![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2020/06/NYT-graphic-1.png)
ছবি কৃতজ্ঞতা: নিউ ইয়র্ক টাইমস
২০১৯ সালের এপ্রিলে, নিউজিল্যান্ড ও নরওয়ে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থীদের হাতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রতিবেদন প্রকাশ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস। এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন টাইমসের উইই কাই এবং সিমোন ল্যান্ডন। তারা মানচিত্র ও টাইমলাইনের মাধ্যমে ডেটা প্লট তৈরি করে এমন অপরাধের উদ্বেগজনক হার এবং কিছু ক্ষেত্রে একটি ঘটনার সাথে আরেকটির অদ্ভুত সংযোগ তুলে ধরেন।
সম্প্রতি প্রতিবেদনটি নিয়ে কাইয়ের সাথে কথা বলেছে স্টোরিবেঞ্চ। তিনি বর্তমানে টাইমসে গ্রাফিক্স / মাল্টিমিডিয়া সম্পাদক হিসাবে কাজ করছেন এবং এর আগে রয়টার্স ও ওয়াশিংটন পোস্টে কাজ করেছেন।
আপনি এরকম একটি স্টোরি করার অনুপ্রেরণা কোথা থেকে পেলেন?
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে গোলাগুলির ঘটনার পরই এই বিশ্লেষণটি করার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। সেই ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি লোক মারা গিয়েছিল। তখন পর্যন্ত, বন্দুকধারীদের এমন হামলা নিয়ে কোনো পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ হয়নি। যখন রিপোর্টটি করার সিদ্ধান্ত নিই তখন সেই ঘটনা ছিল সবচেয়ে সাম্প্রতিক। আমরা দেখতে পাই – জাতীয়তাবাদী, চরমপন্থী এবং জাতিগত বিদ্বেষ থেকে অনুপ্রাণিত হামলার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। সেখান থেকে দেখতে চেয়েছি, এখানে কোনো প্যাটার্ন বা প্রবণতা আছে কিনা। আমরা গ্লোবাল টেররিজম ডেটাবেস থেকে ডেটা দিয়ে শুরু করেছি এবং সাদা উগ্রপন্থী ট্যাগ আছে, এমন সব কেইস সম্পর্কে যত তথ্য আছে ঘেঁটে ঘেঁটে বের করেছি। তারপরে সমস্ত মামলা ফিল্টার করে পড়ে, সিদ্ধান্তে পৌছানোর চেষ্টা করেছি, তার সাথে উগ্রবাদী সাদাদের সম্পর্ক ছিল কিনা।
প্রথমে, আমরা শুধু সাদা অপরাধীদের হাতে সংঘটিত হামলার তথ্য আমলে নিয়েছি এবং তারপর ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছি এসব হামলার পিছনে নির্দিষ্ট কোনো মতাদর্শ রয়েছে কিনা, যেমন: মুসলিমবিদ্বেষ, অভিবাসী-বিরোধিতা, নব্য-নাজি, ডানপন্থী, নব্য-ফ্যাসিবাদী, ইহুদিবিরোধী, কু ক্লাক্স ক্লান, শিখ বিরোধী, জেনোফোবিক বা বর্ণবাদী। এভাবে গত কয়েক বছর ধরে ঘটা কয়েকশ ঘটনা আমরা তালিকাভুক্ত করি, আর এটিই ছিল আমাদের বিশ্লেষণের ভিত্তি।
কীভাবে নিউজরুমে পিচ করলেন?
