গত ২৫ বছরে আমি যেসব স্টোরি কাভার করেছি, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন ছিল যৌন নিপীড়ন ও শোষণ; বিশেষ করে সেই সব নারীর গল্প, যাঁরা আগে থেকেই সহিংসতা, বিপর্যয় ও সংঘাতের শিকার এবং ক্ষমতায় থাকা পুরুষের হাতে নতুন করে নিগৃহীত হয়েছেন।
আমি রিপোর্টিং করেছি হাইতির ১২ বছর বয়সী সেই মেয়েটিকে নিয়ে, যাকে খাবার পাওয়ার জন্য যৌনকর্মে লিপ্ত হতে হয়েছিল জাতিসংঘের এক শান্তিরক্ষী কর্মকর্তার সঙ্গে। অথবা সুদানের সেই মা-কে নিয়ে, যাকে সৈন্যরা ধর্ষণ করেছিল তাঁর মেয়ের সামনে; আরও আছেন সেই শ্রীলঙ্কান শিক্ষার্থী, যিনি আমাকে বলেছিলেন, পুলিশ তাঁর পায়ুপথে এত নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে যে এখনো তাঁর টয়লেট ব্যবহার করতে কষ্ট হয়।
এই ঘটনাগুলো নিয়ে রিপোর্ট করা এত কঠিন; কারণ ন্যায়বিচার, ক্ষতিপূরণ বা শান্তি ছিল, এই ভুক্তভোগী এই নারীদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নির্মম, কিন্তু এটাই সত্য।
গত ১৮ মাসে, দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ান ও থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন এমন ৭০ জনের বেশি নারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বের বড় বড় কিছু দাতব্য সংস্থার ত্রাণকর্মীরা কীভাবে তাদেরকে যৌনতার বিনিময়ে কাজের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ঘটনাগুলো ঘটেছে ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোয় (ডিআরসি) ইবোলা সংক্রমণের সময়।
৪০ জনের বেশি নারী এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, যাঁরা তাঁদের ভাষ্যমতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কাজ করেন। একজন নারী বলেছেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল; আরেকজন মারা গেছেন গর্ভপাতের পর।
এসব নিয়ে আমাদের এই কাজের কারণে, দাতব্য সংস্থাগুলো অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের অর্থায়নে চলে এবং যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এসেছে— এমন সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইন্টারন্যাশন্যাল ডেভেলপমেন্ট কমিটি। দাতব্য সংস্থাগুলোও এই যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আরও বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৪৪টি অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত অক্টোবরে একটি স্বাধীন কমিশনও গঠিত হয়েছে। যদিও, তদন্তে সাহায্যের জন্য তারা আমাদের সাহায্য চেয়েছে মাত্র মাত্র গত সপ্তাহে।
এখন আমাদের অনুসন্ধানগুলো নিয়ে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করছি। কিন্তু, সম্প্রতি আরও অনেক জায়গা থেকে অনুসন্ধানকারীরা আমাদের প্রশ্ন করছেন: কেন আমরা এখনো এই নারীদের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করিনি?
সাম্প্রতিক একটি অনুসন্ধানের জন্য আমরা কথা বলতে গিয়েছিলাম জাতিসংঘের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি আমাকে বলেছেন, “আপনারা এই নারীদের সাহায্যের জন্য কিছুই করছেন না। যদি সত্যিই উপকার চাইতেন, তাহলে এতদিন তাঁদের বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে তদন্তকারীদের সাহায্য করতে পারতেন। আপনারা যা করছেন, তা কিছু না করার চেয়েও খারাপ।”
আমি তাঁর হতাশা অনুভব করতে পারি। কিন্তু সাংবাদিকেরা কারো শত্রু নন।
সাংবাদিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব নির্ভুল ও নিরপেক্ষ তথ্য তুলে ধরা। এবং একটি হিউম্যানিটারিয়ান নিউজ এজেন্সি হিসেবে, আমরা চাই সংকটের মধ্যে থাকা মানুষদের কণ্ঠ জোরের সঙ্গে সামনে তুলে ধরতে।
একইসঙ্গে, কেউ যদি তার নাম-পরিচয় গোপন রাখতে চান, তাহলে সেই অনুরোধ রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। ব্যক্তিগত সুরক্ষার ঝুঁকি থেকে শুরু করে কমিউনিটির মধ্যে কুৎসার শিকার হওয়ার ভয়— এমন অনেক কারণেই তাঁরা এই অনুরোধ করতে পারেন। তাঁদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারকেও আমাদের সম্মান জানানো উচিত।
সেই নারীরা যেন তাঁদের তথ্যগুলো অন্যদের জানাতে রাজি হন, সেই লক্ষ্যে তাঁদের শক্তিশালী করে গড়ে তোলা – সাংবাদিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব নয়। বিশেষ করে, যখন আমরা জানি না, এই তথ্য জানিয়ে তাঁদের কী উপকার হবে; তাঁরা কোনো সহায়তা বা ন্যায়বিচার পাবেন কিনা, বা কীভাবে তদন্তকাজ পরিচালনা করা হবে।
তবে, আমরা এটুকু নিশ্চিত করেছি, তাঁরা যেন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি রিপোর্ট করতে পারেন। তাঁদেরকে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। আমরা তাঁদেরকে এটিও জানিয়েছি: যে কোনো সময় তাঁরা যদি নিজেদের তথ্য প্রকাশ করতে চান, তাহলে আমরা তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে তৈরি আছি।
এখন পর্যন্ত, কেউই এমনটা করতে রাজি হননি।
আমরা কীভাবে কাজ করি
পাঁচ বছর ধরে যৌন নিপীড়ন নিয়ে রিপোর্টিং করার সময়, অনেকেই (আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ত্রাণকর্মী পর্যন্ত) আমাকে জিজ্ঞাসা করেছেন: এই ভিকটিমদের সাহায্য করার জন্য সাংবাদিক হিসেবে আমরা সত্যিই কী করেছি? আমরা কি জাতিসংঘ বা অন্যান্য সংস্থার তদন্তকারীদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের তথ্য শেয়ার করেছি? আমরা কি অভিযুক্তদের নাম নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়েছি? ঘটনাগুলো মিমাংসা করার জন্য কি আমরা সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করেছি? হুমকির মুখে পড়লে আমরা কি ভিকটিমদের পুনর্বাসনে সহায়তা করেছি?
প্রশ্নগুলোর উত্তর হচ্ছে: না। আমরা যা করি, তা হলো: এই নারীদের সাহায্য করি তাঁদের গল্পগুলো প্রকাশ্যে বলতে এবং এ বিষয়ে বিস্তৃত পরিসরে একটি সচেতনতা তৈরি করতে।
ভিকটিমদের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য আমাদের কখনো কখনো কয়েক ঘণ্টা, কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহও সময় লেগে যায়। তাঁদের কেউ কেউ আমাদের বলেছেন: তাঁদের সারভাইভার বলে উল্লেখ করা খুবই ভুল হবে।
এমন কোনো সাক্ষাৎকারের জন্য যাত্রা শুরুর প্রস্তুতি নেওয়ার অনেক আগে থেকেই আমরা পরিকল্পনা শুরু করি যে, কীভাবে ভিকটিমের সুরক্ষা নিশ্চিত করে সাক্ষাৎকার নেওয়া যাবে। আমরা তখনো জানি না যে, এই সাক্ষাৎকার আদৌ নেওয়া যাবে কি না।
আমরা চিন্তা করি: আমাদের রিপোর্টিং দলে কি পর্যাপ্ত সংখ্যায় নারী আছেন? আমাদের কী ধরনের ভাষায় কথা বলতে হবে? কীভাবে আমরা গোপনে সাক্ষাৎকারগুলো নিতে পারি? সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে আমরা কীভাবে সেই নারীদের সাহায্য করতে পারি? তাঁরা যখন তাঁদের নিপীড়নের দুঃসহ স্মৃতিগুলোর কথা বলছেন, তখন সেই কষ্ট যেন আরও বেড়ে না যায়, সেই চেষ্টা আমরা কীভাবে করতে পারি?
