গত ১২টি মাস, গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। এক দিকে লকডাউন ও কোয়ারেন্টিনের কবলে পড়ে সাংবাদিকরা প্রথাগত উৎস থেকে তথ্য নিতে পারেননি; আর অন্যদিকে মহামারির কারণে কমে গেছে বিজ্ঞাপনের আয়ও। ভুয়া তথ্য মোকাবিলা ও লকডাউন বাস্তবায়নের কথা বলে তথ্য নিয়ন্ত্রণ করেছে বিশ্বের অনেক রাষ্ট্র। এতে করে, স্বাধীন গণমাধ্যমগুলো তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েছে।
প্রতিকূল এই পরিস্থিতিতে, রুশ-ভাষাভাষী সাংবাদিকরা উন্মুক্ত তথ্য ও ডেটা সোর্স ব্যবহার করে বুঝতে চেয়েছেন মাঠের পরিস্থিতি। রাশিয়ায় দুটি নতুন অনুসন্ধানী নিউজরুম, আইস্টোরিজ (ইম্পর্টেন্ট স্টোরিজ) ও প্রয়েক্ট (প্রজেক্ট) হয়ে উঠেছে ডেটা-ভিত্তিক অনুসন্ধানের অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। তারা বেশ কিছু ইন-ডেপথ রিপোর্ট করেছে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি, সেনাবাহিনী এবং জেলখানায় অনৈতিক আচরণ নিয়ে। আইস্টোরিজের যাত্রা শুরু করে ২০২০ সালে, এবং প্রজেক্ট, ২০১৮-তে।
রুশ ও ইউক্রেনিয় ভাষায় সেরা অনুসন্ধানের বাৎসরিক পর্যালোচনা করতে গিয়ে আমরা সেসব প্রতিবেদন বাছাই করেছি, যেগুলো এই অঞ্চলের কাঠামোগত সামাজিক সমস্যার দিকে আলো ফেলেছে। এই প্রতিবেদনগুলো অনুপ্রেরণা হতে পারে গোটা বিশ্বের সাংবাদিকদের জন্য। হতে পারে, উদ্ভাবনী সব অনুসন্ধানী কৌশল ও টুল ব্যবহারের উৎকৃষ্ট উদাহরণও।
ফ্রম রাশিয়া উইথ লাভ: টেলিগ্রামের অজ্ঞাত সাম্রাজ্য — লিগা.নেট (ইউক্রেন)
টেলিগ্রাম এখন বিশ্বের অন্যতম বড় অনলাইন মেসেঞ্জিং অ্যাপ। ব্যবহারকারী প্রায় ৪০ কোটি। এটি তৈরি হয়েছিল স্বাধীন, সেন্সরশিপ-মুক্ত একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমগুলো এখানে নিজেদের খবরাখবর যেমন শেয়ার করতে পারে, তেমনি কর্তৃত্বপরায়ন দেশের ভিন্নমতাবলম্বী অ্যাক্টিভিস্টরাও এটি ব্যবহার করেন যোগাযোগের টুল হিসেবে। কিন্তু অনলাইন মিডিয়া গ্রুপ, লিগা’র অনুসন্ধানে, এই প্লাটফর্মের একটি অন্ধকার দিকও বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধান অনুযায়ী, টেলিগ্রাম এখন হয়ে উঠেছে রাশিয়া সরকারের প্রোপাগান্ডা ও ভুয়া তথ্য প্রচারের আদর্শ টুল। সাংবাদিকরা ইউক্রেনিয় ও ছদ্ম-ইউক্রেনিয় কিছু টেলিগ্রাম চ্যানেলের একাধিক নেটওয়ার্কও বের করেছেন, যেখান থেকে ক্রেমলিন মতাদর্শের নানান কন্টেন্ট বারবার পোস্ট ও শেয়ার করা হয়।
কিভাবে নাম-পরিচয়হীন একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল কাজ করে এবং কত সহজে এখান থেকে ভুয়া তথ্য ছড়ানো যায়, তা দেখানোর জন্য একটি মজার পরীক্ষা করেন সাংবাদিকরা। একটি ভুয়া চ্যানেল খুলে, তারা সেখানে প্রচার শুরু করেন – পৃথিবী আসলে সমতল এবং এর বিপক্ষের সব বৈজ্ঞানিক প্রমাণই মনগড়া। তাদের লেখা ষড়যন্ত্রতাত্ত্বিক পোস্টে দাবি করা হয়, সমতল পৃথিবীর বিষয়টি দ্রুতই ইউক্রেনের স্কুল পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভূক্ত হবে এবং সম্প্রতি একটি গোপন সম্মেলনে নাসা এমন কিছু ছবি শেয়ার করেছে যা এই তত্ত্বকে সমর্থন করে। চ্যানেলটি তৈরি করতে সময় লেগেছে মাত্র কয়েক মিনিট। এর প্রচারের জন্য মাত্র ২০০ ডলার খরচ করা হয়। আর তাতেই, এক ঘন্টার মধ্যে চ্যানেলটি ২৫ হাজার বার দেখা হয়, এবং মাত্র দুই দিনের মধ্যে তার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
