খনিজ কোম্পানিগুলো বছরে শত শত কোটি ডলার আয় করে। এত টাকার কারবার যেখানে, দুর্নীতি সেখানে অনিবার্য বলা চলে। তার সাথে, মানুষের জীবনযাত্রা ও পরিবেশের ওপর খনির বিরূপ প্রভাব তো আছেই।
বিষয়টি নিয়ে আলাদা একটি সেশন ছিল একাদশ গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম কনফারেন্সে। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ নিয়ে কীভাবে অনুসন্ধান করবেন, তথ্য উপাত্ত কোথায় পাবেন – এসব পরামর্শ সেখানে তুলে ধরেছেন একটি বিশেষজ্ঞে প্যানেল। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ছিলেন ন্যাচারাল রিসোর্স গভর্ন্যান্স ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অফিসার আসমারা ক্লাইন ও তার সহকর্মী টোয়িন আকিনিয়ি; ব্রাজিলের মাইনিং অবজারভেটরি থেকে মরিসিও অ্যাঞ্জেলো; পেরুর ননপ্রফিট অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সংগঠন কোনভোকার পরিচালক মিলাগ্রস সালাজার হেরেরা এবং ঘানাভিত্তিক জয় নিউজের অনুসন্ধানী সাংবাদিক কোয়েটি নার্টে।
চুক্তি, তথ্য, নথিপত্র কোথায় পাবেন?
রিসোর্স কন্ট্রাক্টস: তেল ও গ্যাসসহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদ আহরণের জন্য কোম্পানিগুলো যেসব চুক্তি করে, তার কপি পাওয়া যায় এই সাইটে। দেশের নাম, চুক্তির বিষয় ও ধরণের ভিত্তিতে সার্চ করা যায় এই অনলাইন রিপোজিটরিতে। পিডিএফ বা ওয়ার্ড ফরম্যাটে ডাউনলোড করা যায় চুক্তির কপি। চাইলে, এখান থেকে আপনার স্টোরিতেও সেই চুক্তিপত্র লিংক করে দিতে পারেন।
রিসোর্সডেটা: এই ডেটা রিপোজিটরি তৈরি করেছে অলাভজনক সংগঠন ন্যাচারাল রিসোর্স গভর্ন্যান্স ইনস্টিটিউট। এখানে খনিজ সম্পদের পেছনে সরকারের বিনিয়োগ এবং বেচাবিক্রি ও আয়করের হিসাবসহ লাখ লাখ ডেটা পাওয়া যায়। আপনার চাহিদা মত উপাত্ত খুঁজে নিন এবং বিশ্লেষণ করুন।
রিসোর্স গভর্ন্যান্স ইনডেক্স: এই সূচকটিও ন্যাচারাল রিসোর্স গভর্ন্যান্স ইনস্টিটিউটের তৈরি। তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে কোন দেশে কতটা সুশাসন বিরাজ করছে, তা পরিমাপ করা হয় এই সূচকে। ৮১টি দেশের স্বচ্ছতা পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে এখানে।
ন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি ডেটাবেস: বিশ্বের ৭১টি দেশের রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি – কে কত তেল তুলছে, কত আয় করছে এবং তারা লাভে না লোকসানে আছে – এমন তথ্য সংকলন করা হয় ন্যাচারাল রিসোর্স গভর্ন্যান্স ইনস্টিটিউটের এই ডেটাবেসে। তুলনামূলক বিশ্লেষণের জন্য এই তথ্য বেশ কাজে আসে।
পিডিএফ টেবিল এক্সট্রাক্টর: কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পিডিএফ ডকুমেন্ট থেকে তথ্য স্ক্র্যাপ করতে, আপনাকে সাহায্য করবে এই টুল।
রিসোর্সপ্রজেক্টস: খনিজ আহরণের যত প্রকল্প ও কোম্পানি আছে তাদের বিশদ প্রোফাইল, আর্থিক লেনদেন এবং রাজস্ব আয়ের বিবরণ পাবেন এই উদ্যোগে। আপনার কাজ হলো – কোম্পানি রিপোর্টের সাথে সরকারী তথ্য তুলনা করা, সরকারী সংস্থাগুলো যে টাকা পেয়েছে তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা, এবং দেশ, বিষয় বা সংস্থা ধরে সতর্কতার সাথে যাচাই করা।
সাগরে কোন জাহাজ: প্রাকৃতিক সম্পদ সাধারণত জাহাজে করে এক দেশে থেকে অন্য দেশে নেয়া হয়। আপনাকে রিয়েল টাইমে সেইসব জাহাজ ট্র্যাক করার সুযোগ দেবে এই জাহাজ নিবন্ধন ডেটাবেস। সেগুলো কোন বন্দরে ভিড়ছে তা-ও বিশ্লেষণ করতে পারবেন এখান থেকে। খুঁজে বের করুন জাহাজের মালিকানা এবং তাতে কোনো প্যাটার্ন আছে কিনা।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
আপনি এরিমধ্যে জেনে গেছেন কোথায় ডেটা পাবেন। এখন জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ। সেটি ধরে নেমে পড়তে পারেন অনুসন্ধানে।
কোথায় যাচ্ছে টাকা: ব্রাজিলের মাইনিং অবজারভেটরির মরিসিও অ্যাঞ্জেলোর পরামর্শ-ই হচ্ছে টাকাকে অনুসরণ করা। “কে কোন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে তা দেখুন। তারপর বিন্দুগুলোকে সংযুক্ত করুন,” বলেন তিনি।
