আপনি এই লেখাটি পড়ছেন মানে ধরে নিচ্ছি, আপনি এরই মধ্যে পাঠকদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানেন। আপনাকে হয়তো নতুন করে বলারও প্রয়োজন নেই: কারা আপনার পাঠক, অনলাইনে তারা কোথায় কোথায় যায়, এবং কোন ধরনের কন্টেন্ট পছন্দ করে। এই বিষয়গুলো আপনার প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব তথ্য যদি আপনার জানাও থাকে, তারপরও আরো নতুন অনেক কিছু শেখার ও সেগুলো নিয়ে চিন্তা করার জায়গা আছে। এই গাইডটি তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা অনলাইনে নিজেদের অডিয়েন্স সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বুঝতে এবং নতুন পাঠক-দর্শকের কাছে পৌঁছাতে চায়।
পরামর্শগুলো পড়ার সময় প্রধান একটি বিষয় মাথায় রাখুন: সফলতা পাওয়ার জন্য আপনাকে কন্টেন্ট তৈরিতেও যেমন সময় দিতে হবে, তেমনি সেটি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যও একইভাবে সময় ও শ্রম দিতে হবে। আপনি দারুন একটি প্রতিবেদন লিখলেন বা অসাধারণ কোনো প্রজেক্ট তৈরি করলেন, কিন্তু এরপর আর কোনো কাজ করলেন না এবং আশা করলেন, পাঠকরাই নিজে নিজে আপনার সাইটে চলে আসবে – এমনটা ভাবার অর্থ আপনি নেহাত সময়ের অপচয় করছেন। কোলাহল-ভরা ইন্টারনেটে সফলতা পেতে হলে আপনাকে পাঠক-দর্শকের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যেন তারা আপনার সাইটের নাম মনে রাখে এবং বারবার সেখানে ফিরে আসে।
কারা আপনার পাঠক? কোন কোন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করবেন?
কাজে নেমে পড়ার আগে, আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: এই কাজের মধ্য দিয়ে আপনি কাদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন। আপনি কি প্রান্তিক পাঠক-দর্শকের সঙ্গে যুক্ত হতে চান? নাকি এমন পাঠকগোষ্ঠী টার্গেট করছেন, যাদের বেশিরভাগ বয়সে তরুণ অথবা বৃদ্ধ?
বিভিন্ন সংগঠনকে এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাই: “আমরা সবার কাছেই পৌঁছাতে চাই! আমাদের অনেক পাঠক দরকার।” অবশ্যই, সবাই অনেক পাঠক চায়। কিন্তু মিডিয়া আউটলেটগুলোকে বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা গড়ে তুলতে হবে। দেখতে হবে, কারা তাদের কাজ থেকে সত্যিই উপকার পাবে।
পাঠকদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কোথায় কোথায় কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেবেন। এমন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে, যেখানে আপনার কাজের কথা জানিয়ে কন্টেন্ট পোস্ট করতে পারেন। তবে সব ধরনের প্ল্যাটফর্মে একই জিনিস পোস্ট করার কথা ভাববেন না। তার কোনো অর্থও হয় না। আপনি কী ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করছেন, আপনার অডিয়েন্স কারা, এবং কোন ভৌগলিক অবস্থানে আপনি কাজ করছেন – এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনাকে সঠিক প্ল্যাটফর্ম খুঁজে নিতে হবে।
