সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসুতে কোভিড-১৯ সংক্রমণে মৃত্যুহার খুবই কম দেখে সন্দেহ জাগে ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার আবদেল আহমেদ মুমিনের। গত এপ্রিলে, তিনি সিদ্ধান্ত নেন শহরের অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সাক্ষাৎকার নেবেন। এটি করতে গিয়ে তিনি আবিস্কার করেন, টানা দুই সপ্তাহ ধরে স্বাভাবিকের চেয়ে চারগুণ বেশি মৃতদেহ বহন করেছেন এই অ্যাম্বুলেন্স চালকরা।
একই সময়ে, নাইজেরিয়ার শহর, কানোতে সরকারিভাবে জানানো মৃত্যুসংখ্যা নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন গার্ডিয়ানের দুই রিপোর্টার। তারা পাঁচজন গোরখোদকের সাক্ষাৎকার নিয়ে আবিস্কার করেন, মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েকশ জন বেশি। তারা আরো জানতে পারেন, এই রোগের বিস্তারের পর থেকে গোরখোদকদের মৃত্যুও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে।
তখন আটলান্টিকের ওপারে বসে প্রোপাবলিকার দুই ডেটা সাংবাদিক জানার চেষ্টা করছিলেন, ডেট্রয়েট শহরে হাসপাতালের বাইরে কতগুলো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা সরকারি পরিসংখ্যানে উঠে আসেনি। তারা একটি ডেটা টুল ব্যবহার করে খতিয়ে দেখেন, নগরীর জরুরি সহায়তা সার্ভিস ৯১১-এ আসা ফোন কলের আর্কাইভ। “মৃত ব্যক্তি” ক্যাটাগরিতে গিয়ে তারা দেখতে পান, ১০ দিনের ভেতরে সেখানে এমন দেড়শটি ফোন এসেছে। গত বছর একই সময়ে সংখ্যাটি ছিল ৪০।
আরো ৩৭০০ মাইল দক্ষিণে, পেরুর রাজধানী লিমাতে, আইডিএল-রিপোর্তেরোসের সাংবাদিকরা দেখেছেন, সেখানকার শ্মশানগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুন বেশি মৃতদেহ পোড়ানো হয়েছে। তারা এও আবিস্কার করেন, মৃতদেহ সৎকারের জন্য স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে চালাচালি হওয়া হাতে লেখা নথি থেকে, তারা খুঁজে পান কোভিডে মৃত্যুর সত্যিকারের সংখ্যা।
বিশ্বজুড়ে, অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা এভাবেই নতুন নতুন কৌশল বের করছেন করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মৃত্যুর প্রকৃত চিত্র তুলে আনার জন্য।
তারা এমন অভিনব উপায়ে তথ্য সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছেন নানা কারণে: মৃত্যুর সরকারি তথ্য নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে, পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না, সরকারি তথ্য পেতে দেরি হচ্ছে, মৃত্যুসনদে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা হচ্ছে না এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবেও মৃত্যুর তথ্য লুকোনো হচ্ছে।
এর ফলে গোটা বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মৃত্যুর গণনায় কমতি থেকে যাচ্ছে এবং তার মারাত্মক পরিণতি দেখা যাচ্ছে সম্পদের বন্টন, সরকারি টাকা বিতরণ ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা তথ্যের এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করছেন।
উহানে মৃত্যু সংখ্যায় তারতম্য উৎঘাটন করতে গিয়ে, গত মার্চে চীনের কাইসিন মিডিয়ার সাংবাদিকরা সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পথ বেছে নেন। তারা খতিয়ে দেখেন, লাশ সৎকারের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে কী পরিমাণ উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানেই প্রায় আড়াই হাজার শবাধার সরবরাহ করা হয়েছিল ট্রাকে করে। সেই ট্রাকচালক বলেছিলেন, আগের দিন তিনি আরো বড় চালান সরবরাহ করেছেন।
