দ্য সিটি ও কলাম্বিয়া জার্নালিজম স্কুল যে সময় করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া সব নিউ ইয়র্কবাসীর তথ্য লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, ততদিনে মারা গেছেন প্রায় তিন হাজার মানুষ।
এপ্রিলের শুরুর দিকের কথা। সেই সময়টাতে এমন একটি প্রকল্প একা একাই করে ফেলা, যে কোনো নিউজরুমের জন্য খুব কঠিন বলে মনে হচ্ছিল।
মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকায়, দ্রুতই স্পষ্ট হয়ে যায়: করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া সব নিউ ইয়র্কবাসীর স্মৃতি ধরে রাখতে গেলে অন্যদের সহযোগিতা লাগবে সব পর্যায়ে।
কোভিডে মারা যাওয়া নিউইয়র্কারদের তথ্য লিপিবদ্ধ করার উচ্চাভিলাষী এই সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতা প্রকল্প (মিসিং দেম) যৌথভাবে পরিচালনা করছে কলাম্বিয়া জার্নালিজম স্কুলের টনি স্টেবাইল সেন্টার ফর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম, কলাম্বিয়া জার্নালিজম ইনভেস্টিগেশন, নিউমার্ক গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজম ও অলাভজনক নিউজরুম দ্য সিটি।
জুলাইয়ের ১ তারিখ নাগাদ, কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন ২২ হাজারের বেশি নিউ ইয়র্কার। তাদের মধ্যে খুবই অল্পেরই নাম-পরিচয় বা গল্প জনসম্মুখে এসেছে।
নিউ ইয়র্কে কোভিডে মারা যাওয়াদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশের মৃত্যু স্মরণ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের অবিচুয়ারি বা অন্যান্য মৃত্যু বিজ্ঞপ্তিতে। তাতে আবার প্রাধান্য ছিল পুরুষ ও তরুনদের, এবং সেগুলো এসেছিল শহরের উচ্চবিত্ত অংশ থেকে।
এর ফলে নিউ ইয়র্কের দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকা অশ্বেতাঙ্গ ও অভিবাসীদের মৃত্যুগুলো প্রায়ই সবার চোখের আড়ালে রয়ে গেছে। তারা করোনাভাইরাসে অনেক বেশি বিপর্যস্ত হলেও, পরিবার-সহকর্মীদের বাইরে কেউই তাদের কথা মনে রাখেনি। মিসিং দেম প্রকল্পটি এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে চাইছিল।
যা কিছু প্রকাশিত
নিউমার্ক ও কলাম্বিয়া জার্নালিজম স্কুলের ফেলো থেকে শুরু করে সেই সব নিউ ইয়র্কার যারা ফোনে, বার্তা পাঠিয়ে বা ফর্ম পূরণ করে কোভিডে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্য জানিয়েছেন – সবারই অবদান আছে এই প্রকল্পে। আরো আছেন স্নাতক পর্যায়ের ও সদ্য স্নাতক শেষ করা ডজনখানেক শিক্ষার্থী যারা ১০৭৪ জন নিউ ইয়র্কারের মৃত্যুর তথ্য যাচাই করেছেন, এবং ছবি ও শব্দে তাদেরকে স্মরণ করতে সাহায্য করেছেন।
তো, আমরা একসাথে কিভাবে কাজটা করছি? এই প্রকল্পের একটি বড় অংশ হচ্ছে: কোভিডে মারা যাওয়া মানুষদের ব্যক্তিজীবনের গল্পগুলোকে সংগ্রহ করা। এজন্য আমরা লিগ্যাসি ডট কম, নিউ ইয়র্ক টাইমস, নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ ও স্টেটেন আইল্যান্ড অ্যাডভান্সসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া অবিচুয়ারিগুলো এক জায়গায় জড়ো করছি।
