করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে অনুসন্ধান, অনেকটা যুদ্ধ কাভার করার মতোই। এটিই হয়তো আমাদের জীবদ্দশায় কাভার করা সবচে বড় ঘটনা।
তথ্য পাওয়া ও যাতায়াতে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ আছে; নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে; তথ্যের জন্য যাদের কাছে যাওয়া, সেই কর্মকর্তারাও হয়ে পড়েছেন বিচ্ছিন্ন। কিন্তু এত কিছুর পরও, সূত্রনির্ভর অনুসন্ধান এবং প্রক্সি ডেটা ব্যবহার করে রিপোর্ট তৈরির সুযোগ রয়ে গেছে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্যে।
এসব বিষয় নিয়েই পরামর্শ দিয়েছেন সামনে থেকে কোভিড-১৯ সংকট কাভার করা তিন অভিজ্ঞ সাংবাদিক। তাঁদের পুরো আলোচনা পাওয়া যাবে জিআইজেএন-এর ফ্রি ওয়েবিনার সিরিজ, মহামারি অনুসন্ধান-এর প্রথম পর্বে।
গত সপ্তাহে “কোভিড-১৯ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা” শীর্ষক এই ওয়েবিনারে অংশ নিয়েছিলেন ইতালির লেসপ্রেসো-র অনুসন্ধানী সাংবাদিক গ্লোরিয়া রিভা, জিআইজেএন-এর চীনা ভাষা সম্পাদক জোয়ি চি এবং অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি)-র সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ড্রিউ সুলিভান।
৮৬টি দেশ থেকে ৪৫৪ জন সাংবাদিক ও সম্পাদক যোগ দিয়েছিলেন এই ওয়েবিনারে। সরকারের দেওয়া বিভ্রান্তিকর তথ্য, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হুমকি, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুতি – অনুসন্ধানের এমন বেশ কিছু বিষয় নিয়ে তারা সেখানে আলোচনা করেছেন।
গোটা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন
আলোচকদের কাছে, মহামারি নিয়ে অনুসন্ধানের শুরুতেই থাকে নিজ দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে জানা, এবং বোঝা। কী ধরণের জিনিসপত্র কেনা হচ্ছে, দক্ষ জনবল আছে কিনা, সরকারি দরপত্র তৈরি কিভাবে হচ্ছে – এসব বিষয় জানতে হবে। আর জানতে হবে রোগের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও।
“অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে, আমাদের প্রথম কাজ হলো এই পুরো ব্যবস্থাটি সম্পর্কে ধারণা নেওয়া,” বলেছেন সুলিভান। “এই ভাইরাস নিয়ে শুরুর দিকে যেসব রিপোর্টিং হয়েছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে, অসুখটি কিভাবে কাজ করে, তা রিপোর্টাররা ভালোমতো জানেন না। ফলে তারা নানাভাবে বিভ্রান্ত হয়েছেন। আপনাকে আগে শিখতে হবে, এবং তারপর ভালো সোর্স তৈরি করতে হবে।”
বিশ্বের রিপোর্টারদের জন্য সাহস জোগানোর মতো তথ্য দিয়েছেন চি। শারিরীক স্বাস্থ্যঝুঁকি, তথ্যের অপ্রতুলতা সত্ত্বেও এই মহামারির সময় কোভিড-১৯-এর উৎপত্তিস্থল, চীনে দেখা গেছে বেশ কিছু মানসম্পন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
রিপোর্টাররা ব্যক্তিগতভাবে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নানা জ্ঞান দিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করে নিয়েছিলেন। সূত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যবহার করেছেন সৃজনশীল সব পন্থা। তখন চীনা কর্তৃপক্ষ নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করেছিল। সাংবাদিকরা এই সুযোগটিও খুব ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছেন।
দশকের সেরা স্টোরি
একদিকে যখন মহামারি, তখন অন্যদিকে মানুষের ভয়কে কাজে লাগিয়ে টাকা কামানোর জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। রিভা জানিয়েছেন, ইতালিয়ার মাফিয়া গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে সেখানকার সরবরাহ চেইনে প্রবেশের জন্য। সুলিভান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, “আরো অনেক জায়গায় প্রতারণা ও দুর্নীতির এমন ঘটনা ঘটে চলেছে।”