জ্বালানি তেলের অন্য দিক — উরালস্ক উইক (কাজাখস্তান)
ছোট এই সংবাদপত্রের সাংবাদিকরা এই তথ্যচিত্রে আলো ফেলেছেন জাতীয় গুরুত্বের একটি পরিবেশগত ও সামাজিক ইস্যুতে। তারা এই কাজের জন্য পশ্চিম কাজাখস্তানের আকটোবি, মাঙ্গিসটাও, ও এটুরাও অঞ্চলে গিয়েছেন। প্রতিটি এলাকাই তেলসমৃদ্ধ এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়। এখানকার বেশিরভাগ তেলের খনি নিয়ন্ত্রণ করছে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পেট্রোলিয়াম কোম্পানিগুলো।
কিন্তু এই তথ্যচিত্রে দেখা যায়, এসব অঞ্চলে পেট্রোডলার আয় এবং নতুন রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়নের যে প্রতিশ্রতি দেওয়া হয়েছিল, তার কিছুই হয়নি। স্থানীয় অধিবাসীরা এখনো মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই দিন কাটাচ্ছেন। তেলের খনি থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে তাদের বসবাস। এবং প্রায়ই তারা গবাদিপশু মরে যাওয়ার অভিযোগ জানাচ্ছেন। অনুর্বর ভূমি, দূষিত পানি ও নানান অসুখে পড়ে প্রতিনিয়ত তারা বিপর্যস্ত হচ্ছেন।
রাশিয়ার ময়লার রাজা — আইস্টোরিজ (রাশিয়া)
রাশিয়ায় আবর্জনার বাজারমূল্যই কয়েক লাখ ডলার। আর আইস্টোরিজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, কিভাবে এই বাজারের নিয়ন্ত্রণ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্টসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও কেন্দ্রীয় কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়লা ব্যবস্থাপনা নীতিমালা সংস্কারের কারণে দেশটিতে আবর্জনা সংগ্রহ, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ধ্বংসের জন্য, এমন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়, যাদের আগে এমন কাজের অভিজ্ঞতা নেই। সেই চুক্তিও হয় অনেক চড়া দরে। উঠে আসে, রিসাইকেল করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তারা মস্কোর ময়লা ফেলছে পাশের একটি এলাকার ভাগাড়ে; আর ময়লার ভারে সেই জায়গার উচ্চতা হয়ে গেছে ১০ তলা ভবনের সমান এবং সেখান থেকে আশেপাশের বাতাস দূষিত হচ্ছে।
ময়লাগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা অনুসরণ করার জন্য সাংবাদিকরা বেছে নিয়েছিলেন মজার একটি কৌশল। তারা একটি পুতুলের মধ্যে মোবাইল ফোন ঢুকিয়ে সেলাই করে দিয়েছিলেন, এবং সেটি ফেলে দিয়েছিলেন ময়লার মধ্যে। এই তথ্যচিত্র ও প্রাসঙ্গিক আরো কয়েকটি প্রতিবেদনের মধ্য দিয়ে অপ্রত্যাশিত নায়কদের সম্পর্কেও আমরা জানতে পেরেছি; এবং মুগ্ধ হয়েছি তাদের সাহসিকতায়। যেমন, ৯০ বছর বয়সী এক অ্যাক্টিভিস্ট দাদু। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া এই সাবেক সৈনিক এখন রাস্তায় পাহারা বসিয়েছেন, এবং তিনি মস্কো থেকে আসা ময়লার ট্রাক তার এলাকায় ঢুকতে বাধা দেন।
পুতিনের বন্ধুর “আমেরিকান ড্রিম” — স্কিমস (ইউক্রেন)