আমরা নগরীর সেইসব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকেও তথ্য সংগ্রহ করছি, যারা কোভিডে প্রাণ হারানো সদস্যদের জন্য কোনো শোক বা স্মরণসভা আয়োজন করেছে। যেমন, ব্রঙ্কস বোরোর প্রেসিডেন্ট অফিস তাদের ওয়েবসাইটে একটি পেজ তৈরি করেছে, যেখানে দেখা যায়, তাদের প্রতিষ্ঠানে কারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শিক্ষক, নার্স, পরিবহন শ্রমিক ও অন্যান্য নাগরিক সেবার সঙ্গে যুক্ত ইউনিয়নগুলোর কাছ থেকেও আমরা শত শত নাম ও গল্প সংগ্রহ করেছি।
এছাড়া বেশ কিছু সিটি এজেন্সি, সোশ্যাল মিডিয়া পেজ এবং মেমোরিয়াল প্রজেক্ট (যেমন @facesOfCOVID এবং #NamingTheLost) থেকেও আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি।
সবার অংশগ্রহন
কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময় ছিল এই মিসিং দেম প্রকল্পের একটি প্রধান অংশ। মানুষ যেন তাদের পরিচিত, বন্ধু বা সহকর্মীর মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারে, সেই আহ্বান জানিয়ে গত ৮ মে আমরা একটি সংক্ষিপ্ত ফর্ম প্রকাশ করি। ফোন করে তথ্য জানানোর জন্য ৭৩২২৪ নম্বরে একটি হটলাইন চালু করি। এবং “রিমেম্বার” লিখে ৭৩২২৪ নম্বরে টেক্সট মেসেজ করেও তথ্য জানানোর ব্যবস্থা করি।
এখন পর্যন্ত, আমাদের সঙ্গে প্রায় তিনশ জন যোগাযোগ করেছেন। আমাদের ফেলো ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলেছে। তারা একই সাথে সাক্ষাৎকারের দিনক্ষণ ঠিক করছে, ছবি সংগ্রহ করছে এবং প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকে স্মরণ করে একটি সংক্ষিপ্ত অবিচুয়ারি লিখছে।
যত গল্প বলেছি
লং আইল্যান্ডে, মেডিকেল টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন লেমুয়েল সিসন। তিনি কোভিড-১৯-এ মারা যাওয়া প্রথম দিককার একজন। সিসনের মেয়ে লেইভান্নির সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নিউমার্কের শিক্ষার্থী ও দ্য সিটির ফেলো, লুকা পাওয়েল। লেইভান্নি বলেছিলেন, সিসন ছিলেন কুইন্সের ফিলিপিনো-আমেরিকান কমিউনিটির একজন স্তম্ভ। এবং তিনি “কোনো প্রতিদান আশা না করেই” মানুষকে সাহায্য করতেন। অন্যান্য নিউ ইয়র্কারদের বাঁচিয়ে রাখার লড়াই করতে গিয়ে সিসনের মতো আরো অনেক ফিলিপিনো কোভিডের শিকার হয়েছেন। তারা কাজ করেছেন সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে।
৬ এপ্রিল, ৬৩ বছর বয়সে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা যান গেতানা দেসের্তো। ছেলে, রোকো ডেসের্তোর সাক্ষাৎকার নিয়ে তাঁর জীবন সম্পর্কে জেনেছেন ইন্সটিটিউট ফর ননপ্রফিট নিউজ (আইএনএন)-র ফেলো রোজা শোয়ার্টজবার্গ। দেসের্তো জন্মেছিলেন সিসিলিতে। কিশোরী অবস্থায় তিনি চলে আসেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। ক্যারিয়ার গড়েন স্বাস্থ্যসেবা প্রশাসনে, আর কাজ করতেন বীমা এজেন্ট ও একটি গ্যাস্ট্রোঅ্যান্ট্রোলজি অফিসের ডেস্ক অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বামীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হওয়ায়, পূর্ণকালীন সেবাকর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন দেসের্তো। যে কোনো সময় জরুরি চিকিৎসায় তৈরি থাকার জন্য তিনি কাছে রাখতেন একটি “হাসপাতাল ব্যাগ”, যেখানে কিছু কাপড়, চিরুনি, টুথব্রাশ ইত্যাদি জরুরি জিনিস রাখা থাকত। রোকো দেসের্তো বলেছেন, “আমার মা তাঁর পরিবারের কারো জন্য ভাঙা পা নিয়েও মাইলের পর মাইল হাঁটতে পারতেন।”
