গোটা বিশ্বেই সিরিয়াস সাংবাদিকতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি দর্শক। কারণ তারা তথ্যের ভারে ক্লান্ত, নানারকম উৎস থেকে আসা তথ্যে বিভ্রান্ত, আর তার সাথে ভুয়া-তথ্যের বিস্তার তো আছেই। কিন্তু তিনটি দেশ আছে যেখানে দর্শকরা বসে থাকেন, অপেক্ষা করেন – পপ আইডল স্টাইলের রিয়েলিটি শোতে, অনুসন্ধানী দলের লড়াই দেখতে।
নতুন ধাঁচের সাংবাদিকতার এই উদ্যোগকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে ইউরোপিয়ান জার্নালিজম সেন্টার (ইজেসি)। এর অংশ হিসেবে কেনিয়া, বলিভিয়া ও আর্মেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীরা সত্যিকারের শর্ট-ফর্ম অনুসন্ধানী রিপোর্ট তৈরি করেন। সেই রিপোর্ট তারা তুলে ধরেন জাতীয় পর্যায়ের টেলিভিশনে প্রচারিত রিয়েলিটি শোতে। বিচারকের ভূমিকায় থাকেন সাধারণ দর্শক ও স্টুডিওতে বসা পেশাদার সাংবাদিকরা।
কেনিয়াতে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে “টপ স্টোরি” নামের এই রিয়েলিটি জার্নালিজম শোর দর্শক সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। আর আর্মেনিয়ায় লাখ লাখ মানুষ “জার্নালিস্টিক ব্যাটল” সিরিজের পর্বগুলো দেখছে সরকারি টিভির ইউটিউব চ্যানেলে।
ইজেসির সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, কেনিয়াতে সাধারণ মানুষের সংবাদ-জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে এই রিয়েলিটি শোর সরাসরি সম্পর্ক আছে। দেশটির ৭৮% দর্শক এখন আরো গভীরভাবে বুঝতে পারেন, সাংবাদিকরা কিভাবে কাজ করেন; এবং ৬৭% মানুষ অনুধাবন করতে পেরেছেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সমাজে কী ভূমিকা পালন করে।
কিন্তু এই মডেলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে যেভাবে প্রদর্শন করা হচ্ছে, তা নিয়ে বেশ সমালোচনাও হচ্ছে।
মূল সমালোচনা হলো, এসব অনুষ্ঠানে দেখানো অনেক প্রতিবেদনেই গভীরতা নেই। এটি শুধু সমালোচক নয়, অনুষ্ঠানের বিচারকরাও বলছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তৈরি করা প্রতিবেদন বাস্তব ফলাফলও এনে দিচ্ছে। যেমন, জার্নালিস্টিক ব্যাটলসে প্রচারিত একটি প্রতিবেদনের কারণে আর্মেনিয়ার একজন দুর্নীতিবাজ হাসপাতাল কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অনুষ্ঠানটির নির্মাতা ক্যারেন আন্দ্রেসিয়ান অবশ্য স্বীকার করেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের দলগুলো শুধু সাক্ষাৎকারের ওপর নির্ভর করছে। তারা এখনো, অনিয়ম উন্মোচনের জন্য বড় ধরণের দালিলিক প্রমাণ হাজির করতে পারেনি।
