মার্গো* আর দশজন সাধারণ শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের মতো নন। তার বয়স প্রায় ৫০ বছর। তিনি একজন ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টান, সৌখিন অপেরাপ্রেমী এবং থাকেন নেদারল্যান্ডসের অভিজাত এলাকায়। ২০১৫ সাল থেকে ইউটিউবের শরণার্থী বিষয়ক ভিডিওগুলোতে কমেন্ট বা মন্তব্য করতে দেখা যায় তাকে। মার্গো ভয়ে ছিলেন, মূলত আরব বিশ্ব থেকে আসা হাজার হাজার শরণার্থী ও অভিবাসী নিয়ে।
সেই সময়টাতে ক্রমেই শরণার্থী-ভীতি ছড়িয়ে পড়ছিল দেশটিতে। কিন্তু ইউটিউবে মার্গোর আচরণ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছিল তার চেয়ে দ্রুত গতিতে। ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, তিনি চরম-ডানপন্থী চ্যানেলগুলোও দেখা শুরু করেন। এর মধ্যে ছিল কানাডিয় ভ্লগার স্টেফান মোলিনু (প্রায় ১০ লাখ সাবস্ক্রাইবার), দ্য রেবেল মিডিয়া এবং সার্গন অব আক্কাদ।
এরপর থেকে তার আচরণ আরো বদলে যেতে থাকে। তিনি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন নারীবাদী, বিদেশী ব্যক্তি ও “সামাজিক ন্যায় প্রত্যাশী যোদ্ধাদের” প্রতি। ইউটিটিউবে করা তার মন্তব্যগুলোতে ঠিক সেইসব শব্দ ও বাক্য দেখা যেতে থাকে, যা সচরাচর পাওয়া যায় উগ্র-ডানপন্থী ফোরামে।
একটি উদাহরণ দিলে আরো পরিষ্কার হবে। ম্যাট্রিক্স সিনেমাটি যারা দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, লাল ও নীল রঙের দুটো ক্যাপসুলের কথা। নীল পিল খেলে আপনি ম্যাট্রিক্স নামের সেই সিস্টেমের দাস হয়ে থাকবেন। তাকে শক্তি যোগাবেন। আর লাল পিল খেলে আপনার কাছে সত্য উন্মোচিত হবে। মার্গো তার ইউটিউব মন্তব্যে এই “লাল পিল” খাওয়ার উদাহরণ টেনেছেন। বলেছেন, তার দৃষ্টিতে সত্য হলো: দুনিয়াটা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বামঘেঁষা উদারপন্থীদের কারণে।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে আমরা যখন এই অনুসন্ধান শুরু করি, ততদিনে মার্গো আরো ডানপন্থী হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন চরম-ডান চ্যানেল তো দেখেন-ই, তার সাথে আরো যোগ হয়েছে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী এবং ইহুদি বিদ্বেষী ভিডিও। ডাচ ভাষায় লেখা একটি কমেন্টে তিনি বলেছেন, শ্বেতাঙ্গদের সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিচ্ছে বামপন্থী “গর্দভ” ও নারীবাদীরা। সামাজিক নানা সংকটের জন্য তিনি ইহুদিদেরও দায়ী করেছেন।
