মোদির ভারত থেকে শুরু করে, বোলসোনারোর ব্রাজিল কিংবা ট্রাম্পের আমেরিকা – বিশ্বের বড় বড় গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে জনতুষ্টির জাতীয়তাবাদ ক্রমেই জেঁকে বসছে। চরম ডিজিটাল বিশৃঙ্খলা, গণ-অভিবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবের এই যুগে এসে, কর্তৃত্ববাদী শাসনের নানান চর্চায় মেতে উঠেছেন আরো অনেক দেশের নির্বাচিত নেতারা।
ভারত, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, ইতালি, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদী শাসকেরা একই ছক ধরে কিভাবে সরকার পরিচালনা করছেন – তারই উপাখ্যান তুলে ধরেছেন এই সাতটি দেশ থেকে আসা সাংবাদিকরা। তারা প্রকল্পটির নাম দিয়েছেন “গণতন্ত্রের সর্বনাশ: কর্তৃত্ববাদী ছক” (ডেমোক্রেসি আনডান: দ্য অথরিটারিয়ান’স প্লেবুক)।
জাতীয়তাবাদী এই নেতারা একে অপরের সাথে গভীরভাবে সংযুক্ত। তাদের বক্তব্যে আছে দারুন মিল, কর্মকৌশলও প্রায় একই। ক্ষমতায় আসার পদ্ধতি, নিজ মতাদর্শকে অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয়া বা নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়ন – সব কিছুই যেন একটি ছকে বাঁধা। আর এই মিল-অমিল বিশ্লেষণ করেই কর্তৃত্ববাদের প্লেবুক বা নাট্যরূপটি তৈরি করেছেন গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলোদের দলটি। অবশ্য তার মানে এই নয়, প্রতিটি দেশেই কর্তৃত্ববাদী শাসন বিরাজ করছে। বরং তারা বলতে চেয়েছেন, প্রতিটি দেশের নেতারাই এমন আচরণ করছেন বা এমন দিকে ঝুঁকে পড়ছেন, যার পরিচিতি জনতোষী জাতীয়তাবাদ নামে। আর ইতিহাস সাক্ষী, এই প্রবণতা একসময় কর্তৃত্ববাদী শাসনে রূপ নেয়।
গণতন্ত্র নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞজনেরা বলছেন – দেখে মনে হচ্ছে চীন, রাশিয়া, সৌদি আরবসহ শীর্ষ কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রের খাতায় তারাও নাম লেখাতে চাচ্ছেন, যা গণতন্ত্রই শুধু নয় বরং বিশ্বব্যবস্থাকেই বদলে দেবে।
নাটকের ছকে প্রধান অঙ্কগুলো যেমন:
ভয়কে অস্ত্র বানানো — সহিংসতাকে স্বাগত জানানো হয়। বেশি বেশি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়। সমালোচনাকারীরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, যদি তারা কোনো কিছুর বিরোধিতা করেন, তাহলে ঝুঁকির মুখে পড়বেন।
বিদেশীদের লক্ষ্য বানানো — অভিবাসী ও বিদেশীদের হুমকি হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে জাতিবিদ্বেষ ছড়ানো হয়। অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যার দায় চাপানোর জন্য বলির পাঁঠা বানানো হয় বিদেশীদের। এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা এসব কল্পিত শত্রুদের প্রতি সহানুভূতিশীল- এমন ধারণা প্রচার করা হয়।
প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল করে তোলা — আদালতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া হয়। চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের সিস্টেম বাদ দেওয়া হয়। নির্বাহী ক্ষমতা কমিয়ে আনে এমন আইন ও চুক্তি বাতিল করা হয়। স্বাধীন ও সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যেসব সুরক্ষাব্যবস্থা থাকে, তা দুর্বল করে দেওয়া হয়।
নতুন করে ইতিহাস লেখা — শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের মাধ্যমে জনগণকে নতুন ধরনের শিক্ষাদীক্ষা দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে এমন বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যাতে স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতা আরো পাকাপোক্ত হয়।