এই অনুষ্ঠানের প্রতিযোগীরা কাজ করতে গিয়ে বাধার মুখেও পড়ছেন হরহামেশা। যেমন, আর্মেনিয়ার গিউমরি স্টেট ইউনিভার্সিটির তিন শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে গিয়ে, তাদের কাছে সোর্সের পরিচয় জানতে চেয়েছিল পুলিশ। ভয় দেখানো হয়েছিল ফৌজদারী মামলা দায়েরের। আন্দ্রেসিয়ান জানান, শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যম আইনজীবীদের সহায়তায় তারা এই হয়রানি থেকে মুক্তি পান। কেনিয়ায় টপ স্টোরি নামের অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হতো সরকারি টিভিতে। কিন্তু একবার শিক্ষার্থীদের করা একটি প্রতিবেদন আটকে দিতে চেয়েছিলেন টিভি চ্যানেলটির কর্মকর্তারা। এরপর নির্মাতারা সরকারি টিভি থেকে অনুষ্ঠানটিকে একটি বেসরকারি চ্যানেলে সরিয়ে নিয়ে যান। এছাড়াও হামলার ঝুঁকির কারণে অনেকসময় প্রতিযোগীদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী দিতে হচ্ছে।
ইজেসির মিডিয়া ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান জশ লাপোর্ট বলেন, এতকিছুর পরও তিনটি দেশেই সংবাদ-বোধ বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে অনুষ্ঠানগুলো; একই সাথে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা নিয়ে মানুষের মনে আগ্রহও জাগিয়েছে অনেক।
“এই শোগুলো শিক্ষার্থী, দর্শক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যক্রমের ওপর দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে,” বলেছেন লাপোর্ট। “আমাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, আরো বেশি সংখ্যক দর্শক এখন বুঝতে পারছেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা মানে নিছক মুখরোচক গল্প লেখা নয়; এটি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, এটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে।”
আর্মেনিয়ার ইয়েরেভ্যান অঞ্চলে সরকারি জমি দখল করে ধনী পবিরবারগুলোর বিলাসবহুল প্রাসাদ বানানোর প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছিল এই অনুষ্ঠানে। সেটি দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। আন্দ্রেসিয়ান বলেন, দেশটির অনুসন্ধানী গণমাধ্যম হেটকিউ অনলাইন এই বিষয় নিয়ে একটি অসাধারণ লং-ফর্ম প্রতিবেদন তৈরি করেছিল, যা তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু অনুষ্ঠানের প্রতিযোগীরা একই রিপোর্ট একটি ছোট তথ্যচিত্রে দেখানোর পর, ফল হয় ব্যাপক। শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল, স্থানীয় একটি দুগ্ধ উৎপাদন সমবায় সমিতির দুর্নীতিও উন্মোচন করেছে।
কেনিয়ায় এনটিভির দর্শকরা গাধার মাংসের অবৈধ বাণিজ্য সম্পর্কে জেনেছেন, যখন শিক্ষার্থীরা বায়ো-হ্যাজার্ড পোশাক পরে বিষয়টিকে পর্দায় তুলে এনেছেন।
আপেলের ভেলকি
এই অনুষ্ঠানগুলো বেশ নাটকীয়। বিচারকরা যখন কোনো স্টোরিকে “ছুঁড়ে ফেলেন” অথবা বিজয়ী ঘোষণা করেন, তখন প্রতিযোগীদের দেখা যায় রাগ, হতাশা বা আনন্দের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে। রিপোর্ট থেকে ফুটেজ বেছে, সম্পাদনা করে, সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশটি দেখানো হয় আলাদাভাবে। যেমন: একবার একটি গাড়ীতে বসে আর্মেনিয়ার এক শিক্ষার্থীকে বলতে শোনা যায়, “অচেনা কিছু লোক আমাদের অনুসরণ করছে!”