নাইজেরিয়ার কানোতে, গার্ডিয়ানের জন্য রিপোর্ট করা এমানুয়েল আকিনোটু, জিআইজেএনকে বলেছেন: “যেখানে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই, সেখানে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পাওয়া প্রমাণ খুব কাজের হতে পারে। এটি মানুষকে সহজে নাড়াও দেয়। আমি তিনটি কবরস্থানে গিয়ে গোরখোদকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই বলেছে, মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে গেছে। এক সপ্তাহে স্বাভাবিকের চেয়ে অন্তত শখানেক বেশি। কিন্তু কানোতে কোভিডে মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক সংখ্যা ছিল ২৬।”
প্রোপাবলিকার ডেটা সাংবাদিক জ্যাম জিলাম বলেছেন, “আমাদের অভিজ্ঞতা, সবখানেই আনুষ্ঠানিক তথ্যে মৃত্যুর সংখ্যা কম। তাই আমরা প্রকৃত সংখ্যা জানতে অন্য পথ ধরেছি। দেখতে চেয়েছি, ঘরে থাকা অবস্থায় কত মানুষ মারা গেছেন। মিশিগানে আমাদেরকে হালনাগাদ তথ্য প্রদান করা হয়নি। ফলে আমরা ৯১১ কলের ডেটা নিয়ে কাজ করেছি।”
সরকারি তথ্যের বাইরে গিয়ে মৃত্যুর সত্যিকারের চিত্র তুলে আনার কাজটি বেশ কঠিন। এখানে ভুলেরও সুযোগ অনেক। তাই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রিপোর্টার ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে জিআইজেএন এখানে মৃত্যুর প্রকৃত চিত্র তুলে আনার ১২টি কৌশল ও ছয়টি টুলের কথা জানাচ্ছে, যা বিভিন্ন দেশে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সরকারি তথ্যের বাইরে মৃত্যুর সংখ্যা গণনার পদ্ধতি
- যেসব দেশে তুলনামূলকভাবে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, সেখানে চলতি সময়ে মোট কত মানুষ মারা গেছে, তার সঙ্গে আগের বছর একই সময়ে মোট মৃত্যুর তুলনা করতে পারেন। গত এপ্রিলে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস যেমনটা করেছিল ১৪টি দেশের ক্ষেত্রে। পরিসংখ্যান দপ্তরের সাম্প্রতিক ডেটা যদি অসম্পূর্ণ হয়, রিপোর্টে সেটি পরিষ্কার করে বলুন। এবং তার সাথেই তুলনা করুন। তাতেও দেখা যাবে, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মোট মৃত্যুহার কয়েকগুণ বেড়ে গেছে, তা-সে ইকুয়েডরেই হোক বা নিউ জার্সিতে।
- বেশি মৃত্যুর সংখ্যা হিসেব করতে বা তুলে আনতে “প্রক্সি সোর্স” ব্যবহার করুন। কথা বলুন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মর্গের কর্মকর্তা, লাশ সৎকারে নিয়োজিত সংগঠন, গোরখোদক ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সঙ্গে।
- স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যখন মৃতদেহ সৎকার করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি করে, তখন তারা মৃত্যুগুলোকে কিভাবে বর্ণনা করছে? এ ব্যাপারে খোঁজখবর করুন। আইডিএল-রিপোর্তেরোস আবিস্কার করেছিল: পেরুর স্বাস্থ্যসেবা কর্তৃপক্ষ মৃতদেহ সৎকারের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তিখাতের কবরস্থানের সঙ্গে চুক্তি করেছিল এবং রেজিস্ট্রিতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মৃত্যুর তথ্য লেখার ব্যাপারে খুব সৎ ছিল।