টাকার নিচেই গল্প: খনিজ আহরণ প্রকল্প মানেই অনেক টাকার কারবার। আর বড় অংকের টাকার সাথে জড়িয়ে থাকে বড় বড় মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ। খুঁজে দেখুন, তারা কীভাবে রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত? স্থানীয় সম্প্রদায়ের ওপর এর প্রভাব কতটা? প্রকল্পের সাথে জড়িত এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা নামে বা বেনামে আপনাকে অমূল্য কোনো তথ্য দিতে রাজি। তাদের খুঁজে বের করুন।
সীমান্ত কোনো বাধা নয়: হতে পারে আপনার স্টোরিটি স্থানীয়। কিন্তু একটু সময় নিয়ে বৃহত্তর চিত্রটি দেখার চেষ্টা করুন। হয়তো দেশের বাইরেও অনেক কিছু পেতে পারেন। ক্রসবর্ডার অনুসন্ধানের কথা বিবেচনা করুন। আবার এমনও হতে পারে আপনি কোনো আন্তর্জাতিক স্টোরির পেছনে ছুটছেন। সেখানে স্থানীয় দৃষ্টিভঙ্গি তুলে আনুন। পানামা পেপার্সের মতো বড় অনুসন্ধানও তখনই অর্থবহ হয়, যখন তাতে স্থানীয় দৃষ্টিকোণ উঠে আসে।
সিস্টেমকে জানুন: আপনি যে খাত নিয়ে অনুসন্ধান করছেন, সেই ব্যবসার গতিপ্রকৃতি বুঝার চেষ্টা করুন। ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখে যে সিস্টেম, তাকে বুঝতে পারলে – কোথায় অনিয়ম হচ্ছে এবং কারা সেটি করছে – তা সনাক্ত করতে পারবেন। এই পদ্ধতি মেনেই, মাছ ধরা শিল্পে জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন করেছিলেন কনভোকার পরিচালক মিলাগ্রোস সালাজার হেরেরা।
দেখতে চেষ্টা করুন বিভিন্ন আঙ্গিকে: হয়তো আপনি অনুসন্ধান করছেন খনিজ শিল্পখাত নিয়ে। কিন্তু গল্পটিকে দেখার চেষ্টা করুন অন্য বিষয় থেকে। উদাহরণ দিয়ে বললে, খনি বিষয়ক স্টোরিকে আপনি হয়তো তুলে আনতে পারেন, খনির কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব পড়ছে, সেই দৃষ্টিকোণ থেকে।
তথ্য সংগ্রহ করুন: প্রাসঙ্গিক পাবলিক রেকর্ড ও খনি থেকে পাওয়া ডেটা সংগ্রহ করুন। তাতে কোনো অসংগতি আছে কিনা অনুসন্ধান করুন। সমস্যা এবং ফাঁকগুলো বুঝতে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলুন।
গল্প হতে হবে মানবিক: বিষয়টি যতই কারিগরী বা জটিল হোক না কেন, আপনার গল্পে মানুষ থাকতে হবে। তাই সেই এলাকায় যান, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে সামনাসামনি কথা বলুন, এবং সেখানকার অধিবাসীদের ওপর খনির পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব খুঁজে দেখুন।
নেটওয়ার্কটিকে চিহ্নিত করুন: কোন প্রতিষ্ঠান জড়িত? তাদের কী উদ্দেশ্য আছে? তাদের সাথে কোন কোন সংস্থার সম্পর্ক আছে? কোনো নাম-সর্বস্ব শেল কোম্পানি আছে? শেয়ারহোল্ডার কারা? কারা মালিক? কোন ব্যাংক প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে?
আমদানি-রপ্তানির তথ্য ব্যবহার করুন: বিশ্বে, বাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার হলো ইউএন কমট্রেড। এখানে আনুষ্ঠানিক সব পরিসংখ্যান পাবেন। তা-ও বিনা পয়সায়। বাড়তি তথ্যের জন্য ব্যবহার করতে পারেন ওসিসিআরপি’র আলেফ। বাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার কিছু পেইড ডেটাবেসও আছে। সরকারি বক্তব্যে কোনো ফাঁক আছে কিনা জানতে বা গল্পের নতুন সূত্র পেতে আমদানি-রপ্তানির তথ্য ঘেঁটে দেখুন।
স্যাটেলাইট ছবি: অবৈধ খনন, ভৌগলিক পরিবর্তন, পরিবেশগত ক্ষতি, বন্দরে কী হচ্ছে, এমনকি খনি থেকে কত ট্রাক বের হচ্ছে – এমন অনেক কিছু সনাক্ত করতে আপনার কাজে আসতে পারে স্যাটেলাইট ছবি।
আদালতের রেকর্ড: আদালতের নথিপত্র সাধারণত সবার জন্য উন্মুক্ত এবং তাতে প্রকল্প ও কোম্পানি সম্পর্কে প্রচুর তথ্য থাকে।
লিওনি কিজেস্কি, একজন কম্বোডিয়াভিত্তিক ফ্রিল্যান্স রিপোর্টার। গার্ডিয়ান, আল জাজিরা ও ভয়েস অফ আমেরিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার কাজ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি জার্মান, ইংরেজি, ফরাসি এবং ডাচ ভাষায় কথা বলতে পারেন। এর আগে নম পেন পোস্টে কাজ করেছেন সাব-এডিটর ও রিপোর্টার প্রতিনিধি হিসেবে।
প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানের কয়েকটি পদ্ধতির উল্লেখ করলে।।।। ভালো হত
Thanks! We’ll keep your valued suggestion in mind.