ব্রঙ্কস ফ্রিডম ফান্ডের হয়ে উকিলের কাজ করা ক্লিনটন ওয়াশিংটনকে নিয়ে লিখেছেন আইএনএন-এর আরেক ফেলো ও কলাম্বিয়া স্টেবাইল প্রোগ্রামের স্নাতক কেইটলিন অ্যান্টোনিওস। নিজের গ্রাহকদের মামলার তারিখগুলো ঠিকঠাক করে রাখা, জামিনের ব্যবস্থা করা, পরিবহন ব্যবস্থাপনা – এমন নানা কাজে সারাদিন অনেক পরিশ্রম করতেন ওয়াশিংটন। গত ৬ মে, ৪০ বছর বয়সে মারা গেছেন তিনি। সহকর্মীদের কথায়, ওয়াশিংটন ছিলেন খুবই দয়ালু এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের দিকে তাঁর ঝোঁক ছিল।
অ্যানা ওর্টিজ-এর জীবন সম্পর্কে শোনার জন্য তাঁর মেয়ে, প্যাট্রিসিয়া রোজার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন নিউমার্ক স্কুলের স্নাতক শিক্ষার্থী ও ফেলো ক্যারোলিন লেড্ডি। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে ডোমিনিকান রিপাবলিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন ওর্টিজ। তার কাজ ছিল, শুরু করেছিলেন প্রতিবন্ধীদের ঘরে গিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া। সাত ভাইবোনের পরিবারের জন্য দেশে টাকা পাঠানো এবং মেয়ের পড়াশোনার জন্য অর্থ জোগান দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন ওর্টিজ। রোজা বলেছেন, “তিনি যে আমাকে কত ভালোবাসতেন, তা বলতে ও দেখাতে তিনি কখনো ব্যর্থ হননি।”
ফুক শেয়ং ওং সম্পর্কে জানার জন্য তার ছোট ভাই, ওয়েন ওং-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিউমার্কের আরেক স্নাতক শিক্ষার্থী ও ফেলো ফ্রাঙ্ক ডিফিওরে। দীর্ঘদিন ধরে কুইন্সের বাসিন্দা, ফুক শেয়ং, ১৯৬০-এর দশকে ১৮ বছর বয়সে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। কাজ শুরু করেছিলেন গাড়ি ধোয়ামোছার প্রতিষ্ঠান ও রেস্টুরেন্টে। এগুলোই আমেরিকার অল্প কিছু ব্যবসা, যেখানে বিনা দ্বিধায় স্বাগত জানানো হতো চাইনিজ-আমেরিকানদের। তিনি ছিলেন দুই সন্তান, অ্যালেক্স ও সেরেনার স্নেহশীল পিতা। এবং তিনি খুব ভালো মাজং (বোর্ড গেম) খেলতে পারতেন। ওয়েং ওং বলেছেন, “সময় পেলেই তিনি এটি খেলতে শুরু করতেন।”
আমরা এখন পর্যন্ত এমন একশটিরও বেশি পরিবারের কাছে ফোন বা ইমেইল করেছি। কাজটি শেষ হতে হতে সংখ্যাটি এক হাজার বা ১০ হাজারে চলে যেতে পারে।
কাজে লেগেছে নেটওয়ার্ক
নিউ ইয়র্কজুড়ে আমাদের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমরা যত বেশি সম্ভব প্ল্যাটফর্ম ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছি।
এই প্রকল্প সম্পর্কে সবাইকে আরো বেশি জানাতে এবং বিষয়টি নিয়ে আলোচনা উস্কে দিতে আমরা ফেসবুক ব্যবহার করছি। আমরা নিউ ইয়র্ক সিটি সংক্রান্ত ২০০টিরও বেশি ফেসবুক গ্রুপের তালিকা বানিয়েছি। এখানে আমাদের কাজ নিয়ে নিয়মিত পোস্ট দিয়েছি। সেখানকার সদস্যদের উৎসাহিত করেছি এটি তাদের নিজ নিজ বন্ধুমহলে শেয়ার করার জন্য। আমরা নিয়মিত বিরতিতে এই গ্রুপে গিয়ে খেয়াল করছি যে, কেউ কোনো আপডেট শেয়ার করেছে কিনা বা কেউ আমাদের কাজে আগ্রহ দেখিয়েছে কিনা।