ইউটিউবে কীভাবে চরমপন্থা বা উগ্রবাদের চর্চা হচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আমরা মার্গোর মত হাজার হাজার ব্যবহারকারী পেয়েছি। যৌথ এই অনুসন্ধানে ডাচ নিউজ সাইট দ্য করেসপনডেন্ট থেকে কাজ করেছি আমি; আর দৈনিক দ্য ভোকসক্রান্ট থেকে হাসান বাহারা ও আনিকে ক্রানেনবের।
আমরা উগ্র-ডানপন্থীদের উত্থান নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করি 4chan ও 8chan–এর মতো ফোরাম এবং ডিসকর্ড নামের একটি জনপ্রিয় চ্যাটিং অ্যাপ ধরে। কিন্তু ক্রমেই চরমপন্থীদের তৈরি প্রচুর ইউটিউব ভিডিও আমাদের হাতে আসতে থাকে। ফলে আমরা ইউটিউবও ঘেঁটে দেখার সিদ্ধান্ত নিই।
ইউটিউবে যে পরিমাণ উগ্রপন্থী ভিডিও আছে, তা সত্যিই তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। সেখানে আছে বর্ণবাদ, ইহুদি ও নারীবাদ বিদ্বেষ, শেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদ। আরো আছে “সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদ,” “শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা” এবং “মহা-প্রতিস্থাপন তত্ত্ব” (এই ধারণায় বলা হয়, জন্মহার বৃদ্ধি ও অভিবাসনের মাধ্যমে শেতাঙ্গদের জায়গা ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে অশ্বেতাঙ্গরা) জাতীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্বও।
একই সময়ে, প্রযুক্তি গবেষকরাও উদ্বেগ জানাতে শুরু করেন যে, ইউটিউবের রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম উগ্রপন্থী কন্টেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছে আরো বেশি করে। ধীরে ধীরে দর্শকদের নিয়ে যাচ্ছে ঘৃণার জগতে। কোনো ইউটিউব ব্যবহারকারী যখন একটি ভিডিও দেখা শুরু করেন তখন তার সামনে একই বিষয়ের অন্যান্য ভিডিও দেখার পরামর্শ ভেসে ওঠে। এভাবে ঐ বিষয়ে তীব্র থেকে তীব্রতর কন্টেন্ট তার কাছে যেতে থাকে। কেউ হয়তো বর্ণবাদ নিয়ে তৈরি উদারপন্থী ভিডিও দেখছেন। কিন্তু এরপর একের পর এক রিকমেন্ডেশনের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবেই তার কাছে ডানপন্থী ভিডিও যেতে শুরু করবে এবং তিনি সেটিই দেখতে থাকবেন।
ইউটিউবের মতো বিশাল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে গবেষণা করতে যাওয়াটা ভীষণ চ্যালেঞ্জের কাজ। প্রতি মিনিটে, ৪০০ ঘন্টা সমপরিমাণ কন্টেন্ট আপলোড করা হয় প্লাটফর্মটিতে। এর রিকমেন্ডেশন অ্যালগরিদমও বেশ জটিল। অনেকগুলো বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তারপর দর্শককে ভিডিও সুপারিশ করে তারা, যা আবার প্রতিটি দর্শকের জন্য আলাদা রকমের হয়।
এই কাজের শুরুতে আমরা ডানপন্থী কন্টেন্টের ব্যাপকতা পরিমাপ করেছি। তারপর দেখেছি কীভাবে এই কন্টেন্ট ইউটিউবের রিকমেন্ডেশনে আসছে এবং দর্শকরা সেটি দেখছে।