সুলিভানের মতে, এসব ঘটনার পরিণতি পুরোপুরি বুঝে উঠতে হয়তো দুই বছর বা তারো বেশি সময় লেগে যাবে। তিনি এজন্য রিপোর্টারদের ব্যাপকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন: “এটা এই দশকের সবচে বড় ঘটনা। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জন্য বিষয়টি নিয়ে কাজ করা কঠিন। সাদাচোখে মনে হতে পারে এতো প্রতিদিনকার ঘটনা। কিন্তু আসলে যা যা ঘটছে তা, একসময় বড় অনুসন্ধানের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।”
“কোভিড-১৯ কাভার করা, যুদ্ধ কাভার করার মতোই। যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো এখানেও [সরাসরি] সূত্র পাবেন কম। এখানে একটা শত্রুপক্ষ আছে, নির্দিষ্ট সময়ের বিশৃঙ্খলা আছে… আর এটা খুব বিপদজনকও বটে। সতর্ক না থাকলে আপনি মারাও পড়তে পারেন। এই যুদ্ধের সম্মুখ সারিতে যাওয়াও বেশ কঠিন। তাই, আমার যেসব সহকর্মী ব্যতিক্রমী কাজ করে চলেছেন, তাদেরকে অভিনন্দন।”
ডেটার সংকট উৎরে যাবেন যেভাবে
বর্তমান পরিস্থিতিতে রিপোর্টারদের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো নির্ভরযোগ্য তথ্যের অভাব। স্বাস্থ্যসেবা হোক, বা আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা – তথ্যের ঘাটতি আছে সবখানেই।
এমন অবস্থায় একটি তথ্যকে অন্য আরেকটি সূচকের সাপেক্ষে তুলনা করে দেখানোর কথা বলেছেন রিভা। যেমন, একটি দেশে কতগুলো আইসিইউ বেড আছে, তা তুলনা করে দেখানো যেতে পারে জার্মানিতে কী পরিমাণ আছে, তার সাপেক্ষে। ফলে বিষয়টি পাঠকের বুঝতে সুবিধা হবে। কত জন রোগীর সাপেক্ষে কতজন চিকিৎসক-নার্স আছেন – বিশ্লেষণ হতে পারে এমনও। রিভার মতে, “আদর্শ হলো, প্রতি পাঁচজন রোগীর বিপরীতে একজন নার্স, এবং প্রতি আটজন রোগীর বিপরীতে একজন ডাক্তার। ইতালিতে, প্রতি ১৫ জনের বিপরীতে একজন নার্স আছে। [এই মহামারিতে] চিকিৎসকের চেয়ে নার্সরাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।”
রিভা জানান, অনেক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছে। তবে ভালো দিক হচ্ছে, নার্স ও ডাক্তাররা কথা বলতে চান। বিশেষত, তাদের ব্যক্তিগত ট্রমা ও প্রয়োজনীয় উপকরণের স্বল্পতা নিয়ে। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ইউনিয়ন এক্ষেত্রে একটি উপকারী সোর্স হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন রিভা।
সুলিভান বলেছেন, যেসব জায়গায় ভাইরাস সংশ্লিষ্ট ডেটা পাওয়া যাচ্ছে না, সেসব জায়গায় রিপোর্টাররা একটি হাসপাতালের চলতি মাসের উপকরণ ক্রয় ও ব্যয়ের পরিমান তুলনা করতে পারেন মহামারির আগের কোনো মাসের সঙ্গে। এতে পাঠক পার্থক্যটা বুঝতে পারবে।
চি যোগ করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব। তার মতে, মহামারি নিয়ে অনুসন্ধানে এটি হয়ে উঠতে পারে সাংবাদিকদের জন্য একটি বড় টুল। তিনি বলেছেন, “মানুষ সিনা উইবো-তে [চীনের টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া] সাহায্য চেয়ে পোস্ট দিয়েছে। আপনি তাদের কাছে সরাসরি বার্তা পাঠাতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি অন্যান্য সংবাদমাধ্যম ও সামনের সারিতে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গেও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারেন।”
রিপোর্টারদের ঘোরাঘুরির ওপর সীমাবদ্ধতা আসায় এবং ভাইরাসটি ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়ায়, “প্রতিদ্বন্দ্বী” সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে সহযোগিতামূলক কাজের পরিধি বাড়ানোর কথা বারবার এসেছে ওয়েবিনারে।
সূত্রনির্ভর অনুসন্ধান
ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া একাধিক সাংবাদিক একটি অভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন: স্বৈরতান্ত্রিক সরকার পরিচালিত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সাংবাদিকরা কোনো তথ্য পাচ্ছেন না। অথবা আক্রান্তের সংখ্যা বা উপকরণের পরিমাণের মত বিষয়ে ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে।