স্বার্থ হাসিলে ধর্মের ব্যবহার — ধর্মীয় সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য ও প্রশ্রয় দেওয়া হয়। একইসঙ্গে শিকার বানানো হয় সংখ্যালঘুদের। জাতীয় পরিচয়ের সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়ের সংযোগ ঘটানো হয়।
বিভাজন ও শাসন — বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য ব্যবহার এবং সহিংসতা উস্কে দেওয়ার মাধ্যমে বিদ্যমান সামাজিক বিভাজনগুলো আরো বড় করা হয় এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সংকট তৈরি করে আরো ক্ষমতা দখল করা হয়।
সত্যের ভিত নড়বড়ে করে দেওয়া — সংবাদমাধ্যমকে “জনগণেরর শত্রু” বলে আক্রমণ করা হয়; নেতিবাচক সংবাদকে “ফেক নিউজ” বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়; যুক্তিযুক্ত কোনো কথার জবাবে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয় ভুয়া বা “বিকল্প তথ্য” দিয়ে। একের পর এক স্ক্যান্ডাল ও পরস্পরবিরোধী ঘটনা সামনে এনে গণমাধ্যমকে এমনভাবে ব্যতিব্যস্ত রাখা হয়, যাতে তাদের সামলে ওঠার ক্ষমতা পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে।
এই প্লেবুকের বৈশ্বিক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তির উদাহরণ? স্টিভ ব্যানন। সাবেক এই নৌ কর্মকর্তা পরবর্তীতে গোল্ডম্যান স্যাকসের ব্যাংকার, ডানপন্থী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, ট্রাম্পের পরামর্শক ও কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পর্ষদ সদস্য হয়েছেন।
ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার অনেক পপুলিস্ট পার্টির মধ্যে ব্যাননের প্রভাব খুব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। তিনি এটিকে ডাকেন “আন্দোলন” হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ভারত ও ফিলিপাইনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে একাই বড় ভূমিকা রেখেছে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বিপুল পরিমাণ ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে, বেছে বেছে প্রচারণা চালানো হয়েছে ভোটারদের মনোভাব বদলের জন্য। যেন নির্বাচনের ফলাফল পপুলিস্ট প্রার্থীদের পক্ষে যায়। এই কাজ যে খুব উন্নত অ্যালগরিদম ছাড়া হবে না, এমনও নয়। টাকার বিনিময়ে বা বিনামূল্যে অনেকেই এমন ভুয়া তথ্যের প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে। এবং এগুলোর ফলে মানুষের মনোভাব বদলে গেছে। এই কাজ একসময় সরকারি এজেন্সি ও বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলো ছাড়া আর কেউ করার কথা ভাবত না।
এই প্লেবুক প্রয়োগের আরেকটি উদাহরণ? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই। এই প্রজেক্টে যে ছয়জন নেতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের সবার সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন ট্রাম্প। এর বাইরেও আছেন তুরস্কের রিসেপ এরদোয়ান, সৌদি আরবের সালমান, মিশরের আবদেল ফাত্তা এল-সিসি, ফিলিপাইনের রদ্রিগো দুতের্তে, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন এবং অবশ্যই, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনের মতো স্বৈরশাসক।
হিউস্টনে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে “হাউডি মোদি” র্যালি করেছেন ট্রাম্প। ব্রাজিলে নির্বাচন জেতার পরপরই জাইর বোলসোনারোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজে। এগুলো থেকে বোঝাই যায়, বিশেষ এক ধরনের নেতৃত্বের প্রতি তার পক্ষপাত আছে।
বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রেও, এসব কর্তৃত্বপরায়ন নেতাদের সঙ্গে অভূতপূর্ব সখ্যতা গড়ে তুলেছেন ট্রাম্প। যেমন, তিনি তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি করেছেন উত্তরপূর্ব সিরিয়ায় সেনা অভিযানের বৈধতা দিয়ে। এর ফলে আমেরিকার দীর্ঘদিনের মিত্র কুর্দিরা গভীর বিপদের মুখে পড়ে গেছে। এবং সেখানে বেশি সুবিধা পেয়েছে রুশ ও সিরিয়া সরকার। সাংবাদিক জামাল খাশোজি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সৌদি সরকারের ভূমিকাও অগ্রাহ্য করেছেন ট্রাম্প। একই সময়ে তিনি সেখানে পাঠিয়েছেন আরো হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য।
২০১৮ সালের বই, “হাউ ডেমোক্রেসি ডাই”-তে ট্রাম্প ও তার মিত্রদের এসব কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করেছেন স্টিভেন লেভিৎস্কি ও ড্যানিয়েল জিব্লাট। সেখানে তারা বলেছেন, “স্বৈরশাসকের লিটমাস টেস্টে” তিনি উৎরাতে পারেননি।
চারটি শর্তের বিবেচনায় এই রায় দেওয়া হয়েছে:
- গণতান্ত্রিক শাসনের রীতিনীতি অগ্রাহ্য (বা সেটি রক্ষায় দুর্বলতা দেখানো)
- রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের আইনি বৈধতাকে অস্বীকার করা
- সহিংস পরিস্থিতিকে প্রশ্রয় দেওয়া বা সেটি আরো উস্কে দেওয়া
- প্রতিপক্ষের (যার মধ্যে সংবাদমাধ্যমও আছে) নাগরিক অধিকার কমিয়ে আনার জন্য প্রস্তুত থাকা
লেভিৎস্কি ও জিব্লাটের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্প হলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি চারটি শর্তই পূরণ করেন। এর আগের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে কেবল রিচার্ড নিক্সন একটি শর্ত পূরণ করেছেন।
লেখক ও গবেষক সারাহ কেনজিওর ভাষায় “কর্তৃত্ববাদী চুরিতন্ত্র” নামের এই ব্যবস্থার অধীনে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের সুবিধা নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু নেতা ও তাদের প্রশ্রয় পাওয়া ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আরো সম্পদশালী হয়ে ওঠেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর তাদের ক্রমাগত আক্রমনের কারণে অন্য দমনমূলক শাসনের খবর চাপা পড়ে যায়। (ক্লেপটোক্রেসি বা চুরিতন্ত্র হলো সেই ব্যবস্থা যেখানে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে রাষ্ট্রের সম্পদ লোপাট করে।)
একটি উদাহরণের কথা উল্লেখ করি। সিরিয়ার স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদন মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, তার সরকার ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সেদনায়া কারাগারে ১৩ হাজারের কাছাকাছি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রেসিডেন্ট আসাদ এটি উড়িয়ে দিয়েছেন এই বলে, “আজকাল যা ইচ্ছা তাই বলা যায়। আমরা এখন বাস করছি মিথ্যা সংবাদের যুগে।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মেক্সিকান রাষ্ট্রদূত আর্তুরো সারুকান যেমনটি টুইটারে বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র যে অবস্থায় থাকে, তার প্রভাব পুরো বিশ্বে পড়ে। ট্রাম্প এই গণতন্ত্র যত দূর্বল করবেন, পুরো বিশ্বেও তার প্রভাব দেখা যাবে।”
গণতন্ত্র এমনিতেই নড়বড়ে অবস্থায় থাকে। এবং এটিকে ভেতর থেকেও আরো দুর্বল করে তোলা যায়। অর্থনৈতিক অসন্তোষ ও সমাজে বিদ্যমান নানা পক্ষপাত থেকে শক্তি সঞ্চয় করা পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদী কর্তৃত্বপরায়ন নেতাদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রবণতা দেখা যায়। তা হলো: নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে তারা ক্ষমতা কাঠামো বদলে দেন নাটকীয়ভাবে। এবং চালু করেন অনেকের ওপর অল্প কয়েকজনের শাসন। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, জন-ওয়ার্নার মুলার এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন তার ২০১৬ সালের বইয়ে: হোয়াট ইজ পপুলিজম?