এই টেলিভিশন রিপোর্টে উঠে এসেছে – মস্কোপন্থী এক ইউক্রেনিয় রাজনীতিবিদ ও তার স্ত্রী, তাদের রাশিয়ার কারখানা থেকে কিভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ করেছেন। ২০১৪ সালে এই রাজনীতিবিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। অনুসন্ধানটি করেছে রেডিও ফ্রি ইউরোপের ইউক্রেনিয় সার্ভিস, স্কিমস। এই কাজে তারা আন্তর্জাতিক শুল্ক ডেটাবেজ ও ইমপোর্ট জিনিয়াসের ডেটা ব্যবহার করেছে। মেরিনট্রাফিক সার্ভিসের সাহায্যে জাহাজের যাত্রাপথ শনাক্ত করেছে। এবং দেখিয়েছে, রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়াতে তেল নিয়ে আসার পর সেটি কৃষ্ণসাগর দিয়ে কিভাবে পৌঁছে যায় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে। আর সেখানে পণ্য বুঝে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় এক তেল পরিশোধনাগার। সাংবাদিকরা এই ট্র্যাক করা পণ্যের মূল্য হিসেব করেছিলেন, ১৫০ মিলিয়ন ডলার। দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি তৈরি করে দিয়েছিল একটি সুইস প্রতিষ্ঠান, যার সঙ্গে রাশিয়ার এক সংসদ সদস্য যুক্ত আছেন বলে অভিযোগ আছে।
কিরগিজস্তানের শুল্ক বিভাগ — ক্লুপ, বেলিংক্যাট, ওসিসিআরপি, রেডিও আজাতিক, আরএফই/আরএল (কিরগিজস্তান)
সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক দল, ২০১৯ সাল থেকে অনুসন্ধান করছিল এক শুল্ক সাম্রাজ্যের কর্মকাণ্ড উন্মোচনের জন্য, যার মাধ্যমে কিরগিজস্তান থেকে ৭০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এই তথ্যের উৎস ছিলেন ব্যবসায়ী আইরকেন সাইমাইতি। তিনি এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু সেই স্বীকারোক্তির কিছু দিন পরেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
অনুসন্ধান অনুযায়ী, খুব গোপনীয়তার সাথে এই চক্র পরিচালনা করত চীনের একটি প্রভাবশালী পরিবার। আর কিরগিজস্তানের এক সিনিয়র শুল্ক কর্মকর্তা এগুলো নির্বিঘ্নে চলার মতো পরিবেশ তৈরি করে দিতেন। এই অনুসন্ধানী সিরিজের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে উন্মোচিত হয় – চীন থেকে কিরগিজস্তানে আসা পণ্য পরিবহনের জন্য, দুটি গোষ্ঠী কিভাবে তিনটি শুল্ক টার্মিনাল দখলে নিয়েছিল। এবং এই চক্রের সাথে সম্পর্কিত নয়, এমন কেউ কার্গো নিয়ে টার্মিনালে এলে, তাদেরকে “বাড়তি টাকা” দিতে বাধ্য করা হত। কখনো কখনো অংকটি চার হাজার ডলারে দাাঁড়াতো। অভিযোগ আছে যে, এভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কিরগিজস্তানের রাজনীতিতেও প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছে অপরাধী চক্র। ভোটারদের ঘুষ দেওয়ার অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে। এই অনুসন্ধানী প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ ম্যাপও আছে, যেখানে দেখানো হয়েছে একটি গোষ্ঠীর যাবতীয় সম্পত্তির চিত্র।
রাশিয়ার কারাগারে নির্যাতন — প্রোয়েক্ট.মিডিয়া (রাশিয়া)
