সাবেক সুইডিশ প্রধানমন্ত্রী ওলফ পালমে কার হাতে খুন হয়েছেন – সেই রহস্য নিয়ে দেশটির পুলিশ তদন্ত করে যাচ্ছিল তিন দশক ধরে। অবশেষে গত জুনে, এক সংবাদ সম্মেলনে এই তদন্তের ইতি টানেন দেশটির সরকারী প্রসিকিউটর। জানান, তারা খুনিকে সনাক্ত করার মত “পর্যাপ্ত প্রমাণ” পেয়েছেন। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক কল আসতে থাকে সাংবাদিক থমাস পিটারসনের ফোনে।
এর দুই বছর আগে সোশ্যাল ডেমোক্রেট নেতা পালমের হত্যাকান্ড নিয়ে একটি বই ও ম্যাগাজিন আর্টিকেল প্রকাশ করেছিলেন পিটারসন। এই অনুসন্ধানে তিনি খুনি হিসেবে সনাক্ত করেন স্টিগ এঙ্গস্ট্রোম নামের এক গ্রাফিক ডিজাইনারকে; যিনি ঘটনাস্থল থেকে হাঁটা দুরত্বের একটি জায়গায় কাজ করতেন। এই জুনে এসে, দুই ঘন্টার সংবাদ সম্মেলনে, আইনজীবীরা ১৯৮৬ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনার যে বর্ণনা তুলে ধরেন, তাকে পিটারসনের বইয়ের একটি সারসংক্ষেপ বলে অভিহিত করে সুইডিশ মিডিয়া।
সাংবাদিক পিটারসন তার অনুসন্ধানে যে উপসংহারে পৌঁছেছেন এবং যে কারণ তুলে ধরেছেন, তার সাথে সরকারী তদন্তের ফলাফল অনেকটাই মিলে যায়। তাই মতামত জানতে চেয়ে সুইডিশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা পিটারসনকে ফোন করতে থাকেন।
জিআইজেএন-এর পক্ষ থেকে যখন তাঁর যোগাযোগ করা হয়, তখন তিনি সুইডেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে (গোটেনবার্গ) নিজ বাড়িতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁর বই, “দ্য আনলাইকলি মার্ডারার”-এর নতুন সংস্করণ নিয়ে। এটি চলতি মাসেই প্রকাশ হওয়ার কথা। বইটির চলচ্চিত্র-স্বত্ত্বও বিক্রি করেছেন পিটারসন।
তিনি বলেছেন, “এটি দারুন এক গল্প, যেখানে কর্তৃপক্ষ অবগত থাকার পরও সমাজব্যবস্থায় থাকা নানা ফাঁক-ফোঁকরের কারণে, একজন ব্যক্তি অপরাধ করে পার পেয়ে যান।”
পালমে হত্যাকাণ্ড নিয়ে এতো বিস্তৃত তদন্ত হয়েছে যে, এটিকে ১৯৬৩ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ড এবং ১৯৮৮ সালের লকারবি বিমান হামলার সাথে তুলনা করা হয়। তারবপরও, কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকের অনুসন্ধান, একটি দেশের পুলিশবাহিনীর তিন দশকের তদন্তকে হারিয়ে দেয়?