লাপোর্ট বলেন, “এই ফরম্যাট ‘গুরুতর একটি কাজকে বিনোদনের বিষয় বানিয়ে ফেলছে,’ কিনা এমন উদ্বেগ আমদের প্রশিক্ষক-বিচারকদেরও আছে। তারা নিজেরা বিষয়টি নিয়ে অকপটে কথা বলেছেন। টপ স্টোরির প্রতিটি প্রোমোতে কাউকে কাঁদতে দেখা যায় ঠিকই, কিন্তু বিষয়ের গুরুত্ব এবং অনুষ্ঠানের মূল উপজীব্য যে সাংবাদিকতা – তা শেষ পর্যন্ত আরো উজ্জ্বল হচ্ছে এর মাধ্যমে। আমার মনে হয় না, নতুন কিছু করতে গিয়ে আমরা সীমা ছাড়াচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সহযোগীরা তাদের নিজ দেশের অবস্থা সম্পর্কে ভালো জানেন।”
এই মডেলের উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে, আন্দ্রেসিয়ানের ক্লাসরুমে থাকা আপেলের ঝুড়িতে। তিনি ২০০৭ সালে ইয়েরেভ্যান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গণমাধ্যম আইন পড়াতেন। মানবাধিকার আইনজীবী আন্দ্রেসিয়ান খেয়াল করেছিলেন, অমনোযোগী ছাত্র-ছাত্রীরা আইনের কঠিন বিষয়গুলোতে তখনই আগ্রহী হয়ে উঠতো যখন, তিনি হাতে আপেল নিয়ে (জাগল) এহাত-ওহাত করতেন। তার হাতের একেকটি আপেল আইনের একেকটি বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করতো। যেমন, ব্যক্তি গোপনীয়তা, মানহানি, ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য তিনি ছোট ছোট পুরস্কারেরও ব্যবস্থা রেখেছিলেন।”
“শিক্ষক হিসেবে…. হাতে আপেল নিয়ে ভেলকি দেখিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ টানতে আমিও মজা পেতাম,” বলেন তিনি। “মনে হয়, আমাদের সমাজ এখন কোনো কিছুর গভীরে যেতে চায় না, শুধু ওপরের অংশটুকুই দেখতে ভালোবাসে। তাই রাশভারি একটি কন্টেন্টকে শুধু রাশভারি একটি ফরম্যাটে তুলে ধরতে গেলে, তা বেশিরভাগ মানুষের মনোযোগ টানতে ব্যর্থ হবে। আমাদের মনে হয়েছে, রাশভারি বিষয়গুলোকে আরো বিনোদনময় ও স্বচ্ছভাবে নির্মাণের মাধ্যমে সমাজের চাওয়াটাকে ধারণ করা যাবে।”
প্রাথমিকভাবে, আর্মেনিয়ার ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন আন্দ্রেসিয়ান। তারা কিছু “কল্পিত স্টোরি” নিয়ে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেছিল।
“এটি ছিল শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা স্কুলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা। সেখানে কেউ সাধারণ মানুষ সেজেছে, কেউ সেজেছে চিকিৎসক বা বারটেন্ডার। আমরা এভাবে কিছু কল্পিত প্রতিবেদন তৈরি করেছিলাম,” বলেন তিনি। “আর্মেনিয়ায় ১৮ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ানো হয়। তবে শিক্ষার মান তত ভালো নয়, এবং পড়াশোনা বেশ তাত্ত্বিক। আমরা প্রতিযোগিতার বোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমও পরিবর্তন করার চেষ্টা করছিলাম।”
এই উদ্যোগকে সহায়তা দিয়েছে ইজেসি। ২০১২ সালে তারা বলিভিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও একই মডেল প্রয়োগ করেছে, যদিও সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণযোগাযোগই পড়ানো হয় বেশি এবং সাংবাদিকতার স্বতন্ত্র কোনো কোর্স নেই। এর কিছুদিনের মধ্যে ডাচ সরকারও বলিভিয়া এবং কেনিয়ার অলাভজনক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থসহায়তা দেয়, রিয়েলিটি জার্নালিজম নিয়ে কাজ করার জন্য।
ধীরে ধীরে এই মডেলে নকল গল্পের জায়গা নিতে থাকে সত্যিকারের স্টোরি, লেখা প্রতিবেদন গড়ায় টিভি ইভেন্টে। আর এই বিবর্তনে সবচেয়ে জরুরি অনুষঙ্গ হিসেবে আবির্ভূত হয় প্রতিযোগীদের প্রশিক্ষণভিত্তিক মেন্টরিং এবং তার সাথে পেশাদার সিনিয়র সাংবাদিকদের মাধ্যমে রিপোর্টের গুণ বিচার, জানান আন্দ্রেসিয়ান। যেমন, জার্নালিস্টিক ব্যাটলসে বিচারকের তালিকায় আছেন রয়টার্সের নিউইয়র্ক ব্যুরো প্রধান লিসা এসেক্স, আর্মেনিয়ার জাতীয় টিভি চ্যানেলের সাবেক বার্তা-প্রধান ভন তেভোসিয়ান এবং দেশটির ফ্রিডম অব ইনফরমেশন সেন্টারের প্রেসিডেন্ট সুশান দয়দোয়ান।
“অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের এই দল প্রতিযোগীদের স্কোর দেন নৈতিকতা, তথ্যের সঠিকতা যাচাই, এবং উপস্থাপনার মানের ওপর ভিত্তি করে,” বলেন আন্দ্রেসিয়ান। “নম্বরের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, গোটা সময়জুড়ে এই পেশাদার বিচারকরা প্রচুর মতামত দেন, যেখান থেকে দর্শক এবং শিক্ষার্থীরা জানতে পারে, কিভাবে ভালো মানের প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।”
লাপোর্ট বলেন, নকল গল্প থেকে সত্যিকারের স্টোরি তৈরির পর্যায়ে যাওয়া যত কঠিন, অফলাইন থেকে টেলিভিশন সম্প্রচারে যাওয়াটা ততটা কঠিন নয়।
“নকল স্টোরি থেকে আসল স্টোরিতে যাওয়ার আগে আমাদের অনেক আলোচনা করতে হয়েছে, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে” তিনি বলেন। “ক্যারেন আর আমি বসে বসে কল্পিত দৃশ্যপট লিখতাম – কখনো কেনিয়ার বন্যপ্রাণী শিকার, কখনোবা বলিভিয়ার মানবপাচার; একেকটা গল্প বেশ নাটকীয় হতো। কিন্তু শিক্ষার্থীদেরকে সত্যিকারের স্টোরি আনতে পাঠাতে গিয়ে আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি – তা স্থানীয় কোনো দুর্নীতিই হোক, স্কুলের কোনো বিষয় বা ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের অনুমতি; এমনকি ভাবতে হয়েছে সম্ভাব্য আইনি জটিলতা নিয়েও। ২১ বছর বয়সী একেকজন শিক্ষার্থী যে, অনুসন্ধানী রিপোর্ট করে একেবারে সরকার ফেলে দেবে, এমনটা আমরা কখনোই চাইনি। আমাদের চাওয়া ছিল, তারা শিখুক সত্যিকারের দুনিয়ায় কিভাবে কাজ করতে হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের পাঠক্রম উন্নত করুক।
“কিন্তু আমরা যখন কল্পিত স্টোরির দৃশ্যায়ন নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি কোথাও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমরা বুঝতে পারি, স্টোরি হতে হবে সত্যিকারের, তবে তাকে সাজাতে হবে সঠিকভাবে, তাতে কিছুটা ধার থাকলেই চলবে এবং শিক্ষার্থীদেরও বিপদ থেকে দূরে রাখতে হবে।”
স্বতন্ত্র নির্মাণশৈলী
লাপোর্ট জানান, ২০১৫ সালে ইজেসির কেনিয় অংশীদার এবং বিবিসি আফ্রিকা নিউজ বিভাগের সাবেক প্রধান জোসেফ ওয়ারুঙ্গুর উদ্যোগেই টিভি ফরম্যাট বেছে নেয়া হয়। এখন তিনটি দেশেরই ছোট ছোট অলাভজনক সংস্থা এইসব অনুষ্ঠান প্রযোজনা করছে। প্রতিটি অনুষ্ঠান হয় পাঁচ মাসের সিজনে, যার একেকটিতে সাধারণত ২৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের চারটি পর্ব থাকে। ইজেসি, ইউরোপীয় দাতাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে, কেনিয়া এবং বলিভিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচ বছরের অনুদান দিয়েছে। তারা আর্মেনিয়ার প্রকল্পের নন-টেলিভিশন অংশের জন্য টাকা দিয়েছে এবং এখনো বিশেষজ্ঞ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