প্রথমেই আমরা চেনাজানা ডানপন্থী সংগঠনের একটি তালিকা বানিয়েছি। তাদের নাম পেয়েছি বিভিন্ন একাডেমিক গবেষণা, ফ্যাসিবাদ বিরোধী গ্রুপের (যেমন হোপ নট হেট) প্রতিবেদন ও রেডিটের মতো সূত্র থেকে। এরপর আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি সংগঠন বা গোষ্ঠীর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট খুঁজে বের করতে, যার মধ্যে ইউটিউবও ছিল। আমরা কিছু উগ্র ডানপন্থী ফোরামের দিকেও নজর দিয়েছি। সেখান থেকে শুধু ইউটিউবের লিংক ছেঁকে নিয়েছি, আর সংগ্রহ করেছি চ্যানেলের নাম।
প্রথমদিকে, আমরা একই পদ্ধতিতে বামপন্থী চ্যানেলগুলো দেখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেন তুলনা করা যায়। এই ডেটা বিশ্লেষণ করে ইউটিউবে ডানপন্থী চ্যানেলগুলোর প্রভাব সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছি আমরা। দেখেছি, বামপন্থী চ্যানেলগুলোর তুলনায় ডানপন্থী চ্যানেলগুলোর পরিসর অনেক বড় এবং জনপ্রিয়।
চ্যানেলের সংজ্ঞা নির্ধারণ ছিল আমাদের প্রথম বড় সমস্যা। কোন উপাদান থাকলে একটি চ্যানেলকে উগ্রপন্থী (বাম বা ডান; যাই হোক) বলা যাবে? কে সেই সিদ্ধান্ত নেবে? কারণ একেক দেশে তার সংজ্ঞা একেক রকম। আবার সময়ের সাথে সাথে চ্যানেলগুলো নিজেরাও বদলে যায়। কোনো চ্যানেল হয়তো রাজনৈতিকভাবে মধ্যপন্থী অবস্থান নিয়ে শুরু হয়, কিন্তু ধীরে ধীরে সেটা ডানপন্থার দিকে ঝুঁকতে থাকে। আবার অন্য কোনো চ্যানেল হয়তো রাজনৈতিক অবস্থানটাই হারিয়ে ফেলে।
সমাধানটা ছিল বেশ সহজ ও ফলপ্রসূ। আমরা ডান, বাম, মধ্যপন্থা থেকে শুরু করে উগ্রপন্থা পর্যন্ত বড় একটি রাজনৈতিক পরিসর বিবেচনায় নিয়েছি। এইভাবে এগোনোর কারণে আমরা সামগ্রিক চিত্রটাই দেখতে পেয়েছি। বুঝতে পেরেছি, সময়ের সাথে মধ্যপন্থা থেকে কীভাবে একজন ব্যক্তি উগ্রপন্থার দিকে চলে যায়।
শেষপর্যন্ত, আমরা জড়ো করি ১৫০০ চ্যানেলের একটি তালিকা, যার মধ্যে বাম-ডান, দুই ঘরানাই সমানভাবে ছিল। ইউটিউবের একটি খোলামেলা এপিআই আছে। এটি দিয়ে আপনি তাদের ডেটাবেজ থেকে অনেক মেটাডেটা সংগ্রহ করতে পারবেন। আমরা একটি বড়সড় সফটওয়্যার (পাইথন লাইব্রেরি দিয়ে) বানিয়েছিলাম এগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্য:
- ৬০০,০০০ ভিডিও
- এই ভিডিওগুলোর ৪৫০,০০০ ট্রান্সক্রিপ্ট (ইউটিউবের স্বয়ংক্রিয় ক্যাপশন সার্ভিস ব্যবহার করে এগুলো নেওয়া হয়েছিল, সব ভিডিওতে আবার সেগুলো ছিল না।)
- এই ভিডিওগুলোর নিচে ১২ কোটি কমেন্ট
- এসব ভিডিওর সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসা ২ কোটি রেকমেন্ডেড ভিডিও
ডেটার পরিমান অনেক। প্রায় ১০০ জিবি। কিন্তু কী করা হবে এগুলো দিয়ে?