এটি ঠিক একটি শক্ত পিচ ছিল না; মোটাদাগে প্রতিবেদনটি কীভাবে লিখতে হবে, তা নিয়েই আলাপ ছিল বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিক হামলাগুলোর কারণে গল্পটি নিয়ে আগ্রহ ছিল সবার। আমাদের আলোচনার প্রথম বিষয় ছিল, এমন একটি রিপোর্ট হামলাকারীদের দিকে মানুষের মনোযোগ আরো বাড়িয়ে তুলবে কিনা। আমরা আসলে এই ব্যক্তিদের প্রোফাইল করতে, বা ঘটনাটি যতটুকু মনোযোগ কেড়েছে তার চেয়ে বেশি মনোযোগ হামলাকারীদের দিকে যাক, সেটি চাইনি। পরিবর্তে, আমরা আশঙ্কাজনক সেই প্যাটার্নটি তুলে ধরতে চেয়েছিলাম, যে হামলাকারীরা একে অপর থেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে; যেমনটা দেখা যাচ্ছে নিচের গ্রাফিক্সে, লাল এবং ধূসর বৃত্তে। আমরা দেখতে পাই, সাম্প্রতিক এই হামলার বীজ লুকিয়ে আছে ২০১১ সালে নরওয়েতে হওয়া গোলাগুলিতে, যেখানে আক্রমণকারী ৭০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করে। গ্রাফিক্সের তীরচিহ্নগুলো দিয়ে অতীতের হামলার সাথে সাম্প্রতিক ঘটনার সংযোগ এবং অনুপ্রেরণা বোঝানো হয়েছে। বেশ কয়েকজন হামলাকারী অনলাইন কমিউনিটি থেকে অনুপ্রাণিত হন। এটি ঘটনার আরেক দিক যা আমরা পাঠকদের দেখাতে চেয়েছিলাম।
টাইমলাইন গ্রাফিক্সটি কিভাবে তৈরি করলেন?
প্রথম পদক্ষেপটি ছিল একটি ঘটনার সাথে আরেকটির সংযোগ বা রেফারেন্স খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপক পড়াশোনা এবং গবেষণা। এই বিষয় নিয়ে নতুন-পুরনো যত আর্টিকেল আছে, আমরা সব পড়েছি। (সাদা উগ্রপন্থীদের) যেসব ইশতেহার আমরা পেয়েছি, তাতে অতীতের হামলাগুলোর রেফারেন্স ছিল। এর পরে, বিভিন্ন হামলা এবং তার সাথে কে কে জড়িত ছিল, তার স্কেচ তৈরি করেছি। পরের ধাপে আমরা এমন ঘটনাগুলোকে সাজিয়েছি, যেখানে কমপক্ষে একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, এবং আমাদের স্কেচের উপর ভিত্তি করে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটরে গ্রাফিক্স বানিয়েছি।
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2020/06/NYT-graphic-2.png)
ছবি কৃতজ্ঞতা: নিউ ইয়র্ক টাইমস
স্ক্রোলিং মানচিত্র ব্যবহারের পিছনে কী যুক্তি ছিল? কেন টাইমলাইনের পরিবর্তে এই গ্রাফিক্সটি বেছে নিলেন?
তখন আমাদের হাতে এক গাদা তথ্য। সবকিছুকে একটি মানচিত্রে তুলে ধরা, তারপর আলাদা আলাদা পাঁচ বা ছয়টি অনুচ্ছেদে তার বিবরণ লেখা – এত কিছু বেশ বাহুল্য মনে হচ্ছিল। কারণ, এত তথ্য দেখলে পাঠক এক পর্যায়ে গ্রাফিক্সটি ভুলে যাবে এবং বিভ্রান্ত হবে। কারণ, ম্যাপে এত ডটের মধ্যে কোন হামলাটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি খুঁজে বের করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। আপনি যদি ডট বা বিন্দুগুলোর মধ্য দিয়ে পাঠককে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারেন, তবে বিন্দুগুলো অর্থ হারাবে। এই স্ক্রোলিং গ্রাফিক্সের মাধ্যমে, আমরা একটি হামলা থেকে আরেকটিকে আলাদা করেছি, এবং প্রতিটি ঘটনার টাইমলাইন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি ঘটনাস্থলকেও সুনির্দিষ্টভাবে হাইলাইট করতে পেরেছি।
আমরা পাঠকদেরও বলতে পেরেছি, কোন হামলা থেকে অন্যরা অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং তাদেরকে গ্রুপে ভাগ করে দেখিয়েছি। সব হামলার পেছনেই সাদা উগ্রবাদীরা ছিল, কিন্তু তাদের প্রত্যেকের অনুপ্রেরণার উৎস এক ছিল না। যেমন, একটি গ্রুপ ছিল উপাসনালয়ে হওয়া হামলা নিয়ে। এভাবে একেকটি ধরন নিয়ে আমরা বিশেষভাবে আলোচনা করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা একেকটি গ্রুপ ধরে পাঠকদের হাঁটিয়ে নিয়ে গেছি তাদের প্রতিশোধপ্রবণ মনস্তত্ত্বে। দেখিয়েছি একটি ঘটনাকে কিভাবে আগের আরেকটি ঘটনা অনুপ্রাণিত করেছে। এতরকম ঘটনাকে একটি বড় মানচিত্রে দেখানো মোটেও ঠিক নয়। হামলাগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করে দেখানোয়, তা পাঠকদের জন্য বরং আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
স্ক্রোলিং গ্রাফিকগুলি কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল?
আমরা অনলাইন কিউজিআইএস ম্যাপ তৈরির সফটওয়্যার ব্যবহার করে মানচিত্র তৈরি করেছি এবং তারপরে প্রতিটি হামলাস্থল একেকটি বিন্দুতে দেখিয়েছি। এর পরে, আমি প্রতিটি রঙের বিন্দুকে শ্রেণিবদ্ধ করতে ইলাস্ট্রেটরে নিয়েছি। তারপর নিউ ইয়র্ক টাইমস ইন্টারফেসের একটি টুল ব্যবহার করেছি। এই টুলটি না থাকলে, আমি হয়তো স্ক্রোলম্যাজিক ব্যবহার করতাম। এটি স্ক্রোলিং গ্রাফিক্স তৈরির জন্য একটি জনপ্রিয় জাভাস্ক্রিপ্ট লাইব্রেরি।
ডিজাইনটি কীভাবে বিকশিত হয়েছিল?
শুরুতে আমরা জানতাম না কী হাইলাইট করতে হবে। তবে জানতাম, ঘটনাগুলোকে আগে অঞ্চল অনুযায়ী শ্রেণিবদ্ধ করতে হবে, কারণ আমেরিকায় হওয়া হামলার সাথে ইউরোপে হওয়া হামলার ধরনে মিল নেই। এ কারণেই আমাদের প্রথম গ্রাফিক্সে তিনটি গ্লোব দেখেছেন। এর মাধ্যমে আমরা আসলে পাঠকদের তিনটি আলাদা অঞ্চলে নিয়ে যেতে চাইছিলাম: উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়া।
![](https://gijn.org/wp-content/uploads/2020/06/NYT-graphic-3.png)
ছবি কৃতজ্ঞতা: নিউ ইয়র্ক টাইমস
যখন লিখছেন তখন কি ভেবেছিলেন, এই রিপোর্ট পড়ে ভবিষ্যতে তারা আরো হামলা করায় অনুপ্রাণিত হতে পারে?
হ্যাঁ, এই উদ্বেগ তো ছিলই; আমরা তালিকায় নাম উঠিয়ে কাউকে মহিমান্বিত বা আরো হামলায় উৎসাহিত করতে চাইনি।
এই আশঙ্কা এড়াতে কোনো সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল?
আমরা এখানে কারো নাম ব্যবহার করিনি, যাতে হামলাকারীদের দিকে মনোযোগ কম থাকে – এটি একটি বড় সিদ্ধান্ত ছিল। কিছু নাম খুব সুপরিচিত, তাই এড়িয়ে গিয়েও কাজ হয় না। এটাও সত্য, শুধু সময় এবং অবস্থান দিয়ে ঘটনা সম্পর্কে লেখা খুব কঠিন। তবে একই সাথে আমি মনে করি, হামলাকারীদের স্পটলাইট থেকে দূরে রাখাও জরুরী।
আমাদের আরেকটি সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত ছিল: ঘটনার প্রকৃত ছবি ব্যবহার না করা এবং ভিজুয়ালাইজেশন খুব সহজ, সরল, এবং এমনকি কিছুটা যান্ত্রিক রাখা; যাতে দৃশ্যায়নকেও গল্পের মতো একই সুরে রাখা যায়। স্টাইল অনুযায়ী চিন্তা করলে: মানচিত্রে কেবল ধূসর ও লাল ছিল, এবং কোনো বাড়তি ব্যাখ্যা রাখা হয়নি। আমরা আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
মিহির পাতিল এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার ছাত্র। তার এই স্টোরি সবার আগে প্রকাশিত হয় স্টোরিবেঞ্চে, যা নর্থইস্টার্ন স্কুল অব জার্নালিজমের একটি প্রকাশনা। তাদের নজর থাকে ডিজিটাল স্টোরিটেলিংয়ে – তা সে ডেটার চিত্রায়ন হোক, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও ডিজিটাল হিউম্যানিটির মত বিষয়ে। অনুমতি নিয়ে লেখাটি এখানে পুনপ্রকাশ করা হয়েছে।