“প্রতিটি দেশে কাজের ধরণ আলাদা,” বলেন লাপোর্ট। “বলিভিয়ায় সব কিছু আগেই টেপে রেকর্ড করা হয়। কেনিয়ায় আগে একটি বুটক্যাম্প করা হয়, যেখানে সব দল এক সপ্তাহের জন্য জড়ো হয় এবং অনেকে সেখান থেকেই বাদ পড়ে যায়। তারপর তারা দুই বা তিন মাস ধরে, ধীরে ধীরে বিচার প্রক্রিয়া চিত্রায়ণ করেন। আর্মেনিয়ায় এই শো শুধু ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রচারিত হতো। কিন্তু এখন পাবলিক টিভিতে সম্প্রচারিত হয়।
নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালিজম স্কুলের স্নাতক প্রোগ্রাম প্রধান এবং গণমাধ্যম সাক্ষরতা বিশেষজ্ঞ জন উইবি বলেন, মডেলটিতে বিনোদন উপাদান হিসেবে সাংবাদিকতাকে তুলে ধরার যে চেষ্টা, তা জনস্বার্থ ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় এই পেশার মূল ভূমিকা সম্পর্কে দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে পারে। তবে তিনি মনে করেন, নির্মাণে ডকুমেন্টারি-স্টাইলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে মডেলটি সেই ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে আনতে পেরেছে।
“অবশ্য মনে হতে পারে, সাংবাদিকতাকে শো-বিজ স্টাইলের রিয়েলিটি শোতে নিয়ে এসে, সিরিয়াস সংবাদ চর্চার মহান প্রচেষ্টাকে ছোট করা হচ্ছে,” তিনি বলেন। “কিন্তু বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠীকে সাংবাদিকতার সাথে সম্পৃক্ত করার যে সম্ভাবনা এটি তৈরি করেছে, তা সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাবের চেয়ে বড়। এটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে সাংবাদিক এবং দর্শক – দুই পক্ষের কাছেই আরো আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় করে তুলেছে। কিভাবে সাংবাদিকতা করা হচ্ছে – এই প্রক্রিয়া দেখানোর অংশটিতে আমি জোর দিতে চাই। কারণ সাধারণ দর্শক জানে না, আমরা সাংবাদিকরা কীভাবে তথ্য-প্রমাণ যাচাই করি, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাই, তারপর একেকটি গল্প তৈরি করি।”
উইবি বলেন, সতর্কতার সাথে তৈরি রিয়েলিটি জার্নালিজম শো উন্নত বিশ্বে ভালোই কাজ করবে, আর বিভ্রান্ত সমাজে উন্নত করবে সংবাদ সাক্ষরতা।
আন্দ্রেসিয়ান বলেছেন, এই ধরণের অনুষ্ঠান তিনি পশ্চিমেও পরীক্ষা করে দেখতে চান।
“এখানে অনেকেই সাংবাদিকদের সন্দেহ করেন, কারণ তাদের কেউ কেউ অভিজাত গোষ্ঠীর কাছ থেকে টাকা নেন,” তিনি বলেন। “যেমন, একজন দর্শক মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, তিনি ভাবতেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা ‘শুধু মানুষের জীবন নষ্ট করে।’ অনেকে আবার সাংবাদিকদের একাডেমিক বলে মনে করেন, যাদের কিনা মানুষের জীবনের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। এই অনুষ্ঠান সেই ধারণাগুলো বদলে দিচ্ছে।”
রোয়ান ফিলিপ বেশ কয়েকটি পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক। কাজ করেছেন দুই ডজনের বেশি দেশে। এখন তিনি থাকেন বস্টনে। ১৫ বছর ধরে তিনি কাজ করেছেন সাউথ আফ্রিকা সানডে টাইমসের প্রধান রিপোর্টার ও লন্ডন ব্যুরো প্রধান হিসেবে।