মুলার লিখেছেন, “আভিজাত্য-বিরোধী হওয়ার পাশপাশি বৈচিত্র্যেরও বিরোধিতা করে পপুলিস্টরা। তাদের দাবি অনুসারে, শুধুমাত্র তারাই গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন।”
রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন গ্রহণের সময় ট্রাম্প যেমন বলেছিলেন, “কেউই এই সিস্টেমটা আমার চেয়ে ভালো বোঝে না। এ কারণে শুধু আমিই এটি ঠিক করতে পারি।”
কিন্তু এধরণের যুক্তির গভীর অর্থ দাঁড়ায়: রাষ্ট্র যে সুরক্ষা ও সম্পদ দিচ্ছে, তাতে কতিপয় গোষ্ঠীর দাবি বেশি।
কর্তৃত্বপরায়ন সরকারগুলো সব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার কপট আবরণটিও আর রাখছে না। ফলে গণহারে দমনপীড়ন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর শাসন বাড়ছে। এমন নতুন নতুন আইন করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে কমছে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বাধীনতা। সহিংসতা, অর্থনৈতিক দুর্বলতা ও জলবায়ু সংকটের কারণে অনেক জায়গাতেই অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মানুষকে উচ্ছেদ হতে হচ্ছে। এই ব্যাপারগুলো কর্তৃত্বপরায়ন শাসনের প্রক্রিয়াকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে আবার এই একই নেতারা অস্বীকার করছেন জলবায়ু পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক মতকে।
গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো সৌম্য শঙ্কর, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এই লেখায় বলেছেন, ভারতের সবচে উগ্রপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে। কারণ দুই পক্ষই মুসলিমদের ঘৃণা করে।
ম্যাসাচুসেটস-আমহার্স্ট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা থেকে দেখা যায়: নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও শিখদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ সহিংসতার পরিমাণ ব্যাপক আকারে বেড়েছে। নাটকীয় কিছু সিদ্ধান্তের কারণে জম্মু ও কাশ্মীর আরো সহিংস হয়ে উঠেছে। মুসলিম-প্রধান এই অঞ্চলে এখনো নিয়ন্ত্রণ জারি আছে।
সাংবাদিক কাশিফ-উল হুদা, গ্রাউন্ডট্রুথের শঙ্করকে বলেছেন, “মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে, মানুষ জানে যে, তারা সহিংসতা করেও পার পেয়ে যাবে। এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও তারা আরো প্রকাশ্যে ইসলামোফোবিক আচরণ করছে। অন্যদিকে কট্টর মোদি সমর্থকরা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও শঙ্করের মতো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চালাচ্ছে অনলাইনে হয়রানিমূলক প্রচারণা।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের তৎকালিন রাষ্ট্রদূত হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা গত সেপ্টেম্বরে সাক্ষাৎ করেন স্টিভ ব্যাননের সঙ্গে। ব্যাননের একটি ছবি পোস্ট করে তার পরিচয় দিয়েছিলেন “কিংবদন্তীতূল্য তাত্ত্বিক ও ধর্ম যোদ্ধা” হিসেবে। ব্যাননও যে হিন্দু ধর্মের কিছু বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা রাখেন, সেই বিষয়টির দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শ্রিংলা।
ব্রাজিল থেকে, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো লেটিসিয়া দুয়ার্তেও রিপোর্ট করছেন একই রকম সহিংস জাতীয়তাবাদী উত্থানের কথা। প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর নেতৃত্বে সেখানে কোনো বাছবিচার ছাড়াই হামলার লক্ষ্য বানানো হচ্ছে প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ, অ্যামাজনের আদিবাসী জনগোষ্ঠী বা সাংবাদিকদের।
ট্রাম্পের মতো, বোলসোনারোও সংবাদমাধ্যমকে অভিহিত করেছেন “জনগণের শত্রু” হিসেবে। তারও ব্যাননের মতো একজন পরামর্শক আছেন, ওলাভো ডি কারভালহো নামে। ভোটে জেতার জন্য যে ধরনের ভাষ্য ও অনলাইন জনপ্রিয়তা দরকার, এই ব্যক্তি তা গড়ে দিয়েছিলেন বোলসোনারোকে।