- স্থানীয় সরকারের কোনো গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায় কিনা, খেয়াল রাখুন। কোথাও কোথাও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সেখানকার হাসপাতালগুলোতে কী পরিমাণ কোভিড সংক্রান্ত মৃত্যু হচ্ছে, তার হিসেব রাখছে অভ্যন্তরীণভাবে। আর সেগুলো পাঠাচ্ছে জাতীয় পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখানে গিয়ে সংখ্যাগুলো কমিয়ে বলা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রের কাছ থেকে এই ধরনের তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। গত ৮ মে, নিউ ইয়র্ক টাইমস আবিস্কার করে, মেক্সিকো সিটিতে সত্যিকারের মৃত্যু সংখ্যা, কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে তিনগুন বেশি। তিনটি সূত্র থেকে তারা নিশ্চিত হন, গোপনে এই সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন শহরের মেয়র, ক্লদিয়া শেইনবাম। এক সপ্তাহ পরে, স্কাই নিউজের একটি অনুসন্ধান থেকে দেখা যায়, সত্যিকারের মৃত্যু সংখ্যা আরো বেশি। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও লাশ সৎকারের জায়গা ঘুরে এবং স্থানীয় সূত্রের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করে সত্যিকারের মৃত্যু সংখ্যা হিসেব করেছিল তারা।
- আইনিভাবে সম্ভব হলে, ৯১১ ধরনের জরুরি সহায়তা সেবার কলগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন। কোন জায়গা থেকে কল এসেছে সেটি দেখে আক্রান্ত বাড়ি সনাক্ত করতে পারেন। কী ধরনের শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে, তা খেয়াল করলেও বুঝতে পারবেন কোন ধরনের মৃত্যুর কথা বলা হচ্ছে।
- নিজস্ব কোনো কারণে কোভিড সংক্রান্ত মৃত্যুর হিসেব রাখার চেষ্টা করছেন, এমন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের খোঁজ করুন। নিউ ইয়র্ক টাইমস এমন এক ডেমোগ্রাফারকে খুঁজে পেয়েছিল রাশিয়ায়। তিনি এপ্রিল মাসে মস্কোতে একটি অস্পষ্ট রেজিস্ট্রি থেকে সনাক্ত করেছিলেন ১৭০০ অতিরিক্ত মৃত্যু। কম মৃত্যুর দেশ হিসেবে রাশিয়ার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল, তা পুরোপুরি বদলে যায় এই তথ্য প্রকাশের পর।
- সোশ্যাল মিডিয়াতে যত বেশি ভাষায় সম্ভব, খোঁজাখুঁজি করুন। সেখানে হয়তো কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মৃত্যুর অনেক খবর পাবেন। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলুন এবং কোনো আনুষ্ঠানিক নথিপত্র তারা দিতে পারে কিনা, সেই অনুরোধ করুন।
- যে জায়গাগুলোতে মনে হবে মৃত্যু সংখ্যা কম দেখানো হচ্ছে, সেখানে মনোযোগ দিন। মোটামুটি নির্ভরযোগ্য সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, এমন কাছাকাছি ধরনের অন্য কোনো জায়গা বা শহরের সঙ্গে তুলনা করুন।
- একটি ছোট এলাকায় মৃত্যুহারের পরিমাণ কেমন, তা নির্ধারণ করুন বাড়ি বাড়ি গিয়ে। এবং সেই তথ্য থেকে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন, আরো বড় এলাকায় পরিস্থিতি কেমন হতে পারে।
- সংগ্রহ করে আনা বা কিউরেটেড ডেটার চেয়ে অকৃত্রিম, “ট্রানজ্যাকশনাল” ডেটা সোর্সের দিকে খেয়াল রাখুন। যেমন পুলিশের কাছে আসা কল। প্রোপাবলিকার জিলাম বলছেন, কম্পিউটার সিস্টেম থেকে বের করে দেওয়া তথ্যই এরকম মৃত্যুসংক্রান্ত সংবেদনশীল বিষয়ের ক্ষেত্রে বেশি নির্ভরযোগ্য।
- শ্মশান, কবরস্থানের মতো জায়গায় অনেক বেশি পরিমাণে উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে কিনা, খেয়াল রাখুন।
- কোভিড সংশ্লিষ্ট নয়, এমন অতিরিক্ত মৃত্যুর একটি নির্ভুল তালিকাও সামনে রাখুন গাইড হিসেবে। এতে কোভিড পরিস্থিতির অপ্রত্যক্ষ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি বুঝতে পারবেন। অক্সফোর্ড কোভিড-১৯ এভিডেন্স সার্ভিস দেখেছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যে পরিমাণ অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে, তার এক তৃতীয়াংশই কোভিড সংশ্লিষ্ট নয়।
ডেটার ঘাটতি স্বীকার করে নিন
রিপোর্টাররা যদি এভাবে প্রত্যক্ষ প্রমাণ ও প্রক্সি সোর্সের তথ্য দিয়ে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার বিষয় তুলে ধরেন, তাহলে এই পদ্ধতিগুলোর সীমাবদ্ধতার কথাও অবশ্যই পরিস্কার করে বলে দিতে হবে। এবং কিভাবে একটি সিদ্ধান্তে পৌছানো হয়েছে, সেটিও বলে দিতে হবে। কারণ এই পদ্ধতিগুলোর নির্ভুলতা এবং কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট মৃত্যু সনাক্ত করার সক্ষমতায় ঘাটতি থাকতে পারে। সব ধরনের কারণে মৃত্যুর ডেটা নিয়ে তৈরি করা বড় বড় কিছু প্রতিবেদনেও দেখা গেছে তাতে সংখ্যা ছাড়া আর কিছুই বলা নেই।
অবিচুয়ারিও সাংবাদিকদের কাজে লাগতে পারে। কিন্তু দ্য সিটি নিউজ সাইট ও কলম্বিয়া জার্নালিজম ইনভেস্টিগেশনের এক বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে নিউ ইয়র্কে এই মহামারিতে মৃত্যুর মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কথা উঠে এসেছে অবিচুয়ারিগুলোতে। এবং এক্ষেত্রে ধনী ও অল্প বয়েসীদের প্রাধান্য ছিল।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে মৃত্যু সনদ প্রদানের নিয়ম প্রচলিত আছে, সেটি মৃত্যুর কারণ সনাক্তের তথ্য হিসেবে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিশন ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক (এসক্যাপ) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে: গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলের দেশগুলোতে মাত্র ২৯ শতাংশ মৃত্যুর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে মৃত্যুসনদ দেওয়া হয়েছে।
পেরুর আইডিএল-রিপোর্তেরোসের পরিচালক গুস্তাভো গোরিতি জিআইজেএনকে বলেছেন, তারা এই মৃত্যু সংখ্যা হিসেবের গরমিল ধরতে পেরেছিলেন যখন তাদের রিপোর্টাররা জানতে পারেন, মৃতদেহ সৎকারের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, কয়েকটি বেসরকারি সৎকার-সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে এবং তাদেরকে লাশ সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে বলেছে। কোভিড আক্রান্ত মৃতদেহের সৎকার দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এমন একটি নতুন নীতিমালার কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এই নির্দেশ দিয়েছিল।
অন্তেষ্ট্যিক্রিয়া সম্পন্নের জন্য লাশগুলো হস্তান্তরের সময় পেরুর সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা এসব মৃত্যুর কারণ হাতে হাতে লিখে দিয়েছে। আইডিএল-রিপোর্তোরেসের সাংবাদিকরা কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা জানার জন্য এসব লাশবাহী মানুষদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এবং নতুন কোথাও লাশ আনার খবর পেলেই তার ডেটা সংগ্রহ করেছেন। এভাবে তারা দেখেছেন লিমা ও কালাও শহরের দুটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রতিষ্ঠানে গত ২৬ এপ্রিল কোভিড-১৯ সংশ্লিষ্ট মৃতদেহ এসেছে ১,০৭৩টি। আর এই দুই শহরের জন্য সেদিন কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর আনুষ্ঠানিক সংখ্যা ছিল ৩৩০।
গোরিতি বলেছেন, “আমরা দেখেছি, একটি প্রতিষ্ঠানই বেশি সৎকার করছে। তাদের কর্মীদের বিষন্ন ও হতাশাজনক কাজটি করতে হচ্ছে অনেক বেশি পরিমাণে। আমরা হাতে লেখা নথিতে পাওয়া মৃত্যুসংখ্যা এবং আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানের মধ্যে পার্থক্য খেয়াল করেছি। সেখানে পরিস্কারভাবে অনেক ফারাক আছে।”
তিনি এও যোগ করেছেন: “আমাদের এই অনুসন্ধানের বিষয়টি সরকার ভালোভাবে নেয়নি।”
বাড়তি মৃত্যুর সংখ্যা যাচাই
ব্রিটিশ রোগতত্ত্ববিদ ও অক্সফোর্ড কোভিড-১৯ এভিডেন্স সার্ভিসে কাজ করা ড. কার্ল হেনেগান বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে যে পরিমাণে বেশি মৃত্যু হয়েছে, সেই “বাড়তি মৃত্যুর” ডেটা এই মহামারির সময়ে সাংবাদিকদের কিছু বাড়তি সুবিধা দিতে পারে। কারণ মৃত্যু একটি বাস্তব ঘটনা এবং মৃতদেহগুলোও নির্ভুলভাবে গোনা সম্ভব।
জিআইজেএন-এর একটি সাম্প্রতিক ওয়েবিনারে হেনেগান বলেছেন, ২০২০ সালের কয়েক মাসের মধ্যে বেশি মৃত্যুর সংখ্যা দেখে এমনটা ধরে নেওয়া যাবে না যে, এটি নিশ্চিতভাবেই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত। যেমন, উদাহরণ হিসেবে, ২০১৭-১৮ সালের শীতকালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণ মৃত্যু দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে কোনো মহামারির সংশ্লিষ্টতা ছিল না। তবে মহামারির এই সময়ে যদি কয়েক সপ্তাহ সময়সীমার মধ্যে বেশি মৃত্যুর ঘটনা দেখা যায়, তাহলে সেটি কোভিড-১৯-এর প্রভাবের একটি ভালো নির্দেশক হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন হেনেগান।
এছাড়াও অনেক মানুষ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েও মারা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার যেভাবে লকডাউন ঘোষণা করেছে, তাতে হয়তো অনেকে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাসেবা নিতে পারছে না। ভারতের মুম্বাই ও আহমেদাবাদের মতো কিছু জায়গায় এই মহামারির শুরুর দিনগুলোতে সব মিলিয়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কম মৃত্যু দেখা গিয়েছিল। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ধারণা ছিল, চলাচল সীমাবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সড়ক ও রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়তো কম হয়েছে। এমনকি প্রাণঘাতী অনেক অপরাধের সংখ্যাও কমে গেছে।
বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকভাবে পাওয়া ডেটার বিশ্বাসযোগ্যতা বিভিন্ন রকমের হবে। মোট মৃত্যু ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মৃত্যু; উভয় ক্ষেত্রেই। উন্নয়নশীল দেশগুলোর রিপোর্টাররা তাদের স্থানীয় হটস্পটগুলো অনুসন্ধানের সময়, অন্য কোনো জায়গার নির্ভুল ডেটার গতিপ্রকৃতি কেমন তা সামনে রাখতে পারেন গাইড হিসেবে। যেমন, ইংল্যান্ডে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, বিভিন্ন হাসপাতাল, সেবাকেন্দ্রে নির্ভুলভাবে রেকর্ড করা হয়েছে কোভিড সংশ্লিষ্ট নয়, এমন মৃত্যুর তথ্য। এবং তার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুন, বলেছেন হেনেগান।
“আমাকে যদি কোনো একটা জিনিস করতে বলা হয়, আমি শুরু করব সব ধরনের কারণে হওয়া মৃত্যুর মোট সংখ্যা থেকে। বোঝার চেষ্টা করব কোন দেশে সেটি কিভাবে দেখানো হচ্ছে এবং কিভাবে এই ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে,” বলেছেন হেনেগান। “তারপর সেই সংখ্যাটির তুলনা করব অন্য বছরের সাথে। এখান থেকে আপনি দেখতে পাবেন বাড়তি মৃত্যুর পরিমাণ। তারপর আপনি কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা শুরু করতে পারেন।”
কম-গণনা সামাল দেয়ার উপায়
- শহরের উন্মুক্ত ডেটা পোর্টাল। বিশ্বের অনেক শহরে — এমনকি কিছু উন্নয়নশীল দেশের শহরেও (যার সন্ধান পাবেন এমন তালিকা থেকে) — নিজস্ব ডেটা পোর্টাল আছে, যেগুলো ব্যবহার করে রিপোর্টাররা চিহ্নিত করতে পারেন ঘরে থাকা অবস্থায় মৃত্যু ও অন্যান্য সেবার জন্য করা কলগুলোর বিস্তারিত বিবরণ। ডেট্রয়েট পোর্টাল তার একটি উদাহরণ। অন্য পোর্টালগুলোতে হয়তো ভিন্ন ভিন্ন শব্দের ক্যাটাগরি পাওয়া যেতে পারে। যেমন ক্যাটাগরির নাম থাকতে পারে “মৃত ব্যক্তি সনাক্ত”। এমন তালিকা থেকে রিপোর্টাররা তথ্য বের করে আনতে পারেন। বুয়েনস আইরেস বা সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরের পোর্টালে একটি “ডেটা” প্রিফিক্সও থাকে। এটি মাথায় রাখতে হবে যে, কিছু ক্ষেত্রে সার্চ করার সময় প্রধান শব্দগুলো বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হয়। এবং কিছু শহরের ক্ষেত্রে (যেমন শিকাগো), এই কল ডেটা দেখার জন্য আবেদন করতে হয়।
- কিছু অ্যাপ আছে যেগুলো পুলিশ ও জরুরি চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত কলের অডিও ফিড ব্রডকাস্ট ও আর্কাইভ করে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে, ব্রডকাস্টিফাই রিপোর্টারদের সহায়তা করেছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা সনাক্ত করতে। এমনকি তাদের বাড়ির ঠিকানাও জানা গেছে। অ্যাপটি পরিচালিত হয় ক্রিয়েটিভ কমনস লাইসেন্সের অধীনে।
- “চেইন ল্যাডার” অ্যাকচুরিয়াল টেবিলস। অক্সফোর্ড কোভিড-১৯ এভিডেন্স সার্ভিস জানাচ্ছে, রিপোর্টিংয়ে দেরি হওয়ার কারণেও সরকার ঘোষিত সংখ্যায় মৃত্যুর পরিমাণ কম হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট দিনে কর্তৃপক্ষ কতটা কম মৃত্যুর সংখ্যা জানাচ্ছে, তা রিপোর্টাররা সংশোধন করে দিতে পারেন একটি টুল ব্যবহার করে। আপনি স্প্রেডশিটের এক কলামে নির্দিষ্ট দিনে স্বাস্থ্য বিভাগের ঘোষণা করা মৃত্যর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা রাখুন। তারপর সময়ের সাথে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার হার যোগ করে নিয়ে সঠিক সংখ্যায় পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
- নির্দিষ্ট জায়গায় ও দিনে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে মৃত্যু সংক্রান্ত কী পোস্ট করা হয়েছে, তা জানার ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে টুইটডেক ও হু পোস্টেড হোয়াট।
- অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস সমর্থিত ডেটা ডট ওয়ার্ল্ড প্ল্যাটফর্ম বেশ কয়েকটি দেশের (প্রধানত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে) প্রধান কোভিড-১৯ ডেটাবেজ এক জায়গায় করেছে। সাংবাদিকরা এখানে বিনামূল্যে সব তথ্য দেখতে পারবেন এবং এখানকার নানা ম্যাপ এমবেড করতে পারবেন।
- অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা অনেকদিন ধরেই কাজ করছেন স্যাটেলাইট ইমেজ নিয়ে। এটি ব্যবহার করে আপনি কোভিড-১৯-এর প্রভাব সংক্রান্ত নানা ছবি পেতে পারেন। যেমন গণকবর ও পড়ে থাকা মৃতদেহ। জিআইজেএন-এর এই লেখায় পাবেন স্যাটেলাইট রিসোর্স ব্যবহারের গাইড। এখানে এমন কিছু সার্ভিসের কথাও আছে যারা নিউজরুমগুলোকে স্যাটেলাইট ছবি সরবরাহ করে কোনো খরচ ছাড়াই।
