁধেছে অ্যাকোস অ্যালায়েন্সের সঙ্গে। এর ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পাওয়া সহজ হবে। অ্যাকোস অ্যালায়েন্স হলো সাংবাদিকতায় সুরক্ষার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করা ১২০টির বেশি গণমাধ্যম, সাংবাদিক সমিতি ও এনজিওর একটি জোট।
সাইবার নিরাপত্তা—সাংবাদিক এবং বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য ডিজিটাল সুরক্ষা জরুরি হয়ে উঠেছে। জিআইজেএন এখন ফোর্ড ফাউন্ডেশনের একটি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে কাজ করছে, যেন তাদের সাইবার সিকিউরিটি অ্যাসেসমেন্ট টুলটি (সিএটি) যাতে ওয়াচডগ গণমাধ্যমগুলোও ব্যবহার করতে পারে। আমরা আশা করি, এই টুল খুব শিগগির পাওয়া যাবে। তার আগ পর্যন্ত নিজেদের সিএটি অবারিতভাবে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে ফোর্ড। এই টুলের মাধ্যমে কোনো সংস্থার সাইবার নিরাপত্তা সক্ষমতা ও সহনশীলতা যাচাই করা যায় এবং দুর্বলতা দূর করার জন্য দরকারি পরামর্শ পাওয়া যায়।
মানসিক চাপ ও ট্রমা ব্যবস্থাপনা—ওয়াচডগ সাংবাদিকতা এমনিতেই কঠিন, এবং মানসিক চাপ এই পেশার কর্মীদের আরও ভোগায়। এই সমস্যার সমাধানে জিআইজেএন জোট বেঁধেছে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গ্র্র্যাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের স্বনামধন্য প্রকল্প ডার্ট সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড ট্রমার সঙ্গে। ডার্ট সেন্টারের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো মনস্তাত্ত্বিক ও ট্রমাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও বিশেষজ্ঞ নেটওয়ার্কের সহযোগিতা পাবে।
প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা মূল্যায়ন
স্বাধীন গণমাধ্যমগুলোকে তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করবে জিআইজেএন। এর অংশ হিসেবে তাদের ইন-ডেপথ অ্যাসেসমেন্ট সহায়তা দেওয়া হবে। ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম মিডিয়া অ্যাসেসমেন্ট প্রোগ্রাম (আইজে-ম্যাপ) নামের এই কর্মসূচির অধীনে নিউজরুমের মৌলিক বিষয় থেকে শুরু করে রাজস্ব বহুমুখীকরণ পর্যন্ত প্রতিটি দিক মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় এত সম্পদ ও সময় লাগে যে অনেক সময় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সক্ষমতা ও দুর্বলতার জায়গা অনুসন্ধান এবং ভবিষ্যতের সাফল্যের জন্য কী প্রয়োজন, তা মূল্যায়ন করার সময় পায় না। সক্ষমতা বৃদ্ধির যে ক্ষেত্রগুলোতে আমরা সহায়তা করতে পারি, সেগুলোর মধ্যে আছে: অনুসন্ধান পদ্ধতি, প্রতিবেদনের কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা, ডেটা সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ, বিতরণ ও ডিজিটাল আউটরিচ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্ব।
আইজে-ম্যাপ কর্মসূচির অধীনে প্রথমবারের মতো এশিয়ার তিনটি সংবাদ প্রতিষ্ঠান তাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা মূল্যায়নের সুযোগ পেতে যাচ্ছে। মূল্যায়ন শেষ হলে তারা তিনটি অগ্রাধিকার এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশেষজ্ঞ পরামর্শ পাবেন। মনে রাখবেন, আবেদনের শেষ সময় ৩০ জুন ২০২১। আরও তথ্য এবং আবেদন ফরম পাবেন এখানে।
এর বাইরে অনুসন্ধান বা সাধারণ কোনো সহায়তা চাইলে যোগাযোগ করুন জিআইজেএন হেল্প ডেস্কে।