গত মার্চে, ওয়াশিংটন ডিসিতে, ট্রাম্প ও ব্যাননের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ওলাভো। ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত আয়োজিত এক নৈশভোজে বোলসোনারো বলেছিলেন, তাঁর স্বপ্ন “ব্রাজিলকে দুষ্ট বামপন্থী আদর্শ থেকে মুক্ত করা।” এসময় তিনি ওলাভোর দিকে চোখ ফিরিয়ে বলেছিলেন, “এখন আমরা যে বিপ্লবটির মধ্যে আছি, তার জন্য আমরা অনেক ক্ষেত্রে এই মানুষটির কাছে ঋণী।”
গত আগস্টে ওলাভোকে দেওয়া হয় ব্রাজিলের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক কূটনৈতিক পুরস্কার। সেখানে ওলাভো গর্ব করে বলেছিলেন, “ব্রাজিলের সংস্কৃতির ওপর সরকারের চেয়ে আমার প্রভাব অনেক বেশি। আমি ব্রাজিলের সাংস্কৃতিক ইতিহাস বদলে দিচ্ছি। সরকার যায়-আসে। কিন্তু সংস্কৃতি থেকে যায়।”
গত মে মাসে কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার সাবেক কর্মী ক্রিস্টোফার ওয়েলি বলেছিলেন, “আমেরিকান রাজনীতিতে পাকাপাকি পরিবর্তন আনার জন্য সাংস্কৃতিক যুদ্ধকে একটি উপায় হিসেবে দেখেছিলেন ব্যানন।” ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়, ওয়েলি, কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ভেতর থেকে দেখেছেন, কিভাবে কোম্পানিটি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ডেটা দিয়ে ট্রাম্পের জন্য বিশেষ সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন তৈরি করেছে; যা ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে।
শার্লোটস্ভিলে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের সহিংস র্যালির (যেখানে একজন বিক্ষোভকারী মারা গিয়েছিল) পর ট্রাম্পের পরামর্শক পদ ছেড়ে দেন ব্যানন। তার পরপরই তিনি দৃষ্টি ঘোরান ইউরোপের দিকে। খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ শুরু করেন হাঙ্গেরির অরবান ও ইতালির ডানপন্থী নেতা মাতিও সালভিনির সঙ্গে। কিছু দিন আগেও দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ দখলে রেখেছিলেন সালভিনি।
গত মার্চে এল পাইসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যানন বলেছিলেন, “সালভিনির সাথে আমার খুব ব্যতিক্রমী একটা সম্পর্ক আছে। আমার মনে হয়, তিনি ও ভিক্টর অরবান এখন ইউরোপের সবচে গুরুত্বপূর্ণ দুই রাজনীতিবিদ। তারা দুজনেই পশ্চিমের ইহুদি-খ্রিস্টান সংস্কৃতির ধারণাকে সমর্থন করেন। এমনকি ট্রাম্পের চেয়েও বেশি। একই কথা খাটে ভক্সের [স্পেনের ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল] ক্ষেত্রেও। পারিবারিক ঐতিহ্য, সমাজের ধরণ, সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদের বিরুদ্ধে লড়াই; ইত্যাদির ক্ষেত্রে তাদের অবস্থানও কাছাকাছি। মনে রাখতে হবে: এই আন্দোলনটি জনতুষ্টিবাদী, জাতীয়তাবাদী ও ট্রাডিশনালিস্ট। এবং বোলসোনারো ও সালভিনি এর সেরা প্রতিনিধিত্বকারী।”
উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সেগুলোর ধারকবাহক প্রতিষ্ঠানগুলির বিরুদ্ধে একটি পালাবদল হচ্ছে। আর ব্যানন ও তার মিত্ররা সেখানে দারুনভাবে সাফল্য পাচ্ছেন। ব্যাননের “সাংস্কৃতিক যুদ্ধ” এখন হয়ে উঠছে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক মডেল।
মোদি, বোলসোনারো, অরবান, কাজিনস্কি ও ট্রাম্পের মতো নেতারা গণতান্ত্রিকভাবেই নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এই পপুলিস্ট কর্তৃত্বপরায়ন শাসকরা গণতন্ত্রের হাতলগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সেটিকে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন। যারা আরো বৈচিত্র্যপূর্ণ বিশ্বের ধারণায় বিশ্বাস করেন, এবং এই পপুলিস্ট জাতীয়তাবাদের উত্থান মোকাবিলা করতে চান; তাদের উচিৎ হবে, শুরুতেই এই “কর্তৃত্ববাদী প্লেবুক” পড়ে ফেলা।
কর্তৃত্ববাদ কাভার করার টিপস