এটি কিভাবে কাজ করেছে, তার একটি সফল উদাহরণ: আমরা একটি গ্রুপে পোস্ট করার পর, নিউ ইয়র্কে থাকা এক বাংলাদেশি আমেরিকান চিকিৎসক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের একটি তালিকা করেছিলেন সেই চিকিৎসক। সেসময়, তাঁর তালিকায় ছিল ১৭০ জনের নাম। পরবর্তীতে সংখ্যাটি আরো বেড়েছে। আমরা তাঁর সেই তালিকা ধরে তথ্যগুলো যাচাই করেছি এবং সেটিকে আমাদের বড় প্রকল্পে যুক্ত করেছি।
আমাদের প্রকল্পটিকে আরো ছড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি হিসেবে আমরা এটিকে অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বর্তমান যোগাযোগ ফর্মটি শুধু ইংরেজিতে পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা জানি যে, নিউ ইয়র্কের সব মানুষ ও কমিউনিটির কাছে পৌঁছাতে হলে এটিকে অন্যান্য ভাষাতেও আনতে হবে। তাই, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সহায়তায় আমরা বটের মাধ্যমে বেশ কিছু ভাষায় আমাদের ফর্মটি অনুবাদ করেছি। কাজটি শুরু করা হয়েছে স্প্যানিশ, চাইনিজ ও ইডিশ দিয়ে।
আরো অনেক গ্রুপ আমাদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। লিংকন সেন্টারের মেমোরিয়াল ফর অল অব আস প্রকল্প থেকে শুরু করে গৃহহীনদের নিয়ে কাজ করা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এবং লাইব্রেরি-জাদুঘরের মতো কমিউনিটি প্রতিষ্ঠানও আমাদের কাছে আগ্রহ দেখিয়েছে এবং এক সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছে।
মিসিং দেম এখন কোনো একটি প্রতিষ্ঠান বা কমিউনিটির প্রকল্প নয়। এটি “দ্য সিটি”-রও প্রকল্প নয়, বরং এটি পুরো “নগরীর” প্রকল্প হয়ে গেছে।
ক্রমেই বড় হচ্ছে যে ডিজিটাল স্মরণিকা
উপরে উল্লেখ করা সব রকম উপায়ে পাওয়া তথ্য যুক্ত হয়েছে আমাদের ডিজিটাল মেমোরিয়াল পেজে। এটি সপ্তাহে কয়েকবার হালনাগাদ করা হয়। বিভিন্ন তালিকা থেকে পাওয়া নামগুলোর মধ্যে যেগুলো আমরা যাচাই করতে পেরেছি, সেগুলো এই পেজে যোগ করা হয়েছে। সঙ্গে আছে তাদের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনবৃন্তান্ত ও পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া কিছু ছবি।
আপনি এই ডেটাবেজে নাম, বয়স, এলাকা বা মৃত্যুর দিন ধরে সার্চ করতে পারবেন।
এই পেজটি থেকে অন্যদের আহ্বানও জানানো হয়, কোনো নাম এই তালিকায় না পেলে, তা জানানোর জন্য।
এই ডেটাবেজে শুধু তাদের নামই অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে, যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং এই মৃত্যুর বিষয়টি কোনো সংবাদমাধ্যম বা সিটি এজেন্সির মতো তৃতীয় কোনো পক্ষ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দেখা হয় মৃত ব্যক্তির সর্বশেষ ঠিকানা ও বয়স। এটি যাচাইয়ের জন্য আমরা নিউ ইয়র্ক সিটি ভোটার নিবন্ধন ডেটা ও অন্যান্য আরো কিছু সোর্স কাজে লাগিয়েছি। কবে মৃত্যু হয়েছিল, আগে থেকে কোনো শারিরীক জটিলতা ছিল কিনা; এসব তথ্য আমরা জেনেছি তাদের পরিবারের কাছ থেকে। এ ধরনের তথ্য অন্য কোনো স্বাধীন সূত্র থেকে যাচাই করা হয়নি।