প্রধানমন্ত্রীকে গুলি
শুরুতে সংক্ষেপে বলে নেওয়া যাক, হত্যাকান্ডের রাতের কথা। ১৯৮৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ওলফ পালমে সস্ত্রীক হেঁটে হেঁটে ফিরছিলেন একটি সিনেমা হল থেকে। এর কিছুক্ষণ আগেই তারা ছেলে ও তার বান্ধবীকে বিদায় জানিয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষীদেরও আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পুরোপুরি অরক্ষিত অবস্থায় হাঁটছেন। এমন সময়ে খুব কাছ থেকে কেউ একজন তাকে গুলি করে পেছন থেকে। দ্বিতীয় গুলিটি প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, লিসবেথ পালমের পিঠে লাগে এবং সরু একটি সিঁড়ি দিয়ে আততায়ী পালিয়ে যায়।
পালমের খুনী কে – তা নিয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব তৈরি হয় গত কয়েক দশকে। যেমন, ১৯৮৯ সালে এই হত্যার দায় চাপানো হয় ক্রিস্টার পিটারসন নামে এক মদ্যপ ও মাদকসেবীর ওপর। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে তাকে মুক্তি দেয় স্থানীয় আপিল আদালত।
এই হত্যার পেছনে কেউ কেউ খুঁজে বের করেছেন “দক্ষিণ আফ্রিকা সংযোগ”। এই মতের পক্ষের লোকেরা বলেন: পালমে, দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন নিয়ে কথা বলায় প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)-র সংযোগ নিয়ে আলোচনা ওঠায় ১৯৯৭ সালে এই গ্রুপের ১২ জন সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আরেক অনুসন্ধানে সন্ধান মেলে এঙ্গস্ট্রোমের। তিনি “দ্য স্কান্ডিয়া ম্যান” নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এই নামের একটি বীমা কোম্পানিতে তিনি চাকরি করতেন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে। এঙ্গস্ট্রোম ছিলেন এই মামলার সাক্ষী। তিনি ২০০০ সালে মারা গেছেন।
তবে, পুলিশ এঙ্গস্ট্রোমকে নিয়ে খুব বেশি তদন্ত করেনি। থমাস পিটারসনই তার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য তুলে এনেছিলেন। এবং পরবর্তীতে অনুসন্ধানের ফলাফল প্রকাশ করে বলেছিলেন যে: কেন এঙ্গস্ট্রোমই সেই ব্যক্তি, যিনি ১৯৮৬ সালের সেই শীতের রাতে প্রাণঘাতি গুলিগুলো ছুঁড়েছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী পালমের হত্যাকাণ্ড নিয়ে পিটারসন তাঁর নিজস্ব অনুসন্ধান শুরু করেন ২০০৬ সালে। তবে এঙ্গস্ট্রোমের দিকে নজর ফেরাতে সময় লেগেছিল আরো এক বছর। “সেসময় কেউই এই দিকটা নিয়ে ভাবছিল না। পুলিশি তদন্ত বা অন্য কোনো সাংবাদিকের কাজেও এঙ্গস্ট্রোমের বিষয়টি উঠে আসেনি। ফলে কেউ আমাকে এই অনুসন্ধানে পেছনে ফেলে দেবে, এমন চাপ ছিল না,” বলেন পিটারসন।
তারপর থেকে পরবর্তী ১২ বছর তিনি অনুসন্ধান করেছেন শুধু এই দিকটি নিয়ে। পাশাপাশি তিনি অন্যান্য ফ্রিল্যান্স অ্যাসাইনমেন্টেরও কাজ চালিয়ে গেছেন। তিনি বলেছেন, “সব মিলিয়ে, আমি প্রতি বছর গড়ে এক মাস সময় ব্যয় করেছি এই অনুসন্ধানের পেছনে। এবং এই পুরো কাজ, পাঁচটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রথম পর্যায়ে আমি পুরো বিষয়টির একটি ধারণা নিয়েছি। এজন্য আনুষ্ঠানিক নথিপত্র, বই ও সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টগুলো পড়েছি। দ্বিতীয় ধাপে, অপরাধের জায়গাটিতে মনোযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আর এ সময়েই আমি নজর দেই এঙ্গস্ট্রোমের দিকে। তার কথা আমার বিশেষভাবে মনে হয়েছিল, কারণ সংবাদমাধ্যম ও পুলিশকে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার সাথে অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় গরমিল পাওয়া যায়। হত্যাকাণ্ডের রাতে যেভাবে একের পর এক ঘটনাগুলো ঘটেছিল, তার বিবরণগুলো মেলাতে গিয়েও তৈরি হয় সংশয়।