সরকারী নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং জটিল সব নীতিমালা নিয়ে রিপোর্টিং করা, এমনিতেই কঠিন। কিন্তু যখন নিজ দেশের নেতাদের কারণেই গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে, তখন এটি আরো কঠিন, এমনকি বিপজ্জনকও হয়ে পড়ে। এ ধরনের সোর্সের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে তাই সাংবাদিকদের আরো করিৎকর্মা হতে হবে, প্রস্তুতি নিতে হবে। মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রেও আরো সতর্ক হতে হবে, তা অনলাইন হোক বা সামনাসামনি।
এই বিষয়গুলোই আমাদের মাথায় ছিল, যখন আমরা আটজন সাংবাদিককে সাতটি দেশে পাঠিয়েছিলাম রিপোর্টিংয়ের জন্য। তারা সেখান থেকে রিপোর্টিং করে দেখিয়েছেন: কিভাবে গুটিকতক নেতা একই ছক অনুসরণ করে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তুলছেন। অথচ এই গণতন্ত্রের মাধ্যমেই তারা নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আমাদের ফেলোরা এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ ও পডকাস্ট তৈরি করেছেন। এরকম পরিস্থিতিতে রিপোর্টিংয়ের সাধারণ কিছু কৌশল এবং চ্যালেঞ্জগুলো তাতে উঠে এসেছে।
লেখার পরবর্তী অংশের জন্য, আমরা এই রিপোর্টারদের কাছে, তাদের পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা জানতে চেয়েছিলাম। তারা বলেছেন, গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে, এমন অঞ্চল নিয়ে কিভাবে কাজ করতে হয়। দৈর্ঘ্য ও স্পষ্টতা ঠিক রাখার জন্য তাদের বক্তব্য কিছুটা সম্পাদনা করা হয়েছে।
গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ছে, এমন দেশগুলোতে কাজ করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের আপনি কী ধরনের বাস্তবিক পরামর্শ দেবেন?
১. আপনার সাবজেক্টের কৌশল-পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করুন
কোনো সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়ার আগে – যে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন, তা খুব ভালোমতো পর্যালোচনা করুন। কর্তৃত্বপরায়ন নেতাদের অন্যতম কৌশল হলো: সাংবাদিকদের সম্মানহানির চেষ্টা ও সংবাদমাধ্যমকে আক্রমণ করা। তাই আমাদের আরো বেশি প্রস্তুতি নিতে হবে। তাদের পাতা ফাঁদে যেন না পড়ে যাই, তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু তাদের মতাদর্শ বা জীবনী পড়লেই হবে না। তারা কিভাবে সংবাদমমাধ্যমকে হুমকির মুখে রাখে এবং সত্যের বিকৃতি ঘটায়; সেই কৌশলগুলোও জানতে হবে।
— লেটিসিয়া দুয়ার্তে, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো, ব্রাজিল
২. ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করুন (অনলাইন ও অফলাইন; দুই ক্ষেত্রেই)
ট্রোলিং, হুমকি, এবং কিছু ক্ষেত্রে সত্যিকারের সহিংসতা মোকাবিলার জন্য নিজেকে তৈরি রাখুন। মনে রাখবেন, দুর্বল গণতন্ত্রের বিভক্ত পরিবেশে আপনার রিপোর্টিংয়ের উল্টো বা অপব্যাখ্যা করা হতে পারে। এজন্য আগে থেকেই সম্পাদক ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ঝুঁকির মাত্রা পরিমাপ করুন এবং সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিন।
— সৌম্য শঙ্কর, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো, ভারত
৩. নিজ দেশ সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে সজাগ থাকুন
যেসব দেশের নেতাদের লাগামছাড়া কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিরোনাম হয়েছে, সেসব দেশের সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। মাথায় রাখুন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের ও নিজ দেশের ভাবমূর্তির ব্যাপারে তারা বেশ সংবেদনশীল থাকেন। অনেকেই আমার কাছে এসেছে এবং বলেছে, “আমি যে খুব সৎ ও সম্মানজনক জীবন কাটিয়েছি, উপার্জন করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি — তার অর্থ কেন আমার জন্মভূমির জন্য একরকম, আর অন্য দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশের জন্য আরেকরকম?”
