
একাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে “নির্বাসনে থেকে কিভাবে প্রচার ও প্রকাশনা চালানো যায়” শীর্ষক সেশনে অংশগ্রহণকারীরা। বাম থেকে ডানে: মামাতজান জুমা (রেডিও ফ্রি এশিয়া), আলেক্সি কোভালেভ (মেডুজা) ইনেস গাজিকা (রেডিও পাবলিক আফ্রিকানা)। ছবি: রাফায়েল হুনেরফথ / জিআইজেএন
সবচেয়ে ভালো সময়গুলোতেও, নিজের ব্যক্তিগত অবস্থার সাথে পেশার দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে মামাতজান জুমার জন্য। উইঘুর জাতিসত্তার সাবেক এই আর্ট শিক্ষক চীনের জিনজিয়াংয়ের প্রদেশ থেকে ২০০৩ সালে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। গত ১২ বছর ধরে তিনি সেখানে রেডিও ফ্রি এশিয়ার উইঘুর সার্ভিসে কাজ করছেন সাংবাদিক হিসেবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এই সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী আটকে পড়ছে চীনের বন্দীশিবিরে। এর মধ্যে জিনজিয়াংয়ে থাকা জুমার পরিবারের সদস্যরাও আছেন।
হামবুর্গে অনুষ্ঠিত একাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে এসে জুমা বলেছেন, “যখন আপনার আত্মীয়স্বজনকে বন্দীশিবিরে নেওয়া হয় আর আপনার সহকর্মীরা বিপদের মধ্যে থাকে, তখন নিরপেক্ষ থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা কোনো অ্যাক্টিভিস্ট সংগঠন নই। কিন্তু এটা আমাদের জন্য একটা মিশন। আমরা কাজের সময় আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখি, আর তারপর বাসায় ফিরে কাঁদি।”
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত নেটওয়ার্কের উইঘুর সার্ভিসে ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন জুমা। ২০১৭ সালে তাঁর নেতৃত্বে থাকা নির্বাসিত উইঘুরদের ছোট দলটাই, পশ্চিম চীনের বড় বড় বন্দীশিবিরের খবর প্রথমবারের মতো সবার কাছে তুলে ধরেছিল। তারপর থেকে, এই শিবিরগুলোর আকার-আয়তন ও পরিবেশ নিয়ে তাদের করা প্রতিবেদনগুলো বেশ প্রশংসিত হয়েছে এবং তারা উইঘুর ভাষায় তথ্যপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠেছে।
জুমা বলেছেন, “আমাদের অনেক বছর ধরে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। কিন্তু এখন আমরা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করছি। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। তার একটি যেমন, আমরা এখন বন্দীশিবিরে থাকা মানুষদের সংখ্যা বলার সময় অনেক সতর্ক থাকি।”
নিজ দেশ থেকে নির্বাসিত অবস্থায় রিপোর্টিং করা, অনেকটা দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটার মতো। এখানে নৈতিক সংকট ও বাস্তব বাধাবিপত্তির মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলতে হয়। জিনজিয়াংয়ের মতো জায়গায় গিয়ে রিপোর্টিং করার সুযোগ খুব কম সাংবাদিকই পান। কিন্তু নির্বাসিত সাংবাদিকরা সেটা করতে পারে। কারণ তারা এলাকা চেনে, স্থানীয় ভাষাও জানে। তবে, যে সরকারের চাপে পড়ে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তাদের বিরূপ মনোভাবও সামলাতে হয় এই সাংবাদিকদের।
নির্বাসিত সাংবাদিকরা এখন হয়তো আপাত নিরাপদ একটা জায়গা থেকে সাংবাদিকতার চর্চা করতে পারছেন। এরপরও সরকার চাইলে তাদের প্রতিবেদন তৈরি, পাঠকের কাছে পৌঁছানো ও জীবনযাপনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
নিজ দেশে সোর্স তৈরি
২০১৫ সালে বুরুন্ডিতে যখন বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু হয়, তখন দেশটির জনপ্রিয় রেডিও স্টেশন রেডিও পাবলিক আফ্রিকানায় কাজ করতেন ইনেস গাজিকা। সরকারের সহিংস দমনপীড়নের মধ্যে, স্টেশনটিকে পুরোপুরি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। গাজিকা এরপর পালিয়ে যান পাশের দেশ রুয়ান্ডায়। সেখান থেকে, তিনি ও তাঁর নির্বাসিত সহকর্মীরা বুরুন্ডি নিয়ে সংবাদ প্রচার করে গেছেন।