এভাবে প্রস্তুতি নিয়ে সেখানে যাওয়ার পর, আমরা তাঁদের সময় দিই, যেন তাঁরা গল্পগুলো ধীরেসুস্থে বলতে পারেন। আমরা তাঁদের কাছে শুনে নিই যে, তাঁদের এই তথ্যগুলো আমরা অন্য কোনো তদন্তকারী বা সহায়ক ব্যক্তি ও সংগঠনকে (যেমন স্থানীয় কোনো নারী সংস্থা) জানাতে পারি কি না।
তাঁরা এতে অস্বীকৃতিও জানালেও, আমরা নিশ্চিত করি যে, ভবিষ্যতে যেন চাইলে আবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। এজন্য আমরা হয়তো আরও কিছুটা উদ্যোগী হয়ে তার কোনো বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের ফোন নম্বর জোগাড় করে রাখি। বা একই রাস্তায় বেশ কয়েকবার যাতায়াত করে মনে রাখার মত চিহ্নগুলো টুকে রাখি, যেন ভবিষ্যতে আবার তার বাড়িতে যেতে হলে, সহজে পথ চেনা যায়।
স্বাধীন অনুসন্ধান
আমাদের প্রথম অনুসন্ধানটি প্রকাশিত হয় গত সেপ্টেম্বরে। এই রিপোর্টের জন্য মাঠে কাজ করার সময়, আমরা সেই নারীদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, তাঁরা তাঁদের এসব তথ্য জাতিসংঘের কোনো সংস্থা, এনজিও বা কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানাতে চায় কি না। আমরা এমনকি তাঁদেরকে একটি স্থানীয় নারী অধিকার সংগঠন, সোফিপাডি-র কথাও বলেছিলাম।
আমরা যখন সাম্প্রতিক অনুসন্ধানটি শুরু করি, সে সময় এসে কেবল একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। তাদের তদন্তকারীরা মাঠে নামতে নামতে এসে গেছে মে মাস।
ভুক্তভোগীরা তাঁদের তথ্য জানানোর ব্যাপারে অবস্থান বদলেছেন কি না – তা জানার জন্য যখন আমরা প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি, তখনই কঙ্গোর পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। সাম্প্রতিক সহিংসতায় শত শত মানুষ মারা যাওয়ার পর ইবোলা-সংক্রমিত এলাকাগুলোতে জারি করা হয়েছে সামরিক শাসন। ফলে সেখানে বাড়তি রিপোর্টিং করাটা বেশ কষ্টসাধ্য। এবং সেই তথ্য অন্য কাউকে দেওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে আমরা কমিশনের জন্য কিছু প্রশ্ন তৈরি করেছি (ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়), যার উত্তর ভুক্তভোগী নারীরা তাঁদের তথ্য শেয়ারের আগে জানতে চাইতে পারেন।
- আপনার অনুসন্ধানে কী ধরনের গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে?
- আপনার কতজন তদন্তকারী আছে, এবং তাঁরা কী ভাষায় কথা বলেন?
- আপনি কি এই নারীর তথ্য ডব্লিউএইচও বা জাতিসংঘের অন্য কোনো তদন্তকারীকে জানাবেন?
- নারী যদি অভিযুক্ত নিপীড়নকারীর নাম প্রকাশ করতে সম্মত হয়, তাহলে তাঁর সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য তথ্যটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে? (কঙ্গোতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে অভিযোগকারীর মুখোমুখি হতে পারেন, এবং সেখানে প্রত্যক্ষদর্শীদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নেই।)
- কমিশনের প্রতিবেদন থেকে কী ধরনের ফলাফল পাওয়া যাবে বলে সেই নারী আশা করতে পারেন?
এই নারীরা শিশু নন। তাঁদের খুব ভালোমতোই জানা আছে, তাঁরা কী ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারেন: প্রতিশোধ, কুৎসা, ঘরোয়া সহিংসতা এবং এমন আরও অনেক কিছু। এখানে তাদের অল্প কয়েকটি উল্লেখ করা হলো। এবং তাঁরা এ-ও দেখেছেন যে , যৌন নিপীড়নের শিকার নারীরা খুবই কালেভদ্রে ন্যায়বিচার বা ক্ষতিপূরণ পান। বিশেষ করে কঙ্গোতে।
ফলে আমি তাঁদের উদ্বেগের জায়গাগুলো বুঝতে পারি।
সাম্প্রতিক কয়েক বছরে এই জায়গা নিয়ে রিপোর্টিং করতে গিয়ে আমরা দেখেছি: জাতিসংঘের কয়েকজন কর্মকর্তা তাঁদের তদন্তে কতটা অবহেলা করেছেন বা তদন্ত শেষ করতে কীভাবে বছরের পর বছর সময় লাগিয়েছেন। ভিকটিমদেরও নিয়মিতভাবে অসম্মানের মুখে পড়তে হয়েছে। পিতৃত্বের দাবির কথা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এবং কর্তৃপক্ষ প্রায়ই এসব ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এড়িয়ে গেছে।
উদাহরণ হিসেবে, ২০১৭ সালে কঙ্গোর এক নারীর ধর্ষণ হওয়ার ঘটনাটি উল্লেখ করা যায়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনে কাজ করা এক ব্রিটিশ নাগরিক এই কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই ধর্ষণের দাবির সত্যতা তুলে ধরা হলেও, কঙ্গোর কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে যায় নি।
যুক্তরাজের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিও পরবর্তীকালে কেসটি বন্ধ করে দেয়। এবং এর কারণ আমরা কখনোই জানতে পারব না। কারণ, এই এজেন্সি, তথ্য অধিকার আইনের আওতার বাইরে আছে।
আমাদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে যেসব অভিযোগের কথা উঠে এসেছে, সেগুলো নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিল কঙ্গোর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী আন্দ্রে লাইট আসিবিয়া মে মাসে জানিয়েছেন, “তদন্তের কাজে খুব বেশি অগ্রগতি নেই।”