যেভাবে লেখা হচ্ছে গল্প
এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল: সবাই যেন সংখ্যার পেছনে থাকা মানুষগুলোকে দেখতে পান। আর যখন মানুষ নিয়ে কাজ করবেন, তখন আপনার সামনে অনেক গল্পও চলে আসবে। আমরা এখন পর্যন্ত এমন কিছু গল্প প্রকাশ করতে পেরেছি।
মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষ্যে আমরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলাম কুইন্সের নিউ ইয়র্ক স্টেট ভেটেরানস হোমে কোভিড মৃত্যু নিয়ে। এটি ছিল সাবেক সেনাসদস্যদের জন্য নিউ ইয়র্কে সরকারিভাবে পরিচালিত পাঁচটি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রের একটি। দ্য সিটির রিপোর্টার ইয়োভ গোনেন হাতে পেয়েছিলেন একটি ফাঁস হয়ে যাওয়া নথি। যেখানে ছিল ওই সেবাকেন্দ্রে গত মার্চ-এপ্রিল মাসে মারা যাওয়া ৪৮জন সাবেক সেনাসদস্যের নাম। তালিকাটির সত্যতা যাচাই করার জন্য পরবর্তী তিন দিন পাঁচজন সাংবাদিক ও ফেলোর একটি দল প্রতিটি ব্যক্তির আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এবং এই তালিকার ২৫ জনের তথ্য তারা যাচাই করতে পেরেছেন। এই অনুসন্ধানের পরিণামে যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে মৃত ব্যক্তিদের জীবন নিয়ে নানা গল্প যেমন আছে, তেমনি এই মৃত্যুর পেছনে সেবাকেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, সেই প্রশ্নও উঠে এসেছে।
কোভিডে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের সৎকার ও স্মরণসভা আয়োজন করতে কী পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয়; এমন একটি হিসেবও আমরা দেখানোর চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় অবিচুয়ারি প্রকাশ করতে কেমন খরচ হয়, তার একটি হিসেবও সেখানে ছিল। স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্রে অবিচুয়ারি প্রকাশের খরচ ২৫০ থেকে ৬০০ ডলার। ব্রঙ্কস টাইমস ও দ্য কুইন্স কুরিয়ারের মতো বেশ কিছু কমিউনিটি পত্রিকার মালিক, স্নেপস মিডিয়া ছবিসহ একেকটি অবিচুয়ারি প্রকাশ করতে নেয় ২৫০ ডলার এবং প্রতি ২০ শব্দের জন্য ২০ ডলার। নিউ ইয়র্ক আর্মস্টারডাম নিউজের বিজ্ঞাপন বিভাগ জানিয়েছে, পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ ৩০০ শব্দের একটি অবিচুয়ারি প্রকাশ করতে তারা ৩৯৯ ডলার নেয়।
এক দিনের জন্য জাতীয় সংস্করণ ও অনলাইনে একটি অবিচুয়ারি প্রকাশ করতে নিউ ইয়র্ক টাইমস নেয় ২৩৬ ডলার। দ্য নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ জানিয়েছে তাদের অবিচুয়ারি প্রকাশের গড় মূল্য প্রায় ৬০০ ডলার। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমই বিনা পয়সায় অবিচুয়ারি প্রকাশের সুযোগ রাখে না।
প্রতিবেদনের ধরন কেমন হবে, তা নিয়ে ফেলোদের সঙ্গে সব সময় আলোচনা করেছেন এই প্রকল্পের তিন সম্পাদক অঞ্জলি সুই, ডেরেক ক্রাভিটজ ও টেরি পারিস। আমরা এখন পর্যন্ত যেসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি সেখানে উঠে এসেছে সাবেক সেনাসদস্যদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিস্থিতি, নারীরা কোন কারণে অবিচুয়ারিতে জায়গা পাচ্ছেন না, কেন অভিবাসী কমিউনিটি তাদের মৃত স্বজনদের দেহাবশেষ নিজ দেশে পাঠাতে পারছেন না, এমন আরো অনেক কিছু।