সেরা ফলাফল নিশ্চিত করতে আমরা দুটি হ্যাকাথন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিই। এবং পাঠকদের আমন্ত্রণ জানাই আমাদের অফিসে এসে এসব ডেটা নিয়ে কাজ করার জন্য। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল একেকজনের স্বতন্ত্র বিশ্লেষণ পদ্ধতির আঙ্গিকে ডেটাগুলোকে দেখা।
একটি উপলব্ধি ছিল, উগ্রপন্থার সূত্র খুঁজে পাওয়ার জন্য নজর দেওয়া উচিৎ কমেন্ট সেকশনে। প্রতিটি ইউটিউব ইউজারের একটি স্বতন্ত্র আইডি থাকে। ফলে আমরা প্রতিটি ব্যক্তির, সব কমেন্ট ট্র্যাক করতে পেরেছি। এরপর দেখেছি সবচেয়ে উগ্রপন্থী ভিডিওগুলোর (শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী, ইহুদি বিদ্বেষী ইত্যাদি) নিচে কারা সহমত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন, এবং তারা আগে কোথায় কোথায় সক্রিয় ছিলেন।
এভাবে আমরা ৫০ হাজার ইউটিউব ব্যবহারকারীর তালিকা হাতে পাই। এদের সবার দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কাছে উগ্র বলে মনে হয়েছে। সহজেই খুঁজে বের করা এবং কথা বলার স্বার্থে আমরা শুধু নেদারল্যান্ডসে থাকা মানুষদেরই বিবেচনায় এনেছি।
এজন্য আমরা ডাচ চ্যানেলগুলোর কমেন্ট সেকশনে কারা সক্রিয়, শুধু সেটাই দেখেছি। গুগল ট্রান্সলেট এপিআই ব্যবহার করে খুঁজে বের করেছি শুধু ডাচ ভাষায় লেখা মন্তব্য। এখান থেকে আমরা ২০০ মানুষের একটি তালিকা পাই। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তারা সবাই নেদারল্যান্ডসেরই অধিবাসী।
এরপর সব কমেন্ট সময় ধরে ধরে সাজানো হয়। সেখান থেকেই পাওয়া যায়, কীভাবে মানসিকতা বদলে যায়। এই গ্রুপের অনেকেই মন্তব্য লেখা শুরু করেন জনপ্রিয় প্রগতিশীল চ্যানেল, দ্য ইয়ং টার্কসের ভিডিওতে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেটি ছেড়ে তারা পাড়ি জমান উগ্র-ডানপন্থী ও শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী চ্যানেলগুলোতে।
এসব কমেন্ট বিশ্লেষণ করে আমরা রীতিমত তাজ্জব বনে গেছি। সেগুলোতে ইহুদি বিদ্বেষের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েছে। শুরুতে, ইহুদিদের ব্যাপারে তারা নীরব ছিলেন। ক্ষুব্ধ কমেন্ট বেশি ছিল ইসলাম, অভিবাসন, নারীবাদ ও “সামাজিক ন্যায় প্রত্যাশী যোদ্ধা”দের নিয়ে। কিন্তু ২০১৭ ও ২০১৮ সাল নাগাদ, তাদের মধ্যে স্পষ্ট ইহুদি বিদ্বেষ গড়ে ওঠে।
শেষপর্যায়ে, আমরা এই গ্রুপ থেকে ছয়জনকে বেছে নিই। তাদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলি। জানতে চাই: কীভাবে তারা ইউটিউব ব্যবহার করেছেন, কীভাবে উগ্রবাদী হয়ে উঠেছেন (যদিও “উগ্রবাদী” শব্দটা নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে, তাদের ভাষায় এটি “জাগরণ”) এত অল্প সময়ের মধ্যে কীভাবে বামপন্থী থেকে ডানপন্থী হয়ে উঠলেন, আর এর সপক্ষে তাদের ব্যাখ্যা কী?