কখনো কখনো কিছু সংগঠন জিজ্ঞাসা করে, “আমাদের কী এই প্ল্যাটফর্মে (নতুন ট্রেন্ডিং অ্যাপ) নতুন প্রোফাইল তৈরি করা উচিৎ?” উত্তেজনার বশে ৫০টি ভিন্ন ভিন্ন চ্যানেলে সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট খোলার আগে মনে রাখুন, প্ল্যাটফর্ম বদলাতে থাকবে, কিন্তু আপনি যে ধরনের কন্টেন্ট শেয়ার করেন তা একইরকম থাকবে। তার মানে, যদি আপনার পাঠক-দর্শকের জন্য প্রাসঙ্গিক না হয়, তাহলে প্রতিটি নতুন অ্যাপের পেছনে দৌড়োনোর কোনো অর্থ হয় না। যেমন, খুবই অল্প সময়ের জন্য সবাই ভেবেছিল, স্ন্যাপচ্যাটই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ এবং প্রতিটি সংবাদমাধ্যমই শুরু করেছিল ফেসবুক লাইভ-এর ব্যবহার। কিন্তু এখন দুটির প্রভাবই অনেক কমে গেছে।
তার মানে এই না যে, নতুন এসব প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করবেন না। কিন্তু আপনার সময়ের সবচে ভালো ব্যবহার হবে যদি এরইমধ্যে যেসব টুল ব্যবহার শুরু করছেন এবং যেগুলো নিশ্চিতভাবে কার্যকর সেসব টুলই আরো ভালোভাবে কাজে লাগানোর পেছনে সময় দেন। যেমন, দীর্ঘসময়ের জন্য পাঠকের আস্থা ধরে রাখতে চাইলে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের চেয়ে একটি নিউজলেটার অনেক বেশি কাজে দেবে।
মোদ্দা কথা হলো: আপনি কাদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন এবং আপনার দেশে কোন ধরনের প্ল্যাটফর্ম বেশি ব্যবহার করা হয়, তার ওপর ভিত্তি করে কাজের প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার কোনো মিডিয়ার জন্য যা কাজ করে, তা হয়তো সেনেগালের কোনো মিডিয়ার জন্য করবে না। আপনার পাঠক-দর্শক যদি ভিয়েতনামের হয় এবং সেখানে কেউ যদি সেভাবে টুইটার ব্যবহার না করে, তাহলে আপনার কোনো টুইটার অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। আপনি যদি ইতালির তরুন পাঠক-দর্শককে আকৃষ্ট করতে চান এবং ইতালির তরুনরা যদি ফেসবুক ব্যবহার না করে, তাহলে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। আপনার সংগঠনের সম্পদ সীমিত হলে, এই কথা আরো বেশি করে প্রযোজ্য হবে।
প্রতি বছর নতুন নতুন প্ল্যাটফর্ম আসবে। আপনাকে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করতে হবে এবং সেগুলো কিভাবে বড় হচ্ছে বা হচ্ছে না, তা খেয়াল করতে হবে। যদি দেখেন যে, আপনার টার্গেট করা দেশে একটি নির্দিষ্ট অ্যাপে অনেক মানুষ যুক্ত হচ্ছে তাহলে সেটি নিয়ে আরো গভীর পর্যবেক্ষণ জরুরি হয়ে পড়বে।
একইসঙ্গে, প্ল্যাটফর্মগুলোতে কী ধরনের কন্টেন্ট পোস্ট করা যাবে, শুধু সেই ভাবনাতেই আটকে থাকবেন না। সেগুলোতে কী ধরনের যোগাযোগ করা যায়, তাও মাথায় রাখুন। আমি কাজটি করি এই তিন পদ্ধতিতে:
১. একমুখী যোগাযোগ
আপনি কোনো কিছু সম্প্রচার করছেন মানে অনেকাংশেই এটি একটি একমুখী যোগাযোগ; এখান থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়ার আশা নেই। তারপরও, এই প্ল্যাটফর্মগুলোতে পাঠকদের মন্তব্য করার বা প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ করে দিতে হবে। দর্শকদের সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতে হবে যেন এটি মুক্ত আলোচনার অনুভূতি দেয়। কিন্তু এমন প্ল্যাটফর্মগুলোতে তাৎক্ষণিক বা দৃশ্যমান প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ থাকে না। এই পদ্ধতির যোগাযোগ দিয়ে যেভাবে পাঠক-সংযুক্তি বাড়াতে পারেন:
- টেলিগ্রাম: এখানে আপনি অনেক বড় অডিয়েন্স তৈরির সুযোগ পাবেন। কিন্তু কোনো ফিডব্যাকের সুযোগ ছাড়াই।
- হোয়াটসঅ্যাপ ব্রডকাস্ট: এর মাধ্যমে সীমিত কিন্তু টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছানো যায়।
- নিউজলেটার: এটি ফরোয়ার্ড করা যায়।
২. একমুখী আলাপচারিতা, কিন্তু মন্তব্য করার সুযোগ থাকবে
এক্ষেত্রে আপনি এমন প্ল্যাটফর্মে আপনার কন্টেন্ট শেয়ার করছেন, যেখানে আপনি ফিডব্যাক পাবেন শুধু কমেন্টের মাধ্যমে (যদি কমেন্ট অপশন চালু থাকে)। কমেন্টও আপনার পোস্ট করা বিষয় সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। ফলে, সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর জবাব না দিলেও, সেগুলোর দিকে নজর রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের কিছু প্ল্যাটফর্মের উদাহরণ:
- ইনস্টাগ্রাম গ্রিডস
- ভিডিও/ইউটিউব
- লিংকডইন
৩. দ্বিমুখী আলাপচারিতা
এক্ষেত্রে আপনি অনলাইনে পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই অডিয়েন্সের সংযুক্তি আশা করতে পারেন। এখানে পারস্পরিক আলাপচারিতা গড়ে ওঠার একটি আবহ থাকে। এবং আপনার কাছেও আশা করা হবে যে, যত দ্রুত সম্ভব অডিয়েন্সদের কথার জবাব দেবেন।
- টুইটার
- ইন্সটাগ্রাম লাইভ
- হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ
আমার সাধারণ পরামর্শ হলো: এ ধরনের আলোচনা-আলাপচারিতার দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখার মতো সক্ষমতা আপনার সংগঠনের আছে কিনা, তা যাচাই করুন। যেমন, আপনার কী একজন সোশ্যাল মিডিয়া এডিটর বা অডিয়েন্স এডিটর নিয়োগ দেওয়ার মতো টাকা আছে? যদি থাকে, তাহলে আপনি এই তিন ধরনের প্ল্যাটফর্ম নিয়েই কাজ করতে পারেন। একমুখী সম্প্রচার থেকে শুরু করে দ্বিমুখী আলাপচারিতা পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে আপনি একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট ও একটি ইন্সটাগ্রাম পেজ চালাতে পারেন। সেটি সার্বক্ষণিক নজরে রাখতে পারেন এবং কমেন্টের জবাব দিতে পারেন। কিন্তু আপনার রিসোর্স ও তহবিল যদি সীমিত হয়, তাহলে কাজের জায়গা আরো ছোট করে আনাই ভালো। তখন এটি হতে পারে কোনো একমুখী যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম। যেমন ভালো একটি নিউজলেটার বা টেলিগ্রাম চ্যানেল।
প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য ও কাজের ধরন ভিন্ন রকমের। এবং এগুলো যথার্থভাবে ব্যবহার না করা হলে, কাজের কাজ কিছু হয় না। যেমন, টুইটারকে সেভাবেই ব্যবহার করা উচিৎ, যে জন্য এটি বানানো হয়েছে: অডিয়েন্সের সঙ্গে আলাপচারিতায় জড়ানো এবং তাদের কথার উত্তর দেওয়া। টুইটারকে একমুখী আলাপচারিতার টুল হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ হবে না। কারণ এটি কোনো আরএসএস ফিড নয়। এভাবে এটি ব্যবহার করলে অডিয়েন্সের সঙ্গে খুব বেশি সংযুক্তি আসলে ঘটে না।