আমাদের অনুসন্ধানের মাধ্যমে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কথা এসেছে, তাদের মধ্যে ৪৪ জনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হয়ে কাজ করেন বলে দাবি করা হয়েছে। এর বাইরে ৭৩ জন নারীর মধ্যে ১০ জন অভিযোগ করেছেন: তাঁদের ওপর যৌন নিপীড়নকারীরা কাজ করেন কঙ্গোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। ডব্লিউএইচও-র পর এই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এসেছে।
কঙ্গোতে যুব উন্নয়ন ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে বিশেষ পরামর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চান্তাল ইলু মুলোপ। আমাদের প্রথম অনুসন্ধান প্রকাশিত হওয়ার পরপরই, বিস্তারিত শোনার জন্য গত ২৯ অক্টোবর তিনি একটি জুম মিটিং আহ্বান করেন। কারণ, এসব অভিযোগের কয়েকটি ফৌজদারি অপরাধের শামিল।
কিন্তু, কঙ্গো সরকারের পক্ষ থেকে কেউই এই আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তাদের কাছ থেকে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। আমরা ফলো আপ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের কোনো ভাষ্য আর শুনতে পাইনি।
অভিযোগকারী নারীরা অন্য কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের প্রতিও অভিযোগ করেছেন।
এই কেলেঙ্কারির কারণে নতুন করে সংবাদের শিরোনাম হওয়া অক্সফাম, কঙ্গোর পরিস্থিতি নিয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত শুরু করেছে। একজন হুইসেলব্লোয়ার সম্প্রতি অক্সফামের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন। আমাদের অনুসন্ধানের সময়ও, এক নারী অক্সফামের এক কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছিলেন।
দাতব্য প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা সেই নারীকে সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু এটি আরও প্রশ্ন তোলে দায়দায়িত্ব সম্পর্কে: এই কাজের দায় কার? সেই অভিযুক্ত ধর্ষণকারী নাকি অক্সফামের?
এদিকে, জাতিসংঘের ইন্টারনাল ওভারসাইট সার্ভিসেস আলাদা তদন্ত করছে, ইউনিসেফ ও জাতিসংঘের অভিবাসন সংক্রান্ত এজেন্সি, আইওএম-এর কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে।
*অন্য যেসব এনজিও-র কর্মীদের নাম এসেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে: স্বাস্থ্য বিষয়ক ত্রাণ সংস্থা আলিমা (ALIMA), ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি), ও ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কর্পস (আইএমসি)। সবাই তাদের নিজ নিজ কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখছে বলে দাবি করেছে। তবে তারা এখনো স্বাধীন কোনো তদন্ত শুরু করেনি।
আমরা একটি অলাভজনক নিউজরুম। এবং আমাদের খুবই সীমিত রিসোর্স নিয়ে কাজ করতে হয় (আমাদের কাজকে সমর্থন করতে চাইলে ক্লিক করুন)। ত্রাণ ও দাতব্য খাতে এ ধরনের যৌন নিপীড়নের ঘটনা তুলে ধরতে আমরা বদ্ধ পরিকর। এমনকি এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ঘটানোর প্রক্রিয়াটি খুব ধীরগতির হলেও।
এই নারীদের অভিযোগ নিয়ে রিপোর্টিং করার মাধ্যমে আমরা শুরুর একটি পদক্ষেপ নিয়েছি মাত্র। এর মাধ্যমে ত্রাণ সংস্থাগুলোকে সজাগ করেছি এসব অভিযোগের ব্যাপারে।
এই পর্যন্ত, আমরা আমাদের কাজটি করেছি। আশা করছি, দাতব্য সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা এখন তাঁদের অংশের কাজগুলো করবেন।
*প্রতিবেদনটি গত ১৯ মে, ২০২১ তারিখে হালনাগাদ করা হয়েছে। এর আগের সংস্করণে বলা ছিল: এনজিওগুলো এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। কিন্তু এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, তারা এগুলো খতিয়ে দেখছে। লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ান-এর ওয়েবসাইটে। লেখকের অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
আরও পড়ুন
আফ্রিকার ইবোলা যৌন নিপীড়ন কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হলো যেভাবে
ট্র্যাজেডির শিকার, সাক্ষী ও বেঁচে ফেরাদের সাক্ষাৎকার নেবেন যেভাবে
ইনভেস্টিগেটিং সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ: রিপোর্টিং টিপস অ্যান্ড টুলস
পেইসলি ডোডস দ্য নিউ হিউম্যানিটারিয়ানের অনুসন্ধানী ও ফিচার সম্পাদক। ১৯৯৪ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকার সময় তিনি যোগ দিয়েছিলেন অ্যাসোসিয়েট প্রেসে। লন্ডনে এপির ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন এক দশক। ইউরোপের গোয়েন্দা ও সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে রিপোর্ট করে জিতেছেন পোল্ক অ্যাওয়ার্ড। গুয়ানতানামো বে কারাগারে বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল নিয়ে প্রতিবেদন করায় পেয়েছেন অন্যান্য আরও সম্মান।