“অনুসন্ধানের তৃতীয় পর্যায়ে যাওয়ার সময়, আমার একটি পূর্বানুমান ছিল যে, এটি কারো একার কাজ নয়। ফলে, এর পেছনে কোন ধরনের সংগঠন জড়িত থাকতে পারে, তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিলাম। কিন্তু চতুর্থ পর্যায়ে এসে আমি স্টিগ এঙ্গস্ট্রোমকে আরো ভালোভাবে জানার উদ্যোগ নেই। ততদিনে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু তার সহকর্মী, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে আমি ধারণা পেতে থাকি যে: তিনি কেমন মানুষ ছিলেন এবং কী উদ্দেশ্যে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারেন। অনুসন্ধানের এই পর্যায়েই আমি আবিস্কার করি: এঙ্গস্ট্রোমের এক প্রতিবেশীর কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। এই ব্যাপারটিই পরবর্তীতে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এবং আমি ধীরে ধীরে মানতে শুরু করি যে, এঙ্গস্ট্রোমের এরকম একটি হত্যাকাণ্ড নিজে নিজে ঘটানোর মতো সক্ষমতা ছিল।
“পঞ্চম ধাপটি এখনো চলমান বলা যায়। কারণ আমি এখনো কাজ করছি এঙ্গস্ট্রোমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে। বোঝার চেষ্টা করছি যে, কেন তিনি এই হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি মিথ্যা ভাষ্য তৈরি করেছিলেন।”
১২ বছর ধরে এই অনুসন্ধান করার সময় অন্য সাংবাদিক ও “শখের গোয়েন্দাদের” কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন পিটারসন। অনেকেই তার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য শেয়ার করেছে। সুইডেনের দুটি রাষ্ট্রীয় কমিশন থেকেও তিনি অনেক নথিপত্র পেয়েছেন। এগুলোই ছিল তার এই গবেষণার কাঠামো।
“এই বিপুল পরিমাণ নথিপত্র অবশ্যই অনেক কাজে লেগেছে। কিন্তু কখনো কখনো এটি সমস্যা হিসেবেও হাজির হয়েছে। কারণ আমাকে প্রচুর জিনিস দেখতে হয়েছে এবং কোনো কিছু দিয়ে আমি যেন পক্ষপাতদুষ্ট বা বিতর্কিত হয়ে না পড়ি, সেজন্য নিজেকে ক্রমাগত নানা কিছু বোঝাতে হয়েছে,” বলেছেন পিটারসন।
বিভিন্ন ধরনের সোর্সকে কথা বলতে রাজি করানো-ই ছিল এই অনুসন্ধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এদের মধ্যে ছিলেন এঙ্গস্ট্রোমের সাবেক স্ত্রী, পুরোনো প্রতিবেশী ও সহকর্মী। কিভাবে পিটারসন তাদের কথা বলতে রাজি করিয়েছিলেন?
“আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করাটা খুবই জরুরি ছিল। কারণ তারা সবাই জানত যে, আমি এঙ্গস্ট্রোমকেই সম্ভাব্য খুনি হিসেবে বিবেচনা করছি। এঙ্গস্ট্রোমের সাবেক স্ত্রী খুবই খোলামেলা কথা বলেছেন। এটি আমার জন্য খুবই সুবিধাজনক হয়েছে। তিনি বা আরো কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, সাংবাদিক বা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে পড়েননি। কারণ কেউই তাদের কাছে আগে যায়নি। এ ব্যাপারটিও আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে।”
“একটি অসুবিধা ছিল, আমি থাকি গোটেনবার্গে। আর আমার সূত্রদের প্রায় সবাই থাকেন স্টকহোমে [প্রায় ৩০০ মাইল দূরে]। ফলে আমি তাদের সঙ্গে যখন ইচ্ছা সামনাসামনি দেখা করতে পারতাম না। ফোনে কথা বলে আস্থা তৈরি করাটা খুব কঠিন। কিন্তু আমি এই সম্পর্কগুলো তৈরি ও রক্ষা করতে পেরেছিলাম। একটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার যে, সবচে কঠিন প্রশ্নগুলো সবার শেষে করতে হবে। যেন শুরুতেই কোনো সোর্স ঘাবড়ে না যায় বা আস্থা হারিয়ে না ফেলে।”