এই মানুষগুলো নিশ্চিত করেছেন, তাদেরকে এক ঘরানার বিশ্বাস থেকে অন্য ধারার কন্টেন্ট ও কমিউনিটির দিকে নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছে ইউটিউবের রেকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম। তারা বলেছেন, বামপন্থী চ্যানেল দিয়ে শুরু করেও, পরে কীভাবে ডানপন্থী কন্টেন্টের দিকে চলে গেছেন, এবং ধীরে ধীরে এই রেকমেন্ডেশন কতটা চরম আকার ধারণ করেছে।
বাস্তব এই অভিজ্ঞতাগুলো খুবই মূল্যবান। এই প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করে আমরা তাও দেখাতে চেয়েছিলাম। যদিও সেই চেষ্টা কাজে লাগেনি।
আমরা একটি ছোট প্রোগ্রাম বানিয়েছিলাম। আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সহকর্মীরা তাদের কম্পিউটারে সেটি চালিয়েছে। এই প্রোগ্রাম নারীবাদ ও অভিবাসনের মতো ১০টি আলোচিত ইস্যু নিয়ে সার্চ করেছে। সার্চে পাওয়া ভিডিওর সাথে যেসব রেকমেন্ডেশন এসেছে, তা-ও রেকর্ড করে রেখেছে।
সমস্যাটা হলো: এই রেকমেন্ডেশনগুলো নির্দিষ্ট ব্যক্তির জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়নি। কারণ স্বেচ্ছাসেবীরা ইউটিউবে লগ ইন করেননি। লগ ইন করা ইউজারকে ট্র্যাকিং ও তাদের প্রাইভেসি রক্ষা – দুটি কাজ একসঙ্গে করতে পারে, এমন সফটওয়্যার বানানো খুবই জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে এখান থেকে যে ফলাফল পেয়েছি তা স্বাভাবিক ইউটিউব ব্যবহারের যথার্থ উপস্থাপন হয় না। তাই আমরা এই ফলাফল ব্যবহার করিনি। শেষপর্যন্ত, কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীর সাক্ষাৎকার নিতে হয়েছে রেকমেন্ডেশন নিয়ে অভিজ্ঞতা জানার জন্য। একই সঙ্গে দেখতে হয়েছে এ বিষয়ে কিছু একাডেমিক নিবন্ধও।
সব মিলিয়ে, এই স্টোরি নিয়ে আমরা প্রায় সাত মাস কাজ করেছি। শেষ পর্যন্ত আমরা দেখাতে পেরেছি, ইউটিউব হচ্ছে অনলাইন ঘৃণা ছড়ানোর মাদার-শিপ। আকার ও প্রভাব, দুদিক দিয়েই এটি 4chan ও 8chan এর মতো উগ্রবাদী ফোরামের চেয়ে অনেক বড়। তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো পরিমাণে উগ্রপন্থী কন্টেন্ট আছে ইউটিউবে। অবশ্য এই ধরণের কন্টেন্ট নিয়ে ইউটিউবের একটি গা ছাড়া ভাব আছে দীর্ঘদিন ধরেই। মিডিয়াতে কোনো প্রতিক্রিয়া না আসা পর্যন্ত, তারা খুব একটা গুরুত্ব দেয় না।
আমাদের প্রশ্নের জবাবে, রেকমেন্ডেশন অ্যালগরিদমের সঙ্গে ইউজারদের উগ্রপন্থী হয়ে ওঠার সংযোগের বিষয়টি ইউটিউব সরাসরি অস্বীকার করেছে। কিন্তু সম্প্রতি অ্যালগরিদমে তারা বড় ধরণের পরিবর্তন এনেছে। এখন তারা অনেক বেশি মূলধারার কন্টেন্ট রেকমেন্ড করে।
এই বিশাল প্ল্যাটফর্মে কী ঘটে যাচ্ছে, আমরা আসলে সেটার উপরভাগটাই শুধু দেখাতে পেরেছি। আশা করি, আমাদের চেষ্টা ও কোড (যেটা সবার জন্য উন্মুক্ত) অন্য সাংবাদিক ও গবেষকদের অনুপ্রাণিত করবে, এরকম অনুসন্ধানের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য। এটি কঠিন, কিন্তু খুব দরকারী।
আমাদের অনুসন্ধান পাবেন এখানে (দ্য করেসপনডেন্ট) এবং এখানে (দ্য ভোকসক্রান্ট– ডাচ ভাষায়)
*মার্গো একটি ছদ্মনাম।
দিমিত্রি তোকমেজিস একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিক। তিনি কাজ করেন নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞাপন-বিহীন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম দ্য করেসপনডেন্টে, ডেটা ডেস্কের প্রধান হিসেবে। সেখানে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনুসন্ধান করা হয় ও প্রতিবেদন সাজানো হয়। তিনি বর্তমানে কাজ করছেন ইউরোপে মানব পাচার ও ক্রিপ্টো-অর্থনীতি নিয়ে।