আবার, শুধু দ্বিমুখী আলাপচারিতার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমেই যে পাঠক-দর্শকদের মনোভাব বুঝতে পারবেন – এমনও নয়। একমুখী আলাপচারিতার প্ল্যাটফর্মগুলো থেকেও আপনি বুঝতে পারবেন: অডিয়েন্স আপনার কন্টেন্টের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কিনা। যেমন, এখনকার নিউজলেটারগুলোতে দেখা যায় কোন জিনিসগুলোতে মানুষ বেশি ক্লিক করছে এবং কোন জায়গা থেকে এগুলো খোলা হচ্ছে। (এ নিয়ে পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।)
প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়ার সময় আরেকটি যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে: সেখানে সবার প্রবেশাধিকার/অ্যাক্সেস আছে কিনা। ধরা যাক: আপনার অঞ্চলে ফেসবুক অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু সেখানে আপনি সেন্সরশিপের মুখে পড়ছেন, আপনার কন্টেন্ট ব্লক করে দেওয়া হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কী সেখান থেকে সরে এসে নিউজলেটার বা টেলিগ্রাম চ্যানেলের দিকে মনোযোগ দেওয়ার কথা ভাববেন? এর মাধ্যমে সেন্সরশিপ পুরোপুরি বন্ধ না হলেও, অডিয়েন্সের সঙ্গে যোগাযোগের নতুন পদ্ধতির কথা বিবেচনা করাটা উপকারী হতে পারে।
গোটা বিশ্ব যেখানে কোনো না কোনো পর্যায়ের সেন্সরশিপের মুখোমুখি হচ্ছে, সেখানে ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, যা দিয়ে ব্যবহারকারী তার পরিচয় ও ব্রাউজিং কর্মকাণ্ড গোপন রেখে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন) ও নতুন নতুন নেটওয়ার্কের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। কঠোর সেন্সরশিপের মধ্যে পড়লে, বিকল্প হিসেবে এ ধরনের পোস্টিংয়ের কাজ নাম-পরিচয় গোপন রেখে করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে আপনার সংগঠন। যদি এমনটি করতেই হয়, তাহলে বিবেচনা করুন: আপনার দেশে কোন প্ল্যাটফর্মে এই কাজটি যথাসম্ভব নিরাপদে করা যায়। (এখানে বলা দরকার, চীনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও সেখানকার সেন্সরশিপ প্রসঙ্গ এই গাইডে আলোচনা করা হয়নি।)
অ্যাক্সেসের সঙ্গে আরেকটি বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে: অ্যাফোর্ডিবিলিটি বা এটি ব্যবহারের সামর্থ্য মানুষের আছে কিনা। যেমন, আপনি যদি নিম্নআয়ের মানুষদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন, এবং তাদের কাছে যদি দ্রুতগতির ইন্টারনেট না থাকে, তাহলে ইউটিউব চ্যানেল তৈরি করে লাভ নেই। কারণ, তাতে ভিডিও লোড হতে অনেক সময় নেয়। এক্ষেত্রে বরং টেক্সট মেসেজ অনেক ভালো সমাধান। এবং এটি অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়। পেওয়ালের বাধা আছে – এমন অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করবেন কিনা, বিবেচনা করুন। সাইন ইন করার সময় অর্থ পরিশোধ করতে হয়, এমন প্ল্যাটফর্ম কি আপনার অডিয়েন্স লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ?
নিচে দেওয়া হলো সবচে বেশি ব্যবহৃত কিছু সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মের তালিকা, যেগুলো সংবাদমাধ্যমগুলো ব্যবহার করে তাদের কন্টেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আরো থাকছে এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখার লিংক এবং কোথায় তাদের পাওয়া যাবে। এগুলোর প্রায় সবগুলোই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। শুধু $ চিহ্ন দেওয়াগুলো ছাড়া।
কন্টেন্ট উপস্থাপনের নানা উপায়
আপনার সংগঠনের জন্য কোন প্ল্যাটফর্ম ভালো কাজ করবে – এমন প্রশ্নের কোনো সোজাসাপ্টা বা ভুল উত্তর নেই। এটি পুরোপুরি নির্ভর করবে আপনি পৃথিবীর কোন জায়গায় আছেন, আপনার প্রতিষ্ঠানের জনবল, পাঠক-দর্শক সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন, ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। মনে রাখবেন: আপনাকে সব জায়গায় ছড়িয়ে যেতে হবে না। কৌশলগতভাবে চিন্তা করুন, কোন জায়গায় সময় দেওয়া আপনার জন্য কাজের হবে আর কোনখানে হবে না।
এবার ধরা যাক, অডিয়েন্স সম্পর্কে আপনার ভালো ধারণা আছে এবং কাজের জায়গায় কোন প্ল্যাটফর্ম সবচে উপযুক্ত হবে – তাও আপনি জানেন। এখন আমরা ভেঙে ভেঙে দেখাবো, কিভাবে আপনি সবচে ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারেন।
প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের কিছু ভিন্ন ভিন্ন বিষয় থাকে। এবং প্রতিটি প্ল্যাটফর্ম নির্দিষ্ট কিছু ফরম্যাটের কন্টেন্ট পোস্ট করার উপযোগী হয়। যেমন, ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট পোস্ট করার জন্য সেরা জায়গা ইনস্টাগ্রাম। এটি একই সঙ্গে অডিও ক্লিপের জন্যও ভালো। হেডলাইন বা লিংকই পোস্ট করার পাশাপাশি, টুইটারকে আপনি ব্যবহার করতে পারেন স্টোরিটেলিংয়ের কাজেও। ১০টি টুইট দিয়ে পোস্ট করতে পারেন একটি স্টোরি থ্রেড। প্রতিদিন কিছু আপডেট পোস্ট করার জন্য আদর্শ হতে পারে টেলিগ্রাম। এটি ভিডিও এমবেড করার জন্যও ভালো।
What’s going on in Haiti? [A simplified thread] #FreeHaiti 🇭🇹🕊 pic.twitter.com/U2Rewgg5Kd
— AlexandreTheHaitian IG (@AlexTheHaitian) March 13, 2021
কন্টেন্টকে সৃজনশীলভাবে নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেবেন কিভাবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে আমি সবাইকে উৎসাহিত করি। তার মানে এই নয় যে, আপনার বড় কোনো অনুসন্ধানের জন্য হুট করে টিকটক পোস্টের উপযোগী কন্টেন্ট বানিয়ে ফেলতে হবে। কিন্তু প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রেই, আপনাকে চিন্তা করতে হবে কিভাবে সেটি অনলাইনে বিভিন্ন উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। মানুষকে দীর্ঘ প্রবন্ধটি পড়ার সুযোগ করে দিন। কিন্তু একই সঙ্গে সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো তুলে এনে সেটি আরো নতুন পাঠকদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার কথাও চিন্তা করুন।
কিভাবে একটি মৌলিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যে ভিন্ন ভিন্ন জিনিসগুলোর কথা বিবেচনা করবেন:
- টেক্সট: লেখাটির দৈর্ঘ্য কেমন হবে, কিভাবে সেটি আরো স্পষ্ট করে তুলবেন, এবং কিভাবে আপনার লেখার মূলভাব তুলে আনবেন – এসব সিদ্ধান্ত আপনাকে নিতে হবে।
- অডিও: অডিও বলতে শুধু পডকাস্ট বোঝায় না। আপনি কোনো ওয়েবিনার থেকেও কিছু অডিও ক্লিপ তুলে আনতে পারেন এবং সেটি টুইটারে পোস্ট করতে পারেন। কিছু অডিও ক্লিপ এক জায়গায় করে, সেটির সঙ্গে টেক্সট যোগ করে ফেসবুকে জন্য বানিয়ে ফেলতে পারেন একটি ভিডিও।
- ছবি: ছবির জন্য বিভিন্ন ফটোগ্রাফ, গ্রাফিক ডিজাইন, গ্রাফ, ইলাস্ট্রেশন ইত্যাদি ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারেন। আপনার পাঠকগোষ্ঠীর মধ্যে হয়তো এমন অনেক মানুষ আছেন যারা ভিজ্যুয়াল পোস্টে বেশি সাড়া দেন।
- ভিডিও: ছোট তথ্যচিত্র বা সংক্ষিপ্ত আকারের ভিডিও এক্সপ্লেইনার বানাতে পারেন।
কিভাবে আপনার কাজগুলো ভালোভাবে শেয়ার করবেন – সেই সংক্রান্ত অনুপ্রেরণার জন্য শুধু অন্যান্য মিডিয়া গ্রুপের দিকেই চেয়ে থাকবেন না। সৃজনশীল ও কার্যকরীভাবে বিভিন্ন তথ্য, প্রতিবেদন ও সংবাদ শেয়ারের উপায়-পন্থা খুঁজতে পারেন অন্যান্য ক্ষেত্রের নানা প্রতিষ্ঠান থেকেও। দাতব্য সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারী কোম্পানি; সবাই হতে পারে আপনার অনুপ্রেরণা।
কাজের প্রভাব পরিমাপের জন্য কিভাবে মেট্রিকস ব্যবহার করবেন
অডিয়েন্স সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার খুবই কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো অ্যানালিটিকস বিশ্লেষণ করা। তবে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ না করলে এটি খুব বেশি কাজে দেবে না। ফলে, কত মানুষ আপনার কাজ দেখল, পছন্দ করল বা কমেন্ট করল ইত্যাদি দেখার জন্য বিভিন্ন টুল আছে। কিন্তু সেই টুল ব্যবহারের আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য সাফল্যের চিত্রটি কেমন হবে। যেমন, আপনার ছোট সংগঠনের জন্য আপনি কী ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবেন? সেটি কি প্রতি মাসে ‘এক্স’ সংখ্যক ভিজিটর নিশ্চিত করা নাকি ৩০০০ নতুন সাবস্ক্রাইবার তৈরি করা? আপনার সংগঠন যদি বড় হয়, তাহলে আপনি কী ধরনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করবেন? আপনি কি শুধু আগের পাঠকদের ধরে রাখতে চান, নাকি আরো বড় সংখ্যার ফলোয়ার তৈরি করতে চান? দুইটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের মানদণ্ড একইরকম হবে না। ফলে আপনার সংগঠনের জন্য সাফল্যের চেহারাটি কেমন হবে, তা বিবেচনা করুন।
ওয়েবসাইটের ট্রাফিক সম্পর্কে কিছু কথা: ওয়েবসাইট অ্যানালিটিকসের প্রসঙ্গে বলা যায়, বেশ কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি আপনার অডিয়েন্স সম্পর্কে ভালো ধারণা পেতে পারেন। যেমন, আপনি দেখতে পারবেন পাঠকরা কতক্ষণ একটি পেজে অবস্থান করেন। এখান থেকে বুঝতে পারবেন আপনার কন্টেন্টের সঙ্গে পাঠক গভীরভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে নাকি হচ্ছে না। ওয়েবসাইটে অনেক বেশি ট্রাফিক নিশ্চিতভাবেই ভালো ব্যাপার। কিন্তু এর মানেই যে আপনার কন্টেন্টগুলো অনেক প্রভাব ফেলছে বা পাঠক সংম্পৃক্ততা তৈরি হচ্ছে, তা নাও হতে পারে। পাঠকরা যেন বারবার আপনার সাইটে ফিরে আসে, তেমন সম্পর্ক তৈরির জন্য আরো অনেক কিছু করার আছে। আপনার সংগঠনের নাম তাদের মাথায় এমনভাবে গেঁথে যেতে হবে যেন যে কোনো তথ্যের জন্য তারা আপনার সাইটেই আসে। (অ্যানালিটিকসের নানা বিষয় আরো গভীরভাবে জানার জন্য দেখুন: বিয়ন্ড মেট্রিকস: এ বিগিনার্স গাইড টু মেট্রিকস দ্যাট ম্যাটার।)
এ ধরনের মেট্রিকস টুল যদি নিজেদের নিউজরুমের ভেতরেই বানিয়ে নেওয়ার মতো অর্থ ও সামর্থ্য থাকে, তাহলে খুবই ভালো! কিন্তু এজন্য অনেক টাকাও খরচ করতে হবে। এবং তা যদি আপনার না থাকে, তাহলে অন্য আরো অনেক টুল ব্যবহার করতে পারেন। অনেকগুলোই পাওয়া যায় বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হয় অলাভজনক সংগঠনের জন্য। কিছু টুল বিনাপয়সায় সীমিত সেবা দেয়। তার চেয়ে বেশি সেবা নিতে গেলে অর্থ খরচ করতে হয়। এখানে দেওয়া হলো তেমন কিছু টুলের তালিকা:
Tool | What It Does / Note | Cost? |
Buffer | Buffer is a tool that can be used to manage accounts in social networks, by providing the means for a user to schedule posts to Twitter, Facebook, Instagram, Instagram Stories, Pinterest, and LinkedIn, as well as analyze their results and engage with their community. | Yes, but they offer discount to nonprofits |
Later | A tool that allows you to plan, schedule, publish, and measure the results of your Instagram and social media posts. | Yes |
Sprout Social | Sprout Social is a social media management and optimization platform. It gives you a single hub for social media publishing, analytics, and engagement across all of your social profiles. | Yes |
Mailchimp | Mailchimp offers various tools you can use to analyze your performance, learn more about your audience, and improve your marketing, and includes A/B testing which allows you to compare two versions of a webpage or app against each other to determine which one performs better. | Yes, but some free services |
Twitter analytics | Twitter offers its own analytics services, but only for a one month duration. | No |
Facebook analytics | Facebook offers its own free analytics tools when you run a page. | No |
Google Analytics | Google Analytics offers a wide range of insights (try Google Analytics for Beginners.) | No |
Chartbeat | Chartbeat is another real-time analytics tool, offering insights to improve audience engagement, inform editorial decisions, and increase readership. | Yes |
BuzzSumo | BuzzSumo is an online tool that allows any user to find out what content is popular by topic or on any website. | Yes, but some free services |
টুইটের রিচ কেমন, তা জানা থেকে শুরু করে বিশ্বের কোন জায়গা থেকে পাঠক আসছে তা জানা পর্যন্ত অনেক কিছু করা যায় এসব টুল দিয়ে। শুধু নিজের সাইট সম্পর্কিত তথ্য নয়, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে কোন কন্টেন্ট বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে, তাও দেখা যাবে।
এই টুলগুলো আপনাকে অনেক পরিসংখ্যান জানাবে। কিন্তু সেগুলোর অর্থ এবং সেগুলো কিভাবে আপনার সংগঠনের বৃহত্তর লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, তা বোঝার জন্য আপনাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। যেমন, আপনি যদি দেখেন যে এক্স দেশ থেকে এক্স বিষয়ে বেশি পাঠক আসছে। তাহলে ধরে নিতে হবে যে, এই বিষয়টি নিয়ে সেখানে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই তথ্যটি আপনার সংগঠনের কন্টেন্ট তৈরির কৌশল ঠিক করতে কাজে লাগবে। অথবা, পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে আপনি খুবই নির্দিষ্ট ও ছোট আকারের পাঠকগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে চাইছেন, তাহলে এমন টুল ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিতে পারেন যা দিয়ে আপনি ১০০০ ইমেইল সাবস্ক্রাইবার জোটাতে পারবেন। সেটিই হবে অনেক বড় সাফল্য।
সংগঠনে আপনার ভূমিকা কী, তার ওপর নির্ভর করে কিছু ফেসবুক গ্রুপে যোগ দেওয়াও কাজের হতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর সাম্প্রতিক সব খবরাখবর নিয়ে আলোচনা হয় এসব গ্রুপে। যেমন এই সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ।
শেষ যে কথাগুলো মনে রাখবেন
এখানে থাকছে আমার শেষ তিনটি পরামর্শ:
১. প্রতিবেদন প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়া এডিটরের কাছে গিয়ে বলবেন না যে, “এটি খুব ভালো জিনিস। আপনার এদিকে আরো ভালোমতো নজর দেওয়া দরকার।” কাজটি যদি সত্যিই ভালো হয় এবং সেটি যত বেশি সম্ভব জায়গায় ছড়িয়ে দিতে চান, তাহলে প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই সেটি নিয়ে আলাপ করা উচিৎ সোশ্যাল বা অডিয়েন্স দলের সঙ্গে। তারা হুট করে একটি জিনিস দেখে জাদুর মাধ্যমে সেখানে অনেক পাঠক-দর্শক এনে দিতে পারবেন না। এজন্য তাদেরকে সময় নিয়ে চিন্তা করতে হবে যে, কিভাবে এটি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভালোভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
২. ঠিক একইভাবে, কখনো সোশ্যাল বা অডিয়েন্স দলের কাছে গিয়ে জানতে চাইবেন না যে, তারা কোনো কিছু ভাইরাল করে দিতে পারেন কিনা। “ভাইরাল হওয়া,” কখনো অনুমান করা যায় না। এটি এমন কিছু না যা আপনি জোর করে ঘটিয়ে দিতে পারবেন। হ্যাঁ, কিছু বিষয় আছে যে কারণে কিছু কন্টেন্ট বেশি শেয়ার হয়, কিন্তু সব কিছু মেপে কোনো জিনিসের ভাইরাল করে দেওয়া যাবে – এমনটি আশা করবেন না।
৩. শিরোনাম, থাম্বনেইল ইমেজ এবং প্রতিবেদনের আকর্ষণীয় সারসংক্ষেপ – এগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিজেই চিন্তা করুন যে, টুইটারে শত শত জিনিস স্ক্রল করতে করতে কোনগুলি আপনার নজর কাড়ে? কোনগুলি ভিজ্যুয়ালি এনগেজিং হয়? কিভাবে শিরোনাম দিলে তা শেয়ার দেওয়ার সময় কেটে যাবে না? এমন আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে কথা বলা যায়। কিন্তু সংক্ষেপে বলব: চিন্তা করুন, কিভাবে কন্টেন্টটি উপস্থাপন করলে মানুষ তাদের স্ক্রলিং থামিয়ে সেটির দিকে নজর দেবে।
আরো পড়ুন
মোর দ্যান আইবলস: হাও জার্নালিজম ক্যান বেনিফিট ফ্রম অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট
দ্য কেস ফর ইনভেস্টিং ইন অডিয়েন্স এনগেজমেন্ট: জিআইজএন’স লেটেস্ট রিসোর্স
রিপোর্টিং টিপস অ্যান্ড টুলস: ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড প্রোমোশন
রোজলিন ওয়ারেন জিআইজেএন-এর ডিজিটাল আউটরিচ ডিরেক্টর। লন্ডন-নিবাসী এই সাংবাদিকের ফিচার ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গার্ডিয়ান, সিএনএন, বিবিসি-সহ অন্যান্য অনেক জায়গায়। তিনি এর আগে বাজফিড নিউজেও কাজ করেছেন সিনিয়র নিউজ রিপোর্টার হিসেবে।