এই অনুসন্ধানের জন্য কারাবন্দী ও মানবাধিকার কর্মীদের জবানবন্দি সংগ্রহ করেছেন রাশিয়ার অনুসন্ধানী সাইট প্রয়েক্টের (প্রজেক্ট) সাংবাদিকরা। তারা দেখিয়েছেন, দেশটির কারাগার ব্যবস্থায় নির্যাতনের সমস্যাটি এখনো প্রকট রয়ে গেছে। বন্দীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করার অভিযোগে অভিযুক্ত কারা কর্মকর্তাদের স্বীকারোক্তি এবং আদালতের নথিপত্র ঘেঁটে তারা বের করেছেন, কেন্দ্রীয় কারা ব্যবস্থাপনার আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর এক-তৃতীয়াংশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই বন্দী নির্যাতনের অভিযোগ আছে। এবং মানবাধিকার কর্মীরা “কারাগারের ভেতরে বন্দীদের ওপর অন্যায় শারিরীক নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েই যাচ্ছেন।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, বন্দী অবস্থায় গুরুতর মারধর, নির্যাতন, শ্বাসরোধসহ, বিভিন্ন অমানবিক আচরণের কারণে কারাগারে আত্মহত্যার ঘটনা এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার, নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদাহরণও খুব কম। ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে, এমন নির্যাতনের ৬৫০০টি অভিযোগ গ্রহণ করেছিল রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত তদন্ত কমিটি, কিন্তু এই সময়ের মধ্যে মাত্র ১২৩ জন কেন্দ্রীয় কারা কর্মকর্তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।
মিনস্কের পিটুনি — মিডিয়াজোনা (রাশিয়া)
পাঙ্ক রক ব্যান্ড, পাসি রায়টের দুই সদস্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাশিয়ার বিকল্প সংবাদমাধ্যম, মিডিয়াজোনা। তাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী, গত বছর ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের সময় বেলারুশ পুলিশের সহিংস আচরণের শিকার হয়েছেন “উল্লেখযোগ্য পরিমান” মানুষ।
অজ্ঞাতনামা এক সোর্স, সরকারী তদন্ত কমিটির হাতে থাকা কিছু তথ্য মিডিয়াজোনার কাছে ফাঁস করে দেন। তাতে বিক্ষোভে আহত হওয়া মানুষের সংখ্যা ছিল। যাচাই করে তারা দেখতে পান, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই আনুষ্ঠানিক ডেটা সংগ্রহ করা হয়, যা কখনোই উন্মুক্ত করা হয়নি। এই নথি থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের সেই বিক্ষোভে অন্তত ১,৩৭৩ জন আহত হয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীদের রাবার বুলেট, ফ্ল্যাশ গ্রেনেডের আঘাত ও মারধরের কারণে। অনেকেরই মাথা, বুক ও পেটে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন।
অনুসন্ধানের তথ্যমতে, বিক্ষোভের পর বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে ছয়শ’র বেশি মানুষকে আটকে রেখে মারধর করেছে পুলিশ। হতাহতের এই ডেটাকে সাজিয়ে, ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন সাংবাদিকরা। এতে দেখা গেছে, পুলিশ কতটা চরমভাবে দমনপীড়ন চালিয়েছে বিক্ষোভকারীদের ওপর।
ক্রেমলিনোভিচ — রাইজ মলদোভা ও ডোসিয়ের সেন্টার (মলদোভা/রাশিয়া)