নথির গভীরে
এই অনুসন্ধানের সময় দুটি বাঁক ঘোরানো মুহূর্তের কথা উল্লেখ করেছেন পিটারসন। একটি হলো: বিপুল পরিমাণ নথিপত্র অনলাইনে পেয়ে যাওয়া। “আমি যখন এখানে প্রথম কাজ শুরু করি তখন আমাকে গোটেনবার্গ থেকে স্টকহোমের পুলিশ সদরদপ্তরে যেতে হতো নথিপত্র দেখার জন্য। সেখানে সব সময় ঘাড়ের ওপর সিগারেট হাতে দাঁড়িয়ে থাকত এক পুলিশ কর্মকর্তা। এখন, অনলাইনে সেই তথ্যগুলো পাওয়া যায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে”, বলেছেন পিটারসন।
দ্বিতীয় আরেকটি বাঁক ঘোরানো মুহূর্ত ছিল ২০১২ সালে, যখন পিটারসন যোগাযোগ করেছিলেন ফিল্টারের প্রধান সম্পাদক মাথিয়াস গোরানসনের সঙ্গে। ২০১৮ সালে এই ম্যাগাজিনেই প্রকাশিত হয়েছিল পিটারসনের প্রতিবেদনটি।
গোরানসন বলেছেন, “থমাস যখন প্রথম আমার কাছে আসে, ততদিনে পালমে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সুনামির মতো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু থমাসের বাস্তব তথ্য-নির্ভর পদ্ধতিটি সবার চেয়ে আলাদা ছিল।”
“২০১২ সালে থমাস আমাকে যা দেখিয়েছিল, সেটিই আট বছর পর এসে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি আইনজীবী ক্রিস্টার পিটারসন। তারা অনেক ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের জটিলতায় না গিয়ে বরং ফিরে গেছেন অপরাধের ঘটনাস্থলে। সাধারণভাবে কিছু জিনিস পর্যবেক্ষণ করেছেন। সেই রাতে কারা ওখানে ছিল, সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
“তদন্তটি কেন এতদিনে সমাধান করা যায়নি, সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যায় থমাস আমাকে বলেছিল: ঘটনাটি অনেক জটিল ছিল, তাই পুলিশ এটি সমাধান করতে পারেনি; বিষয়টি এমন না। তাদের অনেক অক্ষমতার কারণেই এটি এতদিন ধরে সমাধান হয়নি। আমি এই ব্যাখ্যা মেনে নিয়েছিলাম। কারণ আশির দশকে ঘটা আরো অনেক বড় বড় ঘটনাতেও আমি কর্তৃপক্ষের দিক থেকে এরকম অক্ষমতার প্রমাণ পেয়েছি। আমি এতে খুব বেশি অবাক হইনি।”
এতো কিছুর পরও পিটারসনের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে ছয় বছর সময় নিয়েছিল ফিল্টার ম্যাগাজিন। গোরানসন বলেছেন, “প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে কোন জিনিসগুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং নিশ্চিত হতে হবে; এমন একটি তালিকা তৈরি করেছিলাম আমরা। যেমন, আমাদের এরকম প্রমাণ পেতে হবে যে, এঙ্গস্ট্রোম আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারতেন এবং অস্ত্র জোগাড় করার সুযোগ তার ছিল। ২০১৮ সালের আগপর্যন্ত আমরা এই তালিকার সবগুলো জিনিসে টিক দিতে পারিনি। ততদিন পর্যন্ত আমি থমাসকে সমর্থন দিয়ে গেছি কিছু রিসোর্স দিয়ে। কিন্তু প্রতিবেদনটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগপর্যন্ত তাকে আমি কোনো আর্থিক সুযোগসুবিধা দিতে পারিনি।”
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিপুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন পিটারসন ও ফিল্টার ম্যাগাজিন। এমনটিই যে ঘটবে, তা আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন গোরানসন। ফলে এগুলো সামলানোর জন্য একটি পরিকল্পনাও ছিল তাঁর।
গোরানসন বলেছেন, “যেমন, আমরা এই অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সব ধরনের জিনিসপত্র অনলাইনে রেখেছি। যেন দেখানো যায় যে, আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ। অবশ্যই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা কোনো জনপ্রিয় হওয়ার প্রতিযোগিতা নয়। এবং আপনার কাজ যদি কোথাও, কাউকে অস্থির না করে তোলে; তাহলে হয়তো আপনি কাজটা ঠিকভাবে করছেন না! তারপরও, এধরনের পরিস্থিতি একজন ফ্রিল্যান্সারের জন্য সামলানো কঠিন হতে পারে। থমাসের সম্পাদক হিসেবে, আমি তার পাশে দাঁড়িয়ে অন্য মিডিয়াগুলোকে মোকাবিলা করেছি।