দিনের তাজা তথ্যসূত্র
হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোর বাইরে কী পরিমাণ মৃত্যু হচ্ছে, এ নিয়ে মহামারির গোড়ার দিকে একটি অনুসন্ধান করেছিল প্রোপাবলিকা। তাদের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, নিউ ইয়র্ক সিটি, মিশিগানের কিছু অংশ, ম্যাসাচুসেটস ও ওয়াশিংটন স্টেটে বাড়িতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
তিনজন রিপোর্টারের একটি দল এই কাজের জন্য সংগ্রহ করেছিল স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা, ৯১১ সহায়তা কল ও বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট থেকে সংগ্রহ করা অডিও কলের রেকর্ড। একটি আর্কাইভিং অ্যাপের মাধ্যমেও তারা এই অডিওগুলো শুনেছেন। এখানে তারা খতিয়ে দেখেছেন “ডেড অন সিন” ক্যাটাগরিতে থাকা কলগুলোতে বিশেষ কিছু বলা হয়েছে কিনা। যেমন, “সতর্কতা অবলম্বন করুন।”
জিলাম জানিয়েছেন, অধিক মৃত্যু বিষয়ে আরো কিছু সম্ভাবনাময় সূত্র পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু সময়ের অভাবে সেগুলো ভালোভাবে যাচাই করা যায়নি।
যেমন, ডেটা রেজিস্ট্রির “ফাইনাল ডিসপোজিশন” ক্যাটাগরিতে “মেডিকেল এক্সামিনার” ধরনের কিছু নির্দিষ্ট শব্দের ব্যবহার বেড়ে গিয়েছিল। এগুলো হয়তো আরো বাড়তি কিছু মৃত্যুই ইঙ্গিত করে। কিন্তু সময়ের অভাবে তারা সেগুলো নিশ্চিত করতে পারেননি।
তবে তাদের রিপোর্টিং থেকে সেসব অঞ্চলে কিছু অসঙ্গতি দেখা গেছে। জিলাম বলেছেন, “আমি যদি সান ফ্রান্সিসকো বে অঞ্চলের কোনা স্থানীয় রিপোর্টার হতাম, তাহলে অবশ্যই এই বিষয়গুলোর অর্থ জানার চেষ্টা করতাম।”
অন্যান্য রিপোর্টারদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে আরেকটি বিষয় সামনে এসেছিল। প্রোপাবলিকার সাংবাদিকরা দেখেছিলেন, জরুরি চিকিৎসা সেবা সহায়তা সংক্রান্ত কলের পরিমাণ কোথায় কোথাও সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। তাহলে কি জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ হাসপাতালের ভয়ে বা স্বাস্থ্যকর্মীদের সামনাসামনি হবার ভয়ে ফোন না করাই শ্রেয় মনে করছেন? এবং এই বিষয়টি কি কোভিড সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন অধিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে? এই প্রশ্নগুলোর অনুসন্ধানী উত্তর প্রয়োজন এবং এগুলো অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য বলে মন্তব্য করেছেন জিলাম।
গার্ডিয়ানের আফ্রিকা প্রতিনিধি জ্যাসন ব্রুক বলেছেন, আফ্রিকাতে মৃত্যু সংখ্যার হিসেব নিয়ে অনুসন্ধান করার সময় সাংবাদিকদের দুটি জিনিস মাথায় রাখতে হবে: প্রথমত, আফ্রিকাতে সত্যিই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কম- এমন বর্ণনা মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এবং দ্বিতীয়ত: এই মহাদেশের অনেকেই কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মৃত্যুর কথা স্বীকার করছেন না কারণ আত্মীয়স্বজনের শেষকৃত্যে কোনো বাধাবিঘ্ন আসুক, এমনটা তাদের কাম্য নয়।
“আফ্রিকা নিয়ে এমন ভাবনার প্রতি এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারও সমর্থন আছে যে, আফ্রিকার তরুন জনগোষ্ঠীর আধিক্যের কারণে তারা কোনোভাবে ব্যাপারটি এড়িয়ে যেতে পেরেছে। এগুলো একেবারেই বাজে কথা,” বলেছেন ব্রুক, “এই জাতীয় কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে আফ্রিকান ইউনিয়নের তরফ থেকেও। গত সপ্তাহে তারা একটি বিবৃতিতে বলেছে, টেস্টিংও ঠিকঠাক আছে এবং সংখ্যাগুলোও সব সঠিক আছে। আফ্রিকার রাষ্ট্রগুলো কিভাবে কাজ করে, সে সম্পর্কে খুব অল্প জানাশোনা থাকলেও বোঝা যায় যে বিষয়টি মোটেও এরকম না। সাংবাদিকদের সামনে প্রশ্ন হলো: কিভাবে এই ভুল উপস্থাপনের বিষয়টি তুলে ধরা যায়।”
ব্রুক, আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের আহ্বান জানিয়েছিলেন বিভিন্ন প্রক্সি সোর্স (অ্যাম্বুলেন্স চালক, গোরখোদক, কফিন নির্মাতা) ব্যবহার করে সত্যিকারের মৃত্যু সংখ্যা যাচাই করার জন্য।
বুরকিনা ফাসো, জিম্বাবুয়ে ও বুরুন্ডির মতো কিছু দেশের ক্ষেত্রে মৃত্যু সংখ্যা অনেক কম দেখানো হচ্ছে বলে আশঙ্কা করছিলেন ব্রুক। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) নিয়ে শুরুতে এমন আশঙ্কা থাকলেও পরবর্তীতে তাঁরা দেখেছেন, সমগোত্রীয় অনেক দেশের তুলনায় তাদের তথ্য প্রদানের ব্যবস্থা অনেক ভালো ছিল।
“এখন পর্যন্ত কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত মৃত্যুর চেয়ে খুব বেশি মৃত্যু দেখা যায়নি”, বলেছেন ব্রুক, “তাদের ব্যাপারটি মোকাবিলা করার ব্যবস্থা (বিস্ময়করভাবে) ভালো। এমনও না যে তাদের অনেক ভালো ভালো রোগতত্ত্ববিদ বা সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ আছে বা হাসপাতাল ব্যবস্থা আছে। তারা এটি করতে পারছে কারণ তাদের এরকম পরিস্থিতির মুখে অনেক পড়তে হয়েছে।”
এদিকে নাইজেরিয়ার কানোতে মৃত্যুসংখ্যা নিয়ে অনুসন্ধান করার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে আকিনোটু বলেছেন, তাঁর সহকর্মী মুস্তাফা হোদি কথা বলেছিলেন তিনজন গোরখোদকের সঙ্গে। এদের মধ্যে একজন, মুসা আবুবকর ছিলেন ৭৫ বছর বয়সী। তিনি জানিয়েছিলেন, কবরস্থানের কর্মীদের কেউ কোনো গ্লাভস বা ফেস মাস্ক দেয়নি। এবং তিনি এটাও বলেছিলেন, “এরকম গণমৃত্যুর ঘটনা আমি আগে দেখিনি।” এ ধরনের অনুসন্ধানে স্থানীয় পুরোহিত এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের কাছ থেকে অনেক সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।
আকিনোটু নিজে এই মহামারির কারণে জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞায় লন্ডনে আটকা পড়ে ছিলেন। ফলে অনেক কাজ তাঁকে ফোন করে সারতে হয়েছে। কানোতে থাকা এক ব্যক্তিকে দিয়ে তিনি গোরখোদক ও কবরস্থানের কর্মীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। আকিনোটু বলেছেন, শহরটিতে কোভিড-১৯ পরীক্ষা উপকরণের ঘাটতি থাকায়, সেখানে প্রমাণ হিসেবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।
আগামীতে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আরো অনুসন্ধানের জন্য ফেসবুক মেসেঞ্জার ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন বলে জানিয়েছেন আকিনোটু।
তিনি বলেছেন, “একদম অপরিচিত মানুষদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার ভালো উপায় হতে পারে ফেসবুক মেসেঞ্জার। কিন্তু ভাষাগত সীমাবদ্ধতা সেখানে একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ আমি শুধু ইংরেজি ও উরুবা ভাষায় কথা বলতে পারি।”
রোয়ান ফিলিপ জিআইজেএন-এর রিপোর্টার। দক্ষিণ আফ্রিকার সানডে টাইমসে কাজ করেছেন প্রধান প্রতিবেদন হিসেবে। বিদেশী প্রতিনিধি হিসেবে রাজনীতি, দুর্নীতি ও সংঘাত নিয়ে রিপোর্ট করেছেন বিশ্বের দুই ডজনেরও বেশি দেশ থেকে।