মালদোভার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইগর ডোডোন এবং দেশটির অন্যান্য রাজনীতিবিদদের ওপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রভাব তলিয়ে দেখা হয়েছে এই অনুসন্ধানে। ক্রেমলিনের মলদোভান ডিপার্টমেন্ট থেকে ফাঁস হয়ে যাওয়া নথি ও ডোডোনের ফোন কল রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়েছে এই অনুসন্ধান। রাজনীতিবিদ, আমলা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যকার গোপন বার্তালাপে ডোডোনকে ডাকা হতো “ক্রেমলিনোভিচ” বা “ক্রেমলিনের সন্তান” বলে। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা ছেড়েছেন ২০২০ সালের ডিসেম্বরে।
অনুসন্ধানে দাবি করা হয়, মস্কোর সমর্থনের বিনিময়ে মলদোভার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে ভেতরের খবর জানানো হতো মস্কোকে। ডোডোনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের গোপনীয় তথ্যও চলে যেত মস্কোর কাছে। পুরস্কার হিসেবে, রাশিয়া থেকে পাঠানো হতো রাজনৈতিক পরামর্শক, ভুয়া তথ্য প্রচারের উপাদান, এবং জনমত প্রভাবিত করার জন্য তথাকথিত “ব্ল্যাক পিআর” সহযোগিতা। বিস্ফোরক এসব তথ্যসহ বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় মালদোভার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগ দিয়ে। শেষপর্যন্ত এই নির্বাচনে ডোডোনের পরাজয় হয় এবং ইউরোপ-পন্থী প্রার্থী মাইয়া সানডু জয়ী হন।
এফএসবি এবং আলেক্সেই নাভালনিকে বিষপ্রয়োগ — বেলিংক্যাট (নেদারল্যান্ডস), দ্য ইনসাইডার (রাশিয়া), সিএনএন (যুক্তরাষ্ট্র), ডের স্পিগেল (জার্মানি)
এই অনুসন্ধানের জন্য জোট বেঁধে কাজ করেছেন কয়েকটি দেশের সাংবাদিক। এটি অনেক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও শিরোনাম হয়েছিল। এই অনুসন্ধানে সাংবাদিকরা রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবির সেসব কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেন, যারা দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনির ওপর বিষপ্রয়োগের ঘটনায় জড়িত ছিল। এই অনুসন্ধানের জন্য রাশিয়ার ব্যক্তিগত ডেটার ব্ল্যাক মার্কেট থেকে সংগ্রহ করা ফোন বিল বিশ্লেষণ করেছেন সাংবাদিকরা। সেখান থেকে দেখা গেছে, বিষপ্রয়োগের আগে, এফএসবি কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ তিন বছর ধরে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন নাভালনির প্রতিটি পদক্ষেপ। এবং সেটি হয়তো তাঁকে বিষপ্রয়োগের প্রথম চেষ্টা নয়। প্রতিবেদনে এমনও বলা হয় – এর আগে কালিনিনগ্রাদে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়ার অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও সম্ভবত আরেকটি বিষপ্রয়োগের চেষ্টার কারণে।
হান্টিং দ্য হান্টারস নামের আরেক প্রতিবেদনে, বেলিংক্যাট ব্যাখ্যা করেছে, এই অনুসন্ধানে তারা কোন গবেষণা-পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।
ওলগা সিমানোভিচ জিআইজেএন–এর রুশ–ভাষা সম্পাদক। তিনি এসটিবি’র ভিকনা–নভিনিতে চিত্রনাট্যকার, প্রশিক্ষক, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং টিভি সংবাদ প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন এবং স্কুপ ম্যাগাজিনের একাধিক আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানে অংশ নিয়েছেন। তিনি ইউক্রেনিয়, রুশ, ইংরেজি এবং গ্রিক ভাষায় পারদর্শী।