লাইবেরিয়ার এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশে তথ্য-প্রবাহে এতোটাই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে যে, “সেখানকার অনেক নাগরিক মনেই করেন না, তাদের দেশে ভাইরাসটি আছে।” ওয়েবিনারে অংশ নেওয়া আরেক সাংবাদিক লিখেছেন, আইসোলেশন সেন্টার ও হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নাইজেরিয়ার সরকার। মিশরের এক সাংবাদিক বলেছেন, “আমাদের মনে হয় সরকার অনেক তথ্য গোপন করছে।”
এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে, হাসপাতাল ও সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সোর্স তৈরি করতে পারে বলে মত দিয়েছেন আলোচকরা।
সুলিভানের মতে, এসব ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা আন্তর্জাতিক ডেটাবেজগুলো থেকে তথ্য চাইতে পারে। এছাড়াও সরকারি তথ্যের ঘাটতি থাকলে বিকল্প পথে তথ্য পাওয়ার উপায় খোঁজা যেতে পারে। যেমন, হঠাৎ মৃত্যুহার বেড়েছে কিনা, তা জানার জন্য রিপোর্টাররা কফিন প্রস্তুতকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, বা মৃত্যুসনদ ঘেঁটে দেখতে পারেন।
আর যেহেতু উন্নয়নশীল অনেক দেশ বিদেশী অনুদান পেয়ে থাকে, রিপোর্টাররা সেক্ষেত্রে বিদেশী দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন – এই অর্থ কিভাবে খরচ হয়েছে, তা জানার জন্য। এ সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদন বা নিরীক্ষা আছে কিনা, খুঁজে দেখতে পারেন।
অনুসন্ধানের পরিকল্পনা
ওয়েবিনারে আরেকটি বিষয়ে জোর দিতে বলেছেন আলোচকরা। তা হলো: কী ধরণের তথ্য পাওয়া যাবে, সেই ধারণার ভিত্তিতে অনুসন্ধানের সময়সীমা ঠিক করে নেয়া।
যেমন, এখন চাইলে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অনুসন্ধান খুব দ্রুত করে ফেলা সম্ভব। কারণ মাস্ক বা স্যানিটাইজার, অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। সুলিভান অবশ্য এক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সামান্য মূল্যবৃদ্ধি মানেই যে অনৈতিক দাম বাড়িয়ে দেওয়া; তা নাও হতে পারে। পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থার কারণে হয়তো তাদের পণ্য কিনতেও বেশি খরচ হচ্ছে।
তবে, সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র যেসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে, তা খুঁজে বের করতে সময় প্রয়োজন। রিভা বলেছেন, আগামী মাসগুলোতে মাফিয়া চক্র কী করে, তা নজরে রাখছে তাঁর দল। বৈধ কোম্পানির আড়ালে তারা কী করে যাচ্ছে, তার ধরণ বোঝা যাবে ডেটা আসতে শুরু করলেই।
সুলিভানের মতে, নির্বাচনী আইন পরিবর্তন বা রাজনৈতিক অনিয়ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্যও এই বৈশ্বিক মহামারিকে ব্যবহার করা হতে পারে। তিনি মনে করেন, বিষয়টি আগামীতে অনুসন্ধানের দাবি রাখে।
স্বল্পমেয়াদে, তথ্য সংগ্রহের কৌশল ঠিক করার ক্ষেত্রে নথিপত্রের চেয়ে তিনি জোর বেশি দিয়েছেন মানুষের কথাতে।
সুলিভান ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “ডেটা নিয়ে কাজ খুব জটিল। অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিবেদনের উপসংহারের জন্য আপনাকে নির্ভর করতে হবে কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণাপত্রের ওপর। সাংবাদিকতাসুলভ কোনো ডেটা বিশ্লেষণ দিয়ে এটি সম্ভব না। ব্যাপারগুলো অনেক জটিল। আর আমাদের বিজ্ঞানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। আমরা সবসময়ই হাতের কাছে জরুরি নথিপত্র পাব না। হয়তো সেটা পাওয়া যাবে অনেক পরে গিয়ে।”
“কিন্তু মানুষ যখন মরতে বসে, তখন সে বিক্ষুব্ধ হয়। আর মানুষ বিক্ষুব্ধ হলে কথা বলে। অফিসে নয়, মানুষ যখন বাড়িতে থাকে, তখন তাদের সঙ্গে কথা বলার মোক্ষম সময়। বর্তমান পরিস্থিতিতে, সাংবাদিক হিসেবে আমাদের সূত্র-নির্ভর হয়ে উঠতে হবে। এমন মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যাদের বিষয় সম্পর্কে জানাশোনা আছে।”
টাকার পেছনে