এই সব গল্প আমাদের একার পক্ষে বলা সম্ভব না। ফলে আমরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে জোট বেঁধে সেগুলো বলার চেষ্টা করছি। আপনি এ কাজে আগ্রহী হলে, আমাদের মেইল করুন এই ঠিকানায়: memorial@thecity.nyc।
স্বেচ্ছাযসেবীদের এগিয়ে আসা
নিউ ইয়র্কে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর, হাসপাতালগুলো প্রায় ভেঙে পড়ার দশা হয়েছিল। সেসময় আমরা একের পর এক গল্প শুনেছি, স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত কর্মীরা কিভাবে এই মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে ও নিউ ইয়র্ক শহরকে রক্ষা করছে।
স্বাস্থ্যকর্মীরা যে কাজটি করেছেন, সাংবাদিক হিসেবে আমরা হয়তো সেই কাজটির সমকক্ষ হতে পারব না। কিন্তু আমরা জানতাম যে, এমন অনেক সাংবাদিক আছেন যারা সত্যিই সেভাবে সাহায্য করতে চান।
বৈশ্বিক একটি মহামারির বিরুদ্ধে সামনের সারিতে থেকে লড়াই করার মতো দক্ষতা সাংবাদিকদের নেই। কিন্তু ইতিহাস লেখার মাঠে আমরাও সামনের সারি থেকেই লড়াই করছি। প্রকল্পটি শুরুর সময় থেকে আমরা অনেক ইমেইল পেয়েছি সাংবাদিক, লেখক, গবেষক, শিক্ষকদের কাছ থেকে। তারা সবাই আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছেন তাদের মৃত প্রিয়জনদের গল্প তুলে আনার জন্য। অন দ্য মিডিয়া-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আমরা এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম।
তারপর থেকে, ১০০ জনেরও বেশি মানুষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের খুঁজে বের করা ও তাদের গল্পগুলো তুলে আনার জন্য। অনেক সাংবাদিকের এই মহামারির মধ্যে কিছু একটা করার পথ খুঁজেছেন। তাঁরাও মিসিং দেম প্রকল্পটিকে দেখেছেন সেই কাজ করার সুযোগ হিসেবে।
অবশ্য, আমরা এখনো তাদের সঙ্গে কাজ শুরু করার মতো পর্যায়ে যেতে পারিনি। তবে আগামী কয়েক মাসে, আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব এবং তাদেরকে সংগঠিত করে কাজ শুরু করব।
কাজটি কঠিন
আমাদের সভাগুলোতে প্রায়ই বলা হতো, প্রকল্পটি মৃত্যু নিয়ে নয়, জীবন নিয়ে। আমরা ক্রমশ বেড়ে চলা মৃত্যু সংখ্যার দিকে নজর দিচ্ছি না। আমরা প্রতিটি মৃত ব্যক্তির জীবন নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু, তারপরও আমরা আসলে প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হচ্ছিলাম মৃত ব্যক্তিদের শোকগ্রস্ত পরিবার ও নানা রকমের বেদনাদায়ক পরিস্থিতির। এই সংকটের কোনো অবসানও আমরা দেখতে পাচ্ছি না। কাজটি খুবই কঠিন ও আবেগঘন – তা আপনি যেভাবেই উপস্থাপন করেন না কেন।
প্রকল্পটি নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন এবং কিভাবে নিজের যত্ন নিতে হবে; এ নিয়ে আমরা খোলামেলা আলোচনা করি। সম্প্রতি এ নিয়ে আমাদের একটি প্রশিক্ষণও দিয়েছেন ডার্ট সেন্টার ফর জার্নালিজম অ্যান্ড ট্রমা-র প্রধান নির্বাহী ব্রুস শাপিরো। সেখান থেকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় শিখেছি:
- এরকম একটি প্রকল্পে কাজ করার ক্ষেত্রে কিছু “অবসর সময়” খুঁজে নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সময়ের জন্য আমাদের সব রকমের যন্ত্র থেকে দূরে থাকা উচিৎ। সেটি কয়েক মিনিটের জন্য হলেও।
- কাজ সংক্রান্ত একটি নোটবুক সঙ্গে রাখতে পারেন। যেখানে আপনি কোন কাজগুলো করেছেন এবং আরো কী কী করতে চান, সব কিছুর তালিকা রাখতে পারবেন। এভাবে আপনি নিজের কাজের প্রতি আরো উদ্যোমী হতে পারবেন।
- সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে মানসিক চাপ সামলানোর কঠিন হয়ে পড়ে। তাই বন্ধু-সহকর্মীদের পাশে রাখুন, যাদের কাছে আপনি সাহায্যের জন্য যেতে পারবেন।
প্রতিটি মাইলফলকে পৌঁছানোর পর আমাদের কাজ পূর্ণমূল্যায়ন করার গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছিলেন শাপিরো। তিনি বলেছিলেন, আমরা যেন নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করি:
১. আমরা কোন জিনিসগুলো ঠিক করেছি?
২. কোন ক্ষেত্রে আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি?
৩. এখান থেকে আমরা কী শিক্ষা পেয়েছি?
আমরা এই প্রশ্নগুলো আমাদের কর্মপদ্ধতিতে অন্তর্ভূক্ত করেছি। এটি পুরোপুরি ঠিকঠাক হচ্ছে, এমন কিছু নয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি।
সাহায্য করতে পারেন আপনিও
এই লেখাটিতে এতক্ষণ যে সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার কথা বলা হলো, তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি আপনাদের উদ্দেশে কিছু প্রশ্ন না করা হয়:
১. আপনাদের মধ্যে যাঁরা কোভিড মৃত্যু নিয়ে এ ধরনের ভারী কাজ করছেন বা এজাতীয় সাধারণ কোনো সংকট নিয়ে কাজ করছেন, তাঁরা কিভাবে নিজের দিকে বা নিজের দলের দিকে খেয়াল রাখছেন?
২. আপনারা যদি কেউ এধরনের কোনো স্মরণমূলক প্রকল্পে কাজ করে থাকেন বা আপনাদের এরকম কোনো পছন্দনীয় কাজ থাকে, তাহলে সেটি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করুন।
৩. এবং, আপনি যদি নিউ ইয়র্ক শহরে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, এমন কারো কথা জানেন, তাহলে আমাদের জানান। সেটি জানাতে পারেন এভাবে:
- হটলাইনে কল করুন: (৬৪৬) ৪৯৪-১০৯৫ নম্বরে
- “remember” লিখে টেক্সট করুন ৭৪২২৪ নম্বরে
- ইমেইল করুন এই ঠিকানায়: memorial@thecity.nyc
সহযোগিতামূলক সাংবাদিকতা প্রকল্প নিয়ে আরো পড়ুন:
How Latin American Media Outlets are Collaborating on COVID-19 Investigations
10 Tips for Successful Collaboration Among Journalists
A Model Collaboration That’s Working to Rebuild Local News in Colorado
Considering a Collaborative Reporting Project? Here are 8 Lessons From 6 Projects
নিউমার্ক গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজম, কলম্বিয়া জার্নালিজম স্কুল ও দ্য সিটি-র এই যৌথ লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল নিউমার্ক গ্রাজুয়েট স্কুল অব জার্নালিজমের মিডিয়াম পেজে। অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। মিডিয়ামের পোস্টটি পাবেন এখানে।