গাজিকা জানান, নির্বাসনে থেকে রিপোর্টিং করার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজ দেশের মধ্যে নতুন সোর্স তৈরি করা, বিভিন্ন ক্ষেত্র ও পরিসর থেকে সহযোগিতা করার মত মানুষ খুঁজে বের করা। তিনি বলেন, “পরিচয় গোপন রাখার পরও নির্বাসনে থাকা মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে অনেকে ভয় পান। ভাবেন, তাদেরকে হয়তো ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে দেখা হবে।”
রিপোর্টাররা নির্বাসনে থাকলেও, এই রেডিও স্টেশন ধীরে ধীরে বুরুন্ডির মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে। গাজিকা বলেছেন, “মানুষ শুরুতে ভেবেছিল আমরা এই রেডিওর ব্যবহার করতে চাই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য। কিন্তু চার বছর পর তারা বুঝতে পেরেছে, আমরা কখনোই এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করিনি। আমরা বুরুন্ডির অধিবাসী এবং গোটা বিশ্বকে জানাতে চেয়েছি, আমাদের দেশে কী ঘটে চলেছে।”
এই রেডিও-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানতে চাওয়া হলে বুরুন্ডির সরকারী কর্মকর্তারা সাধারণত কিছু বলতে চাইতেন না। কিন্তু তারা দেশের ভেতরের অন্যান্য গণমাধ্যমের কাছে ঠিকই আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতেন। সেই বক্তব্যই রেডিও পাবলিক আফ্রিকানা ব্যবহার করত তাদের রিপোর্টিংয়ে।
গাজিকা ও অন্য নির্বাসিত সাংবাদিকরা বুরুন্ডির সরকারের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হুইসেলব্লোয়ার তৈরি করতে পেরেছিলেন। এদের কেউ কেউ সরকার বা সরকারী দলে যোগ দিয়েছিলেন ভয় থেকে। কিন্তু এখন আর সেখান থেকে বেরুতে পারছেন না, জানান গাজিকা।
ভেনেজুয়েলার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ইওয়াল্ড শার্ফেনবার্গ বলেন, “এখন এমন কিছু সোর্স তৈরি হয়েছে, যাদের পাওয়ার কথা আমরা ভাবতেই পারতাম না।” দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য মামলা করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। ফলে অনুসন্ধানী নিউজ সাইট আরমান্দো ডট ইনফোর কিছু সহকর্মীর সাথে তিনিও দেশ ছেড়ে কলম্বিয়া চলে যান, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। এল পাইসের সাবেক এই কর্মীকে কাজের সুযোগ করে দেয় বোগোটা ভিত্তিক ম্যাগাজিন সেমানা।
শার্ফেনবার্গ বলেন, “ভেনেজুয়েলাতে কিছু সোর্স আছে, যারা বিশ্বাস রেখে আমাদের কাছে গোপন তথ্য ফাঁস করে। বোগোটাতে থাকার কারণে তারাও নিশ্চিত থাকে, আমাদের ওপর তেমন চাপ নেই।” এজন্য অবশ্য নিজেদের মধ্যে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই জরুরি। এমন স্পর্শকাতর সোর্সদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আরমান্ডো ডট ইনফোর সাংবাদিকরা আলাদা প্রশিক্ষণ নেন।
দর্শকদের কাছে পৌঁছানো
রেডিও পাবলিক আফ্রিকানার সাংবাদিকরা যখন প্রথম বুরুন্ডি ছেড়ে চলে যান, তখনও তারা নিজ দেশে সম্প্রচার চালু রেখেছিলেন ডেমেক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআরসি) থেকে। কিন্তু বুরুন্ডি কর্তৃপক্ষ দ্রুতই এই সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চাপ দেয় ডিআরসিকে।
এখন শুধু অনলাইনে তাদের সম্প্রচার চলে। সর্বোচ্চ প্রচার নিশ্চিত করার জন্য তারা ইউটিউব, সাউন্ডক্লাউড ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো কয়েকটি মাধ্যম ব্যবহার করেন। ১০টি কম্পিউটারসহ একটি ছোট স্টুডিও তৈরির জন্য তারা কিছু অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু এখনো টিকে থাকার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে।