ওয়েবিনারে দর্শক-শ্রোতা হিসেবে যোগ দেয়া সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল ডেটাপ্রাপ্তি, চীনে সংবাদমাধ্যমের ওপর দমনপীড়ণ, ভুয়া তথ্য ও রিপোর্টাররা কিভাবে চুক্তি বা কেনাকাটা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নজরে রাখতে পারেন, তা নিয়ে।
আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে প্রতিবেদন তৈরির বিরুদ্ধে সবাইকে সতর্ক করে সুলিভান বলেছেন, “কিভাবে অসুখটি ছড়ালো বা কোন ব্যক্তি একটা নির্দিষ্ট জায়গায় এটি ছড়িয়েছে, এই জাতীয় প্রতিবেদনের ফাঁদ থেকে দূরে থাকুন। এসব প্রতিবেদন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্বেষ তৈরি করে, অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ার জন্য মানুষকেই দোষারোপ করে।”
“সরকার কিভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছে, এটিই সবচে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কিছু দেশ কত বাজেভাবে ব্যাপারটি মোকাবিলা করছে, তার পুরো চিত্র আমরা এখনো দেখিনি। কারণ সেসব জায়গায় ভাইরাসের বিস্তার এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু আগামী দুই মাসে আমরা দেখতে পাব, অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। তখন সেসব দেশের সরকার, ইতিহাসের এই ভাষ্য বদলাতে চাইবে। তারা তখন অন্যরকম ভাষ্য তৈরি করবে অভ্যন্তরীণ প্রচারণার মাধ্যমে।”
চি অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেছেন, এই সংকটে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে চীনের সংবাদমাধ্যমগুলো বেশ কিছু মানসম্পন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এমনটি তিনি গত এক বছরেও দেখেননি। এটি সম্ভব হয়েছে সাংবাদিকদের সাহস ও রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে কিছুটা শিথিলতার কারণে।
চি জানিয়েছেন, এসব অনুসন্ধানের অনেকগুলোই শুরু হয়েছে ছোট শহর ও চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে। সেখানেই অনেক রোগী এসেছেন চিকিৎসার জন্য। “সাংবাদিকরা প্রায়ই বড় বড় শহর ও হাসপাতালের দিকে তাকিয়ে থাকেন। কিন্তু আপনি গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য পেতে পারেন ছোট ক্লিনিক বা শহর থেকে,” বলেছেন চি। “জ্বরে আক্রান্ত হলে মানুষ সাধারণত ছোট স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রেই যায়। ফলে সেখান থেকে আপনি পেতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।”
ওয়েবিনারের আলোচনা থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকে পদ্ধতিগত ও গভীরভাবে নজর দেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো: বিপুল পরিমাণ অর্থ চলাচল হচ্ছে, কিন্তু সেই পরিমাণ মানুষ চলাচল হচ্ছে না। সুলিভান বলেছেন, এটি নিয়ে অনুসন্ধানের একটি উপায় হলো: দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি, এমন দেখানোর জন্য সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর যন্ত্রপাতি উপকরণ কিনছে কিনা, সেদিকে নজর রাখা।
সুলিভান বলেছেন, “আমাদের অবশ্যই এই ইস্যুতে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি অনুসরণ করতে হবে। বিভিন্ন দেশের সরকার বড় পরিমাণে চিকিৎসা উপকরণ কিনছে। কিন্তু সবসময়ই তারা সেই পরিমাণ চিকিৎসা উপকরণ পাচ্ছে না।”
“সহায়তার নামে যে অর্থ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো কোথায় যাচ্ছে? দাতাদের কাছ থেকে যেসব সহায়তা আসছে, সেগুলো সম্পর্কে তাদের কাছ থেকেই খোঁজখবর নেওয়া যেতে পারে। অনেক অর্থের ব্যাপারে নতুন করে বাজেট তৈরি হচ্ছে। এই অর্থ কোন বিভাগগুলো পাচ্ছে? আপনি হয়তো দেখবেন যে, এই অর্থের একটা বড় অংশ স্বাস্থ্য খাতে না গিয়ে, যাচ্ছে প্রচারণা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।”
রোয়ান ফিলিপ বেশ কয়েকটি পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক। কাজ করেছেন দুই ডজনের বেশি দেশে। এখন তিনি থাকেন বস্টনে। ১৫ বছর ধরে তিনি কাজ করেছেন সাউথ আফ্রিকা সানডে টাইমসের প্রধান রিপোর্টার ও লন্ডন ব্যুরো প্রধান হিসেবে।