অনেক ক্ষেত্রে, কথা বলার সময় মানুষ মনে করে, তাদের দেশে যা হচ্ছে সেজন্য আপনি তাদেরকেই ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করছেন। এতে তাদের আস্থা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে, এবং শেষপর্যন্ত আপনি ভালো সাক্ষাৎকার পাবেন না। একটি উন্নয়নশীল দেশের সাংবাদিক, আরেকটি উন্নয়নশীল দেশে গিয়ে মানুষের সাথে যে কত গভীর ভাবে মিশে যেতে পারেন; এমনকি দুই জনের দেশ পুরোপুরি দুই প্রান্তে হলেও! অবশ্য, এখানে বলা হচ্ছে সাধারণ মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, কোনো রাজনীতিবিদের নয়। কোনো দেশের পরিস্থিতির জন্য আপনি রাজনীতিবিদদের অবশ্যই দোষারোপ করতে পারেন।
— উনা হাজদারি, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো, পোল্যান্ড
৪. সাংবাদিক হিসেবে আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে জানুন, বুঝুন
প্রায়ই দেখা যায়, তারা গায়ে পড়ে সাংবাদিকদের সাথে ঝামেলা বাধাতে চায়, কিন্তু আপনি কোনো বাড়তি প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। আপনার প্রশ্নে মনোযোগ দিন, সবকিছু খুটিয়ে দেখুন, যেন তা পরে পাঠকদের কাছে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। এবং সব কিছু যতটা পারা যায় রেকর্ড করুন। কারণ পরবর্তীতে হয়তো আপনার বিরুদ্ধে “ভুয়া সংবাদ” প্রচারের অভিযোগ আনা হতে পারে। সব কিছুর প্রমাণ হাতে রাখুন।
— লেটিসিয়া দুয়ার্তে, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো, ব্রাজিল
৫. একটি রিপোর্টিং পরিকল্পনা তৈরি করুন
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনি কিভাবে রিপোর্টিং করবেন, তার একটি পরিকল্পনা আগেভাগেই করে রাখা ভালো। সময়ের সাথে সাথে সেখানে নতুন বিষয়ও যুক্ত হবে। তাই, আপনাকে গবেষণা, রিপোর্টিং ও লক্ষ্যের দিকে মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। কাজের জায়গা নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করতে হবে (সংবাদমাধ্যম সংক্রান্ত নীতিমালা, বিদেশী হিসেবে আপনার অধিকার, কোন ধরনের সংগঠন আপনার কাজে সাহায্য করতে পারে ইত্যাদি নানা বিষয়)। আমার মতো, আপনিও যদি অন্য কোনো দেশে রিপোর্টিং করতে যান, তাহলে আপনার চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গিগুলো ঠিক কিনা, তা নিয়ে অন্য সোর্স, বিশ্লেষক ও সহকর্মীর সাথে কথা বলুন। হয়তো সেখান থেকে নতুন কিছু পেয়ে যাবেন। বিদেশী রাষ্ট্রদূতরাও প্রায়ই একাজে খুব সহায়ক ভূমিকা রাখেন।
ভালো একজন মধ্যস্থতাকারীকে খুঁজে বের করুন। খুবই ভালো হয় যদি তিনি আপনার মাতৃভাষায় কথা বলতে পারেন, এবং তার সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থাকে। সোর্সের সঙ্গে সবসময় সৎ থাকুন। এমনকি তারা শত্রুভাবাপন্ন হয়ে উঠলেও (কখনো কখনো তারা শুধুই তেমন ভাব দেখায়)। আর আপনি যদি কোনো কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিতে যান, তাহলে অবশ্যই তথ্য-পরিসংখ্যান ভালো মতো যাচাই করে নিন।
— কুয়েন্টিন আরিয়েস, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো, হাঙ্গেরি
৬. জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অনুষ্ঠান কাজে লাগান
এই পরামর্শটি রাজনীতিবিদ, কোনো আন্দোলেন নেতা বা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না – এমন ব্যক্তির বক্তব্য নেওয়ার ক্ষেত্রে কাজে আসবে। আমি দেখেছি, তাদের আয়োজন করা উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে গিয়ে প্রশ্ন করলে, তারা সাধারণত কথা বলেন, যদি না সেই গণমাধ্যমকে তারা “সমালোচক” বা “বিপক্ষের” বলে মনে করেন। এ ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ভালোবাসেন এবং এ ধরনের অনুষ্ঠানে অন্য প্রসঙ্গে অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করা তুলনামূলক সহজ।
আমি বিভিন্ন বার্ষিকী বা স্কুল-কলেজ উদ্বোধন জাতীয় অনুষ্ঠানে খুবই আগ্রহ নিয়ে যাই। এসব জায়গায় সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে খুব বেশি জটিল প্রশ্ন তারা আশা করেন না এবং এখানে আপনার প্রশ্ন করার সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। যদি তারা আপনার প্রশ্ন পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে, তাহলে তাদের কোনো সহযোগী বা সঙ্গে থাকা মানুষদের কাছ থেকে বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। তারা সাধারণত প্রেসের সামনে খুব খোলামেলা থাকার ভাব করে। এখান থেকে আপনি ব্যবহার করার মতো কোনো বক্তব্য পেয়ে যেতে পারেন।
— উনা হাজদারি, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো, পোল্যান্ড
৭. অনুমান বা কোনো কিছু ধরে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন
এটি নিছক পরামর্শ নয়। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। আমি এখানে পক্ষপাতের বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা দিতে চাই। ইতালিতে জনপরিসরে তর্কবিতর্কের পরিবেশ সঙ্কুচিত হচ্ছে এবং এতে গণতন্ত্র দূর্বল হয়ে পড়ছে; বিষয়টি আমি রিপোর্ট করছিলাম পুরোনো ধ্যান-ধারণা নিয়ে।(যেমন, ফ্যাসিবাদের মতো পুরোনো অভিধা)। কিন্তু রিপোর্টিং করতে করতে একসময় উপলব্ধি করেছি, এটি ঠিক হচ্ছে না। বিভিন্ন আন্দোলন ও মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন খোলা মনে। এতে তাদের বিশ্বাসগুলো আপনি আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
ইতালিতে, কর্তৃত্বপরায়ন মনোভাব ভারতের মতো নির্মম ও স্পষ্ট নয়, যেমনটি সৌম্য সেখান থেকে রিপোর্ট করেছেন। কিন্তু যে কোনো কর্তৃত্ববাদী আন্দোলনের মূলভাব বোঝার জন্য তার গভীরে যাওয়া জরুরি। যে কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শেরই যুক্তিগত ফাঁদ, ফাঁকফোঁকর ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকে। বর্তমান সময়ের কর্তৃত্ববাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে সেগুলো আরো বেশি দেখা যায়। তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তির কথা থেকে আপনি সবচে ভালো উপাদানগুলো পাবেন। তবে সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য সঠিক ব্যক্তিকে আপনার খুঁজে বের করতে হবে। পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করা ব্যক্তিরা ভালো রিসোর্স হতে পারেন। যেমন, ইতালির ক্ষেত্রে, লুকা টোকালিনি আমাদের জন্য আদর্শ চরিত্র ছিলেন। পাঠকরা তার সম্পর্কে খুব একটা না জানলেও, তিনি কিন্তু লেগার ভেতরে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হন।
— লোরেঞ্জো বাগনোলি, গ্রাউন্ডট্রুথ ফেলো, ইতালি
গ্রাউন্ডট্রুথ প্রজেক্টের এই প্রবন্ধ প্রথম প্রকাশিত হয়েছে এখানে ও এখানে। অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হলো। ডেমোক্রেসি আনডান নামের এই প্রকল্পটিতে গ্রাউন্ডট্রুথ প্রজেক্টকে সহায়তা দিয়েছে ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন ও হেনরি লুস ফাউন্ডেশন। গ্রাউন্ডট্রুথের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করতে পারেন এখানে। অথবা তাদের অনুসরণ করতে পারেন টুইটার, ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামে।
কেভিন ডগলাস গ্রান্ট গ্রাউন্ডট্রুথ প্রজেক্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কনটেন্ট অফিসার। তিনি রিপোর্ট ফর আমেরিকার সহ সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি কাজ করেছেন গ্লোবালপোস্ট-এর বিশেষ প্রতিবেদনের সিনিয়র সম্পাদক হিসেবে। পুরো বিশ্বজুড়ে বেশ কিছু রিপোর্টিং প্রজেক্টের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন এডওয়ার্ড আর. ম্যারো, আলফ্রেড আই. ডুপোন্ট-কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি ও অনলাইন জার্নালিজম অ্যাওয়ার্ড।