আরমান্দো ডট ইনফো ভেনেজুয়েলাতে পাকাপাকিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো এই সাইটের বেশিরভাগ পাঠক আসছে দেশের ভেতর থেকে। তবে পাঠকের কাছ থেকে অর্থসাহায্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে গেছে। কারণ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ভেনেজুয়েলার মুদ্রাব্যবস্থা ধ্বসে পড়েছে। ফলে এই নিউজ সাইট এখন অনুদানের দিকেও ঝুঁকছে। যদিও তারা জানে, মার্কিনীদের কাছ থেকে অনুদান নেওয়া, তাদের কিছু পাঠক ভালো চোখে দেখবেন না।
শার্ফেনবার্গ বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম, যদি বিষয়টাকে [কারা টাকা দিচ্ছে] স্পষ্ট ও স্বচ্ছ রাখি, তাহলে পাঠকরা নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।”
অন্যদিকে, তুরস্কের সংবাদপত্র জুমহুরিয়েত-এর সাবেক প্রধান সম্পাদক জান দুনদার নির্ভর করেছিলেন সাধারণ মানুষের অনুদানের ওপর। ২০১৬ সালে, তিনি ষড়যন্ত্রের দায়ে অভিযুক্ত হন এবং গুপ্তহত্যার হাত থেকে বেঁচে যান। এরপর দুনদার পাড়ি জমান জার্মানিতে। ২০১৭ সালে, জার্মানির অনুসন্ধানী গণমাধ্যম কারেক্টিভের সঙ্গে জোট বেঁধে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অনলাইন ম্যাগাজিন ওজগুরুজ, যার মানে “আমরা মুক্ত।” তারা জার্মান ও তুর্কি; দুই ভাষাতেই তুরস্কের নানা বিষয় নিয়ে খবর প্রচার করেন।
তাদের জন্য টাকার যোগানদাতা খুঁজে বের করা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুনদার বলেন, “আপনি তুরস্কের মানুষদের বলতে পারবেন না [সাংবাদিকতার স্বার্থে অর্থসাহায্যের জন্য], কারণ তারা ভয়ে থাকে। আপনি জার্মানদের কাছেও চাইতে পারবেন না। কারণ, তাহলে আপনাকে দেখা হবে বিদেশী চর হিসেবে।” ওজগুরুজ এখন প্রায় ৫০০জন মানুষের কাছ থেকে সাহায্য পায়। এদের বেশিরভাগই টাকা দেন খুব অল্প পরিমাণে। দুনদার বলেন, “টাকার অংকটা বড় নয়। কিন্তু বিষয়টা হয়ে গেছে সংহতি জানানোর মতো।”

তুরস্কের সংবাদপত্র জুমহুরিয়েত-এর সাবেক প্রধান সম্পাদক জান দুনদার এখন থাকেন জার্মানিতে। ছবি: নিক জাউসি / জিআইজেএন
যখন দুই আইনের অধীনে
২০১৪ সালে রাশিয়ার স্বাধীন সংবাদমাধ্যম লেনটা ডট আরইউ থেকে যখন এর সম্পাদক গালিনা তিমচেঙ্কোকে বহিস্কার করা হয়, তখন তিনি ও তাঁর বেশ কিছু সহকর্মী পাড়ি জমান লাটভিয়াতে। সেখানে গিয়ে চালু করেন মেডুজা নামের একটি নতুন সাইট। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা, আরআইএ নোভোস্তি ছেড়ে সম্প্রতি তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অনুসন্ধানী সম্পাদক আলেক্সি কোভালেভ।
মেডুজা কিছু অনুদান পায়। একই সঙ্গে তারা বিটুবি (বিজনেস-টু-বিজনেস) সেবাও দিয়ে থাকে। যেমন সম্পাদকদের বাৎসরিক বুটক্যাম্প। এই দলের তিনভাগের একভাগ — যাদের প্রায় সবাই রিপোর্টার — থাকে রাশিয়ায়। কিন্তু সেখানে তাদের কোনো অফিস নেই। কারণ তাতে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবার আশঙ্কা আছে। মেডুজার প্রধান কার্যালয় গড়ে উঠেছে লাটভিয়ার রাজধানী রিগাতে। তাদের বেশিরভাগ কর্মী সেখানেই কাজ করেন।
লাটভিয়াতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়। তাছাড়া সেখানে নতুন প্রতিষ্ঠান শুরু করা সহজ। রাশিয়া থেকে দূরত্বও কম। তাই এখানে মেডুজার কার্যালয় বানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোভালেভ বলেন, “এখানে নিজেকে বিদেশী মনে হয় না।”
কিন্তু দূরে থেকে দলগত কাজ করাটা কঠিন। কোভালেভ বলেছেন, “দলের সদস্যদের মধ্যে অবস্থানগত দূরত্বের কারণে প্রতিদিন সম্পাদকীয় বৈঠক করতে হয় গুগল হ্যাংআউটের মাধ্যমে। এটা খুব ক্লান্তিকর। যা একা একা কাজ করার প্ররোচনা দেয়।”