কাজটি করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে পিটারসনকে। এজন্য তিনি প্রথম বড় একটি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন ২০১৯ সালে। তাঁকে দেওয়া হয়েছিল সুইডেনের সবচে সম্মানসূচক সাংবাদিকতার পুরস্কার, দ্য গুল্ডস্পাডেন বা “গোল্ডেন শোভেল”। এই পুরস্কারটি দেয় সুইডেনের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের অ্যাসোসিয়েশন, গ্রাভান্ডে জার্নালিস্টার (গ্রাভ)।
রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে পুলিশি তদন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে গত ১০ জুন। প্রধান প্রসিকিউটর, ক্রিস্টার পিটারসন সে সময় বলেছিলেন, “আমার মতে, স্টিগ এঙ্গস্ট্রোমকে প্রশ্নাতীতভাবে ঘাতক বলে ধরে নেওয়া যায়।” তিনি ২০১৭ সালে এই অনুসন্ধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
“অভিযুক্ত এই ব্যক্তিটি মারা গেছেন। ফলে আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারছি না। তবে এর মধ্য দিয়ে এই অনুসন্ধানের অবসান ঘোষণা করছি। আমার বিবেচনা হলো: ঘটনার ৩৪ বছর পর আরো অনুসন্ধানের ফলে আরো নতুন কিছু বেরিয়ে আসবে- এমনটি হওয়া কঠিন। আমরা যতদূর আসব বলে আশা করা হয়েছিল, সে পর্যন্ত আমরা গেছি বলেই আমার বিশ্বাস।
গ্রাভ-এর সভাপতি, ফুয়াদ ইউসেফি বলেছেন, “যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা ফিল্টারের প্রতিবেদনটি পড়েছেন এবং পরবর্তীতে পালমে হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারীদের সংবাদ সম্মেলন শুনেছেন; তারা নিশ্চিতভাবেই অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কোনো রিপোর্টার কোনো একটা বিষয় ঠিক মনে করছে, তার সম্পাদকও এটি বিশ্বাস করছে এবং সমর্থন দিচ্ছে; এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার।”
এছাড়াও, সুইডেনে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এধরনের বড় অনুসন্ধান করারও যে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, তাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ইউসেফি, “যারা এই চেষ্টা করেছেন, তারা জানেন যে, শুধু ভালো একটি পিচ তৈরি করার জন্যই কী পরিমাণ সময় ও শক্তি ব্যয় করতে হয়। ফলে আমাদের এমন সাহসী সম্পাদক দরকার, যারা ফ্রিল্যান্সারদের সঙ্গে মিলে একসাথে কোনো প্রতিবেদনের পরিকল্পনা তৈরি করবেন।”
পিটারসন নিজে অবশ্য মনে করেন, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করাতেই তার সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেছেন, “আমি যদি কোথাও চাকরি করতাম, তাহলে এই অনুসন্ধানের পেছনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার মতো সময় বের করতে পারতাম না। ফ্রিল্যান্সার হওয়ার কারণে আমি অনেক সময় বের করতে পারি। এবং শুরু থেকেই জানতাম যে, এই কাজটি আমাকে দীর্ঘদিন ধরে করতে হবে।
আরো পড়ুন:
নাটালি রথসচাইল্ড , স্টকহোম ভিত্তিক ফ্রিল্যান্স প্রিন্ট ও ব্রডকাস্ট সাংবাদিক। তাঁর প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে বিবিসি ও সুইডেনের ন্যাশনাল রেডিওতে। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ফরেন পলিসি, দ্য অ্যাটলান্টিক, দ্য গার্ডিয়ান, হারিটজ ও ভগ-এ। সেগুলো পড়তে পারবেন এখানে।