একই সঙ্গে রাশিয়া ও লাটভিয়ার আইন মেনে চলাটাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ক্রিমিয়ার কথা। ২০১৪ সালে এই অঞ্চলকে ইউক্রেনের কাছ থেকে নিজের মানচিত্রে অন্তর্ভূক্ত করেছে রাশিয়া। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (লাটভিয়া যার সদস্য) এই অন্তর্ভূক্তিকে স্বীকৃতি দেয়নি। আবার রাশিয়াতে, “রাশিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে” চ্যালেঞ্জ জানানো ফৌজদারী অপরাধ। এর মধ্যে ক্রিমিয়াও পড়ে।
কোভালেভ বলেছেন, “আপনি যদি ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ না বলেন, তাহলে সমস্যায় পড়বেন। ফলে আমরা দুজন আইনজীবী রেখেছি। একজন লাটভিয়ার, আরেকজন রাশিয়ার।”
স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখা
গত সেপ্টেম্বরে, হামবুর্গে গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তুর্কি সম্পাদক জান দুনদারকে ঘিরে রেখেছিল দেহরক্ষীরা। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট তাইয়েপ এরদোয়ান তাকে অভিহিত করেছেন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে। তিনি বেশ পরিচিত মুখ, আর তাকে নিয়মিত হেনস্তা করে এরদোয়ান সমর্থকেরা। এমনকি জার্মানিতেও।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে এরদোয়ান যখন জার্মানিতে আসেন, তখন বলেছিলেন, সংবাদ সম্মেলনে দুনদার উপস্থিত থাকলে তিনি যাবেন না। দুনদার বলেন, “দুঃখজনকভাবে, নির্বাসনে থাকার সময় আপনার নিজেকে সাংবাদিকের চেয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে মনে হবে বেশি।”
তিনি তাঁর এই নতুন পরিচয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার লড়াই চালাচ্ছেন। তাঁর জার্মান সহকর্মীরা সাবধান করছেন, অ্যাক্টিভিস্টের মতো আচরণ না করতে। সাংবাদিকতার সাবেক শিক্ষক হিসেবে, দুনদারও তাঁর শিক্ষার্থীদের এই একই পরামর্শ দিতেন। তিনি বলেছেন, “কিন্তু কল্পনা করুন, আপনার বাড়িতে আগুন লেগেছে আর মানুষ আশা করছে আপনি শুধু তার ছবিই তুলে যাবেন। আমরা তো শুধু সাংবাদিক না; আমরা কারো বাবা-মা, সর্বোপরি একজন মানুষ।”
আরমান্দো ডট ইনফোর শার্ফেনবার্গ বলেছেন, “নিজেকে যেন অ্যাক্টিভিস্ট মনে না হয়, সেজন্য আমি সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের সব সময় সাংবাদিকতার রীতিনীতি দিয়ে বাঁধা থাকতে হয়। একমাত্র এভাবেই আমরা আমাদের পুঁজি ধরে রাখতে পারি। আর এই পুঁজিটা হচ্ছে সুনাম।”
শার্ফেনবার্গ মাঝেমধ্যে এই সংশয়েও থাকেন, আরমান্দো ডট ইনফোর ভেনেজুয়েলান পাঠকরা সত্যিই অনুসন্ধানী রিপোর্টিং দেখতে চায় কিনা। তিনি বলেন, “আমাদের মতো বিভাজিত একটা সমাজে, সব পক্ষই তথ্যকে অস্ত্র বানাতে চায়, তাকে একে-অপরের বিপক্ষে ব্যবহার করতে চায়।” ভেনেজুয়েলার সরকার ও বিরোধী দলের দুর্নীতি নিয়ে অনুসন্ধানের সময়, বিরোধী দলের সমর্থকরাও তাদের ওপর হামলে পড়েছিল।
দুই পক্ষ থেকেই আক্রমণের শিকার হওয়াটা হতাশাজনক হতে পারে। তবে শার্ফেনবার্গ একমত, নির্বাসনে থেকেও স্বাধীন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করে যাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “ভিন্নমতের মানুষদের জন্য নির্বাসনই হচ্ছে সাধারণ গন্তব্য। ফলে তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানোরও একটা আদর্শ জায়গা হয়ে দাঁড়ায়। আমার মনে হয়, পার্থক্যের জায়গাটা পরিস্কার করে দেখানো জরুরি। সাথে এটাও দেখানো দরকার, এখান থেকেও সাংবাদিকতা করা সম্ভব।”
শার্লট আলফ্রেড একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও সম্পাদক। তিনি রিপোর্টিং করেছেন মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। হাফিংটন পোস্ট, দ্য করেসপন্ডেন্ট, গার্ডিয়ান, নিউজ ডিপলি, জিট অনলাইন, এল দিয়ারিও এবং ফার্স্ট ড্রাফটের মত জায়গায় তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে।